#অন্তরালে_তুমি
#Part_11
#Writer_Asfiya_Islam_Jannat
.
?
ড্রয়িং রুমে ইহান আর এরিনা বসে আছে৷ পাশের সোফায় বসে আছে পুষ্পিতা আর আরিহা। আরিহা খুব যত্নসহ কারে পুষ্পিতার পায়ে বেন্ডেজ করে দিচ্ছে। ওর পায়ের তলায় কাঁচ বিধে গিয়েছে। ব্যথাটা অবশ্য ইহানের জন্যই পেয়েছে।
ইহান তখন রাগ করে রুমে চলে যাওয়ার আগে টেবিলের থাকা গ্লাসটা হাত দিয়ে ছুড়ে মারে। যার ফলে গ্লাসটি কয়েক’শ কন্ঠে বিভক্ত হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে। এর কিছুক্ষণ পড়েই নিত্যদিনের মত পুষ্পিতা আসে আরিহার সাথে কাজে হাত এগিয়ে দিতে আর অফিসের কাজগুলো করতে। আরিহা দরজা খুলে দিয়ে ড্রয়িং-এ আসে মেঝে থেকে কাঁচ তুলতে। পুষ্পিতা ওর পিছে পিছে আসতেই মেঝেতে থাকা একটি কাঁচের অংশ ওর পায়ে লেগে যায়। আর সে ব্যথায় কুকড়িয়ে উঠে। আরিহা তা দেখে দ্রুত ওর কাছে যায় আর ওকে ধরে সোফায় বসায়। নিজের কোলে পুষ্পিতার পা টা নিয়ে দেখতে থাকে। এতে পুষ্পিতার পা হতে চুয়ে পড়া রক্তগুলো আরিহার সাদা জামায় পড়ে তা রক্তে রঞ্জিত হয়ে যায়। আরিহা কোন মতে কাঁচটা বের করে রুমের দিকে যায়। রুম থেকে ফাস্ট এইড বক্স আনার সময় ওর হাত থেকে সেটা পড়ে যায়। রুমের বারান্দায় এরিনা আর ইহান থাকার ফলে শব্দটা তাদের কানে যায় আর তারা পিছে ঘুরে আরিহার একমন রক্তে রঞ্জিত শরীর দেখে আঁতকে উঠে।
পুষ্পিতাকে কিছু খায়িয়ে দিয়ে একটা পেইনকিলার খায়িয়ে দেয় আরিহা। ওকে কিছুক্ষণ পাশের রুমে রেস্ট নিতে বলে। কিন্তু পুষ্পিতা মানা করে দেয়। আর বলে,
— আমি এইখানে ঠিক আছি। তুই তোর কাজ কর। আমাকে শুধু একটা ল্যাপটপ এনে দে। যে কাজ গুলো আছে করে নেই।
আরিহা এই কথা শুনে কিছুটা বিরক্তিকর সুরে বলে,
— কোন কাজ করা লাগবে না। তুই রেস্ট নে। কাজ পড়েও করা যাবে।
পুষ্পিতা তখন মুচকি হেসে বলে,
— এই কথা তুই বলছিস? যে কিনা ১০৪° জ্বর নিয়ে অফিসে গিয়ে প্রায় ১৮ ঘন্টা একটানা কাজ করেছে। আমাদের মানা করা সত্ত্বেও একটা কথা শুনে নি বরং লম্বা একটা ভাষণ দিয়ে বলেছিলি,
” বড় কিছু অর্জন করতে চাইলে অনেক সময় নিজেকে বড় ঝুঁকি নিতে হয়। ”
আরিহা এইবার বিরক্তিকর একটা ভাব নিয়ে বলে,
— তখন যদি ওই কষ্টটা না করতাম তাহলে আজ এই জায়গায় পৌঁছাতে পারতাম না। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারতাম না। আর এমনেও তখন কাজ করা আবশ্যক ছিল। কিন্তু এখন তা নেই। তাই আমার সাথে জোড়া লাগাবি না। তোকে রেস্ট নিতে বলছি রেস্ট নে।
পুষ্পিতা এইবার এক দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে আরিহার মুখের পানে তাকায়। কিন্তু কিছু বলে না। ইহান আর এরিনা পুষ্পিতা কথা শুনে কিছুটা বিস্মিত হয়। ১০৪° জ্বর নিয়েও যে টানা ১৮ ঘন্টা কাজ করতে পারে তা ওদের কাউরো জানা ছিল না। কিন্তু অতঃপর আরিহার কঠোর কথা গুলো শুনে এমন মনে হলো যে, কাজ বাদে এই পৃথিবীতে দ্বিতীয় কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজ নেই।
ইহান একবার আরিহার দিকে তাকিয়ে পুষ্পিতার দিকে তাকায়। তার পর অপরাধী কন্ঠে বলে,
— সরি মিস। ব্যথাটা আপনি কোন না কোন ভাবে আমার দ্বারাই পেয়েছেন। তখন গ্লাসটা আমি ভেঙ্গেছিলাম আর সেই গ্লাসের কাঁচের টুকরোই আপনার পায়ে লাগে।
এই কথা শুনে পুষ্পিতার কিছু রাগ হলো। কিন্তু তাও কিছু না বলে চুপচাপ বসে থাকে। কিছুক্ষণ পর বলে,
— ইট ইজ ওকে। আর আমার নাম পুষ্পিতা।
ইহান এইবার স্মিত হেসে বলে,
— সরি আমার আপনার নাম জানা ছিল না। ২ দিন আপনাকে যেতে আর আসতেই দেখেছি। তেমন কথা হয়নি বলে নাম জানা নি।
পুষ্পিতা তখন একটু কর্কশ গলায় বলে,
— এমন অনেক কিছু আছে যা আপনি জানেন না। কিন্তু চেষ্টা করবেন সেগুলো জানার।
ইহান তখন বিস্মিত চোখে তাকিয়ে বলে,
— মানে।
পুষ্পিতা তখন মুচকি হেসে বলে,
— সময় আসলে জেনে যাবেন।
ইহান আর কিছু বলতে যাবে তখন আরিহা শান্ত গলায় বলে,
— ইহান তোমায় ফ্রেশ করিয়ে দিতে হবে আসো। আর আমি পাশে কাঁচ গুলো রেখেছি৷ কেউ আর এখন সেই দিকে যেয়েও না।
তখন পুষ্পিতা বলে,
— আর শুন! আমি আজকেই একটা সার্ভেন্টের ব্যবস্থা করছি। যে বাড়ির সকল কাজ করে দিবে। তুই একা হাতে এতকিছু সামলাতে পারবি না। আগে একা ছিলি বলে পেরেছিলি কিন্তু তুই এখন একা নয়।
আরিহা তখন সম্মতি জানিয়ে ইহানকে রুমে নিয়ে যায়। এরিনা নিজের রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। এতটা লং জার্নি করে এসে সে এখন বেশ ক্লান্ত। পুষ্পিতা সোফায় বসে মোবাইলে গেম খেলতে থাকে।
?
বিকেলে যথাসময়ে তীব্র আর সোহেল চলে আসে। রাতুল আজ আসে নি সে আজ অর্পিকে নিয়ে গেছে ডেটে। তীব্র বাসায় ঢুকার সময় সোফায় বসে থাকা পুষ্পিতার দিকে তাকায়। সে বসে বসে মোবাইলে কিছু কাজ করছি। পুষ্পিতা আজ লেমন কালারের একটা চুড়িদার পড়েছে। গলায় সাদা আর লেমন সেডের স্কার্ফ। সামনে দিকে কাটা ছোট ছোট চুল কপালের অর্ধেকটা জুড়ে বিচরণ চালিয়ে যাচ্ছে। শ্যামলা মুখ খানিটাতে যেন হাজারো মায়া এসে ভোর করেছে।
তীব্র কিছুক্ষণ পুষ্পিতার দিকে চেয়ে থেকে ইহানের রুমের দিকে অগ্রসর হয়। আরিহা তখন রুমেই বসে কাজ করছিল। তাদের দেখে কুশল বিনিময় করে স্টাডি রুমে চলে যায়। আর ফোনে বাইরে থেকে কিছু অর্ডার করে নেয়।
বেশ কিছুক্ষণ পর তীব্র এসে পুষ্পিতার পাশে বসে। পুষ্পিতা নিজের পাশে কাউরো অস্তিত্ব বুঝতে পেরে পাশে তাকায়। তীব্রের মুখখানি চোখে পড়তেই নিজের মুখখানিতে বিরক্তিকর একটা ভাব এসে হানা দেয়। তীব্র তা দেখে দাঁত কেলিয়ে একটা ক্লোস আপ হাসি দেয়। এতে পুষ্পিতার ভ্রু জোড়া কুঞ্চিত করে তাকায়। তীব্র তখনও সেই ক্লোসআপ হাসি দিয়ে বলে,
— কেমন আছো পুষ্পরানী?
“পুষ্পরানী” নামটা শুনেই পুষ্পিতার গা জ্বলে উঠে। সে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তীব্রর দিকে তাকায়। তারপর উপর থেকে নিজ পর্যন্ত একবার ভালো মত দেখে নেয়।
তীব্রর পড়নে ব্ল্যাক একটা গেঞ্জি তার উপর ব্লু কালারের একটি শার্ট। ব্লু জিন্স প্যান্ট পড়া। বা হাতে একটা ব্লু বেন্টের ঘড়ি। চুলগুলো ব্রাশ করা। গায়ের রঙ ইহানের থেকে একটু চাঁপা। কিন্তু তাও এইটা ফর্সার কাতারে পড়েই মনে হলো পুষ্পিতার। পুষ্পিতার এমন তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দেখে তীব্র কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে যায়। সে অপ্রস্তুত গলায় বলে,
— এইভাবে কি দেখছো?
পুষ্পিতা তখন মুচকি হেসে বলে,
— দেখছি যে ভদ্রবেশি বাদর দেখতে কেমন হয়? চেহারা ভোলাভালা ইনোসেন্ট মার্কা হলেও কথাবার্তা শুনে মনে আস্ত রাস্তার রোমিও।
মুচকির হাসির পিছে লুকিয়ে থাকা অপমানটা তীব্র বুঝতে পেরে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
— যদি বলি রাস্তার রোমিওটাও শুধু তোমার জন্যই হয়েছি।
পুষ্পিতা এইবার মুচকি হেসে বলে,
— লেম মার্কা কথা বন্ধ করুন। এইসব ডাইলোগ ৯০ দশকের প্রেমিকপুরুষরা ব্যবহার করতো। এখন এইটার কোন কাজে আসবে না। সো কেটে পড়েন।
তীব্র এইবার বলে,
— কেটে তো পড়বোই কিন্তু তোমার সাথে পুষ্পরানী।
পুষ্পিতা এইবার বিরক্তিকর একটা ভাব নিয়ে বলে,
— হোয়াট ইজ পুষ্পরানী? আমার নাম পুষ্পিতা ওকে। আর প্রতিদিন কি লাগিয়ে দেন বলেন তো? সেই পার্টির রাত থেকে পিছে পড়ে আছেন।
তীব্র তখন মিষ্টি হাসি দিয়ে বলে,
— তুমি আমার হৃদয়ের পুষ্পরানী। আর তোমার পিছে না পড়ে উপায় আছে? তোমার মায়ার জ্বালে যে ফেঁসে গিয়েছি আমি। এখন এই জাল থেকে বেড়িয়ে আসা সম্ভব নয় গো পুষ্পরানী।
পুষ্পিতা এইবার তেতে উঠে বলে,
— নামটা শুনলেই গাটা জ্বলে যায়। উফ!
এই বলে উঠতে নিবে তখনই পায়ের যন্ত্রণায় সে কুঁকড়ে উঠে আর সোফায় বসে পড়ে। সাথে সাথে তীব্র পুষ্পিতার পায়ের দিকে তাকায়। পুষ্পিতার পায়ে আঘাতটা দেখার সাথে সাথে ওর বুকটা মোচড় দিয়ে উঠে। পুষ্পিতার জন্য যে তার মনে এক আলাদাই অনুভূতি কাজ করে। কিন্তু এই অনুভূতির নামটা এখনো কোন নাম পাই নি সে। এইটা কি ভাললাগা না ভালবাসা তা নিয়ে এখনো সে বিভ্রান্তিতে আছে।
তীব্র এইবার দ্রুত নিচে বসে পুষ্পিতার নিজের কোলে নেয় আর দেখতে থাকে। বুঝাই যাচ্ছে পায়ে হয়তো বা কাঁচ বিঁধেছে। হুট করে তীব্রের এমন করায় পুষ্পিতা হকচকিয়ে উঠে আর। সে কিছুটা অস্পষ্ট সুরে বলে,
— আরে কি করছেন?
তীব্র এইবার রাগী দৃষ্টিতে পুষ্পিতার দিকে তাকায়। অতঃপর কিছু না বলে উঠে দাড়ায়। আরিহার যে রুমে আছে সেখানে উঁকি দিয়ে বলে,
— ভাবী তোমার বান্ধুবিকে নিয়ে যাচ্ছি ঠিক মত বাসায় পৌঁছে দিব নে।
এই বলে তীব্র দ্রুত দরজা খুলে পুষ্পিতার সামনে আসে। কিছু বুঝার আগেই ওকে কোলে তুলে নেয় আর হাঁটা শুরু করে। এমন কিছু হবে পুষ্পিতা কল্পনায়ও ভাবে নি। ও বিস্মিত দৃষ্টিতে তীব্রের দিকে তাকিয়ে আছে। অতঃপর সব বুঝে যখন হাত পা ছুড়াছুড়ি শুরু করতেই তীব্র বলে,
— তুমি এখন আমার বাহুদ্বয়ে। আমি এখন চাইলে যা ইচ্ছা করতে পারি তাই ভদ্রমেয়ের মত চুপচাপ থাকো। তা না হলে আমার এই ইনোসেন্ট মার্কা চেহারায় রাভান দেখতে পাবা।
পুষ্পিতা এইবার তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তীব্রের দিকে তাকায় যেন এখনই কাঁচা চিবিয়ে খাবে।
?
এইদিকে তীব্রের কথা শুনে আরিহা যেন কিছুটা বিস্মিত হয়। সে দ্রুত বাইরে এসে দেখে তীব্র পুষ্পিতাকে কোলে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। তা দেখে সে স্থির হয়ে যায় অতঃপর সেই দিকে তাকিয়ে স্মিত হেসে বলে,
— নিউ লাভ স্টোরি!
এই বলে দরজা আটকাতে যাবে তখনই ডেলিভারি বয় এসে খাবার নিয়ে হাজির হয়। আরিহা তখন বিল পে করে সবাইকে খাওয়ার জন্য ডাক দেয়।
ইহান আর সোহেল এসে বসে পড়ে। দুইজন তীব্রকে খুঁজতে থাকলে আরিহা বলে,
— ও চলে গিয়েছে।
ইহান আর সোহেল বিষ্ময়কর চোখে বলে,
— কেন? আর কখন?
আরিহা এরিনার রুমে দিকে যেতে যেতে বলে,
— তা না হয় তাকেই জিজ্ঞেস করো।
আরিহার এমন উত্তরে ইহান আর সোহেল ওর যাওয়ার দিকে ভ্রু কুচকিয়ে তাকিয়ে থাকে। আরিহা এরিনার রুমে গিয়ে ওকে ডেকে তুলে। সেই যে ঘুমিয়েছে এখন পর্যন্ত ঘুমিয়েই চলেছে। এরিনা এইবার উঠে ফ্রেশ হয়ে আসে।
ড্রয়িং রুমে এসে চেয়ার টেনে বসে সবাইকে গুড এভেনিং জানায় সে। তারপর পিজ্জা দেখে খুশিতে লাফিয়ে উঠে। ওর বরাবরই পিজ্জা অনেক বেশি পছন্দ। এরিনা আরিহাকে থেংক্স বলে এক পিস পিজ্জা নিয়ে খেতে শুরু করে। ইহান এরিনার এমন পাগলামো দেখে হেসে দেয়। অতঃপর সোহেলকে বলে,
— সোহেল এ হচ্ছে আমার বোন এরিনা। যার কথা আমি তোদের এত এত বলি। আজই কানাডা থেকে এসেছে। আর এরিনা এই হচ্ছে আমার বন্ধু সোহেল।
এরিনা এইবার পিজ্জার দিক থেকে মুখ তুলে তাকায়। তারপর একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে বলে,
— হ্যালো সোহেল ভাইয়া। নাইচ টু মিট ইউ।
সোহেল এতক্ষণ এরিনার দিকে ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল। এরিনার পড়নে অতি সাধারণ কুর্টি আর জেগিন্স। ঘুম থেকে উঠার ফলে ফর্সা গাল দুটো ফুলে উঠেছে। চোখে গোল গোল চশমা। ঘুম ঘুম ভাব মুখের মধ্যে এখনো লেগে আছে। এতে যেন ওকে আরও বেশি মায়াবী লাগছে। সোহেল এই পর্যন্ত যত মেয়ে দেখেছে সবই মেকাপ সুন্দরী। যা ওর একদম ভালো লাগে না। এই প্রথম মেকাপ বিহীন এতটা মায়াবী একটা মেয়েকে দেখছে। বুকের বা পাশটা দ্রুত গতিতে চলছে এমন মনে হচ্ছে তার। তার চোখ জোড়া যেন এরিনা হতে সরতেই নারাজ। সোহেল এতদিন এরিনার কথা শুনেছে কিন্তু কখনো দেখার সুযোগ হয় নি। হয়তো আগে দেখলে এই মেয়েটার উপর নজর আরও আগে যেত।
সোহেলকে কিছু না বলতে দেখে এরিনা ভ্রু কুচকিয়ে তাকায়। ভালো মত একবার দেখে নেয়। সোহেলের শ্যাম বর্ন গায়ে সাদা একটি শার্ট জড়ানো। চুল গুলো সেট করা। মুখে হাল্কা হাসি। এরিনা এইবার ইহানের দিকে তাকিয়ে বলে,
— ভাইয়া হোয়ায় হি ইজ নো এন্সারিং? ইজ হি ডিফ ওর ডাম? বাট ডাস নোট লুক।
এরিনার এমন কথায় ইহান আর আরিহা হেসে উঠে। আর সোহেল বোকাবনে যায়। এমন এক কথা জন্য সে একদম প্রস্তুত ছিল না। ইহান এইবার সোহেলের পেটে গুতা মেরে বলে,
— কি রে তুই কি তুই কানা নাকি বোবা? কোনটা বলি ওকে?
সোহেল এইবার অপ্রস্তুত হয়ে চাঁপা সুরে বলে,
— চুপ কর শালা। মজা নেস আমার সাথে।
সোহেল এইবার গলাটা পরিষ্কার করে বলে,
— নাইচ টু মিট ইউ টু।
এরিনা এইবার মুচকি হেসে খাওয়ার দিকে মন দেয়। তা দেখে সোহেল আহত চোখে এরিনার দিকে তাকায়।
?
দেখতে দেখতে ১ সপ্তাহ কেটে যায়। ইহান আগের ন্যায় কিছুটা সুস্থ। মাথার বেন্ডেজটা খুলে দেওয়া হয়েছে। হাতেরটা আরও এক সপ্তাহ রাখতে হবে। একটা সার্ভেন্টও রাখা হয়েছে। কিন্তু ইহানের সকল বিষয় আরিহাই দেখে। আরিহা ছোট থেকে ছোট জিনিসের খুব যত্ন রাখতে তার। এতদিনে ইহান বুঝেছে আরিহা বাইরে শক্ত হলেও মনের দিক দিয়ে বেশ নরম। আরিহা প্রতিদিন রাতেই জোড় করে ইহানের বুকে ঘুমায়। এখন তো এইটা ইহানেরও অভ্যাসে পরিনত হয়ে গিয়েছে। আরিহার প্রতিও একটা মায়া কাজ শুরু করা দিয়েছে কিন্তু সে তা মুখে মানতে নারাজ। মুখে এখনো হেট ইউ এইটা ফুটে আছে।
এরিনা ঢাকা শহর ঘুরে দেখবে বলে জীদ করে৷ কিন্তু ইহান আর আরিহা কেউ যেতে পারবে না বলে ইহান সোহেলকে বলে এরিনাকে ঢাকা শহরে ঘুড়িয়ে দেখার জন্য। এতে সোহেল যেন ঈদের চাঁদ হাতে পেয়ে যায়। ওর খুশি আর দেখে কে। সে তো এরিনাকে ঘুরাতে এক পায়ে রাজী। অতঃপর ৪-৫ দিন ধরে রোজ সে সকালে বের হয় আর ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় ঘুরিয়ে দেখায়। পুরান ঢাকার ঐতিহাসিক স্থান থেকে শুরু করে ৩০০ ফিট পর্যন্ত কোন জায়গা যেন বাদ নেই। একেক দিন একেক জায়গায়।
সেইদিন তীব্র প্রথমে পুষ্পিতাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়। অতঃপর ওকে সেপটিকের জন্য ইনজেকশন দিয়ে ঔষধ-পত্র কিনে ওকে বাসায় নামিয়ে দেয়। ও বাসায় দিয়ে আসতে চেয়েছিল কিন্তু পুষ্পিতা মানা করে দেয়। ফোন বের করে নিজের ছোট ভাইকে ফোন দেয়। সাথে সাথে ও নিচে ওকে নিয়ে যায়। তীব্র গাড়িতে থাকায় ওর চেহেরা তেমন বুঝা যায় নি তখন ওর ছোট ভাই যখন জানতো এই লোকটা কে তখন পুষ্পিতা দাঁত কেলিয়ে বলে,
— উবারের ড্রাইভার মামা রে।
তখন তীব্র আহমক বনে যায়। অতঃপর বুঝতে পেরে রাগে ফুসতে থাকে। এমন অপমান সে জীবনেও হয় নি সে। তীব্র সেইদিন কিছু না বলে চলে যায় অতঃপর রাতে পুষ্পিতাকে ফোন করে ইচ্ছা মত জ্বালায়। হসপিটালে থাকাকালীন তীব্র সুযোগ বুঝে নাম্বারটা নিয়ে নেয়। তখন থেকেই শুরু হয়ে যায় তাদের ফোনালাপের সূচনা।
রাতে আরিহা, এরিনা, ইহান বসে ডিনার করছে। আরিহা ইহানকে খায়িয়ে দিচ্ছিল এমন সময় এরিনা ভয়ে ভয়ে ইহানের দিকে বলে,
— ভাইয়া।
ইহান খাবারের দিক থেকে মনযোগ সরিয়ে এরিনার দিকে তাকায়। এরিনার এমন ভীতু গলা শুনে ভ্রু কুচকিয়ে তাকায়। তারপর বলে,
— কি?
এরিনা এইবার কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,
— আব্বু আর আম্মু তোর বিয়ের কথা শুনে এখন তোর আর ভাবীর সাথে দেখা করতে চায়।
কথাটা শুনার সাথে ইহানের মুখের রঙ পাল্টিয়ে যায়। চোখ দুটো ভীষণ লাল হয়ে যায়। শরীর রাগে রি রি করতে থাকে। সে চেঁচিয়ে উঠে,
— তাদের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। তাই তাদের বারণ করবি তারা যেন আমার আর আমার স্ত্রীর ত্রিসীমানায়ও যাতে না আসে। তা না হলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না। তাদের মনে করিয়ে দিবি আমার জন্য তারা মৃত। তাদের জন্য আমার লাইফে না কোন জায়গা নেই। না আগে ছিল না এখন আছে। আই হেড দেম।
এই বলে খাবার না খেয়েই দাঁড়িয়ে যায় সে। চেয়ারটা ধাক্কা মেরে দ্রুত পায়ে রুমে চলে যায়। আরিহা কিছুক্ষণ শান্ত দৃষ্টিতে সেই দিকে তাকিয়ে থেকে এরিনার দিকে তাকায়। এরিনা ভয়ে কুঁকড়ে আছে। চোখের কোনে এক ফোটা জল এসে ভীড় করেছে। এখনই হয়তো গড়িয়ে পড়বে। আরিহা তা দেখে টেবিলে থাকা টিস্যু বক্সটি এগিয়ে দেয়। এরিনা একটা টিস্যু নিয়ে চোখের কোনে থাকা জল মুছে ফেলে। আরিহা শান্ত ভঙ্গিতেই সেই এটো প্লেট সরিয়ে নতুন প্লেট নিল খাবার খাওয়ার জন্য।
তখন এরিনা বলে,
— আব্বু আর আম্মুর কথা উঠকেই ভাইয়া প্রতিবারই এমনই করে। তাদের প্রতি এতটা ঘৃণা পুষে আছে মনে যে তা চাইলেও দূর করা দূর্লভ।
আরিহা এইবার মুখ তুলে এরিনার দিকে তাকায়। এরিনা আরিহার দিকে তাকিয়ে বলে,
— অহ তুমি তো মনে হয় কিছুই জানো না। ভাইয়া হয়তো বলে নি। নিশ্চয়ই মনে প্রশ্ন জাগছে আমাদের বাবা- মা কই তাই তো।
আরিহা কিছু না বলে শান্ত ভঙ্গিতে বসে থাকে। এরিনা এইবার এক দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে বলে,
–আমাদের বাবা- মা আলাদা থাকে। দে আর ডিভোর্সড।
#চলবে
ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমার সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্পের মধ্যে অনেক রহস্য আছে যা ধীরে ধীরে বের হবে। তারাহুরো করতে গেলে পুরো গল্পের সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যাবে। তাই একটু ধৈর্য ধরুন।