অদ্ভুত পূর্ণতা Part-06

0
1134

#অদ্ভুত_পূর্ণতা
writer – তানিশা
part – 6

আবির : আপনি দেখতে অনেক সুন্দর ( মুগ্ধ নয়নে )

তানিশা : জানি, কাব্য ভাইয়া সবসময় এই কথাটা বলে। ( বিরক্ত নিয়ে )

আবির : কাব্য কে? ( বিষময় নিয়ে )

তানিশা : নীলার ভাই।

আবির : নীলা কে?

তানিশা : আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।

আবির : আপনার বেস্ট ফ্রেন্ডের ভাই আপনাকে কিভাবে চিনে?

তানিশা : ভাইয়া তো আমাকে অনেক আগে থেকেই চিনে। কিছুদিন আগেও তাদের বাসায় ঘুরতে গেছিলাম। ওনি অনেক ভাল মানুষ। আমাকে মেলায় নিয়ে গেছে, তাদের অরণ্যপুর গ্রামের বটতলা নিয়ে গেছে। জায়গাটা অনেক সুন্দর।

— আবির ছেলেটা কিছুটা ইতস্তত করে বলল,,,

আবির : আপনি কি ওনাকে পছন্দ করেন?

তানিশা : না,, তো। ( মাথা নেড়ে )

আবির : ওনি হয়তো আপনাকে অনেক পছন্দ করে। তাইনা??

— তানিশা চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে, কাব্য কেন তাকে পছন্দ করতে যাবে? কাব্য তো অন্য একটা মেয়েকে পছন্দ করে। কিন্তু কাকে পছন্দ করে এটা তো কখনো বলেনি, মাঝেমাঝে বলতো তানিশাকে। তার মানে কি কাব্য সত্যি তানিশাকে পছন্দ করে? তানিশাকে চুপ থাকতে দেখে আবির আবারও বলল,,,

আবির : আমি স্পষ্ট ভাবে কথা বলতে পছন্দ করি। আপনাকে আমার অনেক পছন্দ হয়েছে। আপনার মতামতের উপর ভিত্তি করেই আমাদের বিয়ে হবে। যদি আমাদের বিয়ে হয়, আমি কখনো এটা চাইবো না, বিয়ের পর আপনি আপনার ফ্রেন্ড নীলার ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ রাখেন। কারণ আপনার কথায় এটা স্পষ্ট বুঝা যায়, উনি আপনাকে অনেক পছন্দ করে। আর আমার স্ত্রীকে কেউ পছন্দ করবে বা অন্য নজরে দেখবে এটা আমি স্বামী হিসেবে কখনো মেনে নিবো না।

— তানিশা মনেমনে ভাবছে, এই নাইজেরিয়ান উগান্ডার থেকে তো কাব্য ভাইয়া হাজার গুণে ভাল। কাব্য ভাইয়া বলতো যাকে ভালবাসে তার স্বাধীনতা, পছন্দ, অপছন্দ, ভাললাগাকে প্রাধান্য দিয়ে তাকে বিয়ে করবে। এখন সে কি করবে? এই লাল বাদর, কালা ছাগলকে তো জীবনেও বিয়ে করবেনা। কিন্তু তার মা এই মুখ পুরা হনুমানের গলায় তাকে ঝুলিয়েই ছাড়বে। কি করে এই মুখ পুরা হনুমানকে বিয়ে করা থেকে বাচা যায়? তানিশা মন খারাপ করে ভাবতে লাগলো। আবির আবারও বলল,,,

আবির : আমাকে আপনার কেমন লেগেছে?

তানিশা : কাব্য ভাইয়ার থেকে দেখতে অনেক খারাপ। কাব্য ভাইয়া দেখতে অনেক সুন্দর, পুরাই ক্রাশ খাওয়ার মতো একজন। আমি খাইনা আরকি, ভাবতাম ওনি অন্য কাউকে পছন্দ করে। আমি ক্রাশ খেয়ে কি লাভ? কিন্তু আজকে জানলাম লাভ আছে, ওনি তো আমাকেই পছন্দ করে। চোখ থাকা কানি, শাঁকচুন্নি নীলা কখনোই এই কথাটা আমাকে বলেনি। পেত্নীটা একবার আমার সামনে আসলে তার চুল গুলো টেনে ছিড়ে, ঠাস ঠাস করে কয়েকটা চড় মারবো। তারপর জিঙ্গেসা করবো কেন বলেনি। ফাজিল মেয়েটার কারণে আজকে আমার জীবনটা ত্যানা ত্যানা হয়ে গেছে। ( রাগে গজগজ করে )

— আবির হা করে তানিশা দিকে তাকিয়ে আছে। এই মেয়ে কি পাগল নাকি? কিসব আবোল তাবোল বলছে। তানিশা আবিরের দিকে তাকিয়ে বলল,,,

তানিশা : ভাইয়া আপনার আর কোনো কথা আছে আমার সাথে?

— ভাইয়া ডাক শুনার সাথে সাথে আবির অন্যদিকে তাকিয়ে বলল,,,

আবির : ভাইয়া ডাক শুনার পর আর কি কথা থাকতে পারে? সব কথা শেষ হয়ে গেছে। আর কিছু বাকি নাই।

তানিশা : তাহলে এখানে বসে আছেন কেন? আমার রুম থেকে বাহিরে যান। কতো কষ্ট করে রুমটা গুছিয়েছি।

— কথাটা বলেই তানিশা রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। আবির তার পিছুপিছু রুম থেকে বেরিয়ে ড্রয়িংরুমে এসে বসলো। তানিশার মা আবিরকে কিছু জিঙ্গেসা করতে যাবে, তখনি বাসার কলিংবেল বেজে উঠলো। তানিশার মা উঠে এসে দরজা খোলে দেখে কাব্য দাঁড়িয়ে আছে। তাকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে সে প্রচন্ড হাঁপাচ্ছে। তানিশার মা তাকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই কাব্য হুট করে বাসার ভিতরে ঢুকে গেলো। ভিতরে গিয়ে দেখে তানিশা ড্রয়িংরুমে পাত্রপক্ষের সামনে বসে আছে।

আজ তানিশাকে পাত্রপক্ষ দেখতে এসেছে যেটা কাব্য আগে থেকে জানতো না। কথাটা জানার সাথে সাথেই কাব্য তানিশার বাসায় চলে এসেছে। কাব্যকে দেখা মাত্র তানিশা বসা থেকে অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে গেলো। কাব্য এখানে কেন এসেছে? তারমানে কি কাব্য সত্যি তাকে ভালবাসে? এখন কাব্যর কি হবে? ভাবতে ভাবতেই মন খারাপ করে মাথা নিচু করে ফেললো। কাব্য কিছু চিন্তা না করেই তানিশার পাশে এসে বসে পরলো। তানিশার হাত ধরে টেনে তাকেও নিজের পাশে বসিয়ে বলল,,,

কাব্য : আজ তোমাকে পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে বলনি যে? ( হাঁপাতে হাঁপাতে )

তানিশা : বলবো কিভাবে? আমি তো নিজেই জানতাম না। বিকেলে ঘুমিয়ে ছিলাম, তখন মা ডেকে বলল তৈরি হবার জন্য। ( মাথা নিচু করে )

কাব্য : তোমার পাত্র পছন্দ হয়েছে?

তানিশা : না,, ( করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে )

— কথাটা শুনার সাথে সাথে কাব্য চোখদুটি বন্ধ করে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিয়ে বলল,,,

কাব্য : আলহামদুলিল্লাহ।

— তানিশা, তার মা আর পাত্রপক্ষের দিকে তাকিয়ে দেখে সবাই হাবলার মতো তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। কারো মাথায় কিছুই ঢুকছেনা এখানে আসলে হচ্ছেটা কি? তানিশা সবার দিকে একবার তাকিয়ে হুট করে কাব্যকে বলল,,,

তানিশা : ভাইয়া আমাকে বিয়ে করবেন?

— উপস্থিত সবাই আর কাব্য হা করে তানিশার দিকে তাকিয়ে আছে। কাব্য কি ভুল কিছু শুনছে নাকি তানিশা সত্যি বলছে? কাব্য কিছু বলতে পারছেনা, শুধু হা করে তানিশার দিকে তাকিয়ে আছে। তার অবাকের সীমানা পেরিয়ে যেন বহু দূর চলে গেছে। কিছু বলবে কিভাবে?? তানিশা আবারও বলল,,,

তানিশা : ও ভাইয়া আমাকে বিয়ে করবেন? নাকি আমি এই আবুল মার্কা ক্যাবলা ক্লান্তকে বিয়ে করে ফেলবো?

— আবির এতক্ষণ হা করে তাকিয়ে ছিল। তানিশার কথাটা শুনার সাথে সাথে রেগে গিয়ে তার বাবাকে বলল,,,

আবির : বাবা! প্রথমে তো মনে করছি এই মেয়ে আধ পাগল। এখন দেখি পুরাই মানসিক রুগি। বাবা আমি এই মেয়েকে জীবনেও বিয়ে করবো না।

— বলেই আবির গজগজ করে তার পরিবারকে নিয়ে চলে গেলো। পরক্ষনে তানিশার মা রেগে তানিশাকে বলল,,,

তানিশার মা : তানিশা তুই কি কখনো মানুষ হবিনা?

তানিশা : মা আমাকে দেখে কি তোমার মানুষ মনে হচ্ছে না? আমি অমানুষের কি করলাম?? ( করুণ দৃষ্টিতে )

— তানিশার কথায় ধ্যান না দিয়ে তার মা কাব্যকে বলল,,,

তানিশার মা : কাব্য তুমি হঠাৎ এই সময় এখানে কেন এসেছো?

— কাব্য বসা থেকে উঠে তানিশার মাকে অনেক বিনয়ীর সাথে বলতে লাগলো,,,

কাব্য : আন্টি আপনার সাথে কিছু কথা বলতে এসেছি,,

তানিশার মা : হ্যা বাবা কি বলবে বলো?

কাব্য : শর্টকাট বলি?

তানিশার মা : তোমার ইচ্ছা।

কাব্য : আমি তানিশাকে অনেক আগে থেকেই পছন্দ করি। আমি ওকে হারাতে চাই না। আপনি যদি অনুমতি দেন,,

— কাব্য তার কথা শেষ করার আগে তানিশার মা কঠোরতার সাথে বলতে লাগলো,,,

তানিশার মা : আমিও শর্টকাট কথা বলতে পছন্দ করি। আমি অনুমতি তখনি দিবো, যখন তুমি তোমার পরিবার বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আমাদের বাসায় আসবে। এভাবে হুটহাট সিদ্ধান্ত নেয়া আমার পছন্দ না, পরিবার নিয়ে আসো তারপর বসে কথা বলবো।

— কথাটা বলেই ওনি সোফা থেকে উঠে পরলো।

কাব্য : আন্টি আমাকে কি ১০ মিনিট সময় দেয়া যাবে?

তানিশার মা : তারচেয়েও অনেক বেশি সময় নিতে পারো। তাতে আমার আপত্তি নেই। কিন্তু তোমার পরিবারের মতামতের উপরেই আমার সিদ্ধান্ত অটল থাকবে।

— কাব্যর মা তাদের বাসায় ঢুকতে ঢুকতে বলে উঠলো,,,

কাব্যর মা : তার কোনো প্রয়োজন নেই আপা। আমার তরফ থেকে কোনো আপত্তি নেই। আমার কাব্য যার সাথে সুখি হবে আমি তাকেই নিজের মেয়ের মতো করে মেনে নিবো। আর তানিশাকে আমার অনেক আগে থেকেই পছন্দ।

— তানিশার মা পিছনে ফিরে দেখে কাব্যর মা আর নীলা দাঁড়িয়ে আছে। নীলা কাব্যর দিকে তাকিয়ে ভ্রু দুটি নাচিয়ে একটা দুষ্টামির হাসি দিলো। কাব্যর আর বুঝতে বাকি রইলোনা তার মাকে নীলাই মানিয়ে নিয়ে এসেছে। নীলার মতো এমন একটা বোন থাকলে পৃথিবীতে সব ভাইয়া শ্রেষ্ঠ সুখি মানুষ হতো।

সকালে তানিশা নীলাকে কল দিয়ে পাত্রপক্ষের কথা জানাতেই নীলা কাব্যকে বিষয়টা জানিয়ে দিলো। আর কাব্য অফিস থেকে ছুটে চলে এলো তার প্রিয় মানুষটাকে অন্য কারো হওয়ার আগে নিজের করে নেয়ার জন্য। অপরদিকে নীলা তার মাকে বুঝিয়ে নিয়ে এসেছে তানিশাদের বাসায়। পৃথিবীতে কাব্যর হাসি মুখটাই নীলার কাছে আত্মতৃপ্তির কারণ। কারণ বাবা না থাকলেও কাব্য কখনো তাকে বাবার অভাব বুঝতে দেইনি, তার প্রত্যেকটা চাহিদা নির্দ্ধিধায় পূরন করেছে। আর নীলার খুশিতেই যেন কাব্য সুখ খোঁজে পেতো।

নীলা তানিশার মায়ের সামনে এসে বলল,,,

নীলা : আন্টি আপনি তো আমাদের সম্পর্কে সব জানেন। আমরা আহামরি কোনো ধনি না। তবে হ্যা ভাইয়া ব্যাংকের জব করে ভাল মানের সেলারি পায়। ছেলে হিসেবে কেমন আশা করি এটা আপনাকে বলতে হবেনা। আপনার যদি কোনো আপত্তি না থাকে, আমার ভাইয়ের জন্য আমি তানিশাকে নিজের ভাবি বানাতে চাই। আমার বিশ্বাস তানিশা ভাইয়ার সাথে অনেক সুখি হবে। বাকিটা আপনার মতামত।

— তানিশার মা ভ্রু কুচকে কাব্যর দিকে তাকিয়ে আছে, কিছু বলছেনা। কাব্য মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে, ভয়ে তার হার্টবিট বেড়ে যাচ্ছে। এখন তানিশার মা কি বলবে তাকে? তানিশা নীলার পাশে এসে তার হাত ধরে কানের কাছে ফিসফিস করে বলল,,,

তানিশা : মা জীবনেও মানবে না রে,, আমি জানি।

নীলা : তুই চুপ থাক। ( ধমক দিয়ে )

— নীলা ভয়ে ভয়ে তানিশার মাকে আবারও বলল,,,

নীলা : আন্টি হ্যা না কিছু তো বলেন?

চলবে,,,
( ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)