অবশেষে তুমি পর্ব-১১+১২

0
529

#অবশেষে তুমি
#লেখিকা–Nazia Shifa
#পর্ব –১১
———————–
-‘নূর এখনো কি কাজ আছে তোমার?

-‘হ্যা এখনো তো….

পুরো কথা শেষ করার আগেই নূরকে পাজা কোলে করে রুমের দিকে পা বাড়ালো কাব্য।
কাব্যের উক্ত কান্ডে চমকে গেলো নূর তবে প্রকাশ করলোনা।বাইরে থেকে একদম স্বাভাবিক থাকলো।নূরকে এমন স্বাভাবিক থাকতে দেখে অবাক হলো কাব্য।রুমে নিয়ে একটু জোরেই নূরকে কোল থেকে বেডে ফেললো যাতে সে রিয়েক্ট করে।কিন্তু এবারও ফলাফল শূন্য।সে আাগের মতোই স্বাভাবিক।শব্দ করে রুমের দরজা লক করলো কাব্য তারপর বেডের সামনে এসে দাড়িয়ে কি যেন ভাবলো।হুট করেই নূরের দুপাশে দুই হাত রেখে তাকে আবদ্ধ করলো নিজের মধ্যে। তারপর বলতে লাগলো–

-‘-‘আ’ম সরি বউ।সত্যি সরি,,বিশ্বাস করো তখন রাগে মাথা ঠিক ছিলোনা আমার।কি থেকে কি করে ফেলেছি বুঝতেই পারিনি।যে হাত দিয়ে তোমাকে মেরেছি সেই হাত দিয়েই তোমাকে অনেক বেশি আদর করবো প্লিজ।এবারের মতো মাফ করে দাও।আই প্রমিজ আর কোনোদিনও এমন হবে না।প্লিজ।(কানে ধরে ঠোঁট উল্টে বললেন)

কাব্যের কথা শুনে নূরের রাগ নিমিষেই হাওয়া হয়ে গেলো।কিন্তু সে চুপ থাকলো।আরেকটু জ্বালাতে চায় সে কাব্যকে আর তাছাড়া গ্যারান্টি কি যে ভবিষ্যতে এমন করবে না।হুহ…এই ছেলের যেই পরিমাণে রাগ।নূরকে চুপ থাকতে দেখে কাব্য আবার বললো-

-‘রাগ হয়েছে অনেক?কথা বলবেনা?

নূর নিশ্চুপ।

-‘ঠিক আছে তাহলে এক কাজ করো তুমিও আমাকে চ’ড় মারো তাহলে…

এটুকু বলতেই নিজের ডান হাত দিয়ে মুখ আটকালো কাব্যের।তারপর বিচলিত হয়ে বললো-

-‘কি সব বলছেন আপনি?আমাকে পাপের ভাগিদার বানাতে চাইছেন?নিজের স্বামীর ওপর হাত তুলবো আমি।

বিয়ের এতো দিন পর নূর কাব্যকে স্বামী হিসেবে মুখে স্বীকার করেছে।ভাবতেই কাব্যের মনে প্রশান্তির ঢেউ বয়ে গেলো।কিন্তু নূরের সেদিকে খেয়াল হলো না যে সে কি বলেছে।খেয়াল করলে হয়তো লজ্জায় লাল নীল হয়ে যেতো।মৃদু হেসে নূরের হাতে চুমু খেয়ে মুখ থেকে হাত সরালো কাব্য।হাতখানা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বললো-

-‘যাক বউয়ের রাগ ভাঙলো তবে।

এতক্ষণে নূরের খেয়াল হলো সে কি করেছে।মনে মনে নিজেকেই বকতে লাগলো-তুই আসলেই গাধা থুক্কু গাধি।একটু রাগ করার অভিনয়ও করতে পারলি না।ধুর ছাই তোকে দিয়ে কিচ্ছু হবেনা।সারাজীবন এমনই করবি।

-‘এ-ই যে ভাবনা কুমারী কই হারিয়েছেন?

মুখ বাকিয়ে বললো নূর-‘কোথাও না আর কে বললো রাগ ভেঙেছে।রাগ ভাঙেনি এখনো।

আবার হাসলো কাব্য।তার বউটা দেখা যায় বড্ড অভিমানি।মুখে হাসি বজায় রেখেই জিজ্ঞেস করলো-

-‘তা রাগ ভাঙানোর জন্য কি করতে হবে শুনি।

-‘যা বলবো তাই করবেন?

-‘তুমি যথেষ্ট মেচুয়ার নূর।নিশ্চয়ই এমন কিছু চাইবে যা দেওয়ার মতো।বলো কি চাও?

-‘বেশি কিছুনা শুধু একটু রাতের শহরটা ঘুরে দেখতে চাই।খোলা আকাশের নিচে হাঁটতে চাই কিছুক্ষণ।বিয়ের আগে ভাইয়া নিয়ে যেত একদিন পরপর কিন্তু এখনতো..

-‘ঠিক আছে নিয়ে যাবো।খুশিতে চকচক করে উঠলো নূরের মুখখানা।কাব্যের গাল টেনে দিয়ে হাসি হাসি কণ্ঠে বললো-

-‘থ্যাঙ্কিউ মি.চৌধুরী।আপনি এত্তগুলা ভালো।

নূরের কান্ডে থ হয়ে বসে রইলো কাব্য।নূর নিজে থেকে তাকে টাচ করেছে ভাবতেই অবাক হলো।ততক্ষণে নূর রুম থেকে চলে গেছে।কাব্য বিড়বিড় করে বললো-

-‘পাগলী একটা।
.
.
.
রাত দশটার বেশি।রাতের খাবার খেয়ে নূর আর তন্নী একসাথে পড়তে বসেছে তন্নীর রুমে।আর এক সপ্তাহ পরেই তাদের মিড টার্ম পরীক্ষা।একটু পর তন্নীর রুমে আসলো কাব্য।এসেই নূরকে বললো-

-‘নূর রুমে আসো।

-‘এইতো একটু পর আসছি।

-‘এখনই আসো।

-‘পড়ছি আমি।ডিস্টার্ব করছেন কেন?

-‘কথা বাড়িয়ো না।Come fast.বলেই কাব্য চলে আসলো।

-‘নূর তাড়াতাড়ি যা বইন কথা বাড়াস না পরে তোর সাথে আমিও মার খাবো।

-‘ফালতু কথা বলিস না।কাব্য ভইয়া কবে মেরেছে তোকে।

-‘ওই আর কি😅।

-‘হুহ সর,,দুইটা একই😒।

———————-
রুমের মধ্যে কান ধরে দাঁড়িয়ে আছে নূর।তার সামনে দুই হাত বুকে ভাজ করে দাড়িয়ে আছে কাব্য।

-‘আর কতক্ষণ দাড়িয়ে থাকবো এভাবে?পা ব্যথা হয়ে গেছে।

-‘দেরি করেছো তাই তার শাস্তিই দিচ্ছি।

-‘রাগ করেছিলাম আমি আবার আমাকেই শাস্তি দিচ্ছেন।হাও ফানি।আমারই ভুল হয়েছে কথা না বললেই ভালো হতো।

নূরের কথা শুনে বাঁকা হেসে নূরের কোমর জরিয়ে ধরলো কাব্য।তারপর বললো-‘বউয়ের রাগ ভাঙানোর জন্যই তো ডেকে ছিলাম।

-‘মানে?

-‘কিছুনা।রেডি হয়ে আসো।

-‘আচ্ছা।

-‘শোনো

-‘জ্বী,,

-‘কালো রঙের শাড়ী পড়বে,চোখে মোটা করে কাজল দিবে আর চুল গুলো খোলাই রাখবে।

-‘এই রাতের বেলা কালো শাড়ি পড়বো মাথা খারাপ

-‘যা বলেছি তাই করো নাহলে নিয়ে যাবোনা।

-‘ঠিক আছে পড়ছি😒।

কাব্যের কথা অনুযায়ী কালো শাড়ি পরে চোখে মোটা করে কাজল দিলো নূর।চুল গুলো ছেড়ে কানের পাশে গুজে দিলো আর্টিফিশিয়াল লাল রঙের গোলাপ।এই রাতের বেলা এমন সাজ মোটেও মানানসই না তবুও করতে হলো কাব্যের জন্য।হাতে একমুঠ কালো চুড়িও পরলো সে।আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে নূর।নাহ সুন্দর লাগছে তাকে।হঠাৎ চোখ পড়লো আয়নায় কাব্যের প্রতিবিম্বে।সে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে নূরের দিকে।তার এভাবে তাকিয়ে থাকাতে লজ্জা পেলো নূর।মাথা নত করে দাড়িয়ে রইলো আয়নার সামনে।কিছুক্ষণ পর কাব্য বললো-‘মাশা আল্লাহ আমার বউ এতো সুন্দর।কালো রঙয়ে যে তাকে এতো সুন্দর লাগবে সে ধারণা ছিলোনা আমার।

কাব্যের কথা শুনে নূরের লজ্জার পরিমান আরও বেড়ে গেলো।তা দেখে কাব্য বললো-‘হয়েছে আর লজ্জা পেতে হবেনা। এখন চলো।

কিছু বললো না নূর।শুধু নত মাথা উপর নিচ করলো।তারপর কাব্যের পেছন পেছন বেড়িয়ে গেলো।
.
.
শুনশান নীরবতায় ছেয়ে আছে চারপাশ।মাঝেসাঝে কয়েকটা গাড়ি দেখা মিলছে।অন্যদিনগুলোর চেয়ে আজকের শহরটা একটু বেশিই শান্ত লাগছে নূরের কাছে।তবে ভালোই লাগছে তার।ব্যস্ত শহরের যান্ত্রিক মানুষের আনাগোনা কম।যানবাহনের কোলাহলও নেই।গাড়িতে বসে সেই শীতল পরিবেশটাকে উপভোগ করছে নূর।কাব্য ড্রাইভ করার পাশাপাশি আঁড়চোখে দেখে নিচ্ছে তার পাশে বসা সুন্দরী রমনীকে।তার স্ত্রীকে।যে একান্তই তার।যার মুখশ্রীতে আছে এক অদ্ভুত রকমের মায়া যার দিকে তাকিয়ে থাকতে বিরক্তি আসেনা।তার মায়াময়ী সে,,কাব্যের মায়াময়ী।ভাবতেই বক্ষ স্থলে প্রশান্তির ঢেউ বয়ে গেলো।এদিকে নূর প্রকৃতি বিলাসে এতটাই মনোযোগী যে কেউ একজন তাকে নিয়ে এতকিছু ভাবছে তা সে টেরই পেলোনা।
.
.
গাড়ি এসে থামলো একটা টঙের দোকানের সামনে।এখানে গাড়ি থামতে দেখে কপালে ভাজ পড়লো নূরের।তখনই কাব্য বললো-নামো।তাকিয়ে দেখলো তার সিটের দরজা খুলে দাড়িয়ে আছে কাব্য।ইশারায় তাকে নামতে বললো।নূরও নেমে দাড়ালো।টঙের দোকানটিতে দুজন মানুষ আছে মাত্র।দোকানের মালিক আর একজন কাস্টমার।কাব্য চা আনতে আনতে সে লোকটাও চলে গেলো।গাড়ির মধ্যে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে নূর।কাব্য দুকাপ চা নিয়ে আসলো।এক কাপ নূরকে দিয়ে গাড়ির ওপর বসে চায়ে চুমুক দিলো।কাব্যকে এভাবে গাড়ির ওপর পা ঝুলিয়ে বসতে দেখে নূরেরও ইচ্ছে হলো এভাবে বসার কিন্তু পড়ে যাওয়ার ভয়ে উঠার চেষ্টা করলোনা।তার অবস্থা বুঝতে পেরেছে কাব্য।তাই সে নেমে হাতের কাপটা নূরের হাতে দিয়ে দুই হাত নূরের কোমরে রাখলো তারপর উচু করে গাড়ির ওপর বসিয়ে দিলো তাকে।শাড়ীর ফাকেও কাব্যের হাত স্পর্শ করলো নূরের পেট।লজ্জায় কুঁকড়ে গেলো নূর।তাকে বসিয়ে দিয়ে নিজেও পুনরায় বসে পড়লো।তারপর কাপটা নিয়ে আবার চুমুক বসালো তাতে।কিন্তু নূর কাপ হাতে বসে আছে চুপচাপ।তা দেখে কাব্য বললো-‘চা কি জুস বানিয়ে খেতে চাও?ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে নূর খাও তাড়াতাড়ি।

কাব্যের কথা শ্রবণ করা মাত্রই চায়ে চুমুক দিলো নূর।আকাশ দেখায় মনোযোগী হলো সে।চা শেষ হতেই কাব্য বললো-‘এবার চলো একটি হাটা যাক।

মাথা নেড়ে সম্মতি দিল নূর।নূরের সম্মতি পাওয়া মাত্রই নিজের হাতটা বাড়িয়ে দিলো কাব্য।কাঁপা কাঁপা হাতটা তার হাতের ওপর রাখলো নূর।শক্ত করে ধরে হাটা ধরলো কাব্য।একটু এগিয়েই ব্রিজটার মধ্যে থামলো।ব্রিজের রেলিং ধরে দাড়ালো কাব্য।এক হাত দিয়ে কোমর জরিয়ে ধরে নূরের হাতের পিঠে চুমু খেয়ে বললো-‘আমার তথাকথিত প্রেমিকাকে মারাত্মক সুন্দর লাগছে।সে যদি আবার আমার সামনে এভাবে আসে তাহলে তার খবর আছে। তখন নিজেকে কন্ট্রোল করাটা কষ্টসাধ্য হয়ে যাবে আমার জন্য তখন আমি কিছু করে ফেললে আমাকে যেন দোষ না দেয়। এখনই আমার অবস্থা নাজেহাল(শেষের কথাটুকু বললেন বিড়বিড় করে)।

এক হাত দিয়ে শাড়ী খামচে ধরে মাথা নত করে আছে নূর।কাব্য আবার বললো-ম্যাডামের রাগ কি তবে কমেছে?

এবার মুখ খুললো নূর।মুখে হাসি টেনে বললো-

‘হ্যা।আপনাকে এত্তগুলা থ্যাঙ্কিউ আমার কথা রাখার জন্য।আর আমিও সরি।আমারও ভুল ছিলো(মুখ ছোট করে বললো)

নূরকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে গালে হাত রেখে বললো-আমারই দোষ ছিলো বেশি আ’ম সরি।যাক বাদ দাও এখন চলো।

-‘হুম চলুন।

#চলবে….ইনশাআল্লাহ

#অবশেষে তুমি
#লেখিকা–Nazia Shifa
#পর্ব-১২
—————————-
দেখতে দেখতে কেটে গেছে প্রায় পনেরো দিনের মতো।নূর আর তন্নীর পরীক্ষাও শেষের দিকে।মাত্র একটা বাকি আছে।কালকে ছুটি তারপর দিন শেষ পরীক্ষা।এই কয়দিনে নূর আর কাব্যের সম্পর্কের উন্নতি হয়েছে অনেকখানি।বলতে গেলে দুজন দুজনকে চোখে হারায় একেবারে।নিজের গাম্ভীর্য স্বভাবটা বজায় রেখেই কাব্য নিজের সবটুকু দিয়ে আগলে রেখেছে নূরকে।আর নূরও আস্তে আস্তে কাব্য নামক মায়াজালে জড়িয়ে গেছে।তবে গত দুই দিন ধরেই কাব্যকে এড়িয়ে চলছে নূর।প্রয়োজন ছাড়া কোনো কথা বলেনি তার সাথে।ঘুমানোর সময়ও যথেষ্ট দূরত্ব বজায় রেখেছে।কাব্য জানার চেষ্টা করেছিলো কিন্তু বলেনি।কাব্যও আর জানতে চায়নি।
.
.
ভার্সিটি থেকে ফিরে ফ্রেশ হয়ে সবেমাত্র ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়েছে নূর।কাব্যই নিয়ে এসেছে তাদের।আজকেও কাব্যের সাথে কথা বলেনি নূর তবে অদ্ভুত ব্যাপার আজকে সকাল থেকে কাব্যও নূরের সাথে কোনো কথা বলেনি।যার দরুন নূরের আরও রাগ আর অভিমান জমেছে তার ওপর।তোয়ালে দিয়ে চুল মুছতে মুছতে ব্যালকনিতে আসলো নূর।তোয়ালেটা মেলে দিয়ে গ্রিলে দুই হাত রেখে চোখ বন্ধ করে দাড়িয়ে রইলো। ক্ষণিকবাদে হাতে কারো স্পর্শ পেয়ে চোখ খুললো নূর।পাশে কাব্যের উপস্থিতি টের পেয়ে তার অগোচরে চোখ মুছে নিলো।তারপর তার দিকে ঘুরে প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকালো।তার তাকানো দেখে কাব্য বললো-‘মামনি ডাকছে তোমাকে।

নূর ভেবেছিলো কাব্য হয়তো তার সাথে কথা বলতে এসেছে কিন্তু নাহ।সে কিছু না বলে সেখান থেকে চলে আসলো।আচ্ছা রাগ তো সে করেছে কাব্য কি পারেনা তার রাগ করার কারণ টা খুজে তার রাগ ভাঙাতে।উলটো সেই এখন এড়িয়ে চলছে।ভাবতে ভাবতে কিচেনে আসলো নূর।মিসেস রেহেনা নূরকে দেখেই বললেন-

-‘এসেছিস আয়,এদিকে আয়।কথা আছে।

নূর যেয়ে একেবারে মিসেস রেহেনার গা ঘেঁষে দাড়ালো তার কাঁধে মাথা রেখে একহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরলো তাকে।মিসেস রেহেনাও তাকে জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করলেন-

-‘কি হয়েছে আমার মা টার দুই দিন ধরে দেখছি কেমন চুপচাপ।কারো সাথে কথা বলছেনা।সব ঠিক আছে তো নূর?কাব্যর সাথে কি কিছু হয়েছে?

-‘না মামনি কিছুই হয়নি।কই চুপচাপ ঠিকই তো আছি।

নূরকে ছেড়ে দিয়ে মিসেস রেহেনা নূরের গালে হাত রেখে বললেন-

-‘আমার কাছে মিথ্যা বলছিস।আমি তোর মা তোর মনের অবস্থা আমি বুঝবোনা তো কে বুঝবে।দেখ নূর এতটুকু তো আমি নিশ্চিত যে কাব্যর সাথেই কিছু একটা হয়েছে কি হয়েছে সেটা জানতে চাইনা।কিন্তু এভাবে ভিতরে ভিতরে অভিমান পুষে না রেখে ওর সাথে সামনাসামনি কথা বল।কোনো প্রশ্ন থাকলে কর আর সবকিছু ঠিক করে নেয়।এভাবে থাকলে দূরত্ব বাড়া ছাড়া আর কিছুই হবেনা।মনে আছে তোকে কি বলেছিলাম সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে হলে ধৈর্য ধরতে হয় একে অপরের প্রতি বিশ্বাস রাখতে হয়।বুঝেছিস?

-‘হ্য,,হ্যা মামনি।

-‘এখন যা কাব্যকে ডেকে নিয়ে আয় তারপর একসাথে খাবো।

-‘হুম।
কিচেন থেকে রুমে আসলো নূর।বেডের ওপর আধশোয়া হয়ে আছে কাব্য।একহাত তার মাথার নিচে আর এক হাত চোখের ওপর।নূর যেয়ে তার সামনে দাঁড়াতেই চোখ খুললো কাব্য কিন্তু কিছু বললো না।আবার আগের ভঙ্গিতেই শুয়ে রইলো।তা দেখে নূরই বললো-‘মামনি খেতে ডেকেছে চলুন।

কাব্যর ছোট্ট জবাব-‘যাও।

-‘দেরি হয়ে যাচ্ছে খাবার ঠান্ডা হয়ে যাবে চলুন।

-‘বললাম না যাও আসছি(এবার একটু জোরেই বললো)।

আর কিছু বললো না নূর।কোনোরকম কান্না আটকে বেড়িয়ে আসলো রুম থেকে।ডাইনিং এ আসতেই মিসেস রেহেনা জিজ্ঞেস করলেন-

-‘কিরে কাব্য কোথায়?ডাকিসনি?

-‘হ্যা।আসছেন।

-‘আচ্ছা আসুক তুই বস।

-‘হুম।তন্নী কোথায় মামনি?

-‘ওর আর কাজ কি একদিন বন্ধ পেয়েছে এখন পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে।পরে উঠে খেয়ে নিবে বলছে।

-‘ওহ।
তন্নী স্বভাবতই এমন সারাদিন শুধু ঘুম আর ফোন ছাড়া আর কিছুই বোঝেনা।

তাদের কথার মাঝখানে কাব্য আসলো।চেয়ার টেনে বসতে বসতে বললো-

-‘তাড়াতাড়ি দাও আম্মু সময় নেই।

-‘সে কি এখন আবার কোথায় যাবি?

-‘কাজ আছে যেতে হবে।

-‘হ্যা সারাদিন শুধু কাজ আর কাজ।দুনিয়ার সব কাজ তো তুই একাই করিস।

-‘হ্যা।এখন খাবার দাও।

প্লেট সামনে নিয়ে বসে আছে নূর।তা দেখে মিসেস রেহেনা বললেন-

-‘কিরে খাচ্ছিস না কেন?কি হয়েছে?

-‘ক,,কই কিছু না তো।

-‘তাহলে খাচ্ছিস না কেন?

-‘আসলে খেতে ইচ্ছে করছে না মামনি।

-‘খেতে করছে না কি রে খেতে হবে তো।

-‘আম্মু কেউ যদি ভেবে থাকে না খেয়ে খেয়ে অসুস্থ হয়ে তারপর আমার বদনাম করবে তাহলে আগেই বলে দিচ্ছি সেটা হবেনা।আমার বাড়িতে থাকতে হলে টাইমলি খেতে,ঘুমাতে হবে।

-‘উফফ বেশি কথা বলিস কেন কাব্য।খা চুপচাপ।নূর এদিকে আয় আমি খায়িয়ে দেই।

-‘মামনি আমি একটু আসছি।আর কিছু বলার আগেই সেখান থেকে চলে আসলো নূর।রুমে এসে সোজা ওয়াশরুমে যেয়ে গড়গড় করে বমি করে দিলো সে।গা গুলাচ্ছে তার,সবকিছু কেমন জানি ঘুরছে তার কাছে।চোখের সামনে সামনে সবকিছু ঝাপসা হয়ে আসলো।
.
.
.
চোখ খুলে নিজের কাছে এক জোড়া মুখ দেখতে পেলো নূর।মিসেস রেহেনা আর তন্নী মাথার পাশে বসে আছে।তাকে জাগতে দেখে মিসেস রেহেনা চিন্তিত গলায় বললেন-

-‘এখন ঠিক আছিস তো নূর?খারাপ লাগছে কোথাও?
কেনো এমন করিস বল তো।কতো করে বলি ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া কর কিন্তু কথাই শুনিসনা এখন দেখ আজকে কি হলো।জানিস তখন তোকে ওয়াশরুমের ভেতর পড়ে থাকতে দেখে কতটা ভয় পেয়েছিলাম।

দূর্বল স্বরে জবাব দিলো নূর-‘ সরি মামনি,,তুমি টেনশন করো না আমি ঠিক আছি।

তন্নী রাগ দেখিয়ে বললো-

-‘ছাই ঠিক আছিস।তুই জানিস ডাক্তার বলেছে তুই গত দুই দিনে না তো ঠিকমতো খেয়েছিস আর না ঘুমিয়েছিস।কিছু একটা নিয়ে অনেক বেশি চিন্তা করছিস।স্ট্রেস এর কারণে সেন্সলেস হয়ে গেছিস।আর শরীর ও অনেক উইক আর বলছিস ঠিক আছিস।

মাথা নিচু করে নিলো নূর।সে নিজেও বুঝতে পারেনি এমন কিছু যে হবে।কাব্য না জানি কত বকবে তাকে।আচ্ছা চোখ খোলার পর তো কাব্যকে দেখলোনা তাকে।কোথায় সে?সে কি রাগ করেছে যে কাছে আসছেনা নাকি তার অসুস্থতা কাব্যের জন্য কিছুইনা।কথাগুলো ভাবতেই নূরের মনের ভেতর খচখচ করতে লাগলো।কাব্য কোথায় সেটা জিজ্ঞেস করতেও ইতস্ততবোধ করছে।মিসেস রেহেনা হয়তোো নূরের অবস্থা বুঝতে পেরেছেন তাই বললেন-

-‘কাব্যকে রুমে পাঠিয়ে দিচ্ছি আমি।তোর কপালে কি আছে কে জানে।কাব্য কিন্তু বেশ রেগে আছে তোর ওপর।

-‘হুম।

মিসেস রেহেনা যেতেই রুমে প্রবেশ করলো কাব্য।হাতে একটা প্যাকেট হয়তো মেডিসিন।নূরের ধারনাকে সত্যি প্রমাণ করে প্যাকেট থেকে একটা ঔষধ বের করে নূরের হাতে দিলো।পানির গ্লাস সামনে ধরলে চুপচাপ সেটাও নিয়ে নিলো নূর।তারপর ঔষধটা খেয়ে গ্লাসটা আবার ফিরিয়ে দিলো কাব্যকে।বেড সাইড টেবিলের ওপর গ্লাসটা রেখে নূরের পাশে বসলো কাব্য।নূরের হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বললো করুন স্বরে বললো-

-‘আমায় কি বলা যেতো না খুলে যে কি হয়েছে?নাকি এতটাই অযোগ্য আমি?বলেছিলাম কিছু হলে বা কোনো কিছু নিয়ে সন্দেহ থাকলে সোজা আমাকে জিজ্ঞেস করবে ক্লিয়ার করে নিব।কিন্তু নাহ তা না করে নিজের শরীরের ক্ষতি করেছো।লাভ হয়েছে কোনো?হয়নি।

মাথা নত করেই রাখলো নূর।আসলেই তো প্রথমদিন জিজ্ঞেস করে নিলেই তো আজকে এমন হতো না।লাভ তো কিছুই হলোনা।শুধু শুধু দূরত্ব বাড়লো।

-‘দূরত্ব চাইলে কমিয়ে ফেলতে পারো নূর।
কাব্যর কথা শুনে মাথা তুলে তাকালো না নূর।মন খারাপের মাঝেও হাসলো নূর কারণ মানুষটা কিভাবে যেনো বুঝে যায় যে সে কি ভাবছে। বলতে হয়না।এই অল্প কয়টা দিনেই যে কেউ কাউকে এত বেশি বুঝতে পারে তা কাব্যকে না দেখলে হয়তো জানত না নূর।আর এই মানুষটার সাথেই সে রাগ করেছিলো।নাহ আজকে সব রাতেই সব ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটাতে হবে।
———————–
ওয়াশরুমের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে নূর।কাব্যর সাথে কিভাবে কথা বলবে ভেবে পাচ্ছে না সে।নূরের ভাবনার মাঝেই কাব্যর ডাক আসলো-

-‘নূর রাতটা কি ওয়াশরুমে কাটানোরই প্ল্যান করেছো?বের হও তাড়াতাড়ি।

চোখেমুখে পানির ঝাপটা দিয়ে নিজেকে প্রস্তুত করে ওয়াশরুম থেকে বের হলো নূর।

-‘এতক্ষণ লাগে বের হতে?কয়টা বাজে সে খেয়াল আছে?মেডিসিন নিবে কখন।বসো নিয়ে আসছি আমি।

-‘হুম।

নূরকে মেডিসিন দিয়ে বেডে শুয়িয়ে দিয়ে কাথা টেনে দিতে নিলে হাত দিয়ে তাকে থামিয়ে দিলো নূর আর বললো-

-‘আমার কথা আছে আপনার সাথে।

-‘ঘুমাও এখন যা বলার সকালে বলো।

-‘এখনই বলবো,,প্লিজ না করবেন না।

নূরের মুখের দিকে তাকিয়ে দুই সেকেন্ডের নিরবতা পালন করলো কাব্য তারপর হতাশ স্বরে বললো-

-‘তুৃমি তো আর আমার কথা শুনবে না।বলো কি বলবে।

মুখে হাসি ফুটলো নূরের।নূর মুখ খুলে কিছু বলতে নিলেই কাব্যর ফোন বেজে উঠলো।ফোনের স্ক্রিনে জ্বলজ্বল করছে ফোনদাতার নাম যা দেখে নূরের রাগ একবারে চরম পর্যায়।সে কি করবে নিজেও জানে না।

#চলবে