অনান পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব

0
742

#অনান
#শেষপর্ব

বছর কয়েক পর

অফিস থেকে ফিরেই কোনো কথা নাই, সোজা ছেলেকে নিয়ে খেলতে নামে মোর্শেদ। ছেলে পেটে আসার পর দাদীজান অসুস্থ হলো, তার কারনে নীরা আর মোর্শেদ ঢাকা থেকে শিফট হয়ে বগুড়া সেটেল হলো। ছেলের বয়স পাঁচ বছর, পরিবারের সবার নয়নের মণি। নীরা ওর নামও রেখেছে মনি। ছেলেটাও এমন বাপ ন্যাওটা হয়েছে, মোর্শেদকে দেখা মাত্রই কোলে না নেওয়া পর্যন্ত কাঁদতে থাকে। আজও তার ব্যতিক্রম হলো না। নীরা ভ্রু কুঁচকে কিছুক্ষণ বাপ ছেলের খেলা দেখলো। কপালে চিন্তার ছোয়া, মোর্শেদ কথাটা কিভাবে নেবে আল্লাহই জানে। তবুও বলতে তো হবেই। মৃত্যুর আগে দাদীজানকে কথা দিয়েছে যে এই পরিবারের সব ভালো মন্দ বিষয় ওরা আগলে রাখবে। পরিবারের সন্মানের ব্যাপারে কোনো আপস করবে না, দেখভাল করবে পরিবারের। যদিও এখনো পরিবারের মাথা হিসেবে মোর্শেদের বাবা আছেন তবুও কোথাও না কোথাও সব বিষয়ে মোর্শেদের মতামত খুবই জরুরি। বিশেষ করে ভাইবোনগুলোর যে কোন সমস্যা মোর্শেদ আর নীরাকেই দেখতে হয়। এইতো মেঝো চাচার মেয়ে আরিশার বিয়ে নিয়ে কি ঝামেলাটাই না পাকলো। তখন মোর্শেদ আর নীরা মিলে কি সুন্দর করে সমস্যার সমাধান করে দিলো। বলতে গেলে হাতে ধরে আরিশার জীবন বাচিয়েছে দু’জন। তখন থেকে বড়রাও যে কোন সমস্যায় ওদের তলব করে।

“কি রে কিছু বলবি নাকি? সেই তখন থেকে দেখছি ভ্রু কুঁচকে কিছু একটা ভাবছিস?”
মোর্শেদের কথায় ঘোর কাটে নীরার।
“হ্যা, জরুরি কথা আছে তোমার সাথে। তবে এখন না তুমি গোসল টোসল করে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা কর তারপর বলবো। আমি ততক্ষণে নাস্তা বানাই, মনির খাবারও রেডি করে আনি।”
“সিরিয়াস কথা নাকি যে বলতে এতো প্রিপারেশন লাগবে?”
“মোটামুটি। তাই তোমার ব্রেন ঠান্ডা হওয়া জরুরি।”
“কি ব্যাপার, মা বাবার শরীর ঠিক আছে তো? বড় মা? নাকি রাতুল আবার কিছু করলো? মিতুলের কিছু হলো?”
“আরে বাবা থাম তো, এতো ব্রেনটাকে প্রেশার দিয়ো না। বলবো তো বললাম।”
“তাহলে কি আমাদের নতুন কোনো খবর আছে?”
মোর্শেদের মুখে বাঁকা হাসি।
“উফফ, এতো অস্থির তুই। বাজে না বকে গোসলে যা। মনিকে মায়ের কাছে দিয়ে আসিস আমি গেলাম।”
নীরা দৌড়ে বেড়িয়ে গেলো ঘর থেকে। আর কিছুক্ষণ থাকলে মোর্শেদ আরো কি কি বলবে কে জানে। পেছন থেকে মোর্শেদের হো হো করে হাসির আওয়াজ এলো। নীরা ওকে প্রানপনে তুমি বলার চেষ্টা করে কিন্তু রেগে গেলে কিংবা মুরুব্বি কেউ কাছে না থাকলে স্বভাব সুলভ তুই চলে আসে ওর মুখে। বাচ্চার সামনে তুই তোকারি করে না, এতে নাকি বাচ্চার উপর খারাপ প্রভাব পড়বে, এটাও অবশ্য মুরুব্বিদের কথা।

“শোন, ছোট চাচা এসেছে বিকেলে।”
“জানি, আমায় ফোন দিয়েছিলো।”
“ওহহহ। আর কিছু বলেছে?”
“কেন আরো কিছু বলার ছিলো নাকি?”
মোর্শেদ খেতে খেতে মুখ তুললো।
“তুমি দেখা করনি?”
“হ্যা, করেছি। ফুল ফ্যামিলি এসেছে, মৌমি সৌমি চাচী সবাই এসেছে। চাচা অবশ্য কথা বলতে চাইলো পরে আবার বললো যে দু’চার দিন যাক তারপর সবাইকে নিয়ে বসবে।”
“ওহহহ। তাহলে আমি বরং না বলি তুমি বরং চাচার কাছ থেকে শুনে নিয়ো।”
“বেশি ঢং না করে ঝেড়ে কাশ। কি হয়েছে মৌমি সৌমির?”
“সৌমিটাকে তো তুই জানিসই কেমন বোকা? ভার্সিটিতে কোন ছেলে নাকি মৌমিকে পচ্ছন্দ করতো সেই থেকে ঝামেলা।”
আশপাশে তাকিয়ে দেখলো কেউ আছে কিনা। তারপর নিচু স্বরে মোর্শেদকে বলতে শুরু করলো।
“মৌমিকে পচ্ছন্দ করতো সৌমির সাথে সাথ কি?”
“ওরা যমজ গাধা। মৌমি নাকি একদিন বিরক্ত হয়ে ছেলেকে চর মেরেছিলো তার শোধ তুলতে সৌমিকে মৌমি ভেবে তুলে নিয়ে গেছিলো ছেলে। দু’দিন আঁটকে রেখে ছেড়েছে।”
মোর্শেদের মুখের খাবারটা যেন আঁটকে আসলো। পানি দিয়ে একঢোকে গিলে নিলো খাবারটা।
“কি বলছিস এসব? কবেকার ঘটনা এটা? চাচা এতোদিন বলেনি কেন আমাদের?”
“দিনদশেক আগের। বলবে কিভাবে বলতো, এতো শখ করে মেয়েদের নিয়ে ঢাকায় গেলো এখন এরকম ঘটনা সবার সামনে মাথা হেঁট।”
মোর্শেদ কিছুক্ষণ মাথা নিচু করে বসে থাকলো। ভাবলো কিছু একটা, এরকম পরিস্থিতিতে কি করা যায়। লোক জানাজানি হলে খুব সমস্যা হবে মেয়ে দুটোর বিয়ে হতে।
“কি করবো বলতো?”
“আমিও বুঝতে পারছি না। সৌমিতো কেঁদে কেটে হয়রান, মৌমি কিছু বলছে না। চাচী একেবারেই খেই হারিয়ে ফেলেছে। বাবা চাচারা কেউ এখনো কিছু জানে না। আমি মানা করেছি কাউকে জানাতে।”
“ভালো করেছিস। দেখি চাচার সাথে কথা বলে, কিছু ব্যবস্থা নেয়া যায় কিনা।”

★★★

পরের দিনগুলো ভারী ব্যস্ততায় কাটলো মোর্শেদের। সে ঢাকায় যেয়ে পুরো এক সপ্তাহ কাটিয়ে এলো। একটা সপ্তাহ নীরা তাকে ফোনেও পেলো না। ঠিক পরের শুক্রবার ফেরত এলো মোর্শেদ। শরীরটা একটু শুকনো লাগলেও মুখ চোখ উজ্জ্বল। এসেই গোসলে ঢুকে গেলো। বেড়িয়ে কাপড় পড়তে পড়তে চিৎকার দিলো –
“নীরা, তাড়াতাড়ি খেতে দে, বড্ড খিদে লেগেছে।”
নীরা টেবিলে খাবারই লাগাচ্ছিলো, জানে মোর্শেদ খাবে। বাবা মায়ের সাথে দেখা করে ছেলেটাকে একটু আদর টাদর করে মোর্শেদ এসেই দপ করে টেবিলে বসে গেলো। নীরা প্লেটে সব বেড়েই রেখেছিলো। মোর্শেদ বসেই গপগপ করে খেতে লাগলো। নীরা একবার ভাবলো জিজ্ঞেস করে তারপর কি ভেবে থেমে গেলো, থাক নিজেই বলবে হয়তো।

“শোন, সৌমির বিয়ে ঠিক করে এলাম।”
“কি বলিস! কার সাথে?”
“কার সাথে আবার যে ছেলে ওকে তুলে নিয়ে গেছিলো তার সাথেই। ছেলের ফ্যামিলি বেশ ভালো, আমি সমস্ত খোঁজ খবর করেই এগিয়েছি। মজার ব্যাপার হলো ছেলে বিয়ের জন্য একপায়ে খাড়া। বলা মাত্রই রাজি হয়ে গেছে। ওর ফ্যামিলিও বেশ ভালো, বাবা মা দু’জনই শিক্ষিত চাকুরীজীবি। একটামাত্র ছেলে তো, জেদি আর বেয়ারা হয়েছে একটু। তবে এমনিতে ভালোই মনে হলো আমার। মানে সত্যি সত্যি বখাটে নয়। আমাদের পরিচয় পেয়ে ওরাও আর আপত্তি করেনি।”
“বখাটে তো বখাটেই তার আবার সত্যি মিথ্যা কি রে? সৌমি কি রাজি হবে ওই ছেলেকে বিয়ে করতে?”
“রাজি না হয়ে কি করবে? ওর কাছে আর কোনো অপশন আছে নাকি? কি যে বলিস না তুই? শোন, আর একটা কথা, মৌমিকে আর ওই ভার্সিটিতে পড়ানো যাবে না। ওকে অন্য কোথাও পড়তে হবে। সে ব্যবস্থাও করে এসেছি। এইজন্যই তো এতোদিন দেরি হলো রে বউ। রাগ করেছিস বউ তোকে ফোন করিনি তাই?”
মোর্শেদ নীরাকে জড়িয়ে ধরলো। গালে গাল ঘষে দিলো। আদরে এতটুকুন হয়ে মোর্শেদের বুকে মিশে গেলো নীরা।
“খুব চিন্তা হচ্ছিল তোমাকে নিয়ে। একটা খবর দেবে না? এমন করো কেন বলোতো? তুমি খুব স্বার্থপর বুঝলে।”
নীরা ঠোঁট ফুলিয়ে বলে।
“আজ তোকে একটু অন্যরকম লাগছে কেন রে? আমি এসেছি এই খুশিতে নাকি? আজ কিন্তু খুব আদর দেবো তোকে। এতোদিন দূরে ছিলাম আজ কোনো ছাড়াছাড়ি নাই।”
“উফফ, এতো অসভ্য কেন তুমি? সব কথা মুখে বলতে আছে? আজব একটা মানুষ!”
মোর্শেদ নিবিড় করে জড়িয়ে ধরে নীরাকে। চুলে মুখ ডুবিয়ে ঘ্রান নেয়। নাক মুখ ডলে দেয় নীরার ঘাড়ে চুলে। নীরা শিউরে উঠলো। অদ্ভুত ভালোলাগায় মুখচোখ লাল হলো। কিছু বলতে চেয়েও পারলো না। মোর্শেদের দখলে নীরা। দু’জনের নীরব ভাষায় ভালোবাসার আদান-প্রদানে ব্যস্ত।

★★★

সপ্তাহ খানেক বাদে বেশ আয়োজনের সাথেই সৌমির বিয়ে দেয়া হলো। ছেলের পরিবার আসলেই ভালো, নীরা মনে মনে হাজারবার মোর্শেদকে ধন্যবাদ দিলো। দূর থেকে মোর্শেদকে দেখলো ভালোবাসা আর শ্রদ্ধার দৃষ্টিতে। দেখলো ছোট চাচা আর চাচী মোর্শেদের হাত ধরে কেঁদে যাচ্ছে। নীরা বেশ বুঝলো ছোট চাচা এতোদিন কি প্রেশারের মধ্যে ছিলো। আজ যেন তার ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়লো। পেছনে মৌমি এসে দাঁড়ালো-
“নীরাপু, আমার না ভীষণ কান্না পাচ্ছে। কোনোদিনও সৌমিকে ছাড়া থাকিনি। এখন কি করে থাকবো বলোতো?”
নীরা মৌমিকে জড়িয়ে ধরলো-
“তুই আমার সাথে থাক দেখবি কষ্ট কম হবে। আর একদিন না একদিন তো এমনটা হওয়ারই ছিলো তাই না? তোরও তো একদিন বিয়ে হবে। দুজনে তো আর চিরকাল একসাথে থাকতে পারবি না। বরং মেনে নে তাতে কষ্ট কম হবে।”
“কিন্তু আমার জন্য সৌমির জীবনটা নষ্ট হলো আপু। ও কতো ব্রাইট স্টুডেন্ট আর আমি তো ফাঁকিবাজ। আমি সত্যি এমনটা চাইনি নীরাপু।”
মৌমি নীরার বুকে ভেউ ভেউ করে কাঁদছে।
“ওর জীবন কেন নষ্ট হবে, বোকা। ওর ভালোর জন্যই তো তোর ভাইয়া ওর বিয়ে দিলো। এখন ও নির্দিধায় পড়ালেখা করতে পারবে। তুই একফোঁটাও ভাবিস না এটা নিয়ে। যা হয়েছে সবার ভালোর জন্য হয়েছে। এসব নিয়ে ভাবনা বন্ধ কর।”
দূর থেকে মোর্শেদ ইশারায় জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে। নীরা ওকে আশ্বস্ত করে যে কিছু হয়নি, সব ঠিক আছে।

ভালোয় ভালোয় সৌমির বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলো। সারাদিনের দৌড়াদৌড়িতে ব্যস্ত নীরার ভীষণ টায়ার্ড লাগছিলো আজ। একেবারে গোসল করে নিয়ে একটু শুয়ে ছিলো ঘর আধার করে। চোখ দুটো ঘুমে বুজে আসছিলো তখনই পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো কেউ। প্রথমে আঁতকে উঠলেও পরে পরিচিত স্পর্শ টের পেয়ে নীরা আস্বস্ত হলো।
“কি রে এখন শুয়েছিস যে বড়? শরীর খারাপ লাগছে নাকি?”
“হুম ভীষণ টায়ার্ড লাগছে। আর মাথাটাও ধরে আছে।”
“কি বলিস? আচ্ছা দাঁড়া মাথা টিপে দিচ্ছি।”
মোর্শেদ মোলায়েম হাতে নীরার মাথা টিপে দেয়। কিছুক্ষণ চুপচাপ থাকে নীরা।
“মনি কোথায়? বাচ্চাটাকে আজ সারাদিন কোলে নেইনি।”
“মায়ের কাছে আছে দেখলাম ঘুমাচ্ছে। ওকে নিয়ে আর ভাবিস নাতো। মা ওকে বেশ সামলাতে পারে। তোর কি বেশি খারাপ লাগছে? কফি খাবি?”
“খাওয়া যায়।”
“আচ্ছা, আমি বানিয়ে আনছি। ”
“আমারটা বেশি কড়া করিস না।”
“ওকে ম্যাডাম।”

” এই যে আপনার কফি।”
মোর্শেদ কফির মগ বাড়িয়ে দিলো নীরার দিকে।
“চল একটু বারান্দায় যেয়ে বসি। অনেকদিন ধরে বসা হয় না।”
মোর্শেদ অবাক হলো নীরার প্রস্তাবে। মনে মনে একটু খুশিও হলো। ওরও আজ ইচ্ছে করছিলো বারান্দায় বসতে। দুটো চেয়ার নিয়ে বসলো দু’জন, সৌমির বিয়ে উপলক্ষে সাজানো হয়েছিল বাড়িটা, লাল নীল বাতি জ্বলছে এখনো। নীরা আচমকা প্রশ্ন করে-
“আমাদের বিয়ের কতো বছর হলো বলতো?”
“নয় বছর মেবি।”
“বাহ, তোর তো ভালোই মনে আছে। ছেলেরা সচরাচর এসব মনে রাখতে পারে না।”
নীরার কথা শুনে মোর্শেদ হাসে।
“কতো সাধনা করে তোর মনে জায়গা করতে হয়েছে। পাক্কা নয়মাস লেগেছিল তোকে আপন করতে। দিন তারিখ কিছুই ভুলিনি, সব মনে আছে আমার। তারপর মনির জন্ম, দাদীজানের মৃত্যু তুইও কেমন পাক্কা গৃহিণী হয়ে উঠলি দিনকে দিন।”
নীরার বেশ ভালো লাগছে মোর্শেদের কথাগুলো। এসব তো তারও মনে ছিলো না। মোর্শেদ ওর সাথে যতটা অকপটে নিজের অনুভূতি শেয়ার করে ততটা নীরা পারে না। কেমন একটা জড়তা কাজ করে।
কফিতে চুমুক দিতে দিতে নীরার বাবার কথা মনে পড়ে। মোর্শেদের সাথে বিয়ে করে ও সুখি এই ব্যাপারটা বাবা দেখে যেতে পারলেন না। ব্যাপারটা মাঝে মাঝে খুব পোড়ায় নীরাকে।
“কি রে কি ভাবছিস এতো?”
“তোর কথাই ভাবছিলাম।”
নীরা মোর্শেদের ঘাড়ে মাথা রাখে।
“ভাবছিলাম বাবা আমায় ঠিক বুঝেছিলেন। আমাকে একমাত্র তুইই সুখে রাখতে পারবি এটা বাবা আগে থেকেই জানতো। কেবল আমি জানতাম না। জানিস, আগে তোকে আমার কি মনেহতো?”
মোর্শেদ আরো একটু আগলে নেয় নীরাকে। বাম হাতে নীরার ক্ষীন কটিদেশ জাপ্টে ধরলো-
“কি মনে হতো?”
“মনে হতো তুই আমার জীবনে, একটি রোদ ঝলমলে দিনে বৃষ্টি যা পুরো দিনটাকে মাটি করে দেয়।”
“আর এখন কি মনেহয়?”
“এখনকার মনে হওয়ায় একটা টুইষ্ট আছে। মনেকর, তীব্র কড়া রোদের দিনে মানুষ কিন্তু খুব করে বৃষ্টি চায় একটু প্রশান্তির আশায়। তুই এখন আমার জীবনে সেরকম কেউ। এখন রোদের তীব্রতায় তুই অনেকটা বৃষ্টির মতো প্রশান্তি দানকারী। তুই আমার জীবনের অনান, বুঝলি?”
“আচ্ছা? আজ হঠাৎ এসব বলছিস যে?”
“কখনো তো বলিনি তাই আজ বললাম। এই পরিবারটাকে তুই যেভাবে সব পরিস্থিতিতে সামলে নিচ্ছিস দক্ষ হাতে সেটা দেখেই মনেহলো কথাগুলো বলি আজ। দাদীজানও তোকে বেশ চিনেছিলেন।”
“হুম, শুধু তোরই চিনতে দেরি হয়েছিলো।”
“তা হয়েছিলো এটা আমি স্বীকার করছি। শোন তোকে একটা নিউজ দেওয়ার আছে।”
“বলে ফেল।”
নীরা মোর্শেদের কানে ফিসফিস করলো। কথাটা শুনেই মোর্শেদ চিৎকার করতে চায়, নীরা ওর মুখ চেপে ধরে। মোর্শেদ নীরার হাত সরিয়ে নিলো-
“কি হলো? বাঁধা দিচ্ছিস কেন? সবাইকে জানাবো না?”
“এখন না আমার লজ্জা করে পরে বলিস।”
“ওরে আমার লজ্জাবতীরে। এবার কিন্তু আমি একটা ছোট্ট নীরা চাই। আমার অনেকদিনের শখ। ছোট্ট একটা নীরা গুটিগুটি পায়ে হেঁটে বেড়াবে ঘরময় কি মজা হবে তাই না? ”
মোর্শেদের পাগলামি দেখে নীরা ভীষণ খুশি, আরক্ত মুখে মোর্শেদের দিকে তাকিয়ে থাকলো। লাল নীল বাতির আলোয় মোর্শেদের মুখ যেন চকচক করে খুশিতে। বড্ড সুখী সুখী লাগে নিজেকে নীরার। আচমকা মোর্শেদের হাতদুটো জড়িয়ে ধরে নীরা, মুখোমুখি বসে চোখে চোখ রেখে বলে-
“শোন, তোকে ভীষণ রকম ভালোবাসি। যুগে যুগে তোকেই আমার জীবন সঙ্গী হিসেবে চাই। আমার বাচ্চাদের বাবা হিসেবে তোকেই চাই। তোর সাথে বুড়ো হতে চাই।”
মোর্শেদের চোখ জ্বলে ভিজে উঠলো। এইরকম একটা কথা কতোদিন ধরে শুনতে চেয়েছে সে। ভালোবাসি কথাটা অনেকবার বলেছে নীরা কিন্তু আজ যেন সব অন্যরকম লাগছে। সবকিছু নতুন নতুন। মোর্শেদ আজ আর কিছু বলে না কেবল নীরাকে বুকের ভেতর জড়িয়ে নেয়। মোর্শেদ মনে মনে বলে, আমার হার্টবিটের শব্দে বুঝে নে, তোকে আমি কতটা ভালোবাসি, কতটা চাই। বুঝে নে, তোকে নিয়েই সহস্র মাইল পথ পাড়ি দিতে পারবো। পৃথিবীর আর কাউকে লাগবে না। আমি তোর জীবনে অনান হয়ে বেঁচে থাকতে চাই যুগে যুগে। মরতে চাই তোরই সাথে, সাথে না পারলেও যেন তোর আগে মরি। কারন তোকে ছাড়া আমি কিছুই না, আমার বেঁচে থাকা অসম্পূর্ণ।

সমাপ্ত।
©Farhana_Yesmin।