#অন্য_পৃথিবীর
পর্বঃ৩
লেখিকাঃদিশা মনি
‘আমি নীলাকে ভালোবাসলে এত অবাক হওয়ার কি আছে?’
রমিজ চৌধুরী রায়হানের কথা শুনে খুব রেগে যান।মনোয়ারা বেগমও নীলার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে থাকে।আমিনা রান্নাঘর থেকে এসব শুনে ছুটে আসে।তার তো বিশ্বাসই হচ্ছিল না তার মেয়ে এমন কিছু করতে পারে।
নীলা কি বলবে বা করবে বুঝতে পারছিল না।সে তো এই অন্য পৃথিবীর নীলার সম্পর্কে কিছু জানেই না।হয়তোবা সত্যি রায়হানের সাথে নীলার সম্পর্ক ছিল।নীলা তাই চুপচাপই ছিল।
রমিজ চৌধুরী রেগে গিয়ে বলেন,’আমার ছেলে একটা কাজের লোকের মেয়ের সাথে প্রেম করে আমার মান-সম্মান নষ্ট করবে এটা আমি মানব না।আমি এই সম্পর্ক মানি না।’
‘তোমার মানা না মানায় আমার কিছু যায় আসে না।আমি শুধু নীলাকেই ভালোবাসি আর বিয়ে করলে নীলাকেই বিয়ে করব।’
রায়হানের বড় ভাই রাজীব এবং ছোট বোন রিয়ানা বসে বসে এসব দেখছিল।রিয়ানার তো খুব মজা লাগছিল এসব দেখে।রিয়ানা অনেকটা ছেলেমানুষ তাই সে এসব এনজয় করলেও বুঝদার রাজীব এসব মানতে পারে না।রায়হানের হাত ধরে রাজীব বলে,’রায়হান এসব নাটক বন্ধ কর।বিয়ে ভাঙার জন্য তুই এত নিচে নামিস না।’
‘আমি কোন নাটক করছি না।আমি সত্যি নীলাকে ভালোবাসি।’
আমিনা সবার কথা শুনে এতটাই অবাক হয় যে তার কাছে সবকিছু স্বপ্ন লাগে।নীলা বরাবরই লাজুক এবং অল্পভাষী।কারো সাথে সেভাবে কথা বলে না,মেশে না।যদিও দুদিন থেকে ভীষণ অদ্ভুত ব্যবহার করছে, কিন্তু তাই বলে নীলা রায়হানের সাথে প্রেম করছে এটা কোনভাবেই বিশ্বাসযোগ্য নয়।
আমিনা নীলাকে একপাশে টেনে নিয়ে গিয়ে বলে,
‘নীলা এসব কি বলছেন উনি? সত্যি কি ওনার সাথে তোর কোন সম্পর্ক আছে?’
‘জানি না।’
‘মজা করছিস আমার সাথে? শোন এটা মজা করার সময় নয়।তুই বলনা তোদের মধ্যে কি সত্যি কোন সম্পর্ক নেই।’
‘আমি কিভাবে জানব? আমি কি এই পৃথিবীর নীলা।’
জিহ্বা কে’টে নীলা ভাবে এ কি বলে ফেলল সে।
আমিনা অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে ভাবে, আমার মেয়েটার মাথা কি খারাপ হয়ে গেল?
৬.
রায়হান নীলার কাছে এসে তার কানে কানে বলে,’এখন আমি যা বলছি তাতে হ্যাঁ তে হ্যাঁ মিলান।আপনার যত টাকা দরকার আমি আপনাকে তত টাকা দেব।’
রায়হানের কথা শুনে নীলার কাছে সবটা পরিস্কার হয়।নীলা ভাবতে থাকে রায়হানের কথা শোনাই তার জন্য ভালো হবে।এমনিতে এই পৃথিবীতে এসে সে অনেক কষ্টে দিন কা’টাচ্ছে।এখন কিছু টাকা হলে বেটার ভাবে লাইফ কা’টাতে পারবে।
তাই নীলা রায়হানের কথায় সম্মতি জানায়।নীলা সবাইকে বানিয়ে বানিয়ে বলে,
‘রায়হানকে প্রথম দেখেই আমার বুকের মধ্যে ঘন্টা বেজে ওঠে।আমার মনে হয়, রায়হানই আমার স্বামী হবে।তাই আমি রায়হানের পেছন পেছন ঘুরতে থাকি আর বিভিন্ন উপায়ে ওর মন জয়ের চেষ্টা করি।একসময় আমার রূপের মাধ্যমে রায়হানকে পটিয়ে ফেলি।’
নীলার কথা শুনে সেখানে উপস্থিত সবাই বিরক্তি এবং রাগের সাথে তার দিকে তাকায়।রিয়ানা হো হো করে হেসে ফেলে।মনোয়ারা বেগম চোখ রাঙিয়ে রিয়ানাকে থামিয়ে নীলাকে বলে,
‘বেশ ভালোভাবেই তো আমার ছেলেটাকে ফাসিয়েছ।এখন বল কত টাকা নিলে আমার ছেলের জীবন থেকে চলে যাবে।’
টাকার কথা শুনে নীলার চোখ চকচক করতে থাকে।নিজের পৃথিবীতে না চাইতেই প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা পেয়ে গেছে।তাই সে এতদিন টাকার মূল্য বোঝেনি।অকাজে কত টাকা নষ্ট করেছে।আজ নীলা টাকার মূল্য বুঝেছে।টাকা রোজকার করা কঠিন নীলা সেটাও বুঝে গেছে।
তাই সে ভাবে যে করেই হোক মা-ছেলে দুজনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে একটু ভালোভাবে জীবনযাপন করবে।
রায়হান তার মাকে ধমক দিয়ে বলে,’আমাদের ভালোবাসাকে তুমি টাকা দিয়ে নষ্ট করতে পারবে না আম্মু।আমাদের ভালোবাসা এতটা ঠুনকো নয়।’
‘আমিনা, তোমার মেয়েকে দেখে তো খুব সহজ সরল মনে হতো।কি মন্ত্র দিয়ে আমার ছেলেটাকে বস করল?’
আমিনা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে।দীর্ঘ ১৫ বছর থেকে এই বাড়িতে কাজ করে, সবাই তাকে পরিবারের সদস্যই ভাবে।আজ তার মেয়ের জন্য সব মান-সম্মান শেষ হয়ে গেল।
নীলা তো চুপ থাকার মেয়ে নয়।নীলা বলে,
‘আপনার ছেলে আমাকে ভালোবাসতেই পারে।এইজন্য আমার মাকে দোষ দিতে পারেন না।আমাকে ছেলের বউ করতে না চাইলে করবেন না কিন্তু আমার মা’কে কথা শোনানোর কোন অধিকার আপনার নেই।’
কথা শেষ হতে না হতেই আমিনা নীলার গালে হাত বসিয়ে দেয়।নীলা গালে হাত দিয়ে বলে, ‘আম্মু তুমি আমায় মা’রলে?’
নীলার চোখে জল চলে আসে।আজ অব্দি কেউ তারো গায়ে হাত দেয়নি।তার নিজের পৃথিবীতে যদিওবা তার মা অনেক গালমন্দ করতো কিন্তু গায়ে কখনো হাত তোলেনি।
রায়হানের নীলার জন্য খুব খারাপ লাগে।তাই রায়হান বলে,’আমার যা বলার তা বলে দিয়েছি।আর কিছু বলব না।নীলা চলো আমার সাথে।’
নীলার হাত ধরে বাইরে চলে আসে রায়হান।মৌসুমী এতক্ষণ চুপচাপ ছিল কারণ তার বাবা বলেছিল সবার সামনে ভালো ব্যবহার করতে।কিন্তু এখন তার ধৈর্যের বাধ ভেঙে গেছে।মৌসুমী বলে,
‘আমাদের এভাবে ডেকে অপমান করার কোন প্রয়োজন ছিল না।আমরা এখনই এখান থেকে চলে যাব।ড্যাড চলো।আমার বাবার ধন সম্পদের অভাব নেই।রায়হানের মতো একটা থার্ড ক্লাস ছেলেকে আমি বিয়ে করবো না।’
রমিজ এবং মনোয়ারা অনেক বোঝানোর পরেও মৌসুমী তার বাবাকে নিয়ে চলে যায়।
৭.
‘কত টাকা চাই আপনার?’
রায়হানের কথা শুনে নীলার খুব রাগ হয়।নিজের পৃথিবীতে কত সহজে টাকা পেয়ে যেত আর এই অন্য পৃথিবীতে টাকা পাওয়ার জন্য তাকে মা’র পর্যন্ত খেতে হলো।রাগে টগবগ করতে করতে নীলা বলে ওঠে,’১০’
‘১০ হাজার একটু কম হয়ে গেল না? আপনি খুব ভালো অভিনয় করেছেন।আমি আপনাকে ৫০ হাজার টাকা দিতে চাই।’
‘হ্যালো আমি ১০ হাজার না ১০ লাখ টাকার কথা বলেছি।আপনার জন্য আমায় আজ প্রথম মায়ের হাতে মা’র খেতে হলো।তাই ১০ লাখের ১ টাকাও কম নেব না।’
নীলার কথা শুনে রায়হান কাশতে কাশতে বলে,
‘প্লিজ এভাবে মজা করবেন না।আমার কাছে এখন এত টাকা নেই।’
‘আমি কিছু জানিনা।হয় ১০ লাখ টাকা দিন নাহলে আমি এক্ষুনি সবাইকে গিয়ে সব সত্য বলে দেব।’
‘রাগ করছেন কেন? আমি তো বলিনি আমি টাকাটা দেবোনা।আমি বলেছি এখন আমার কাছে এত টাকা নেই।আপাতত এই নিন ১ লাখ টাকা রাখুন।বাকি টাকা পরে দেবো।’
নীলা টাকাটা পেয়ে খুব খুশি হয়।দুদিন থেকে ভালোমন্দ খায়না,ভালো জামা-কাপড় পড়ে না।তাই টাকাটা হাতে পেয়েই প্রথমে শপিং মলে গেল।শপিং করেই ৫০ হাজার টাকা শেষ করে ফেলল! এরপর একটি দামী রেস্টুরেন্টে গিয়ে ১০ হাজার টাকার খাবার খেল।
নীলা বুঝতে পারল এভাবে টাকা নষ্ট করলে চলবে না।তাই সে বাকি টাকা নিয়ে চলে যায় বাড়িতে।
নীলাকে দেখে আমিনা বলে,
‘কোথায় গিয়েছিলি? তোর জন্য আমার কাজটা চলে গেল।এখন আমি কি করব?’
‘চিন্তা করোনা।এখন আমরা বড়লোক হয়ে যাব।দেখ তোমার জন্য ভালো একটা শাড়ি এনেছি।আর এই নাও ৪০ হাজার টাকা।’
‘এত টাকা কোথায় পেলি?’
‘সেসব তোমায় জানতে হবে না।টাকা দিয়েছি খুশি হও।আর কোন কাজ করতে হবে না।’
‘তুই কোন খারাপ কাজে জড়িয়ে পড়িস নি তো?’
‘ছি আম্মু! তুমি এমন কথা ভাব আমাকে নিয়ে।বেশি ভেবোনা আমি কোন খারাপ কাজ করছি না।এখন আর বেশি কথা বলোনা।কাল থেকে আমি ভার্সিটিতে যাব তাই ভালো ভালো জামাকাপড় এনেছি।’
নীলা আর কথা না বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়।হঠাৎ কেউ তার মুখ চেপে ধরে তাকে নিয়ে যায়।
চলবে…….