অপূর্ণতা পর্ব-০২

0
4224

#অপূর্ণতা❤️
#লেখক_Ananta Sanny(স্বপ্নচোর)
#পর্ব_২

রিহানের কথা শুনেই চমকে উঠে বলল….
– কেনো? কি হয়েছে??
– ভাইয়া আর নেই। গাড়ি এক্সিডেন্ট মারা গেছে। হাসপাতালে যেতে হবে।
– কি বলছিস এই সব তুই। বাজে কথা বলবি না।
– ভাবী,অনন্ত ভাই আর নেই।
– নাহ! আমার অনন্ত মরতে পারে না।

রাইসা সবকিছু ফেলে দৌড়ে ছুটে যায় হাসপাতালে। হাসপাতালের বেডে নিথর দেহ টা পড়ে আছে। রাইসা দেখেই চিৎকার করে বলে উঠলো…..

– এ কি করলাম আমি? আমার কথা শুনে তুই এমন ভাবে চলে গেলি।

” রাইসা অনন্তর লাশ দেখেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। রাইসা কে রিহান আর তাঁর স্ত্রী । অনন্তর লাশ বাসায় আনা হলে সবাই দেখার জন্য ভীড় করে। গাড়ির নিচে একদম পিষে যায়। মুখমন্ডল বা দেহ কোন টাই বুঝা যায় না।

রাইসার কথা ভেবে বলাবলি করতে থাকে……..

– এখন মেয়ে টার কি হবে?

রাইসা কে অনন্তর বিভৎস হয়ে যাওয়া দেহ টুকু আর দেখানো হয়নি। এমন দৃশ্য কেউ কখনো দেখেনি। একদম চাকার নিচে পৃষ্ঠ হয়ে যায়।

অনন্তর শেষ দৃশ্য টাও দেখা হয়নি। রাইসার যখন জ্ঞান ফিরে তখন একটা কথাই বলতে থাকে….

– অনন্ত! বাসায় আসবে কখন??

অনন্তর দেহ দাফন করে একে একে সবাই বিদায় নিলো। অনন্ত কে হারিয়ে কেমন নিশ্চুপ হয়ে যায়। কারো সাথে কোন কথা বলে না। রাইসা সারাক্ষণ শুধু পথের দিকে তাকিয়ে থাকে। তাঁর অনন্ত ফিরে আসবে।

অনন্তর লাশ দাফন করার পরই যেনো সবকিছুর দৃশ্য বদলে যাওয়া শুরু হলো। কেউ একজন বলে উঠল….

– এখন এই বিধাবা মেয়ে টাকে কে বিয়ে করবে?
– কি আর করবে? একজন কে দেখে বিয়ে করে নিবে।

রাইসার সম্পর্কে কথাটা শুনেই একজন বলে উঠলো….

– তোমরা কি কিছুই বুঝ না। একটা দিন পার না হতেই শুরু করে দিলে?


অনন্ত চোখ খোলতেই মাথায় প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করল। চারপাশে তাকিয়ে বুঝতে চেষ্টা করে কোথায় আছে।

অনন্তর মাথায় তখন কেউ হাত বুলিয়ে বললো……

– আরে, উঠছো কেনো? শোয়ে থাকো, একদিন পর তোমার জ্ঞান ফিরেছে। এমন ভাবে কেউ রাস্তা পার হয়?

“ভদ্রলোকের কথা শুনেই অনন্ত চমকে উঠে। ওনি কে? অনন্ত এখানে আসলো কি করে? অনন্ত সব মন করতে চেষ্টা করে।

রাইসার কথা শুনে চুপচাপ রুম থেকে বের হয়ে চলে আসে। রাইসার কথা বার বার মনে হতে থাকে।

– বাবা হওয়ার যোগ্যতা নেই কেনো বিয়ে করেছিলি??

“অনন্ত যাকে নিজের থেকেও বেশি ভালবাসে সে এমন ভাবে বলবে কখনো ভাবতে পারেনি। সত্যি তো…..

” অনন্ত তো কোন দিন বাবা হতে পারবে কি-না জানে না। তাহলে কেনো শুধু শুধু ভালবাসা দিয়ে বন্দি করে রেখেছে রাইসাকে। রাইসার তো মা ডাক শোনার ইচ্ছে হয়। ইচ্ছে হয় মাতৃত্বের স্বাধ পেতে। তাহলে কেনো তাকে বঞ্চিত করছে। রাইসাকে মা ডাক শোনার অধিকার থেকে বঞ্চিত করে রেখেছে। রাইসা তাঁর কাছ থেকে মুক্তি চেয়েছে। আজ অনেক দিন পর মুখ ফুটে ভিতরে থাকা কষ্ট টা বের করেছে।

“অনন্ত কথাগুলো ভাবতে ভাবতে উদাসীন মনে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে থাকে। তখনি এক যুবক পথ আগলে দাঁড়ায়। অনন্তর সামনে ছুড়ি ধরে বললো….

– যা, আছে সব বের কর। নয়তো তোর গলা আলাদা করে ফেলবো।

” অনন্ত যুবকটির কথা শুনে র্নিলিপ্ত ভাবে তাকিয়ে রইলো। অনন্তর এই মূহুর্তে পৃথিবীর কাছে চাওয়ার কিছুই নেই। অনন্ত কে ধমকে উঠতেই অনন্ত জোড় না করে মানিব্যাগ, হাত ঘুড়ি,টাকা দিয়ে দেয়। কি দরকার এগুলো দিয়ে? কি হবে? যার জন্য এতো টা সুন্দর করে সাজিয়ে রাখা আর সেই মানুষ টি যখন সুখে নেই। ভিতরে ভিতরে ডুকরে কেঁদে যাচ্ছে। এই জাঁকজমকপূর্ণ পোশাক দিয়ে সাজিয়ে রেখে কি লাভ নিজেকে।

যুবকটি চলে যেতে চাইলে অনন্ত ডাক দিয়ে বললো….

– এই শোন, এই ব্লেজার টা নিয়ে যাও। বৃষ্টি তারপর ঠান্ডা বাতাস তা তো কষ্ট হচ্ছে তোমার।

” অনন্তর কথা শুনে যুবকটি অবাক হয়ে যায়। দুটানায় পড়ে যায় অনন্তর কথা শুনে। অনন্ত জোর করেই দিয়ে উদাসীন ভাবে হাঁটতে থাকে।

” হঠাৎ করেই রাস্তা পার হওয়ার সময় বিপরীত দিক হতে গাড়ির সাথে ধাক্কা লাগে। তারপর আর কিছুই মনে নেই। অনন্ত কে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকতে দেখে ভদ্রলোক বলে উঠলো…..

– আল্লাহর রহমতে কিছু হয়নি। ভীষন ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। দেখে শুনে রাস্তা পার হতে পারো না?

অনন্তর সব মনে পড়লো। রাইসা তাঁর অপেক্ষায় আছে। তড়িঘড়ি করে বিছানা ছেড়ে উঠতে চাইলো। তখন ভদ্রলোক বাঁধা দিয়ে বললো….

– আরে কি করছো? তোমার শরীরে অবস্থা ভালো না।
– রাইসা অপেক্ষায় আছে। আমাকে যেতে হবে।
– আমি সকাল বেলায় পৌঁছে দিবো।
– না আামকে এখনি যেতে হবে।

” অনন্ত বাসা থেকে বের হয়ে চলে আসে। ভদ্রলোক অনেক জোর করেও রাখতে পারেনি। অনন্তর মনে বার বার একটাই কথা মনে হচ্ছে।

তাঁর রাইসা কেমন আছে? হয়তো অনন্ত কে না পেয়ে পাগলের মতো খুঁজে যাচ্ছে। এটা কি করলাম? রাইসা তো মনের কষ্টে কথাগুলে বলে ফেলেছে। তাই বলে এমন ভাবে একা ফেলে চলে আসবে??

” তাঁর পাগলটি মনে হয় সারা রাত কান্না করে না খেয়েই ঘুমিয়েছিল। এখনো মনে হয় কিচ্ছু মুখে দেই নি। অনন্তর সাথে কথা না বলে যে কখনোই খাবে না।

” একদিন অফিসের দেরি হয়ে যাওয়া তে না বলে চলেছিলো। সেদিন সারাদিন অভিমান করে কিছুই খায়নি। তারপর অনন্ত ব্যাস্ততায় দুপুরেও খোঁজ নিতে পারেনি। অনন্ত বাসায় ফিরে অভিমান টুকু বুঝতে পেরে সরি বলেছিল তখন জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে বলেছিল….

– কুত্তা, হারামি, বিল্লাই আমার কথা একবারো মনে পড়লে না।

” সেদিনের চোখের পানি গুলো এখনো চোখের সামনে ভেসে ওঠে। এটা কি করলাম?

“অনন্ত মনে মনে কথাগুলো ভাবছিল আর দ্রুত পা চালাতেই হঠাৎ কেউ ডাক দিয়ে বললো….

– অনন্ত ভাই না। অনন্ত ভাই….

রিহানকে দেখেই অনন্ত হাসিমুখে তাকিয়ে বললো…

– রিহান, কেমন আছিস?

” অনন্ত ডাক শুনে পিছনে তাকাতেই দেখে রিহান অবাক আর বিস্ময় হয়ে তাকিয়ে আছে। অনন্তর কথা শুনে চমকে উঠে। অনন্তর কাছে এসেই বললো……

– ভাই, আপনি বেঁচে আছেন? তাহলে কাকে কবর দিয়ে আসলাম?

রিহানের কথা শুনেই চমকে উঠে। কি বলছে? কবর কাকে দিবে? আর বেঁচে আছে মানে? রিহানের দিকে তাকিয়ে বললো….

– কি বলছিস এইসব? কিসের কবর??

রিহান অনন্তকে জড়িয়ে ধরে বলল…..

– ভাই, আপনি মরতে পারেন না। রাইসা আপু ঠিক বলেছিল। সেই লাশ আপনার ছিল না।

“রিহানের কথা শুনে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। কিছুই বুঝতে পারছে না। কিসের ঘুরের মাঝে যেনো পড়ে গেলো। রিহান তাঁকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে দিল। রিহানকে সরিয়ে অনন্ত বললো…..

– আমাকে বলতো কি হয়েছে?

” রিহান চোখের পানি মুছে নিজেকে সামলে নিয়ে বলতে শুরু করলো…..

” হঠাৎ ফোন আসে আপনি এক্সিডেন্ট করে হাসপাতালে। যখন শুনলাম তখন চমকে উঠি। মূহুর্তেই ভাবীর কাছে দৌড়ে গেলাম। ভাবী আপনার মৃত্যুর কথা শুনে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। এতোটাই ক্ষতবিক্ষত দেহ যেনো চিনতেই পারেনি। শুধু মানিব্যাগে থাকা আইডি কার্ড দেখে বুঝতে পারি। আমরা আপনার লাশ ভেবে দাফন করেছি।

“রিহানের কথা শুনে থমকে যায়। একমুহূর্তের জন্য যেনো পৃথিবী টা অন্ধকারে ছেয়ে যায়। রিহান খুশিতে আত্মাহারা হয়ে যায় অনন্ত মরে নি।

” রিহানকে রাইসার কথা জিজ্ঞেসা করতে গিয়েও থমকে যায়। মূহুর্তেই ভেবে নেয়। রিহানকে টেনে নিয়ে অনন্তকে অন্ধকারের গলিতে ঢুকে যায়। অনন্তর ব্যবহারে অবাক হয়ে যায় রিহান। রিহানকে শক্ত করে ধরে বলল….

– তোর কাছে একটা রিকোয়েস্ট করবো রাখবি….??

রিহান অবাক হয়ে বললো…..

– কি রিকোয়েস্ট?
– আমি যে বেঁচে আছি আর কেউ যেনো না জানি। সবাই জানবে অনন্ত মৃত। তুই কাউকে বলবি না আমার কথা। প্লিজ
– ভাইয়া, এইসব কি বলছো?
– হ্যা, আমি যা বলছি তাই। তোকে আমার ছোট ভাইয়ের মতো দেখি। আমার এই অনুরোধ টুকু রাখ।

“অনন্তর কথা শুনে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। কোন কিছুই মাথায় যাচ্ছে না। কেনো এমন করছে? অনন্তর জন্য রাইসা ভাবীকে দেখেছে কতটা ভেঙে পড়তে। কেনো অনন্ত ফিরে এসেও নিজেকে আড়াল করে রাখতে চাইছে।

রিহান অনন্তর দিকে বিস্মিত হয়ে বললো…..

– কিন্তু রাইসা আপু….
– রাইসা ভালো থাকবে। আমি সময় হলে তোকে সব বলবো। এখন যাই,কেউ হয়তো দেখে ফেলবে।

“রিহানকে কথা গুলো বলেই দ্রুত পা বাড়াল। রিহান কোন কথা বলার সুযোগ পেলো না। মুহূর্তের মাঝেই অন্ধকারে মিলিয়ে গেলো। রিহান শুধু পথের দিকে তাকিয়ে রইলো।


“রাইসা আজ দুদিন হলো না কিছুই মুখে দিচ্ছে না। অনেক চেষ্টা করেও কিছুই খাওয়াতে পারেনি রাইসার আম্মু। শুধু একটা কথাই বলে যাচ্ছে……

– অনন্ত, তুই এখনো বাসায় আসলি না কেনো? আমাকে কে খাইয়ে দিবে?

“রাইসার মুখের দিকে তাকানো যায় না। মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে আড়ালে চোখ মুছে। কেউ ভাবতে পারেনি এমন একটা ঘটনা ঘটে যাবে। মেয়েকে ডাকতে এসেও চলে যায়। অনন্তর ছবির দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে কি বলে যাচ্ছে।

– ভাবী কেমন আছেন?

হঠাৎ কথা শুনেই রাইসার আম্মু পিছনে তাকিয়ে দেখে তাদের দূর সম্পর্কের আত্নীয় দাঁড়িয়ে আছে। দেখেই রাইসার আম্মুর রাগ ওঠে গেলো। সেদিন অনন্তর লাশ দাফন হওয়ার পরপরই বলে উঠে…..

– আপা। এখন তো মেয়ে টা বিধবা। কেউ বিয়ে করতে চাইবে না। অনেক দুঃখ লাগছে মেয়েটার জন্য।

” রাইসার আম্মু কিছু বলতে গিয়েও চুপ থাকলো। ভদ্রতার খাতিরে ভিতরে যাওয়ার জন্য বলে চলে গেলো। রাইসাী আম্মু হাতে চায়ের কাপ নিয়ে আসতেই বলল….

– আপা,আমি কিছু খাবো না। একটা কথা বলার জন্য এসেছি।
– কি কথা?

কথা বলার অনিচ্ছা সত্বেও জানতে চাইলো। তখন রাইসার আম্মু কে বললো…..

– রাইসার জন্য একটা বিয়ের সম্বোধন নিয়ে এসেছি। অনেক বড়লোক। বউটা মরে গেছিলো।

রাইসার আম্মু কথা শুনে রেগে গিয়ে বললো….

– বের হয়ে যান বাসা থেকে। আর কখনো আসবেন না। আমাদের মেয়ে আমরা বুঝবো।
– কাজটা কিন্তু ঠিক হচ্ছে না। এমন পোড়ামুখী মেয়ে কে কোন জোয়ান ছেলে বিয়ে করবে?

” রাইসার আম্মুর কথা শুনে যেতে যেতে বললো। শাড়ির আঁচলে মুখ লুকিয়ে কান্না করতে করতে রুমে চলে গেলো। রাইসার আব্বু সব দেখেও নীরব হয়ে গেলো।

সময় গুলো খুব দ্রুত কেটে যেতে থাকে। সময়ের সাথে সাথে সবাই অনন্তকে ভুলে গেলেও রাইসা অনন্তর স্মৃতি গুলো আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছে। আগের থেকেও অনেকটা স্বাভাবিক। মাঝে মাঝেই অনন্তর কবরের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।

” রাইসা আজও অনন্তর মৃত্যুর জন্য নিজেকে দায়ী করে। সেদিন এমন ভাবে কথাগুলো না বললেও পারতো। অনন্ত তো কম করেনি।

“অনন্তর কবর থেকে আসার পথে একজন পথ আগলে দাঁড়িয়ে বলল…..

– এই যৌবন নিয়ে আর কতদিন? বিয়ে করে নিলেই হয়।

” ছেলেটিকে চিনতে অসুবিধা হয়নি। মাঝে মাঝে ডির্স্টাপ করতো আর আজ……

” রাইসা লজ্জায় ঘৃণায় আর কিছু বলতে পারে নি। কথাগুলো শোনে কান্না চলে আসলো। কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারেনি।

রাইসা রুমে আসতেই চমকে উঠে। বিছানায় বেলী ফুলের মালা আর তাঁর প্রিয় আইসক্রিম। রাইসা সেগুলো নিয়ে অবাক হয়ে দেখছে তখনি তাঁর আম্মু এসে বললো…..

– রাইসা,কাপড় চেঞ্জ করে শাড়ি পড়ে আস তো।
– কেনো?
– তোর জন্য বি……………….

(চলবে)

ভুলত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন.!