অথৈ জলের পুষ্পমাল্য পর্ব-১১+১২

0
350

#অথৈ জলের পুষ্পমাল্য
কামরুন নাহার মিশু

১১)
শাওন শুয়ে আছে। গভীর রাত। অথচ তার ঘুম আসছে না।কী অপরিসীম শূণ্যতা! হৃদয়ের অলিতে, গলিতে খাঁ, খাঁ শূণ্যতা। আশ্চর্য এই শূণ্যতা কিন্তু রীমার জন্য নয়। বরং রীমার কথা ভাবতেই বড্ড বিতৃষ্ণা লাগছে।

শাওন উঠে গিয়ে বারান্দায় দাঁড়াল। দক্ষিণের আকাশ আজ খুব স্বচ্ছ। দূর আকাশে ঢাউস আকৃতির রুপালী চাঁদ অসংখ্য তারার ভীড়ে একাই রাজত্ব করছে। পুরো পৃথিবী জুড়ে আলোর মেলা বসেছে। এমন মোহনীয় রাতের সৌন্দর্য একা উপভোগ করা অন্যায়। শাওন মনের অজান্তে সীমার নাম্বারে কল দিল। উচ্চ ভলিউমে মোবাইল বেজে উঠল রুমে। শাওন ভুলেই গেছে সীমার মোবাইলটা যে তার কাছে।

সীমা কার মোবাইল থেকে কল দিয়েছিল, জানা যায়নি। এতরাতে নিশ্চয়ই তাকে কল দেয়া ঠিক হবে না। শাওনের কিছু ভালো লাগছে না। মনের সাথে যুদ্ধ করে সে হেরে যাচ্ছে। বারবার সীমার কথা মনে পড়ছে। গত একবছর মেয়েটা কোনো শূণ্যতা অনুভব করতে দেয়নি। কেমন যেন পুরো অনুভূতি জুড়ে ছিল।

রীমাকে কল দিলে নিশ্চয়ই সীমাকে পাওয়া যাবে। ভাইয়ের বাড়িতে দু’বোন একসাথেই ঘুমানোর কথা। শাওন সাহস করে রীমার নাম্বারে কল দিল।

রিং না বাজতেই রীমা রিসিভ করল।

” কেমন আছো শাওন?”

” আগের মতো। তোমরা কেমন আছো?”

” তোমাকে ছাড়া কেমন থাকতে পারি?”

“গেলে কেন তাহলে? আমি তো যেতে বলিনি।”

” যেতে বলনি ঠিক। তবে আমাদেরকে ছাড়া মনে হচ্ছে বেশ ভালোই আছো।”

” এটা মনে হওয়ার কারণ কী? বাবার বাড়িতে গেছ, তাই সময়, অসময় কল দিয়ে বিরক্ত করিনি।”

” তুমি ফোন দিলে বুঝি আমি বিরক্ত হই?”

” রীমা তুমি আর আগের মতো নেই। ভীষণ বদলে গেছ। অহেতুক সন্দেহ কর, কথায়, কথায় ঝগড়া কর।”

পাশ থেকে কে যেন বলছে,

“রীমা রুপাইর ন্যাপি পাল্টাইতে অইব। হিসু করে দিছে।”

” কে আছে তোমার কাছে?”

” কে আর থাকবে? সীমাপা।”

” ও আচ্ছা। সীমাপাকে জিজ্ঞেস করতো আমার পেনড্রাইভটা কোথায় রেখেছে? আজ সারাদিন খুঁজেও পাইনি।”

” আচ্ছা আমি জিজ্ঞেস করে জেনে নেব।”

” এখনই প্রয়োজন, তুমি দাও তো সীমাপাকে। আমিই জেনে নিচ্ছি।”

সীমা অনিচ্ছাস্বত্তেও সীমার হাতে মোবাইলটা দিয়ে চুপচাপ পাশে দাঁড়িয়ে রইল।
ফ্যানের শো শো আওয়াজে ঠিক বুঝা যায়নি শাওন সীমাকে কী বলছে। রীমা শুধু নিরবে লক্ষ্যে করছে সীমার মুখের এক্সপ্রেশন চেঞ্চ হয়ে যাচ্ছে।
হঠাৎ রীমা সীমার হাত থেকে ছোঁ মেরে মোবাইলটা নিয়ে কানে ধরল।

” তুমি কি সত্যি চাঁদের আলো দেখনি?”

রীমা ঝাঁঝাল কণ্ঠে বলল,

” চাঁদের আলো দেখার মতো এত রং সীমাপার মনে নেই। তোমার থাকলে তুমি একাই দেখ। ”

ঘটনার আকস্মিকতায় সীমা হতভম্ব হয়ে গেল। এভাবে রীমা মোবাইল কেড়ে নিবে সে ভাবতেই পারেনি।

” এ্যাই আপা! ছোট বোইনের জামাইর গলে তোর এত রং ঢং কিসের রে!”

“এসব কী কতা রীমা!”

” কী কতা মানে? ন্যাকামি করিস না। আমি অনেক সহ্য করছি, আর নয় কিন্তু। ”

” ধর তোর পোলারে রাখ আমি গেলাম। তুই একবার তোর বাসাতও আমারে অপমান করলি।”

” মর গিয়ে সামনে থেকে।”

সীমা বেরিয়ে যেতেই রীমা ছেলেকে বুকে জড়িয়ে ইচ্ছে মতো কাঁদল। ছয়মাসের এতটুকুন বাবু। মায়ের কান্নার আওয়াজে তারও ঘুম ভেঙে গেল। হতভম্ব হয়ে সে চোখ বড় বড় করে বারবার এদিক,সেদিক তাকিয়ে দেখল।

রীমা ছেলের গাল আলতো হাতে জোরে টিপে দিয়ে বলল, তাকিয়ে তাকিয়ে কী এমন ঘণ্টা দেখছিস? কী হতভাগা ছেলে তুই! নানার বাড়িতে এসেছিস সাতদিন হয়ে গেছে, আজ পর্যন্ত তোর বাবা তোর একটু খোঁজ নিল না।

মায়ের আলতো হাতের চাপ সহ্য করতে না পেরে রুপাই চিৎকার দিয়ে কেঁদে উঠল।
রুপাইয়ের কান্নার আওয়াজ শুনে আফসার উদ্দিন ও রাহেলা বেগম বেরিয়ে এলো পাশের রুম থেকে।

“কী অইছে, রুপাই কান্দে ক্যান?”

রীমা কিছু না বলে নিজেকে আড়াল করে চোখের পানি মুছে ফেলল।

” ওমা! তুইও কানছিলি? শাওনের সাথে কিছু অইছে? সীমা কই? পোলাডারে কোলে নিলেও তো পারে।”

” ভাইজান, সীমাপার একটা বিয়ার ব্যবস্থা করেন।”

রীমার কথা শেষ না হতেই রাহেলা বেগম ছ্যাত করে উঠলেন,

” কী বিয়ার জন্য তোমারে ধরছে না-কি! তার বিয়ার খরচ কে দিব? তোমার বাপে কিছু রাইখা গেছে না-কি! সব তো বেইচা খাই গেছে।”

” ভাবি তুমি কি চুপ কইরবা?”

” কী! আমার বাড়িতে বইসা আমারে চুপ করাইবা। আমারে চুপ করাইবার তুমি কে?”

” ভাবি আমি তোমার লগে ঝগড়া করতে চাই না। ”

” তুমি আমার লগে ঝগড়া কইরবা কোন সাহসে?

স্ত্রী আর বোনের বাকবিতণ্ডার মাঝে আফসার উদ্দিন চিৎকার দিয়ে উঠলেন,

” চুপ করবি তোরা! আমি এহনো বাঁইচা আছি তো!”

” এত রাইতে সীমার বিয়ার কতা কেন?”

” আমি চইলা যামু কাইল, পরশু। এই সময়ের মধ্যে সীমাপার বিয়ার ব্যবস্থা করেন।”

” আমার দ্বারা সম্ভব না, পারলে তুই কর।”

” ভাইজান!”

” আমাকে রাগ দেখাছ ক্যান? বিয়া তো বাবা দিছিল, সংসার করতে পারছে? এহন তার জন্য বয়সে বুড়া, চার, পাঁচ বাইচ্চার বাপ ছাড়া কোনো প্রস্তাব আসব না। করব সংসার এমন লোকের লগে। তাইলে আমি চেষ্টা করুম।”

ভাইজানের কথা শুনে সীমা ছুটে এলো,

” আমি কি তোমগো বোঝা? কার কি ক্ষতি করছি আমি! আমারে বুড়া বেডার লগে বিয়া দিবা ক্যান। আমি রীমার লগে ঢাকা যামু, দেখি শাওন একটা চাকরির ব্যবস্থা করি দিতে পারে কি-না!”

” খবরদার তুমি এই স্বপ্ন দেখবা না। আমার শাশুড়ি আছে। আমার ননাশের ছেলেও আমার লগে থাকব।”

” তোর বাসায় না রাখলে নাই। আমি নিজের ব্যবস্থা নিজেই করুম।”

আফসার উদ্দিন ভাবতেই পারেনি। বছর খানিক ঢাকা থেকে সীমা মুখে মুখে তর্ক করবে। জীবন এত সহজ! কোথায় থাকবে সে? রাহেলা বেগম সীমাকে সহ্য করতে পারে না। ঐ দিন রীমার শাশুড়ির কথা-বার্তায় মনে হয়েছে, সীমার রীমার বাসায় থাকা তিনি পছন্দ করেন না।
কাল, পরশু রীমাও চলে যাবে। আফসার উদ্দিন আয়,রোজগারে মনোযোগ দেবে না-কি ননদ, ভাবির ঝগড়া থামাবে।

যাওয়ার সময় অভিবাবক হিসাবে আফসার উদ্দিন বোনকে আস্বস্ত করে গেলেন।

” বুঝি তো বইন হিসাবে সীমারে নিয়া তোরও চিন্তা অয়। দেখি আমি শাওনের লগে এই ব্যাপারে আলোচনা করি দেখুম। তার পরিচিত কোনো ছেলেপেলে যদি থাকে। তুই এহন ঘুমা।”

রীমা নিজের স্বামীর সম্মানের কথা চিন্তা করে সবার সন্মূখে ভাইকে বলতে পারেনি।

” দয়া করে ভাইজান আমার সংসারে আগুন জালানোর ব্যবস্থা কইরবেন না।”

চলবে…..

#অথৈ জলের পুষ্পমাল্য
কামরুন নাহার মিশু

১২)

আফসার উদ্দিনের ফোন পেয়ে শাওন আর দুইবার ভাবেনি, সাথে সাথে প্রস্তুতি নিয়ে নিল শ্বশুর বাড়ি যাওয়ার জন্য। কারণ তাকে গেলে আজই যেতে হবে পরশু থেকে আবার অফিস খোলা।
হঠাৎ ছেলের সাজ পোশাকে ভিন্নতা দেখে শর্মিলি আহমেদের মনে সন্দেহ হলো। তিনি আগ বাড়িয়ে জানতে চাইলেন,

“কোথায় যাইতাছ শাওন?”

” মা আইজ ছুটির দিন, রুপাইর মামা কল দিছে। রীমা আর কয়দিন থাকব! ওদের নিয়া আসি।”

” যাইবা? আমি ভাবছি রাজিবরে পাঠাই রীমিরে নিয়া আসব।”

” পাঠাইতে পারেন। অাফসার ভাই কল দিছে, কী একটা পারিবারিক সমস্যা, আমারে থাকতে অইব।”

“আমি চাই না, তুমি ওদের বাড়িত যাও। কিন্তু যাইতে যখন অইব, তাইলে যাও। তবে তাড়াতাড়ি ফিরে আইস।”

” জি মা। আপনে চিন্তা কইরেন না।”

” শুনো বাপ, তোমার শ্বশুর বাড়ির লোকজন মারাত্বক ছোডলোক। আমি চাই নয়, ওদের লগে আত্মীয়তা কইরতে। শুধু তোমার বাপের পছন্দ আছিল। তাই আর না করি নয়।”

” মা! ”

” তবে এটা ঠিক তোমার বাপে তোমার জন্য পৃথিবীর সবচাইতে সরল, নিষ্পাপ আর ভালা মাইয়্যাগা বাইছা আনছে।”

” মা রীমারে নিয়া আসব।”

” রীমারে তো আনবাই! তবে একবার আমারে না জিগাই তুমি তার বইনরে আনি বাসায় উঠাইছ। খবরদার আর এই ভুল করবা না। আমি চাই না ওদের সাথে তোমার এমন দহরম মহরম সম্পর্ক থাকুক।”

মায়ের রূঢ়তার ভাষা বুঝতে শাওনের মোটেও অসুবিধা হয়নি। মা কেন বারবার তাকে সতর্ক করছে। শ্বশুর বাড়ির নিন্দা করে মা কি বুঝাতে চাইছেন। সেটা শাওন বেশ ভালো বুঝতে পেরেছে।

হঠাৎ শাওনের কাছে মাকে ভীষণ বিরক্ত লাগছে। মা কেন বারবার ভুলে যান, সব বয়সে সন্তান শাসন করা যায় না। কিশোর বয়সের মতো ছেলেকে এটা করবে না, সেটা করবে না। আমি পছন্দ করি না। এসব করা ঠিক না।

শাওনের এসব নিতে আর ভালো লাগছে না। মা থাকার আগে তো ভালোই চলছিল সব। শাওন তো রীমাকে কোনো কিছু থেকে বঞ্চিত করেনি।
রীমাও সংসার, সন্তান নিয়ে বেশ শান্তিতেই ছিল। শাওন ও স্বস্তিতে ছিল।

মা এসে শাওনের মনে যেমন অশান্তির চাষ করেছে, তেমনি রীমার মনেও। রীমাকে আজকাল আগের মতো সরল মনে হয় না। মেয়েটা প্রতি কথায় রাগ করে, সন্দেহ করে। ভুল বুঝে। সবটাই যে মায়ের ছাল। এটা শাওন বেশ বুঝতে পেরেছে।

শাওন খুব করে চাচ্ছে যেভাবে হোক শ্বশুর বাড়িতে পৌঁছানোর আগে একবার সীমার সাথে যোগাযোগ করতে, কিন্তু সম্ভব হয়ে উঠেনি।

শাওনও বাড়াবাড়ি করতে চায় না। কারণ সীমার সাথে শাওনের একটা সম্পর্ক তৈরি হয়েছে, সম্পর্কটা নৈতিকতার দৃষ্টিতে, সমাজের দৃষ্টিতে, ধর্মের দৃষ্টিতে অবৈধ। কিন্তু ওরা কাছাকাছি এসেছে, খুব কাছাকাছি। এখানে কার প্রশ্রয় ছিল, আর ভুল ছিল শাওন এসবের হিসাব মিলাতে চায় না।

কিন্তু সমস্যা হচ্ছে সীমা স্বপ্ন দেখে, বড় স্বপ্ন, গভীর স্বপ্ন। স্বপ্নের বাস্তবায়নও চায়। শাওন কিন্তু সীমাকে কোনো স্বপ্ন দেখায়নি।
তারা কাছে এসেছে প্রকৃতির প্রয়োজনে, এখানে কোনো কমিটমেন্ট ছিল না। শাওনের সাজানো সংসার আছে, রীমার মতো নিষ্পাপ স্ত্রী আছে, তাদের অবুঝ সন্তান আছে।
এর চেয়ে কঠিন সত্য আর কিছু নেই। কিন্তু সীমার নিষ্পাপ মুখও ভোলা যায় না। শাওনের সাথে রীমার পাঁচ বছরের সংসার। স্ত্রীকে নিয়ে কোনো অতৃপ্তি বা অভিযোগ একবারও ছিল না। কিন্তু সীমা কাছে আসার পর সব এলোমেলো হয়ে গেছে। না চাইলেও শাওনের মনে একটা তুলনা আসে। সীমার মতো এত তৃপ্তি, এত শান্তি, এত পূর্ণতা রীমা দিতে পারেনি।

শাওনের ইচ্ছে করে, সমাজ, সংসার, নিয়ম-নীতি সব দুপায়ে মাড়িয়ে সীমাকে নিয়ে চলে যেতে পৃথিবীর অন্য প্রান্তে।
যেখানে নৈতিকতার কোনো বাধা থাকবে না, মায়ের রক্তচক্ষু থাকবে না, রুপাইয়ের নিষ্পাপ মুখ থাকবে না, রীমার সরলতা থাকবে না।

পরক্ষনে শাওন সব ভুলে যায়। রীমার জন্য তার মায়া হয়। মায়া দিয়ে কি সংসার হয়? শাওন রীমাকে বঞ্চিত করতে চায় না, আবার সীমাকেও হতাশ করতে চায় না।

এদিকে জন্মদাত্রী মাকেও এড়িয়ে যাওয়া যায় না। মায়ের কষ্ট শাওন বুঝে। একজীবনে মাকে অনেক কিছু হারাতে হয়েছে। সেই অপ্রাপ্তির দহন মা ভুলতে পারছে না।

শাওন যখন শ্বশুর বাড়ি এসে পৌঁছেছে যখন রাত ৮টা বাজে। আফসার উদ্দিনই শাওনকে ফোন করে নিয়েছে, সীমার বিয়ের ব্যাপারে আলোচনা করার জন্য।
আফসার উদ্দিনের কাছে একটা ছেলে আছে, সৌদি প্রবাসী।

গত বছর সন্তান জন্মদিতে গিয়ে স্ত্রী মারা গেছে। এক বছর বয়সী শিশু সন্তানসহ লোকটার আরও দুই সন্তান আছে। বাবার বাড়িতে, ভাইয়ের সংসারে থেকে অসম্মানিত হওয়ার চেয়ে নিজের সংসারে থাকাটাই সম্মানের।
স্বামী বেশিরভাগ সময় বিদেশই থাকবে, বিদেশই ছিল। নিজের একার সংসার। টাকা -পয়সার অভাব নেই। স্বামী দুই বছরে আসবে মাস তিনেকের জন্য। একটা সময় এরকম প্রস্তাবেও সীমা রাজি ছিল। অথচ প্রস্তাব পাওয়া সম্ভব হচ্ছিল না।

এখন যাও প্রস্তাব এসেছে, বিগড়ে বসেছে সীমা। সে কোনো ভাবেই অন্যের তিন তিনটা সন্তানকে লালন পালন করতে পারবে না।

তাই আফসার উদ্দিন একক সিদ্ধান্ত না নিয়ে শাওনের মতামতের জন্য শাওনকে ফোন দিয়েছে।

রীমা জানে না শাওন যে আসবে, রাগ করে গত কয়েকদিন রীমা শাওনকে ফোনও দেয়নি। অথচ সকাল থেকে সীমার উচ্ছাস দেখে সে ভেবেছে,

সীমা হয়তো বিয়ের প্রস্তাব আসায় আনন্দিত হয়েছে।
রীমাও চায় সীমার বিয়েটা হোক।
সীমার উচ্ছাস দেখে, রীমা আফসার উদ্দিনকে বলল,

” মুখে যাই বলুক, বিয়ের কতা শুনে সীমা খুশি আছে। দেখেন না ঘর -দোর সাজাইতাছে। আপনে তাড়াতাড়ি শুভ কাজটা শেষ করে ফেলেন। প্রয়োজন হলে কিছু টাকা,পয়সা দিয়ে আমিও সহায়তা করুম।”

হঠাৎ বিকালবেলা শাওনকে দেখে রীমা চমকে গেল। সীমার এত উচ্ছাসের কারণ শাওন নয় তো!

শাওনকে দেখে রীমা বলল,

“তুমি আসবা জানাওনি তো!”

” ভাইজানই তো কল দিয়ে আসতে বলল, ভেবেছি হয়তো তুমি জানো।”

” জানলে জানি। কিন্তু তুমি ফোন দিয়ে জানাবা না।”

” তোমার অসুবিধা হলে আমি এখন চলে যেতে পারি!”

সীমা হঠাৎ ছুটে এলো,

” এই কী কথা! তুমি যাবে কেন? ”

” আপনার বোন মনে হয় আমাকে দেখে খুশি হয়নি। থেকে কী করব?”

সীমার ন্যাকামি দেখে রীমার গা জ্বলে গেল।

” আশ্চর্য তোমার এখানে কী কাজ আপা? ভিতরে যাও”

” যাব তো! শাওনের সাথে তুই রাগ করছিস কেন?”

” সেটা আমি বুঝব! এখানে তোমার সমস্যা কি? ”

” কোনো সমস্যা নেই।”

আফসার উদ্দিন ঘর থেকে বেরিয়ে এসে বললেন,

” এই শাওনকে ডাবের ঠাণ্ডা পানি খেতে দেয়। আমিই শাওনকে আসতে বলছি, বইন আছে বইনের জামাই নেই এটা কেমন দেখায়। শ্বশুর বাড়িতে দুডা ডাল -ভাত খাই যাব।”

আফসার উদ্দিনের বোনদের প্রতি যতই অভিযোগ থাকুক। রাহেলা বেগমের নদদের প্রতি যতই বিতৃষ্ণা থাকুক। বোন জামাইর প্রতি কারো কোনো অভিযোগ নেই। বরং সাধ্যের বাহিরে আপ্যায়ন করল।

রাহেলা বেগম চাইলেই পারতেন রীমার রাগ শাওনের উপর ঝাড়তে, কিন্তু সেটা করেনি। রীমা মনে মনে বেশ কৃতজ্ঞ হলো ভাই, ভাইয়ের বউয়ের উপর।

ঢাকায় ফেরার আগে আফসার উদ্দিন, শাওনকে জরুরী তলব করে আনার কারণ বললেন,

তিনি সীমার বিয়ে দিতে চান। বাবা,মা জীবিত না থাকায়, এদিকে আর কোনো ভাই-বোন না থাকায় আফসার উদ্দিন বাড়ির একমাত্র জামাই হিসাবে শাওনের সাথে বসে বিষয়টা আলোচনা করা প্রয়োজন মনে করেছেন।

সীমার বিয়ের কথা শোনার সাথে সাথে শাওন এক কথায় নাকচ করে দিয়েছে।

” ভাইজান, হুট করে সীমাপার কি বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন? সীমাপার একটা বিয়ে হলেও সেই অর্থে তার সংসার হয়নি। তাকে দেখে শুনে বিয়ে দেবেন। এটা আমার মতামত বাকিটা আপনার।”

” ভাই, দেখে শুনে বিয়ে দেয়ার বয়স এখন আর নেই। এখন জীবন বাঁচানোই ফরজ। আমার মেয়েরাও বড় হচ্ছে। কী আর বলল! বাড়িতেও তার কারো সাথে বনিবনা হয় না। আমি আছি মহাবিপাকে।”

” বাড়িতে বনিবনা না হলে অসুবিধা নেই। আম্মা বাসায় আছেন। রীমা রুপাইকে নিয়ে সবদিক সামাল দিতে পারে না। সীমাপা আমাদের সাথে থাকলে উপকারই হয়। এদিকে আপনারাও দেখেন, আমিও দেখি আপার বিয়ের ব্যবস্থা করতে পারি কি-না! ”

শাওনের সাহস দেখে রীমা আর চুপ থাকতে পারেনি। সে এখনও নিশ্চিত নয় সীমাপার সাথে শাওনের সম্পর্ক কত দূর। তবে সন্দেহ যখন হয়েছে, রীমা এই কাটা আর বাসায় নেবে না। প্রয়োজনে আজ মনোমালিন্য হবে সবার সাথে।

” কোনো দরকার নেই শাওন। আম্মা কল দিয়েছেন, আসিফ ভাই আর ভাবি আসবেন। আসার সময় একটা কাজের লোক নিয়ে আসবেন। সীমাপা বাড়িতেই থাকুক। আমার এত ঝামেলা ভালো লাগে না।”

” আচ্ছা থাকলে থাকুক। সীমাপা কী বলেন?”

” সীমাপা কী বলবেন? ছোটবোনের বাসায় সে কি যেতে চাইবে না-কি! ছিল তো প্রায় এক বছর। আম্মা আছেন, তোমাদের বাড়ি থেকেও লোকজন আসবেন। সবাই কি বলবে?”

” ঠিক আছে না যেতে চাইলে থাকুক। আচ্ছা আপার মোবাইলটা আমার কাছে ছিল। সেটা নিয়ে এসেছি।”

রীমা ছোঁ মেরে শাওনের হাত থেকে মোবাইলটা কেড়ে নিয়ে বলল,

” ভালো করেছ মোবাইলটা নিয়ে এসেছে। সীমাপা মোবাইল দিয়ে কি করবে। আমারটা গতকাল থেকে ডিস্টার্ব করছে,দেখি এটা এখন থেকে আমি ব্যাবহার করব।”

শাওন রীমার আচরণ দেখে হতভম্ব হয়ে গেল। রীমা কি কিছু আঁচ করতে পেরেছে? সে তো কখনো এমন আচরণ করেনি। রীমার অনুরোধে শাওন নিজের ব্যাবহার করা মোবাইল সীমাকে দিয়ে দিল। রীমার অনুরোধে সীমাকে তার বাসায় নিয়ে রাখল।

চলবে……..