অন্তহীন বসন্ত পর্ব-০৪

0
223

#অন্তহীন_বসন্ত~৪
লিখা- Sidratul Muntaz

বাইরে বড় গাড়ি এসে থামার শব্দ শোনা গেল। সানভী তৎক্ষণাৎ অবন্তীর থেকে দূরে সরে বসল। রিমা অত্যন্ত বিরক্ত ভঙ্গিতে লিভিংরুমে প্রবেশ করছে। তার সঙ্গে আছে নিশান্ত। অবন্তী যেন প্রাণ ফিরে পেল। ছটফটিয়ে উঠে দৌড়ে রিমার পেছনে গিয়ে লুকিয়ে পড়ল।
রিমা ভ্রু কুঞ্চিত করে বলল,” কি ব্যাপার ভাই, তুই এখানে কি করছিস? অবন্তী যায়নি কেন?”

সানভীর মুখ এতোক্ষণে পাংশুটে বর্ণ ধারণ করেছে। সে দাঁড়াতে দাঁড়াতে শুকনো ঢোক গিলে বলল,” আপা, তোরা হঠাৎ ব্যাক করলি যে?”

রিমা রুঢ় যন্ত্রণাবিদ্ধ গলায় বলতে লাগল,” আর বলিস না, হঠাৎ জাকির ভাই ফোন দিয়ে বলে অবন্তী নাকি আমাদের সাথে উঠেছে। কিন্তু ও তো আমাদের গাড়িতে ছিল না। আবার নিশান্তও বাসায় কি যেন ফেলে গেছে। সেটা নিতে আর অবন্তীকে খুঁজতে এসেছিলাম। ওকে ওর মা সাথে করে নিয়ে যায়নি কেন?”

সানভী জবাবে বলল,” গাড়িতে জায়গা হচ্ছিল না। তাই আমার সাথে দিয়ে দিল রিকশাতে করে যাওয়ার জন্য।”

” তাহলে তো হলোই। তুই ওকে নিয়ে রিকশা করে চলে আয়।” রিমা এই কথা বলেই যেন অবন্তীর ঝামেলা থেকে মুক্তি পেয়ে হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। কিন্তু অবন্তী রিমার শাড়ির আঁচল খামচে ধরে রেখেছে। সে কিছুতেই সানভীর সাথে যাবে না। প্রাণপণে বলতে লাগল,” আমি উনার সাথে যাবো না আন্টি প্লিজ। আমাকে আপনাদের সাথে নিয়ে চলুন।”

” আমাদের গাড়িতে তো জায়গা নেই। আর তুমি ওর সাথে যাবে না কেন?”

কেন-র উত্তর দিতে পারল না অবন্তী৷ লজ্জায় গুটিয়ে গেল।

নিশান্ত অবন্তীর হাত ধরে বলল,” অবন্তী আমাদের সাথে যাবে।”

অবন্তী কান্না মাখা চেহারা নিয়ে মৃদু হাসল নিশান্তর দিকে চেয়ে। মনে মনে বলল,” থ্যাঙ্কিউ। ” রিমা চরম বিরক্তি নিয়ে বলল,” আমাদের সাথে যাবে মানে? গাড়িতে জায়গা নেই। ও বসবেটা কোথায়?”

” তোমার কোলে বসবে।” নিশান্তর নির্বিকার জবাব। রিমা অগ্নিদৃষ্টিত তাকাল।

” আমি শাড়ি পরে ওকে কোলে নিবো নাকি? যত্তসব উটকো ঝামেলা! সানভীর সঙ্গে গেলে কি সমস্যা?”

নিশান্ত কঠিন গলায় বলল,” সমস্যা নেই। কিন্তু অবন্তী ছোটমামার সাথে যেতে চাইছে না।”

” ওর চাওয়া মতো সব হতে হবে নাকি? অবন্তী, যা বলছি তা করো। যাও সানভীর সাথে। ঝামেলা পাকিয়ো না মেয়ে।”

রিমাকে অবন্তী প্রচন্ড ভয় পায়। সে ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে করুণ দৃষ্টিতে তাকালো নিশান্তর দিকে। রিমা অবন্তীর উপর সৃষ্টি হওয়া বিরক্তি ভাবটা ছেলের উপর উগড়ে দিল। ধমকের সুরে বলল,” তুই দাঁড়িয়ে আছিস কেন শান্ত? যেটা নিতে এসেছিলি সেটা নিয়ে চল এখান থেকে। আর একটা কথাও শুনতে চাই না। শুধু শুধু দেরি হচ্ছে।”

নিশান্ত শ্রাগ করে বলল,” আমার আর কিছু নেওয়ার নেই। অবন্তীর জন্যই এসেছিলাম। ওকে তো নিয়েই যাচ্ছি।”

রিমা হতভম্ব কণ্ঠে বলল,” মানে? অবন্তী কি তোর জরুরী জিনিস? ওকে নেওয়ার জন্য গাড়ি ঘুরিয়ে আবার এসেছিস?”

নিশান্ত খুব শান্ত স্বরে বলল,” হ্যাঁ।”

রিমা বিস্ময়ে বাকরুদ্ধ হয়ে গেল। নিশান্তর বাড়াবাড়ি দেখে তার মাথায় আগুন ধরে যাচ্ছে। ইচ্ছে হলো আদরের ছেলের গালে এক্ষুণি কষে একটা থাপ্পড় লাগাতে। নেহায়েৎ আজ নিশান্তর জন্মদিন। তাই কাজটি সে করতে পারল না। অন্যসময় হলে অবশ্যই করতো।

গাড়িতে চাপাচাপি করে একজনকে বসানোর জায়গা হয়ে গেল। রিমা বলল,” তুই এখানে বসে পড় সানভী। আবার রিকশা করে আলাদা যাওয়ার কি দরকার?”

সানভী গাড়িতে উঠে বসল। হাত বাড়িয়ে স্নেহার্দ্র কণ্ঠে বলল,” অবন্তী মা, তুমি আমার কোলে চলে এসো।”

অবন্তী পিছিয়ে গেল। রিমা নিতান্তই বিরক্ত। মেয়েটা এতো নখড়া করছে কেন কে জানে? সে চোখ রাঙিয়ে বলল,” অবন্তী, যাও।”

অবন্তী কিছুতেই যাবে না। এমন সময় নিশান্ত বলল,” আমি মামার কোলে বসবো। অবন্তী না হয় আমার জায়গায় বসুক।”

সানভীর মুখ শুকিয়ে গেল,” তুই কোলে বসবি মানে? ধূর বেটা, তোর কি কোলে বসার বয়স আছে?”

” অনেকদিন কোলে বসি না মামা। আজ হঠাৎ বসতে ইচ্ছে করছে। অবন্তীকে কোলে নিতে পারলে আমাকে নিতে পারবে না কেন? দেখি সরো, আমি তোমার কোলেই বসবো।”

নিশান্ত কথা বলতে বলতেই ঝটপট সানভীর কোলে চেপে বসল। সানভী চোখ-মুখ কুচকে বলল,” আস্তে, ব্যথা লাগছে তো! কি ওজন হয়েছে তোর। আমার দ্বারা সম্ভব না বাবা।”

” উফ মামা, আজকে আমার বার্থডে না? আমার একটা ইচ্ছে হয়েছে আর তুমি রাখবে না? আমি তোমার কোলে বসেই যাবো।”

রিমা হেসে বলল,” থাক না, একটু কোলে বসতে চাইছে যখন বসুক। আমার রোগা ছেলের এতোটাও ওজন হয়নি যে তুই ওকে নিতে পারবি না। ঢং করিস না তো সানভী!”

সানভী অসহায়ের মতো বলল,” আপা তুমি বুঝতে পারছো না। আমার পায়ের অবস্থা কি হচ্ছে তা শুধু আমি জানি। ভর্তা হয়ে যাচ্ছে আমার পা।”

অবন্তী মনে মনে ভাবল, নিশান্তর জায়গায় সে বসলে তো এতোক্ষণে সানভী তার শরীর নিয়ে চটকা-চটকি শুরু করতো। তার শরীরটাও ভর্তা হয়ে যেতো। এখন অন্তত এটা ভালো যে সানভীর পা ভর্তা হচ্ছে। হাত দু’টো ভর্তা হলে আরও ভালো হতো। অবন্তী মনে মনে একটা গালি দিল সানভীকে। তারপর নিশ্চিন্তে নিশান্তর জায়গায় এসে বসল। গাড়ি চলতে শুরু করেছে। মাঝে মাঝেই রাস্তার ঝাঁকিতে সানভীর অবস্থা কাহিল হয়ে যাচ্ছে। ব্যথা ব্যথা করে সে চেঁচিয়ে উঠছে। নিশান্ত সন্তর্পণে অবন্তীর দিকে তাকিয়ে চোখ টিপল। অবন্তী মুখে হাত দিয়ে হাসতে লাগল। তার খুব মজা লাগছিল।

চলবে