অবেলায় তোমার আগমন পর্ব-২+৩

0
630

#অবেলায়_তোমার_আগমন🖤🥀
#Adrrija_Aman
#পর্ব_সংখ্যা_২

শীতের মৌসুম, আকাশের রঙ ধূসর।হালকা মেঘও ডাকছে।আকাশে ঝিড়িঝিড়ি বৃষ্টি।নিজের ঘরে বসে বসে এফ-বি স্ক্রল করছিলাম আমি। হঠাৎ পাশের ঘর থেকে আম্মু বেরিয়ে এসে আমাকে একটা বেগুনী রঙয়ের শাড়ি দেখিয়ে বললো…

“দেখ তো শ্রীজা, শাড়িটা কেমন?”

আমি তখনও ঠিক বুঝে উঠতে পারলাম না,আম্মু হুট করে কেনো এসব শাড়ি ঠাড়ি দেখাচ্ছে আমায়।তবুও কথার উত্তরে বলে উঠলাম…

“ভালোই তো খারাপ না।”

আম্মু আরো ইকটু এগিয়ে বসলেন। আমার দিকে তাকিয়ে মিনমিনে স্বরে বলে উঠলেন…

“এই শোননা..”

আমি ফোনটা অফ করে রাখলাম অতঃপর আম্মুর দিকে তাকিয়ে মনোযোগ স্থির করলাম, আম্মু আবার বলে উঠলেন…

“এই শাড়িটা অনুর হলুদের দিন অনু পড়লে ওকে কেমন দেখাবেরে?”

“ভালোই তো লাগবে কিন্তু হলুদের দিন বেগুনী রঙয়ের শাড়ি?বিষয়টা ইকটু কেমন না, তার ওপর আপুর বিয়ের ওতো অনেক দেড়ি।এখনো বিয়ে ঠিকই হয়নি আর তুমি এসব নিয়ে পড়ে গেলে।”

আম্মু কিছু একটা মনে করে বলে উঠলেন…

“ওহ্ তোকে তো বলতে ভুলেই গিয়েছিলাম।কাল রাতে তোর শরৎ ভাইয়ের মা মানে তোর মামনির সাথে কথা হয়েছিলো আমার।তোর বাবাও ছিলো সাথে।ওরা বলছে সামনের মাসের প্রথম শুক্রুবারই নাকি বিয়ের ডেট ফেলবে।কাজ তো আর কম না।একটা বিয়ের কাজ মুখে বলতে যতোটা সোজা করে দেখানোটা তার চেয়ে হাজারগুণ কঠিন।অনুর দির বিয়ে শরৎ ভাইয়ের সাথে তাও আবার সামনের মাসে কথাটা ঠিক হজম করতে পারলাম না আমি।কোথাও একটা গিয়ে লাগছে আমার।শরৎ ভাইয়ের প্রতি আমার মনের কোথাও কিছু একটা আছে, তা আমি জানি।কিন্তু নিজের বড় বোনের প্রেমিককে ভালোবেসে ফেলা বা ভালো লাগা যে ঘোর অন্যায়।এ অন্যায়ের শাস্তি আমি প্রতি মুহুর্তেই ভোগ করছি।তা ছাড়া অনুদি আর শরৎ ভাইয়ের সম্পর্কের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যা যা ঘটেছে তার জ্বলন্ত প্রমাণ আমি। তাদের কথা বলার সময় দরজা পাহাড়া দেয়া, একজনের উপহার আরেজ জনের কাছে পৌঁছে দেয়া।তাদের কথার আদান প্রদান সবটাই আমাকে দিয়ে।এক কথায় বলতে গেলে তাদের প্রেমের ডাকপিয়ন ছিলাম আমি।কিন্তু তাদের এই গল্প শেষ হতে না হতেই আমার একপাক্ষিক কিছু তুচ্ছ অনুভুতি কে ঘিরে একটা নতুন গল্প শুরু হলো।নামটা আমার আজও অজানা।একদিন হুট করেই তাদের সম্পর্কের কথাটা জানাজানি হয়ে গেলো।একদিন অনুদি ভার্সিটি শেষ করে শরৎ ভাইয়ার সাথে শপিং মলে ঘুরাঘুরি করতে গিয়েছিলো।সেইদিন তাদের দুজনকে হুট করে আব্বুর চোখে পড়ে যায়।পড়ে বিষয়টা নিয়ে হালকা তদন্ত করার পর পরই নিশ্চিত হন তিনি।শরৎ ভাই ছেলে ভালো।বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে তিনি, পরিবারের অবস্থানও ভালো।একমাত্র ছেলে হওয়ায় ব্যারিস্টারি নিয়ে পড়ছেন তিনি।শরৎ ভাই ছেলে হিসেবে দেখতে যেমন ভালো চরিত্রও তেমন।একজন ভালো পাত্রর আর কি চাই।রাজি হয়ে গিয়েছিলো পুরোপরিবারও।কিন্তু আমার মনের কোথাও কোনো কিন্তু ছিলো।হয়তোবা আমিই রাজি ছিলাম না।হুট করেই যখন করেই যখন আজ জানতে পারলাম বিয়ের ডেট ফিক্সড হয়ে গিয়েছে, তখন হালকা হাঁসলাম আমি।আমাকে হাঁসতে দেখে আম্মু বলে উঠলো…

“কিরে হাসঁছিস কেনো?”

“ভাবছি অনুদি আর শরৎভাই কে কতো সুন্দর মানাবে।দুজন কে দেখলেই মনটা শান্তিতে ভরপুর হয়ে যায়।”

আমার মিথ্যে আশ্বাসের কথা শুনে আমু বোধয় খুশিই হলো…

“হ্যারে ঠিকই বলছিস, দুজনকে দেখে মনটা জুড়িয়ে যায় একেবারে।শরৎ কিন্তু পাত্র…”

আর কিছু বলার আগেই পাশের ঘর থেকে আব্বুর হাক এলো, আম্মুকে ডাকছেন তিনি।শাড়িটা আমার ঘরে রেখেই পাশের ঘরে চলে গেলো আম্মু।আমি শাড়িটার দিকে তাকালাম, চোখটা কেমন ঝাপসা হয়ে আসছে শাড়িটা কেমন ঘোলা ঘোলা দেখতে লাগছে।শ্বাস নিতে পারছি না।গলায় কেমন একটা ব্যাথা অনুভব করলাম আমি।দম বন্ধ হয়ে আসছে।দ্রুত পায়ে খাট থেকে নেমে বেসিনের সামনে গিয়ে দাড়ালাম আমি।বেসিনের সামনে থাকা আয়নাটাতে নিজের প্রতিবিম্ব দেখতে পেলাম।চোখের চারপাশটা অতিরিক্ত পানি দিয়ে ভরপুর,কেমন যেনো লাল হয়ে গিয়েছে।ট্যাপটা ছেড়ে দিয়ে মুখে পানি দিতে লাগলাম।চোখ মুখ মুছে দরজা আটকে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লাম আমি।আমি বড্ড ক্লান্ত মানসিক ভাবে অনেক ক্লান্ত এবার ইকটু বিশ্রামের প্রয়োজন।কখন ঘুমিয়ে পড়লাম টেরই পেলাম না।বিকেলে আম্মুর ডাকে ঘুম ভাংলো।মামনি আর মামা এসেছে ঘরের টুকটাক কাজে হেল্প করছি আমি।হুট করে আম্মু বললো…

“শ্রীজা..”

“বলো আম্মু।”

“ছাঁদে কাপড়গুলো শুকাতে দিয়েছিলাম নিয়ে আয় তো মা।”

“আচ্ছা যাচ্ছি। ”

বলেই ঘর থেকে ছাঁদের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লাম।ছাঁদে গিয়ে আবিষ্কার করলাম শরৎভাই আর অনুদি কে। প্রথমে মনের ভুল ভাবলেও পরে শরৎভাই নিজেই আমাকে ডেকে আমার ভুল ভাঙিয়ে দিলেন।শরৎ ভাইয়ের কথায় শারা দিলাম না আমি।হুট করেই আমার মন কেমন করে উঠলো।চোখের চারিপাশ পানি দিয়ে ভরে গেলো।মুখ চেঁপে দৌড়ে ঘরে চলে এলাম আমি।আমাকে এভাবে দৌড়ে আসতে দেখে আম্মু বলে উঠলো…

“কিরে শ্রীজা এমন করছিস কেনো?কিছু হয়েছে।”

আমি কিছু বলতে পারলাম না।ঘরের দরজা আটকে দিয়ে ওপাশ থেকে বললাম…

“না আম্মু মাথাটা হালকা ব্যাথা করছে তেমন কিছু না।”

আম্মু সন্দেহ নিয়ে বলে উঠলো…

“মাথা ব্যাথা করলে কেউ মুখ চেঁপে দৌড়ে ঘরে আসে না শ্রীজা কি হয়েছে বলো আমাকে!”

হুট করে রাগ উঠে গেলো আমার।আমি রাগি গলায় বলে উঠলাম…

“বলছি না মাথা ব্যাথা করছে,এমন চ্যাঁচামেচি করছো কেনো তুমি।বিরক্ত করোনা যাও এখন।”

আমার কথায় নিরাশ হলেন আম্মু।পাশের ঘরেই মামা মামনি রয়েছেন তাদের সামনে সিনক্রিয়েট করাটা নিশ্চই বোকামি ছাড়া কিছুই না।তাই ভেবে আম্মু চিন্তা নিয়ে সেখান থেকে চলে গেলেন।আমি বেলকণিতে চলে গেলাম।কালো রঙয়ের গ্রিলগুলোকে দু হাত দিয়ে ধরলাম।আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলাম আমি।নীল আকাশ কোথায় তার শুরু কোথায় তার শেষ কেউ তা জানেনা।শীতের সময় তাই আকাশে নানা রঙয়ের পাখি উড়ে চলছে।হালকা বাতাস বয়ে চলেছে।বেলকণিতে হালকা পাতলা গাছ আছে আমার ফুল গাছই বেশি।সাদা রঙয়ের বেলিফুল গাছ, কিছু গোলাপ গাছ।জবা গাছসহ অনেক গাছই আছে।আমার প্রিয় ফুল গোলাপ সচর আচর আমি গাছ থেকে ফুল ছিড়ি না কিন্তু আজ কেনো যেনো সব তচনচ করে দিতে মনচাইছে।তাই জবা ফুল গাছ থেকে কিছু ফুলে ছিড়ে তার পাপড়ি আলাদা করতে লাগলাম আমি।নিশ্চুপ ভাবে নিজের রাগকে দমন করছি।
এছাড়া হয়তোবা কোনো উপায় নেই আমার।হুট করেই কেউ দরজা ধাক্কাতে লাগলো।ধাক্কার পরিমাণটা সময়ের সাথে সাথে বেড়েই চলেছে।তাই বিরক্তি নিয়ে দরজা খুলে দিলাম আমি।আমার সামনে অনুদি দাড়িয়ে আছে।আমি বিরক্তি নিয়ে কিছু বলার আগেই অনুদির প্রশ্ন…

“কিরে তুই এভাবে চলে এলি কেনো তখন?”

“কিভাবে চলে এলাম?”

“ছাদ থেকে ওভাবে দৌড়ে এলি কেনো?তোর শরৎভাই যে তোকে তখন ডাকলো তার কথার উত্তর দিলি না তুই?বড়দের মান্য করতে ভুলে গিয়েছিস!”

“দেখ দি মাথাটা এমনিই ব্যাথা হয়ে আছে তখন থেকে এর ওপর তুই আমার সাথে তোর ঘ্যানঘ্যানানি শুরু করিস না।দয়া করে এখন চুপ কর,পরে শুনবো সব।”

আমার কথায় যেনো দি আরো রেগে গেলো।তবুও কিছু না বলে হনহন করে বেলকণির দিকে এগিয়ে গেলো দি।বেলকণিতে কিছু একটা দেখে দি যেনো আরো রেগে গেলো।হালকা চিৎকারের স্বরে আমার নাম ধরে ডাকলো…

“শ্রীজা…”

#চলবে…

#অবেলায়_তোমার_আগমন🥀
#Adrrija_Aman(লেখনিতে)
#পর্ব_সংখ্যা_৩
[✖️কার্টেসি ছাড়া কপি নিষিদ্ধ✖️]

“একটা দির্ঘশ্বাস ফেলে বেলকণির দিকে এগিয়ে গেলাম আমি।এখন দি কি বলবে তা আমার খুব ভালো করে জানা।চুপচাপ কোনো কথা না বাড়িয়ে বেলকণির দিকে এগিয়ে গেলাম আমি,দি ইকটু এগিয়ে এসে কপট রাগ দেখিয়ে বললো…

“আমার জবা ফুল গাছের এ অবস্থা কে করেছে শ্রীজা?”

দির চোখে মুখে রাগ স্পষ্ট দি দাঁতে দাঁত চেপে আমাকে কথাগুলো বললো।
আনাকে কিছু বলতে না দেখে দি আবার বলে উঠলো…

“উত্তর দিচ্ছিস না কেনো?তুই জানিস না মিহাদ এটা আমাকে গিফ্ট করেছিলো?ওর দেয়া শেষ স্মৃতি ছিলো এটী।”

দির চোখে আমি স্পষ্ট রাগ দেখতে পাচ্ছি।মিহাদ ভাই দির কলেজ ফ্রেন্ড ছিলো।ভার্সিটিতে উঠেই তিনি ইংল্যান্ড এ পাড়ি জমান পড়াশোনার ক্ষেত্রে।দি আর মিহাদ ভাই ভালো বন্ধু।দির জবাফুল খুব প্রিয়, তাই মিহাদ ভাই চলে যাওয়ার আগে দিকে এই জবা ফুল গাছই উপহার দিয়ে যান।বিষয়টা ইকটু কেমন হলেও অনেক সুন্দর।আমি দির দিকে তাকিয়ে বলে উঠলাম…

“উফ দি আমি শুধু ফুল ছিড়েছি গাছ তো আর ছিড়িনি। একটা সামান্য গাছ নিয়ে এতো আদিক্ষেতার কি আছে বুঝলাম না।ঘরে আর টিভি রাখা যাবে না ঘরটাকে স্টার জলসার নাট্যশালা বানিয়ে ফেলেছিস তোরা।”

আমার এমন লাগামছাড়া কথা শুনে যেনো রাগ উপচে পড়ছে দির।দি কঠিন স্বরে বলে উঠলো…

“নাট্যশালা না ছাই।সবসময় আমার প্রিয় জিনিসের ওপর নজর পরে তোর।”

দি আর কিছু বলার আগেই দির ফোন বেজেঁ উঠলো।খাটের পাশে থাকা টেবিলের ওপর থেকে দি ফোনটা তার হাতে নিয়ে নিলো।ফোনের স্কিনে মিহাদ নামটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।আমি একবার দির দিকে তাকালাম।দি আমার দিকে একবার তাকিয়ে নিজের চোখ নামিয়ে নিলো।পরে ফোনটা রিসিভ করে বেলকণির অনেকটা ভেতরে চলে গেলো।আমি বাহিরে বের হয়ে এলাম।আমি জানি দি এখন প্রায় ১ থেকে ১.৫ ঘন্টার মতো কথা বলবে।কলেজ লাইফে দি আর মিহাদ ভাই বেস্টফ্রেন্ড ছিলো।যখন দি ভার্সিটিতে ওঠে তখন মিহাদ ভাই চলে যায়।আর তখন থেকেই শরৎ ভাইয়ের সাথে দির চলাফেরা শুরু হয়, যা ধীরে ধীরে রূপ নেয় বন্ধুত্বে।অতঃপর তার পরিনতি আজ এই।শরৎভাইসহ মামনি আর মামা ওরা সকলে চলে গিয়েছে এতোক্ষণে।

____

একটা মাস কিভাবে কেঁটে গিয়েছে বুঝলামই না।আজ আমার একমাত্র দির বিয়ে।পড়নে লাল শাড়ি।ভারি ভারি গহনা।বাড়ির নানান কাজে দৌড়ে চলেছি আমি।দির পরে ঘরের একমাত্র সন্তান আমি,তাই দায়িত্বটা ইকটু বেশিই।মুখে কৃত্তিম হাঁসি লাগিয়ে মনে একরাশ কান্না অভিমান চাপিয়ে নানান কাজে দৌড়ে চলেছি।জীবন এমনি আপনি যা চাইবেন খুব করে চাইবেন তা আপনার থেকে দূরে চলে যাবে।নিয়তি সত্যিই নিষ্ঠুর।তবে জীবন তখনই সুন্দর যখন আপনি জীবনের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারবেন।আজ রাতটা শরৎভাই আর অনুদি
এই বাড়িতেই কাটাবেন।তাই তাদের ঘর গোছানোর দ্বায়িত্বটা আমার কাঁধেই পড়লো।সাথে অবশ্য ২-৩জন কাজিন আছে।নানান হাঁসি তামাশায় ঘর দোর গোছাতে লাগলাম আমি।হুট করেই কেউ জোড়ে জোড়ে দরজা ধাক্কাতে লাগলো।আমার ফুপাতো বোন ইমা দরজা খোলার পরপরই আম্মি দৌড়ে এলেন আমার কাছে।আম্মু চোখে ভয়ানক ভীতি দেখতে পাচ্ছি আমি।মুখটা ঘেমে একাকার, আম্মু আমার দিকে একবার তাকিয়ে আমার হাতের কোনুই হালকা জোড়ে চেপে ধরলেন। হাত টেনে ঘর থেকে নিয়ে গেলেন পাশের ঘরে,আম্মুর টানা হেচড়ার কারণে আমার গোলাপী রঙয়ের লেহেঙ্গার ওড়নাটা দরজার সাথে ফেঁসে গিয়ে হালকা ছিড়ে গেলো।তবুও সেদিকে খেয়াল করলেন না তিনি।আমি ব্যাথিত স্বরে বলে উঠলাম…

“উফফ আম্মু কি করছো?লাগছে আমার। ছাড়ো।”

আম্মু আমার কথা যেনো শুনলেনই না।আমাকে পাশের ঘরে এনে একটা সোফায় বসিয়ে দিলেন।পাশেই মামনি বসা ছিলো মামনি লেহেঙ্গার ওড়নাটা আমার মাথায় তুলে দিলেন।আমার কেনো যেনো হুট করে কান্না পেলো।আমি কান্না জড়িতো কন্ঠে বলে উঠলাম..

“কি হয়েছে মামনি?সবাই এমন চুপচাপ কেনো?আম্মুর কি হয়েছে?এমন টানাটানি করছো কেনো আমার সাথে?”

মামনির কিছু বলার আগেই।আমার দূরসম্পর্কের এক ভাগ্নি ফিসফিস করে বলে উঠলো…

“আরে শ্রীজা খালামণি তুমি জানো না?অনুখালামণিতো পালিয়েছে!খালামণিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।”

ও আরো কিছু বলতেই যাবে তার আগে ওর মা ওর দিকে চোখ গরম দিয়ে তাকালো।সঙ্গে সঙ্গে মুখে হাত দিয়ে ফেললো ও।ওর মায়ের দিকে একবার তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিলোও।ওর কথা শুনে যেনো আমি এবার আকাশ থেকে পড়লাম। ‘দি পালিয়েছে!’ কথাটা যেনো আমার কানে বার বার বাজচ্ছে।আর কিছু ভাবতে পারছিলামনা আমি প্রায় ৩বছরের রিলেশন দির শরৎ ভাইয়ের সাথে।দি তাহলে পালাতে যাবে কেনো?শরৎ ভাই কি জানে?আর আমাকে এখন দিএর জায়গায় বসানোর মানে কি তাহলে? নাহ্ আর ভাবতে পারছি না আমি।সবটা এতো দ্রুত কিভাবে ঘটে যাচ্ছে, কিছুই বুঝতে পারছি না।আমি মাথায় হাত দিয়ে চুপ করে বসে রইলাম।কিছুক্ষণ পর কাজি টাইপের একটা লোক এলো।পর্দার আড়ালে একটা চেয়ারে বসলো সে।আমার হঠাৎ ভয় হতে লাগলো।কি ঘটছে আমার সাথে,সব কিছু এতো দ্রুত ঘটছে আমি কিছু করে উঠতে পারছি না।আম্মু পাশের ঘর থেকে এসে আমার পাশে এসে বসলেন।আমি কান্নামাখা চোখে তার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলাম…

“কি হচ্ছে এসব আমার সাথে?কি করছো তোমরা্?”

আম্মু আমার পাশে আরেকটু ঘেষে বসলেন।বলে উঠলেন…

“যা হচ্ছে দয়া করে সবটা মেনে নে মা।অন্ততপক্ষে তোর মা বাবার মানসম্মানের দিকে তাকিয়ে হলেও মেনে নে।”

সেদিন মায়ের চোখে স্পষ্ট সম্মানের ভয় দেখেছিলাম আমি।মা বাবার সম্মানের কথা ভেবে সবটা মেনে নিয়েছিলাম।তবে শরৎভাইকে কখনো এভাবে নিজের করে চাইনি আমি।

#চলবে…