অদ্ভুদ ভালোবাসা পর্ব-১৮+১৯

0
433

#অদ্ভুদ_ভালোবাসা
#সুমাইয়া_সুমু
পার্টঃ১৮
,
হায়াত বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে আর কিছু ক্ষন আগের কথা ভাবছে। হঠাৎ মুরাদ হায়াত কে কাছে টানায় যেনো সে হাতে চাঁদ পেয়ে গেছে। এতে সে একটু একটু করে ওকে কষ্ট দেবার রাস্তায় এগোচ্ছে।
,
আসলে তখন নাচের মাঝ খানেই মুরাদ ওকে কাছে টেনে নিজের সাথে জোরে চেপে ধরে নাচতে লাগে। হায়াত অনেক বার ছাড়ানো চেষ্টা করলেও মুরাদ ছাড়েনি। এসব দেখে মাইশার জ্বলে উঠে। কিন্তু অভ্র কোনো রিয়েক্ট করে না। হঠাৎ করে হায়াত মুরাদ কে ধাক্কা দিয়ে হাত উঁচু করে বলতে লাগলো-
,
হায়াতঃ নিজের লিমিট এর মধ্যে থাকবেন একদম কাছে আসার চেষ্টা করবেন না।
,
কথাটা বলে হায়াত উপরে চলে আসে। আজকে ওদের এংগ্রেসমেন্ট হবে। এটা অবশ্য এখন মাহিম এনাউন্সমেন্ট করবে। হঠাৎ করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া। আসলে মাহিম যত তারাতাড়ি পারে বিয়ে টা শেষ করতে।
,
এসব কথা ভাবতেই খুশি এসে ওকে ঢেকে নিয়ে যায়। হায়াত ও ওর সাথে নিচে যায়। নিচে যেতেই মাহিম মাইক নিয়ে বলা শুরু করে-
,
মাহিমঃ আজকে আরেকটা এনাউন্সমেন্ট কারার আসে আর সেটা হলো আমরা চাই মানে আমার পুরো পরিবার চায় আজকে চার জনের এংগ্রেসমেন্ট টা সেরে ফেলতে আর আগামী সপ্তাহে বিয়ে টা সেরে ফেলতে। তো এখন আংটি বদল টা সেরে ফেলা হোক।
,
কথাটা শুনে মুরাদ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে মাহিমের দিকে এদিকে মাইশা তো খুশিতে লাফিয়ে উঠেছে। আজ কতো বছর পর ওর স্বপ্ন পুরন হবে। এর জন্য তার কতো না কাঠ পুড়াতে হয়েছে। প্রথমে হায়াত এর কাছে মুরাদ কে দোষী প্রমান করা। এখন পরিবারের মৃত্যু ভয় দেখিয়ে বিয়ে করতে জোড় করা। উফ আজ কত বছর পর ওর স্বপ্ন পূরণ হবে। ওর কষ্ট বিফলে যাবে না।
,
কিন্তু মাইশার খুশি বেশিক্ষণ স্থায়ী থাকতে না দিয়ে মুরাদ মাহিমের কাছে গিয়ে বললো-
,
মুরাদঃ এসব কি ভাই আজকে তো এংগ্রেসমেন্ট হওয়ার কথা ছিলো না তাহলে এসব কি হুম।
,
মাহিমঃ তুই তো মাইশাকে বিয়ে করার জন্য প্রায় পাগল তাই তোকে আর বেশিক্ষণ অপেক্ষা না করিয়ে আজকে এংগ্রেসমেন্ট টা সেরে ফেলে আগামী সপ্তাহে বিয়ে টা সেরে ফেলবো বুঝলি।
,
,মাহিমের কথা শুনে মুরাদ ওর দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে তার বিয়ের ডেট ফিক্স করেছে কিন্তু ওকেই কিছু বলেনি এবার ও কিভাবে কি করবে। কিভাবে মাইশার মুখোশ সবার সামনে আনবে এটা ভেবে পাচ্ছে না। তার উপর আবার হায়াত ও বিয়ে করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। মুরাদ কিছু বলতে যাবে তার কাছে কয়েকজন ছেলে মুরাদ কে টেনে টুনে এসে স্টেজে দাড় করালো।
,
স্টেজে পুরো চারটা সোফা সেট করা হয়েছে এক জোড়া মুরাদ আর মাইশার জন্য আরেক জোড়া হায়াত আর অভ্রের জন্য। মুরাদ জেনো পাথর হয়ে গেছে ও কি করবে ভেবেই পাচ্ছে না। ঠিক তখনি দু’জন মেয়ে এসে এক থালা মাইশা আর মুরাদ এর কাছে নিয়ে আসলো আরেক থালা হায়াত আর অভ্রের কাছে নিয়ে গেলো। ওরা কাপড় সরাতে দেখতে পেলো ওই খানে রিং রাখা। প্রথমে মাইশা রিং পড়িয়ে দিলো তারপর মুরাদ কে দিলো পড়াতে। ওর জেনো কথা কানেই যাচ্ছে না। ও শুধু একটাই কথা ভাবাচ্ছে কিভাবে কি করবে ও। এসব দেখে মাইশা মুরাদ কে একটু ধাক্কা দিলো। তারপর মুরাদ হাতে রিং নিতেই মাইশা তড়ি ঘরি করে রিং নিজের হাত এ পড়ে নিলো। এভাবেই হায়াত আর অভ্রের ও আংটি বদল সম্পূর্ণ হলো।
,
,
দেখতে দেখতে অনুষ্ঠান ও শেষ হয়ে গেলো। সারা অনুষ্ঠান হায়াত শুধু মুরাদ কে দেখেছে। ওর মুখের রিয়েকশন টা ওকে অনেক মজা দিচ্ছে। এভাবেই অনুষ্ঠান শেষ হয়ে যে যার মতো বাড়ি চলে গেলো।
,
,
মধ্য রাতে,,,,,
হায়াত ঘুমিয়ে আছে হঠাৎ ওর মনে হলো ওর হাত ধরে কে জানি কান্না করছে। হায়াত চোখ খুলে অবাজ চোখে তাকিয়ে আছে সামনে বসে থাকা মানুষটার দিকে,,,,
,
,
চলবে,,,,,

#অদ্ভুদ_ভালোবাসা
#সুমাইয়া_সুমু
পার্টঃ১৯
,
হায়াত চোখ খুলে দেখে মুরাদ ওর হাত ধরে বসে আছে। এই সময় মুরাদ কে দেখে অনেক টা অবাক হলো হায়াত। হায়াত নিজের হাত টা ঝাড়া দিয়ে বলে উঠলোঃ
,
হায়াতঃ এই সময়ে এই খানে কি করছেন আপনি কেউ দেখলে খারাপ ভাববে। আর কয়দিন পর বিয়ে সো আপনাকে আমাকে এই সময় এই ভাবে দেখে অনেকে কটু কথা বলবে।
,
মুরাদ আবার হায়াত এর হাত টা ধরে বলে উঠলোঃ
মুরাদঃ বাবুইপাখি এমন কোনো করছো? ওই অভ্র কে কেনো বিয়ে করছো আমাকে কষ্ট দিতে চাও মারো যা ইচ্ছ তাই করো তাও অভ্র কে বিয়ে করো না প্লিজ জান।
,
হায়াত নিজের হাত টা আবার ঝাড়া মেরে রাগি বলায় বলে উঠলো-
হায়াতঃ এইসব কি একজন পর-নারীর ঘড়ে আসতে লজ্জা করে না আপনার। গিয়ে নিজের হবু বউয়ের কাছে জান।
,
এবার মুরাদ ও রেগে হায়াত কে ধাক্কা দিয়ে খাটের সাথে চেপে ধরে বলে উঠলো-
মুরাদঃ আমি আমার বউয়ের কাছে এসেছি অন্য কোনো মেয়ের কাছে নাহ।
,
হায়াত অনেক টা অবাক হয়ে বললো-
হায়াতঃ মানে?
,
মুরাদঃ মানে সেইদিন তোমার আর আমার ডিভোর্স হয়নি বুঝতে পেরেছো।
,
হায়াতঃ আমি বিশ্বাস করি না। আপনার মতো লোক কে আমি বিশ্বাস করিনা।
,
মুরাদ বাঁকা হেসে বললো-
মুরাদঃ বিশ্বাস করতে হবে না শুধু অভ্র কে বিয়ে না করলে চলবে বুঝেছো।
,
হায়াত কঠিন গলায় উত্তর দিলো-
হায়াতঃ আমি অভ্র কে বিয়ে করবো আর সেটা আগামী সপ্তাহে বুঝেছে। আর আপনিও গিয়ে আপনার বিয়ের আয়োজন করুন।
,
মুরাদ হায়াত এর গলায় মুখ ডুবিয়ে বলে উঠলো-
মুরাদঃ দেখা যাক কে জিতে। আর এই বিয়েতে অনেক বড় একটা ধামাকা হবে। বুঝলে জান।
,
কথাটা বলে হায়াত এর গলায় আলতো করে চুমু দিয়ে উঠে গেলো। আর হায়াত মুরাদ এর কথার মানে বুঝতে পারলো না। আমাদের ডিভোর্স হয় নাই আবার বলে বিয়েতে ধামাকা হবে কি এমন হবে এই বিয়েতে। এসব ভাবতে থাকে হায়াত। কিন্তু শেষ মেষ কিছুই মাথায় ঢুকে না। এসব ভাবতে ভাবতে ভাবতে পাগল হয়ে যাচ্ছে হায়াত।
,————
,,
বিয়ের দিন,,,,
সময় কারোর জন্য থেমে থাকে। সময় সব সময় চলমান। দেখতে দেখতে আজ মুরাদ মাইশা আর হায়াত অভ্র’র বিয়ের দিন চলে এসেছে। সকাল থেকে খান বাড়িতে তোড় জোড় শুরু হয়ে গেছে। সবাই খুশি শুধু হাসি নেই হায়াত এর মুখে সেদিন মুরাদ এর কথা এখন ও ভুলতে পারেনি ও। কোনো জানি কথা গুলো অনেক ভাবাচ্ছে। এই বিয়েটা করতেও মন সায় দিচ্ছে না। এই কয়েকদিন মুরাদ কে ঠিক মতো বাড়ি থাকতেও দেখে’নি। হঠাৎ করে ফোন আসায় ছুটে চলে যেতে হয়েছে মুরাদ কে।
,
আজকে মাইশার বাবা-মা আসবে সুইজারল্যান্ড থেকে। মাইশার পরিবার সুইজারল্যান্ড বসবাস করে। শুধু মাইশা এসেছে মুরাদ এর জন্য বাংলাদেশ। আজকে জেনো মাইশার খুশির তর সইছে না। কখন বিয়ে টা হবে এই অপেক্ষায় আছে মাইশা।
,
বাড়ির কিছু বয়স্ক বসে আড্ডা দিচ্ছে। তখনি মাইশার মা রুহানা বেগম বলে উঠলো-
রুহানা বেগমঃ দেখলেন ভাবি শেষ মেষ আমার মেয়ে মাইশা কে মুরাদ এর বউ বানাতে হচ্ছে আপনার। দেখেছেন’ই তো আমার মেয়ে ছোট বেলা থেকে কত পাগল মুরাদ এর জন্য আর আল্লাহ শেষ মেষ ওদের মিল করিয়ে দিলো।
,
উনার কথার মাঝে হঠাৎ করে কোথা থেকে মুরাদ এসে বলে উঠলো-
মুরাদঃ আগে বিয়ে টা হোক তার পর না হয় এসব কথা বলো ফুপি। ভাগ্য পরিবতনশীল কখন ভাগ্য বদলে যায় কেউ বলতে পারে না।
,
মুরাদ এর কথা শুনে রুহানা বেগম এর মুখ টা ছোট হয়ে গেলো। মুরাদ রুহানা বেগম এর এমন মুখ দেখে মুচকি হেঁসে বেরিয়ে যেতে নিলেই মুরাদ এর মা বলে উঠলো-
,
মাঃ কোথায় যাওয়া হচ্ছে মুরাদ তুমি কি জানো না আর কিছু ক্ষন এর তোমার বিয়ে আর এখন তুমি কোথায় যাচ্ছো।
,
মুরাদঃ মা একটু কাজেই যাচ্ছি বিয়ে শুরু হবার আগে চলে আসবো। আফ টার অল আমার বিয়ে বলে কথা।
,
কথাটা বলে মুরাদ চলে গেলো। মুরাদ এর মা হতাশা দৃষ্টিতে নিজের ছেলের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো। এখন উনার ছেলেকে উনি আর বুঝতে পারেন না কখন কি করে কোথায় যায় কিছু জানেন না উনি। এখন উমি ক্লান্ত এসব দেখতে দেখতে।
,
অনেক ক্ষন আগে পার্লার এর মেয়েরা চলে এসেছে সাজাতে। দুই জায়গা থেকে আলাদা করে মেয়ে আনা হয়েছে। যেহেতু বউ দুইজন এর একজম কে সাজাতে সাজাতে সময় লাগবে দেখ দুই জায়গা থেকে আনা হয়েছে।
হায়াত এর জন্য হালকা গোলাগি রঙের লেহেঙ্গা চয়েস করা হয়েছে। তার সাথে মেচিং জুয়েলারি। হায়াত নিজের দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্য হাসি দিলো। কার জন্য বউ সাজার কথা ছিলো আর কার জন্য সাজতে হয়েছে। মেয়েদের সাজানো হয়ে গিয়েছে এবং অনেক আগে তারা চলে গিয়েছে।
,
হঠাৎ করে হায়াত এর রুমে খুশি প্রবেশ করে এবং ওর দিকে তাকিয়ে বলে-
,
খুশিঃ আরেক’বার ভেবে দেখ হায়তা এই বিয়েতে তুই খুশি হতে পারবি না কারন তুই এখন ও মুরাদ কে ভালোবাসিস।
,
হায়াতঃ যা ভাবার ভেবেছি আমি অভ্র কে বিয়ে করবো।
,
খুশি হতাশার দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে রইলো। অতঃপর হায়াত কে নিয়ে নিচে নামতে লাগলো।
,
চারটা রাজসিংহাসন এর মতো বসার সোফা বানানো হয়েছে বর’বউ দের জন্য। হায়াত নিচে নেমে দেখে মুরাদ মাইশার পাশে বসে আছে আর ওর সাথে হেসে হেসে কথা বলছে তা দেখে ও একটা তাচ্ছিল্য হাসি হাসে। কোথায় গেলো তার ভালোবাসা মরে গেলো নাকি।
,
হায়াত নিচে নেমে অভ্রর পাশে বসলো। মুরাদ একবার হায়াত এর দিকে তাকালো। মুরাদ কে হায়াত এর দিকে তাকাতে দেখে মাইশা মুরাদ কে একটা খোঁচা দিলো।
,
হায়াত কপ নামতে দেখে কাজি বলে উঠলো আরেকজন তো এসে পড়লো তাহলে বিয়ে পড়ানো শুরু করি।
অভ্রঃ জি শুরু করুন।
,
অভ্র কথার মাঝে সদর দরজা থেকে ভেসে আসলে দাড়ান এই বিয়ের আগে আমরা আমাদের কাজটা সম্পূর্ণ করি আগে। সবাই সদর দরজার দিকে তাকালো। দেখতে কয়েকজন মহিলা সাথে পুরুষ প্রবেশ করছে দেখে মনে হচ্ছে ওরা পু…….
,
,
চলবে,,,,,,