অপূর্ণতা পর্ব-০১

0
4105

#অপূর্ণতা❤️
#লেখক_Ananta Sanny(স্বপ্নচোর)
#পর্ব_১

– বাবা হতে পারবি না তাহলে বিয়ে কেনো করেছিলি?
– রাইসা……
– মারবি? মার এ ছাড়া আর কি করতে পারবি? আমাকে মেরে ফেল তবু এই অপবাদ থেকে মুক্তি চাই…….

“রাইসার গায়ে হাত তুলতে গিয়ে কথাগুলো শুনে আকাশের হাত থেমে যায়। সত্যি তো!

মেয়েটি তো একদন্ড মিথ্যা কথা বলেনি। নিজের ব্যার্থতা ডাকার জন্য কেনো আঘাত করে দমিয়ে রাখবে? রাইসার গায়ে হাত তুলতে গিয়েও থমকে যায়। মাথা নিচু করে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।

” রাইসার আড়ালেই চোখের অশ্রু গুলো মুছে রুম থেজে বের হয়ে গেলো। রাইসা বিছানায় শুয়ে বালিশ জড়িয়ে ধরে কান্না করতে থাকে। যেনো বর্ষাকালের মতো বৃষ্টি পড়ছে রাইসার চোখ গুলো থেকে।

” রাইসা যেনো কিছুক্ষন আগেও হাসি খুশি ছিলো। অনন্তর সাথে খুনসুটি ভালবাসা ঝগড়া আর অভিমানী ভালবাসায় পথ চলা।

“এই তো ঘন্টা দুয়েক আগের কথা। জন্মদিনের পার্টিতে যাবে বলে অনন্ত রেডি হচ্ছে। অফিস থেকে আসার পর থেকেই রাইসা শুরু করেছে কখন রেডি হবে। অথচ নিজের রেডি হওয়ার নাম নেই। তাই রাইসার কথা শুনা থেকে মুক্তি পেতে আগেই রেডি হতে শুরু করলো। যদিও টাই টা ঠিক বাঁধা হচ্ছে না। কিসের ছোঁয়া পাচ্ছে না।

অনন্ত গলায় টাই দিয়ে রাইসাকে ডেকে বললো….

– রাইসা, টাই টা বেঁধে দিবে?

” অনন্তর কথা শুনেই রাইসা রান্না ঘর থেকে এসে দেখে রাগে তাকিয়ে রইলো। অনন্ত কে দেখেই বলে উঠলো..

– বাবু শার্ট প্যান্ট পরে আবার কোথায় যাচ্ছেন?
– কেনো জন্মদিনের পার্টিতে।
– উফ, জন্মদিনের পার্টিতে কেউ শার্ট প্যান্ট পড়ে যায়?পাঞ্জাবি পড়ে গেলে কি হয়??
– আরে পেত্নী, সবাই তো শার্ট প্যান্ট পড়েই আসবে।
– আসুক। কবে যে একটু মানুষ হবে। তুই পাঞ্জাবি পড়েই যাবি।
– কি? আমি মানুষ না?
– না!

“রাইসা অনন্ত কে কথা গুলো বলেই একটু রেগে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। রাইসার প্রিয় বান্ধবীর ছেলের জন্মদিন। সেই অনুষ্ঠানে যাবে বলে রাইসা দুপুর থেকেই যেনো রেডি হয়ে বসে আছে। যদিও রেডি হয়ে বসে নেই সবার আগে অনন্ত কে রেডি করে বসিয়ে রাখতে চাইছে। কেনো না রাইসা বেশ ভালো করেই জানে বাঁদর টা একবার টিভিতে খেলা দেখা শুরু করলে উঠার নাম নেই।

অনন্ত তো রাইসার কথা শুনেই চুপ, আর কোন কথা বলার সাহস নেই। অনন্ত চাই না তাঁর অভিমানী টা এখন আবার অভিমান করে বসুক। রাইসার হাসিখুশি মায়াবী মুখটা দেখে অনন্ত চাই না ওই হাসিমুখে মেঘের ছায়া নেমে আসুক। তাই কোন উচ্চবাচ্য না করে হাসিমুখে রাইসার কথা মেনে শার্ট প্যান্ট পরিবর্তন করে পাঞ্জাবি আর পায়জামা পড়ার মনস্থির করল। যদিও অনন্ত পারবে না রাইসার কথার অমন্য করতে। কেনোনা না সেই অধিকার টুকু রাইসা জোর করেই কেড়ে নিয়েছে।

“রাইসা রাগে কথাগুলো বলে বের হয়ে আসলেও আজ সে অনেক খুশি। অনেকদিন পর প্রিয় বান্ধবীর সাথে দেখা হবে। তাই তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করে গুছিয়ে নিতে চাচ্ছে। এটাও জানে অনন্ত কে যা বলেছে সেটাই করবে।

“রাইসা রান্নাঘরে কাজ শেষ করতে চলে গেলে অনন্ত নীল পাঞ্জাবি টা পড়ে। বেডরুমে এসে খুঁজতে হয়নি। রাইসা বের করে রেখেছিল।

“অনন্ত সোফায় বসে টিভি দেখতে দেখতে বিরক্ত হয়ে গেলো। সেই কখন থেকে রাইসার জন্য বসে আছে এখনো নাম নেই রেডি হওয়ার। অনন্ত রাগ দেখিয়ে বললো…..

– আমাকে রেডি করে বসিয়ে রেখেছে। আর কতক্ষন বসে থাকবো?

অনন্তর কথা শুনেই রাইসা বেডরুম থেকে বললো…..

– দাঁড়াও না। এই তো শেষ,আসছি।
– এতোক্ষণ লাগে সাজতে? কি এমন সাজো দেখি……

“অনন্ত সোফা থেকে উঠে বেডরুমে দরজায় খোলার চেষ্টা করতেই অবাক হয়ে গেলো। কেননা অনন্ত ভাবতে পারেনি রাইসা দরজা বন্ধ করে সাজগোছ করবে। রাইসা কে বলে উঠলো…..

– কি ব্যাপার দরজা বন্ধ করলে কেনো?
– আমি বেশ ভালো করেই জানতাম তুমি কোন না কোন এক উছিলায় রুমে আসতে চাইবে। তোমার মতো বজ্জাতকে হাড়ে হাড়ে চিনি। তাই আগেই দরজা বন্ধ করে রেখেছি।
– কি বললে?

রাইসা তখনি দরজা খোলে বললো…..

– জ্বি মশাই, যা শুনেছেন তাই বলেছি।
– এতো সময়…..

“রাইসাকে কথা বলতে গিয়েও থমকে যায়। যেনো কোন অপ্সরা চোখের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। অপ্সরা নাকি পরী বলবে ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না। এক অপরুপা যেনো নিজেকে সাজিয়ে চোখের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।

এমন সময় মনের ভিতর মিউজিক বাজছে

ওই তোর মায়বী চোখ..
কাজল হয়ে যাবো..
আজ ওড়লে হাওয়া তোর..
আচঁল হয়ে যাবো..
আমার হয়ে যা তুই
আমি তোর হয়ে যাবো🥰

রাইসা দরজা খোলেই বললো….

– এই যে মিস্টার। রাগ করবে না একদম। দেখো তোমার পাঞ্জাবির সাথে মেচিং করে নীল শাড়ি পড়েছি।

রাইসার কথা শুনে অনন্ত হাত বাড়িয়ে বলতে থাকে…..

– তোমার ওই মায়াবী চোখের দিকে তাকিয়ে রাগ করতে পারি। কি মায়ায় আচ্ছন্ন করে রেখেছো। যতই দেখি ততোই….
– কি মিস্টার। কি মতলব…??

” অনন্ত রাইসাকে হাত বাড়িয়ে কিছু বলতে যাবে তখনি রাইসা খপ করে হাতটি ধরে ফেললো। রাইসা মুচকি হেঁসে কথা গুলো বলতেই এক হেচকা টানে নিজের বাহুডরে আবদ্ধ করে রাইসাকে।

রাইসাকে আরো কাছে নিয়ে অনন্ত বললো….

– কোন মতলব নেই। আমার প্রিয়তমাকে একটু কাছে পাওয়া। ওই ঠোঁট গুলো যেনো হাতছানি ডাকছে।
– খবরদার আমার ঠোঁটে স্পর্শ করবে না। এখন আবার লিপস্টিক দিতে পারবো না।

” রাইসা অনন্তর বুক থেকে সরিয়ে একটু রাগ দেখিয়ে বললো। রাইসার কথা শুনেই বললো……

– একটু…
– চুপ ব্যাটা। দিন দিন বজ্জাতের হাড্ডি হচ্ছে। দেরি হয়ে যাচ্ছে। চল…..

“রাইসা নিজেকে ছাড়িয়ে হাত ধরে যাওয়ার জন্য তাড়া দিলো। রাইসা বেশ ভাল করেই জানে অনন্ত কি চাচ্ছে তাঁর কাছে। অনন্ত কিছু না বলে চুপ করে থাকলে রাইসা থমকে দাঁড়িয়ে অনন্ত কে একনজর দেখলো। কেমন গাল ফুলিয়ে মুখ বেজার করে রেখেছে।

হঠাৎ করেই অনন্তর গাল চুমু দিয়ে বলল….

– এই অভিমানী রাগী মানুষটিকে ভীষন ভালো লাগে।

রাইসার কথা শুনে কিছু বলতে যাবে তার আগেই কপাট রাগ দেখিয়ে বললো….

– এখন হয়েছে। বাকী টুকু পরে দিবো। চল…..

“রাইসার ভালবাসায় অনন্ত রাগ করে থাকতে পারেনি। মূহুর্তেই সব অভিমান যেনো হারিয়ে গেলো। রাইসার কপালে স্পর্শ করে অনন্ত বলে উঠলো….

– তোমার সাথে রাগ করতে পারি। চল….

” রাইসাকে নিজের বাহুডরে আবদ্ধ করে রওনা দিলো। সন্ধ্যায় পার্টি শুরু হলেও দুপুর থেকে বাসায় অনন্ত। রাইসা ছুটি নিতে বলেছিল। অনুষ্ঠান শুরু অনেক আগেই তাড়া চলে আসে। রাইসার বান্ধবী কে সারপ্রাইজ দিবে বলে।

দু’তলা বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামলো। আজ রাইসার বান্ধবী রিতুর ছেলের জন্মদিন বলে অনেক সুন্দর করে সাজিয়েছে। গাড়ি থেকে দেখেই মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে ছিলো।

রাইসা গাড়ি থেকে নামতেই রিতুর বর দেখে এগিয়ে এসে বলল…..

– রাইসা আপু যে। কেমন আছেন?
– আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনি কেমন আছেন?
– আপনাদের দোয়ায় বেশ ভাল আছি।
– রিতু কোথায়?

রিতুর কথা জানতে চাইলে রিতুর বর বললো….

– রিতু উপরে আছে। মনে হয় ছেলেকে রেডি করছে। আপনি যান।

” রিতুর বরের কথা শুনেই রিতু উপরের ঘরের যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো। আজ অনেক দিন পর দেখা হবে। না জানি রাইসাকে দেখে কত খুশি হবে।

রাইসা মনে মনে কথা গুলো ভাবতে ভাবতেই চলে আসে। দরজায় দাঁড়িয়ে রিতুকে দেখেই পিছন থেকে জাপ্টে ধরে বললো…..

– কি রে হারামি। একবারে ভূলে গেলি যে…

রাইসার জড়িয়ে ধরায় আচমকাই চমকে উঠে রিতু। পিছন ফিরে রাইসাকে দেখেই ভীষন চমকে উঠে। বেশ অবাক হয়ে বললো….

– তুই…..
– হ্যা,আমি। এমন ভাবে হা করে আছিস কেনো? আরে আমি রাইসাই ভূত টূত না। তুই তো আবার ভয় পাস।

রাইসার কথা শুনেই রিতু ছেলেকে রেডি করতে করতে বললো….

– তুই, তাও এতোদিন পর?
– রাগ করিস না রে। কি করবো বল? হঠাৎ করেই তোরা কোথায় চলে গেলি। তারপর তো কোন খুঁজ পেলাম নাহ। আকাশের সাথে তোর বরের পরিচয় হওয়ায় না আবার তোর খুঁজ পেলাম।
– ওহ!

রাইসার কথা শুনে খুব ছোট করে বলল। যেনো কথা বলার ইচ্ছে টাই নেই। রাইসা আগমনে বেজার বলে উঠতে পারছে না। রিতুর এমন আচরণের কারণ রাইসা ঠিক বুঝে উঠতে পারেনি। হয়তো রাগ করেছে,এতোদিন দেখা হয়নি বলে।

“রিতুর ছেলেকে দেখেই আদর করার জন্য হাত বাড়িয়ে বললো……

– বাহ! তোর ছেলে দেখি একদম তোর মতোই কিউট হয়েছে। কি নাম রেখেছিস….???

রিতু ঠিক তখনি রাইসার হাত বাঁধা দিয়ে বলে উঠলো….

– এমন শুভ দিনে আমার ছেলের গায়ে হাত দিবি না। আমি চাই না কোন অশুভ আমার ছেলেকে স্পর্শ করুক।

“রিতুর কথা শুনেই ভীষন চমকে উঠে রাইসা। রিতু কি বলছে সে কিছুই বুঝতে পারছে না। ভীষন অবাক হয়ে বললো….

-মানে? কি বলছিস এইসব তুই?
-হ্যা!। আমি চাই না এই শুভ দিনে কোন বাজে কথা বলতে। তোর অলক্ষ্যে ছায়া যেনো না ছুঁতে পারে তাই
এখানে আসলেও তোদের থেকে দূরে থেকেছি। কত করে বারণ করলাম দাওয়াত না দিতে। যখন এসেছি খেয়ে চলে যা।

“রাইসা কে কথাগুলো বলেই রিতু তাঁর ছেলেকে নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। রাইসার একটুও বুঝতে অসুবিধা হয়নি কি বলতে চাচ্ছে। হয়তো অনেক আগেই বুঝার উচিত ছিলো রিতুর কথা গুলল বলার আগে।
রিতুর কথা গুলো শুনে চোখের কোণায় কখন যে পানি চলে আসলো বুঝতেও পারি নি। রাইসা চোখের পানি গুলো মুছে চুপচাপ রুম থেকে বের হয়ে আসলো।

” রিতু এমন করে কখনো বলবে ভাবতেও পারেনি। যার জন্য এতো করেছিল।

রাইসা চোখের পানি গুলো মুছে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো। রাইসাকে গাড়ির দিকে এগিয়ে যেতে দেখে অনন্ত এগিয়ে এসে বললো….

– আরে,তুমি আবার এই দিকে কোথায় যাচ্ছো? এতোবার ডাকছি শুনতে পাও না?

অনন্ত রাইসার হাত ধরতেই বুকের মাঝে জাপ্টে পড়ে। সবার সামনেই অনন্ত কে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে। অনন্ত অবাক হয়ে যায়। অনন্ত কিছুই বুঝতে পারছে না কি এমন হয়েছে যার জন্য কান্না করছে।

রাইসার চোখের পানি দেখে নিজেকে সামলাতে খুব কষ্ট হয়। সবাই তাকিয়ে আছে দেখে অনন্ত সামলে নিয়ে বললো….

– রাইসা, কি হয়েছে?
– বাসায় যাবো। চল……
– কেনো? আমরা……
– বাসায় যাবো বলছি।

“রাইসা চিৎকার করে বলে উঠতেই অনন্ত কোন কথা বললো না। রাইসাকে নিয়ে ফিরে আসে। রিতুর বর অনেক বার রিকোয়েস্ট করলেও অনন্ত ক্ষমা চেয়ে চলে আসে। বাসায় ফিরতেই অনন্ত কারণ জানতে চাইলে রাইসা বলল….

– কিছু হয়নি।
– কিছু হয়নি তো এমন ভাবে চলে আসলে কেনো? কেনো আমাকে ছোট করলে??

অনন্তর কথা শুনেই রাইসা চিৎকার করে বলে উঠলো…..

– যখন বাবা হওয়ার যোগ্যতা রাখিস না তাহলে বিয়ে কেনো করেছিলি?
– রাইসা…….
– মারবি? মার মেরে ফেল তারপরও এই আমাকে মুক্ত করে দে।

রাইসার শরীরে হাত তুলতে গিয়েও থমকে যায়। ঠিকই তো, যখন বাবা হওয়ার যোগ্যতা নেই তাহলে…..

“অনন্ত আর কোন কথা বলেনি। চুপচাপ রুম থেকে বের হয়ে যায়। রাইসা কান্না করে,রাইসা কান্না থামিয়ে নিজের চোখের পানি গুলো মুছে ফেললো।

রাইসা নিজেকে নিজে বললো…..

– ছিঃ এটা আমি কি করলাম। অন্যের কথা শুনে অনন্ত কে…..

তখনি দরজায় কে যেনো কলিং বেল বেজে উঠলো। রাইসা চোখের পানি গুলো মুছে নিজেকে সামলে নিয়ে দরজা খোলে দিতেই বললো….

– ভাবি। তোমাকে সেই কখন থেকে ফোন করছি। তাড়াতাড়ি চল…….

” মাহিনের কথা শুনেই চমকে উঠে বললো…..

– কেনো? কি হয়েছে?
– ভাইয়া আর…………………………

(চলবে)