অদ্ভুত নেশা পর্ব-০৪

0
3887

#অদ্ভুত_নেশা
#পর্ব_০৪
#অধির_রায়

ছোঁয়া আজ হেঁটে হেঁটে ভার্সিটিতে আসছে। ভার্সিটির গেইট দিয়ে প্রবেশ করতেই ছোঁয়ার উপর অনবরত বৃষ্টির মতো গোলাপ ফুলের পাপড়ি পড়তে শুরু করল। ছোঁয়া নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না৷ তার জন্য এসব কাজ কে করেছে।

ছোঁয়া গোলাপের পাপড়ির সাথে দু হাত দু’দিকে বাড়িয়ে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছে৷ এই মুহুর্তটা ছোঁয়া চির স্মরণীয় করে রাখতে চায়৷

হুট করেই ছোঁয়া শূন্যে বাসতে থাকে৷ সে আজও ভাবছে অদ্ভুত লোকটি তার জন্য এসব করেছে। কিন্তু চোখ মেলার সাথে সাথে চোখ রসে গোল্লায় পরিণত হয়৷

— এভাবে তাকিয়ে থাকবে?(তপেস)

— আমতা আমতা করে আপনি এসব করেছেন!

— কেন অন্য কাউকে আশা করেছিলে?

— অন্য কেউ আমার কাছে আসার চেষ্টাও করতে পারবে না৷ সেটা আপনি ভালো করেই জানেন৷

— হুম জানি কলিজা।

— আমাকে নামান। এভাবে সবার সামনে তুলে রেখেন কেন? আপনার লজ্জা বলতে কিছুই নেই৷

— লজ্জায় যদি থাকে তাহলে বাবা হবো কিভাবে? (ব্রু নাচিতে কথাটি বলে)

— আপনার মুখে কিছুই আটকাতে চায় না। এখন আমাকে নামান না হলে আমি 😞

— কি করবে তুমি? কেঁদে দিবে তুমি!

— আমার কিন্তু ভালো লাগছে না৷ প্লিজ আমাকে নামিয়ে দেন৷

–নামাতে পারি এক শর্তে?

–কিসের শর্ত?

— তোমার আঁখি বন্ধ কর?

— না আমি আঁখি বন্ধ করবো না৷

— তাহলে আমিও নামাবো না৷

— ওকে বন্ধ করছি।

ছোঁয়ার কথা হলো সে পুরোপুরি আঁখি বন্ধ রাখবে না৷ তপেস তার সাথে কি করতে চায় তা দেখেই ছাড়বে? কিন্তু তার আশাতে জল ঠেলে দিল।

ছোঁয়া চোখ বন্ধ করতেই অন্য একজন এসে ছোঁয়ার চোখ কোমল রেশমি কাপড় দিয়ে ছোঁয়ার চোখ বেঁধে দেয়৷

— ক্ষেপে বলে উঠে আমার চোখ বাঁধার সাহস দেখায় কে?

— ছোঁয়া তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে?(তপেস)

— কিসের সারপ্রাইজ?

— সারপ্রাইজের কথা কেউ বলে দেয়৷ এটা কোন মহাভারতে লেখা নেই৷

— এখন আমাকে নামিয়ে দেন৷

— না নামাবো না৷ বেশি কথা বললে তোমাকে ফেলে দিব৷ তাতে আমারই ভালো হবে।

— কি📣?

তপেস তার হাতের বাঁধান কিছুটা হালকা করতেই ছোঁয়া তপেসের গলা জড়িয়ে ধরে।

— প্লিজ আমাকে ফেলে দিবেন না৷ফেলে দিলে আমার কোমরের ১২ টা বেজে যাবে৷ আমায় কেউ বিয়ে করবে না😭।

— আমি আছি তো তোমার কলিজা।

— আমার খুব ভয় লাগছে। অন্ধকার আমার ভালো না৷

তপেস ছোঁয়াকে নিয়ে হেঁটে হেঁটে ভার্সিটির হল রুমের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।

— আমাকে কোথায় নিয়ে যান?

— কথা না বলে কোথায় নিয়ে যাচ্ছি সেটা নিয়ে ভাবো। যা একটা ধাঁধা।

— আই অ্যাম মূর্খ মানুষ। আমি ধাঁধার সমাধান কোনদিন বের করতে পারব না৷

— তাহলে কথার মায়াজালে ফাঁসাতে হবে না আমায়৷

ছোঁয়া পিচ্চি বাচ্চাদের মতো মুখ ফুলিয়ে রয়েসে। তপেস ছোঁয়ার এমন ফ্রেস দেখে হাসতেও পারছে না৷ আবার হাসি আটকিয়েও রাখতে পারছে না।ছোঁয়ার সামনে হাসা মানে ফাঁসা। তপেস মুখ টিপে টিপে হেঁসে যাচ্ছে।

[সালা তপেসের বাচ্চা তুই আমাকে এক বার মুক্ত দে৷ দেখ তোর কি হাল করি৷ আমি যদি তোর ১২ টা না বাজিয়েছি আমার নাম দোয়া নয় সরি ছোঁয়া নয়]মনে মনে ছোঁয়া তপেসেকে হাজার গালি দিয়ে যাচ্ছে।

৯.
তপেস ছোঁয়াকে হল রুমে নিয়ে এসে নামিয়ে দেয়৷ ছোঁয়ার আঁখি খুলতেই ছোঁয়া আঁখি কলকাতার রসে গোল্লায় পরিণত হয়৷ ছোঁয়া ভেবেছিল যে তার আঁখির বাঁধান খুলতে আসবে তাকে জোরে কয়েকটা চর বসিয়ে দিবে। ছোঁয়ার আঁখি বাঁধার স্পর্ধা দেখানোর জন্য।

— কি হলো এভাবে মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছো কেন? পছন্দ হয় নি?

— এসব কিছু আমার জন্য?

— হুম এসব কিছু তোমার জন্য? মনে কর দেখো আজ কত তারিখ।

— আজ তো ২০ শে ফেব্রুয়ারি।

— এই দিনে আমি তোমাকে প্রপোজ করেছিলাম৷ আজ আমাদের ভালোবাসা এক বছর পূর্ণ হলো।

— সরি আমি সত্যিই সব কিছু ভুলে গেছি৷ আমার কিছু মনে ছিল না৷ এজন্যই আমি একটা গাধা।

— আমি আছি তুমি যখনই আমাকে ভুলে যাবে তখনই আমি তোমাকে স্মরণ করিয়ে দিব।

— এজন্য তোমাকে আমার খুব ভালো লাগে।

— চল কেক কাটবে। আজ মহাদেবকে সাক্ষী রেখে বলছি তোমার হাত কোনদিন ছেড়ে যাবো না।

— আমিও তোমার হাত সারা জীবন ধরে রাখবো।

— আমাদের ভালোবাসা স্মৃতি করে রাখার জন্য আজ আমরা সারাদিন ঘুরে বেড়াবো।

— ওকে,,, কিন্তু আজ অন্য জায়গায়৷

— কোথায় যাবে তুমি?

— আপনার প্রিয় পাহাড়ে ঘুরে বেড়াবো৷

পাহাড়ের কথা শুনে তপেস অনেক খুশি হয়ে যায়৷ তপেস ছোঁয়াকে হাঁটু গেরে সবার সামনে প্রপোজ করে৷ ছোঁয়া তপেসের প্রপোজ এক্সেপ্ট করে৷

তপেস ছোঁয়াকে নিয়ে দার্জিলিং পাহাড়ে এসেছে৷ শীতে দার্জিলিং এর পাহাড় সবার কাছে অনেক প্রাণপ্রিয় একটা জায়গা৷ তবে অন্যান্য মৌসুমে তেমন কদর না থাকলেও শীত মৌসুমের মতোই জনবহুল পূর্ন হয়ে থাকে।

ছোঁয়া তপেসের হাত ধরে দার্জিলিং এর পাহাড় দেখতে খুবই ব্যস্ত৷ ছোঁয়া আজ প্রথম প্রকৃতিকে এমন ভাবে কাছ থেকে দেখছে। ছোঁয়া সময় পেলে শুধু নদীর তীরে এসেছে৷ কোনদিন ছোঁয়া পাহাড়ে আসে নি৷ ছোঁয়ার ধারণা পাহাড় দেখতে ভালো না৷

— আজও বলবে পাহাড় ভালো লাগে না৷

–হ্যাঁ বলবোই তো।

— তাহলে এভাবে উপভোগ করছো কেন চলে যাচ্ছি না কেন?

— ওই মিয়া ছোঁয়া এক কথার মানুষ।

১০ বছর আগে বলেছি আমার পাহাড় ভালো লাগে না। এখনও বলব ভালো লাগে না৷ ১০ বছর পরেও বলব পাহাড় আমার ভালো লাগে না৷

— ছোঁয়া তোমার কথা আমার মাথায় উপর দিয়ে যাচ্ছে।কিছুই বুঝতে পারছি না৷

— আপনি একটু মাথা উঁচু করার চেষ্টা করেন৷

— কেন?

— আরে আপনিই তো বললেন আমার কথা মাথায় উপর দিয়ে যাচ্ছে। একটু মাথা উঁচু করলে আমার কথা আপনার মাথায় আটকে যাবে।

ছোঁয়া এসব বাচ্চা সূলভ কথা শুনে পাশে থাকা কিছু লোক হেঁসে উঠে।

— জানেন তপেস?

— কি জানবো?

— বর্তমানে কিছু লোক দাঁত ব্রাশ করে না। এজন্য হাসার সময় পঁচা দাঁতগুলো বেয়িয়ে যায়। যেমন আমাদের চারিপাশে কিছু লোকজন।

ছোঁয়ার এমন অপমান জনিত কথার প্রতিবাদ করতে চেয়েছিল অনেকে।কিন্তু তার সাথে কথা বললে যদি দাঁত বের হয়। আমাদের খাবার যদি দাঁতে আটকে থাকে তাহলে আমরা বরং অপমান হবো। এসব কিছু ভেবেই পাশে থাকা লোকজন তাদের থেকে দূরে চলে যায়।

— এভাবে কাউকে অপমান করা ঠিক না ছোঁয়া?

— আরে রাখেন আপনার জ্ঞানের কথা। আমি ভাবছি আমি যেখানে যাবো দেখানে যেন কেউ ডিস্টার্ব করতে না পারে৷ সে জন্য এসব নাটক করলাম। কারণ আই অ্যাম বুদ্ধিমান।

— তোমার যা বুদ্ধি তা তোমার কথাতে বুঝা যায়।

— আমাকে কি গাধারাম বা হাঁদারাম মনে হয় আপনার৷

— না তুমি ভুল ভালো বুদ্ধিমতী কিশোরী।

— ধন্যবাদ আমাকে ফলো করে যান। কারণ আমি আপনার উঠ বি৷ ১০.
আপনি বাড়িতে যাবেন না৷(ছোঁয়া)

— যাবো

— তাহলে আমার পিছু পিছু আমাদের বাড়িতে আসছেন কেন? আমাকে বকা শুনাতে চান৷ যদি বকা শুনান ব্রেক আপ।

— এই নিয়ে ৪৬ বার ব্রেক আপ করলে। কিন্তু সত্যি সত্যি কোনদিন ব্রেক আপ করো না৷ তাহলে সেদিন আমার শেষ দিন হবে৷

— আপনি মিশে আছেন আমার হৃদয় জোড়ে। আপনাকে ভুলে আমিও কোনদিন থাকতে পারবো না আপনাকে আমিও খুব ভালোবাসি

— আমিও তোমাকে খুব ভালোবাসি।


পিছন থেকে বলে উঠে এভাবে লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করা বন্ধ করে দেওয়ার পালা এভার৷

ছোঁয়া পিছনে ফিরে অভাগ হয়ে আঙ্কেল আপনি(তপেসের বাবা)

তপেসের মা ছোয়ার মাথায় হাত রেখে বলে উঠে এখন আর আঙ্কেল আন্টি বললে চলবে না।

ছোঁয়া চোখ ছোট করে তাহলে কি বলে ডাকবো৷

তপেসের মা মুচকি হেঁসে এখন থেকে আমাদের মা বাবা বলে ডাকবে।

আমাদের করিডরে কি দাড় করিয়ে রাখবে নাকি ভিতরে যেতে বলবে(তপেসের বাবা)

ভিতরে আসেন(ছোঁয়া)


ছোঁয়া তপেসের মা বাবাকে নিয়ে ডায়িং রুমে বসতে বলে৷ ছোঁয়ার বাবা এসে তপেসের বাবার সাথে কৌশল বিনিময়ে করে।

ছোঁয়া ফ্রেশ হবার জন্য সিড়ি বেয়ে নিজের রুমে যাচ্ছে।

— কি মনে করে কিছু না বলে এখানে আসা(ছোঁয়ার বাবা)

— আমি আর দেরি করতে চায় না৷ (তপেসের বাবা)

— কি দেরি করতে চান না। আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না আপনার কথা। (ছোঁয়ার বাবা)

— আমি চায় এই সপ্তাহে তাদের চার হাত এক করে দিতে৷

বিয়ের কথা শুনে ছোঁয়া দাঁড়িয়ে পড়ে তাদের বাবার উত্তর জানার জন্য৷

–আমিও খুব খুশি৷ আমি এটাই বলতে চেয়েছিলাম আপনাদের।

ছোঁয়া তার বাবার উত্তর শুনে এক প্রকার দৌড়ে রুমে চলে যায়। শাওয়ার অন করে ছোঁয়া মনে শুধু অদ্ভুত লোকটির কথা মনে পড়ছে। যার সাথে ছোঁয়ার সহবাস হয়েছে তাকে ফেলে কিভাবে ছোঁয়া তপেসকে বিয়ে করবে। তার মাথায় কিছুই ডুকছে না৷



ছোঁয়া কান্না করতে করতে কখন ঘুমিয়ে পড়ে জানা নেই৷ মাঝ রাতে ছোঁয়া বুঝতে পারে তার পাশে বসে কেউ হাউমাউ করে কান্না করে যাচ্ছে। কিন্তু আঁখি মেলে যা দেখে তার জন্য ছোঁয়া প্রস্তুত ছিল না।

চলবে,,,,