অবাধ্য বাঁধনে পর্ব-১৩+১৪

0
232

#অবাধ্য_বাঁধনে
#পলি_আনান
[পর্ব সংখ্যা ১৩]
___________________
সকালে ঘুম থেকে কার মুখ দেখে উঠেছিল সেটা ভেবে অস্থির অনু।না জানি কার চাঁদবদন মুখখানি দেখে তার জীবনে শনির আগমন ঘটেছে।কুরিয়ার থেকে কল আসায় পার্সেল আনতে কুরিয়ারে যাচ্ছিলো অনু।বিকাল বেলায় ঈশার টিউশনি থাকে তাই পার্সেলের উদ্দেশ্যে একাই বেরিয়েছিল সে।রাস্তার অর্ধেকটা যেতে পথ আটকে দাঁড়ায় কয়েকজন লোক।তাদের পরনে ছিল কালো স্যুট সাদা শার্ট।দলের যে প্রধান তার পকেটে একটা পিস্তল সাদৃশ্যমান।আর তা দেখে ভয়ে আত্মা উড়ে যাওয়ার অবস্থা অনুর।লোক গুলোর ভাব গম্ভীরতা দেখে অনু বুঝে নিয়েছে এরা ঈশানের লোক।তাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তির মাঝে একজন কাউকে ফোন করে তাদের অবস্থান বলছিলো অপরদিকে অনুর কাচুমাচু মুখ দেখে দলের প্রধান বলে,

” ভয় পাবেন না মেম।আমাদের ঈশান স্যার পাঠিয়েছেন।স্যার শুধু আপনার সাথে কিছু কথা বলতে চায়।”

” আমার সাথে তার কী কথা?”

” সে সব আমরা জানি না মেম।”

অনুর গলাটা শুকিয়ে এলো।ঈশান শাহরিয়ার বড্ড ডেঞ্জারাস লোক তার চোখে পড়া মানে সহজ সরল আনন্দের জীবনটাকে আতঙ্কের খাতায় নাম দেওয়া।লোকগুলো চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে কারো মুখে রা নেই।আশেপাশে খুব বেশি পথচারী মানুষের বালাই নেই।রাস্তাটা নিরিবিলি।কয়েকটা গাড়ি ছুটে চলছে তার গতিতে।কিছুক্ষণ পরপর আসা রিক্সাওয়ালারা অনুর দিকে তাকিয়ে আছে অবাক চোখে।দূর থেকে কালো গাড়িটা দেখে অনু নিশ্চিত হয় এটা ঈশানের গাড়ি।
ঈশান গাড়ি থেকে নেমে গার্ডদের সরে যেতে বলে।অনু বেচারি ঘেমে একাকার।ঈশানকে দেখে বোঝাই যাচ্ছে সে অফিস থেকে এখানে এসেছে।

” তোমাকে এখানে দাঁড় করিয়ে রেখেছি বলে দুঃখিত।”

দুঃখিত!ঈশানের মুখ এই শব্দটা ঠিক হজম করতে পারলো না অনু।ছেলেটা এতো বিনয়ী হয়ে কথা কেন বলছে তার সাথে?”

” কি বলবেন বলুন।”

” কোথাও বসে কথা বলা যাক।”

” আমার তাড়া আছে আপনি এখানেই বলুন।”

” রাসেলের সাথে তোমার কী সম্পর্ক?”

সহসা অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো অনু।এমন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে স্বপ্নেও ভাবেনি সে।

” আমার সাথে রাসেলের কোন সম্পর্ক নেই।”

” সত্যি বলছো?”

” মিথ্যা বলবো কেন?”

ঈশান সরু চোখে তাকালো অনুর দিকে।মেয়েটা ভয়ে কুঁকড়ে যাচ্ছে অথচ মিথ্যা বলতে একবারেও কলিজায় লাগলো না?

” অনু আমি জানি তোমাদের মাঝে কিছুতো চলছে।যদি আমার ধারণা ঠিক হয় তাহলে.. ”

” আপনি উলটা পালটা ভেবে নিলে তো আর হবে না।আমার আর রাসেলের মাঝে কোন সম্পর্ক নেই।ঈশার গলায় আঘাত লাগলে তখন তিনি আমার নাম্বার নিয়েছিলেন।ব্যস এইটুকুই আমাদের মাঝে আর কোন যোগাযোগ নেই।”

ঈশানের রাগটা ধীরে ধীরে বাড়ছে। তার সম্মুখে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিটি দ্বিধাহীন একের পর এক মিথ্যা বলছে অথচ সত্যিটা সে জানে।ঈশান নিজের ধৈর্যের তারিফ করলো।অনুর পরিবর্তে যদি এতক্ষণ অন্য কেউ হতো তাহলে তো হয়েই যেতো।রাসেল নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখলো।সোজাসাপটা বললো,

” শেষ বারের মতো জানতে চাই রাসেলের সাথে তোমার কী সম্পর্ক?”

” আর কয়…”

অনুর কথার মাঝে একটা কার থেকে ড্রাইভিং সিটে বসা লোকটি ইচ্ছাকৃত গাল ভরতি থুথু ছুড়ে জানলার বাইরে ছুড়ে। আর সেই থুথু ঈশানের পায়ের কাছে পড়ার আগে ছিটকে সরে যায় সে।পাশে দাঁড়িয়ে থাকা গার্ডরা দ্রুত সেই গাড়ি আটকে ধরে।ড্রাইভারের কাজটা ঈশানের সম্মানে আঘাত লেগেছে।তাইতো নিজের রাগকে কন্ট্রোল করতে বরাবরের মতো হিমশিম খেতে হচ্ছে তাকে।একজন গার্ড দরজা খুলে লোকটাকে টেনে হিচড়ে বের করে ঈশানের পায়ের কাছে ছুড়ে ফেলে ঈশান হাটু মুড়ে বসে পড়ে লোকটার সম্মুখে।

” কার সাথে বেয়াদবি করিস?এত সাহস।”

” মাফ করুন স্যার আর হবে না।”

” তুই কার হাতে পড়েছিস ধারণা করতে পারছিস না।পরবর্তীতে তোর মুখে থুথু আসার আগেই গিলে ফেলবি।”

ঈশান উঠে দাঁড়ালো একজন গার্ড এগিয়ে এসে হাতে জ্বলন্ত সিগারেটটা লোকটার ঠোঁটে চেপে ধরলো।সবটা নিজের চোখে দেখে জান যায় যায় অবস্থা অনুর।ঈশান পুণরায় অনুর মুখোমুখি দাঁড়ালো এবং শান্ত সুরে বলে,

” কি বলছিলে যেন?”

অনু মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলো সত্যটা প্রকাশ করবে।ঈশান নিশ্চয়ই কোন সংকেত পেয়েছে আর সেই কারণে তার কাছে জানতে চেয়েছে।যদি সে মিথ্যা বলে তার অবস্থা যে ড্রাইভারের মতো হবে না তার কি গ্যারান্টি?

” রাসেলের সাথে আমার সম্পর্ক বেশ কয়েক মাস যাবৎ।আমাদের পরিচয় ফেসবুকে।আমরা দুজনে বন্ধুর মতো তবে রাসেলের দিক থেকে এর চেয়েও বেশি আশা করি আপনি বুঝতে পারছেন।”

” হুম বুঝলাম।আমি যে তোমার কাছে এসব জানতে চেয়েছি তুমি কী তা রাসেলকে বলবে?”

” এ..একদমি না।কোনদিন না আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন।”

” গুড গার্ল।তুমি খুব ব্রিলিয়ান্ট খুঁকি।আজ আসি আবার হয়তো দেখা হবে।”

২৬.
অনুর সাথে দেখা করে পুণরায় অফিস ফিরলো ঈশান।ক্লান্ত দেহটা ছেড়ে দিলো চেয়ারে তার পিছন পিছন কেভিনে প্রবেশ করে রাসেল।ঈশান হঠাৎ কোথায় ছুটে গেল সেটাই জানতে চাইছে সে।কিন্তু ঈশান নাছোড়বান্দা লোক সে কিছুতেই তার মুখ থেকে সত্যি প্রকাশ করবে না।ব্যর্থ হয়ে রাসেল বসে পড়লো ঈশানের পাশে।হাতে থাকা ফোনটা স্ক্রুল করতে করতে ঈশার দেওয়া সাম্প্রতিক পোস্ট তার নজরে আসে।ঈশা একটা ছবি পোস্ট করেছে। যে ছবিতে শাড়ি পরা ঈশার হাস্যজ্বল মুখ সাদৃশ্যমান।রাসেল বুকের বাম কোনে হাত ঠেকালো মোবাইলটা চোখের কাছে নিয়ে ঈশানকে উদ্দেশ্য করে বলে,

” এভাবে চলতে থাকলে একদিন হার্ট এটাক হয়ে যাবেরে।”

” মানে?”

” দেখ।”

রাসেল ফোনটা এগিয়ে দিলো ঈশানের কাছে।ঈশান ঈশার ছবিটা দেখে নিজেও ঘাবড়ে গেল।আকাশী রঙা শাড়িতে মেয়েটা একটু বেশি সুন্দর লাগছে।মাথার উপর নীল আকাশটা যেন শাড়ির সাথে মিশে গেছে।
গলার টাইটা হাতের সাহায্যে টেনে দিলো ঈশান তার বড্ড হাঁশফাঁশ লাগছে।ঈশার ছবি দেখে এত ঘাবড়ে যাওয়ার কি আছে অদ্ভুত।

” তুই নাটক করছিস কেন রাসেল?”

” আমি নাটক করছি?”

” তুই ঈশাকে সত্যি ভালোবাসিস?আমার তো মনে হয় না।তুই কি অন্য কাউকে ভালোবাসিস?”

ঘাবড়ে গেল রাসেল।টেবিলে থাকা পানির গ্লাসটা নিয়ে ঢকঢক শব্দে দ্রুত শেষ করলো পানি।নিজেকে ঝেরে কেশে স্থির হয়ে বলে,

” শুন ধরে নে আমি দুই চারখানা প্রেম করছি।তবে বিয়ে ঈশাকেই করবো আন্টির পছন্দের মেয়ে বলে কথা।”

” তুই মায়ের কথায় বিয়ে করতে চাইছিস?তুই ঈশাকে বিয়ে করতে না চাইলে আমায় বল আমি মাকে সামলে নিব তুই..”

” তুই বেশি ভাবছিস ঈশান।আমি রাজি আছি।তুই বরং আন্টিকে যত দ্রুত সম্ভব দেশে আসতে বল।”

রাসেল বেরিয়ে গেল।ঈশানের রাগ লাগলো নিজের উপর।এই ছেলেটা চাইছে কী?অনুর সাথে প্রেম ঈশার সাথে বিয়ে এমন মানুষ তো রাসেল নয়।এমন উদ্ভট রাসেলকে ঈশান চেনে না আর চিনতেও চায় না।

২৭.
টিউশনি থেকে এক সাপ্তাহের ছুটি পেলো ঈশা।আর সেই সুযোগটা কাজে লাগালো সে।হাসিন এসেছে বেশ কিছুক্ষণ হলো আজকে ঈশাকে নিয়ে যাবে বলে অপেক্ষা করছে।ঈশা ব্যাগপত্র গুছিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত।তখনি ঈশাদের বাসায় আসে অনু।

” ঈশুরে আমিও রেডি।উফফ কতদিন পর তোর ফুফির বাড়ি যাব।”

” হাসিন ভাই অপেক্ষা করছে এবার চল।”

ঈশা অনু দুজনে বেরিয়ে পড়লো।মুজাহিদ হাসান তাদের যাওয়ার সুবিধার জন্য একটা সিএনজি ভাড়া করলেন।
.
মধ্যরাতে অফিসের ফাইলগুলো পুনরায় চেক করছিলো ঈশান।তার পাশে বসে রাসেল টুকটাক কাজ সারছে।তাদের আগামীকাল সকালে গুরুত্বপূর্ণ মিটিং আছে তাই তো নিজেদের সর্বোচ্চটা দিয়ে প্রস্তুত হচ্ছে।সেন্টার টেবিলে থাকা ফোনটা বেজে উঠতে মনোযোগ ভঙ্গ হলো ঈশানের।দ্রুত হাতে ফোন ধরে “Ma” নামটি দেখে হাসিমুখে রিসিভ করে।

” হ্যাঁ মা বলো।”

” জেগে ছিলি?”

” হুম অফিসের কাজ করছিলাম।”

” আমি দেশে আসছি ঈশান।”

মায়ের কথা শুনে স্তব্ধ ঈশান।কত বছর পরে মা আসবে তার কাছে আসবে এ আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করার মতো না।বুকের ভেতরে থাকা হাহাকার এবার ঘুচবে তবে।

” কবে আসবে মা?এই দিনের অপেক্ষায় আমি কত বছর যে প্রহর গুনছি।”

” তোর বাবা অনুমতি দিয়েছে শীঘ্রই আসবো বাবা।তোকেও তোর হাতের কাজ খুব শীঘ্রই সারতে হবে।ঈশার পরিবার রাজি থাকলে বিয়েটা খুব দ্রুত সারতে চাই।”

” অবশ্যই মা রাসেলের বিয়ে তো ঈশার সাথেই হবে।তুমি কোন চিন্তা করো না আমি আমার দিক থেকে সব ব্যবস্থা করে রাখবো।”

হাতের কলমটা রেখে ঈশানের কাছে বসলো রাসেল।ঈশার সাথে বিয়ে মানে?সে এখন বিয়ে করতে চায় না তাছাড়া ঈশা কে তো কখনোই না।

ঈশান কান থেকে ফোন সরাতে রাসেল অস্থির হয়ে বলে,

” ঈশান কিসের বিয়ে আন্টি কি বলছে?”

” তোর বিয়ের কথা বলেছে।”

” কখনো না।আমি এখন বিয়ে করবো না।”

” কেন করবি না?”

” ঈশান তোকে একটা সিরিয়াস কথা বলছি আমি ঈশাকে বিয়ে করতে পারবো না।”

” কেন পারবি না?এতদিন আমার ভাবী ভাবী বলে কানের পর্দা ফাটিয়েছিস এখন বিয়ে করবি না মানে?”

” আমি অন্য কাউকে পছন্দ করি।প্লিজ ঈশান তুই বোঝার চেষ্টা কর।তুই ঈশার পেছনে পড়ে ছিলি তাই না পেরে আমি ঈশাকে তোর হাত থেকে বাঁচাতে এসব বলেছি।কারন আমি জানি তুই কখনো আমার ওয়াইফের সাথে বাজে ব্যবহার করবি না।আর আন্টিকে তুই বুঝিয়ে বলিস আমি বললে নিশ্চয়ই মনে কষ্ট পাবেন।”

“তাহলে ঈশার প্রতি তোর কোন ফিলিংস নেই?”

” আরে ভাই নারে।”

রাসেল উত্তেজিত হয়ে পড়লো।ছেলেটা একটু একটু ঘামছে ঈশান রাসেলকে জব্দ করতে পেরে বেশ খুশি।

” ঠিক আছে এরপর থেকে ঈশার সাথে যা যা হবে তাতে তোর কোন মতামত আমি গ্রহণ করবো না রাসেল।”

” যা যা হবে মানে?কি বলতে চাস তুই?”

” আমি আর কি বলবো।কথা তো সময় বলে।সময়ের অদলবদলে সব পাল্টে যায় হোক সেটা বন্ধু কিংবা শত্রু।”
#চলবে___

#অবাধ্য_বাঁধনে
#পলি_আনান
[পর্ব সংখ্যা ১৪]
______________________
২৮.
পা দুটো জলে ভিজিয়ে বসে আছে ঈশা।মৃদু বাতাসে তোলা স্রোত তার পায়ে এসে বারি লাগছে।ডান হাতটা জলে চুবিয়ে ঘাড় ঘুরালো সে।বেশ কয়েকটা সিড়ি দূরে বসে আছে অনু।মেয়েটা পুকুর,দেখলে বড্ড ভয় পায়।তাই নিজেকে যতটা দূরে রাখা যায় রেখেছে সে।ঈশার পেছনে বসে রিয়াদ নারিকেল পাতার ঘড়ি বানিয়ে ঈশার হাতে পরিয়ে দিল।সেই ঘড়ি উলটে পালটে দেখছে মেয়েটা।সেই ছোট্ট বেলার স্মৃতি স্মরণে এলো এই মুহুর্তে।নারিকেল পাতার ঘড়ি একটা সময় সে নিজেও তৈরি করেছে এখন তো এসব করা ভুলেও গেছে।অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া রিয়াদ তাড়া দিলো ঈশাকে।

” এবার উঠে পড়ো আপু।বেশিক্ষণ থাকলে তোমার ঠান্ডা লাগবে।”

ঈশা মিষ্টি হাসলো।মাথা দুলিয়ে বলে,

” লাগবে না।”

” তুমি বললে তো হবে না।আন্টি জানলে আমায় বকবে।হাসিন ভাই শুনলে তো কান মলা খাবো।ওরে বাবা রে আপনি উঠেন আপু।”

” হাসিন ভাইকে ভয় পাও?”

” পাই মানে একটু বেশি পাই।উনি যখন ছুটিতে আসেন তখন আমি বাসা থেকেও বের হই না। রাস্তায় দেখলেই পড়া ধরেন এটা ওটার কৈফিয়ত চান।উনি একটু বেশি রাগী।”

ঈশা হাসলো।হাসিনদের তৃতীয় তলায় রিয়াদ’রা ভাড়া থাকেন।বেশ কয়েক বছর যাবৎ রিয়াদরা এখানে আছেন যার ফলে হাসিনদের সাথে তাদের সম্পর্কটা একটু বেশি ভালো।ফুফুদের বাড়ি এসে শুয়ে বসে থাকার কোন মানে নেই।তাই আশপাশটা ঘুরতে বের হয়েছে ঈশা অনু।তাদের সৈন্য হিসেবে উপস্থিত রিয়াদ।ছেলেটাকে হাসিন বারবার করে বলে দিয়েছে সে যেন তাদের খেয়াল রাখে বেশি দূরে না যায় সেই দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট সে।

ঈশা উঠে দাঁড়ালো মাথায় উড়না টেনে হাটা ধরলো কংকর ঢালা রাস্তায়।এদিকটা একটু বেশি নিরিবিলি।আশেপাশে কিছু মহিলাকে দেখা যাচ্ছে তারা বাড়ির গেট থেকে সন্দিহান দৃষ্টিতে ঈশা অনুর দিকে তাকিয়ে উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে।

” রিয়াদ আমরা কি এভাবে হাঁটতেই থাকবো?আমাদের আর কোথাও নিয়ে যাও।”

অনুর কথায় রিয়াদ উৎসুক চোখে তাকালো তার দিকে।বেশ আগ্রহ নিয়ে অনুকে বলে,

” আপু ,মনির মামার ফুসকা খাবে?আমাদের এলাকার বেস্ট ফুসকা।”

” সেটা কোথায়?”

” এই তো সামনে।”

ঈশা অনু বেশ আগ্রহ নিয়ে এগিয়ে গেল।ফুসকা দোকানে বেশকিছুটা ভিড় ছিল।ফুসকা খাওয়া শেষ করে রিয়াদ কে নিয়ে তারা বাড়ি ফেরার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে।রাস্তার পাশে থাকা আট তলা ভবনটা দিক তাকিয়ে রিয়াদ ঈশাকে উদ্দেশ্য করে বলে

” আপু এখানে যাবে?”

ঈশা মাথা তুলে ভবনটা পরখ করলো।

” এখানে তো কন্সট্রাকশন কাজ চলছে।”

” হুম তবে একমাস যাবৎ বন্ধ আছে।শুনেছি মালিক কাজ বন্ধ রেখেছেন।তুমি যাবে?এখান থেকে সূর্য ডোবা বেশ ভালো ভাবে দেখা যায়।”

” এখানে যাওয়া কি ঠিক হবে?বাজে ছেলেদের আড্ডা থাকতে পারে।”

“এখন থাকবে না আপু।এখানে সিকিউরিটি গার্ড আছে।”

” তারপরেও আমার ভয় লাগছে।ভেবে দেখো রিয়াদ আমরা একা দুজন মেয়ে।”

রিয়াদ মাথা নাড়ালো।সন্ধ্যা নামতে এখনো দেরি আছে।উচু ভবন থেকে সূর্য ডোবার মনোরঞ্জন দৃশ্য তাদের না দেখাতে পারলে বেচারা রিয়াদের শান্তি হবে না তাই চিন্তা ভাবনা মিলিয়ে একটা ফন্দি আঁটলো সে।

” আমার বন্ধুদের ডাকি?তারা থাকলে তোমাদের ভয় করবে না।”

” তারা কোথায় আছে?”

” পাশের মাঠে খেলছে।”

” কিন্তু আমরা যাবো কিভাবে?যদি সিকিউরিটি গার্ড দেখে ফেলে?”

” পেছনে জানলা আছে তবে জানলার গ্রিল নেই।জানলা বেয়ে লাফিয়ে নামবো পারবে না?”

” পারবো।”

ঈশা অনু দুজনে সম্মতি জানালো।রিয়াদ তার দুইজন বন্ধুকে ডেকে আনলো।অবাক করা বিষয় হলো আজ ভবনের নিচ তলায় কোন সিকিউরিটি গার্ড দেখা যায়নি।রিয়াদ প্রতিদিনের ন্যায় জানলা টপকে ভেতরে প্রবেশ করে।সব তালায় কাঠ,বাশ,তারকাঁটা ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল ঈশা অনু সাবধানে পা ফেলে এগিয়ে গেলো উপরের দিকে।ছাদে পৌঁছে একটা ইটের উপর দ্রুত বসে পড়ে ঈশা।তার পাশে বসে যায় অনু।

” উফফ অল্পের জন্য জান বেরিয়ে যায়নি।”

ঈশার কথায় হাঁপাতে হাঁপাতে হাসে অনু।

” পানি পেলে ভালো হতো।”

” এখানে পানি পাওয়া যাবে না।”

ক্লান্ত শরীরটা টেনে সামনে এগিয়ে গেলো দুজনে।যতটুকু দেখা যাচ্ছে চারিদিকে ঘন সবুজ।পাখিরা উড়ছে চারদিকে।সাদা সাদা বক ঝাকে ঝাকে ছুটে চলছে।সূর্যটার তেজ লোপ পেয়েছে।লাল কমলা রঙ ধারণ করে সে প্রস্তুত আড়াল হতে।ঈশা মুগ্ধ চোখে আকাশ দেখে।

” সূর্যটা কুসুমের মতো লাগছে।”

ছবি তোলার উদ্দেশ্যে অনু ব্যাগ থেকে ফোন বের করে।ঠিক সেই মুহুর্তে রিয়াদ এবং তার বন্ধুরা ভয়ার্ত চোখে ছুটে আসে ঈশার কাছে।

” আপু চলো এখানে থাকতে হবে না।”

” কেন?কি হয়েছে রিয়াদ?”

“এখানে খু ন হয়েছে আপু লোকটারে কেউ মারছে।”

” কোন লোক?”

আতঙ্কে রিয়াদ ঘামছে তার বন্ধুরা ইতোমধ্যে ছাদ ছেড়ে নিচে যাওয়ার জন্য পা বাড়িয়েছে।অনু ঈশার হাত ধরে এগিয়ে গেলো কিন্তু অনুর হাত ছাড়িয়ে দাঁড়ালো ঈশা।

” কিরে চল।”

” না এখানে কি হয়েছে দেখা দরকার।”

” এসব করার কোন প্রয়োজন নেই।তোকে যেতে বলছি চল।”

অনুর হাত ছাড়িয়ে নিলো ঈশা। রিয়াদের দেখানো পথে এগিয়ে গেলো সে।ছাদে শান বাঁধানো ট্যাংকের পেছনে একটি লোক উপড় হয়ে পড়ে আছে।লোকটার গায়ে সাদা শার্ট র ক্তে মাখামাখি।প্যান্ট এবং শার্ট কিছু অংশে ছেঁড়া।ঈশা এগিয়ে যেতে চাইলে অনু বাঁধা দিলো কিন্তু তার বাঁধা অগ্রাহ্য করে এগিয়ে গেলো ঈশা।লোকটার বাহুতে ধাক্কা দিতে কোন সাড়া শব্দ মিললো না।ঈশা ধীরে ধীরে অজ্ঞাত ব্যাক্তির মাথা উপর করলো।অজ্ঞাত ব্যক্তিকে চিনতে কয়েক সেকেন্ড সময় লাগলো ঈশা এবং অনুর।

” অনু এটা ঈশান।”

” উনি এখানে কি করছেন?এই অবস্থা কেন?”

অনুর তার প্রশ্নের জবাব পেলো না।ঈশা ঈশানের গালে হাত রেখে বার বার ডেকে চলেছে।রিয়াদ বুদ্ধি খাটিয়ে ছাদের কোনায় ভাঙা বালতিতে জমে থাকা পানি এনে দিলো ঈশাকে।সেই পানি ঈশানের মুখ ছিটিয়ে দিতে জ্ঞান ফিরলো তার।

রক্তাক্ত মুখে পিটপিট চোখে ঈশার দিকে তাকালো ঈশান।বিষাক্ত ব্যথায় শরীরটা অবশ হয়ে আছে। ঈশান উপর হতে চাইলে ঈশানের মাথা ঈশা তার কোলে নিয়ে নেয়।

” উট…কো ঝা ঝামেলা এখানে কি ক করছো?”

” আপনার এ হাল কেন সেটা বলুন?”

রক্তাক্ত দাঁতে হাসলো ঈশান।সেই হাসি দেখে গা গুলিয়ে এলো ঈশার।

অনু ঈশানের কাছ থেকে সরে দাঁড়ালো দ্রুত রাসেলকে ফোন করে জানিয়ে দিলো ঈশানের অবস্থান।রিয়াদ ছেলেটা ড্যাব ড্যাব চোখে তাকিয়ে রইলো ঈশানের দিকে।ঈশান ছেলেটার দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ।হঠাৎ কিছু মাথায় আসতে আতঙ্কে চোখ তুলে তাকালো ঈশান।দ্রুত হাতে আঁকড়ে ধরলো ঈশার দুই হাত।

” তুমি যাবে না, তোমাকে যেতে দিব না।ওরা মে রে ফেলবে তোমায়।”

” কে মা র বে?”

” ওরা।”

ঈশান এলোমেলো হাতে ঈশাকে আগলে নিতে চাইলো ঈশানের এতটা আগলে নেওয়া পছন্দ হলো না ঈশার।সে বার বার হাত ঠেলে সরিয়ে দিলো ঈশানকে।ঈশান রক্তাক্ত দাঁতে হাসলো।ঈশাকে ঈশারা করে বলে,

” তোমার সাথে কথা আছে কানে কানে।”

ঈশা ভাবলো হয়তো গুরুত্বপূর্ণ কিছু।ঈশানের মুখের কাছে কান বাড়াতে ঈশান তার ডান হাতের সাহায্যে চেপে ধরলো ঈশার মাথা এবং রক্তাক্ত ঠোঁটে ছুঁইয়ে দিলো ঈশার গাল।ঈশা অবাক হলো এমন সিরিয়াস মুহুর্তে ঈশান ফায়দা তুলছে।বড্ড রাগ লাগলো ঈশার, ত্বরান্বিত হাত তুলে ঈশানের গালে বসিয়ে দিলো এক চড়।চড়ের শব্দে পিছনে ফিরে তাকায় অনু অবাক চোখে চেয়ে থাকে ঈশানের দিকে।
ঈশানে গালে হাত বুলিয়ে হাসতে থাকে।ঈশা উঠে যেতে চাইলেও ঈশান তার হাত টেনে ধরে ঈশার হাতে ক্রমাগত ঠোঁট ছুঁইয়ে দেয়।ঈশার এই মুহুর্তে মনে হলো ঈশান উন্মাদ হয়ে গেছে এমন অদ্ভুত ব্যবহার সে কেন করছে?অনু দ্রুত ঈশাকে ছাড়িয়ে নিতে চাইলো কিন্তু ঈশান ছাড়লো না।সে ঈশার কোলে মাথা রেখে রাগি চোখে তাকালো অনুর দিকে।

” উটকো ঝামেলা নাম্বার ২ সরে যাও সামনে থেকে।”

অনু অবাক হলো এই ছেলে ম রার মাঝেও ত্যাড়ামি ছাড়ছে না।রিয়াদের সামনে লজ্জায় নুইয়ে গেল ঈশা।রিয়াদ নিশ্চয়ই বাড়ি ফিরে সব বলবে।ঈশা ঈশানকে ছাড়িয়ে উঠার চেষ্টা করলো তবে ঈশান বাঁধা দেওয়ায় খুব সুবিধা করতে পারলো না।তবুও নিজের জেদে অটল রইলো সে ঈশানের মাথা নামিয়ে উঠে দাঁড়াতে বাঁধলো আরেক বিপত্তি ঈশান উগরে ফেলে পেটের খাদ্যকণা।মাথায় হাত রেখে পাগলের মতো গোঙারাতে শুরু করে।ঈশান ঈশার কোল থেকে নিজের মাথা নামিয়ে মেঝেতে তড়পাতে থাকলো। ঈশা নিজের কোলের দিকে তাকাতে সারা শরীরে তার ঝলকানি দিয়ে যায়।সম্পূর্ব জামা রক্তে ভিজে আছে ঈশানের কি তবে মাথাও ফেটে গেছে।এই মুহুর্তে নিজেকে বড্ড একা লাগলো ঈশার।ঈশানকে ছুঁয়ে কেঁদে ফেললো মুহুর্তে।তীব্র যন্ত্রণায় মানুষটা কেমন ছটফট করছে।

২৯.

” বাড়ি ফিরে কী জবাব দিবি ঈশা?”

” জানি না।”

ঈশার শরীর কাঁপছে গলদেশ শুকিয়ে কাঠ।আতঙ্কে রিয়াদের মুখ পাংশুটে বর্ণ ধারণ করেছে।ইতিউতি ভেবে শব্দ করে শ্বাস ছাড়লো অনু।বাসার সামনে রিক্সা থামতে দম বন্ধ হয়ে এলো ঈশার।জামায় রক্তের দাগ দেখে নিশ্চয়ই ফুফু আতিয়া হাজার খানেক প্রশ্ন তুলে ধরবেন তার সামনে।কিন্তু এর উত্তর কী হবে?উড়নার সাহায্যে যতটুকু পারা যায় গা ঢেকে দিল ঈশা তবুও ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা রক্তের দাগ আড়াল করার উপায় রইলো না।গেটের ভেতর দাঁড়িয়ে আছেন ফুফু আতিয়া।তাকে দেখে আড় চোখে ঈশার দিকে তাকালো অনু।আতিয়া তাদের দেখতে পেয়ে হাত ইশারায় দ্রুত আসতে বলেন।

” তোরা কোথায় ছিলি?হাসিন ফোন করে আমাকে বকছে।বাপ ছেলে আমার বিরুদ্ধে অল্পের জন্য যু দ্ধ ঘোষণা করেনি।”

” আন্টি রিক্সা পাইনি।আমরা ইচ্ছে করে দেরি করিনি।”

অনু আর আতিয়ার কথার মাঝে ঈশা দ্রুত ছুটে ঘরে চলে যায়।আতিয়া অবাক চোখে তাকায় অনুর দিকে।

” ঈশা দৌড়ে গেল কেন?”

” আ… আসলে আন্টি ওর গায়ে চটপটির বাটি উলটে পড়েছে তাই পুরো গায়ের যাচ্ছে তাই অবস্থা।”

আতিয়াকে অন্য কথা না বলার সুযোগ দিয়ে তার হাত টেনে নিয়ে গেলো অনু।রিয়াদ পেছন পেছন বাড়ির ভেতর প্রবেশ করে আজ যা হয়ে গেলো তার রেশ মন থেকে কবে কাটবে কে জানে।
.

বাড়ি ফিরে দ্রুত গোসল সারলো ঈশা। ভেজা চুলে তোয়ালে পেচিয়ে ঈশানের কথা ভাবছিলো সে।ছেলেটা তখন গালে ঠোঁট ছোঁয়ালো কেন?ঈশানের অদ্ভুত আচরণ তার মনে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে।সবচেয়ে বড় কথা ঈশানকে আঘাত করলো কে?তাও আবার আট তলা বিল্ডিং এর ছাদে ফেলে এসেছে।বিষয়টা অদ্ভুত ঠেকলো ঈশার কাছে।অনু রুমে ফিরতে নড়ে চড়ে বসে ঈশা।অনুকে উদ্দেশ্য করে বলে,

” রাসেল ভাইয়াকে ফোন করেছিস?”

” না।করা কি ঠিক হবে?”

” অবশ্যই মানুষটার কি অবস্থা জানা দরকার।”

” আমার কেন জানি মনে হচ্ছে আমরা ফেসে যাবো ঈশা।যদি পুলিশকে জানানো হয় তবে পদে পদে আমাদের জবাবদিহি করতে হবে।”

” জবাবদিহিতার কি আছে?আমরা শুধু ঈশানকে পেয়েছি এইটুকুই।”

“তুই বুঝতে পারছিস না ঈশা।ঈশানের সাথে তোর শত্রুতা আছে যদি সে তোকে ফাসিয়ে দেয় ব্যপারটা ভেবে দেখ।”

ভয়ে কুঁকড়ে উঠলো ঈশা।এসব ঝামেলায় তাকে যদি পড়তে হয় তবে ঈশান শাহরিয়ারকে খু ন করে ফাসবে সে এর আগে নয়।

” এত কথা বলিস না অনু। ফোন কর রাসেলকে।”

বেশ কিছুক্ষণ যাবৎ রাসেলকে ফোন করেও পেলো না অনু।ছেলেটা নিশ্চয়ই চরম ব্যস্ত তাই তো এতবার ফোন করেও পাওয়া গেলো না।কিছুক্ষণ পর ফোন ধরলো রাসেল,

” অনু বলো তোমরা বাড়ি পৌঁছে গেছো?”

” হুম।ঈশান ভাইয়া কেমন আছে?”

” ভালো নয়।মাথা ফেটেছে,বাম হাত ভেঙ্গেছে পায়ের একটা আঙুল ফেটেছে।এখন ঘুমের ওষুধের কারণে ঘুমাচ্ছে।”

” ওহ। ইনশাআল্লাহ ভাইয়া খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবে তুমি চিন্তা করো না।”

” চিন্তা ছাড়া এই মুহূর্তে করার মতো কোন উপায় নেই আমার কাছে।”

ফোন লাউডে থাকায় ঈশা অনু দুজন দুজনকে ঈশারায় এটাওটা ইঙ্গিত দিচ্ছে।অনু খানিকটা নরম গলায় রাসেলকে বলে,

” পুলিশকে জানিয়েছো? ”

” না প্রয়োজন মনে করছি না।”

” কেন?’

” কথায় আছে ঘরের শত্রু বিভীষণ।এসব মামলা তুমি বুঝবে না।কাল তোমাদের এখানে একবার আসতে হবে।”

” কেন আসতে হবে?”

” কথা আছে।সকাল সকাল চলে এসো।”

ঈশা অনু দুজন দুজনের দিকে হতাশ চোখে তাকালো খাল কেটে কু মি র এনেছে তারা অক্টোপাস আনলে কি হতো?
.

ঈশানের জ্ঞান ফিরলো মধ্যরাতে বিষাক্ত যন্ত্রণায় একটুখানি নড়তেও পারলো না সে।ঠোঁট নাড়িয়ে কথা বলার চেষ্টা চালালো বেশ কিছুক্ষণ।ঠোঁটের কোনে থাকা মৃদু ব্যথাটা ধীরে ধীরে যেন সয়ে এলো।রাসেল নির্ঘুম রাত্রিটা পার করার জন্য প্রস্তুত ছিল। সে সারাটা রাত ঈশানের পাশে জেগে ছিল ঈশানের ঘুম ভাঙ্গতে দেখে বুকের কষ্ট চেপে রেখে প্রসন্ন হাসলো।রাসেলের চিন্তিত মুখখানি দেখে খারাপ লাগলো ঈশানের।ঈশার কথা মাথায় ঘুরলেও তার কথা জানতে চাইলো না।বরং ঈশানকে নিয়ে রাসেলের যে চিন্তা সেই চিন্তার মেঘ সরাতে রাসেলের ভাবনা ঘুরিয়ে দিলো অন্যদিকে।

” রাসেল এই যে আমার ভাঙ্গচুর অবস্থা তুই কি একা সব সামলাতে পারবি?”

” পারবো না কেন?আমি পারবো।”

” না তুই পারবি না সেটা আমি জানি।আমার একটা বউয়ের দরকার।যদি একটা বউ থাকতো তাহলে এতক্ষণে তার ভালোবাসার জোরে আমি সুস্থ হয়ে যেতাম।”

” হ তোরে বলছে,তুই আসলেও বেশি বুঝস।”

” আরে আমি সিরিয়াস।”

” তুই বিয়ে করবি?এখন মেয়ে পাবো কই?”

” আমি বিয়ে করবো তাকে।”

” কাকে?”

” অনুকে।”

শেষ কথাটা স্বগোতক্তি স্বরে বললো ঈশান।তবে খুব সহজে কথাটা হজম হলো না রাসেলের।মাথার উপরে ঘুরতে থাকা ফ্যানটা তার মাথায় যেন এক্ষুনি পড়েছে।সবকিছু ঝাপসা ঝাপসা লাগছে।রাসেল ঘাবড়ে গেলো সন্দিহান কণ্ঠে ঈশানকে বলে,

” তুই কি বলছিস?”

” আমি সিরিয়াস রাসেল।”

রাসেল নাক ফুলিয়ে সরে দাঁড়ালো ঈশানের পাশ থেকে।পাশে থাকা বেডে সটান হয়ে শুয়ে পড়লো দ্রুত।ঈশান আড় চোখে দেখছিলো রাসেলের কান্ড।বেচারাকে আরেকটু খোচাতে বলে,

” অনুর দেওর আমায় একটু পানি দে।”

#চলবে__