অনুরাগের ছোঁয়া পর্ব-২৭ এবং শেষ পর্ব

0
868

#অনুরাগের ছোঁয়া
#নবনী-(লেখনীতে)
#পর্ব-২৭ (অন্তীম পর্ব)
||
৫ বছর পর,

ছোঁয়া এখন আর হাসে না। ঠিক মতো কথাও বলে না।জীবন তার থেকে সবচেয়ে দামী জিনিসটা কেড়ে নিয়েছে।শেষ করে দিয়েছে তাকে।একেবারেই নিঃস্ব করে দিয়েছে।

-আজও আগের মতো বারান্দায় ইজি চেয়ারে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে ছোঁয়া।হঠাৎ একটা হাতের স্পর্শ পেয়ে সামনের দিকে তাকায়,

–ওহ তুমি (ছোঁয়া)

–আজও আকাশের দিকে তাকিয়ে কি ভাবো তুমি (অনুরাগ)

–অফিসে লেট হয়ে যাচ্ছে বুঝি,চলো খেতে দেই (ছোঁয়া)

–খেয়ে নিয়েছি আমি,এখনও কাঁদছিলে তাইনা (অনুরাগ)

–অনুরাগের এমন কথায় ডুকরে কেঁদে দেয় ছোঁয়া।

–আমার সাথেই কেনো এমন হলো, বলতে পারো?আমার সাথেই কেন এমন হলো? (ছোঁয়া)

–কেঁদো না প্লিজ, তুমি তো আছ আমার কাছে তাতেই হবে ( অনুরাগ)

–আমার জন্যই তুমি আজ বঞ্চিত তাই না (ছো্ঁয়া)

–কি বলছো আবল তাবল,তুমি থাকলেই হবে আমার,কেঁদো নাতো (অনুরাগ)

–অনুরাগ, পারলে আরেকটা……..(ছোঁয়া)

–চুপ, একদম চুপ,এই কথা আর শুনতে চাই না, চুপ হয়ে থাকবে (অনুরাগ)

–আর কত চুপ করাবে আমায় (ছোঁয়া)

–যত দিন বাঁচবো,ভালো থাকো,অফিস গেলাম (অনুরাগ)

গাড়িতে বসে অনুরাগ চোখের পানি ফেলছে।সে আর যাই করুক দ্বিতীয় বিয়েটা করতে পারবে না আর এই পাঁচ বছরে কম করে হলেও পাঁচ হাজার বার ছোঁয়া দ্বিতীয় বিয়ের কথা বলেছে।আর প্রতিবারেই অনুরাগের উওর না হয়েছে।এবারে ও তাই।কি হয়েছিল পাঁচ বছর আগে?

Back to 5 years…….,

–ছোঁয়ার প্র্যাগনেন্সির রির্পোটটা নিয়ে অনুরাগ বাসায় আসে।

–রেজাল্ট কী? (ছোঁয়া)

–হ্যাঁ (অনুরাগ)

–কি হ্যাঁ,রেজাল্ট কি বলনা (ছোঁয়া)

–বলবনা (অনুরাগ)

–এই বলো না প্লিজ, প্লিজ প্লিজ বলো না গো রেজাল্ট কী, বলো না (ছোঁয়া)

–উহু ( অনুরাগ)

–কি উহু,বলো না গো প্লিজ প্লিজ, বলো না,রেজাল্ট কি পজেটিভ নাকি অন্য কিছু (ছোঁয়া)

–জানপাখি পজেটিভ আসছে রেজাল্ট। আমি বাবা হতে চলেছি আর তুমি মা,আমরা মা-বাবা হতে চলেছি।(অনুরাগ)

–সত্যি, সত্যি বলছো (ছোঁয়া)

–জি ম্যাডাম,সত্যি সত্যি সত্যি। তুমি 3 month pregnant ( অনুরাগ)

–আমিহ আমিহ আমি মা হবো। আমার মাঝে সে আছে।আমার মাঝে তোমার অংশ অনুরাগ (ছোঁয়া)

–হ্যাঁ ছোঁয়া তোমার মাঝে আমার অংশ বেড়ে উঠছে।আমি আজ অনেক খুশি জানপাখি। অনেক!আমার সন্তান তোমার গর্ভে।(অনুরাগ)

–সেই দিন পুরো চৌধুরী পরিবার খুশিতে মেতে উঠে।ছোঁয়া মা হবে।চৌধুরী পরিবারের বংশের প্রদীপ আসতে চলেছে।সবাই অনেক খুশি ছিলো।সময় এভাবে পার হচ্ছিল।

–যখন ছোঁয়ার প্র্যাগনেন্সির প্রায় চার মাস, তখন একদিন অনুরাগ ছোঁয়াকে নিয়ে হসপিটালে যায়।চেক- আপ করিয়ে বাহিরে বের হয় দুজন। ছোঁয়াকে দাঁড় করিয়ে অনুরাগ ঔষধ আনতে যায়।অনুরাগ বার বার ছোঁয়াকে বলছিল গাড়িতে গিয়ে বসতে,কিন্তু ছোঁয়া বলে যে সে একটু দাঁড়াতে চায় তাই সে দাঁড়িয়ে থাকে।অনুরাগ রাস্তার ওপাশের দোকানে ঔষধ কিনতে গিয়েছিলো আর নীলা দাঁড়িয়ে ছিলো।অনুরাগের আসতে দেরী হচ্ছে বলে ছোঁয়া রাস্তার ঐ পাশে যেতে নিলে হঠাৎ করে একটা গাড়ি ছোঁয়াকে ধাক্কা মেরে চলে যায়।মুহূর্তেই সব শেষ।অনুরাগের চোখের আড়ালে সবটা ঘটে গেলো।

–ছোঁয়ায়ায়ায়া! ছোঁয়া,এই ছোঁয়া চোখ খুলো, এই (অনুরাগ)

মাথা ফেঁটে রক্ত পড়ছে আর নিচ দিয়ে ব্লিডিং হচ্ছে। ইশশ কি অবস্থা! তারাতাড়ি কোলে নিয়ে সেই হসপিটালেই নিয়ে যাওয়া হয় ছোঁয়াকে।

–ডক্টর, ডক্টর (অনুরাগ)

–ওহ শিট, কীভাবে এমন হলো নার্স প্লিজ তারাতাড়ি OT নেওয়ার ব্যবস্হা করুন।

–ওহ ভালো হয়ে যাবে তো (অনুরাগ).

–প্রচুর ব্লিডিং হচ্ছে এখন কিছু বলতে পারছি না।

প্রায় এক ঘন্টা OT চলে।এর মধ্যে সবাই চলে এসেছে।অনুরাগের একটাই ভয় তার ছোঁয়ার যেন কিছু না হয়।

–মিস্টার চৌধুরী (ডক্টর)

–জ্বি (অনুরাগ)

–আপনি আমার সাথে আসুন (ডক্টর)

–জ্বি স্যার,কি হয়েছে (অনুরাগ)

–নিয়তিকে মেনে নিতে হবে এটাই নিয়ম।আপনার ওয়াইফের ওভারি টা ব্লাস্ট হয়ে গেছে সাথে বাচ্চা টাও।বাচ্চাটা সবে মাত্র স্ট্রেবল করছিল।সিজারিয়ান করে বাচ্চাটাকে বের করা হয়েছে। আই অ্যাম সরি মিস্টার চৌধুরী আপনার স্ত্রী আর কখনো মা হতে পারবে না।(ডক্টর)

–এই কথায় অনুরাগের পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যায়।সব শেষ! কিন্তু তাকে সব সহ্য করতে হবে, তাকে শক্ত হতে হবে। সে ভেঙে পরলে ছোঁয়াকে কে সামলাবে।তাই সে নিজেকে সব দিক থেকে প্রিপেয়ার করে নেয়।

প্রায় তিন দিন পর ছোঁয়ার জ্ঞান ফিরে।জ্ঞান ফিরেই সে পেটে হাত দেয়।পেটের উপর ব্যান্ডেজ দেখে সে চিৎকার করে হৃদয়কে ডেকে বাবুর কথা জানতে চায়।

,–ছোঁয়া পরে কথা বল ঘুমাও একটু (অনুরাগ)

–আগে বল না বাবু ভাল আছে তো,আর ঐ খানে কীসের ব্যান্ডেজ করা।(ছোঁয়া)

–পরে সব শুনো আগে ঘুমাও। (অনুরাগ)

–নাহ এখন বলো বাবু ভালো আছে তো (ছোঁয়া)

নিজেকে প্রস্তুত করে ছোঁয়াকে সবটা বলে অনুরাগ।আর ছোঁয়া সেখানেই স্তব্ধ।

–আমার বাবু চলে গেলো (ছোঁয়া)

–জানপাখি একটু শোন (অনুরাগ)

–আমার বাবুটা চলে গেলো,চলে গেলো আমার আমার বাবু।আমি আর মা হবো না,আমার বাবু কই,এই তুমি আমার বাবুকে এনে দাও।ছোঁয়ার পাগলামি দেখে অনুরাগের বুকের বিতরটা পুড়ে যাচ্ছে।অনুরাগের চোখ দিয়েও টুপটুপ পানি পড়ছে।সে ছোঁয়াকে শান্ত করায় অনেক চেষ্টা করছে। কিন্তু ছোঁয়াকে কিছুতেই শান্ত করতে না পেরে অবশেষে তাকে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়।

প্রায় ১ মাস ধরে এমন পাগলামি করে ছোঁয়া।তারপর অনুরাগের ভালোবাসায় আস্তে আস্তে সুস্থ হয় ছোঁয়া।

তারপর থেকে ছোঁয়া চুপচাপ হয়ে যায়।তেমন কারো সাথে কথাও বলে না, হাসেও না।এভাবেই পাঁচ বছর কেটে যায়।এখনও ছোঁয়া নিজেকে ক্ষমা করতে পারে না তার জন্যই অনুরাগ বাবা হতে পারবে না আর।

Present…..

গাড়িতে বসে বসে সবটাই রিভাইন করলো অনুরাগ।

অফিসে বসে কোন মতেই কাজে মন দিতে পারছে না অনুরাগ।সবটাই তার এলোমেলো লাগছে।তার ছোঁয়াকে ফিরিয়ে আনতে হবে।তার জন্য তাকে সব করতে হবে।

–হ্যালো নীলা (অনুরাগ)

–জ্বি (ছোঁয়া)

–রেডি হও ড্রাইভারকে পাঠাচ্ছি (অনুরাগ,)

–যাওয়াটা কি খুব দরকার (ছোঁয়া,)

–হুম,অনেক চলে আসো।(অনুরাগ)

অনুরাগের কথা মতো রেডি হয়ে গাড়িতে করে অনুরাগের দেওয়া ঠিকানায় পৌছে যায়।সেইখানে গিয়ে দেখে অনেক সুন্দর ডেকোরেশন করা হয়েছে।যেমনটা পাঁচ বছর আগে ছোঁয়াও করেছিল।

-রুমে পা দেওয়ার সাথে সাথে ফুলের বর্ষন শুরু হয়।সামনে তাকাতেই দেখে দেয়ালে অনেক লাইটিং করা, কেউ একজন বলছে,
,,,,,,,,,Happy
Birth
Day,,,,,,,,

My Sweetheart

—-আজ ছোঁয়ার জন্মদিন ছিলো যা ছোঁয়াও ভুলে গেছে।

—তোমার মনে ছিলো (ছোঁয়া)

—হুম (অনুরাগ)

—আমি তো তোমাকে কিছুই দিতে পারিনি ( ছোঁয়া)

—ভালোবাসা দিয়েছো তো তাতেই হবে (অনুরাগ)

—আই লাভ ইউ অনুরাগ (ছোঁয়া)

—আই লাভ ইউ টু ছোঁয়া (অনুরাগ)

—আমাকে একা করে দিওনা,আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি (ছোঁয়া)

—সারাজীবন একসাথে থাকবো।আমি তোমার সাথে থাকতে চাই আর তোমার সাথে বৃদ্ধ হতে চাই।(অনুরাগ)

—আমি আর কিছুই চাই না। ( ছোঁয়া)

তারপর দুজন মিলে কেক কাটে।একে অপরকে খায়িয়ে দেয়।

–আজ ভালেবাসতে দেবে (অনুরাগ)

–আজ একটু বেশী ভালোবাসবে আমায় (ছোঁয়া)

তারপর ছোয়াকে কোলে তুলে বিছানার দিকে যায় অনুরাগ।এত দুঃখের মাঝে ও এত ভালোবাসা। দুজন ডুব দেয় অসীম ভালোবাসার সাগরে।কিছু অপূর্নতা ও পূর্ণতা পায়।আজ ছোঁয়া অপূর্নতার মাঝেও পূর্ণতায় নিজেকে খুঁজে পেয়েছে।অনুরাগের ভালোবাসায় সে আজ অপূর্ণের মাঝে ও পূর্ণ।

এই ভাবে বেঁচে থাকুক ভালোবাসা গুলো,হাজারো অপূর্ণতা এভাবেই পূর্ণতা পাক।কিছু অপূর্ণতা অপূর্ণ থেকেও পূর্ণতা পায়।
ভালো থাকুক অনুরাগ আর ছোঁয়ার তাদের পূর্ণতাকে নিয়ে।

(সমাপ্ত)