অবেলায় তোমার আগমন পর্ব-১২+১৩

0
502

#অবেলায়_তোমার_আগমন🥀
#Adrrija_Aman(লেখনিতে)
#পর্ব_সংখ্যা_১২
উত্তাপ ছড়িয়ে আছে চারপাশে খা খা রোদ্দুর,রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলেছে এক যুবক বাড়ি ফেরার তারা তার।ঘর্মাক্ত সর্বাঙ্গ, কপাল বেয়ে বেয়ে পড়ছে ঘাম।আশেপাশের নানান যানবাহনের হর্নের শব্দ শোনা যাচ্ছে,যা খুবই বিরক্তিকর।বিরক্তিতে ভ্রুজোড়া কুঁচকে নিলো সে।বয়স ২৫-২৭ এর মাঝামাঝি রক্ত গরম।যখন তখন মাথায় রাগ চেপে বসে।আশপাশটায় তাকালো একবার।যানজটে ভরপুর রাস্তাঘাট মনচায় এ দেশ ছেড়ে অন্য দেশে পাড়ি জমাতে তার,কিন্তু মাতৃভূমির প্রতি অন্যরকম এক ভালোবাসার মায়াজাল আটকে রাখে তাকে।পরিবারের একমাত্র ছেলে সে, বাবারও বয়স হয়েছে মোটামোটি, এখন ঘরে বেকার বসে থাকা মানে অন্ন ধ্বংস করাই মনে হয় শরৎয়ের।ভালো একটা প্রাইভেট কম্পানির মেনেজারের পদে রয়েছে সে,বেতন মোটামোটি ভালোই বাবা ছেলের রোজগারে সংসার চলছে কোনোরকম টানা-পোরা ছাড়াই।লইয়ার বা ব্যারিস্টারি পড়াটা ইচ্ছে শরৎতের তাই পড়ছে সে।তবে বাবার টাকায় ফুটানি করতে একদমই ইচ্ছুক নয় শরৎ তার কাছে এসব কাপুরুষতা ছাড়া কিছুই মনে হয় না।আজ বাড়িতে দ্রুত ফেরার তারা রয়েছে তার।বাবা মা ফুপির বাড়ি গিয়েছেন ফিরবেন ২ দিন পর,গুরুজন তারা কিসব ব্যাক্তিগত পরামর্শ করার আছে তাদের তা শুধু মাত্র তাদেরই জানা।বাবার গাড়ি থাকা শর্তেও তা নিজের ব্যাক্তিগত কাজে ব্যাবহার করতে ইচ্ছুক নয় শরৎ তার মতে যেদিন সে নিজের টাকায় গাড়ি কিনতে পারবে সেদিনই তার গাড়ি দিয়ে সে ব্যাক্তিগত কাজ কর্ম করবে।বাড়ি ফিরতে হবে দ্রুত শ্রীজার সকল দ্বায়িত্ব-ভার এখন শরৎতের হাতে।সম্পূর্ন একা বাড়িতে রয়েছে মেয়েটা।ফিরবার সময় কি যেনো মনে করে একটা চকলেট ফ্লেবারের একটা বাটি আইসক্রিম নিয়ে নিলো শরৎ।শ্রীজার সাথে কাল এমন ব্যাবহার করাটা মোটেও ঠিক হয়নি তার এই ভেবে মনে মনে অনুতপ্ত বোধ করলো সে।আইসক্রিম দিয়ে যদি তার রাগ ভাঙ্গে।লিফ্টের বাটনে চাপ দিয়ে একা একা দাড়িয়ে রইলো লিফ্টের ভেতর হাতে অফিস ব্যাগ আর আইসক্রিম।৮ তলায় পৌছাতেই লিফ্টের দরজা আপনা আপনি খুলে গেলো, ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো শরৎ, সদর দরজার সামনে গিয়ে কর্নিংবেল এ চাপলো সে কিন্তু কোনো শারা-শব্দ নেই, কেউ এসে দরজা মেললো না।প্রায় ৩বার চাপার পরও যখন কেউ দরজার খুললো না।শরৎ তার পার্সোনাল চাবিটা দিয়ে দরজা খুলে ঘরের ভেতর প্রবেশ করলো।বাড়ির পরিবেশ একদম শীতল, চারিপাশে কারো শারা-শব্দ নেই্।শরৎ তার ঘরের দিকে এগিয়ে গেলো।কয়েক কদম এগিয়ে যেতেই তার কর্ণকুহরে
প্রবেশ করলো কারো গোঙ্গানির আওয়াজ।মেয়েলি কন্ঠ, বাড়িতে শ্রীজা ছাড়া তো আর কেউ নেই।মনে অজানা ভয় হানা দিলো শরৎয়ের দ্রুত পায়ে হন্তদন্ত হয়ে নিজের ঘরে প্রবেশ করলো সে।একটু এগিয়ে গিয়ে দেখতে পেলো শ্রীজাকে,বিছানার ওপর আধশোয়া হয়ে বসে আছে মেয়েটা মাথার একপাশে বালিশ,গায়ের হালকা করে ওপর কাথা জড়ানো।বা হাতটা পেটের এক কোণায় চেঁপে ধরে চোখ দুটো বুজে আছে সে,অতিরিক্ত মাত্রায় ব্যাথা হওয়ায় হালকা কাদঁছে তবে চোখের কোণে কোনো পানি নেই।চুলগুলো ছেড়ে দেয়া,এলোমেলো ভাবে ছড়িয়ে আছে।শরৎতের বুঝতে বাকি রইলো না শ্রীজা কাদঁছে কেনো,বা কি ঘটেছে।শরৎ ব্যাগ আর আইসক্রিমের বাটিটা একটা টেবিলের এক কোণায় রেখে এগিয়ে গেলো শ্রীজার দিকে।বিছানার ওপর গিয়ে বসলো সে।শ্রীজার দিকে তাকিয়ে হালকা নরম স্বরে বলে উঠলো…

“বেশি ব্যাথা করছে? ”

আচমকা শরৎভাইয়ের উপস্থিতি টের পেয়ে চমকে উঠলাম আমি।কখন এলেন লোকটা?দ্বিধা দন্দ নিয়ে লজ্জায় মাথা নাড়ালাম আমি।আমার কথা শুনে ঘর থেকে টুপ করে বেরিয়ে গেলেন উনি, যাওয়ার আগে বলে গেলেন…

“চুপচাপ এখানে বসে থাকবি লড়বি না একদম,আমি আসছি।”

আমি ওনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম।মনে একটাই প্রশ্ন জেগে উঠলো..

“কোথায় গেলেন উনি?”

সদর দরজাটা পেছন থেকে লক করে, বাড়ি থেকে বাহিরে চলে এলো শরৎ বাড়ির কাছেরই একটা ফার্মেসি থেকে কিছু নাপা ট্যাবলেট সহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি কিনে নিলো সে।বাড়ির দরজা খুলে এগিয়ে গিয়ে দেখলো শ্রীজা চোখজোড়া বন্ধ করে চুপ করে শুয়ে আছে ও।শ্রীজার পাশে গিয়ে দাড়ালো শরৎ একটা শপিং ব্যাগ এগিয়ে দিয়ে বললো…

“নে, এটা তোর আর দ্রুত আয়,আমি মায়ের ঘরে আছি।কাজ শেষ হলে ডাকবি আমাকে।”

শরৎ ভাইয়ের কথা শুনে বালিশ থেকে মাথা উঁচিয়ে তার দিকে তাকালাম আমি।ওনার হাতে থাকা ব্যাগটা টেনে নিলাম।উনি দেড়ি করলেন না দ্রুত পায়ে হেটে চলে গেলেন।আমি দরজা আটকে দ্রুতপায়ে চলে গেলাম ওয়াশ রুমে ফ্রেশ হবার প্রয়োজন।ফ্রেশ হয়ে এসে ঘরের বিছানার চাদরসহ গিভিন্ন আসবাব পত্র পাল্টে ঘর দোর ঘুছিয়ে নিলাম, পাশের টেবিলে থাকা নাপা ট্যাবলেট টা দেখে মুঁচকি হাসঁলাম আমি।ট্যাবলেটের পাতা থেকে একটা বড়ি নিয়ে পানি সমেদ পান করলাম সেটাকে।দরজা খুলে দিলাম দরজা খোলার শব্দ শুনে ঘরের দিকে এগিয়ে এলেন শরৎভাই।হাতে কিছু খাবার জিঙ্গেস করতেই বললেন…

“অনলাইন থেকে অর্ডার করিয়েছি খালি পেটে থাকলে শরীর খারাপ করবে তোর।”

আমি ওনার দিকে একবার তাকালাম এরপর বিছানার ওপর গিয়ে বসলাম।উনি আমার পাশে এসে বসলেন,খাবার নাড়তে নাড়তে বন্ধুর ন্যায় বলে উঠলেন…

“চুপ চাপ খাবি তুই, কথা কম বলবি আমি যা যা বলবো তা মোনোযোগ দিয়ে শুনবি।”

আমি ভালো মেয়ের মতো মাথা নাড়লাম।উনি এক লোকমা খাবার এগিয়ে দিলেন আমার দিকে ভদ্র মানুষের মতো সাদরে গ্রুহণ করলাম আমি, নাহলে কখন রেগে যাবে কে জানে?
উনি আবারও খাবার নাড়তে নাড়তে বলে উঠলেন…

“দেখ শ্রীজা তুই এখন ছোট নস,যথেষ্ট বড় হয়েছিস তুই!তাই না?”

আমি খাবার খেতে খেতে বলে উঠলাম…

“হুম।”

খাওয়ার চোটে আমি কথা বলতে পারছি না,তা দেখে হাঁসলেন উনি।ওনার সেই সুন্দর হাঁসি যা বরাবড়ই আমায় মুগ্ধ করে।উনি বললেন…

“তাহলে হুট হাট এমন বোকামো করার মানে কি?”

আমি বুঝলাম না।অবুঝের মতো তার দিকে তাকালাম, তারপর অসহায় কন্ঠে বলে উঠলাম…

“কি বোকামি শরৎভাই?”

উনি ঠান্ডা স্বরে হালকা হেঁসে বললেন…

“কাল বিকেলে তুই যে এতো ঝাল ফুঁচকা হুট করে আমার মুখে পুরে দিলি,তার আগে একবার জিঙ্গেস করেছিলি আমি ঝাল খাই কিনা?বা সহ্য করতে পারি কিনা?”

কেনো যেনো নিজের বোকামোর জন্য কান্না পেলো আমার।নিজেকে সামলাতে পারলাম না।চোখ ভিজে এলো কাঁদো কাঁদো গলায় বলে উঠলাম…

“আমি বোকা শরৎ ভাই,আমি সরি,আর হবে না প্রমিস।”

আমায় কাঁদতে দেখে ভকরে গেলেন শরৎ ভাই।তিনি হয়তোবা জানেন এই সময়টাতে মেয়েদের মুড সুইং বেশি হয় তা কারণে অকারণে।উনি আমায় সামলানোর জন্য বলে উঠলেন…

“হুদাই এমন বোকামি করলি তুই কাল!তুই তো জানিস তোর শরৎ ভাই কত্তো রাগী,জানিস না? ”

“হুম, অনেক রাগি আপনি।”

উনি ওনার বা হাতের বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে আমার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে উঠলেন…

“এমন বোকামি করবি আর?”

আমি বাচ্চাদের মতো মাথা নাড়ালাম।ঠোঁট ফুলিয়ে বললাম…

“নাহ্ আর হবে না,প্রমিস।”

“প্রমিস দিয়ে ভুলে যাস তুই,ছোট বেলার স্বভাব তোর এটা।”

আমি নাক ফুকিয়ে বললাম…

“যাও, পাক্কা প্রমিস।”

উনি হাত ধুলেন।মুখ মুছে দিয়ে বলে উঠলেন..

“পাক্কা তো?”

“হুম পাক্কা।”

“তাহলে ভদ্র মেয়ের মতো শুয়ে পড়,রাতে একসাথে হরোর মুভি দেখবো আর পিজ্জা খাবো কেমন?”

আমি বললাম…

“আচ্ছা।”

শ্রীজাকে রেখে এসে ঘর থেকে বেরিয়ে এলো শরৎ।মায়ের ঘরের বেলকণিতে গিয়ে দাড়ালো সে।আকাশের দিকে তাকালো একবার সেখানে হুট করেই ভেসে উঠলো তনুর মুখোশ্রী।প্রিয়তমার মুখোশ্রী চোখের সামনে ভেসে উঠতেই আঁখি দয় বদ্ধ করে নিলো সে।মন তাকে ক্রুদ কন্ঠে বলে উঠলো…

“বিশ্বাস ঘাতক সে।”

সে কন্ঠস্বর শরৎ ছাড়া আর কেউ শুনলো না।চোখের কোণে জল ভেসে ওঠার আগেই তা মুছে ফেললো সে।সে জানে ছেলেদের কাঁদতে নেই।ভালোবাসার প্রতি রাগ অভিমান দেখাতে নেই,সব ব্যাথা শুধু নিরবে সয়ে যেতে হয়।সবাইকে ভালো রাখতে হয়।নিজের ভালো থাকাকে ভুলে।

#চলবে…

#অবেলায়_তোমার_আগমন🥀
#Adrrija_Aman(লেখনিতে)
#পর্ব_সংখ্যা_১৩
[✖️কার্টেসি ছাড়া কপি নিষিদ্ধ✖️]

শ্রীজা ঘুমিয়ে আছে।শরৎ তার মায়ের ঘরে বসে আছে।কিছু ভাবছে হয়তোবা কি ভাবছে তা সে ছাড়া আর কেউ জানে না,মনের কথা তো মনের মালিকই জানে।শরৎতের মায়ের ঘরে শ্রীজার ফোনটা ছিলো।হুট করে বেঁজে উঠতেই শরৎ ফোন তুললো,ফোনের স্কিনে ভাসা নামটা দেখার প্রয়োজনবোধ করলো না সে।ফোনটা কানে নিয়ে কিছু একটা বলতে যাবেই ঠিক সেই মুহুর্তেই কর্ণপথে প্রবেশ করলো অতি পরিচিতা এক মেয়েলি কন্ঠ কতো রাত, কতো দিন কতো ধরনের কথা বলতো সে কন্ঠের মালকিন শরৎকে।চেনা কন্ঠস্বর শুনতে পেয়েই অনেকটা অবাক হলো শরৎ মেয়েলি কন্ঠের মালকিন মুঠোফোনের অপর প্রান্ত থেকে চিকন স্বরে বললো…

“কেমন আছিস শ্রীজা?মনে পড়ে না বুঝি অনু দি কে?”

কি উত্তর দিবে শরৎ?প্রিয় বালিকার প্রশ্নের প্রেক্ষিতে।শরৎ দির্ঘশ্বাস ফেললো গম্ভীর হয়ে উঠলো তার সাধারণ মুখোশ্রী।শুষ্ক পুষ্পের ন্যায় মিলিয়ে গেলো তার চোখের উজ্জলতা।হিম শীতল কন্ঠে সে বলে উঠলো…

“ভালো নেই আমি,শ্রীজার খবর জানি না।আর আমার অনু তো আমার নয়,অন্য কারো হয়তোবা,তানা হলে সাজানো গোছানো কল্পনায় আঁকা সংসার পূর্ণতা পাবার আগেই সে তার প্রিয় পুরুষটি কে একাকিত্বর অতল গভীরে তলিয়ে যেতে দিতো না।”

কেঁপে উঠলো অনু ফোনের অপর প্রান্তে যে শরৎ আছে।নিজেকে অবিশ্বাস করলো অনু তবে যা নিজ কানে শ্রোবন করেছে তা কি করে ভুল হয়?কখনো হয় না।একটি দুটি শব্দ নয়,অনেকটা বেদনাযুক্ত বাক্য শুনেছে সে।সে বাক্যে প্রকাশ পাচ্ছে কোনো এক প্রেমিক পুরুষের একাকিত্বের বহিঃপ্রকাশ, প্রকাশ পাচ্ছে নিজ ভালোবাসার কাছে ঠকে গিয়ে সে নির্মম যন্ত্রনায় জড়জরিত হয়ে যাওয়ার পর হিম শীতল আর্তনাদ।যে আর্তনাদ খুবই শান্ত যে আর্তনাদে নেই চিৎকার নেই কারো প্রতি ধিক্কার আর নেই, না আছে কোনো হিংস্রতা। শুধু আছে কারো প্রতি একরাশ অভিমান,কিছু প্রতিশ্রুতি মিথ্যে প্রনাণিত হওয়ার কষ্ট।অনু কাঁপাকাঁপা কন্ঠে বললো…

“শ শরৎ তুমি।”

শরৎ খানিকটা হাসলো স্নানভাবে।বললো…

“তোমার কন্ঠে আর আগের মতো মাধুর্যতা নেই অনু,শুধু কি আমার জন্য নেই?”

অনু ভকরে গেলো।শরৎতের কন্ঠে রাশি রাশি অভিমান।কি বলবে অনু? সে যে অন্যের স্ত্রী।আচ্ছা শরৎ কি আদেও জানে?অনু বিবাহিত।অনু বললো…

“অতীতকে মনে রেখে কি লাভ শরৎ?সব কিছু নতুন করে শুরু করা যায় না?”

শরৎত বললো…

“অতীতের সব কিছুই তো শুরু তুমি করেছিলে অনু,সর্ব প্রথম ভালোবাসি বলেছিলে তুমি।আমি না।রাজি না হওয়ার পর পর রাত ভর কেঁদেছিলে তুমি।কতেশতো চেষ্টা তোমার শুধু আমাকে পাবার জন্যে ছিলো।ওসব কি তবে আবেগ ছিলো?সে বয়সের আবেগে পড়ে আজ বিবেকের কাছে মাথা নত করে নিলে তুমি?আর পড়ে রইলো আমার ঠুনকো কিছু অনুভূতী যারা সর্বদাই মূল্যহীন।”

“কারো অনুভুতী মূল্যহীন হয় না শরৎ।যে মূল্য দিতে জানে তার কাছে নিজের অনুভূতীগুলো সপে দিতে হয়।”

“আমি কি মূল্য দিতে জানতাম না অনু?”

আচমকা এমন প্রশ্নের উত্তরে কি বলবে ভেবে পেলো না শরৎ বললো…

“জানতে শরৎ কিন্তু…

অনুকে কিছু বলতে না দিয়ে শরৎ বলে উঠলো…

“কিন্তু আমার ভালোবাসায় কমতি ছিলো।”

অনু কিছু বলতে যাবেই তখন মিহাদের ডাক…

“অনু কোথায় থাকো সারাটা দিন তুমি?আমার মানিব্যাগ খুঁজে পাচ্ছি না। কোথায় রাখলাম, ইকটু দেখো তো।”

ফোনের অপর পাশ থেকে অন্য পুরুষের এমন কথা শুনতে পেয়ে মনের মাঝে সন্দেহের দানা বিধে গেলো শরৎতের।অনু কি বলবে বুঝে উঠতে পারলো না,ধীর কন্ঠে মিহাদকে বললো…

“আরেহ্ ড্রেসিং টেবিলের ওপরেই তো আছে খুঁজে দেখো পেয়ে যাবে।”

মিহাদ মুঁচকি হাসঁলো, কথা না বাড়িয়ে চলে গেলো নিজের কাজে।

অনু ফোন কানে নিতেই শরৎ প্রশ্ন করলো…

“কে ছিলো?”

অনু বললো…

“আমার হাসবেন্ড,মিহাদ।”

“তোমার বেষ্টফ্রেন্ডের নামও তো মেবি মিহাদ ছিলো?”

অনু অস্বস্তি নিয়ে বললো…

“হুম ওই মিহাদ আমার হাসবেন্ড।”

“বিয়েও করেছো দেখছি।”

অনু কথা কাটাতে বলে উঠলো…

“শ্রীজা মেয়েটা খারাপ না আমার বোন ও,আমি জানি ও তোমায় খুব বেশি ভালোবাসে।হয়তোবা আমি বাসতে পারিনি,জোড় করে বিয়েটা হলে ৪টে জীবনই নষ্ট হয়ে যেতো শরৎ। তাই এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছি আমি।আমি জানি অতীত ভোলাটা অতোটাও সহজ না যতোটা আমরা মনে করি, কিন্তু সবটা নতুন করে শুরু করা উচিঁত। পুরোনো মরিচিকার পেছনে আর কতোদিন পড়ে থাকবে বলো?”

“আমি তো শ্রীজাকে ভালোবাসি না অনু!ওকে হয়তোবা কখনো স্ত্রী রূপে গ্রহণও করতে পারবো না।এমনটা করার খুব বেশি প্রয়োজন ছিলো না।সব কিছু তো জোড় দিয়ে হয় না।জোড় দিয়ে করার চেস্টা করলে হয়তোবা শ্রীজাকে ঠকানো হবে।আমি জানি ঠকে যাওয়ার কষ্ট কতো, তাই অন্য কাউকে এ কষ্টে জড়াতে চাই না। সে যাই হোক ভালো থেকো তোমার স্বামী আর সংসার নিয়ে। ভালোবাসার মানুষকে পেয়েছো সৌভাগ্য তোমার আগলে রেখো।”

বলে আর দেড়ি করলো না শরৎ টুপ করে ফোনের লাইন টা কেঁটে দিলো সে।সে চায় সকলে ভালো থাকুক দিন শেষে সে মানুষগুলোই ভালো থাকে যারা ঠকিয়ে যায়।আর গুমরে মরে তারা যারা ঠকে যায়।যেখানে পুরো পৃথিবীই মিথ্যের দখলে সেখানে মানুষের অনুভুতীতো ঠুনকো ব্যাপার।

সময় প্রবাহমান কারো জন্য অপেক্ষা করে না।সময়ের বেগে কেটে গিয়েছে আরো ১ টা সপ্তাহ্।শরৎত ভাইয়ের মা মানে আমার মামনি আর মামু বাড়ি ফিরেছেন সপ্তাহ্ খানিক হলো।একা ফিরেছেন বললে ভুল হবে।সঙ্গে নিয়ে এসেছে ৪ বছর বয়সের ছোট্ট রূপ কে।আদর করে সবাই গুড্ডু বলে ডাকে তাকে।শরৎ ভাই হালকা ব্যাস্ত বরাবরের মতোই খুব বেশি কাজ তার।আমি এখন বসে আছি গুড্ডু সাথে গুড্ডুর মাথায় একটা সবুজ রঙয়ের ওড়না বাঁধা।পেটটা ঢোলের মতো ফুলে রয়েছে গায়ে সাদা রঙয়ের হাতা কাটা একটা পাতলা গেন্জি।ফ্লোরে দুপা ছড়িয়ে বসে আছে সে।তার সামনে রয়েছে নানান রকমের ফল মাল্টা,আনারস,কমলা ইত্যাদি বেশি না ২ একটা করে।আজ সে পাক্কা ব্যাবসায়ী হয়ে গিয়েছে আর আমি তার কাস্টমার।গুড্ডু আমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো…

“নেপেন নেপেন মলতা ৫ তাকা কলা ৭তাকা কেচি(কেজি) নেপেন নেপেন।”

“কমলা কতো করে ভাই?”

সে হাত উঁচিয়ে হাতের আঙ্গুল গণে গণে বললো…

” এক,তুই,চাত,নয়,দশ, দশ তাকা কমলা নেপেন নেপেন।”

“আমাকে এক কেজি মাল্টা দিয়েন তো সাহেব,”

বলেই আমার পাশে বসে পড়লেন শরৎ ভাই।”

গুড্ডু সব ফল তার দিকে টেনে হেচঁরে নিয়ে গেলো বললো…

“না গুতু চলাত কে দেপে না।”

শরৎ ভাই ভ্রু কুঁচকে গুড্ডুর দিকে তাকালেন বললেন…

“কেনো শরৎকে দেবে না কেনো?”

গুড্ডু বললো…

“চলাত পঁসা তাই দেপে না। ”

ইকটু থেমে বললো…

“চলাত আমাল জননো চিপ আনেনি জুচ আনেনি,তাই গুতু দেবে না।”

শরৎ ভাই গুড্ডুর পাশে গিয়ে বসলেন বললেন…

“আরে আমি টাকা দেবো তো।”

গড্ডু মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বললো…

“না দেপে না চলাতকে গুততু,তাকা চাই জুচ,চিপও চাই।”

শরৎভাই গুড্ডুকে কোলে নিয়ে নিলেন,কাতুকুতু দিতে দিতে বললেন…

“ওরে সুবিধাবাদী।তোকে তো দিতেই হবে।”

গুড্ডু হাত পা নাড়িয়ে জোড়ে জোড়ে খিলখিলিয়ে হাঁসতে লাগলো আর বললো…

“না গুতু চলাত কে দেপে না চলাত বালো না,পসাঁ।

#চলবে…