অবান্তর চিরকুট পর্ব-০৭

0
317

#অবান্তর_চিরকুট (পর্ব-7)

♡আরশিয়া জান্নাত

“আমি বুঝিনা তোর কিসের এতো রাগ! এই রাগের জন্যই জীবনে সব হারাবি তুই দেখিস।”

“সবসময় লেকচার দিস না তো। এখন বল আমি কি করবো। সল্যুশন কি?”

“সল্যুশন নাই। একটু পর বরযাত্রী বের হবে বাড়ির বড়রা অলরেডি রওয়ানা দিয়ে ফেলছে আর তুই এখন বলছিস সিতারাকে ছাড়া তোর চলবেনা। সিরিয়াসলি তাহজীব! এটা কি ইন্ডিয়ান সিরিয়াল চলছে?”
(বিরক্তস্বরে বললো তাহজীবের ফ্রেন্ড আহনাফ)

“আমি অতো কথা বুঝিনা। তারা কই আমি এখুনি ওকে গিয়ে বলবো, ও খুব আবেগী আর আমার ভালোবাসা ফেরানোর ক্ষমতা ওর নেই। আমি জানি আমি একটু নরম হয়ে বললেই ও গলে যাবে।”

“আফসানার কথা ভাব দোস্ত। কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে এতো মানুষের সামনে ওদের রেপুটেশন থাকবে? আর আঙ্কেল আন্টি মেনে নিবে তোর এসব? এই বিয়ে তোর ইচ্ছেতেই হচ্ছে।”

তাহজীবের মাথা ছিড়ে যাচ্ছে যন্ত্রণায়। কি করবে ও এখন, তাঁরাকে অন্য কারো সাথে কল্পনা করতেই ওর মাথা নষ্ট হয়ে যায়। গতকাল ওর ব্যবহার দেখে মাথা আরো শেষ। ঐ ছেলেটা কে সেই খবরটাও জানতে পারেনি। তবে কি সত্যিই সে অন্য কারো প্রেমে,,, না আর ভাবতে পারছেনা। ঐ ছেলের কথায় তো বুঝেছে সে ওর মতো রাগী না। তাঁরার কাছে নিশ্চয়ই তাহজীবের চেয়ে ঐ ছেলেই বেশি শান্তিপূর্ণ মনে হবে? আমার তাঁরা সত্যিই তাহলে আমার থাকবেনা?
কষ্টে বুকটা ফেঁটে যাচ্ছে তার। অনেক ভেবে ঠিক করলো তাঁরার কাছে গিয়ে ক্ষমা চাইবে, প্রয়োজনে পায়ে পড়ে থাকবে। তবুও বিয়ে করতে হলে ওকেই করবে। এই জীবনে আর কাউকে দরকার নেই তার। এতে সবাই যদি ওকে ঘৃণাও করে ওর কিচ্ছু যায় আসেনা, কিন্তু তাঁরাকে ছাড়া ওর বেঁচে থাকা অসম্ভব।
পুরো বাড়ি হন্যি হয়ে খুঁজেও সিতারাকে খুঁজে পাওয়া গেল না। শেষে ফোনে কল করতে গিয়ে দেখে সিতারার আনরিড মেসেজ, ফোনটা সারাদিন চেক করা হয়নি বলে দেখেনি।

” আপনাকে আমি যতোটুকু চিনি এতে এইটুকু কনফার্ম শেষ মুহূর্তে এসে আপনি এজ ইজুয়াল কারো তোয়াক্কা না করে বিয়েটা ক্যানসেল করবেন। আর আপনি ধরেই নেবেন আপনি এসে বললেই আমি আপনাকে বিয়ে করতে রাজী হয়ে যাবো। হয়তো আগের সিতারা আসলেই এমন করতো, কিন্তু জানেন তো আপনি অল্প কিছু মানুষের সামনে আমাকে রিজেক্ট করার পর আমি যতোটা কষ্ট পেয়েছি সেটা এই ভরা মজলিশে বর না আসার যন্ত্রণার চেয়ে অনেক কম। আপনি যদি বিয়েটা ক্যানসেল করেন তবে দুই পরিবারের মানসম্মান ধূলোয় মিশে যাবে। একটা মেয়ের জীবন নষ্ট করার কোনো অধিকার আপনার নেই।
আপনি কাছে হয়তো মানুষের ইমোশনের কোনো দাম নেই তবে আমার আছে। তো আর যাই হোক এটা ভেবে বসবেন না আমি আপনার জীবনে ব্যাক করবো। আমি অলরেডি একজনের সঙ্গে আছি। খুব শীঘ্রই আমরা অফিশিয়ালি বিয়ের এনাউন্সমেন্ট করবো।
আমিতো আর আপনার মতো নই রাগের বশে কাউকে জীবনে জড়িয়ে মাঝপথে হাত ছেড়ে দিবো। যে মানুষটা আমার খারাপ সময়ে পাশে ছিল তাঁকে অন্তত হারিয়ে ফেলার ভুল সিতারা করবেনা। তাই আমাকে না খুঁজে বিয়েতে ফোকাস দিন। গুড লাক”

“এতো চেইঞ্জ তারা! এতো পাথর তোর মনে, এতো জলদি তোর জীবনে অন্য কেউ চলে এসেছে,I can’t believe. নিশ্চয়ই তুই মিথ্যা বলছিস।”
কল করতে গিয়ে দেখে সিতারার ফোন সুইচড অফ। তবে কি ওর ধারণাই সত্যি। তাঁরা সত্যিই দূরের নক্ষত্র হয়ে গেছে, তাকে আর ছোঁয়া যাবেনা???
_____________

পাঁচতলা ভবনের ছাদের কিনারায় পা ঝুলিয়ে বসে আছে সিতারা। সামনে পুরো শহরটা কৃত্রিম আলোয় আলোকিত।
“আচ্ছা এখন যদি এখান থেকে জাম্প দেই নীচে পড়বার আগেই কি ভয়ে মরে যাবো নাকি হাড়গোড় ভাঙার পর ব্যথায় কাতরে মরবো! ইশ মরলে কি হবে নাকি? সবাই ভাববে তাহজীবের শোকে সুইসাইড করেছি, এটা তো হতে দেওয়া যাবেনা। ভালোবাসার মানুষ শত দোষী হলেও তাকে ঘৃণা করা যায়না, তার ডাকে সাড়া দিতেই হয়। তবে সে কেন জেনেশুনে এমন লুকিয়ে চলে এলো। আফসানার সাথে ওর ঠিকঠাক কথাও হয়নি তবু কেন মেয়েটার জন্য স্যাক্রিফাইজ করলো সে? এই মনটা তাহজীবের টর্চারটাই স্মৃতিতে রেখেছে, নয়তো ভালোবাসার বিশেষ কোনো স্মৃতি দৃশ্যপটে আসছেনা কেন?”

“আমি জানতাম তুমি এখানে থাকবে”

চমকে পেছনে তাকালো সিতারা।

সিতারার বাবা জহির সাহেব এসে বসলেন মেয়ের পাশে।

সিতারা চোখের পানি আড়াল করে বললো, বাবা তুমি এখানে? ক্লাবে যাওনি?

“গিয়েছি মামা হবার দায়িত্ব মিটিয়ে এসেছি, যদিও বাবা হবার দায়িত্বটাই বেশি এখানে।”

“বাবা বিয়ে শেষ না করে চলে এলে যে ফুপী কি ভাববে বলোতো? আমি ঠিক আছি তো আমায় চিন্তা করোনা।”

“আমি জানি আমার মেয়ে খুব স্ট্রং। তাই বলে যে তার বাবার দায়িত্ব নেই এমন তো নয়! বাবা-মা এইজন্য পাশে থাকেনা- তার সন্তান তাদের ছাড়া চলতে পারবেনা, বরং এজন্য থাকে যেন সন্তান ভয় না পায়, ভরসা রাখতে পারে পেছনে কেউ আছে যার কাছে চাইলেই কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেওয়া যায়। ইচ্ছে হলে কান্না করা যায়।”

“আমি কি ঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছি বাবা?”

“মামণি একটা কথা সবসময় মনে রাখবে ভালোবাসলেই শুধু হয়না। একে অপরকে সম্মান করতে হয়। যে সম্পর্কে সম্মান নেই, সেই সম্পর্কের প্রতি যতো মায়াই থাকুক সেটা রাখা ঠিক নয়। তুমি তাহজীবকে
ভালোবেসেছ সেও হয়তো তোমায় ভালোবেসেছে। কিন্তু এই সম্পর্কে সম্মান ছিল না। যদি থাকতো তবে সে তোমার ফ্রেন্ডদের সামনে তোমাকে ছোট করতোনা। সত্যিকারের পুরুষ কখনোই তাঁর ভালোবাসার মানুষকে ছোট করেনা কারো সামনে। আমি এও জানি আমাদের চেয়ে বেশি ও তোমায় শাসন করেছে, ওর রাগ বেশি এ তো আমরা সবাই জানি। কিন্তু সত্যি বলতে কি জানো আমি আমার আদরের মেয়েকে কখনোই এমন ছেলের কাছে দেওয়া পছন্দ করতাম না।
সিতারা জীবনসঙ্গী বাছাই করা অনেক কঠিন রে মা। আল্লাহ হয়তো তোকে অনেক ভালোবাসে তাই তাহজীবকে তোর জীবন থেকে সরিয়েছে। তুই দেখিস মা তোর জীবনে অনেক ভালো কেউ আসবে, তখন তুই টের পাবি ভালোবাসার সঠিক সংজ্ঞা কি! ”

“তুমি আগে কখনো এসব বলো নি কেন?”

“তোর সুখে নিষেধাজ্ঞা জারি করে কষ্ট দিতে চাইনি। তাছাড়া আপার ছেলেকে না করবো এ কি সম্ভব ছিল?”

“বাবা উনি বোধহয় শেষ মোমেন্টে বিয়ে ভাঙার কথা ভাবছেন,,,”

“হুম ভেবেছিল। তোকে খুঁজেছিল শুনলাম।”

“তুমি কিছু বলোনি? শেষে গেল কিভাবে?”

“আমাকে কিছু বলার মুখ আছে ওর? আমি গিয়ে গাড়িতে উঠতে বলার সঙ্গে সঙ্গেই উঠেছে। আর কোনো কথা বলেনি,,,”

সিতারা হেসে বললো, বাবা গান শুনবে?

জহির সাহেব দেখলেন তাঁর মেয়ে চোখে পানি নিয়ে কি সুন্দর গলায় গান ধরলো,

“জলে ভাসা পদ্ম আমি শুধুই পেলাম ছলনা
ও আমার সহেলি আমার নাই তো কোথাও কোনো ঠাঁই,,,,,,,,”

জহির সাহেব মনে মনে বললো, হে দয়াময়! আমার মেয়েটাকে তুমি সুখী করে দাও। এই যন্ত্রণা কাটিয়ে যেন খুব শীঘ্রই সে সুস্থ হয়ে উঠে সেই শক্তি দাও।
__________

রাফসান দু’বার রিং করে যখন সিতারার ফোন সুইচড অফ পেল তাঁর মনে টেনশন ধরে গেল। মেয়েটা নিখোঁজ হবে বলছিল, ফোন অফ করে সত্যিই হারিয়ে গেল নাকি? গতকালের লোকটা বলছিল ওনার বিয়েটা ভাঙার চেষ্টা না করতে তবে কি তাঁর প্রিয় কারোর বিয়ে ছিল আজ? এজন্যই বুঝি নিখোঁজ হতে চেয়েছিল!
উফফ এতো কথা আমি কেন ভাবছি! তবে সত্যিই মেয়েটার জন্য ভারী টেনশন হচ্ছে। বিরহে পড়ে আবার ভুল কিছু করে বসবেনা তো?
কি যে করবে কিছুই বুঝতেই পারছেনা।

“আপনি ঠিক আছেন মিস সিতারা?”

টেক্সট পাঠানোর পর অস্বস্তিতে পড়ে গেল সে। মেয়েটা যদি খারাপ ভাবে? ধ্যাত ভাল্লাগেনা,,,,

চলবে,,