#অদ্ভুত_নেশা
#পর্ব_০৫
#অধির_রায়
১১.
ছোঁয়া কান্না করতে করতে কখন ঘুমিয়ে পড়ে জানা নেই৷ মাঝ রাতে ছোঁয়া বুঝতে পারে তার পাশে বসে কেউ হাউমাউ করে কান্না করে যাচ্ছে। কিন্তু আঁখি মেলে যা দেখে তার জন্য ছোঁয়া প্রস্তুত ছিল না।
ছোঁয়া চোখ মেলে একটা সুন্দর মেয়েকে দেখতে পায়৷ গায়ে তাহার সাদা কারুকাজ করা গর্জিয়াস গহনা৷ মুখখানা দেখতে চাঁদের ন্যায় উজ্জ্বল।
— কে আপনি? এখানে এভাবে কেন কান্না করছেন?
— মা আমি তোমার কাছে একটা কথা অনুরোধ নিয়ে এসেছি।
— কিসের অনুরোধ?
— তুমি কথা দাও আমার কথা রাখবে।
— আগে তো আপনার অনুরোধের কথাটা বলেন?
— আগে বলো তুমি আমার কথা রাখবে।
–হুম আমি আেনার কথা রাখার চেষ্টা করবো।
মহিলাটি কথা শুরু করতেই ছোঁয়ার মা ছোঁয়াকে ডাক দেয়। কিন্তু অদ্ভুত ঘটে এখানে ডাক আসার সাথে সাথে ছোঁয়া অদ্ভুত মহিলাটিকে আর দেখতে পেল না৷ ছোঁয়া ওয়াসরোম, বেলকনি সব জায়গায় খোঁজেছে৷ দেখা মেলেনি ওই ভদ্র মহিলার।
ছোঁয়া হতাশ হয়ে নিচে নামে।
— তোমাকে কখন থেকে ডাকা হচ্ছে?(ছোঁয়ার মা)
— আসলে মা ওয়াসরোমে ছিলাম তাই সাড়া দিতে পারিনি৷
— গতকাল রাতেও কিছু খাওনি৷ আজও না খেয়ে ঘুমিয়ে যাবে৷
— না মা না খেয়ে ঘুমিয়ে যাবে কেন? গতকাল রাতেও তো খেয়েছি৷
ছোঁয়া হঠাৎ করেই সব বলে দিতে চেয়েছিল অল্পের জন্য সে সব কিছু সামলিয়ে নেয়।রাতের খাবার শেষ করে রুমে ফিরে আসে৷
রুমে আসতেই ছোঁয়ার রুমের দ্বার অটো বন্ধ হয়ে যায়। লাইট সব বন্ধ হয়ে যায়৷ ছোঁয়া ভয়ে কাবু হয়ে দেয়ালের সাথে লেগে দাঁড়ায়৷ পরক্ষণেই মনে পড়ে এই ভুত আমার কোন ক্ষতি করবে না। যা করার আগেই করে ফেলেছে৷ এখন যেভাবেই হোক তার নাম জানতে হবে৷
ছোঁয়া নিজের মাঝে সাহস জুগিয়ে ধীরে ধীরে বলে উঠে কে আপনি?
ছোঁয়া নিজেকে হালকা অনুভব করতেই ছোঁয়া দেখতে পায় সে তার বিছানায় শুয়ে আছে৷ তাকে আষ্টেপৃষ্টে জরিয়ে ধরে শুয়ে আছে অদ্ভুত লোকটি৷ যার জন্য ছোঁয়ার শ্বাস নিতে কিছুটা কষ্ট হচ্ছে৷
ছোঁয়া অদ্ভুত লোকটিকে হালকা ধাক্কা দিয়ে এই আপনি আগে আমাকে আপনার পরিচয় দেন.
— আমার পরিচয় দিয়ে কি করবে তুমি?
— আপনার লজ্জা থাকা দরকার একটা মেয়ের সাথে সহবাস করেছেন তাও পরিচয় হীনভাবে৷
— আমি যার সাথে সহবাস করেছি সে আর কেউ না সে হলো আমার বউ৷
— কে আপনার বউ?
— এখানে তুমি ছাড়া অন্য কেউ নেই। তাহলে জেনে নাও আমি কার কথা বলছি৷
— আমি আপনাকে স্বামী হিসেবে মানি না।
— কেন?
— অপরিচিত কাউকে স্বামী হিসেবে মানা আমার পক্ষে সম্ভব নয়৷
— পরিচয় বড় না৷ এটা বড় আমি তোমার স্বামী।
–পরিচয় বড় আমার কাছে৷ আমি অপরিচিত কারো সাথে কোনদিন কথা বলি না৷
— আমার সাথে এখন বলছো তার মানে আমি তোমার পরিচিত।
— ওকে আপনার পরিচয় দিতে হবে না শুধু আপনার নামটা বলে যান৷
— আমার নামটাই শুধু শুনতে চাও!
— হুম শুধু আপনার নাম শুনতে চায়৷
— আমি আর কেউ না। আমি তোমার বন্ধু অধির রায় চৌধুরী।
— অধির রায় চৌধুরী মানে কি? আমি এই নামে কাউকে চিনি না।
ছোঁয়া অনেক কিছু বলতে নিবে তার আগেই অধির ছোঁয়ার মুখে হাত দেয়৷ যার ফলে ছোঁয়া কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলে। কিন্তু সে ঠোঁট নাড়িয়ে অনেক কিছুই বলে যাচ্ছে। যা ছোঁয়া ছাড়া অন্য কেউ শুনতে পারছে না৷
সকাল বেলা ছোঁয়ার ঘুম ভাঙে পাখির কিচিরমিচির শব্দে৷ ছোঁয়া ঘুম থেকে উঠে অভাগ৷ আজ ছোঁয়ার গায়ে কম্বল টুকুও নেই৷ সমস্ত গায়ে এক ফোঁটা কাপড়ের অংশও নেই।
ছোঁয়া তারাতাড়ি করে নিজেকে কম্বল দিয়ে প্যাচিয়ে নেয়৷ ছোঁয়ার নিজের এমন অবস্থা দেখে দেখে কেঁদে যাচ্ছে নিঃশব্দে। মন বলছে তুই পৃথিবী ছেড়ে চলে যা৷ কিন্তু আত্মহত্যা মহাপাপ।
ছোঁয়ার হঠাৎ অনলাইনের কথা মনে পড়ে৷ অনলাইনে সব কিছুর তথ্য পাওয়া যায়। তার মানে অশরীরী সম্পর্কেও জানা যাবে। এতে অধির আমার কোন ক্ষতি করতে পারবে না৷
ছোঁয়া অনলাইনে সার্চ দিয়ে অশরীরী সম্পর্কে অনেক কিছু জেনে নেয়৷ সেখানে এটা তার কাছে অনেক বড় সহায়তা করে৷ অশরীরী ছায়া শুধু একা কেউ থাকলে তার সাথে খারাপ কিছু করতে পারে৷ এখন থেকে আমি মা বাবার সাথে থাকবো। বিয়ের পর তপেসের সাথে থাকবো৷ সারা রাত তপেসের হাতে হাত রেখে ঘুমিয়ে থাকবো৷
১২.
,ছোঁয়া নিজেকে পোশাক দিয়ে ঢেকে ওয়াসরোমে যায়৷ সেখান থেকে ভালোভাবে পরিষ্কার হয়ে নিচে নামে।
— ছোঁয়া আজ এত লেট হলো কেন?(ছোঁয়ার মা)
— আসলে মা ঘুম ভাঙতে লেট হয়ে গেছে। এর পর থেকে এমন আর হবে না।
— তারাতাড়ি খাবার খেয়ে নাও৷ তোমাকে আমাদের সাথে যেতে হবে৷
— কোথায় যাবো?
— তোমার বিয়ের বাজার করতে?
— আমার বিয়ে৷ না জানার ভান করে বলে উঠে।
— এভাবে অভাগ হবার কি হলো?
— আমার বিয়ে আর আমিই জানি না৷
— জানবে কি করে সারা দিন ফোনে চোখ ঢুবিয়ে রাখলে(ছোঁয়ার মা)
— মেয়েকে আর বকতে হবে না (ছোঁয়ার বাবা)
— তোমার আশকারা পেয়ে এমন হয়েছে!
— মা বর্তমানে সবাই ফোনে মুখ ঢুবিয়ে থাকে শুধু আমি না৷ আর মা তুমি কবে মর্ডান হবে। সেই আদিম মানুষের মতো কথা বলা বন্ধ করবে।
— কি আমি আদিম মানুষ? (ছোঁয়ার মা)
— মা কথা বলা বন্ধ করো৷ আমার খাওয়া শেষ৷ তোমরা তাড়াতাড়ি আসো৷ আমি অনেক ক্ষণ অপেক্ষা করতে পারব না। (সিদ্ধার্থ)
— কি আমার বিজনেসম্যান আসছে৷ অপেক্ষা করতে পারবে না৷ (ছোঁয়া)
— তোর কথা শুনার মতো আমার কাছে কোন সময় নেই৷ আর বিয়েটা আমার না বিয়েটা তোর৷
— আমার বিয়ে আমাকে বুঝে নিতে দে তোকে বলতে হবে না৷
— এবার ঝগড়া বন্ধ কর তোরা! ক্ষেপে বলে উঠে ছোঁয়ার মা৷
–
–
–
শপিংমল
ছোঁয়া তার বিয়েতে বেনারসি পড়বে নাকি লেহেঙ্গা পড়বে তা ভেবে পাচ্ছে না৷ একবার বলছে বেনারসি পড়বে আর একবার বলছে লেহেঙ্গা পড়বে৷ তার এই দ্বিধা সবাইকে তিক্ত করে তুলেছে৷
— তুই বিয়েতে বেনারসি পড়বি এটাই আমার ফাইনাল কথা।ছোঁয়ার মা বলে উঠে।
ছোঁয়া ১০ টার মতো বেনারসি সামনে বসে আছে কিছুতেই বেনারসি পছন্দ করতে পারছে না৷ হঠাৎ ছোঁয়ার চোখ পড়ে সোনালী রঙের পাড়ের দিকে। যেখানে সে ওই সব কারুকাজ দেখতে পায়। যা সে অদ্ভুত লোকটির রুমে দেখতে পেয়েছি৷ এখন তো অদ্ভুত লোক বলা যাবে না৷ সালার নাম হলো অধির৷
— চাচা ওই সোনালী রঙের পাড়ের বেনারসিটা দেখান৷ (ছোঁয়া)
দোকানদার চাচা সোনালী রঙের পাড়ের বেনারসিটা বের করে৷ সোনালী পাড়ের হলেও সমস্ত বেনারসি লাল রঙের। যা সকলের পছন্দ হয় একদম গর্জিয়াছ বেনারসি। ২৬ হাজার টাকা দিয়ে তারা সেই বেনারসিটা কিনে নিল।
ছোঁয়ার বেনারসি কিনার পর তপেসের বাড়ির লোকজন আসে তারাও ছোঁয়ার বেনারসিটা খুব পছন্দ করে।
ছোঁয়া আর তপেস মিলে তাদের পছন্দ মতো সব কিনে নিল। তাদের এমন কাপল দেখে সবাই মুগ্ধ।যেন তারা এক সাথে চলতে পারে এজন্য অনেকে তাদের জন্য প্রার্থনা করেছে।
বিয়ের সমস্ত কেনা কাটা করে তারা বাড়িতে ফিরে আসে৷ সকলেই খুব ক্লান্ত।
১৩.
ছোঁয়ার মা বাবা ঘুমানোর ঠিক মুহুর্তেই ছোঁয়া এসে হাজির৷
–মা বাবা আমি তোমাদের সাথে ঘুম আসবো৷(ছোঁয়া)
— পাগল মেয়ে তুমি তো এখন বড় হয়ে গেছো এখন আমাদের সাথে কেন ঘুম আসবে৷ (ছোঁয়ার বাবা)
— আমি জানতাম তোমরা কেউ আমাকে ভালোবাসো না৷ এজন্য তো আমাকে এই বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিতে চাইছো৷
ছোঁয়া ন্যাকা কান্না করে যাচ্ছে।যেন তার মা বাবা তাকে ফিরিয়ে না দিতে পারে৷
–ছোঁয়ার মাথায় হাত রেখে ছোঁয়ার মা বলে উঠে কে বলছে আমরা তোমাকে ভালোবাসি না৷ আমাদের নিজের থেকেও বেশি তোমাকে ভালোবাসি৷
— মুখেই ভালোবাসা কাজে কোন ভালোবাসা নেই৷ লাগবে না তোমাদের ভালোবাসা।
— পাগলি মেয়ে তোমাকে কি আমি রুম থেকে চলে যেতে বলছি৷ তুমি আমাদের সাথেই ঘুম আসবো৷ (ছোঁয়ার বাবা)
— কিন্তু আমার একটা শর্ত আছে?
— কিসের শর্ত?
— বিয়ের আগ পর্যন্ত আমি তোমাদের সাথে ঘুম আসবো।
— ওকে ডিয়ার৷(ছোঁয়ার মা)
ছোঁয়া তার মা বাবার মাঝ খানে শুয়ে পড়ে৷ মনে মনে সে খুব খুশি।সালা অধির তুই আমাকে আর বিরক্ত করতে পারবি না৷
সালা অধির তুই কোনদিন আমাকে পাবি না৷ আমি তোকে কোনদিন ভালোবাসিনি৷ আর কোনদিন ভালোবাসবোও না৷ সালা ভুত কোথাকার। তোকে আমি সামনে পেলে তোর মাথা কেটে ফুটবল খেলতাম৷
ছোঁয়া সকাল বেলা নিজ রুমে এসে অভাগ,
চলবে,,