অনুভূতিহীন পর্ব-০৩

0
587

#অনুভূতিহীন (পর্ব ৩)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

রিদ ভাইয়ার চলে যাওয়ার দিকে কিছুক্ষন চেয়ে রইলাম আমি। মানুষটা বড়ই অদ্ভুত প্রকৃতির। এর পর সারা রুম হেটে ছবি গুলো দেখছিলাম। কতো সুন্দর করেই ফ্রেম করে সাজানো। বিয়ের আগে তো আমাদের দেখাই হয়নি। এতো ছবি কোথায় থেকে সংগ্রহ করেছে সে?
এর পর বেলকনিতে গেলাম। দেখি একপাশে একটা গোলাপ গাছ। কয়েকটা ফুল ফুটে আছে, বাকি গুলো এখনো কলি।
আমি হাত বাড়িয়ে ছেতে যাবো তখনই মনে হলো, রিদ ভাই তো বলে গেছে তার ব্যক্তিগত জিনিসে হাত না লাগাতে। এসব ভাবতেই বাড়িয়ে নেওয়া হাতটা আবার গুটিয়ে নিলাম।

ফোনের শব্দ কানে আসতেই হাতে থাকা ফোনটার দিকে তাকিয়ে দেখি আন-নোন নাম্বার থেকে কল।
আপু কয়দিন আগে নতুন সিম কিনেছিলো। হয়তো আপুই ফোন দিলো। আমি ফোন রিসিভ করে কানে তুলতেই, ওপাশ থেকে ছেলের কন্ঠ ভেষে আসে।
– এই খা** মা** তোর সাহস কি করে হলো অন্য কাউকে বিয়ে করার? কি বলেছিলাম তোকে আমি? তোকে আর তোর জামাই দুজনকেই মে*রে দিবো আমি। তোর বিয়ের স্বাধ আমি মিটাবো খা**।

আমি ফোনটা কানের কাছ থেকে দুড়ে সরিয়ে নিলাম। কি বিশ্রি ভাষা তার। শুনতেই গা রি রি করে উঠে।
এর পর কানের কাছে নিতেই, লোকটা আরো কিছু বলতে শুরু করলো,
– এতোদিন আমার ভালো রুপ দেখেছিস। এবার দেখবি আমার আসল রুপ টা। কলেজ খুললে আবার ফিরবি না, বাড়িতে? ফিরবি তো। ক্লাস করতেও তো যাবি। তখন রাস্তা থেকে তু*লে নিয়ে যাবো তোকে। তখন দেখবো তোর কোন বাপ এসে তোকে বাচায়। খা**

ঘৃনায় ফোনটা কেটে দিলাম আমি। খুব কাঁন্না পাচ্ছে আমার। আমার সাথেই কেন এমন হয়? ওই লোকটা কেন এভাবে আমার পিছনে পড়েছে? বাড়িতে থাকতেও ঠিক ভাবে কলেজে যেতে পারতাম না ওই লোকটার ভয়ে। আর এখন বিয়ে করে এখানে এসেও তার শান্তি নেই।
বাবা সব সময় বলতো, আমাকে অনেক পড়াবে। আমি যতদুর চাই, ততদুর আমার হাত ধরে এক সাথে নিয়ে যাবে। উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করবে আমাকে। আমাকে নিয়ে নাকি তার অনেক স্বপ্ন। আমরা দুই বোন ছিলাম বাবার চোখের মনি। আমাদের কোনো ভাই নেই দেখে বাবার সব স্বপ্ন আমাদের ঘিরে। আপু পড়ালেখায় তেমন একটা ভালো ছিলো না। তাই ইন্টার পাশ করে আর পড়েনি। এর পর আপুকে বিয়ে দিয়ে দেয়। কিন্তু পড়ালেখায় বরাবরই সিরিয়াস ছিলাম। তাই বাবা সব সময় বলতো, আমাকে দিয়েই তার সব স্বপ্ন পুরণ করবে।
কিন্তু ভাগ্যের কি পরিহাস। কলেজে উঠতেই আমার উপর চোখ পড়ে চেয়ারম্যান এর ছেলে আসিফ এর। এর পর নানা ভাবে উত্তক্ত শুরু করে আমাকে। কোনো মতো ফাষ্ট ইয়ার শেষ করে সেকেন্ড ইয়ারের কয়েক টা মাস পার করলো। এর পর সমস্যা টা আরো বেড়ে যায়, আমায় প্রপোজ করার পর থেকে। যখন আমি তাকে রিজেক্ট করে দিয়েছিলাম। কারণ তাকে খুব ভয় লাগতো আমার। আর তারা খুব নষ্ট বললেও ভুল হবে না। বাবার পাওয়ার খাটিয়ে বেচে যায় সবসময়।
এর পর কলেজে যাওয়া খুব কষ্টকর হয়ে দাড়ায় আমার জন্য। রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে রে*প করার হুমকিও দিয়েছিলো ওই ছেলেটা। বাবা বাধ্য হয়ে চেয়ারম্যান এর কাছে নালিশ করে। কিন্তু চেয়ারম্যান লোক দেখাতে ছেলেকে দুইটা থাপ্পর মারতো। এর পর আবার সেই আগের মতোই ডিস্টার্ব করতো। আর গত কাল কলেজ থেকে ফিরেই শুনলাম আমার বিয়ে। তাও রিদ ভাইয়ের সাথে। হয়তো বাবা আমাকে নিয়ে ভয়ে ছিলো, তাই হুটহাট এমন সিদ্ধান্ত নিলো আমাকে না জানিয়েই। এখন ভয় হচ্ছে প্রচুর। বাড়িতে গেলে কি করবে সে? আমি কি এক্সাম টা দিতে পারবো না ঠিক ভাবে?

এর মাঝেই মামি এসে কাধে হাত রাখতেই আমার সারা শরির কেঁপে উঠলো। তখনও আমার শরির একটু একটু কাপছে।
মামি আমার দিকে ভ্রু-কুচকে তাকিয়ে বললো,
– কিরে আরশি, মা আমার। কাঁপছিস কেন? আর তোকে এমন অসাভাবিক দেখাচ্ছে কেন? কিছু হয়েছে, ভয় পেয়েছিস?
আমি নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে মাথা ঝাকিয়ে না সুচক জবাব দিলাম। মামি আমার দিয়ে চেয়ে আবার বলল,
– কি হয়েছে আমায় বল, রিদ কিছু বলেছে? কিছু বললে বল, এক্ষুনি ওর হিরো গিরি বের করবো।
আমি কথা ঘুরাতে বললাম,
– না মামি ও কিছু বলেনি। এমনি বাবা মায়ের কথা মনে পরছিলো।
আমার কথায় মামি একটু হাসলো। তার পর আমার গালে হাত রেখে বললো,
– তো এখন থেকে কি আমরা তোর বাবা-মা না? কয়দিন পর তো বাবা-মায়ের কাছে চলেই যাবি।
আমি একটু হেসে মামিকে জড়িয়ে ধরলাম। এর পর তার সাথে খাওয়ার জন্য চলে গেলাম।

খাওয়া শেষে রুমে এসে বসে রইলাম। মাথায় নানান চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। বিষয় টা কি রিদ ভাইয়ার সাথে শেয়ার করবো? নাকি এখন এসব বলা ঠিক হবে না। এমনিতেও সে আমার সাথে প্রয়োজন ছারা তেমন একটা কথা বলে না। এখন এসব বললে হয়তো আমাকেই খারাপ ভাবতে পারে। না বলাই ঠিক হবে।

কিছুক্ষন পর রুমে আসলো রিদ ভাই। ট্রাউজার ও পাতলা টি-শার্ট পরা। তাকে দেখে আমার এক ডোস ক্রাশ খেতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু খাবোনা। আমি এখন ওই মুডে নেই। চুপচাপ বসে আছি তার দিকে তাকাচ্ছি পর্যন্ত না। আমাকেও যে প্রচুর ভাবের উপর থাকতে হবে।
তবুও কপাল কুচকে তার দিকে চেয়ে বললাম,
– আজকে কি একসাথে ঘুমাবেন?
রিদের সোজা উত্তর,
– এতো শখ নেই আমার।
– তাহলে আজকেও নিচে ঘুমাবেন?
– জ্বি না, আমার রুমে অনেক বড় সোফা আছে। আর আমি অন্যদের মতো নিজের বাপের বাড়ির পাওয়ার খাটিয়ে জামাইকে বা বৌকে ফ্লোড়ে ফেলে রাখবো না।

ওনার কথায় রাগ হলো আমার। অন্যকেউ বলতে আমাকেই বুঝালো সে। আমি জানতাম নির্ঘাত এই বেটা আমায় ওই বিষয় টা নিয়ে খোচা দিবে। কেন যে নতুন জামাইকে বাসর রাতে ফ্লোরে ঘুমাতে বললাম? তাও আবার নিজের বাপের বাড়িতে। মনে মনে নিজের উপর খুব রাগ হলো আমার।

রিদ ভাইরের রুমে টেবিলের ছোট বক্স গুলোতে অনেক গুলো বই তাক করে রাখা আছে। এক পাশে ডাক্তারি বই, আর অন্যপাশে কিছু উপন্যসের বই। অথচ আসার পর থেকে এগুলোর দিকে চোখই পড়লোনা আমার। রিদ ভাইয়া ওখান থেকে একটা উপন্যাসের বই নিয়ে বেলকনিতে চলে গেল। আমি হা করে তাকিয়ে রইলাম তার দিকে। বাব্বাহ, এই অনুভূতিহীন মানুষটা আবার উপন্যাসও পড়ে?
আমি ছোট থেকেই খুব গল্প প্রেমি। রাত জেগে ফেসবুকে গল্প পড়তাম আগে।
আর উপন্যাস প্রেমিরা এমন অনেক বই একসাথে দেখলে খুশিতে পাগল হওয়াটাই স্বাভাবিক। এটা তাদের মনের খোরাক।
ইচ্ছে করছে বইগুলো দেখতে। কিন্তু সে তো বললো, তার জিনিসে কেউ হাত দিতে পারে না।তার অনুমতি নিয়েই পড়তে হবে। আর এখন মন মেজাজও ভালো নেই। প্রচুর চিন্তা ঘুর পাক খাচ্ছে মাথায়। আপাতত নিজেকে একটু বিশ্রামে নিতে হবে।

চুপচাপ বিছানায় শুয়ে আছি আমি মথায় খুব চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। দুপুরের আগেও বাবা মায়ের সাথে ছিলাম। আর এখন তাদের জন্যও প্রচুর চিন্তা হচ্ছে।
ওই বাজে লোকটা বাবার কোনো ক্ষতি করবে না তো?
খুব চিন্তা হচ্ছে আমার তাদের জন্য। আবার মনে হচ্ছে লোকটা যদি ঢাকায় চলে আসে? যদি রিদ ভাইয়ের কোনো ক্ষতি করে? না, এসব কি ভাবছি আমি। চিন্তা যেন আমার পিছুই ছারছে না।

বেলকনিতে উকি দিয়ে তার দিকে তাকালাম। খুব মনোযোগ দিয়ে উপন্যাস পড়ছে সে। চিন্তা গুলো এক পাশে রেখে চোখ বুজে রইলাম। এই বুঝি ঘুম এসে সব চিন্তা দুর করে দিবে। কিন্তু ঘুমও আসছে না আজ।
কিছুক্ষন পর বারান্দা থেকে রুমে আসে রিদ ভাই। আমি ঘুমানোর ভান করে চোখ বুজে আছি। তিনি বইটা জায়গায় রেখে আমার পাশে এসে বসলেন। খুব মায়াময়ি দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন কিছুক্ষন। হটাৎ ওনার এমন আচরণ মাথায় ঢুকছে না আমার। তিনি আমার গালে হাত রাখতে গিয়েও আবার হাতটা সরিয়ে নিলো। হয়তো আমি জেগে যাবো এটা ভেবে।
তার এমন মায়াময়ি দৃষ্টি যেন আমার ভেতরে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। কেমন যেন অস্থির অস্থির লাগছে আমার। কেন লাগছে তা জানিনা৷ সবে আঠারো তে পা দিলাম। এই বয়সটায় অনুভুতি গুলো খুবই ভয়ঙ্কর।

তিনি আর কিছুক্ষন এভাবে তাকিয়ে থেকে একটু ঝুকে আমার কপালে আলতো করে চুমু একে দিয়েই উঠে গেলেন। তাকে দেখে মনে হচ্ছে চুমু দিয়ে বড্ড অপরাধ করে ফেলেছে সে।
সে চলে যাওয়ার পর চোখ খুলে তাকালাম আমি। ঠোঁটে অজান্তেই একটা হাসি ফুটে উঠলো। মনে হচ্ছে সব চিন্তা দুরে ফেলে আমার মন পাখিরা ডানা ঝাপটাতে শুরু করলো। এ কেমন অনুভূতি জন্ম হচ্ছে আমার মাঝে?

To be continue,,,,,,

~ চরিত্র প্রকাশে দু’একটা গা*লি ব্যাবহার হচ্ছে। ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরুধ রইলো।