অনান পর্ব-১০

0
374

#অনান
#পর্ব-১০

বিছানা থেকে চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে নীরাকেই দেখছিলো মোর্শেদ। চুলগুলো হেয়ার ড্রায়ার চালিয়ে শুকিয়ে নিচ্ছে। হালকা গোলাপি শাড়িতে ভারি সুন্দর লাগছে নীরাকে। মোর্শেদ অপলক তাকিয়ে নীরাকে দেখছে। আবছা আলোয় মনেহলো গুনগুন করে গান গাইছে নীরা ঠোঁটে মৃদু হাসি ফুটে আছে। নীরার হাসি দেখে মোর্শেদের ঠোঁটেও হাসি ফুটলো, মাথায় খেলছে শয়তানি বুদ্ধি। বাঁকা হাসি দিয়ে নীরাকে জ্বালানোর প্লান করলো-
“কি রে চুল শুকাচ্ছিস যে বড়? এই সাত সকালে গোসল দিলি নাকি?”
মোর্শেদের কথা শুনে নীরার গাল আরক্ত হলো। সে লজ্জায় না কোনো কথা বললো না মোর্শেদের দিকে তাকালো। জানে এসব মোর্শেদ ওকে জ্বালানোর জন্যই বলছে।
“কি রে কথা বলছিস না কেন? সাতসকালে গোসল দিলি কেন?”
“ইশশ, অসভ্য। ইচ্ছে করে আমায় লজ্জা দিচ্ছিস না? আমার ইচ্ছে হয়েছে দিয়েছি তোর ইচ্ছে হলে তুইও গোসল দে। কেউ তোকে আঁটকে রাখেনি।”
চুলগুলো আঁচড়ে খোঁপা করতে করতে কথাগুলো বলে নীরা।
“যাচ্ছিস কোথায়? আয় না আরেকটু গল্প করি?”
“এহহহ, ঢং। জাহান্নামে যাচ্ছি, যাবি?”
বলেই দরজা খুলে বেড়িয়ে গেলো নীরা। মোর্শেদ মনে মনে জবাব দেয়, তোর সাথে তো জাহান্নামেও হাসি মুখে যাওয়া আর রাতের কথা মনে করে কুটকুট করে হেসে খুন হয়ে যাচ্ছে। নীরার মুখ বন্ধ করার মোক্ষম অস্ত্র পাওয়া গেছে। এখন থেকে চাইলেই যখন খুশি তখন ওকে ঘায়েল করা যাবে ভেবেই খুশি লাগছে ভীষণ। এতোদিনে ভালো অস্ত্র পাওয়া গেলো ওকে জ্বালানোর।

“বুবু, আজকে তোকে অন্যরকম লাগছে কেন বলোতো? আমার নাতিটা তো মনেহয় কাম সারছে?”
ফুলবানু হেসে নীরার খোঁপা খুলে দেয়।
“চুল দিয়া আদর আদর গন্ধ পাই।”
নীরা টকটকে গাল নিয়ে দাদীকে ধমক দেয়-
“আহ দাদীজান, সবসময় এসব কি? মুখে কিছু আটকায় না নাকি?”
“ইশশশ, বুবুর ঢং দেখো। মনেহয় ভাজা মাছ উল্টায়া খাইতে পারে না। তা আমাকে একটু বলো না বুবু কি করলা?”
ফুলবানু বলতে বলতে খিলখিলিয়ে হাসে।
“চুপচাপ খেতে চলো দাদীজান। আর যদি এসব কথা বলো তবে আমি কিন্তু তোমার ঘরে আর আসবো না বলে দিলাম।”
“আমি তো বলবোই, তোমাদের না জ্বালাইলে আমার ভালো লাগে না। ওইসব ভয় দেখায়ে কোনো লাভ নাই। যতদিন বেঁচে আছি তোমাদের জ্বালিয়ে যাবো। পরে এই বুড়ী মরলে যাতে খুব মনে পড়ে তোমাদের।”
“আহ দাদীজান, সবসময় নিজের মতো কেন চলো? এতো আজেবাজে কথা বলো কেন? এসব বললে কিন্তু খুব খারাপ হবে বলে দিলাম। একদম কথা বলবো না তোমার সাথে।”
“রাগ করে না বুবু। তোমাদের কে আমি একটু বেশিই জ্বালাই তাই না বুবু?”
“খুব বেশি। শুধু জ্বালাও না কষ্টও দাও।”
“হুমমম, এখন তো এই কথা বলবাই। এখন তো তোমাকে জ্বালানোর নতুন লোক আসছে। আমাকে কি আর ভালো লাগবে?”
“উফফ দাদীজান, তুমি পারোও বটে। আমি কি তাই বললাম?”
“খুব বুঝছি তুমি কি বলতে চাও। একরাতের আদর সোহাগে দাদীকেই ভুলে গেছো।”
নীরা এবার ভয়েই চুপ হয়ে যায়। টেবিলে সবাই বসে আছে। পাছে দাদী চাচা চাচীর সামনে বেফাঁস কিছু বলে ফেলে এই ভয়ে। দাদীকে বসিয়ে দিয়ে সবার প্লেটে পরোটা তুলে দিচ্ছিলো নীরা তখন মোর্শেদ এলো একেবারে সুটেড বুটেড হয়ে। নীরা কিছুক্ষণের জন্য যেন স্ট্যাচু হয়ে গেছে। মোর্শেদকে আর অসম্ভব রকম হ্যান্ডসাম লাগছে। চুলগুলো জেল দিয়ে পরিপাটি করে আচরানো, ফর্সা মুখে শেভ করা দাঁড়ির নীলাভ আবরন ভারী আকর্ষনীয় দেখায় মোর্শেদকে। নীরার দিকে চোখ পাকায় মোর্শেদ। শেষ মেশ নীরা নিজেকে সামলে নিলো, কিছুই হয়নি এমন ভাব করে মোর্শেদের প্লেটে পরোটা তুলে দিলো। মোর্শেদ পরোটা ছিঁড়ে এক টুকরো মুখে দিতে দিতে দাদীর দিকে তাকালো-
“কি ফুলবানু, শরীর কেমন এখন?”
“আমি তো ভালোই তুমি তো মনেহয় বেশি ভালো। ”
ফুলবানু চোখ টেপে। মোর্শেদ একবার বাবা মায়ের দিকে তাকালো, তারা দেখলেন কি? লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে খেয়ে যেতে লাগলো আর কোনো কথা না বলে। তখনই আমজাদ সাহেব কথা বলেন-
“মোর্শেদ, মিতুলের সাথে কথা বলেছিস?”
“কি বিষয়ে বাবা?”
“বিয়ের ব্যাপারে।”
“আমি কথা বলেছি ছোট আব্বু। মিতুলের কোনো আপত্তি নেই। আপনারা কথা আগাতে পারেন।”
নীরা বলে ওঠে। আমজাদ সাহেব আর মনিরা দু’জনেই খুব খুশি।
“খুব ভালো করেছিস নীরা, মোর্শেদ জিজ্ঞেস করলে বলতো কিনা কে জানে?”
মনিরা বলে উঠে। আমজাদ সাহেব গলা মেলান-
“হ্যারে নীরু, সত্যি ভালো হলো। তোর কি মত বলতো?”
“ভালোই হবে ছোট আব্বু। ছেলেও তো বেশি বয়স না, মিতুলের সাথে মানিয়ে যাবে।”
“বেশ বলেছিস। তাহলে কথা আগাই কি বলিস?”
“হুম।”
মোর্শেদ অবাক হয়ে দেখে একদিনেই নীরা বেশ গিন্নি হয়ে উঠেছে। নাকি আগে থেকেই এতো সংসারি ছিলো নীরা। ওই দেখতে পায়নি হয়তো। কি সুন্দর সবার সাথে মিলেমিশে গেছে। কি বুদ্ধিমতীর মতো কথা বলছে? মোর্শেদ মুগ্ধ হয়ে গেলো। মেয়েটা এতোদিনে যেন একটু একটু করে ওর হয়ে উঠছে। নীরার চোখে চোখ পড়তেই নীরা ইশারায় জিজ্ঞেস করলো-
“কি হয়েছে?”
মোর্শেদ মাথা নেড়ে না করে। নীরা যেন কিছু একটা বুঝতে পারে। বুঝতে পারে মোর্শেদের না বলা কথাগুলো। দু’জনই যেন দু’জনার অব্যক্ত কথাগুলো বুঝে ফেলছে, কারোরই মুখে বলার প্রয়োজন পড়ছে না। এতো লোকের মধ্যে থেকেও দু’জনে নীরবে একে অপরের সাথে মনে মনে কথা বলে চলেছে। কেউ না বুঝলেও ফুলবানু তার দুর্বল চোখ দিয়েও ঠিকই বুঝে গেলেন এই দু’জনার গোপন খবর। চুলগুলো কি তার এমনিতেই পেকেছে? ফুলবানু দু’জনের দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসেন আর ওদের জন্য মনে মনে আশির্বাদ করেন, এই দুটিকে সুখে রেখো আল্লাহ। সারাজীবন যেন এরা দু’জন দু’জনার থাকে।

চলবে—–
©Farhana_Yesmin।