অবাধ্য বাঁধনে পর্ব-৭+৮

0
220

#অবাধ্য_বাঁধনে
#পলি_আনান
[পর্ব সংখ্যা ৭]
__________________
১৩.
হাতে থাকা গুরুত্বপূর্ণ কিছু কাগজপত্র উলটে পালটে যাচাই-বাছাই করছিলো ঈশা।বিছানায় থাকা চাকরির সিভিটা বাতাসের দরুনে উড়ে গিয়ে ফ্লোরে পড়তে তা কুঁড়িয়ে নেন মুজাহিদ হাসান।কাগজটার দিকে মনোযোগ বাড়াতে সাদৃশ্য হয় ঈশার জীবন বৃত্তান্ত এখানে উল্লেখ আছে সে কোন চাকরির জন্য এপ্লাই করতে চাইছে।

” ঈশা মা এসব কী?”

” ওটা দাও বাবা।”

” তুমি সিভি তৈরি করছো কেন?”

মুজাহিদ হাসানের তীর্যক চাহনিতে কাচুমাচু চোখে তাকালো ঈশা।

“বাবা আমি চাকরি করতে চাই।”

” কি চাকরি!”

” হ্যাঁ বাবা।”

ঈশার দিকে সরু চোখে তাকালেন মুজাহিদ হাসান।তার মাথাটা ধীরে ধীরে গরম হলেও কোন প্রতিক্রিয়া দেখালেন না এই মুহুর্তে।

“কি চাকরি করবে তুমি?”

” হোক সেটা যেকোন চাকরি।”

” তোমাকে অনুমতি দিয়েছে কে?”

” মা।”

মুজাহিদ হাসান রাগান্বিত হলেন।গলা উচিয়ে ডাকলেন সুলতানাকে।স্বামীর রুক্ষ স্বরে তিনি চপল পায়ে এগিয়ে এলেন ঈশার কক্ষে।

” মেয়ে কি তোমার একার আমার না?”

সন্দিহান চোখে মুজাহিদের দিকে তাকালেন সুলতানা।এমন অদ্ভুত প্রশ্ন তিনি তো এর আগে করেননি।বাবার হঠাৎ রেগে যাওয়া কারণ বুঝে এলো না ঈশার।

” এমন প্রশ্ন করছো কেন মেয়ে আমাদের দুজনের।”

” তাহলে তার বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আমায় জানানো হলো না কেন?”

” সিদ্ধান্ত! ”

দ্বিধাদ্বন্দে চোখ বুলালেন সুলতানা।মুজাহিদ হাসান ক্রমশ উত্তেজিত হয়ে পড়ছেন হাতে থাকা সিভিটা ছুড়ে ফেললেন ঈশার বিছানায়।

” ঈশা চাকরি করবে আর তুমি অনুমতি দিয়েছো?”

” আসলে বুঝতে পারছেন আমাদের উপর দিয়ে কি বিপদ যাচ্ছে তাই….”

” তাই বলে আমি আমার মেয়েকে চাকরিতে পাঠাবো?সে টিউশনি করতে চেয়েছে আমি দিয়েছি কারণ সেখানে এক দুই ঘণ্টার ব্যপার।মেহেদী নিয়ে আমি কোন দ্বিমত পোষণ করিনি।কিন্তু চাকরিতে করছি কারণ সারাটা দিন তাকে খাটতে হবে আমি চাই না ঈশা এতটাও কষ্ট করুক।”

ঈশা শ্বাস ছাড়লো আটকে থাকা দমটা যেন এবার বেরিয়েছে।

” বাবা তুমি এসব কেন বলছো আমি চাকরি করলে টাকা অতিদ্রুত পরিশোধ হবে।”

” প্রয়োজনে আমি জমি বিক্রি করবো,লোন নিব তাও তোমাকে কষ্ট দিতে পারবো না।”

” বাবা প্লিজ…”

” এই বিষয়ে আমি কোন কথা বলতে চাইছিনা ঈশা।”

মুজাহিদ হাসান বেরিয়ে গেলেন। ঈশার প্রচন্ড রাগ হচ্ছে বাবার একগুঁয়েমি জেদ দেখে।

১৪.
আটতলা বিল্ডিং এর উপর থেকে স্বচ্ছ কাঁচ ভেদ করে ব্যস্ত শহরটা দেখছে ঈশা।তার মুখোমুখি বসে আছে তিয়াশ।রেস্টুরেন্টটা নিরিবিলি মনোরম পরিবেশে।

” ঈশা খাবারটা মুখে তুলছো না যে?”

তিয়াশের প্রশ্নের প্রত্যুত্তরে মিষ্টি হাসে সে।আকাশটা আজ স্বচ্ছ নীল এত সুন্দর পরিবেশেও ঈশার আজ মন খারাপ ভাবা যায়!

” তুমি কী আমার সাথে ফ্রী হতে পারছো না?সেদিন….”

তিয়াশকে ইশারায় থামিয়ে দেয় ঈশা।

” আমি ঠিক আছি তিয়াশ।আসলে আজ আমার মনটা ভালো নেই।”

” সেকি কথা কেন?”

” বাবার সাথে একটু তর্ক হয়েছে এইটুকুই।”

দুজনের মাঝে ভীড় জমালো নিরবতার।তিয়াশ খাওয়ার মাঝে মাঝে ঈশার খেয়াল রাখছে ঈশাও চুপচাপ খাবার খাওয়ায় ব্যস্ত।ঈশাকে আজকে দুপুরের খাওয়ারটা তিয়াশের সাথে করার অনুরোধ করা হয়।না চাইতেও তিয়াশের বারবার অনুরোধে এখানে আসতেই হলো তার।

” সেদিন চিলেকোঠার ঘরে বন্দি হলে কী করে বললে না তো।”

” আমি তো বলেছিলাম আমাকে কে বন্দি করেছে আমি দেখিনি।”

” বিষয়টা আমার কাছে অদ্ভুত লাগলো ঈশা।”

” আমার কাছে নয়।”

বলেই হেঁসে ফেললো মেয়েটা।তার হাসিতে হাসলো তিয়াশ।দুজনের কথা চললো দীর্ঘক্ষণ।তিয়াশের কথার আড়ালে কোথায় যেন হারিয়ে গেল ঈশার মন খারাপেরা।

দুপুরের খাওয়ারটা বাইরে খাবে বলে সিদ্ধান্ত নেয় ঈশান এবং রাসেল।দুই বন্ধু মিলে যথারীতি তাদের পছন্দের রেস্টুরেন্টে চলে আসে।আশেপাশে পরখ করতে ঈশানের চোখে পড়ে তিয়াশের মুখ।তার মুখোমুখি একটি মেয়ে।বেশ কিছুক্ষণ পর ঈশান বুঝতে পারলো মেয়েটা ঈশা।মনে মনে তাচ্ছিল্য হাসলো ঈশান। রাসেলের দিকে তাকিয়ে অবজ্ঞার সুরে বলে,

” দেখছিস বড়লোক ছেলে পেয়েছে আর ওমনি পা চাটতে শুরু করেছে।”

” ঈশান এভাবে বলছিস কেন?তিয়াশ আর ঈশার সম্পর্ক বেশ ভালো ওরা বন্ধুর মতো।”

” তুই ঈশার নামে এত সাফাই গাইছিস কেন?”

” আমি যেটা ঠিক সেটাই বলি পক্ষপাত করার স্বভাব আমার নেই।”

” ওহ আচ্ছা।তবে এবার সময় এসেছে।”

” কিসের সময়?”

রাসেলের প্রশ্নের জবাব দেওয়ার প্রয়োজন মনে করলো না ঈশান।পরিপূর্ণ খাওয়ারে মনোযোগ দিয়ে রাসেলকে উপেক্ষা করে গেল।ঈশানের জেদ সম্পর্কে রাসেলের ভালোই ধারণা আছে তাই দ্বিধাদ্বন্দে হাঁসফাঁস করছে সে।

.
শার্টে চাটনি পড়ায় ওয়াশরুমের দিকে দ্রুত চলে যায় তিয়াশ।ঈশা একা বসে তিয়াশের অপেক্ষা করছিলো সামনে থাকা খাবার একটু একটু মুখে তুলে আশেপাশে তাকিয়ে পরখ করছে।কয়েক হাত দূরে ঈশানকে দেখে দিনের আকাশে চাঁদ দেখার মতো আশ্চর্যন্বিত চোখে তাকায়।ঈশান মুচকি হেসে এগিয়ে আসে ঈশার পাশে।

” কেমন আছেন ম্যাডাম দিন কাল ভালো যাচ্ছে?”

” ভালো যাচ্ছিল তবে আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে না দিনটা আর ভালো যাবে।”

” তাই নাকি?এভাবে বলবেন না যার পাশে হ্যান্ডসাম টাকা ওয়ালা ছেলে বসা থাকে তার দিন খারাপ যায়?এরপর নিশ্চয়ই শপিং এ যাবেন?”

তিয়াশকে উদ্দেশ্য করে ঈশাকে ফোড়ন কেটে কথাটি বলে থামলো ঈশান।

” মানে কী বলতে চাইছেন?”

” যা দেখছি তাই বললাম।তিয়াশের সাথে প্রেম প্রেম সম্পর্ক চলছে নাকি?তা মুজাহিদ হাসান জানেন তার মেয়ে বড়লোক ছেলে পটিয়েছে।এবার নিশ্চয়ই আমার টাকা পেতে বেশি দেরি হবে না।”

” কি যা তা বলছেন।মুখে লাগাম দিয়ে কথা বলুন।”

” মুখে লাগাম আমার আছে বরং আপনার নেই বেহাইয়া মেয়ে।”

” মুখ সামলে কথা বলুন একদম আটতলা বিল্ডিং থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিবো।”

” ওহ আচ্ছা তাই?আমি কি চেয়ে চেয়ে দেখবো?আমার গাড়িতে হাত দিয়েছো কাল কোন সাহসে?”

ঈশান দু-কদম এগিয়ে এলো ঈশার মুখোমুখি ঈশানের কাছে আসায় দ্রুত সরে গেল ঈশা।

” আপনি কি ভেবেছেন সেদিন চিলেকোঠার ঘরে আমাকে বন্দি করেছেন আমি জানি না?মানুষটা আপনি ছিলেন।আর আমিও প্রতিশোধ নিয়ে নিলাম।আঘাতের বদলা আঘাত।”

” সবার সামনে বলার তো সাহস পাওনি প্রমাণ করে দাও আমি সেদিন দরজা বন্ধ করেছিলাম।”

” প্রমাণের প্রয়োজন নেই আমি আমার বদলা নিয়েছি আপনার গাড়ির বেহাল দশা করেছি।”

” আমি কি ছাড়ছি নাকি?আমিও তোমার বেহাল দশা করেই ছাড়বো।বেহায়া মেয়ে।”

” একটা জেদি বাজে লোক।”

” কি বললে?”

ঈশান চিৎকার করলো তার চিৎকারে আশেপাশে থাকা সবাই ঘুরে তাকালো তাদের দিকে।ঈশা এই সুযোগ পেল ঈশানকে অপমান করার।টেবিলে থাকা টম্যাটো সসটা ছুড়ে ফেললো ঈশানের মুখে।হঠাৎ আক্রমণে ঈশান অবাক হতবাক! রাসেল চোখ বড় করে তাকালো ঈশার দিকে মেয়েটা বড্ড দুঃসাহসিক কাজ করে ফেলেছে।রেস্টুরেন্টে থাকা সবাই থ বনে ঈশানের দিকে তাকিয়ে আছে, কেউ কেউ মুখ টিপে হাসছে তিয়াশকে আসতে দেখে তার দিকে ছুটে পালালো ঈশা।

.

ড্রাইভিং সিটে বসে আড় চোখে ঈশার দিকে বারবার তাকাচ্ছে তিয়াশ।মেয়েটা কেমন ঘামছে।এলোমেলো চুল লেপ্টে আছে গালের পাশে লম্বা শ্বাস টেনে তিয়াশের চোখে চোখ রাখলো ঈশা।

” গাড়ি থামালেন কেন?”

” তুমি ঠিক আছো ঈশা?তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে তুমি ঠিক নেই।”

” আমি ঠিক আছি তিয়াশ।”

” ওকে ফাইন।”

ঈশার সম্মতি পেয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলো তিয়াশ।হাঁসফাঁস থেকে মুক্তি পেতে জানলার বাইরে দৃষ্টি সরিয়ে নেয় ঈশা।তবে তিয়াশসের সংশয় এখনো কাটলো না ঈশানের সাথে ঈশার কি নিয়ে ঝামেলাটা হলো সেটা জানা জরুরি হয়ে পড়েছে।

” ঈশা ঈশানকে সসটা ছুড়ে মা।র।লে কেন?তোমাদের মাঝে কি নিয়ে বিবাদ চলছে বলা যাবে কী?”

এই ভয়টাই পাচ্ছিল ঈশা।তিয়াশকে সে কিছুতেই বলতে চায় না ঈশানের সাথে তার দা-কুমড়া সম্পর্কের কথা।টাকা ধার নেওয়ার বিষয়টা তো আরো না।

” তিয়াশ কিছু মনে করো না এই কথা অন্যদিন তোমায় বলবো তবে এখন বলতে পারবো না।”

” সমস্যা নেই।আমরা তো বন্ধু যখন ইচ্ছে তুমি আমায় বলতে পারো।”

” আরেকটা উপকার করবে?”

” বলে ফেলো।”

” রুমা আপুকে এসব সম্পর্কে কিছু বলবে না প্লিজ এটা আমার অনুরোধ। ”

” যথা আজ্ঞা, আমি কাউকে কিছু বলবো না।”

১৫.
একের পর এক কল করে যাচ্ছে রাসেল তার কল ধরার মতো ইচ্ছে নেই অনুর কাছে।তাই তো বিরক্ত হয়ে সাইলেন্ট মুডে রেখেছিল আঁধা ঘণ্টা কিন্তু লাভ হলো কি এই বান্দা তো দেদারসে ফোন করে যাচ্ছে।চরম বিরক্ত হয়ে ফোন তুললো অনু।

” কি সমস্যা আপনার?”

” তোমাদের কি সমস্যা সেটা বলো।গতকাল কোন সাহসে ঈশানের গাড়িতে গোবর লাগিয়েছিলে?”

” কোন সাহসে ঈশান ঈশাকে বন্দি করেছিলো?”

” দুই ফ্রেন্ডের একই উত্তর বাহ!”

” তা আপনি কী অন্য কিছু আশা করেছিলেন মিস্টার রাসেল?”

” শুনো তর্ক করবে না ঈশা আজ ঈশানের গায়ে সস ছুড়ে দিয়েছিল আর এটা নিয়ে ঈশান ভীষণ রেগে আছে তাকে আমি সামলাতে পারবো কী না জানি না।যে কোন সময় ঈশার উপর হা।ম।লা হতে পারে।”

” ঈশান শাহরিয়ার এই দুঃসাহস করুক তাহলে আমার একদিন আর তার একদিন।আমার ফ্রেন্ডের গায়ে যদি একটা টোকাও লাগে তাহলে কিন্তু সুনামি বয়ে যাবে।”

” ওহ তাই আগে নিজেকে বাঁচান মিস অনু।”

#চলবে___

#অবাধ্য_বাঁধনে
#পলি_আনান
[পর্ব সংখ্যা ৮]
___________________
১৬.
সন্ধ্যার পর মুজাহিদ হাসান আজ বাইরে গেলেন না তিনি ঘরে থাকবে বলে সিদ্ধান্ত নেন।হাসিন এবং ঈশার ফুফু আতিয়া এসেছেন তাদের সাথে টুকটাক আলোচনা সারছেন মুজাহিদ।ঈশার মা সুলতানা ঈশার হাতে হাতে কাজ এগিয়ে দিচ্ছেন।মেয়েটা গরম গরম ডিম চপ ভেজে বড় একটি প্লেটে পরিবেশন করে। ছোট পিরিচ নামিয়ে টম্যাটো সস ঢালতে ঈশানের কথা মাথায় আসে ঈশার।মেয়েটা ঠোঁট চেপে হেসে নিজেকে সংযত করে নেয়।ঈশার হঠাৎ লুকিয়ে হাসার কারণটা বুঝে এলো না সুলতানার।আড়চোখে মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলে,

” কি রে আম্মু হাসছিস কেন?”

মায়ের প্রশ্নে থতমত চোখে তাকায় ঈশা।এখন সে মাকে কি বলবে?সে কী বলবে ঈশানকে চরম অপদস্ত করেছে?না থাক কথাটা বরং এড়িয়ে যাক।

” অনুর কথা মনে পড়ে হাসছি আম্মু মেয়েটা ডিপ চপ পছন্দ করে এই ডিম চপ নিয়ে একবার হাস্যকর কান্ড ঘটেছিল।”

” তাহলে তুই আরো কয়েকটা ভেজে অনুর জন্য নিয়ে যা আমি এইদিকটা দেখছি।”

বারণ করলো না ঈশা।ফ্রিজ থেকে ফ্রোজেন করা কয়েকটি চপ নিয়ে ভাজতে শুরু করলো।অনেকদিন পর বাসার বাইরে বের হবে সে।রাসেলের সতর্কতা অনুযায়ী ঈশান তার উপর বড্ড রেগে আছে তাই তো ভার্সিটি যাওয়া হচ্ছে না বেশ কয়েকদিন। ঈশান যদি একবার তাকে ধরতে পারে তবে ইহজন্মের শিক্ষা দিয়ে ছাড়বে।

ঈশাদের ফ্লাটের পাশের ফ্লাটে থাকে অনু তাই আসা যাওয়া চিন্তায় পড়তে হয়নি তাকে।অনুদের বাসায় গিয়ে দুজনে একসাথে আড্ডা দিচ্ছিলো তাদের আজকের পরিকল্পনা ঈশা অনুদের বাসায় থাকবে সারারাত তারা মুভি দেখবে।তাদের আলোচনার মাঝে ঈশার ফোনে রুমার কল আসে।রুমার নামটা ভেসে উঠতে খানিকটা ঘাবড়ে গেল ঈশা।ঈশান আর রুমা কাজিন সেই দিক থেকে নিশ্চয়ই ঈশান রুমাকে তার নামে অভিযোগ জানিয়েছে।ভেবে চিনতে ফোন তুললো না ঈশা এভাবে একবার দুইবার তিনবার ফোন কেটে গেল।ঈশার ঘাবড়ানো চেহারা দেখে বড্ড বিরক্ত হলো অনু।

” ফোনটা তোল ঈশু।তোর বর্ননা মতে রুমা আপু বড্ড ভালো তাকে এড়িয়ে যাচ্ছিস কেন?”

” ঈশান যদি কোন প্যাঁচ লাগায়?”

” এত অগ্রীম ভাবিস কেন?ফোন তোল।”

বুকে পাথর নিয়ে ফোন তুললো ঈশা।অপরপাশ থেকে যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলো রুমা একটা মানুষকে এতবার ফোন করতেও বিরক্তি আসে।ধরা গলায় রুমাকে সালাম করলো ঈশা দুজনের কুশল বিনিময় শেষে মূল কথায় ফিরলো রুমা।

” তুমি ঠিক আছো ঈশা।”

” হ্যাঁ আমি ঠিক আছি আপু।”

” কাল আমার বাসায় আসবে ঈশা?”

বাসায় যাওয়ার কথা শুনে কলিজাটা মোচড় দিয়ে উঠলো ঈশার।এটা কী কোন ফাঁদ?ঈশান শাহরিয়ারের ফাঁদ এঁটেছে নাকি?ঈশাকে নিয়ে কি প্রতিশোধ তুলবে?ভয়ে হাঁসফাঁস বেড়ে গেল মেয়েটার।তার দিক থেকে কোন সম্মতি না পেয়ে ভ্রু কুচকালো রুমার।

” ঈশা শুনতে পাচ্ছো?”

” হ্যাঁ আপু বলুন।”

” আসবে কাল?”

ঈশা কী বলবে ভেবে পেল না অনুটাও ডিমের চপে মন দিয়েছে সে যেন দুনিয়ার কোন কথাই কানে তুলছে না।

” কাল কেন যেতে হবে আপু?”

” সেদিনের ঘটনার জন্য আমি ভীষণ লজ্জিত আমি চাইছি আগামীকাল সারাটা দিন তোমার সাথে কাটাবো আসবে ঈশা?”

রুমার আবদারে ফোড়ন কা/টতে পারলো না ঈশা না চাইতেও সে সম্মতি দিয়ে দিলো সে কাল যাবে।

.

ইদানীং অনুর এড়িয়ে যাওয়াটা সহ্য হচ্ছে না রাসেলের।যেদিন থেকে ঈশান আর ঈশার ঝগড়া শুরু হয়েছে সেদিন থেকে অনু রাসেল নামক মানুষটাকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করছে।ফেসবুকে প্রায় সাত আট মাসের পরিচিত অনু এবং রাসেলের।দুজনে বন্ধুর মতো বেশ ভালো সম্পর্কে ছিল এই ব্যপারে অবশ্য ঈশা জানতো না।ঈশা শুধু জানতো অনু তার ক্রাশের সাথে নিয়মিত চ্যাটিং করছে সেই ক্রাশটা যে রাসেল তা ঘুনাক্ষরেও টের পেল না ঈশা।

হাতের কাজ শেষ করে অনুকে একের পর ফোন করেই যাচ্ছে রাসেল অথচ মেয়েটা এড়িয়ে আচ্ছে।কেউ ইগ্নোর করলে এতটা কষ্ট হয়!এতটা হাঁসফাঁস লাগে আগে জানা ছিল না রাসেলের।মেয়েটা তাকে পা\গল করে ছাড়বে।রাসেলের অস্থিরতা কমিয়ে ফোন তুললো অনু।

” অনু ফোন তুলছো না কেন?”

” কেন ফোন করেছেন?”

” বিরক্ত হচ্ছো?”

” বুঝতে পারছেন না?”

” আগে তো বিরক্ত হতে না।”

গলা ধরে এলো রাসেলের।অপরদিকে অনু নিশ্চুপ রাসেলের অনুভূতি বুঝতে পেরেও না বোঝার ভাবে সে।

” শুনুন আমাদের অতীত আর বর্তমান সম্পূর্ণ আলাদা।”

” তুমি ঈশানের কারণে আমায় ইগ্নোর করছো তাই না?”

” যে আমার ফ্রেন্ডকে কষ্ট দেয় আমি তাকে আমার জীবনে রাখিনা রাসেল।”

” আমি ঈশাকে কষ্ট কখন দিলাম?”

” তোমার বন্ধু দিয়েছে।”

” আমি সবসময় ঈশানকে চোখে চোখে রাখি ঈশার ক্ষতি হওয়ার আগেই তোমাদের সতর্ক করি তার পরেও এমনটা বলবে?”

” আমার এখন কথা বলতে ইচ্ছে করছে না রাসেল।ফোন রাখলাম।”

মুখের উপর ফোন রেখে দিল অনু।রাগে জেদে ফোনটা ছুড়ে ফেললো রাসেল।তখন দরজা দিয়ে আসতে দ্রুত হাতে ফোনটা ক্যাচ করে ঈশান।

” এই এই এই কিডনি ছুড়ে ফেলেছিস কেন?”

ঈশানের প্রশ্নে সন্দিহান চোখে তাকায় রাসেল।

” কিডনি মানে?”

” এটা আইফোন।”

১৭.
দরজা খুলতে ঈশাকে দেখে ঈদের চাঁদ দেখার মতো আনন্দ আত্মহারা রুদবা।মেয়েটার খুশি দেখে চাপা হাসলো ঈশা।মেয়েটার হাত ধরে এগিয়ে গেলো রুমার কাছে।আজকে ঈশা একা আসেনি তার সঙ্গ দিয়েছে অনু।রুমার সাজানো ছোট্ট সংসারটা অবাক চোখে পরখ করছিল অনু।ঈশার কানের কাছে মুখ নিয়ে বিস্মিত স্বরে বলে,

” এরা কি শৌখিনরে ঈশু।সব টাকা টাকা, টাকা থাকলে সব সম্ভব তাই না রে!”

” তো তুই বিয়ে কর টাকা ওয়ালা ছেলে।”

” একটারে পেলে তো হতোই, গলায় ঝুলে যেতাম।”

অনুর কথায় ঠোঁট টিপে হাসলো ঈশা।রুমাকে আসতে দেখে দ্রুত নিজেকে সংযত করে নেয় অনু।রুমার পেছন পেছন দৌঁড়ে কক্ষে ফিরলো রুদবা মেয়েটার হাতে একটি ট্যাব দূর থেকে বোঝা যাচ্ছে কারো সাথে সে ভিডিও কলে কথা বলছে।রুদবা হঠাৎ ফোনটা নিয়ে ধরলো ঈশার কাছে।ভিডিও কলে থাকা ব্যক্তির উদ্দেশ্যে বলে,

” নানুমনি দেখো এটা আমার ঈশামনি।ঈশামনিকে হাই বলো।”

ভিডিও কলে থাকা ব্যক্তিটি ঈশানের মা মাহমুদা।রুমার মেয়েটাকে তিনি ভীষণ আদর করেন অবসরে সবসময় রুদবার সাথে ভিডিও কলে সময় কাটান।
মনে মনে কল্পনায় রেখেছেন ঈশানের একটা টুকটুকে মেয়ে হবে বৃদ্ধ বয়সে তাকে আর অলস সময় পার করতে হবে না।ঈশা মাহমুদার দিকে তাকিয়ে সালাম জানালো টুকটাক কথা বলে মাহমুদা ফোন রেখে দিলেন।মাহমুদা

গুরুত্বপূর্ণ কথার উদ্দেশ্যে অডিও কলে রুমাকে পুণরায় ফোন করলেন।

” রুমা ঈশান রাসেল কোথায়?সারাদিন ফোন করলাম কেউ ধরলো না।”

” তোমার ছেলে কী এ শহরে আছে?তিনদিন আগে চট্রাগ্রাম গেছে অফিসের কাজে।তাদের নাকি নতুন প্রজেক্টের কাজ চলছে।”

” ঈশান রাসেল কেউ আমায় বলেনি সে কথা।”

” তোমার ছেলেরা কখনো কিছু জানিয়ে করে?”

একপাশ থেকে রুমার কথা শুনে ঈশা অনু দুজন দুজনকে চোখ ইশারা করলো এর মানে ঈশান নেই তারা জানতো না।মনে মনে সন্তুষ্ট হলো দুজনে।রুমা কথা বলার মাঝে চলে গেল অন্য রুমে সে কথা নিশ্চিন্ত হয়ে ফোড়ন কাটলেন মাহমুদা।

” ঈশার বাড়ি কোথায় রে?”

” এই শহরে আমার বাসা থেকে আধা ঘন্টার দূরত্ব।”

” ওর বাবা কী করে?”

” আঙ্কেল জব করেন।ব্যাংকে আছেন।”

” ঈশানের বিয়ের বয়স হয়েছে কিন্তু এই ছেলেকে বিয়ের নাম নিলে মুখের উপর ফোন কেটে দেয়।তার যা ইচ্ছে সে করুক রাসেলটাকে তো বিয়ে দিতে হবে।”

” তুমি কি রাসেলের জন্য ঈশাকে পছন্দ করেছো?”

” হ্যাঁ,কেন তোর পছন্দ হয়নি?”

” হবে না কেন?অবশ্যই হয়েছে ঈশা খুব ভালো মেয়ে আন্টি।”

রুমার সাড়া পেয়ে সন্তুষ্ট হলেন মাহমুদা।খুশিতে গদগদ গলায় বলেন,

” তুই আমাকে ঈশার ছবি পাঠা আমি রাসেলকে পাঠাচ্ছি।”

” রাসেল ঈশাকে চিনবে আন্টি, রুদবার জন্মদিনে পরিচয় হয়েছিল তাও ছবি পাঠাচ্ছি তবে এখন রাসেলকে কিছু বলার দরকার নেই আরো কয়েক দিন যাক।”

” ঠিক আছে তুই যা বলছিস তাই হবে।”

১৮.
রাতের খাবার শেষে ঘুমানোর প্রস্তুতি চলছিল।এমন সময় ডোর বেল বেজে উঠতে অবাক হলো ঈশা।সুলতানা তখন রান্নাঘরের কাজে ব্যস্ত।মুজাহিদ হাসান বসার ঘরে টিভি দেখছিলেন।ঈশা এগিয়ে এসে দরজাদ ছিদ্র দিয়ে দেখার চেষ্টা করলো কে এসেছে।বেশ কয়েকজন মাক্স পড়া লোক দেখে ঘাবড়ে যায় সে তার পরেও অনেকবার বেল বাজায় দ্রুত হাতে দরজা খুলে দিল।দরজা খুলে ঈশানকে দেখে দু-চোখে আপনাআপনি বড় হয়ে গেল ঈশার।মুখটা হা করতে ঈশান বড় বড় পা ফেলে এগিয়ে আসে ঘরের ভেতর ঈশাকে উদ্দেশ্য করে স্বগতোক্তিতে বলে,

” মুখ বন্ধ করুন মিস।মুখে হাতি ডুকবে।”

ঈশানের বিদ্রুপ মন্তব্যে দাঁত চাপলো ঈশা।ঈশানের পিছু পিছু প্রবেশ করে রাসেল ছেলেটা ঈশার দিকে তাকিয়ে অমায়িক হাসছে।বাদ বাকি গার্ডরা বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল তাদের সাথে উপস্থিত ছিল ঈশার বাবাকে অপমান করা সেই ইসমাইল।

ঈশানকে দেখে বুকটা ভারী হয়ে এলো মুজাহিদ হাসানের।ভয়ে কুঁকড়ে যাওয়ার অবস্থা তার তবুও বাইরে থেকে তিনি নিরব।

” স্যার আপনি!”

ঈশান কিঞ্চিৎ হাসলো মুজাহিদ হাসানকে সালাম দিয়ে বসে পড়লো সোফায় তার পাশাপাশি বসলো রাসেল।

” আঙ্কেল ঘাবড়ে যাবেন না এখানে আমরা সমস্যা করতে নয় বরং সমাধান করতে এসেছি।”

ঈশা দাঁড়িয়ে ছিল দরজার পাশে তখন তিন চারজন গার্ড হাতে মিষ্টি,ফল নিয়ে প্রবেশ করে।এত এত খাওয়ার দেখে অবাক হয় ঈশা।বসার ঘরে মেঝে অর্ধেকটা পূর্ণ হয় ঈশানের উপহার সামগ্রীতে।ঈশা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে ছিল সেদিকে অপর দিকে ঈশান তাকিয়ে আছে তার দিকে।
#চলবে___