অবেলায় তোমার আগমন পর্ব-১০+১১

0
471

#অবেলায়_তোমার_আগমন🥀
#Adrrija_Aman(লেখনিতে)
#পর্ব_সংখ্যা_১০

আমি ভয় নিয়ে শরৎভাইয়ের দিকে তাকালাম।পেছাতে পেছাতে এক পর্যায় দেয়ালের সাথে লেগে গেলাম আমি।শরৎ ভাই এগিয়ে এলেন আমাদের মাঝে তেমন দূরত্ব নেই ভয়ে চোখ জোড়া বন্ধ করে নিলাম আমি।মিনিট পাঁচএক কেঁটে যাবার পরও কোনো কিছুর পরিবর্তন না দেখতে পেয়ে চোখ মেলে দেখলাম, শরৎ ভাই দরজার ছিটকিনিটা লাগিয়ে বিছানার ওপর গিয়ে শুয়ে পড়েছেন।নিজের কান্ডে নিজেই অনেকটা লজ্জা পেলাম।চুপচাপ বিছানার ওপর গিয়ে বসে পড়লাম।শরৎ ভাইকে বলে উঠলাম…

“আমি কোথায় ঘুমোবো?”

শরৎ ভাই উল্টোপাশ হয়ে গায়ে কাথা মুড়িয়ে শুয়ে আছেন।শরৎ ভাই আমার দিকে না তাকিয়েই ওপাশ থেকে বলে উঠলেন…

“চোখ কি আকাশে থাকে তোর?খাটের ওপর বসে আছিস আবার বলছিস কোথায় ঘুমোবি।বিলাশ জায়গা আছে এদিকে ঘুমে ধরলে ঘুমিয়ে পড়, আর তা না হলে জেগে থাক।”

বলেই ঘুমোনোর উদ্দেশ্যে আবার চোখ বন্ধ করে নিলেন তিনি।আমার রাগ লাগলো শরৎভাইয়ের কান্ড কারখানা বুঝে উঠতে পারি না আমি মাঝে মাঝে। রাগ করে ওনার দিকে তাকিয়ে রইলাম আমি।নাহ্ ওনার কোনো হেলদোল নেই,তা দেখে রাগ আরো বাড়লো আমার, আমার ঘুম হারাম করে নিজে কতোটা শান্তিতে ঘুমোচ্ছে দেখো।হুট করে আমার মাথায় কিছু একটা এলো।আমি চুপটি করে শুয়ে পড়লাম ওনার পাশে, মনেমনে মিটিমিটি হাসঁছি আমি।দেখলাম শরৎভাই ঘুমিয়েছেন মাত্র, আমি ইকটু এগিয়ে গিয়ে ওনার পাশে শুয়ে পড়লাম।যথারীতি উনি আরেকটু পিছিয়ে গেলেন উনি,আমি আরেকটু এগিয়ে গেলাম।এমন করতে করতে উনি একপর্যায় দেয়ালের সাথে লেগে গেলেন কিন্তু কিছুই বললেন না।এমন করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি খেলায় ছিলো না আমার।

বৈশাখের প্রথম সকাল।কাঠফাটা রোদের প্রখর তাপের দহনে পুড়ছে দেয়ালগুলো।হাত দেয়া যায় না বললেই চলে।উত্তপ্ত হয়ে আছে দেয়ালগুলো হাত দেয়া যাচ্ছে না বললেই চলে আমাদের ছাদটা বিশাল,বিলাশ ছাঁদের নানান স্থানজুড়ে রয়েছে নানান রকমের গাছ যেহুতু সময়টা নানান রকম ফলের কিছু কিছু পুরাতন গাছে নতুন নতুন ফল ধরেছে।নানান ফলের ঘ্রাণে পরিবেশে অন্যরকম এর সৌন্দর্য এসেছে।ছাঁদের আশপাশটায় ইকটু ঘুরে দেখছি আমি।শরৎভাই যায়নি এখনো সকালের দিকে মামনি ফোন দিয়েছিলো বললেন বিয়ের পর প্রথম রোজা তাই আমাকে সাথে করে নিয়ে যেতে।ছাঁদের দরজা ঢেলে কেউ একজন ঢুকলো বোধয়।আমি চমকে পেছন ফিরে দেখলাম শরৎ ভাই আসছেন এগিয়ে।উনি এগিয়ে এসে বলতে লাগলেন…

“কখন যাবি তুই?আমার কাজ আছে অনেক,দ্রুত আয়, আমি ইকটু পরই চলে যাবো।”

আমি শরৎভাইয়ের দিকে চোখ জোড়া ছোট ছোট করে তাকালাম এরপর বললাম…

“এতো কাজ আপনার।সারাদিন কি কাজ করেন এতো আপনি?ছুটির দিনেও কাজ!”

আমার কথাগুলো হয়তোবা শরৎ ভাইয়ের কাছে অহেতুক লাগলো, তাই তিনি বিষয়টা এরিয়ে গিয়ে বলে উঠলেন…

” দ্রুত চল, এমনিতেই অনেক কাজ রয়েছে আমার। ”

বলেই পা চালিয়ে নেমে যেতে চাগলে শরৎভাই।আমিও ওনার পিছু পিছু যাচ্ছি।লিফ্টের এক কোণায় দাড়িয়ে আছি আমি, আরেক কোণায় শরৎ।নিস্তব্ধতায় ঘেরা পরিবেশ।১০ তলায় এসে পড়তেই দরজা খুলে ঘরের ভেতর ঢুকে গেলেন তিনি।ওনার হাববাব বুঝি না, হুট হাট চঞ্চল আবার হুটহাট গম্ভীর।কোনো কথা না বলেই টেবিলের ওপর থেকে মানিব্যাগসহ ফোনটা নিয়ে নিলে তিনি।মা কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন…

“ফুপি যাচ্ছি আমি,কেউ যদি যেতে চায় তাহলে দ্রুত বোরকা ঠোরকা পড়ে তৈরি হয়ে আসতে বলো,সময় নেই আমার।”

মা ইফতারি তৈরির প্রিপারেশন নিচ্ছিলেন।শরৎভাইয়ের কথা শুনতেই দ্রুত হাত ধুয়ে,আঁচলে হাত মুছতে মুছতে আমার ঘরে এগিয়ে এলেন তিনি।অবাক হয়ে জিঙ্গেস করলেন…

“এমা এখন জাবি কেন?আমি ইফতারের জন্য কতো আয়োজন করলাম,সব বৃথা যাবে।এখন যেতে পারবি না যেতে হলে রাতেই যাবি।তা না হলে আমার বাড়িতে আর আসবি না,এই রকম চড়াইপাখির মতো আসা যাওয়া চলবে না।”

শরৎভাই শান্ত দৃষ্টিতে তাকালেন মায়ের দিকে।মিষ্টি হেসেঁ বললেন…

“খালামনি ইকটু বোঝার চেস্টা করো,আমার জরুরী কাজ আছে।ওগুলোর জন্য যেতে হবে আমায়।আমি আবার আসবো তো।”

মা নাছোড় বান্দা মাথা নেড়ে বললেন…

“না তোর আর আসা লাগবে না,আর তোর এমন মিষ্টি কথায় আমি কোনো মতেই ফাঁসছি না বাপু।”

শরৎভাই হাফ ছাড়লেন,বললেন…

“তুমি তো বোঝার চেস্টা করো,আমার জরুরী কাজ আছে,যেতে হবে।”

মা এবার তার স্পেসাল টেকনিক ইউস করতে লাগলেন।হালকা ইমোশনাল হয়ে বলে উঠলেন…

“বুঝেছি আমি! তোর ফুপি কে কী আর ভালোবাসবি তুই,এখন তো বড় হয়েছিস,কতোশতো কাজ তোর ল নিয়ে পড়ছিস,কদিন পড় লইয়ার হবি।তখন তো ফুপিকে আরো মনে থাকবে না।”

শরৎভাই ভালো মতো ফেঁসেছেন হয়তোবা তা বুঝতে পেরেছেন তিনি।অসহায় দৃষ্টিতে তাকালেন মার দিকে মায়ের দৃষ্টির ভাষা বদলালো না।কোনো কুল কিনারা না পেয়ে মান-সম্মানকে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে।এবার উনি অসহায় দৃষ্টিতে তাকালেন।ওনার চোখের ভাষাই বলে দিচ্ছে উনি সাহায্য চাইছেন।আমি অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে নিলাম।উনি বিরবির করে বললেন…

“একবার হেল্প কর,আর কখনো হেল্প চাইবো না তোর কাছে।”

আমি রাজি হলাম।মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলাম…

“আরেহ্ মা কে বলেছে শরৎভাই তোমাকে ভালোবাসে না?আগের চেয়ে আরো বেশি ভালোবাসে এখন, তাইতো এখনো চুপ করে আছেন।আর তুমি জানো না?চুপ থাকা সম্মতির লক্ষন চলো দ্রুত চলো কতো কাজ বাকি রয়েছে নতুন জামাই উনি বাড়ির আদর – আপ্যায়ন তো করতেই হবে।”

বলেই মা কে নিয়ে রান্না ঘরের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলাম আমি,পেছন ফিরে দেখলাম শরৎভাই আমার দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন।বেশ চটেছেন মনে হয়।হাঁসি আটকে রাখতে পারলাম না আমি।নিঃশব্দে হাঁসলাম আমি।যা শরৎভাইয়ের চোখে পড়লো,ওনার দৃষ্টি আরো শক্ত হলো।তার চোখের ভাষাই বলছে,শ্রীজাকে সে ছাড়বে না।এভাবে তাকে ফাঁসানোর কোনো মানে হয় না।

__________

“কী খবর শ্রীজা এতোদিন পর মনে পড়লো মামনি কে?শরৎ না নিয়ে এলে তো আসতিও না।”

আমি হাঁসলাম মামনিকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলাম…

“তুমি আর তোমার বরের বোন এই দুজনের জ্বালায় ইকটুও কোনো জায়গায় দু দন্ড শান্তিতে থাকার জো নেই আমার।একজন বলে আমার বাড়ি আয়,আরেকজন বলে আমার বাড়ি আয়,আমি মানুষ একটা আর আবদার তোমাদের হাজার জনের।”

মামনি বললেন…

“আমার বেলায় তোর সব জ্বালা বুঝি আমি,কে হই আমি তোর কিছুই তো না,আজ যদি তুই আমার মেয়ে হতি এভাবে বলতে পারতি না।আমি তোর মা না এটাই বোঝাতে চাচ্ছিস তো তুই।”

মামনির কথা শুনে আমি কিছু বলতে যাবো তার আগে কারো হুহু করে হাঁসার শব্দে পেছনে ফিরে তাকালাম আমি।আমার সন্দেহই সঠিক।লোকটি আর কেউ নয় আমার সেই চিরচেনা লোক শরৎভাই।ওনার হাঁসির ধরনেই বুঝলাম মামনির কথায় বেশ মজা পেয়েছেন তিনি।তিনি আমার দিকে তাকিয়ে পিঞ্চ মেরে বলে উঠলেন…

“রিভেঞ্জ রিভেঞ্জ, বুঝলি শ্রীজা প্রকৃতির বিচার সব।”

আমি চোখ দুটো ছোট ছোট করে তাকালাম ওনার দিকে,কদিন ইকটু চুপ ছিলেন এখন আবার শুরু হয়েছে ওনার এসব কাহিনী।শরৎভাই মানুষটা সর্বদাই চঞ্চল ছিলেন,আর ওনার ছোট বলে আমার আর দির সাথে এমন ফাজলামো করতেন তিনি।কিন্তু দির সাথে ওনার সম্পর্কের পর পরই নিজ থেকে ওদের মাঝ থেকে বের হয়ে আসি আমি।বিষয়টা দি ধরতে না পারলেও শরৎভাই ঠিকই আঁচ করতে পেরেছিলেন।তাই তিনিও আমার সাথে তেমন একটা মিশতেন না আগের মতো।কিন্তু হুট করে শরৎভাইয়ের এই পরিবর্তন ভাবাচ্ছে আমায়।কেনো করছেন তিনি এমন, হুট করেই বা তার এমন পরিবর্তন কেনো?

#চলবে…

#অবেলায়_তোমার_আগমন🥀
#Adrrija_Aman(লেখনিতে)
#পর্ব_সংখ্যা_১১
[✖️কার্টেসি ছাড়া কপি নিষিদ্ধ✖️]

পড়ন্ত বিকেল রৌদ্রজ্জ্বল নীল, শুভ্র আকাশ।হালকা মেঘের আনাগোনা। হয়তোবা বৃষ্টির পূর্বাভাস। বর্ষনের ভয় নেই পাখিদের মনে স্বাধীনচেতা পাখিরা নীড়ে না ফিরেই দিব্বি ডানা মেলে আকাশে উড়ে চলেছে নির্ভয়ে।রাস্তার মাঝে নানা যানবাহনের চলাচল।কিছুক্ষণ বাদে বাদেই হর্ণ বাজিয়ে চলছেন যানবাহনের চালকেরা।
একটা হুডি তোলা রিকশার এক প্রান্তে বসে আছি আমি অপর প্রান্তেই শরৎভাই।তার মুখের ভঙ্গিমাই বলে দিচ্ছে সে কতোটা বিরক্তিবোধ করছে এই মুহুর্তে। রিকশাটি গন্তব্যস্থলে পৌছঁতেই রিকশার চাকার চলাচলের গতি কমে এলো।পা রিকশা, রিকশা চালক ঘেমে একাকার।গলায় ঝুলে থাকা লাল রঙের গামছাটা দিয়ে অনবরত গায়ের ঘাম মুছে চলেছেন তিনি।রিকশা থেকে নামলেন শরৎভাই, জিন্সের পকেটে হাত দিয়ে কালো রঙয়ের একটা মানিব্যাগ বের করলেন,সেখান থেকে ১০০ টাকার একটা চকচকে নোট বের করে সেটা রিকশা আলার দিকে এগিয়ে দিলেন।টাকাটা নেতিয়ে যাওয়া হালকা ছেশার্টের পকেটে ঢুকিয়ে,লোকটা ফের পকেট হাতাতে লাগলেন খুচরা টাকা বের করার উদ্দেশ্যে। শরৎভাই হাত নাড়লেন।লোকটা বেশ বুঝতে পেরেছেন শরৎভাই ওনাকে পুরো টাকাটাই রেখে দিতে বলছেন।লোকটার চেহারায় অবাক অবাক ভাব, মনে মনে হয়তোবা সে বেজায় খুশি।শরৎভাই লোকটাকে উদ্দেশ্য করে বলে উলেন…

“আরে রাখেন মামা,৫০-৬০ টাকাই তো সন্ধ্যার পর কিনে খাবেন।”

লোকটার চোখে মুখে আনন্দের ধারা বয়ে গেলো।লোকটা হালকা হেঁসে দ্বিমত পোষণ করে বলে উঠলো…

“কিন্তু বাজান…”

শরৎ ভাই ওনার কথার মাঝ পথে বাধাঁ দিয়ে, শান্ত দৃষ্টিতে ওনার দিকে তাকালেন।ঠান্ডা গলায় বলে উঠলেন….

“কোনো কিন্তু না।আমার যেতে হবে, আজ আসি মামা।”

লোকটা হেঁসে মাথা নেড়ে সম্মতি দিলো।রিকশার ওপর বসে বসে তাদের কর্ম-কান্ড পর্যবেক্ষণ করছিলাম আমি।তাৎক্ষণিক ভাবে শরৎ ভাই আমার দিকে তাকালেন।ভ্রু কুটি করে ধমক দিয়ে বলে উঠলেন…

“রিকশায় বসে বসেই কি শপিং করবি তুই?”

আমি ওনার কথা শুনে হালকা বিরক্ত হলাম।অন্যপাশে পাশে ফিরে রিকশা থেকে লাফ দিয়ে নেমে গেলাম আমি।তবে পা যে মচকে গেছে তা ভালো করেই বুঝতে পেরেছি আমি, শরৎভাই বিষয়টা লক্ষ করে হালকা ধমকের স্বরে বলে উঠলেন…

“পা গুলো ভেঙ্গে লেংরা হয়ে বসে থাক, দিন দিন বড় হচ্ছে আর বুদ্ধি সুদ্ধি লোপ পাচ্ছে।”

রিকশা আলা মামাটা শরৎভাই কে বলে উঠলেন…

“আহহা বাজান, রাগ করো ক্যা?মাইয়া মানুষ এই বয়সে ইকটু এমন পোলাপানগো লাহান কাইজ কাম করবোই।এডাই হেগো সৌন্দর্য রাগ কইরো না,রাগ কইরো না।”

বলেই রিকশাআলা মামাটা রিকশা নিয়ে চলে যেতে লাগলেন। পা মুচড়ে গিয়েছে তাই আস্তে আস্তে হাটছি আমি।তবে ভুলেও শরৎ ভাইয়ের দিকে ফিরে তাকাচ্ছি না,খানিকটা চাপা অভিমানের জোড়েই।শরৎ ভাই আমার পেছন পেছন দৌড়ে এলেন,আমার দিকে তাকিয়ে খানিকটা হাঁপাতে হাঁপাতে বলে উঠলেন…

“এভাবে একা একা চলে এলি কেনো?আমার জন্য অপেক্ষা করতে পারতি!”

আমি কিছু বললাম না।না বলেই হাঁটতে লাগলাম, আশপাশের নানান দোকনদারেরা চিৎকার করে ডাকছে।তাদের কথা কানে না নিয়ে নিজের মতো হাঁটতে লাগলাম।

“তুই কি মর্নিং ওয়াকয়ে এসেছিস না শপিং করতে?দেখ শ্রীজা মা আমাকে জোড় করেছে বলেই আমি এসেছি।দ্রুত কর আমার অনেক কাজ বাকি।”

শরৎভাইয়ের কথা শুনে বিরক্তি নিয়ে ওনার দিকে ফিরে তাকালাম আমি।বললাম…

“সব সময় এভাবে ধমকান কেনো?”

” আচ্ছা, চল এবার বাড়ি ফিরতে হবে আমার দ্রুত,কাজ আছে অনেক।”

আমি বিরক্তি নিয়ে ওনার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলাম…

“আপনার লাইফে কী কাজ আছে আমার,দ্রুত চল, এসব ছাড়া কি আর কিছু নেই নাকি।”

শরৎ ভাই যেনো আমার কথা শুনেও শুনলেন না।দুহাত পকেটে পুরো দিব্বি শিষ বাজিয়ে হেঁটে চলেছেন তিনি।আর আমি দাসীর মতো তার পিছু পিছু ঘুরছি।নেহাত মামনি আমাকে জোড় করেছে তাই নাহলে এমন একটা মানুষের সাথে ঘুরা ফেরা করা শপিং করা আর রোবোর্টকে সাথে নিয়ে ঘোরা একই।শপিং ঠপিং করে আসতে আসতেই মাগরিবের আজান পড়ে গেলো।ইফতারের সময় রিকশা থেকে শুরু করে ভাড়া গাড়ির সবকিছুর চলাচলই বন্ধ।শপিং মল থেকে ইকটু দূরেই একটা ফুচঁকার স্টল দেখতে পেলাম আমি।সারাদিন রোজা রেখে আর নিজেকে সামলাতে পারলাম না।আমার পাশে দাড়ানো ছিলো শরৎ ভাই আমি ওনাকে ফিসফিস করে বলে উঠলাম…

“শরৎ ভাই,,,,,।”

শরৎভাই ভ্রু উচিয়ে জিঙ্গেস করলেন…

“কী হয়েছে?”

“ইফতারের সময় হয়েছে,পুরোটাদিন কতো দৌড়া-দৌড়ি করলেন,রোজা তো ভাংতে হবে নাকি?সামনেই ফুচকার স্টল বসেছে চলেন দুজনে মিলে রোজাটা ভেঙ্গে আসি।”

আমি এমন মিষ্টি কথা শুনে হুহু করে হেঁসে দিলেন শরৎ ভাই বলে উঠলেন…

“ফুচঁকা খাবি বললেই পারতি।আমি এতোটাও কিপ্টে নই যে তোকে ৬০ টাকা প্লেটের ফুচঁকা খাওয়াবো না।”

আমি আবেগ আপ্লুত হয়ে ওনার পিঠে হালকা করে চাপড় (বাড়ি) মেরে বলে উঠলাম…

“এই না হলে আমার শরৎভাই, চলেন চলেন।”

শরৎভাই মনে মনে হাসঁলেন।যা তার চেহারাতেই ফুটে উঠেছে।

“মামা ঝাল করে দুইটা ফুচঁকা দিয়েন তো!”

কথাগুলো বলেই চেয়ারে বসে পড়লাম আমি।আমার সামনা সামনি শরৎ ভাই।তিনি বললেন…

“২ প্লেট কেনো?”

“ওমা আপনি খাবেন না?”

“না আমি ওসব ঝাল টক ফক খাই না।”

ওনার কথা শুনে আমি মামাকে বলে উঠলাম…

“মামা একটাতে মিষ্টি টক দিয়েন তোহ্।”

শরৎভাই কিছু বললেন না। পকেট থেকে ফোন বের করে ফোন টিপতে লাগলেন।

“লন আফা।”

কথাটা বলেই ফুচঁকাআলা মামা দুই প্লেট ফুচঁকা আমাদের জন্য বরাদ্দকৃত টেবিলের ওপর রেখে চলে গেলেন।আমি ফুচঁকা খেতে লাগলাম এক মুহুর্তও দেড়ি করলাম না।কিন্তু শরৎ ভাইতো শরৎভাইই।ফোন টিপছেন তো টিপছেনই কোনো রকমের হেল দোল নেই তার।আমার মাথায় হুট করেই একটা দুষ্টু বুদ্ধি চেঁপে গেলো।আমার ফুচঁকার প্লেট থেকে একটা ফুচঁকা নিয়ে আচমকাই শরৎভাইয়ের মুখে ঢুকিয়ে দিলাম আমি।হুট করেই এমন কান্ডের জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলেন না তিনি।আমার দিকে তাকালেন শরৎভাই তার চাহনীই বলে দিচ্ছে তার অসীম রাগের কথা।তবে কেনো যেনো ভয় হলোনা আমার ভিষণ হাঁসি পেলো হুট করেই শব্দ করে হেঁসে দিলাম আমি।কিন্তু আমার হাঁসি আর স্থায়ী রইলো না।শরৎভাইয়ের দিকে ফিরে দেখতেই হালকা ভয় পেলাম আমি।ওনার চোখ মুখ লাল হয়ে গিয়েছে ঝালে।আমি উপায় না পেয়ে ওনার সামনে থাকা দোকান থেকে ঠান্ডা পানি এনে ওনাকে দিলাম।টপটপ করে এক বোতল পানি আমার চোখের সামনে শেষ করে ফেললেন উনি।তারপর রাগী গলায় বলে উঠলেন…

“এরপর থেকে আমার সাথে এমন ধরনের মজা করতে আসার আগে ১০ বার ভাববি শ্রীজা,তোর সাথে ভালো করে কথা বলছি মানে এই নয় যে এই ধরা-বাঁধা সম্পর্কটাকে আমি মেনে নিয়েছি।আমি জাস্ট তোর সাথে নরমাল হতে চেয়েছি ব্যাস,তুই বেশি বেশি করলে আগের ফ্রমে ফিরতে বাধ্য হবো আমি।আর একটা কথা ভালো করে মাথায় ঢুকিয়ে নে,আমার সাথে প্রেমিক বা স্বামী টাইপ বিহেভ করতে আসবি না একদম,এই সম্পর্কটা সম্পূর্ণ নামে,কিন্তু এই সম্পর্কের কোনো প্রাণ নেই।”

বলেই স্থান ত্যাগ করলেন উনি।আমি ওনার যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলাম।লোকটা অদ্ভুদ, অদ্ভুদ তার দেয়া কষ্টগুলো,অদ্ভুদ তার হাঁসি,অদ্ভুদ সে নিজেই আর এই অদ্ভুদময় লোকটাকেই বড্ড বেশি ভালোবেসেছি আমি।ভালোবাসার অদ্ভুদ সেই দহনে পুড়ে মরছি প্রতিনিয়তই।তবে কী কোনোদিনও লোকটা আমায় বুঝবে না??

#চলবে…