অনান পর্ব-০৯

0
395

#অনান
#পর্ব-৯

“মা! তোমরা?”
মোর্শেদ বোকার মতো তাকিয়ে আছে মায়ের দিকে।
“শুধু তোর মা না সাথে আমরাও এসেছি।”
ওপাশ থেকে বাবার কন্ঠ শুনে মোর্শেদ এবার ঘরের ভেতর পা রাখে।
“তোমরা কখন এলে বাবা? নীরার সাথে কথা হয়েছিলো কই ওতো কিছু বললো না?”
“আমিই মানা করলাম তোকে সারপ্রাইজ দেবো বলে। বাড়ি থেকে এসেছিল তো প্রায় তিনমাস হয়ে গেলো অথচ বাড়িতে যাচ্ছিস না। ওদিকে তোর দাদীজান তো তোকে দেখার জন্য পাগল প্রায়।”
এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে যায় মোর্শেদের মা মনিরা।
“আর বোলোনা, অফিসে একটা প্রজেক্ট এর কাজ শুরু হয়েছে যার দায়িত্ব আবার আমার। দম ফেলার সময় পাচ্ছি না। তো ফুলবানুকে সাথে করে আনলে না কেন?”
“তাকে আবার আনতে হয়? সেই উল্টো আমাদের নিয়ে এলো জোর করে। সারা রাস্তা খুব কষ্ট হয়েছে, অসুস্থ হয়ে গেছে। এখন মনেহয় শুয়ে আছে।”
বাবার কথায় ব্যস্ত হলো মোর্শেদ।
“আচ্ছা, আমি তাহলে দাদীজানের সাথে দেখা করে আসি।”
“আরে ব্যস্ত হোস না, নীরা আছে সাথে। তুই বরং হাতমুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে নে। কথা আছে তোর সাথে।”
মোর্শেদ মাথা নেড়ে বেডরুমে যায়।

“মিতুলের জন্য ভালো একটা প্রস্তাব এসেছে বিয়ের। এই কারনেই ঢাকায় আসা।”
আমজাদ সাহেবের কথায় একটু বিস্মিত হয় মোর্শেদ।
“মিতুলের বিয়ে! এতো তাড়াতাড়ি? কেবলই তো ইন্টার পাশ করলো?”
“তো কি হয়েছে? ছেলেরও তেমন একটা বয়স না, সদ্য ইন্জিনিয়ারিং শেষ করেছে। এখন আমেরিকার মাস্টার্স করতে যাবে তার আগে বিয়ে করতে চায়। নীরার সাথে কথা হয়েছিলো, ও তো বললো ভালোই হবে। তুমি কি বলো?”
এবার মনেহয় মোর্শেদ আকাশ থেকে পড়লো। নীরা কবে থেকে ওর বাবা মায়ের এতো ক্লোজ হলো যে ওর আগে নীরাকে সব বিষয়ে জানাতে হবে? আর ও ডিসিশন দেওয়ার কে? ভালো মন্দ বোঝার জ্ঞানই বা ওর কতটুকু? নীরার ওপর ভীষণ রাগ হলো মোর্শেদের। কিন্তু বাবা সামনে বসে আছে বলে নিজেকে সামলে নিলো। রাতে এ বিষয়ে নীরার সাথে কথা বলবে ভেবে রাখলো।
“মিতুল কি রাজি?”
“আমরা তো এখনো কিছু জিজ্ঞেস করিনি। বরং তুমি চর নীরা মিলে ওর মতামতটা নিয়ে নাও। সবকিছু ঠিক থাকলে ছেলের সাথে কথা বলে ফিরবো।”
“আচ্ছা, কথা বলে দেখবো। ”

নীরার দাদীজানের পা টিপে দিচ্ছিলো, মোর্শেদকে দেখে হাত কিছুক্ষনের জন্য ঢিলে হলো ওর। গাড় সবুজ রঙের গেঞ্জি আর ট্রাউজারে মোর্শেদের গায়ের রং ফুটে উঠেছে যেন। হালকা খোঁচা খোঁচা দাঁড়িতে মোর্শেদকে ভারী আকর্ষনীয় লাগছে। ধুস, কি সব ভাবছি! মনে মনে লজ্জিত হলো নীরা। গাল আরক্ত হলো ওর, মাথা নামিয়ে আবারও পা টেপায় মন দিলো। ওদিকে মোর্শেদও নীরাকে একপলক দেখে আঁটকে গেলো। মেয়েটাকে আজ একদম অন্যরকম লাগছে। শাড়ী পড়েছে আজ নীরা, গাড় বেগুনি রঙের শাড়ী নীরার ফর্সা শরীরে এটে আছে। ব্লাউজের ফাঁক গলে ফর্সা পেটের কিছু অংশ উন্মুক্ত। বোঝা যায় শাড়ীর পরার অনভ্যস্ততার ফল। তবুও মোর্শেদের বেহায়া চোখ জোড়া সেদিকেই বারেবারে চলে যাচ্ছে। বহু কষ্টে নিজেকে শাসন করে দাদীজানের পাশে এসে বসলো মোর্শেদ-
“ও ফুলবানু, এতো প্রেম আমার প্রতি যে না দেখে থাকতে পারলে না শেষ পর্যন্ত ঢাকায় চলে এলে?”
“নাতি, কখন আসছিস?”
চশমা কানে জড়িয়ে উঠে বসতে চায় দাদী।
“উঠছো কেন? শুয়ে থাকো তোমার না শরীর খারাপ?”
“তোরে দেখবো আর আমার বুবু কেও দেখবো। তোদের দুইটারে ভালোমতো দেখিনা মেলাদিন। আয় দেখি আমার চোখের সামনে আয় দুইটা।”
নীরা আর মোর্শেদ দাদির সামনে এসে বসে। আড়চোখে দু’জনেই দু’জনকে দেখে নেয় একবার। বেশ কিছু সময় পর দাদীজান বলে-
“এতোদিন ধরে একা একা থেকেও তোদের মধ্যে কিছু হইলো না? জোয়ান মানুষ তোরা তাও শরীর এতো ঠান্ডা কেন তোদের? আমি আরো ভাবছি এইবার বুঝি সুখবর শুনবো। এই আশায় কষ্ট করে এতো দুর আসলাম। এখন দেখি তোরা বিয়ের এতোদিন বাদেও খালি তাকিতুকি করোস।”
দাদীর কথায় নীরা আর মোর্শেদ দু’জনারই লজ্জায় মুখ লাল হয়, কান দিয়ে ধোঁয়া বেরোয়। নীরা পারলে এখনই পালিয়ে যায় কিন্তু দাদী বুড়ী শক্ত করে ওর হাত ধরে আছে। মোর্শেদ পরিস্থিতি সামাল দিতে মুখ খোলে-
“ও ফুলবানু, তোমার দেখি সখ আহলাদ এখনো ষোলআনা। তাইলে চলো তোমার সাথেই বাসর সাজাই? তোমার নাতনি তো একটা নিরামিষ, তার সাথে আর কি করবো কও?”
মোর্শেদের কথা শুনে নীরা চোখ পাকিয়ে তাকায়।
“আর তুই কি? তুই আরো বড় নিরামিষ। এতো সুন্দর নাতনি পেয়ে তুই কি করছিস রে শয়তান। বউটারে আদর করবি তাও বলে দিতে হয় কেন?”
“আহ, দাদীজান এসব কি বলো? আমি কিন্তু চলে গেলাম?”
নীরা উঠতে নিলেই ফুলবানু নীরার হাত চেপে ধরলো।
“এই দেখো তোমার কথা শুনেই সে পালাই পালাই করতেছে আর আমি যদি কাছে যাই তাহলে তো আমাকে তো খুনই করবে?”
“ইশশশ, এতোই সহজ? মেয়ে মানুষ আদরে সোহাগে এট্টু লজ্জা পাইলো ওমন করেই তা বলে তুই চেষ্টা করবি না? পুরুষ হবে সাহসী, তোর দাদাজানের মতো, বুঝলি?”
“এহহহ, কথায় কথায় খালি দাদাজানকে টানা। আমরাও কম না, সুযোগ পাইলে দেখাই দিবোনে বুঝলা বুড়ি?”
“আচ্ছা! দেখি তো কেমন দেখাইতে পারিস। আমার চোখের সামনে আমার নাতনিকে চুমা দে দেখি। আমিও এট্টু দেখি তুই কেমন আদর পারস।”
“কি হচ্ছে এসব দাদীজান? তোমার একটুও লজ্জা নাই। ছাড়ো আমাকে।”
নীরা মুখে কথাগুলো বললো আর মনে মনে বলে ধরনী দ্বিধা হও। তার গাল এতোই লাল হয়েছে যে মনেহচ্ছে এখনই তা ফেটে যাবে। তার নাকের ডগা ঘামে চিকচিক করছে। সে দাদীর হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে দৌড়ে বেড়িয়ে গেলো রুম ছেড়ে। এদিকে ফুলবানু হেসে গড়িয়ে পড়ছে।
“বুবু সত্যিই শরম পাইছে।”
“তুমি বুড়ী আচ্ছা বদ। কি দরকার ছিলো এতো খারাপ খারাপ কথা বলার? সবসময় জোর জবরদস্তি চলে না বুঝলা? তোমার নাতনিকে আমি ভালোবাসি। ও যখন আমাকে ভালোবাসবে তখনই কাম সারা হবে বুঝলা?”
মোর্শেদ দাদীকে জড়িয়ে ধরে।
“শোন বোকা, ওরে আজ অন্যরকম লাগছে আমার কাছে। আগের মতো খেউ খেউ করলো না। মানে বুঝোস? ও তোরে মেনে নিতেছে।”
“নিলে তো ভলোই।”

রাতে খাওয়া দাওয়া শেষে রুমে এসে শুয়ে ছিলো মোর্শেদ। মনে মনে খুব করে অপেক্ষা করছে নীরার জন্য। মেয়েটা দাদীর ঘর থেকে আসার পর থেকে ওর চোখের আড়ালে থাকছে। খাবার টেবিলে নীরা খেতেই বসেনি ওদের সাথে। ও নাকি পরে খাবে। মোর্শেদ ঘড়ি দেখলো, রাত বাজে একটা এখনো নীরা এলো না। মোর্শেদ একবার দরজা খুলে উকি দিলো, আবারও রুমে ফিরে এলো। পায়চারি করতে করতে এবার ভাবলো একটু খুঁজে আসবে নীরাকে। কোথায় গেলো? ভাবতে ভাবতে দরজা খুলতেই নীরার সাথে মুখোমুখি।
“তুই কোথায় ছিলি এতোক্ষণ? সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছি তোর জন্য। ”
“আমার জন্য? ক্যা ক্যা ক্যানো….আমার সাথে কি দরকার তোর?”
নীরা একটু তোতলায়। ভেতর ভেতর কাঁপুনি টের পায়। মোর্শেদ কি দাদীর কথা মনে করে এখনো ওর জন্য ওয়েট করছে? ভয় করছে কেন ওর? উফফ, মোর্শেদই তো অন্য কেউ তো না। মোর্শেদ একটু এগিয়ে এসে নীরার মুখের কাছে মুখ নিয়ে ফু দিলো-
” তোর সাথেই তো আমার দরকার। শুনিস নাই ফুলবানু কি বললো?”
“কি কি কি বললো?”
নীরা পিছিয়ে যায় সেই সাথে মোর্শেদ আরেকটু এগিয়ে আসে। নীরার নাকের ঘাম মুছিয়ে দেয়-
“এতো ঘামছিস কেন? আমি কি তোকে খেয়ে ফেলবো?”
নীরা কিছু না বলে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে থাকে।
“ফুলবানুকে একটা খেলার সঙ্গী দিতে হবে তো নাকি? কিছুই বুঝিস না বুদ্ধু কোথাকার।”
নীরার নাক টেনে দেয় মোর্শেদ।
“আ আ আমি ঘুমাবো।”
নীরা মোর্শেদের সামনে থেকে সরে আসতে গেলেই মোর্শেদ নীরাকে ধরে ফেলে পেছন থেকে।
“আজ শাড়ী পরলি যে? কি দরকার ছিল আমার মাথা নষ্ট করার? সামলাতে তো পারিস না, এই যে পেট বেড়িয়ে আছে এটা দেখে তো আমার মাথা নষ্ট হয়ে গেছে। কি করবো এখন?”
নীরা তাড়াতাড়ি পেট ঢাকতে চায়। মোর্শেদটাকে বড্ড ভয় হয়। কি থেকে কি করবে কে জানে?
“ভালোবাসিস আমাকে?”
নীরার হাত থেমে যায়। কি বলবে? নিজের মনের খবর নিজে কি ঠিকঠাক জানে নীরা?

চলবে—–
©Farhana_Yesmin।