অবেলায় তোমার আগমন পর্ব-২৪+২৫

0
434

#অবেলায়_তোমার_আগমন🥀
#Adrrija_Aman(লেখনীতে)
#পর্ব_সংখ্যা_২৪
[✖️কার্টেসি_ছাড়া_কপি_নিষিদ্ধ✖️]

“শোন ফ্রিজে মাংস তরকারি আছে।আর আমি ভাত রান্না করে রেখেছি।আমার আসতে দেরি হলে ওটা গরম করে খেয়ে নিবি।আর বুকসেল্ফে বই আছে,টিভি তো আছেই বোর হলে বই পড়বি আর টিভি দেখবি্। সময় কেঁটে যাবে এমনি এমনি।”

“উফফ ভাবি তুমি কি আমাকে বাচ্চা মেয়ে মনে করো নাকি?আমি একা একা থাকতে পারবো কিন্তু তোমরা তারাতাড়ি চলে এসো কেমন?একা একা থাকতে আমার মোটেও ভালো লাগে না।”

আমি হালকা হেঁসে চারুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে ওকে বিদায় জানিয়ে চলে এলাম।
নিচে এসে দেখলাম শরৎ ভাই রোডে একটা রিকশা ভাড়া করে নিয়েছেন।রিকশায় বসে কিছুক্ষণ চুপ করে রইলাম আমি।চারিপাশে পিনপতন নিরবতা।নিশ্চুপ দুজন।আমার মনে হলো নিরবতা কাটিয়ে আমারই আগে কিছু বলা উচিঁত কিন্তু পরমুহুর্তে আমার ইগো আমাকে চেঁপে ধরলো সবসময় আমি কেনো কথা শুরু করবো?মান অভিমানের পালা শেষইবা আমিই কেনো করবো?এসব ভেবে শরৎ ভাইয়ের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলাম আমি।শহরের নানান অলি গলি ছোট খাটো রাস্তা দিয়ে শর্টকার্টে যাওয়ার একটা টেকনিক ইউস করছেন মামা(রিকশাআলা)
অলিগলি গুলোতে তেমন একটা যানজট থাকে না বলতে গেলেই একদমই থাকে না নানান অলিগলি পেরিয়ে মামা মেনরোডের দিকে রিকশা চালানো শুরু করলেন।শরৎ ভাই লোকটাকে একম বুঝি না আমি, কেমন যেনো গোলমেলে বললেই চলে।এই এতো ভালোবাসা দেখায় আবার এই সন উবে যায়,ওনার এসব কান্ডে মাঝে মাঝে কনফিউজড হয়ে পড়ি আমি।মাঝে মাঝে মনে হয় লোকটার আমার প্রতি কোনো ফিলিংস আছে আবার মনে হয় না আমার জন্য ওনার মনে তেমন কিছুই নেই যা আছে তা শুধু দ্বায়িত্ব আগের মতো করে এখন কষ্ট পাই না আমি।মনে হয় লোকটা আমার হবে হয়ে গেছে বিয়ে নামক পবিত্র বন্ধনের বাঁধটাতো এতোটাও ঠুনকো নয় যে সামান্য অতীতের জেরায় তা ছিড়ে যাবে শেষ হয়ে যাবে।বরং এ সম্পর্কের বাঁধন অনেক শক্ত পবিত্রতা রয়েছে এ সম্পর্কে যে সম্পর্কে পবিত্রতা থাকে তা কি আদেও এতো সহজে ভেঙ্গে যায়?এতোটাই সোজা এ সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসা!এ সম্পর্কের মায়াজাল ছিন্নকরা!

ভার্সিটিতে পৌঁছে আমাদের ভবনের দিকে যাচ্ছি আমি সাথে শরৎ ভাই রয়েছেন।আজ বোধয় ক্লাসে রেখেই যাবেন আমাকে।দুদিন ধরে খুব চোখে চোখে রাখছেন আমায় উনি।কেনো রাখছেন বিষয়টা আমার অজানা নয়।তবে এই বিষয়টা নিয়ে শরৎ ভাইকে ক্ষেপাতে বেশ লাগছে আমার।ভার্সিটির মাঠে হুট করেই সামি স্যারের সাথে দেখা,আচমকা এভাবে এতোদিন পর সাক্ষ্যাত হবে ভাবতে পারিনি আমি স্যারও হয়তোবা ভাবতে পারেনি।তাই তো আমার দিকে এভাবে অবাক হয়ে চেয়ে ছিলেন উনি।আমি ওনাকে দেখে সম্মানের সূত্রে সালাম দিলাম।উনি সালামের উত্তর দিয়ে বললেন…

“আরে শ্রীজা যে!কেমন আছো?এখন তো ভার্সিটিতে দেখাই যায় না তোমায়।কোথায় থাকো তুমি?ছাত্রী হলের আশেপাশেও দেখি না তেমন।ব্যাপার কি বলোতো।”

আশেপাশে অনেক স্টুডেন্ট যে যার মতো হেঁটে চলছে।অনেকে ক্লাস না করে ঘুরাঘুরি করছে, আড্ডা দিচ্ছে।যে যার যার মতো এখানে কেউ কারে দিকে নজর দেয় না মানে কোনো বেশি সিরিয়াস বিষয় না হলে বা চোখে লাগার মতো কিছু না হলে তারা অন্য বিষয় নিয়ে তেমন মাথা ঘামায় না।নুপুর, রিদা,আঁচল কে দেখতে পাচ্ছি না আমি।কোথায় গেলো মেয়েগুলো?এ সময়ই তো হল থেকে বেরোয় ওরা।

স্যার আমাকে কিছুটা অমনোযোগী হতে দেখে এবং তার কথার উত্তর না দেয়াতে স্যার তার হাত আমার চোখের সামনে নাড়ালেন বললেন…

“এই যে কিছু বলছোনা যে?কি ভাবছো এতো?”

“না না তেমন কিছু না আসলে অনেক দিন পর ভার্সিটিতে এলাম তো তাই ক ক্যাম্পাসটা দেখছিলাম আরকি।”

“অনেক দিন পর বলতে?আমার জানা মতে তুমি ছাত্রী হলেই থাকো।আর জা.বির ছাত্রীহল বিশ্ব-বিদ্যালয়ের মাঝেই। তাহলে কি করে অনেক দিন হলো?”

যদিও কথা বলার ইচ্ছে ছিলো না আমার তাও সম্মানের খাতিরে, আমি হালকা হেঁসে স্যারকে বললাম…

“আমি তো এখন ছাত্রী হলে থাকি না স্যার!”

আমার কথা শুনে স্যার অবাক হয়ে বললেন…

“কোথায় থাকো তাহলে?”

“এই তো এই সাভারেই থাকি।”

উনি আর কথা ঘাটলেন না,কিন্তু পরেই আবার একটা আবদার করে বসলেন উনি, বললেন…

“যেহুতু অনেকদিন পর তুমি ভার্সিটিতে এসেছো তাই তোমাকে একটা ট্রিট দেয়াই যায়।হবে নাকি ফুঁচকা?”

স্যারের কথা শুনে আমার মনে হলো স্যার বোধয় ইচ্ছে করেই সাঁতার না জেনে জলে ডুব দিতে চাইছেন।আমি আমার জীবনে কোনোদিন কোনো মানুষকে নিজ ইচ্ছায় আগ বাড়িয়ে ট্রিট দিতে দেখিনি।আর বিষয়টা যখন স্যারের যাকে আমি ভালো করে চিনিও না তার ওপর বেস্টুর ক্রাশ টিচার সেখান ট্রিট গ্রহণ করাটা কিছুটা নিজ ইচ্ছায় সাপের গর্তে পা দেয়ার মতোই।যদি আমি ট্রিট নেয়াতে রাজি হয়ে যাই তাহলে দুটো নেগিটিভ ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে খুব…

আশঙ্কা নাম্বার ১.যদি রিদাকে না জানিয়ে কাজটা করি, আমার বেস্টুর (রিদা) সাথে রিলেশন বাজে হয়ে যেতে পারে বা ভালো একটা ঝগড়া হতে পারে।।

আশঙ্কা নাম্বার ২.ভার্সিটির কিছু সি সি ক্যামেরা এই কাহিনী কয়েকজন রচনাবিদদের কাছে গিয়ে বলবেন আর রচনাবিদগণ অনুচ্ছেদকে রচনা আকারে প্রকাশ করবেন।

এতে আমার আর স্যারের দুজনেরই ক্ষতি হবে।তাই বিষয়টা এরিয়ে যেতে চাইলাম আমি।কিছুটা বুদ্ধি খাটিয়ে বললাম…

“কিন্তু স্যার এই গরমে ফুঁচকা।তাও ঝাল আর টক দিয়ে, নির্ঘাত শরীর খারাপ করবে।”

“আচ্ছা যেহুতু গরম পড়েছে সেহুতু আইসক্রিম তো চলবেই।সাথে যদি আরো কিছু চাও তাহলে তাও পাবে।এমন সুযোগ সহজে হাত ছাড়া করতে নেই।চলো চলো।”

আমি আবারও মেকি হেঁসে স্যারকে বললাম…

“আইসক্রিম তো আমিও লাইক করি স্যার কিন্তু নোটস্।”

স্যার আমাকে আশ্বাস দিয়ে বললেন…

“আবার নোটস্ এর চিন্তা করছো তুমি।তোমার এই মাস থেকে আগামী ৩ মাসের নোটস্ এস্যাইনমেন্ট সব কালেক্ট করে দেবো আমি।সো নো চিন্তা জাস্ট চিল।”

স্যারের কথা শুনে কিছু বলতে যাবো তার আগেই খেয়াল করলাম।আমাদের কথোপকথন শুনে একটা লোক সাপের মতোন ফোঁস ফোঁস করছেন।শরৎ ভাইয়ের কর্ম-কান্ড দেখে সব নেগেটিভ পজেটিভ ভুলে গেলাম আমি।আবারও সময়ের সঠিক ব্যাবহারের সুযোগ পেয়েছি।যেহুতু নোটস্ এস্যাইনমেন্ট স্যার কালেক্ট করে দিবেন,আর ট্রিটও দেবেন।তার ওপর এসব দেখিয়ে দেখিয়ে আমি শরৎ ভাইকে আরেকটু ভালো করে টাইট দিতে পারবো সেহুতু এই সুযোগটা মিস করছি না আমি।সাপও মরবে লাঠিও ভাংবেনা।কথাটা ভেবেই আমি মুচঁকি হেঁসে স্যার কে বললাম…

“স্যার যেহুতু এতো করে বলছেন সেহুতু তো যেতেই হয়।শতো হোক গুরুজন আপনি সম্মানিতো মানুষ শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার মানুষ আপনি আপনার কথার খেলাফ করা যায় না চলুন।”

আমার কথা শুনে স্যার হাসঁলেন।আইসক্রিম খাচ্ছি আমি।দু হাতে দুটো আইসক্রিম পাশেই শরৎভাই দাড়িয়ে আমার পাশে শরৎ ভাইকে এভাবে দাড়িয়ে থাকতে দেখে এবং কিছুক্ষণ পর পর আমাদের ছোট খাটে কথোপকথন শুনে স্যার বললেন…

“ও কি তোমার কোনো রিলেটিভ হয়?”

“হ্যা উনি আ..”

আমি কিছু বলার আগেই শরৎ ভাই বললেন…

“ওর কাজিন হই আমি।”

স্যার শরৎ ভাইয়ের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললেন…

“নাইস টু মিট ইউ।আমি সামি জুবায়ের।শ্রীজার ভার্সিটির ইংরেজি ডিপার্টমেন্টের টিচার।”

শরৎ ভাই হালকা মুড নিয়ে হাঁসলেন শুধু।সামি স্যার আবারও বললেন…

“বাই দা ওয়ে আপনার নামটা কিন্তু এখনো জানা হলো না।”

শরৎ ভাই আবার তার অতিরিক্ত মুড নিয়ে নিঃশব্দে হেঁসে বললেন…

“আমি শরৎ। আম, বর্তমানে একটা বেসরকারি কম্পানিতে ম্যানেজার পদে আছি।আর ল নিয়ে স্টাডি চালিয়ে যাচ্ছি।”

শরৎ ভাইয়ের কথা শুনে সামি স্যার কিছুটা বাহবা দিলেন তার সাথে ভালো সময়ই আলাপ করলেন তিনি।তাদের আলাপন দেখতে দেখতে আমি ৩-৪ আইসক্রিম শেষও করে ফেললাম।

_______

কদিন ধরেই শ্রীজার ঝগড়াটে টাইপ মায়াবি মুখটাকে মিস করছে নাদিম।যার সাথে তার কদিন আগেই চুটিয়ে ঝগড়া হলো সেই মেয়েটাকে সে মিস করছে?সেদিন ঝগড়ার সময় নাদিম ওকে নিজের শত্রুই ভেবে নিয়েছিলো।বোকা একটা মেয়ে ওর ভালোর জন্য নাদিম ওকে সাবধান করতে গেলো আর মেয়েটা কিনা ওকেই গাল মন্দ করে দিলো।সাথে থ্রেট ফ্রি।শত্রুকে মিস।তবে শত্রু হলেও মেয়েটা দেখতে খুব মিষ্টি।কতোটা মায়া তার মুখশ্রীতে।হুট করেই নাদিমের মনে হলো না না এসব কি ভাবছে সে।এই জঘন্য একটা মেয়ে ঝগড়াটে মেয়ের প্রেমে পড়বে নাদিম।নাদিম রেজোয়ান।কিছুতেই না কোনোমতেই না।এসব ভেবে নিজেকে শক্ত করে নিলো নাদিম।তখনই তার মা নাইমা খাতুন এসে নাদিমের হাতে একটা ফির্ণির বাটি ধরিয়ে দিলেন।আচঁলে হাত মুছতে মুছতে বললেন…

“নে এটা ওপর তলার নতুন ভাড়াটিয়াদের দিয়ে আসবি।প্রথম দিন তো কিছুই দিতে পারলাম না, তাই আজ ফির্ণি করলাম, এটা দিয়ে আয় যা।”

নাদিম কিছুক্ষণ আগেই শপথ করেছে,বেশ কঠিনভাবেই করেছে এ মেয়ের সাথে এ জন্মে আর দেখা করবে না সে।যদিও মুসলিমের একবারই জন্ম এরপরই পরকাল।
তাই এই এক জন্মের অপব্যাবহার করতে চায় না সে এ মেয়ের সামনে গেলে নির্ঘাত আবার আরেকদফা ঝগড়া করে ছাড়বে।তাই ভেবে বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে ফেললো নাদিম।নাইমা খাতুনকে অলস ভঙ্গীতে বললো…

“মাআআআ,ভালো লাগছে না আমার।যাবো না আমি,আর দুদিন পর পর নতুন ভাড়াটিয়াদের এতো খাতির যত্ন করার কি আছে বলোতো?মনে হয় তুমি জামাই আদর করছো তাদের।যেতে পারবো না আমি।”

নাইমা খাতুন সারাদিনের পরিশ্রমে বেশ ক্লান্ত তার একমাত্র ছেলে নাদিম আর তার স্বামি নাইম এ দুজন মিলে তার জীবনের শষ্ঠী করে দিচ্ছে একেবারে।বিয়ের আগে নাইম আহমেদ্ এর জ্বালায় তিনি ভার্সিটিতেও যেতে ভয় পেতেন বেশ।সিনিয়র ছিলো নাইম র‍্যাগিং করা ছিলো নিয়মিত অভ্যাস নাইমের যদিও তা অজুহাত মাত্র নাইমা খাতুনকে তিনি বেশ পছন্দই করতেন ধীরে ধীরে ভয় থেকে প্রণয় হয় তাদের আর এই প্রয়ণের পরিনতি তো দেখতেই পাচ্ছেন।
নাইমা খাতুন রাগ নিয়ে বললেন…

“তুই কী যাবি?”

“আরে যাচ্ছি বাবা যাচ্ছি।”

এই বলেই নাদিম ফির্ণির বাটিটা নিয়ে শ্রীজাদের ফ্লাটে গেলো।কর্নিংবেল এ চাপ দিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো।

ঘরে বসে টিভি দেখে সময় ব্যায় করছিলো চারু।হঠাৎ কর্নিংবেলের আওয়াজে সে মনে করলো শ্রীজা এসেছে অথচ শ্রীজা তাকে বার বার বলে দিয়েছিলো দরজা খোলার আগে চেক করে নিতে কে এসেছে।দরজার সামনে অপরিচিত একজন লোককে দেখতে পেয়ে চারু বললো…

“কে আপনি?এখানে কেনো এসেছেন কি চাই?”

নাদিম শিষ বাজিয়ে বললো…

“বাবাহ্ এতো প্রশ্ন একসাথে।ভালো প্রশ্ন করা ভালো।এটা আপনাদের জন্য(বাটি টা হাতে দিয়ে)।”

দরজার ভেতরে উকি ঝুঁকি দিয়ে নাদিম বললো…

“বাই দা ওয়ে মিস ঝগড়াটি কে তো দেখছি না কোথায় সে?”

চারু বিরক্তি নিয়ে বললো…

“ও হ্যালো এখানের কেউ না মিস ঝগড়াটি না ওকে।”

নাদিম ইশারায় বোঝার ভান করলো।এরপর লম্বা শিষ বাজিয়ে চুইঙ্গাম চিবোতে চিবোতে বলে উঠলো…

“তা আপনার নাম কি?মিস গোল মরিচ।”

চারু রেগে বললো…

“আমি কোনো গোলমরিচ টোলমরিচ না ওকেএএ।আমি চারু।চারুলতা চারু।”

নাদিম বিজ্ঞদের মতে করে ভ্রু উচিতে ঠোঁটে আঙ্গুল চেঁপে ভাবুক হয়ে বললো…

“বুঝেছি।”

“কি বুঝেছেন?”

“তুমি এতো কথা বলো কেনো।কেনো জানো?কারণ তোমার স্বভাব চড়াইপাখিদের মতো খালি ফট ফট করা।আর বক বক করা।যা তোমার নামের সাথে মিলে যায়।আমি তোমায় চারু না চড়াইপাখি বলবো কেমন?চড়াইপাখি।”

চারু রাগলো।বেশ রাগলো।রেগে মেগে চোখ মুখ লাল করে বললো…

“আমি চারুলতা চারু।শুধুই চারু লতা চারু।কোনো চাড়াই পাখি টাখি নয়।আবার এ কথা বললে আমি আপনাকে,আমি আপনাকে”

নাদিম ভ্রু উচিঁয়ে বললো…

“কি আমাকে?কি করবে”

চারু বললো…

#চলবে_

#অবেলায়_তোমার_আগমন🥀
#Adrrija_Aman(লেখনীতে)
#পর্ব_সংখ্যা_২৫
[✖️কার্টেসি_ছাড়া_কপি_নিষিদ্ধ✖️]

“আপনাকে আমি, আপনাকে আমি…”

এতোটুকু বলেই চুপ মেরে রইলো চারু কিছু বলার মতো পাচ্ছে না সে।সত্যিই তো কি বলবে এই লোকটাকে?কি করবে?হাতে থাকা ফির্ণির বাটিটার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো…

“এটা কেনো নিয়ে এসেছেন?”

“ফির্ণি নিশ্চই মাথায় দেবার জন্য কেউ রান্না করে আপনার কাছে পাঠায়নি।মা পাঠিয়েছে এটা, আপনাদের জন্য।আমাকে হয়তোবা চিনবেন না আমি নাদিম বাড়িয়ালার ছেলে।”

নাদিম নামটা শুনে চারুর তখনই মনে পড়লো নাদিম নামের ছেলেটার জন্যই তো শরৎ কদিন ধরে এমন জ্বলছে।একদিক থেকে ভালোই হয়েছে এই লোকটাকে দিয়ে।এসব ভেবে চারু নাদিমের দিকে তাকিয়ে কৃতজ্ঞতার স্বরে বললো…

“ধন্যবাদ।”

অল্প সময়ে কথোপকথনের সমাপ্তি হলো।
চারু ড্রইংরুমে এসে ধপ করে সোফায় বসে পড়লো।হাতে ফির্ণির বাটিটা।কোনোকিছু না ভেবেই ডান হাতের মাঝ আঙ্গুলটা ফির্ণিতে ডুবিয়ে দিলো ও, আঙ্গুলটা মুখে পুড়ে নিয়ে বেশ আনন্দ করে খেতে লাগলো।ফির্ণিটা সত্যিই খুব ভালো।তার প্রতি জন্মদিনে তার দাদী তাকে ফির্ণি করে দিতো যদিও আহামরি করে পারতো না ওনার যতোটুকু সামর্থ ততোটুকুর মাঝেই আয়োজন করতেন তিনি,মামার বাড়ির লোকদের সাথে সম্পর্ক একেবারেই বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিলো তার মায়ের মৃত্যুর পর পরই, তাদের সাথে নাকি আর যোগাযোগ হয়নি তার পরিবারের কারোরই।দাদীকে খুব মনে পড়ছে আজ, কতোদিন কথা হয় না তার সাথে।চারু ভাবলো…

“আচ্ছা দাদীকে একটা ফোন করলে কেমন হয়?”

যেই ভাবা সেই কাজ।বাটিটা টেবিলের ওপর রেখে, বেসিনের সামনে গিয়ে দাড়ালো ও, বেসিনের টেপটা ছেড়ে পানি দিয়ে হাত ধুয়ে নিয়ে ওড়নায় ভালো করে হাত মুছে নিলো।
কলেজ ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করে দাদীকে ফোন লাগালো, কেমন কেমন যেনো লাগছে চারুর। কিছুটা ভয় ভয়, বার বার মনে হচ্ছে সে চলে আসার পরে কি দাদীকে ভালো করে যত্ন করছে তারা।কেনো যেনো মনে হচ্ছে সে ভালো নেই।
কিছুক্ষণ ফোন রিং হবার পর কেউ একজন ফোন ধরলো।চারু বললো…

“আসসালামু আলাইকুম,কেমন আসো দাদী? ভুইলা গেসো আমারে?”

“তোরে কি ভোলা যায় চারু?আমার তো ইস্সা আসিলো তোরে আমার বউ কইরা নিমু,আর তুই কি করলি?টেকার লোভে পইড়া ওই বিবাহিত শরৎয়ের কিনা দাসি হইয়া গেলি?আমি কি তোরে কম সুখ দিতাম?শরৎতের যা আসে তা আমারও আসে,তা কেমন দিন কাল কাটতাসে তোর?”

ফোনের অপর পাশ থেকে রাজীবের কন্ঠস্বর শোনার আশা করেনি চারু।রাজীবের এমন বাজে কথা বার্তা শুনে গা গুলিয়ে আসছে ওর।চারু কেনো যেনো এবার আগের মতো ভয় পেলো না জোর গলায় বললে…

“নিজের মন মানসিকতা ঠিক করেন রাজীব ভাই।সবাইরে নিজের মতো চরিত্রহীন ভাইবেন না,শরৎ ভাই আপনার মতো চরিত্রহীন না উনি উদার মনের মানুষ আমারে আপনাগো এই নরক থাইকা বাহির কইরা একটা সুন্দর জীবন দিসে হ্যায়,হ্যায় চরিত্রবান দেইখাই মানুষ হ্যারে সম্মান করে,আর আপনে চরিত্রহীন দেইখাই মানুষ আপনারে জুতাপেটা করে,পার্থক্যটা এখানেই রাজীব ভাই,আগে নিজের চরিত্র ঠিক করেন।”

রাজীব নিজের এমন অপমান সইতে না পেরে রেগে গিয়ে দাঁতেদাঁত চেপে, ফিসফিস করে বললো…

“খুব গলার বাড় বাড়সে না তোর?খুব বাড়সে!আগে তো এতো সাহস আসিলো না, শহরে গিয়া বেশি সাহস হইয়া গেসে তোর?আগে কেমন আসিলি মনে নাই?মনে করাইয়া দিমু তোরে?”

চারু হেঁসে বললো…

“আমারে মনে করান লাগবো না রাজীব ভাই,আমি নিজের পরিবর্তন সম্পর্কে জানি রাজীব ভাই।কিন্তু আফসোস আপনার পরিবর্তন হইলো না,ভবিষৎতে মানুষের হাতে গণধোলাই না খাইতে চাইলে ভালা হইয়া যান।”

রাজীব অপর পাশ থেকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই রাজীবের হাত থেকে ফোনটা নিয়ে নিলো চারুর দাদী।চোখ গরম করে তাকালো রাজীবের দিকে। রাজীব কিছু না বলেই ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।চারুর দাদী ফোন কানে দিয়ে বললেন…

“হ্যালোওও আসসালামু আলাইকুম কে কইতাসেন?”

“দাদী আমি চারু কেমন আসো তুমি?”

“চারু,এইবার বুঝতে পারসি ওই বজ্জাত রাজীবে কেন এমন ফুসুরফাসুর কইরা কথা কইতাসিলো।বেলাজা ছেড়া মাইনসের মোবাইল হাতায় স্বভাব ভালা না।তোরে ভালো মন্দ কিছু কয় টয় নাই তো?”

চারু বললো…

“আরেএএহ্ আমারে আবার কি বলবে?বলার মুরোদ আছে?আমিও বলে দেই সাথে সাথে।”

“ওহ্ আইচ্ছা।কেমন আসোস তুই?হেরা মানুষ কেমন?পড়া লেহা কেমন চলতাসে?”

“উফফ দাদী তোমার এতো চিন্তা!ওনারা খারাপ না মানুষ ভালা, পড়াশোনা ভালো চলতাসে,কোনোরকম অশান্তিতে নাই আমি।অনেকক ভালো আছি।”

চারু দাদী প্রশান্তির হাসিঁ হাসঁলেন।মশকরা করে বললেন…

“তুই শহরের মানুষগো লাহান কথা কইবার লাগসোস ইদানিং, যদিও ভালা কইরা কইতে পারোস না এহোনো। ”

চারুর দাদীর কথা শুনে হাসঁলো ও।চারু শহরের মানুষদের মতো কথা বলতে পারে না কথাটা ভুল।দাদীর সাথে দাদীর মতো কথা বলতেই ভালো লাগে ওর। উনিই তো কথা বলতে শিখিয়ে ছিলেন ওকে,শুদ্ধ ভাষায় বলতে গেলে কেমন যেনো গলায় ঠেকে।

“এবার সত্যি কইরা কও তো দাদী ওই বাড়ির মানুষেরা তোমার দেখা শোনা ভালো মতো করে? নাকি আমি চইলা আসার পর তোমার দেখা শোনাই করে না।”

চারুর কথা শুনে হাঁসলো চারুর দাদী।মুখ থেকে পানের পিক উঠানের আঙ্গিনায় ফেলে দিয়ে পান চিবুতে চিবুতে বললেন…

“এতোই সোজারে?তোর দাদারা আসিলো ৫ ভাই আমি ওই বাড়ির ছুডু বউ আসিলাম, বড় জালেরা(ভাসুরের বউ) মুনে করসিলো ছুডু বউ দেইখা হেরা আমার মাথায় কাঠাঁল ভাইঙ্গা খাইবো অথচ শেষ পর্যন্ত এই সংসারের হাল আমিই ধরসি।সংসারের চাবিকাঠি আমার হাতেই আইসিলো।হেই আমারে জব্দ করবো আমার পোলার বউ?
আমার সম্পত্তির লাইগা ওরা পাউ চাটা কুত্তার মতো আমার পিছে পইড়া আসে।ওরা আমার টেকারেই ভালোবাসে আমারে না আমি হেইডা খুব ভালা কইরাই জানি,আমার সব আগে থাইকাই তোর নামে দিয়া দিসি সব, এই বাড়িটাও দেয়া আসে যেডা ওরা জানেনা। ওরা ভাবসে এই বাড়িটা যদি ওগোর নামে লেইখা দেই।যেই কয়ডা দিন বাঁইচা আসি ওগোর উপরেই খাইয়া মরমু আমি।আমার পোলায় যে এমন কাপুরুষ হইবো তা তো আগে জানতাম না।”

বলেই কেঁদে দিলেন চারুর দাদী।

“পোলাডারে মানুষ করতে পাড়লাম নারে চারু এডাই দুঃক্খ আমার।”

“বাদ দেও দাদী ওই লোকের কথা মনে কইরা কানলেও ওইটা সময় নষ্ট।”

“হো।”

_____________

“ওই সামিটা কেরে শ্রীজা?”

“আমাদের ভার্সিটির টিচার।আপনাকে তো পরিচয় দিয়েছেন তিনি শরৎ ভাই।”

“ওই লোকের ব্যাবহার দেখে মনে হচ্ছিলো সে তোর ভার্সিটির টিচার নয়।অন্যকিছু!”

“কি কিছু শরৎ ভাই?”

“এমন ভান করছিস যেনো সবটাই তোর অজানা,কি দরকার ছিলে যেচে তোকে ট্রিট দেবার?আমার তো অন্যকিছু মনে হচ্ছে!”

আমি শরৎ ভাইকে পিঞ্চ মেরে বললাম…

“আমার মতো সুন্দর আর ভদ্র মেয়েকে সিংগেল দেখলে যে কেউই ট্রিট দিতে চাইবে,অবশ্যই চাইবে।”

শরৎ ভাই ভ্রুকুটি করে প্রশ্ন করলেন আমায়,বললেন…

“তুই সিংগেল??”

“অবশ্যই আমি সিংগেল,কোনো সন্দেহ?”

“তুই যদি সিংগেল হোস তাহলে আমার বউ কে?”

“তা আমি কি করে বলবো?আমি তো আপনার কাজিন তাই না?”

আমার কথা শুনে বেশ ভালো ভাবেই শরৎ ভাই বুঝতে পারলেন আমি তার কথাই তাকে ফিরিয়ে দিচ্ছি।তাই তিনি বললেন…

“আমার কথা আমাকেই ফিরিয়ে দিচ্ছিস?”

“নাহ্ যা সত্য তাই বলছি শরৎ ভাই।”

শরৎ ভাই বললেন বুঝেছি, এখন চল।বলেই আমার হাতে ধরে রাস্তা পেরিয়ে একটা রিকশা ভাড়া করলেন তিনি।ঠিকানা শুনতে পেরে বুঝে গেলাম তিনি বাড়ির ঠিকানা বলেননি।ভালো বড় সড় একটা শপিং মলের সামনে এসে থামলো রিকশা।আমার কেনো যেনো মনে হলো তিনি বুঝতে পেরেছেন আমি রাগ করেছি রাগ ভাঙ্গানোর জন্যেই কি এতোকিছু?

#চলবে_