অপেক্ষিত প্রহর পর্ব-২০ এবং শেষ পর্ব

0
808

#অপেক্ষিত_প্রহর
#আফসানা_মিমি
|সমাপ্তি পর্ব |

আরো একটি প্রভাতের আগমন ঘটেছে ধরণীতে। সকাল সকাল ইফাজ রেডি হচ্ছে রেকর্ডিংয়ে যাওয়ার জন্য। গতকাল অনেক রাত অবধি গানের চর্চা করেছে ইফাজ। আজকে নাকি ইফাজের অনেক ইম্পরট্যান্ট দিন। আজ যেই গানের রেকর্ডিংয়ের জন্য এত তোড়জোড় করছে যদি এই রেকর্ডিং ভালোভাবে হয়ে যায় তাহলে ভিন্ন দেশ ভ্রমণের সুযোগ পাবে।

– হয়েছে তোমার হিবারাণী!
– আমার আবার হবে কি? আপনি সেথায় যাবেন, আমাকে টানছেন কেন?
– তোমাকে এক মিনিটের জন্যও আমার দৃষ্টির বাহিরে রাখবো না। এখানে তুমি একা থাকা মানে জমের বাড়ির মুখে থাকা।
– আমি এখানেই থাকবো। শত্রুর মুখোমুখি হতে হবে না? আর তাছাড়া বাবা বাসায় একা। বাবার জন্যই তো এতদিন আপনি চুপ ছিলেন। এখন আমি এসেছি, আপনি নিশ্চিন্তে আপনার কাজে যান। এদিকে আমি সামলে নিচ্ছি।

আমার কথা শুনে মুচকি হেসে ইফাজ আমার কপালে চুমু এঁকে দিলেন। সাবধানে থেকো বলে বিদায় নিলেন। ঘর থেকে আমরা দুইজন একসাথে বের হলাম। সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে পর্যবেক্ষণ করলাম আশেপাশে দুই ভিলেন আছে কি না। আমার চিন্তার মধ্যেই দেখতে পেলাম, ভিলেন দুইজন আমার সামনে বসে চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে আর গোল গোল চোখে আমাদের দেখছে। আমার কাছে তো মনে হচ্ছে এরা চা পান করছে না যেন আমার রক্ত চুষে চুষে পান করছে।

– কোথায় যাচ্ছো ইফাজ?

ইফাজের মায়ের কথা শুনে ইফাজ দাঁড়িয়ে গেল। শক্ত কন্ঠস্বরে জবাব দিলো,
– আপনাকে বলতে বাধ্য নই।
ইফাজের কথার মধ্যেই কানিজ বলে উঠে,
– ইফাজ, আজ আমাদের একটা কনসার্ট শো করতে হবে। যা তুমি কিছুদিন আগে চুক্তি করেছিলে। এই কনসার্ট আমার সাথে না করলে কিন্তু তোমার ক্যারিয়ার শেষ, ভুলে যাবে না কিন্তু।

কানিজের কথা শুনে ভ্রু যুগল কুঁচকে ইফাজের পানে তাকালাম। আমার চাহনি দেখে ইফাজ মিনমিন করে বলল,
– আমি কখনো পপ কনসার্টে গান গাইনি। আমাকে মা মিথ্যা কথা বলে চুক্তিবদ্ধ করিয়েছে।

ইফাজের কথা শুনে রাগ হলো। মানুষ ভোলা মন হয় তাই বলে এত! আর এই দেড় বছরে ইফাজ কি এতটাই দুর্বল হয়ে পড়েছিলো!

– আপনি এই বিপদ থেকে কীভাবে উদ্ধার হবেন ইফাজ? আমার মনে হচ্ছে আপনার মা আর কানিজ কিছু একটা করবে।
ইফাজ আমাকে আরো কিছু বলবে তার আগেই আমার দুই বাবার আগমন ঘটে। আমার বাবা এখনও গ্রামে যায়নি। পুরোনো বন্ধুকে পেয়ে থেকে গেলেন আজকের রাত। বাবা ইফাজের রেডি হওয়া দেখে জিজ্ঞেস করলেন,

– ইফাজ বাবা কোথায় যাচ্ছো।
– বাবা, গতকাল রাতে বলেছিলাম না! আজ গানের রেকর্ডিং আছে। আর আজ সফল হলে জীবনের সবচেয়ে বড়ো পাওয়া হাসিল হবে।

ইফাজের বাবা হুইলচেয়ারে বসে ইফাজকে কাছে ডাকলেন।
– ইফাজ বাবা, কিছু কথা মনে রাখবে! জীবনে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় সবাইকে। নিজেকে শক্ত রাখবে সর্বদা। জীবনে যেমন সমস্যার আগমন ঘটবে তেমন সমস্যার সমাধান আসবে। সবসময় নিজের চোখ কান খোলা রাখবে। সবাইকে বিশ্বাস করবে না। নিজের মর্জিতে চলবে। দেখবে জীবনে সফলতা এসেছে।

– অবশ্যই বাবা, তোমার কথা আজীবন মনে থাকবে।

বাবা আর ছেলের কথার মাঝে আমার বাবা বলে উঠলেন,
– ইফাজ আজ আমার যেতে হবে গ্রামে। আহিবার মাকে একা রেখে এসেছি আমার এখানে আর থাকা যাবে না। আহিবা এখানে আর কিছুদিন থাক তারপর নিয়ে যাবো বাসায়। নাকি আজই নিয়ে যাবো আমার সাথে?

– না বাবা, আহিবা আজকে থাক। আমি আগামীকাল বা তারপরের দিন আসছি আপনাদের কাছে। বিয়ের তারিখ ঠিক করতে। খুব ধুমধাম করে আহিবাকে আমার ঘরে তুলবো।

ইফাজের কথা শুনে আমি চোখ বড়ো বড়ো করে তাকালাম। আর এদিকে আমাদের বিয়ের কথা শুনে কানিজ এবং আমার শাশুড়ি মার হাত থেকে চায়ের কাপ পড়ে গেল। তাঁরা দুজনে একসাথে দাঁড়িয়ে বলে উঠলেন,
– কি?

দুজনের একসাথে চিৎকার শুনে আমরা সবাই কানে হাত দিয়ে রাখলাম। মহিলা মানুষ আর কিছু না পারুক, চিৎকার-চেঁচামেচিতে উস্তাদ।
– বিয়ে মানে! ইফাজ তুই আমাকে কথা দিয়েছিলি এই মেয়েকে ডিভোর্স দিয়ে কানিজকে বিয়ে করবি।

শাশুড়ি মায়ের কথায় ইফাজ স্বাভাবিক স্বরে বললেন,

– কথা ফিরিয়ে নিলাম। তুমি যেমন ব্ল্যাকমেল করে আমাকে ওয়াদাবদ্ধ করেছিলে। আমিও তোমার মিথ্যা ওয়াদা ভেঙ্গে ফেললাম। শুনে রাখো তুমি, আমি আমার বউকে ডিভোর্স দিবো না। সারা শহরের মানুষদের জানিয়ে ডাক-ঢোল পিটিয়ে বিয়ে করব আবার আমার হিবারাণীকে।

ইফাজের কথা শুনে কানিজ বলে উঠল,

– মিস্টার ফারদিন ইফাজ। একটা কথা জানেন! আজকে সন্ধ্যায় কনসার্টের চুক্তির সাথে সাথে আপনি কিন্তু আরেকটা চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছিলেন সেই দিন। আজকে কনসার্টে যদি আপনি হেরে যান তাহলে আমাকে বিয়ে করতে হবে আপনার নয়তো আপনার সকল সম্পত্তির মালিক হবো আমি। আর যদি জয়ী হোন তাহলে আপনি যা বলবেন তাই করব আমি। অবশ্য এই কথাটা তখন জানায়নি কিন্তু এখন মনে হচ্ছে জানানো টা আবশ্যক।

চুরি তো চুরি তার উপর কলিজা চুরি। আমার এখন ইচ্ছে করছে কানিজের চুলের মুঠি ধরে আরো কয়েকটা থাপ্পড় দিতে। মেয়েটা একদম কোমড় কেঁচে মাঠে নেমেছে। কানিজের কথা শুনে ইফাজ উত্তর দিলেন,

– আচ্ছা ঠিক আছে। আমি চাচ্ছিলাম না তোমাকে আর অপমানিত করতে। কিন্তু একটা কথা জানো কি! কুকুরের লেজ যেমন হাজারবার টানলেও সোজা হয় না তেমন তোমাকে হাজার থাপ্পড় এবং অপমান করলও তুমি ঠিক হবে না। আজ দেখা হচ্ছে সন্ধায়।
বাবা আসেন আপনাকে ট্রেনে উঠিয়ে দিয়ে রেকর্ডিংয়ে যাবো।

আমার বাবা শ্বশুর বাবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ইফাজ এবং বাবা রওনা দিলেন গ্রামের উদ্দেশ্যে এদিকে বাসায় রয়ে গেলাম আমি, বাবা আর তুই কালনাগিনী।

– এই মেয়ে তুমি ইফাজের জীবন থেকে সরে যাচ্ছো না কেনো? তোমাকে বলেছিলাম না! তোমাকে সুখী হতে দিবো না! আজ সন্ধায় কনসার্টে আমি জয়ী হবো আর এই বাড়ির বউ হয়ে আসবো।

– দিনে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখো না ময়না! সেই স্বপ্ন কখনো সত্যি হবে না। গ্রামে তুমি যেই মেয়েকে দেখে এসেছিলে সে ছিলো বোকা সহজ-সরল মেয়ে কিন্তু তোমার সামনে বর্তমানে যে দাঁড়িয়ে আছে সে হচ্ছে বিশিষ্ট কণ্ঠশিল্পী ফারদিন ইফাজের একমাত্র সহধর্মিনী। সে এখন তার স্বামীর জন্য সব করতে পারে। আপনাদের মত দুই কাল নাগিনীনিদের উঠিয়ে আছড়ে ফেলতে পারবে।

আমার কথা শুনে যেন দুজন খুব ভয় পেয়ে গেলেন। এদিকে বাবা হুইলচেয়ারে বসে আমাদের কথাগুলো শুনছিলেন। আমার কথা শেষ হতেই বাবা আমাকে ডেকে বললেন,

– আহিবা মা, সন্ধ্যার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করো। আমিও দেখি ভাগ্য তোমাদের কোথায় নিয়ে যায়।

বাবাকে নিয়ে আর এক মুহূর্ত এখানে দাঁড়ালাম না। বাবাকে নিয়ে বাবার রুমে চলে আসলাম। আজ আমার জীবনের কি হবে তা নিজেও জানি না। ভাগ্য আমাকে ইফাজের সাথে সারাজীবন পথ চলতে দিবে নাকি আবারও অপেক্ষার প্রহর গুনতে হবে কে জানে।

সন্ধ্যায় নিজেকে তৈরি করে ইফাজের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। ইফাজ কিছুক্ষণ আগে ফোন করেছিল বাড়ির কাছে চলে এসেছে এই বলে। আমাকে নিয়ে কনসার্টে যাবে। আমাকে চোখের সামনে দেখলে নাকি ইফাজ সাহস পাবে। শহরের কনসার্ট কখনো দেখিনি সেখানকার মানুষ কেমন হবে আমি কি আদৌ সেখানে ইফাজের সাপোর্টার হিসেবে থাকতে পারবো জানা নেই।

যথাসময়ে ইফাজ বাসায় প্রবেশ করল। গাড়ি থেকে নামতেই ইফাজের অবস্থা দেখে আমি আৎকে উঠলাম। কপালে ব্যান্ডেজ করা দূর্বল শরীরে আমার কাছে এসে বলল,
– আল্লাহর অসীম কৃপায় এই যাত্রায় বেঁচে গিয়েছি আমি বিরাট বড় এক্সিডেন্ট থেকে।রেকর্ডিং থেকে ফিরে আসার সময় এক্সিডেন্ট হয়। আমার লোকেরা সঠিক সময়ে না আসলে কি যে হতো! তুমি এক মিনিট বসো আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।

ইফাজের এই অবস্থা দেখে ঘাবড়ে গেলাম। উপর ওয়ালা এ কোন পরীক্ষায় ফেললেন আমাদের!যার জন্য এত পাওয়ার থাকা সত্বেও আমরা অসহায়! একটা কথা কি! পরিবারের মধ্যে কেউ যদি শত্রু থাকে তাহলে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। যেমনটা আমরা সম্মুখীন হচ্ছি। আর এই সমস্যার সমাধান আমাদেরই করতে হবে একসাথে মিলে। ইফাজ কালো রংয়ের টি শার্ট গায়ে জড়িয়ে নিল।

আমার হাত ধরে নরম স্বরে বলল,

– কথা দাও হিবারাণী, কখনোই এই হাত ছাড়বে না। যত বাধা বিপত্তি আসুক না কেন।

ইফাজের কথায় মুচকি হেসে উত্তর দিলাম,

জীবনের শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত আপনার হাত ছাড়বো না কথা দিলাম
———
গাড়ি চলছে আপন গতিতে। ইফাজ আমাকে বুঝিয়ে দিচ্ছেন সেখানকার মানুষ কেমন হবে কি করতে হবে এবং কিভাবে চলতে হবে সবকিছু। ইফাজের কথাগুলো আমি মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করে নিলাম।

– হিবারাণী একটা কথা কি জানো! আমার কাছে এই পাওয়ার আছে আমার সৎ মাকে এবং কানিজকে উপরে উঠিয়ে ফেলতে কিন্তু আমি কাইফ ভাইয়ের কাছে ওয়াদাবদ্ধ। ভাইয়া সেদিন তোমাকে বাঁচিয়ে আমাকে ঋণী করে দিয়েছেন যার জন্য আমি চেয়েও কানিজের কোন ক্ষতি করতে পারব না। কিন্তু কথা দিচ্ছি, কানিজ যদি তোমার কোন ক্ষতি করতে চায় তাহলে মারব না কিন্তু পুলিশের হাতে অবশ্যই দিয়ে দিবো।

ইফাজের কথা কিছু বললাম না। কানিজ ভালো মেয়ে না। কানিজ যদি নিজের উদ্দেশ্য সফল না হয় তাহলে কানিজ যে কি করবে তা নিজেও জানে না।

কনসার্টের কাছাকাছি আসতেই বুঝতে পারলাম আমরা কাছাকাছি চলে এসেছি। নানান রঙের লাইটিং, মানুষের গমগম আওয়াজ সবার মুখে ফারদিন ইলরব ইফাজ নামে প্রতিধ্বনি হচ্ছে চারপাশ। গাড়ি থেকে প্রথমে ইফাজ নামে এরপর অপর পাশে বসে থাকা আমাকে হাতে ধরে নামান গাড়ি থেকে। এর মধ্যে বিভিন্ন সাংবাদিকের প্রশ্নের সম্মুখীন হই আমরা।

– স্যার পাশের মেয়েটা কি হয় আপনার?
– স্যার আপনার কি গার্লফ্রেন্ড হয়?
– নাকি আপনার বোন হয়?
-স্যার আমাদের কিছু বলুন?

সাংবাদিকের এমন বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে শেষে ইফাজ দাঁড়িয়ে বলেন,

– এসেছি একটা কনসার্টে। জানিনা ভাগ্যে আজ কি হয় কিন্তু কনসার্টের শেষে আমার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা রমণীর পরিচয় জানিয়ে দেব আপনাদের। ততক্ষণ আমার পাশেই থাকবেন আপনারা সবাই।

সাংবাদিকদের কথাগুলো বলেই ইফাজ আমাকে হাতে ধরে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।
স্টেজের কাছে আসতেই কোথায় থেকে যেন সাদা ধোঁয়া আবিষ্কার হলো। চারপাশে এত মানুষ আর তার মধ্যে সাদা ধোঁয়ার উৎস খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। কিছুক্ষণ পর দেখা গেল সাদা ধোঁয়ার কারণে দম বন্ধ হয়ে আসছে। ইফাজ এখনও শক্ত হাতে আমাকে ধরে রেখেছেন। এর মধ্যেই ইলেকট্রিসিটি চলে গেল।কিছুক্ষণ পর শুনতে পেলাম বিকট শব্দ হচ্ছে। পরপর তিন চারটা শব্দের কারণে কনসার্টে আসা লোকজনের মধ্যে চিল্লাপাল্লা শুরু হয়ে গিয়েছে। যে যেখানে পারছে সেখানে পালাচ্ছে। ইফাজ আমার কাঁধে শক্ত করে ধরে বললেন,

– যাই কিছু হয়ে যাবে হিবারাণী তুমি আমার হাত ছাড়বে না। আর জ্ঞান হারাবে না যতটুকু পারো নিঃশ্বাস বন্ধ রাখতে চেষ্টা করো। এটা হচ্ছে বিষাক্ত গ্যাস এই গ্যাস সে অজ্ঞান হয়ে যাবে তুমি। ধৈর্য ধরো আমি পাশে আছি। যে কোন এক জায়গায় আমরা চলে যাবো।

ইফাজের কথামত যত সম্ভব নিজেকে শক্ত রাখতে চেষ্টা করছি। চোখ বন্ধ করছি না, আর নিঃশ্বাস বন্ধ করে রাখছি। কিন্তু আর কতক্ষন এভাবে? ইফাজ আমাকে লোকালয় থেকে বাইরে নিয়ে খানিকটা দূরে নিয়ে আসে। বড়ো বড়ো নিশ্বাস ত্যাগ করছি।

পরপর কয়েকটা গাড়ি আমাদের সামনে এসে থামলো। গাড়িতে থাকা কয়েকজন লোক এসে আমাদেরকে উঠিয়ে নিলো। আমি দুর্বল ছিলাম আরো দুর্বল হয়ে পড়ি এবং শেষে অজ্ঞান হয়ে যাই।

———-

জ্ঞান ফিরে আসার পর পর নিজেকে অন্ধকার কক্ষে আবিষ্কার করলাম। আশ্চর্যের বিষয় হলো আমি ঠিক আছি। সারা শরীরে কোন আঘাত, আচরের চিন্হ নেই।
পাশের ঘর থেকে কিছু লোকদের কথা শোনা যাচ্ছে। কেউ বলছে,

– শা* মাস্টারদের ভালো মনে করছিলাম। কিন্তু শেষে কি না মাস্টার ই ছাত্রীরে ভালোবাসলো?
লোকটার কথা শেষ হতেই অপরজন বলে উঠলো,

– এই নিয়া দুইবার এই মাইয়ার লাইগা মোটা অঙ্কের টাকা পাচ্ছি। এইডাই বেশি আমগোর লাইগা।

– ঐ শিল্পীরে কি করবি। ব্যাটা অনেক চিল্লাচ্ছে। আমির হিবারাণী হিবারাণী বইলা। এরে কি করমু?

– চেয়ারম্যান সাহেবের মাইয়া আইয়া বুঝবো। এই পুলার লগে নাকি আফার কাম আছে।

লোকেদের কথোপকথন শুনে বুঝলাম। এই সবকিছুর পিছনে কানিজ সাথে আরো একজন দায়ী। আমার জানামতে গ্রামে আমার কোন শত্রু নেই। ছিলো একজন আর সে হচ্ছে কানিজ। কিন্তু আর কে হতে পারে কে আমার ক্ষতি করতে চায়! আমার ভাবনার মাঝে লোকজন ঘরে প্রবেশ করে।

– এই যে খুকী ঘুম থেকে জেগে গিয়েছো? গতবার তো তোমাকে টেস্ট করতে পারলাম না, বেঁচে গিয়েছিল। আর সেই মুরুব্বিকে যেভাবে মেরে ফেলেছিলো। শেষে যা ভয় পেয়েছিলাম! ভেবেছিলাম, তোমার দিকে তাকাবো না কিন্তু না দেখো তুমি আবার আমাদের হাতে চলে এসেছো। এবার তোমাকে কে বাঁচাবে?

– আপনারা এখানি কি করছেন? কি চান আপনারা?

আপাতত আমরা তো কিছুই চাইনা। আমাদের মালিক তোমাকে চায়। তাঁর কাজ শেষ হলে তারপর আমাদের কাজ।

লোকদের একেক থায় ঘৃণায় মুখ ফিরিয়ে নিলাম।এমন সময় সদর দরজা দিয়ে প্রবেশ করলেন একজন। আমির সামনে যাকে দেখলাম তাকে দেখে অবাক হয়ে গেলাম। মুখ থেকে আপনাআপনি উচ্চারণ হলো,
– ফাহাদ স্যার!
ফাহাদ স্যারকে দেখে দৌড়ে স্যারের কাছে গেলাম। স্যারের উদ্দেশ্যে বলতে শুরু করলাম,

– দেখুন না এরা কি করছে। আমাকে এখানে আটকে রেখেছে। আমাকে বাঁচান স্যার। আর ইফাজকে তারা কোথায় যেন আটকে রেখেছে। কিছু করুন স্যার?

আমার কথা শুনে ফাহাদ স্যার আমার পানে তাকালেন। তারপর আচমকা আমার কোমরের হাত রেখে বললেন,

– কে বাঁচাবে তোমাকে সুন্দরী! যেখানে আমিই যে মেইন ভিলেন। আমিই তো তোমাকে পাবার তৃষ্ণায় ব্যাকুল হয়ে আছি। গতবার ইফাজের মামার সাথে মিলে তোমাকে উঠিয়ে নিয়ে এসেছিলাম কিন্তু কি হলো! আমি আসার আগেই সব শেষ হয়ে গেল। তুমিও পালিয়ে গেলে আর তাঁর জন্য বুড়িকে প্রাণ দিতে হলো। আর আমার কাজ অসমাপ্ত রয়ে গেলো।

ফাহাদ স্যারের কথায় অবাক হয়ে গেলাম। নিজেকে ফাহাদ স্যারের হাত থেকে রক্ষা করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করলাম। ফাহাদ স্যার এত শক্ত করে আমার কোমড় ধরে রেখেছেন যে নড়াচড়া করতে পারছিনা। শেষে আর না পেরে স্যারের হাতে কামড় বসিয়ে দূরে ছিটকে গেলাম এবং রাগান্বিত স্বরে বলতে শুরু করলাম,

– আপনাকে আমি নিজের শিক্ষক ভাবতাম। আপনাকে স্থান দিয়েছিলাম আমার বাবার জায়গায়। কিন্তু শেষে আপনার নজর এতটা খারাপ ছিল। তারমানে বুড়ি মার মারা যাওয়ার পেছনে আপনার হাত রয়েছে?

– ঠিক বলেছো গো সুন্দরী! তোমার বুড়ি মাকে আমি মেরেছি। এবার তোমার তোমাকে বিয়ে করে সারা জীবনের জন্য দেশের বাইরে চলে যাব।

– তা তো যাবেনই ফাহাদ স্যার। কিন্তু আমার কি হবে! এই মেয়েটাকে আপনার কথায় আমি আঘাত করিনি কিন্তু এই মেয়ে আমাকে পাল্টা যতগুলো আঘাত করেছে তার একটা আঘাত করতে হয় তাই না!

ফাহাদ স্যার আরেকটা নিউজ এর মাঝখানে আমি দাড়িয়ে আস্তে আস্তে এগিয়ে আসছে আমার কাছে ও কাকা করার জন্য আমার কাছে এসে চুলের মুঠি ধরে জেনা ঘাট করবে তার আগেই পিছনে কেউ এসে গান আঘাত করে বসল পরপর তার আগমনে আমি চোখ বন্ধ করে রেখেছিলাম কিন্তু আমার গায়ে আঘাত না লাগার কারণে চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে আমার সামনে দাঁড়িয়ে কানে ধরে পরপর কয়েকটা থাপ্পড় লাগলো এর পর ফাহাদ স্যার দিকে রাগান্বিত চোখে তাকিয়ে বলল

আপনাকে খুব ভাল মনে করেছিলাম দায়িত্ব দিয়েছিলাম আমার বউয়ের যেন ভালো থাকে কিন্তু আপনি তো দেখি মেন কালপ্রিট আপনি আমার বড় তাই আপনার উপর হাঁটু থাকব না কিন্তু আপনার উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করব পুলিশ অফিসার
আচমকা পুলিশ এবং রিভার্স এর আগমনের সবাই স্তব্ধ বনে গেল আমাকে যারা ধরে এনেছে সে ছেলেপেলেরা পাতায় গিয়েও সক্ষম হলো না সবাই পুলিশের হাতে বন্দী এবং পার্কে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে

————-

– কিগো নাজ্জামাই! আমাকে না বলেছিলে বিয়ের পনেরো দিন আগেই নিয়ে আসবে? কিন্তু আমার নাতনি কে পেয়ে সব ভুলে গেলে পনেরো দিনের জায়গায় আমাকে দুদিন আগে নিয়ে আসলি। এটা কি ঠিক? নাকি শহরে তোমার বাড়িঘর আমাকে দেখাবে না এজন্য আমাকে আনোনি কোনটা?

– ইস কি যে বলত আমার ওল্ড ডার্লিং!তোমাকে ছাড়া কি আর বিয়ে হবে? তুমি গাড়ি দিয়ে আসতে পারবে না এজন্যই তো তোমাকে হেলিকপ্টার দিয়ে নিয়ে আসলাম বুঝনা!

– হয়েছে আর বাহানা করতে হবে না।

শত বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে আমি ইর ইফাজ আজ এক হলাম। সে ঘটনার পর এক সপ্তাহের মধ্যেই আমাকে সকল প্রেস মিডিয়ার সামনে বিয়ের জন্য প্রপোজ করেন।
আমরা এখন আমাদের গ্রামে আছি। ইফাজের বাবা আগের থেকে অনেকটাই সুস্থ। ইফাজের মা এখন জেলে। সেদিন কাইফ ভাই আবারও আমাদের বাঁচিয়েছেন। ইফাজ নাকি অতি কৌশলে লোকেদের আড়ালে কাইফ ভাইকে জানিয়ে দেন যার ফলে কাইফ ভাইয়া আমিদের উদ্ধার করেন। কানিজের এমন নিচু মন দেখে কাইফ ভাই সেদিন আনেক কষ্ট পেয়েছিলো। ঘৃণায় বোনের উদ্দেশ্যে বলেছিল,
– তুই ছোট বেলায় ভালো ছিলি। আমার বোন ছিলি কিন্তু কেন বড়ো হলি আর বোনের ছায়গা থেকে সরে গেলি। ভালো হয়ে যা না বোন! কথা দিচ্ছি রূপকথার রাজকুমার এনে দিবো তোর কাছে।

আমার বিয়েতে গারামৈর সবাই উপস্থিত ছিলো। হেনা আর রাজের ও বিয়ে হয়ে গিয়েছে আরো ছয়মাস আগে। আমার আর ইফাজের বিয়ের কথাশুনে হেনা অনেক রাগ করেছিল। কেন তাঁকে আগে জানাইনি এজন্য শাস্তি স্বরূপ দুইদিন কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছিল।

শীতের শেষ সময়। লাল টকটকে বেনারসি শাড়ি পরে আমি আর ইফু দাঁড়িয়ে আছি বাহিরে। এখন মধ্যরাত, ইফাজের আবদার আজ চন্দ্রবিলাশ করবো দুজন। আমার বাম হাতে পাঁচ টা কদমফুল আর ডান হাত ইফাজের হাতের মুঠোয়।

– এই প্রিয়লতা, কথা বলছো না কেন?
– আজ আপনি বলবেন আমি শুনবো।
শিফা সবার কথায় হাসে আমাকে পিছন দিয়ে জড়িয়ে ধরে বলে

আজ আমরা দুজনই মন ভরে কথা বলবো আর শুনবো। শত বাধা-বিপত্তি পার হয়ে আমরা এক হয়েছি যে! সময় নষ্ট করব না শুধু কথা শুনবো আর বলবো।
ইফাজের কথায় হাসলাম। ছেলেটা সত্যি পাগল, আমার পাগল। শত অপেক্ষার প্রহর গুনে আজ আমরা এক হয়েছি। আমাদের অপেক্ষার প্রহর শেষ হয়েছে। ইফাজের কাঁধে মাথা রেখে দূরের আকাশের গোল চাঁদখানা দেখছি। এটাই যে আমার সুখ। আমার স্বপ্ন, আমার আশা, আমার ভালোবাসা। পেয়েছি অবশেষে।

“এই বুঝি শেষ হলো অপেক্ষার প্রহর,
এখন হবে শুধু মনের মিল আর কিছু আকাঙ্ক্ষায়!
ভালোবেসে যাবো দুজন দুজনায় চিরকাল।”

সমাপ্ত