অন্য পৃথিবীর পর্ব-০৪

0
224

#অন্য_পৃথিবীর
পর্বঃ৪
লেখিকাঃদিশা মনি

‘কে তুমি কেন আমায় এখানে নিয়ে এসেছ?’

কোন উত্তর না পেয়ে নীলা চিৎকার করতে যাবে তার আগেই লোকটি তার সাথে জোর জবরদস্তি করা শুরু করে।লোকটির চেহারা দেখে নীলা চমকে যায়।ইনি তো নীলার বাবার বন্ধু।কিন্তু এই অন্য পৃথিবীতে লোকটা একটা সাইকোপ্যাথ।

নীলা বুঝতে পারে লোকটার উদ্দ্যেশ ভালো না।নীলা কি করবে বুঝতে পারছিল না।নীলা কিছু বুঝে ওঠার আগেই লোকটি তার উপর হামলে পড়ে।নীলা বাঁচার জন্য অনেক আকুতি করে কিন্তু লোকটি যেহেতু সাইকোপ্যাথ ছিল তাই তিনি নীলার চুল টেনে ছিড়তে থাকেন,নীলার দাঁতে পেরেক ঠুকে দেওয়ার চেষ্টা করেন।তখনই রায়হান সেখানে চলে আসে এবং নীলাকে রক্ষা করে।

নীলা অজ্ঞান হয়ে যায়।জ্ঞান ফেরার পর সে দেখে আমিনা তার মাথার উপরে বসে কাঁদছে।

৮.
আকস্মিক ঘটনায় নীলা মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে।সে বুঝতে পারছিল গরীব মানুষদের জীবনে কত দুঃখ যন্ত্রণা। নীলা খবর পায় তার বাবা নাজিম উদ্দীন দূর্ঘটনার কারণে হাসপাতালে ভর্তি।তার অবস্থা অনেক গুরুতর।

নীলা এবং আমিনা ছুটে যায় হাসপাতালে।নাজিম উদ্দিনের অবস্থা খুবই খারাপ তার চিকিৎসার জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন।নীলা এবং আমিনার কাছে এত টাকা ছিলনা।

নীলা মনে করে নিজেদের পৃথিবীতে তার বাবার সামান্য আঙুলের চোটের কারণে বিদেশে যেত আর এই পৃথিবীতে এত গুরুতর অবস্থাতেও ভালো চিকিৎসা করাতে পারছে না।

নীলার নিজেকে ভীষণ অসহায় মনে হয়।নীলা রায়হানের কাছে ছুটে যায়।রায়হানকে বলে তাকে ৫ লাখ টাকা দিতে।রায়হান বলে,’আমার কাছে এখন এত টাকা নেই।বাবা আমাকে টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।’

নীলা রায়হানকে সব কথা জানায়।সব শুনে রায়হানের খুব খারাপ লাগে নীলার জন্য।সে কথা দেয় যে করেই হোক ৫ লাখ টাকা জোগাড় করবে।

রায়হান তার কিছু বন্ধুর কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা জোগাড় করে নীলাকে দেয়।নীলা দ্রুত হাসপাতালে ছুটে যায় কিন্তু গিয়ে দেখে তার বাবা মারা গেছে।আমিনা পাগলের মতো কাঁদছে।

নীলার মনে পড়ে যায় তার নিজের পৃথিবীতে সেও এভাবে একজন মানুষকে ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে এসেছিল।আজ সে বুঝতে পারল একজন মানুষের জীবনের দাম কতো।টাকা দিয়েও যেটা ফিরে পাওয়া যায়না।

এরপর থেকে নীলা পুরোপুরি বদলে যায়।সে মানুষের মূল্য বোঝে এবং সৎভাবে জীবনযাপন করার কথা ভাবে।

সে অবশিষ্ট টাকা রায়হানকে ফিরিয়ে দিয়ে বলে,’আপনি আমাকে অনেক সাহায্য করেছেন তাই আমি আপনাকে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করতে চাইনা।কিন্তু আমি আর কোন নাটক করতে পারব না।’

‘তোমাকে আর কোন নাটক করতে হবেও না।মৌসুমীর সাথে রাজীব ভাইয়ার বিয়ে ঠিক হয়েছে আমি এখন ফ্রি।’

নীলা আর কিছু না বলে চলে আসে।
৯.
নীলার ভার্সিটিতে আজ প্রথমদিন।এখন নীলা অনেক বদলে গেছে।এই অন্য পৃথিবীর নীলা অনেক মেধাবী ছিল।নীলা যে নিজের পৃথিবীতে একটুও পড়ত না এখন সে পড়াশোনায় পড়াশোনায় মূল্যও বুঝে গেছে।এখন সে নিয়মিত পড়াশোনা করে।

আমিনা এখন অনেক কষ্ট করে সংসার চালায়।তাই নীলা চায় ভালো ভাবে পড়াশোনা করে মায়ের কষ্ট দূর করতে।

ভার্সিটির প্রথম দিনই তার সাথে রায়হানের দেখা হয়।রায়হানও তার ভার্সিটিতে পড়ে।মৌসুমী,রিয়ানা এই ভার্সিটিতেই পড়ে।

মৌসুমী সবার মধ্যে রটিয়ে দেয়, রায়হান এবং নীলার সম্পর্ক আছে।

রায়হানের বন্ধুরা এই নিয়ে তার সাথে মজা করলে রায়হান বলে,’এসব নাটক ছিল।এরকম মেয়েকে আমার পাশে কি মানায়?’

নীলা দূর থেকে রায়হানের কথা শোনে।সে সত্যি সত্যি এই পৃথিবীর রায়হানকে ভালোবেসে ফেলেছিল।

নীলার এখন নিজেকে খুব অসহায় মনে হচ্ছিল।নিজের পৃথিবীতে ফিরে যাওয়ার খুব ইচ্ছে করছিল তার।

ভার্সিটি থেকে ফেরার সময় রকিকে দেখতে পায় নীলা।রকি নীলার দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে থাকে।রকি বলে,’আপনার সাথে কিছু কথা আসে চলে আসুন।’

নীলা রকির সাথে যেতে থাকে।রকি নীলাকে নিয়ে একজন বিজ্ঞানীর কাছে যায়।রকি বলে,’মিস্টার আব্দুল খান ইনি হলেন সেই ব্যক্তি যিনি অন্য পৃথিবী থেকে এই পৃথিবীতে এসেছে।’

রকির কথা শুনে নীলা অবাক হয়না।কারণ সে নিজেই কিছুদিন আগে রকিকে সব বলেছিল।আব্দুল নীলাকে বলে,’তুমি কি নিজের পৃথিবীতে ফিরতে চাও?’

‘অবশ্যই চাই।এই পৃথিবীর কোন কিছুই আমার ভালো লাগছে না।আমি আর সহ্য করতে পারছি না।’

‘তাহলে তোমাকে আরো দুইমাস অপেক্ষা করতে হবে।দুইমাস পরেই আরো একটি বিশেষ দিন।সেইদিন আবার সব আগের মতো ঠিক হয়ে যাবে।’

আব্দুল খানের কথা শুনে নীলার মুখে হাসি ফুটে ওঠে।নীলা এবার সিদ্ধান্ত নেয় নিজের পৃথিবীতে ফিরে গেলে সে আর অহংকারী থাকবে না।একেবারে বদলে যাবে।

নীলা তাদেরকে ধন্যবাদ জানিয়ে সেখান থেকে বিদায় নেয়।

সারাদিন অনেক কাজ করে আমিনা রাতে এসে ভাত রান্না করে।নীলাকে খেতে ডেকে বলে,’তোর জন্য একটা ভালো সম্মন্ধ ঠিক করলাম।তোর বাবার অনেক স্বপ্ন ছিল তোকে অনেক পড়াবে।কিন্তু ভাগ্য আমার সাথ দিলোনা।আমার কিছু হয়ে গেলে তোর কি হবে এই ভেবে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি তোর বিয়ের।’

‘কিন্তু আমি এখন বিয়ে করতে চাইনা।’

‘এরকম বলিস না।ছেলেটা অনেক ভালো, অনেক শিক্ষিত।বিয়ের পর পড়াশোনা করতে দেবে।’

নীলা আর কিছু বলে না।আমিনার দিকে তাকিয়ে অনেক মায়া হয় তার।

১০.
রায়হান কিছুতেই স্বস্তি পাচ্ছিল না।তার বারবার নীলার কথাই মনে পড়ছিল।কেন হচ্ছে এমন? সেদিন দূর থেকে রায়হান খেয়াল করে নীলা তার সব কথা শুনেছিল।তখন থেকেই রায়হানের এই দ্বিধা দ্বন্দ্ব শুরু।

রায়হান বুঝতে পারে সে নীলাকে ভালোবেসে ফেলেছে।সে রাতেই দৌড়ে যায় নীলাদের বাড়ি।গিয়ে নীলাকে ডাকতে থাকে।

আমিনা বাইরে এসে বলে,’আপনি নীলাকে কেন ডাকছেন? নীলা আমাকে সব বলেছে যে আপনি ওকে টাকা দিয়ে অভিনয় করতে বলেছিলেন।কিন্তু সে আর এইসব অভিনয় করতে চায়না।তাই দয়া করে আর আমার মেয়েটাকে দিয়ে এরকম মিথ্যা বলাবেন না।’

‘আমি কোন মিথ্যা বলতে আসিনি।আমি নীলাকে নিজের মনের কথা বলতে এসেছি।আমি নীলাকে সত্যি ভালোবাসি।’

নীলা এতক্ষণ ভেতর থেকে সব শুনছিল।রায়হানের কথা শুনে বাইরে এসে সে বলে,’আপনি আর এরকম অভিনয় করবেন না।আমি হাতজোড় করে অনুরোধ করছি চলে যান এখান থেকে।’

‘আমি কোন মিথ্যা বলছিনা।আমি তোমায় ভালোবাসি।’

‘কিন্তু আমি আপনাকে ভালোবাসি না।আর কিছুদিন পরেই আমার বিয়ে।তাই আপনার কাছে অনুরোধ আমার জীবনটা আর নষ্ট করবেন না।’

নীলার কথা শুনে রায়হান বাকরুদ্ধ হয়ে যায়।তার কি বলা উচিৎ সে ভেবে পাচ্ছিল না।

আমিনা মুখের উপর দরজা বন্ধ করে নেয়।নীলা ঘরে বসে বসে কাঁদতে থাকে।
এভাবেই সময় চলতে থাকে।দেখতে দেখতে নীলার বিয়ের দিন চলে আসে।নীলা বউ সেজে বসে ছিল।ইতিমধ্যেই একমাস হয়ে গেছে।আর মাত্র একমাস তাকে এই পৃথিবীতে থাকতে হবে।এরমধ্যে বিয়ে করতে একেবারেই সে রাজি ছিলনা।কিন্তু আমিনার কথায় বাধ্য হয়ে সে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

রকি হন্তদন্ত করে নীলার ঘরে ঢুকে বলে,’এই বিয়ে করোনা।বিয়ে করলে তুমি আর কোনদিনও নিজের পৃথিবীতে ফিরতে পারবেনা।চিরকাল এই অন্য পৃথিবীর মানুষ হয়ে থাকতে হবে।’
চলবে…….