অবশেষে তুমি পর্ব-৭+৮

0
569

#অবশেষে তুমি
#লেখিকা–Nazia Shifa
#পর্ব -০৭
——————–
কাব্যের একেবারে পেছনেই দাঁড়িয়ে ছিল নূর।তার কাঁধে হাত রাখতে যাবে এমন সময় ফোন রেখে পেছনে ঘুরে কাব্য। হকচকিয়ে যায় নূর।তাল সামলাতে না পেরে পড়ে যেতে নিলে তার দুই বাহুতে হাত রেখে সামলে নেয় কাব্য। নূরের মাথা যেয়ে ঠেকে কাব্যের বুকে।সপষ্টভাবে না হলেও কাব্যের হার্টবিট গুলো কিছুটা শুনতে পারছে সে।ভালো লাগছে তার।এ যেন এক অন্যরকম অনুভূতি।কোনোরকম নড়াচড়া না করে মন দিয়ে শুনছে সে। তার এমন অবস্থা দেখে হাসলো কাব্য তবে সেটা নূরের অগোচরে।তাকে লজ্জা দেওয়ার জন্য বললো-

-‘আজ বুঝি সারা বিকেল এভাবেই কাটিয়ে দিবে?পা ব্যথা হয়ে যাবেতো বউ।তবে তুৃমি চাইলে তোমাকে কোলে নিয়ে বসে থাকতে পারবো আমি।আমার কোনো আপত্তি নেই।কি বলো নিব কোলে?

কাব্যের কথাগুলো কর্ণকুহর হতেই ধ্যান ভাঙলো নূরের।এতক্ষণে খেয়াল হলো সে কি করছে।লজ্জায় মাথা উঠাতে পারছেনা সে।তার এমন অবস্থা দেখে কাব্য আবার বললো-

-‘বউ আমার এতো লজ্জা পায় কেন বুঝিনা।এখনো তো কিছু করলামই না।দেখি–নূরের থুতনিতে হাত রেখে নত মুখ উঁচু করলো কাব্য।লালাভ মুখশ্রী ধারনকৃত মেয়েটির দুই গালে হাত রেখে সময় নিয়ে কপালে তার উষ্ণ ঠোঁটের স্পর্শ একে দিলো।তার স্পর্শ পেয়ে থমকে গেলো নূর।শরীরের প্রত্যেকটি শিরা, রন্ধ্র শিহরিত হলো।বিয়ের সাত দিনের মাথায় এসে নিজের স্বামীর স্পর্শ পেলো সে।অনুভব করতে লাগলো সে স্পর্শকে।এক অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করছে।এর কারণ কি কাব্য তার স্বামী তাই।হুম হয়তো।একটু পর নূরকে ছেড়ে দিয়ে তার দিকে একপলক তাকালো কাব্য।মেয়েটার মুখ এখনো লজ্জা রাঙা।যা দেখে হাসলো কাব্য অতঃপর বললো-

-‘আর লজ্জা পেতে হবে না বউ।তোমার লজ্জা রাঙা চেহারা দেখলে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারবো না আমি।তাড়াতাড়ি যাও।পরে আমার দ্বারা উল্টা পাল্টা কিছু হয়ে গেলে কিন্তু আমাকে দোষ দিতে পারবেনা আগেই বলে দিলাম।

কাব্যের কথা শুনে কোনোরকম সেখান থেকে এসে সোজা ওয়াশরুমে ঢুকলো নূর।লোকটা একদিনেই তাকে এতবার লজ্জায় ফেলে দিচ্ছে।ইশশ…

ফ্রেশ হয়ে বেড়িয়ে এসে দেখলো কাব্য এখনো ব্যালকনিতেই।সেখানে যেতে নিলেও আর গেলো না।রুম ত্যাগ করে ড্রয়িং রুমে আসলো।তন্নী বসে বসে টিভি দেখছে।তার পাশে বসতে বসতে নূর বলল-

-‘নন্দিনী একা একা বসে আছেন যে।

নূরের কথা শুনে তার দিকে তাকালো তন্নী।তারপর বললো –

-‘দোস্ত থুক্কু ভাবি😅 আপনার জন্যই তো অপেক্ষা করছিলাম কিন্তু আপনিতো আমার ভাইয়ার কাছ থেকে আসেনই না।সেই যে রুমে গেলেন তো গেলেন।তা ভাইয়া বুঝি আসতে দিচ্ছিলো না।বলেই দাঁত কেলানি মার্কা একটা হাসি দিলো।

এদিকে লজ্জায় যায় যায় অবস্থা নূরের।প্রসঙ্গ বদলাতে বললো-

-‘মামনি আর বাবা কোথায়?

-‘হাঁটতে বেড়িয়েছে দুজন।

তার কথা শুনে হাসলো নূর। এই মানুষ দুইটা এমনই।শত ব্যস্ততার মাঝেও একজন আর একজনকে সময় দিতে ভোলেনা।বিয়ের এত বছর পার হবার পরেও তাদের মধ্যকার ভালোবাসা যেন দিনকে দিন বেড়েই চলেছে।

ভাবনা থেকে বেড়িয়ে তন্নীকে জিজ্ঞেস করলো –

-‘কিছু খাবি?বানিয়ে দিব?

-‘চা খাবো ছাদে বসে।

-‘আচ্ছা ঠিক আছে।
.
.
চা বানিয়ে দুইকাপ তন্নীর কাছে দিয়ে আর এক কাপ নিয়ে রুমে আসলো নূর।কাব্য সোফায় বসে কিসব ফাইল দেখছে।নূর তার সামনে যেয়ে হাতের কাপটা তার দিকে বাড়িয়ে দিলাম।কাব্য কাপটা হাতে নিতে নিতে জিজ্ঞেস করলেন-

-‘তন্নী কোথায়?

-‘ছাদে।

-‘ওওও।ঠিক আছে তুমিও যাও তাহলে।

-‘জ্বী।

চা দিয়ে ছাদে চলে আসলো নূর।ছাদে আসতেই তন্নী বললো-

-‘বাহ ভাইয়াকেও নিয়ে এসেছিস।ভালোই করেছিস একসাথে আড্ডা দিব।

তন্নীর কথা শুনে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো –

-‘কি বলছিস?উনি তো রুমে।

-‘আচ্ছা তাহলে তোর পেছনে কে?ভূত?বলেই শব্দ করে হেসে দিলো।

পেছনে তাকিয়ে আর এক দফা অবাক হলো নূর কাব্য কে দেখে।কাব্য কে জিজ্ঞেস করলো-

-‘আপনি না রুমে ছিলেন?এখানে আসলেন কখন?

-‘তুমি যখন আসছো তখনই।তারপর কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বললেন –

-‘বউ ছাড়া ভালো লাগেনা বুঝলা তাই তোমার পেছন পেছন চলে আসছি।বলেই তন্নীর পাশে যেয়ে বসলেন।আমিও যেয়ে বসলাম পাশে।তন্নী আর আমি বকবক করছি আর উনি নিরব শ্রোতার মতোন বসে আছেন। হঠাৎ তার ফোন আসায় কথা বলার জন্য উঠে চলে গেলেন।একটু পর এসে বললেন-

-‘নূর আমি বের হবো এখন।আর আসতেও দেরি হবে তুমি খেয়ে নিও।আব্বু কে ফোন দিয়েছি আমি একটু পরেই চলে আসবেন।

-‘কিন্তু আজকে তো শুক্রবার।কোথায় যাবেন আপনি?

-‘যেতে হবে কাজ আছে।আসি।সাবধানে থেকো দুজন।

আমাদের আর কিছু বলতে না দিয়েই চলে গেলো সে।
.
.
.
রাত বারোটার বেশি বাজে।ড্রয়িং রুমে পায়চারি করছে নূর।সেই যে বিকেলে বেড়িয়েছে কাব্য এখনো আসেনি।এখন পর্যন্ত কয়েকবার ফোন করেছে কিন্তু ফোন তোলেনি একবারও। রাগে আর টেনশনে অস্থির হয়ে গেছে নূর।কিন্তু তার আসার কোনো খবর নেই।একটু পরেই কলিং বেলের আওয়াজ হলো।দরজার দিকে যেতে যেতে নূর বিড়বিড় করে বললো-‘যাক মহাশয় এসেছেন তাহলে।আজকে তার একদিন কি আমার যে কয়দিন লাগে।

দরজা খুলতেই নূরকে দেখে খানিক অবাক হলো কাব্য।তার জন্য এত রাত পর্যন্ত জেগে আছে নূর।ভাবতেই মনে মনে হাসলো সে।কিন্তু নূরের রাগান্বিত চেহারা দেখে বুঝতে পারলো সে রেগে আছে।কারণটাও তার জানা তাই ঠোঁট প্রসারিত করে হাসি দিয়ে বললো-‘সরি বউ বিশ্বাস করো আমার একটুও দোষ নেই।সব দোষ জ্যামের।রাস্তায় অনেক জ্যাম ছিল আজকে।ফোনটাও বন্ধ হয়ে গিয়ে ছিলো তাই কল করতে পারিনি।নূর কোনো প্রতি উত্তর করলোনা।তাই কাব্য এক কান ধরে ইনোসেন্ট ফেস বানিয়ে বললো–‘সরি,,,,এবার তো ভিতরে আসতে দাও।

দরজা থেকে সরে দাড়ালো নূর।কাব্য আসতেই দরজা লক করে বললো-

-‘ফ্রেশ হয়ে আসুন।খাবার গরম করে দিচ্ছি আমি।

-‘তুমি খাওনি এখনো?

-‘না।

কিছু বলবে তার আগেই নূর সেখান থেকে চলে আসলো।নাহলে সে খায়নি কেনো তা নিয়ে হাজারটা প্রশ্ন করবে এখন।
.
.
.
বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করছে কাব্য।ঘুম আসছেনা তার।একটু আগেই শুয়েছে। পুরো রুম জুড়ে নিস্তব্ধতা।ঘুটঘুটে অন্ধকার না হালকা সবুজ রঙের আলো জ্বলছে। নূর ঘুমিয়ে গেছে কিনা জানেনা কাব্য। তাই জানার জন্য আলতো স্বরে তার নাম ধরে ডাকলো সে।আর ডাকার সাথে সাথেই জবাব দিলো নূর।কারণ সেও যে ঘুমায়নি এখনো।নূরের জবাব শুনে মিহি কণ্ঠে কাব্য বললো –

-‘এত দূরে গিয়ে শুয়েছো কেন?কাছে আসো।

কাব্যের এমন কথা শুনে আবারো লজ্জা এসে ধরা দিলো নূরের চোখেমুখে। কোনোমতে বললো-

-‘না সমস্যা নেই। এভাবেই ঠিক আছি আমি।

-‘তোমার সমস্যা না থাকলেও আমার আছে।এই বলে একটানে নূরকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিলো।তারপর তাকে একহাতে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়লো।কাব্যের গরম নিঃশ্বাস আছড়ে পড়ছে নূরের চোখেমুখে।চোখ বুজে নিলো সে।দু’জন দু’জনকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমালো।

—————————–
-‘আর কতক্ষণ লাগবে নূর?বিরক্তি নিয়ে বললো কাব্য । হিজাব পরতে পরতে নূর বললো-‘এইতো হয়ে গেছে আর পাঁচ মিনিট।

-‘পাঁচ মিনিট পাঁচ মিনিট করতে করতে সাড়ে নয়টা বেজে গেছে তাও হয়নি তোমার।

হাতে ব্যাগ নিতে নিতে নূর বললো-চলুন চলুন হয়ে গেছে আমার।

-‘এতো জোরে হাটছো কেন?পড়ে যাবে তো।

চলবে……ইনশাআল্লাহ।

#অবশেষে তুমি
#লেখিকা–Nazia Shifa
#পর্ব -০৮

————————-
আজ পুরো নয় দিন পর ভার্সিটিতে এসেছি।কাব্য ভাইয়া তন্নী আর আমাকে ভার্সিটিতে দিয়ে অফিসে চলে গেছেন।আর যাওয়ার আগে বিশেষ করে আমাকে বলে গেছেন যাতে কোনো ছেলের সাথে কথা না বলি, বেশি লাফালাফি না করি।হুহ আমি কি বাচ্চা নাকি যে লাফালাফি করবো।ভার্সিটির গেট দিয়ে ঢুকতেই রিতু ঝড়ের বেগে এসে জরিয়ে ধরলো।কি হলো বুঝতে একটু সময় লাগলো আমার।ততক্ষণে রিতু আমাকে ছেড়ে দিয়ে বলতে লাগলো–

-‘কেমন আছিস?এত কিছু হয়ে গেলো আর আমাকে একটা ফোন ও দিলিনা।এত খারাপ কেন তুই?

বুঝলাম ম্যাডাম রাগ করেছেন আমার ওপর তাই ওকে জড়িয়ে ধরে বললাম –

-‘রাগ করিসনা প্লিজ।চল ক্যান্টিনে যেয়ে বসি একটু তারপর কথা বলি।

-‘না যাবোনা আমি।

-‘ট্রিট দিবো আমি তাও যাবিনা?

-‘সত্যি?

-‘আরে হ্যা।

-‘ঠিক আছে চল চল।
.
.
ক্যান্টিনে বসে আছি তিনজন।রিতু তব্দা মেরে বসে আছে আর আমরা দুইজন তাকিয়ে আছি ওর দিকে।একটু পর রিতু ভ্রু কুটি কুচকে বললো-

-‘এটা কিভাবে সম্ভব দোস্ত?

তন্নী বললো-‘অসম্ভবের কিছু নেই রিতু।আমরাই ওকে চিনতে পারিনি আর ও আমাদের টেরও পেতে দেয়নি।

রিতু বললো-‘কিন্তু রিয়া তো আমার খালাতো ভাই তন্ময়কে পছন্দ করতো।ওদের রিলেশন ও ছিল প্রায় দুই মাসের আর নূরের সাথে রাজ ভাইয়ার বিয়ে ঠিক হয়েছে এক মাসের মতো।তাহলে কিভাবে কি?

দুজনই বিস্মিত হলাম।তন্নী জিজ্ঞেস করলো-‘এ ব্যাপারে আমরা কিছু জানিনা কেন?

-‘ওও বলতে নিষেধ করেছিলো।বলেছিলো কয়দিন পরে বলবে এখন বুঝলাম যে কেন নিষেধ করেছিলো।
(মন খারাপ করে বললো)।

ওর মন খারাপ দেখে আমি বললাম-‘বাদ দেয় যা হওয়ার হয়ে গেছে।ক্লাসের সময় হয়ে গেছে চল।
.
.
ক্লাস শেষ করে সবে মাত্র বেড়িয়েছি ক্লাসরুম থেকে।একসাথে মাঠে হাঁটছি তিনজন।হুট করে হাতে টান পড়ায় চমকে গেলাম আমি।ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলাম আহাদ ভাইয়া আমার হাত ধরে আছেন।আাহাদ ভাইয়া আমাদের এক বছরের সিনিয়র।উনার থেকে হাত ছাড়ানোর জন্য মোচড়ামুচড়ি করছি দেখে উনি হাত ছেড়ে দিয়ে এক নাগাড়ে বলতে লাগলেন-

-‘বেশি সময় নিব না তোমার।শুধু বলতে চাই আমি তোমাকে ভালোবাসি নূর।তোমাকে সেই প্রথম দিন থেকেই আমার পছন্দ ছিল।আস্তে আস্তে ভালোবেসে ফেলেছি তোমাকে।আমিও জানি তুমি আমাকে পছন্দ করো কিন্তু বলতে পারছোনা।তাই আজ আমিই প্রপোজ করলাম তোমাকে।Will you marry me?

আহাদ ভাইয়ার কথা শুনে আমার হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়ার উপক্রম।বলে কি এই ছেলে যাকে আজ পর্যন্ত ভালো করে দেখলামই না তাকে আবার ভালোবাসি।বিয়েও করতে বলছে যে জায়গায় আমি অলরেডি বিবাহিত।বাহ কি কপাল আমার বিয়ের পরও প্রেমের প্রস্তাব পাই।হিহিহি। যাই হোক আহাদদ ভাইয়াকে শুধু বললাম-

-‘ভাইয়া আমি ম্যারিড।সাথে সাথে হাত ছেড়ে দিলো উনি।যাক কাজ হয়েছে।উনি বিস্ময় নিয়ে জিজ্ঞেস করলেন -‘কি বলছো এসব?বিয়ে হয়ে গেছে মানে?

-‘হ্যা বিয়ে হয়ে গেছে আমার।দাওয়াত দিতে পারিনি আপনাকে তাই সরি।কিন্তু ট্রিট চাইলে আপনার ভাইয়া কে বলবো নি(একটু লাজুক হেসে)।

-‘থাক সমস্যা নেই। আসি আজকে।

উনি যেতেই আমরা চলে আসতে নিলাম কিন্তু আবার হাতে টান পড়ায় বিরক্তি নিয়ে সামনে তাকালাম।তাকাতেই আমার চোখ ছানাবড়া।কাব্য ভাইয়া মুখ শক্ত করে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।ভয়ে জান যায় যায় অবস্থা।একটা কথাই ঘুরছে মাথায় কিছু দেখেননি তো উনি?দেখলে তো তুই শেষ নূর।
এর মধ্যেই উনি তন্নীকে বললেন-

-‘তন্নী তুই ড্রাইভার চাচার সাথে বাসায় যা নূরকে আমি নিয়ে আসছি।

-‘ঠিক আছে ভাইয়া।তারপর আমার দিকে তাকিয়ে চোখ রাঙিয়ে বললেন-চলো।
বুঝলামনা টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছেন আবার বলছে চলো😒।রিকশা ডেকে আমাকে রিকশায় বসিয়ে দিয়ে নিজেও বসলেন।রিকশা চলছে আপন গতিতে।উনি এখনো হাত ধরে আছেন।কেমন যেন অস্বস্তি হচ্ছে পাশাপাশি বসতে।তারওপর কোথায় যাচ্ছি তাও বলছেন না।একটু সাহস নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম –

-‘কোথায় যাচ্ছি আমরা?বাসায় কেন যেতে দিলেন না?

উনি নিরুত্তর। আবার জিজ্ঞেস করলাম -বলুন না কোথায় যাচ্ছি?আপনি এভাবে টেনে নিয়ে আসলেন কেন?
কার কথা কে শোনে।আগের মতোই হাত ধরে চুপচাপ বসে আছেন মুখ শক্ত করে।সে তখন থেকে দেখছি এভাবেই বসে আছেন।মানুষ একই ফেস করে কতক্ষণ থাকতে পারে?রোবট নাকি হুহ।
.
.
রিকশা থামলো বহুতল ভবনের সামনে।কাব্য ভাইয়ার অফিস এটা এর আগে বাবার সাথে এসেছিলাম একবার তাই চিনতে অসুবিধা হয়নি।রিকশা থেকে হাত ধরে নামিয়ে আবার টানতে টানতে ভিতরে নিয়ে গেলেন।লিফট থেকে বের হয়ে অফিসে ঢুকে সোজা ওনার রুমে নিয়ে দরজা আটকে দিলেন।হাত ছেড়ে দিয়ে চেয়ারে বসে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছেন আর আমি জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে আছি ওনার দিকে। হুট করে দাড়িয়ে পড়লেন উনি।এক পা দু পা করে আমার দিকে এগোচ্ছেন।হঠাৎ তার এভাবে এগিয়ে আসায় ঘাবড়ে গেলাম আমি।পেছনে যাওয়ার সুযোগটাও পায়নি তার আাগেই উনি হেচকা টানে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলেন।এক হাত দিয়ে আমার কোমর পেচিয়ে ধরলেন আর এক হাত গালে রেখে স্লাইড করতে করতে শান্ত গলায় বললেন –

-‘কি যেন বলেছিলাম তোমাকে ভার্সিটিতে যাওয়ার আগে মনে আছে?

ওনার শান্ত স্বরে বলা কথাটাও এ মুহূর্তে ভয় দেখানোর জন্য যথেষ্ট। কোনোরকম কাপা কাপা গলায় বললাম,

-‘আব,,ব,,বলেছিলেন যে বেশি লাফালাফি না করতে আর ছেলেদের থেকে দূরে থাকতে।

-‘তা মেনেছো আমার কথা?আরও শক্ত করে কোমর চেপে ধরে চেচিয়ে বললেন-‘ভালোভাবে বললে ভালো লাগেনা তাইনা?দুই তিনটা গালে পড়লেই বুঝবে তুমি।ভুল প্রতি একটা চড় তোমার জন্য এখন থেকে এটাই শাস্তি।

উনার কথা শুনে এবার কান্না করে দিলাম আমি।কাঁদতে কাঁদতে বললাম-‘বিশ্বাস করুন আমার কোনো দোষ নেই।উনি পেছন থেকে এসে আমার হাত ধরেছিলো আর আমি তাকে বলেও দিয়েছি যে আমি বিবাহিত।

-‘আমি এতো কিছু জানিনা শাস্তি তো দিবোই।So be ready for the punishment Baby. তবে….

-‘তবে?

-‘তুমি চাইলে আমি শাস্তি দিব না কিন্তু আমার শর্ত আছে একটা।

-‘কি,কি শর্ত?

-‘চুমু খেতে দিতে হবে।যখন চাইব তখনই চুমু খাবো কিছু বলতে পারবে না।রাজি?

উনার কথা শুনে চোখ বড় বড় হয়ে গেলো আমার।বিস্ফোরিত নয়নে তাকালাম তার দিকে।এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে আবার বললেন-‘রাজি থাকলে বলো নাহলে সময় নষ্ট করে লাভ নেই।আমার হাত রেডি থাকে সবসময়।

-‘কি সব বলছেন আপনি?আমি পারবো না।

-‘বললামই তো(হাত দেখিয়ে)।

পরেরটা পরে দেখা যাবে নূর এখন আগে বেঁচে ফিরি তারপর দেখে নিস তাকে।কাঁদো কাঁদো ফেস করে বললাম -‘ঠিক আছে রাজি আমি😒।

-‘That’s like my wife.এই বলে পরপর তিনটা চুমু খেলেন গালে।ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে গেলাম আমি। কিছু বলবো ততক্ষণে উনি আমাকে ছেড়ে উনার চেয়ারে বসে পড়েছেন।

-‘এটা কি করলেন?

উনি ঘা ছাড়া ভাব নিয়ে বললেন-‘কই কি করলাম?

-‘কিছু করেননি?

-‘না তো।বলো কি করেছি।

-‘কিছুনা।বাসায় যাবো আমি।এখানে নিয়ে এসেছেন কেন?

-‘আমার কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত এখানেই থাকতে হবে।ওয়াশরুমে যেয়ে ফ্রেশ হয়ে আসো আমি খাবার অর্ডার দিচ্ছি।No more arguments.Go!

মুখ ভেঙচিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো নূর।
.
.
ল্যাপ্টপে কাজ করছে কাব্য। আর সোফায় বসে চিপস খাচ্ছে নূর।বাসায় যাব কখন জিজ্ঞেস করতে করতে কানের বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছিলো নূর তাই মুখ বন্ধ করার জন্যই চিপস অফার করা।এখন শান্তিতে কাজ করতে পারছে কাব্য।ল্যাপ্টপ থেকে চোখ সরিয়ে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল পাঁচটা বেজে গেছে।টেবিলের কাগজপত্র গুছিয়ে ফোন পকেটে পুড়ে নূরের উদ্দেশ্য বললো -‘নূর চলো।

-‘হ্যা চলুন।
.
.
গাড়িতে বসে পাশের সিটে ঘুমন্ত নূরের দিকে তাকিয়ে আছে কাব্য। মেয়েটার মধ্যে অদ্ভুত রকমের নেশা আছে যে নেশায় সে দিনকে দিন আসক্ত হয়ে যাচ্ছে।এই যে হুটহাট তার কাছে আসাটাও সে তার নিজের অজান্তেই এসে পড়ে।যদিও তার ওপর পুরো অধিকার আছে তবুও।তবে তার মায়ায় পড়াটাতো স্বাভাবিক কারণ সে তার বিবাহিতা স্ত্রী।কথাগুলো ভেবেই মুচকি হাসলো কাব্য।গাড়ি থেকে বের হয়ে নূরের পাশের দরজা খুলে তাকে কোলে নিয়ে বাড়ির ভেতরে ঢুকলো কাব্য।

চলবে……ইনশাআল্লাহ।