অনুরাগের ছোঁয়া পর্ব-২৫

0
497

#অনুরাগের ছোঁয়া
#নবনী-(লেখনীতে)
#পর্ব-২৫
||
আজ দিনটা অন্যরকম।আকাশটা আজকে গাঢ় নীল আর সাদা রঙে রঙিন। পরিবেশে কেমন এক মুখরিত ভাব।সূর্যের রোদ আজ নেই বললেই চলে।পরিবেশটা কেমন জানি স্নিগ্ধ -শীতলময়।আশেপাশের গাছ গাছালি গুলো তীব্র বাতাসে খেলা করছে।গাছের পাতাতে বাতাস লেগে একটা আরেকটার সাথে খেলা করছে।আর সেগুলোর বাতাস এসে কান অব্দি পৌঁছাছে।হুট করে আকাশটা আবছা আবছা কালো মেঘে ঢেকে গেলো।বাতাসটা আরও জোরে জোরে বইতে লাগল।আকাশে মেঘের গুড়গুড় আওয়াজ হলো।অর্থাৎ বৃষ্টি আসবে।এটা বৃষ্টি আসার আগ মুহূর্ত। বৃষ্টি আসার আগ মুহূর্তে যেই মন ভোলানো বাতাস বয় তার ভালো লাগাটা মুখে ব্যাক্ত করা যাবে না,যায় না আসলে।

ছোঁয়া জানালার কাছে বসে ছিল।অনুরাগের একটা অনলাইন মিটিং ছিলো তাই সে ফোনে কথা বলতে বলতে বাইরে গিয়েছে। অনুরাগের আসতে দেরী হচ্ছে বলে ছোঁয়া মুখটা ভার করে জানালার কাছে বসে ছিলো।তখনই মেঘ ডেকে উঠে।ছোঁয়া জানালা দিয়ে বাইরে তাকায়।দেখে চারদিকে কেমন একটা সাজ সাজ ভাব করছে।এটা দেখেই ছোঁয়ার মন বাক বাকুম করে উঠল।ছোঁয়া আবার দরজার দিকে তাকায় দেখে যে অনুরাগ আসছে না।আর ঠিক তখনই আকাশে আরেকবার বেশ জোরে সোরে মেঘ গর্জন দিয়ে উঠে।এবার আর ছোঁয়াকে পায় কে!ছোঁয়া দ্রুত পায়ে বিছানা থেকে নেমে পরে।

তবে আজ ছোঁয়ার মাঝে ফুটে উঠেছে এক অন্যরকম আলাদা ধাঁচের সৌন্দর্য। ছোঁয়া একটা সাদা ধবধবে শাড়ি আর লাল টকটকে একটা ব্লাউজ পড়ে আছে।হাতে কিছু চিকন চুড়ি।তার হাতে গোল গোল করে মেহেদী লাগানো। ঠিক যেমনটা আগের মানুষ লাগাতো ঠিক তেমন করে।কিন্তু এতে যেনো ছোঁয়ার হাতগুলো অসম্ভব সুন্দর লাগছে।সাদা হাতে লাল মেহেদী জ্বলজ্বল করছে।অনুরাগের মতে ছোঁয়াকে নাকি শাড়ীতে অপূর্ব সুন্দর লাগে।তার এই অপূর্বা থেকে চোখ সরানো বারন।ছোঁয়াকে এই শাড়ীটা অনুরাগ নিজের হাতে পরিয়ে দিয়েছে।ছোঁয়ার পায়ে এক জোড়া নূপুর রয়েছে।সেই নূপুর জোরা ও অনুরাগ নিজ হাতে তাকে পরিয়ে দিয়েছে।ছোঁয়া প্রথমে দৌড়ে করিডোরে চলে যায়।কিন্তু করিডোরের উপরে অনেক বড় ছাউনি থাকায় ফলে আকাশটা ঠিকমতো দেখা যায় না।ছোঁয়া একটা ভেংচি কেটে আবার ছুটে ছাদে চলে যায়।

ছোঁয়া যেইদিক দিয়ে ছুটে যাচ্ছে সেখানেই যেনো ছোঁয়ার পায়ে থাকা নূপুর জোড়া ছনছন করে বেজে উঠছে।বাজছে তার হাতে থাকা চুড়ি গুলোর রিনিঝিনি আওয়াজ।ছোঁয়া গিয়ে সোজা ছাদের মাঝখানে গিয়ে দাঁড়ায়।এবার যেনো ছোঁয়া আনন্দের একটা নতুন ধারা খুঁজে পেলো।পরিবেশটা কেমন একটু মেঘাচ্ছন্ন হয়ে এসেছে।বাতাসের বেগ টা আর একটু ভারী হয়ে মেতে উঠেছে।দূর আকাশের সেই পাখি গুলো ডানা ঝাপটে তাদের নীরে পৌঁছাছে।পরিবেশটা কেমন ভারী ভারী।আগে থেকে আর একটা মেঘলা ভাব হয়ে এলো।বেশ বুঝা যাচ্ছে যে গগন কাঁপিয়ে বৃষ্টি নামবে।

ছোঁয়া হাঁটতে হাঁটতে ছাদের একদম মাঝখানে এসে দাঁড়ায়। আসলে ছাদটা আকারে বিশাল।কেউ দেখলে বলবে না যে এটা ছাদ।ছাদের একপাশে অনেক গুলো ফুল গাছ রয়েছে।এমন কোন ফুল নেই যে সেখানে নেই।তবে সবচেয়ে বেশি রয়েছে গোলাপ ফুলের গাছ।ছোঁয়ার গাঢ় লাল গোলাপ পছন্দ দেখে অনুরাগ নিজ হাতে গোলাপ গাছগুলো যত্ন করে লাগিয়েছে।বলা যায় ছাদে ছোট খাটো একটা ফুলের বাগান।হঠাৎ একটা দমকা হাওয়া ছোঁয়ার গাঁয়ে এসে লাগল।বাতাসে ছোঁয়ার চুলগুলো উড়ছে।শাড়ীর আঁচলটা ও ছন্ন ছাড়ার মতো ঢেউ খেলিয়ে উড়ছে।

মুখটা আকাশ পানে তুলে সেই মেঘাচ্ছন্ন আকাশের দিকে আপন মনে তাকিয়ে ছিলো ছোঁয়া।তখনই টুপ করে এক বিন্দু বৃষ্টি ফোঁটা তার মুখের উপর পড়ল।সাই করে আরেক দফা বাতাস বয়ে যায়।ছোঁয়া যেনো প্রকৃতির মাঝে নিজেকে অনুভব করতে পারছে।সে তার দুই চোখ বন্ধ করে দুই হাত দুই পাশে মেলে দাঁড়িয়ে থাকে।ঠিক সেই মূহুর্তে হুরমুর করে ঝিরিঝিরি শব্দ করে বৃষ্টি নেমে এলো।ছোঁয়া চোখ দুটো মেলে তাকায়।ঠোঁটের কোনে লেগে আছে দীর্ঘ হাসির রেখা।ছোঁয়া সেই এক জায়গায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভিজতে লাগল।বৃষ্টির পানি গুলো বেশ ঠান্ডা। ছোঁয়া ভিজে একদম চুপচুপে হয়ে গেলো।গাঁয়ে থাকা শাড়ীটা ভিজে তার শরীরের সাথে একদম আষ্টেপৃষ্ঠে লেগে ধরেছে তার সাথে।খোলা কোমড় টাতে পানির বিন্দু লেগে আছে।গাঢ় গলাতেও বেশ পানির ছিঁটেফোঁটা লেগে আছে।চুলগুলো থেকে টপটপ করে পানি পরছে। গলা গালের সাথে চুলগুলো কিছুটা লেগে ধরেছে।আকাশে এবার বিদ্যুৎ চমক দিয়ে উঠে।ছোঁয়ার পায়ের নুপুর গুলো ও ভিজে উঠেছে।সে খালি পায়ে ছাদের এদিক ওদিক ছুটে বেড়াচ্ছে।ছাদের এদিক ওদিক পানি জমে আছে কিছু।ছোঁয়া পানি গুলো তার পা দিয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিচ্ছে।নিজের মন প্রান খুলে সে বৃষ্টির পানিতে ভিজে চলছে।ছোঁয়ার যেন কোন কিছুতেই খেয়াল নেই, সে তো আপন মনে বৃষ্টি বিলাশ করতে ব্যস্ত।শাড়িটা আরেকটু উঁচু করে সে ছাদের এদিক ওদিক দৌড়ে চলছে।এভাবে থাকতে থাকতেই ছোঁয়ার মনে হলো যেনো কেউ তাকে গভীর ভাবে পর্যবেক্ষন করে দেখছে।ছোঁয়া গাড় ঘুরিয়ে তার পেছন দিকে তাকায়।দেখে ছাদের দরজাতে হেলান দিয়ে দুই হাত ভাঁজ করে অনুরাগ তার দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।ছোঁয়া তো নিজের মতো বৃষ্টি উপভোগ করছিলো কিন্তু অনুরাগকে তার দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে তার বুকের ভেতর কেমন একটা ধক করে উঠে।শ্বাস ঘন হয়ে আসে।ছোঁয়া বৃষ্টির মাঝে দাঁড়িয়ে আছে।বৃষ্টির পানি গুলো তার শরীর বেয়ে নিচে গরিয়ে গড়িয়ে পরছে।অনুরাগ একটা সাদা শার্ট আর প্যান্ট পরে দাঁড়িয়ে আছে।চোখগুলো ছোঁয়াতেই স্থীর। বৃষ্টির বেগ আরও বেড়ে গেলো অনুরাগকে কেমন জানি ঝাপসা ঝাপসা লাগল দেখতে।তখন আরও একবার বিদ্যুৎ চমক দিয়ে উঠে।ছোঁয়া এবার চমকে গিয়ে তার চোখ মুখ কিছুটা কুঁচকে ফেলে।

অনুরাগ এবার দাঁড়িয়ে না থেকে সোজা নিজের সামনে হাঁটা দেয়।বৃষ্টির পানিতে অনুরাগও নেমে যায়।মুহূর্তে অনুরাগ বৃষ্টির পানিতে ভিজে যায়।বৃষ্টি ভেজা পানিতে অনুরাগের সাদা শার্ট ভিজে তার গাঁয়ের সাথে একদম লেপ্টে যায়।ভেতর থেকে তার বডি স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।অনুরাগ এসে ছোঁয়ার সামনে দাঁড়িয়ে পরে। অনুরাগের সামনের চুলগুলো ভিজে তার থেকে টপটপ পানি পরছে। অনুরাগ একবার আপাদমস্তক ছোঁয়াকে দেখে নিলো।অনুরাগ তার হাতটা ছোঁয়ার গালে রাখল।অনুরাগের শীতল হাতের স্পর্শ পেয়ে ছোঁয়া কিছুটা কেঁপে উঠল।অনুরাগ এক হাত দিয়ে ছোঁয়ার কোমড় ধরে তাকে নিজের কাছে নিয়ে এলো।ছোঁয়া তার একটা হাত অনুরাগের বুকের উপর রাখে।অনুরাগ তার মাথা ছোঁয়ার মাথার সাথে ঠেকিয়ে রাখে।তার একটা হাত ছোঁয়ার গালে স্লাইভ করতে করতে বলে উঠে………..



#চলবে?