#অবশেষে তুমি
#লেখিকা–Nazia Shifa
#পর্ব-১৩
——————
সারা রুম জুড়ে পিনপন নিরবতা।শুধু দুজন মানব মানবির নিঃশ্বাসের শব্দ হচ্ছে।কাব্যর ফোনটা মেঝেতে পড়ে আছে।কাব্য একবার ফোনের দিকে তো আর একবার নূরের দিকে তাকাচ্ছে।তার ফোন কয় টুকরা হয়েছে সেটা গুনে দেখাও মুশকিল।নূরই ঘটিয়েছে এই অবিশ্বাস্য কান্ডটা।যে মানুষটার ফোন কেউ টাচ করতেও ভয় পায় তার ফোনের এই হাল করেছে।তখন রিয়াই ফোন দিয়েছিল কাব্যকে।যা দেখে রাগে ফুঁসে উঠেছিলো নূর।সোজা কাব্যর হাত থেকে ফোনটা নিয়ে মেঝেতে ছুড়ে মারে।নীরবতা ভেঙে কাব্য কিছু বলবে তার আগেই শক্ত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো নূর-
-‘ও আপনাকে এতো রাতে কেন কল দিয়েছিলো?কিভাবে চেনেন ওকে?
-‘নূর,,দেখো মাথা গরম করো না এখন ঠান্ডা হও তারপর ঠান্ডা মাথায় বুঝিয়ে বলি।
-‘আমার মাথা যথেষ্ট ঠান্ডা আছে।যা জিজ্ঞেস করেছি তার উত্তর দিন।
-‘নূর দেখো,,
-‘বুঝেছি আপনার কাছ থেকে উত্তর পাবো না।কি বলবেন আপনি বলার মতো কিছু নেই তো।
-‘নূর একটা কল নিয়ে কেনো এত বড় ইশু করছো।বললামতো বুঝিয়ে বলবো।
-‘শুধু একটা কল নিয়ে ইশু করছি না আমি কাব্য ভাই।সব জানি আমি।দেখেছি আমি ওই ছবি গুলা আর রিয়া সব বলেছে আমাকে।আমারই দোষ আমিই এসেছি আপনাদের মাঝে।তবে সমস্যা নেই আপনি থাকেন আপনার রিয়া প্রিয়ার সাথে আমি থাকবোনা আপনার সাথে।এখনই চলে যাবো।বাধ্য হয়ে রাখতে হবে না আমাকে আর মামনিকেও বলে দিবো আমি।
এতক্ষণ শান্ত থাকলেও এবার রেগে গেলো কাব্য।নূর চলে যেতে নিলেই তার দুই হাত পেছনে মুরে ঘুরিয়ে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো।আচমকা এমনটা হওয়াতে ঘাবড়ে গেলো নূর।কাব্যর ঠোঁট জোড়া নূরের কান স্পর্শ করছে এখন।বড় বড় শ্বাস নিচ্ছে কাব্য।এদিকে নূরের ওপরও যেনো রাজ্যের রাগ এসে ভর করেছে কিছুতেই কন্ট্রোল করতে পারছেনা নিজেকে।নিজেকে ছাড়ানোর জন্য হাত মোচড়ামুচড়ি করছে নূর।কিন্তু কাব্যর মতো মানবের এমন শক্ত পোক্ত হাতের বাঁধন থেকে ছোটার মতো শক্তি যে তার হয়নি। তবুও বৃথা চেষ্টা করে যাচ্ছে।কিন্তু না পেরে একটু পরই সে শান্ত হয়ে গেলো।তাকে শান্ত হতে দেখে নিজের দিকে ঘুড়িয়ে নূরের গালে স্লাইড করতে করতে কাব্য বলা শুরু করলো-
-‘কি যেনো বলছিলে জান,,থাকবেনা আমার কাছে চলে যাবে,মামনিকেও বুঝিয়ে বলে দিবে।বাহ তুমি তো দেখছি সমাজসেবিকা হয়ে যাচ্ছো।স্বেচ্ছায় নিজের স্বামীকে অন্য নারীর হাতে তুলে দিচ্ছো।এটা কি ঠিক বলো।উহুম একদমই ঠিক না।
একটু থামলো কাব্য তারপর নূরের ডান হাতটা জোরে চেপে ধরে বললো-
-‘সেদিন প্রমিস করেছিলাম বিধায় এখনো গালে দু চারটা পরে নি তোমার।তবে এরপর যদি কখনো বলেছো এসব কথা তাহলে I swear My hand will be in your cheek to make it red.So Don’t do this again.Got it?
আর থাকার কথা বলছিলে তাই না।তোমাকে স্বেচ্ছায় নিজের করে এনেছি আমি।তাই আমার পারমিশন ছাড়া কোত্থাও যেতে পারবে না তুমি আর না তো আমি যেতে দিবো।তাই এসব কথা বলে সময় নষ্ট করবে না।
-‘আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে রাখবেন আপনি আর আমি থাকবো ভেবেছেন
নূরের কথা শুনে শব্দ করে হাসলো কাব্য তারপর বললো-
-সিরিয়াসলি নূর।তোমাকে বিয়ে করেছি তাও তোমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে আর বিয়ের পর তোমাকে ছেড়ে দিবো তোমার ইচ্ছায়।এতটাও ভালো না আমি যে নিজের বউকে অন্যের জন্য ছেড়ে দিবো।
নূর রেগে কটমট করে বললো-
-‘কারো পথের কাটা হওয়ার কোনো শখ নেই আমার।
এবার মুখটা উদাস করে হতাশ হওয়ার ভান করে কাব্য বললো-
-কি এক জ্বালায় পড়েছি পিচ্চি পাচ্চি বিয়ে করে।কোথাকার কে এসে কি বলেছে না কিসের ছবি দেখিয়েছে সেগুলোতে বিশ্বাস করে বসে আছে।পিচ্চি হোক আর যাই হোক সারাজীবন সামলাতে হবে তো আমারই।মাথাটা একেবারে হট হয়ে গেছে নূর ঠান্ডা করো কারণ শক খাবে এখন।
-‘মানে?
-‘মানে কিছু না।কিসের যেনো ছবির কথা বলছিলে?ওহ হ্যা ওয়েট,,
পকেট থেকে ফোনটা বের করে কাঙ্ক্ষিত জিনিসটা খুজে নূরের সামনে ধরলো তারপর চোখ দিয়ে ইশারা করলো দেখতে।সেদিকে তাকাতেই চোখ বড় বড় হয়ে গেলো নূরের।একটা ছেলে আর মেয়ের কাপল ডান্স করছে সেই পিক।সে আর কেউ না কাব্য আর রিয়া।দুজন দুজনের অনেকটাই কাছাকাছি।ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সবগুলো ছবি দেখলো।এই ছবিগুলো আগেও দেখেছে সে।রিয়া দেখিয়েছে।
-‘কি চেনা চেনা লাগছে?লাগারই কথা যা-ই হোক কি যেন বলেছে।হ্যা রিয়া আর আমার রিলেশন ছিলো মাঝখানে তুমি এসে পড়েছো আর আমি নাকি এখনো রিয়াকে ভালোবাসি।তাই তো?
কাব্যর কথা শুনে আরেকদফা চমকালো নুর।
-আপনি কিভাবে জানেন এসব?
-সেটা বড় কথা না বড় কথা হচ্ছে রিয়ার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।আর এই ছবি গুলা প্রায় দুই মাস আগের ছবি।মে মাসের তিন তারিখের।
-‘ওর জন্মদিনের দিন
-‘হ্যা ওর ছোট ভাই সিয়াম আমার বন্ধু।ওই সুবাদেই ইনভাইট করেছিলো।
-‘হ্যা আমাদেরও করেছিলো কিন্তু আমি অসুস্থ ছিলাম,রিতুকে ফ্যামিলি থেকে যেতে দেয়নি আর আমরা যায়নি দেখে তন্নী ও যায়নি।
-‘হ্যা আর তখন আমিও জানতাম না যে রিয়া তোমার আর তন্নীর ফ্রেন্ড।
-‘কবে জেনেছেন?
-‘আমাদের বিয়ের পর।ও আমাকে পছন্দ করে সেটা আগেই বলেছিলো।তাকে বুঝিয়েছিলাম কয়েকবার কিন্তু বুঝেনি।বিয়ের পরও কয়েকবার ফোন দিয়েছিলো।আর আজকেও।
-‘ওহ,,আপনি পছন্দ করেন?
-কি বলছো ওকে পছন্দ করবো কেন?ও আমার ও ছোট বোনের মতোই।আর বড় কথা হচ্ছে আমার মাশা আল্লাহ এত সুন্দর কিউট গুলুমুলু একটা বউ আছে।তাকে ছেড়ে আবার অন্য কেউ।নাহ পসিবল না।
-‘ওহ।ঢং কিউট আবার গুলুমুলু😒
-‘হুম।
-‘পার্টিতে গিয়েছেন ভালো কথা তাই বলে নাচতে হবে তার সাথে?
-‘কি করবো বলো আমি এতোই হ্যান্ডসাম যে মেয়েরা দেখলেই ঝাঁপিয়ে পড়ে। হি হি হি।
-‘চুপ করুন।হুহ,,,,হ্যান্ডসাম।সরুন।ছাড়ুন এখন।
-‘উহুম।এই দুইটা দিন জ্বালিয়েছো অনেক সেগুলোর উশুল নিতে হবে।
-‘মানে?
-‘মানে হচ্ছে আজকে সারারাত জেগে থাকবে আমার সাথে।নূরকে ছেড়ে দিয়ে ডান হাতটা ধরে তারপর বললো-
চলো।
-‘কোথায় যাবো এখন?
-রান্নাঘরে।তোমাকে ঠান্ডা করতে করতে আমার মাথা গরম হয়ে গেছে।কড়া করে এক কাপ চা লাগবে।বানিয়ে দাও।
-কে বলেছিলো ঠান্ডা করতে😒
-আমার বউ আমিই তো করবো।’তবে যাই বলো আমার বউ তো একেবারে রাগীনি টাইপ😐।বলেই হাসতে লাগলো কাব্য।
-ঠিক আছে চা দিবোনা আপনাকে।যান।
-আচ্ছা সরি।
-হুম।
.
.
চুলোয় চায়ের পাতিলে পানি ফুটতে দিয়ে নিজে নিজেই বলছে নূর-আমি তো এত রাগী না।শান্ত প্রকৃতির মেয়ে।তাহলে আজ কি এসে ভর করেছিলো আমার ওপর যে এতটা রেগে গিয়েছিলাম।ছোটবেলায় মায়ের কাছ থেকে শুনেছি মেয়েরা আর যাই হোক নিজের স্বামীর ভাগটা কাউকে দিতে রাজি না।কাব্য ভাই তো আমার স্বামী এটাই কি কারণ?হ্যা,,এটাই।আমার স্বামী আমারই অন্য কেউকে কেন ভাগ দিতে যাবো।হুহ,,,ভুলেও না।
-দিতে বলেছে কে,,আমি তো তোমার ই বর।তুমিই তো দূরে দূরে থাকো।সারাদিন খালি পালাই পালাই করো😒।
-আব,,ব আপনি আবার এসেছেন কেন?আপনাকে না পাঠিয়ে দিলাম রুমে
-হুম কিন্তু কি করবো বলো।বউ ছাড়া ভাল্লাগে না।
-‘যত্তসব,,রুমে যান।
.
.
ব্যালকনির দোলনায় পাশাপাশি বসে আছে দুজন।কাব্য টুকটাক কথা বললেও নূর কিছুই বলছে না।তাকে চুপচাপ থাকতে দেখে কাব্য জিজ্ঞেস করলো-
-‘কি হয়েছে চাশমিশ?এখনো ওইটা নিয়ে পড়ে আছো?
-‘না তেমন কিছু না।
-তাহলে চুপচাপ যে?
-এমনেই।
আর কিছু বললো না কাব্য।চায়ে শেষ চুমুক দিয়ে হাতের কাপটা পাশের ছোট্ট টেবিলটায় রাখলো নূর।লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে তারপর কাব্যকে জিজ্ঞেস করলো-
-আপনি আমায় ভালোবাসেন কাব্য ভাই?
হঠাৎ করে এমন প্রশ্ন শুনে থতমত খেয়ে গেলো কাব্য।নূর উত্তরের আশায় তাকিয়ে আছে তার মুখপানে।
তার থেকে চোখ সরিয়ে আকাশের দিকে দৃষ্টি স্থাপন করলো কাব্য।তারপর বললো-
-আমার জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ তুমি।এ কয়দিনে একটা জিনিস বুঝেছি আমি যে বাচার মতো বাঁচতে হলে আমার তোমাকে প্রয়োজন।
কাব্যর উত্তরে শব্দহীন হাসলো নূর।ভালোবাসি না বললেও কাব্যর উত্তরে সন্তুষ্ট সে।
কাব্য ফের নূরের দিকে তাকিয়ে বললো-
-রাত অনেক হয়েছে চলো ঘুমাবে।
-‘কেন?আপনি না বলেছেন সারারাত জেগে থাকতে
-হ্যা। আমার মাথা খারাপ। এমনিতেই মাথা ঘুরে পড়ে গেছো আজকে আবার জেগে থাকো আরও অসুস্থ হও তারপর তোমার বাবা আমার নামে মামলা করুক বউকে না ঘুমাতে দিয়ে অসুস্থ বানিয়ে ফেলেছে জামাই।মানুষতো ভাববে যে ওইসব করেছে😶।কিন্তু আমার কি আর সেই কপাল আছে।এখনো বাসর করতে পারলাম না। হায় কষ্ট।
-ছিহ কি সব কথাবার্তা। চুপ করুন।রুমে চলুন।
-আচ্ছা। বলে মুখে আঙুল দিলো কাব্য।
নূরকে বেডে শুয়িয়ে দিয়ে নিজেও পাশে শুয়ে পরলো কাব্য।তারপর একহাতে নূরকে জড়িয়ে ধরে কপালে ভালোবাসার স্পর্শ একে দিলো।আবেশে চোখ বন্ধ করে নিলো নূর।দুইদিন পর কাছে পেয়েছে মানুষটাকে আর একটু ভালোভাবে মিশিয়ে নিলো নিজেকে।
#চলবে
#অবশেষে তুমি
#লেখিকাঃNazia Shifa
#পর্ব-১৪
———————–
প্রভাতের আলো চোখে পড়তেই ঘুম ভাঙলো নূরের।ঘুম ভাঙতেই নিজেকে কাব্যর বাহুবন্ধনে আবদ্ধ দেখলো।অবাক হলোনা সে কারণ এখন স্বাভাবিক হয়ে গেছে এটা।মাথা উঁচু করে কাব্যর মুখপানে চোখ বুলালো সে।ইনোসেন্ট ইনোসেন্ট ভাব পুরো অথচ রাগলে হুহ😒।কাব্যর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে অবাক করার মতো এক কান্ড ঘটানোর বাসনা জাগলো।তার থুতনিতে খোঁচা খোঁচা দাঁড়িগুলো খুব করে টানছে তাকে।একটু ছুয়ে দিতে ইচ্ছে করছে।ভাবতে ভাবতেই তার ডান হাতটা কাব্যর থুতনিতে আলতো করে ছুয়ে দিলো।তারপর একটু উঁচু হয়ে তার ডান গালে ছোট্ট করে চুমু খেল সে।নিজের কাজেই নিজেই হতভম্ব হয়ে গেলো নূর।এত সাহস কিভাবে হলো তার।এখন যদি কাব্য সজাগ থাকতো ইশশ কি কাজটাই না করেছিস নূর।কাব্য ওঠার আগেই কেটে পরতে হবে।আলগোছে কাব্যর হাতটা পেটের ওপর থেকে সরিয়ে উঠে বসলো নূর।তারপর শব্দহীনভাবে বিছানা থেকে নামলো।সামনে পা বাড়াতে নিলেই শাড়ীর আঁচলে টান পড়ল তার।ভয়ে বুক ধক করে উঠলো।আস্তে আস্তে ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকালো সে।পেছনে তাকাতেই দেখলো কাব্য তার দিকে তাকিয়ে আছে।ঠোঁটে সেই স্নিগ্ধ হাসি।তাকে তাকাতে দেখে কাব্য বললো-
-ঘুমন্ত আমির সুযোগ নিচ্ছ।বাহ ভালোই।বউয়ের প্রথম স্পর্শ পাওয়ার জন্য ঘুমিয়ে থাকার ভান করতে হলো আমার।তাও পেয়েছি নিজ থেকে এসে স্পর্শ করেছো আমায়।এবার তোমারটা নিয়ে যাও।
কাব্য জেগেছিলো এটা ভাবতেই লজ্জায় কুঁকড়ে গেলো নূর।ইশশ সময় পেলিনা আর।দেখে নিলেই তো পারতি😒।
-কি হলো আসো।
-‘আ,,ব,,আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে।পড়তে বসবো আমি।
-ভালো কথায় মানবে না।এই বলে নূরের শাড়ির আঁচলে টান দিয়ে তাকে নিজের ওপর ফেলে দিলো তারপর কপালে চুমু খেয়ে ছেড়ে দিয়ে বললো-
-এবার যাও।
আকস্মিক ঘটনায় মুখ হা হয়ে গেলো নূরের।কাব্যর ওপর থেকে উঠে বেড থেকে নামতে নামতে বিড়বিড় করে বললো-বজ্জাত ছেলে😒।
-যেমনই হোক তোমারই।
আর কিছু না বলে ওয়াশরুমে ঢুকলো নূর।কথা বাড়ালে তারই বার-বার লজ্জায় পরতে হবে তাই কথা না বাড়ানোই শ্রেয়।
.
.
সকাল সাড়ে নয়টা।টানা দুই ঘন্টা পড়াশোনা করেছে তন্নী আর নূর।সবেমাত্র নাস্তা সেরে সব গুছিয়ে কিচেনে মিসেস রেহেনার সাথে কাজে টুকটাক হাত চালাচ্ছে নূর।
-নূর বললামতো তুই যেয়ে একটু বস আমি একাই পারবো।
-উফফ মামনি এই নিয়ে কতবার বলেছো এই কথাটা।এবার একটু চুপ করো হেল্প করতে দাও।আর এমনিতেও তুমি কোন কাজটা করতে দিচ্ছো আমায় যেটা করতে নেই সেটাতেই হয় হাত পুড়ে যাবে নয় কেটে যাবে বলে বলে করতে দিচ্ছনা।এট লিস্ট সামনে থাকতে তো দাও।নাকি চলে যাবো?😒
নূরের কথায় শব্দহীন হাসলো মিসেস রেহেনা।তারপর বললো-
-ঠিক আছে থাক আমি আর কিছু বলবো না।
-হুম।
তাদের কথার মাঝেই কলিংবেল বাজলো।
-এখন আবার কে আসলো?
-আমি দেখছি যেয়ে।
দরজা খুলতেই অবাক হয়ে গেলো নূর।দরজার ওপাশের মানুষটার অবস্থাও এমনই।
-রিদ এসে গেছো,,ভেতরে আসতে দাও নূর।
কাব্যর কথায় দুজনেরই হুশ ফিরলো।প্রায় অনেকদিন পরে দেখা দুজনের।হঠাৎ আজকে রিদ আসবে ভাবেনি নূর।রিদ জানে নূর এখন কাব্যর স্ত্রী তবে দরজা খুলতেই যে তার দর্শন হবে সেটা ভাবেনি তাই দুজনই অবাক হয়ে গিয়েছিলো।
রিদকে ভেতরে আসতে বলে সরে যেয়ে ভেতরে ঢোকার জায়গা করে দিলো নূর।রিদ ভেতরে আসতেই কাব্য বললো-
-স্টাডি রুমে আসো রিদ।
-জ্বি।
কাব্য চলে গেলে নূরকে রিদ জিজ্ঞেস করলো-
-কেমন আছেন ম্যাম?
রিদের মুখে ম্যাম সম্বোধন শুনে কপাল কুঁচকালো নূর।তারপর বললো-
-কি উল্টা পাল্টা বলছো আমি তোমার বোন হই।আগে বোনু বলতে সেটাই বলবে।
-আগে তো আর কাব্য স্যারের ওয়াইফ ছিলেন না তাই।কিন্তু এখন ম্যামই বলবো যেহেতু আমাদের স্যারের ওয়াইফ।
-এসব ফরমালিটিস আমার সাথে করবেনা ভাইয়ু।রাগ করবো আমি।এমনিতেই রেগে আছি আমি।দুই দুইটা ভাই আমার অথচ বিয়ের পর একটাও খবর নেয়নি আমার যেন পর হয়ে গেছি আমি।একজনতো বোনই মানছেনা এখন।
-আচ্ছা ঠিক আছে বোনুই বলবো তবে বাইরে কিন্তু ম্যামই বলবো And It’s final.Ok.
– হুম 😒,,আচ্ছা তোমার হাতে ওইটা কিসের ব্যাগ?আমর জন্য নিশ্চয়ই। দাও তাহলে।
-নাহ ওইটাতো স্যার আনতে বলেছে।
-তুমি কিছু নিয়ে আসোনি আমার জন্য? 🥺
-নাহ বোনু।
-কি এটার মধ্যে?
ইম্পরট্যান্ট ফাইলস আছে এটায়।
-এসব ফাইলস আর কাগজের টুকরা হাবিজাবি ছাড়া তো আর কোনো কাজ নেই ওনার।যত্তসব।
-হুম আচ্ছা আমি যাই।
-হুম।
রিদ চলে যেতে নিয়েও আবার দাঁড়িয়ে পরলো।পেছনে ঘুরে নূরকে বললো-
-হাতটা দেয় তো।
রিদের কথায় কপাল কুঁচকে তাকালো নূর।তারপর বললো –
-কেন?
-দেয় তো আগে।
-আচ্ছা। নূর ডান হাতটা রিদের সামনে বাড়ালেই ব্যাগটা তার হাতে ধরিয়ে দিলো।
-এটা আমাকে দিচ্ছ কেন?
-তোর জিনিস তোকে দিবোনা।খুলে দেখ
ব্যাগটা খুলতেই এক গাদা চকলেট দেখতে পেলো নূর।
হাসি হাসি মুখে নূর বললো-
-এত্তগুলা চকলেট থ্যাঙ্কিউ।
উত্তরে মুচকি হাসলো শুধু রিদ।তারপর স্টাডি রুমের উদ্দেশ্য পা বাড়ালো।
.
.
চেয়ারে বসে সামনে ল্যাপ্টপ নিয়ে বসে আছে কাব্য।
-স্যার আপনার কথামতো গত এক বছরে যারা যারা আমাদের কোম্পানির সাথে ডিল বিজনেস করেছে আর কোম্পানিতে ইনভেস্ট করেছে সবার ডিটেলস ইমেইল করে দিয়েছি।আপনি দেখে নিবেন।
-হ্যা আমি চেক করে নিবো।
-জ্বি আর এই ফাইলগুলোও দেখে নিবেন।
-হুম।
.
.
.
দুপুরে খাওয়ার পর রুমে আসতেই ড্রেসিং টেবিলের ওপর রাখা বক্সটায় চোখ গেলো নূরের।বক্সটা হাতে নিতে যাবে তখনই পেছন থেকে কাব্য বললো-
-ফোন ওইটা।কালকে রাতে আমার ফোনের যা অবস্থা করেছো খুজেও পাইনি।তাই নতুন ফোন আনিয়েছি।
রাতের কথা মনে পরতেই মুখটা চুপসে গেলো নূরের।কতকিছু বলে ফেলেছে রাগের মাথায়।কাব্য সামনে আসতেই মিহি কণ্ঠে বললো-
-সরি আসলে কালকে রাগের মাথায় অনেক কিছু করে ফেলেছি,,সরি।
-ইট’স ওকে।যা করেছো ভালোই করেছো এট লিস্ট আমি জানতে তো পেরেছি তুমি কতটা জেলাস ফিল করো।
-হুহ আমি মোটেও জেলাস না।এসব ফালতু কথা।
-আচ্ছা বুঝলাম।এখন সরো রেডি হতে হবে আমায়।
-রেডি হবেন মানে।এই ভরদুপুরে কাকে উদ্ধার করতে যাচ্ছেন
-রিয়ার সাথে দেখা করতে যাচ্ছি।
-কিহ?রিয়ার সাথে দেখা করতে যাচ্ছেন মানে।ওর সাথে কি কাজ আপনার।
-কেন তোমার সমস্যা কি গেলে
-আমার বর অন্য আরেকটা মেয়ের সাথে একা দেখা করতে যাচ্ছে তাও যেই মেয়েটা তাকে পছন্দ করে তার সাথে আর আপনি বলছেন গেলে আমার সমস্যা কি।ফাজলামো করেন।
নূরের কথা শুনে শব্দ করে হেসে দিল কাব্য।তারপর বললো-
-কে যেন বলেছিলো সে মোটেও জেলাস না।
-তো,,তোহ সত্যিই তো আমি মোটেও জেলাস না।
-তাহলে আর কি আমি যাই।টাটা
এই বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেলোকাব্য।কিন্তু নূর কিছু বললো না।তাই আবার রুমে ফিরে আসলো সে।তাকে দেখে প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকালো নূর।তা দেখে কাব্য বললো-
-কবি বলেছেন নিজের জিনিস গুলো নিজের করে আগলে রাখতে শিখো।যাদের ওপর তোমার অধিকার আছে দরকার হলে জোর করে রাখবে।কথা না শুনলে কানের নিচে দুইটা দিয়ে রেখে দিবে তবুও যেতে দেয়া যাবেনা।বুঝেছো
কথাগুলো যে কোনো কবির না আর নূরকে উদ্দেশ্য করেই যে বলা হয়েছে তা ঢের বুঝতে পেরেছে নূর।
-এখন দাঁড়িয়ে না থেকে রেডি হও।
-কেন?
-আমার সাথে যাবে।No more questions go.
-হুম।
.
.
কাব্য আর নূরের মুখোমুখি বসে আছে নূর।
-আমাকে এখানে ডেকেছো কেন কাব্য?
-এর আগেও বলেছি আমি তোমার ভাইয়ার বয়সী আমাকে ভাইয়া বলবে।যাক আসল কথায় আসি।শোনো তোমাকে আগেও বলেছি আমি তোমাকে ছোট বোন হিসেবেই দেখেছি সবসময় আর এখনো সেটাই মানি।নিষেধ করেছিলাম এসব পাগলামি করোনা।এতদিন করেছো আলাদা কথা ছিল কিন্তু এখন আমি ম্যারিড আর আমি আমার ম্যারিড লাইফে অনেক বেশি হ্যাপি আছি তাই তুমি ঝামেলা করো না কোনো।নেক্সট টাইম বুঝিয়ে বলবো না কিন্তু।আর আমার বউনা অনেক সুন্দর আর কিউট মাশা আল্লাহ।সবদিক থেকেই ঠিক তেমন যেমনটা আমি চাই তাই তাকে রেখে অন্য নারীতে আসক্ত হওয়ার তো প্রশ্নই আসে না। আই হোপ বুঝতে পেরেছো আমি কি বলতে চেয়েছি।নূরের ডান হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বললো ঠিক আছে তাহলে চলো নূর।
এতক্ষণ নীরব শ্রোতার মতো কাব্যর কথাগুলো শুনছিলো নূর।হাতে টান পড়ায় হুঁশ এলো তার।কাব্য চোখের ইশারায় উঠতে বলছে তাকে।
নূরের হাত ধরে ক্যাফে থেকে বেড়িয়ে গেলো কাব্য।
.
.
.
রাত এগারোটা। তন্নী আর নূর তন্নীর রুমে বসে পড়ছে তখনই রুমে আসলো কাব্য।
-আর পড়তে হবে না।কয়টা বেজে গেছে।এখন ঘুমা তন্নী সকালে পড়িস।নূর আসো।
-নাহ পড়া বাকি আছে। (নূর)
-সকালে পড়ো চলো।(কাব্য)
-হ্যা নূর ঘুম পেয়েছে আমার আর পরবোনা।টাটা গুড নাইট। (তন্নী)
-শুনেছো এখন চলো।(কাব্য)
রুমে এসে কাব্যর থেকে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে নূর বললো-
-কি সমস্যা হ্যা পড়ছিলাম না।এতো ডিস্টার্ব করেন কেন।
-কি করবো বলো বউ ছাড়া এখন আর ঘুম আসে না।
-হ্যা ঢং যত্তসব।
-হ্যা ঢংই। এখন আসো।No more arguments.
নূর যেয়ে বিছানায় বসতেই কাব্যর ফোন বেজে উঠল। নূরের সামনেই ছিল ফোনটা।হাতে নিতেই দেখল ফোনের স্ক্রিনে রিয়ার নাম।মুখ বাকিয়ে কাব্যকে বললো-
-আপনার রিয়ায়ায়া কল দিয়েছে।
-রেখে দাও।
-কেন রিসিভ করবেননা
-নাহ
-নাহ করবো স্পিকারে দেই দেখি কি বলে আবার 😒
-তোমার ইচ্ছা যা খুশি করো।
এরই মধ্যে আবার বেজে উঠল ফোন।নূর রিসিভ করলো এবার
-কাব্য ভাই প্লিজ ফোনটা কাটবেন না আমার কিছু কথা আছে। আপনি ঠিকই বলেছিলেন আমি অনেক বাড়াবাড়ি করে ফেলেছি।জোর করে ভালোবাসা হয়না।আপনি নূরকে নিয়ে হ্যাপি আছেন আমি আর কোনো ঝামেলা করবো না।এ পর্যন্ত যা যা করেছি তার জন্য আমি খুব সরি।ছোট বোন হিসেবে মাফ করে দিন।দোয়া রইলো আপনাদের জন্য।
এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে ফোন রেখে দিলো রিয়া।
এদিকে রিয়ার কথা শুনে নূর হা হয়ে বসে আছে।
-কি?
-কি বললো এগুলা।
-শুনলেই তো ভালোই হয়েছে বুঝে গেছে।এখন ঘুমাও
-হুমম।
———————
অফিসে বসে কাজ করছিলো কাব্য। ফোনের রিংটোনের আওয়াজ শুনে ফোন হাতে নিলো।তন্নী কল করেছে।ফোন রিসিভ করতেই তন্নী বিচলিত কণ্ঠে বললো –
-ভা,,ভাইয়া নূর নূরকে খুজে পাচ্ছিনা।প্লিজ একটু তাড়াতাড়ি আয়।
তন্নীর কথা শুনে হাত থেকে ফোনটা পড়ে গেলো কাব্যর।
#চলবে