অবহেলার সংসার পর্ব-১৩ এবং শেষ পর্ব

0
5144

#অবহেলার_সংসার
#IH_Iman_Haque
#পর্ব_শেষ

আপনি বিছানার মধ‍্যে উঠতেছেন কেনো।

বিছানার মধ‍্যে না উঠলে ঘুমাবো কেমন করে আমি।(বাহির থেকে মনির সাথে ফোনে কথা বলে রুমে এসে দেখি জান্নাতুন পুরো বিছানা দকল করে শুয়ে আছে।আমি যেমনি বিছানায় শুয়ার জন‍্য বিছানায় উঠবো তাতে বলতেছে)

এখনি আপনি বিছানা থেকে নামুন বলতেছি,

আরে তুমি এমন করতেছো কেনো এমনিতে অনেক রাত হয়েছে সকালে আবার অফিসে যেথে হবে।

এমন করতেছি কারন আপনি বিছানায় ঘুমাতে পারবেন না আমার সাথে।

তাহলে আমি কই ঘুমাবো।

কই মানে ওই যে সোফা দেখতেছেন না আপনি ওখানে গিয়ে ঘুমান।

আরে তুমি তো ভালো করে জানোই আমি সোফাই ঘুমাতে পাড়ি না তাও কেনো সোফায় ঘুমাতে বলতেছো।

জানি দেখে তো বলতেছি।তাই ভালোই ভালো সোফাই গিয়ে সুয়ে পড়ুন।আপনি তিন মাস আমার সাথে এক বিছানায় শুতে পারবেন না।

জান্নাতুন এটা কিন্তু শর্ত মধ‍্যে ছিলো না যে,আমি বিছানার মধ‍্যে তোমার সাথে শুতে পারবো না।

আগে ছিলো না এখন মনে পড়ছে দেখে বললাম।এখন ভালো লক্ষী ছেলের মতো এই বালিস-কম্বল নিয়ে সোফাই গিয়ে সুয়ে পড়ুন।

এটা কিন্তু আমার উপরে বেবিচার হচ্ছে ।

আপনার জন‍্যই এটাই সুবিচার।

ঠিক আছে।কি আর করার বউ এর কথা শুনতেই তো হবে?আমি বালিস আর কম্বল নিয়ে সোফাই গিয়ে বসলাম।এখন বালিস আর কম্বলেই আমার জীবন সঙ্গী।

ও আর একটা কথা,

আবার কি হলো,বলো কি কথা?

আজকে রাত থেকে দিন গুনা শুরু।ঠিক তিন মাস দেখবো যদি ভালো হন তাহলে স্বামী হিসাবে মেনে নিবো আর না হলে বুঝতেই পারতেছেন।আর যেগুলো শর্ত দিয়েছি সব গুলো মনে আছে তো।

হুম অক্ষরে অক্ষরে মনে আছে।

হুম মনে থাকলেই ভালো।গুট নাই আল্লাহ্ হাফেজ।

গুট নাইট।তারপর আমিও সোফায় সুয়ে পড়লাম।কম্বটা পা থেকে কোমর থেকে ঢেকে দিলাম যেনো মোশা ডিস্টাব করতে না পারে।ফোনটাতে আবার এলার্ম দিয়ে রাখতে হবে না হলে ফজরে নামাজ পড়তে পারবো না।আর প্রথম শর্ত ছিলো পাঁচওয়াক্ত নামাজ পড়া তাই এটা কখনো মিচ করা যাবে না।তাই আমি ফোনে ভোর 4:50 এর এলার্ম দিয়ে দিলাম।তারপর ফোনটা পাশে রেখে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছি কখন যে ঘুমাই গেছি বুঝতে পারি নাই।হঠাৎ করে এলার্ম এর শব্দ শুনে ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো।ঘুম ঘুম চোখে ফোনটা হাতে নিয়ে এলার্মটা বন্ধ করে দিলাম।এলার্ম বন্ধ করে দিয়ে আবার চোখ দুটো বন্ধ করে সুয়ে আছি।হঠাৎ করে মনে হলো আমাকে মসজিদে যেথে হবে নামাজ পড়তে তাই ধরফর করে সোফা থেকে উঠে ফোনটা হতে নিয়ে দেখি 5 টা বাজতেছে।আর দেড়ি না করে সোজা ওজু করতে বাথরুমে চলে গেলাম।ওজু করে এসে পান্জাবিটা পড়ে টুপি মাথায় দিয়ে মসজিদে যাওয়ার জন‍্য হাটা শুরু করলাম।কতো দিন পরে পান্জাবি -টুপি পড়ে নামাজ পড়তে যাচ্ছি মসজিদে নিজেই জানি ।

ঘুম থেকে উঠে প্রথমে সোফায় চোখ দুটো গেলো আমার কিন্তু সোফার মধ‍্যে কেউ নেই কালকে রাতে তোও নি ঘুমিয়েছিলেন তাহলে ওনি কই গেলেন।রাগ করে কোথাও চলে গেলো না তো রাতে।ধূর আমি কেনো এতো টেনশন করতেছি ওনি কই যায় যাগ আমার কি বাসা ছেড়ে কই যাবে পালালেও আবার এই বাসাতেই ফিরে আসতে হবেই।যাই ফজরের নামাজটা পড়তে যাই।ওজু করে এসে নামাজ পড়ে নিলাম।তারপর রুম থেকে বাহির হয়ে দেখি চারিদিকে ফটফটা হচ্ছে।অন্ধকার থেকে আলোই পরিনত হচ্ছে।ফজরের নামাজ পড়ার পরে আল্লাহ্ বান্দার জন‍্য এতো সুন্দর একটা আবহাওয়া দিয়েছে শুধু তারাই উপভোগ করতে পারে যারা ফজরের নামাজ পড়ে।শান্তীময় আবহাওয়া মন প্রান জুরে যায়।সকালের পরিবেশটাও আমার অনেক সুন্দর লাগে তাই আমি প্রতিদিন ফজরের নামাজ পড়ে বেকোণিতে এসে সুন্দর সকালটা উপভোগ করি।দেখতে দেখতে চারিদিকে আলো ময় হয়ে গেলো।তাই বেকোণিতে না থেকে নিচে আসতেছি নাস্তা তৈরি করতে।নিচে এসে দেখি আমার শাশুড়ি মা আমার আগে রান্না ঘরে এসেছে।তাই আমিও রান্না ঘরে গেলাম,

বউ মা তুমি এসেছো।

হুম মা।

তাহলে আমার কাজে একটু সাহায্য করো।

ওকে মা।তারপর আমি আমার শাশুড়ি মাকে রান্নার কাজে সাহায্য করতেছি।একে একে সব রান্নার কাজ শেষ হলো।

বউমা আমার ছেলে কই এখনো নিচে আসতেছে না কেনো আর হলে তো সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে নাস্তা চাইতো কিন্তু এখনো আসতেছে না কেনো ও কি অসুস্হ নাকি?

এই এখন মাকে কি বলি সত‍্যটা বলবো নাকি বলবো না আবার ভয় ও করতেছে?না পরে যা হবে দেখা যাবে সত‍্যটা বলি তাহলে,
অসুস্হ হবে কেনো মা ওনি তো সুস্হ কিন্তু,

কিন্তু কি বউ মা?

কালকে রাতে আমরা দুইজনে এক সাথে ঘুমিয়েছিলাম কিন্তু ফজরে নামাজ পড়তে উঠে দেখি আপনার ছেলে রুমের ভিতরে নাই।

কি বলো বউ মা আমার ছেলে কই গেলো তাহলে?তোমরা রাতে ঝগড়া করছো নাকি,

কে কার সাথে ঝগড়া করছে মা,

আমি আর মা এই কথা শুনে দরজার সামনে দেখে অবাক কারন ঈমান পান্জাবি আর টুপি পরে দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে।আমি এই অবস্হায় ওনাকে দেখে একবারে বিদ‍্যুৎ এর শক খাওয়ার মতো অবস্হা।

বউ মা আমি যা দেখতেছি তুমিও কি তাই দেখতেছো?

হুম মা আপনিও যা দেখছেন তাই আমিও দেখতেছি।

আচ্ছা তোমরা আমাকে এমন ভাবে দেখতেছো কেনো।আর মা তুমি কি নিজের ছেলেকে দেখেও চিনতে পারতেছো না?

আচ্ছা আমি কি দিনের বেলা স্বপ্ন দেখতেছি নাকি বউ মা আমাকে একটু চিমটি কাটো তো যে ছেলে আমার শুক্রবারের মসজিদে যায় না সে আবার সকালে উঠের পান্জাবি আর পুটি পড়ে সকালে উঠে বাহিরে গিয়েছে।

হয়েছে মা আর নাটক করতে হবে না খুদা লাগছে খেতে দাও।সব সময় মানুষ এক থাকে না।

আচ্ছা বাবা তুই আগে আমাকে বল তুই এগুলো পড়ে কই গিয়েছিলি।

কই যাবো আবার মসজিদে গিয়েছিলাম নামাজ পড়তে।

আলহামদুলিল্লাহ্ তুই যে ভালোর পথে পা বাড়িয়েছিস এটাই অনেক।

ভাইয়া তুই এতো চেন্জ হলি কেমন করে।যেখানে মা -বাবা তোকে নামাজ পড়তে হাজার বার বলেছে তাও মসজিদে নামাজ পড়তে যাস নাই কিন্ত আজকে ঠিক নামাজ পড়তে গেছিস।

সবেই তো ভাবি জন‍্য।আজকে থেকে আর কোন অন‍্যায় কাজ করবো না সব সময় ভালো কাজ করার চেষ্ট করবো।সব সময় মানুষ কি খারাপ থাকে নাকি,আমিও অনেক পাপ করেছি তাই এখন আল্লাহ্ কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।

তুই যে ভালো হয়েছিস এটাই আমাদের জন‍্য অনেক আর ভাবি তোমাকে অসংখ্যা ধন‍্যবাদ তোমার স্বামী কে ভালো পথে আনার জন‍্য।

হয়েছে এখন ধন‍্যবাদ দিতে হবে না, এখন সবাই খেতে বসো।

ঠিক বলেছো ভাবি আমারো খুদা লেগেছে।

তাহলে বসে পড়ো সবাই।

তারপর সবাই এক সাথে নাস্তা করলাম।নাস্তা করে যে যার কাজে চলে গেলেন।শুধু বাসায় পড়ে রইলাম আমি আর আমার শাশুড়িমা ।

দেখতে দেখতে তিন মাস পূরন হলো আজকে।তাই অফিস থেকে বাসায় যাচ্ছি।অবস‍্য প্রতিদিন যে টাইমে অফিস থেকে যাই সেই টাইমে যাচ্ছি বাসায়।আমাকে যা যা শর্ত দিয়েছিলো তা সব শর্ত পালন করেছি।সবচেয়ে কষ্ট কর শর্ত ছিলো জান্নাতুন এর সাথে কথা বলতে না পারায়।আমি আর আগে ঈমান নাই,আমাকে ভালো পথ দেখিয়েছে আমার বউ।আমি দোয়া করি আল্লাহ্ যেনো প্রত‍্যেক ঘরে ঘরে এমন বউ দেয় যেনো স্বামীকে খারাপ পথ থেকে ফিরিয়ে এনে ভালো পথে আনে, স্বামী খারাপ শুনে ছেড়ে না দিয়ে।বাসায় চলে আসলাম।বাসার ভিতরে ঢুকে চারদিকে জান্নাতুনকে খুজতেছি কোথাও পাচ্ছি না হঠাৎ করে ভয় হতে শুরু করলো তাহলে কি আমাকে ছেড়ে চলে গেলো?না ও আমাকে কখনো ছেড়ে যেথে পারে না আমি দৌড়িয়ে রুমে ভিতরে ঢুকে অবাক কারন রুমের ভিতরে ঢুকে দেখি আমার বউ সেই তিনমাস আগে দেওয়া নীল শাড়ি পড়ে নতুন বউ এর মতো বিছানার উপরে বড় ঘোমটা দিয়ে বসে আছে।
আমি কাছে গিয়ে বলতেছি,

আমি কি আজকে কথা বলতে পারি তোমার সাথে আজকে তো তিন মান পূর্ণ হলো আর আমাকে ক্ষমা করেছো তো?

এক সাথে এতো প্রশ্ন করলে কোনটা ছেড়ে কোনটার উত্তর দিবো।

ঠিক আছে আগে বলো আমাকে ক্ষমা করছো।

হুম করতে পারি এক শর্তে,

আবার শর্ত আচ্ছা বলো দোষ যখন করেছি তখন তো মানতেই হবে,

শর্ত হচ্ছে আমাকে মন প্রান দিয়ে ভালোবাসতে হবে আর কখনো আমাকে কষ্ট দিবেন না বা কখনো ছেড়ে যাবেন না।তাহলে আপনাকে ক্ষমা করতে পারি।

ওকে কথা দিলাম আর কখনো তোমাকে কষ্ট পেতে দিবো না।আমার মনের ভিতরে তোমাকে পুতুলের মতো যত্ন করে রাখবো।আচ্ছা একটা কথা বলি,

হুম বলো,

আমি কি তোমার ঘোমটাটা তুলতে পাড়ি?

আপনার বউ আপনি কি করবেন সেটা আপনি যানেন?

ঠিক আছে আমার যখন বউ তখন আমার ইচ্ছা।তারপর আমি ঘোমটাটা তুলে চাঁদের মতো সুন্দর মুখ খানা দেখে বউ এর উপরে ক্রাস খাইলাম।মাস্আল্লাহ্ আমার বউ তো চাঁদের চেয়ে অনেক সুন্দর।

এমন করে বলিয়েন না আমার বুঝি শরম লাগে না।

বউ শুনো না চলো আমরা আবার নতুন করে সংসার শুরু করি আগে কথা ভূলে গিয়ে।

আমি তো এটাই চাই।

তাহলে হয়ে যাগ নতুন করে বাসর করা।নতুন করে যখন সংসার শুরু করতেছি ।

আপনার মুখে কোন কিছু আটকায় না।পাঠকরা শুনতেছে যে আমার লজ্জা করতেছে ।

এই যে পাঠক বন্ধুরা আপনারা একটু চোখ কান বন্ধ রাখুন আমাকে আগে শুভ কাজটা একটু করতে দিন আপনাদের জন‍্য আমার বউ লজ্জা পাচ্ছে।তারপর সবেই ইতিহাস।