অবেলায় তোমার আগমন পর্ব-৪+৫

0
562

#অবেলায়_তোমার_আগমন
#Adrrija_Aman(লেখনিতে)
#পর্ব_সংখ্যা_৪
[✖️কার্টেসি ছাড়া কপি নিষিদ্ধ✖️]

চৈত্র-বৈশাখের মাঝামাঝি সময়, বসন্ত চলে গিয়ে গ্রষ্ম এসেছে।গ্রীষ্ম মানেই প্রখর রোদ।গাছে গাছে আম,কাঠাঁলসহ কতো শতো ফল।গ্রীষ্মকে চেনার অপর উপায় হচ্ছে বৃষ্টি।গ্রীষ্ম – বৃষ্টি জুটিটা যেমন সকলের চেনা, তেমন দারুনও বটে।গ্রীষ্মের প্রখর রোদে যখন ধারায় হাহাকার নামে।বিধাতার অপরুপ মহিমায় বৃষ্টির বর্ষন ঘটে।সাদা রঙয়ের তোয়ালে দিয়ে চুলগুলো মুছতে মুছতে ওয়াশ-রুম থেকে বেরিয়ে এলাম আমি।চুল বেয়ে বেয়ে টুপ টুপ করে পানি ঝড়ছে।সবুজ রঙয়ের জামাটা গায়ের সাথে লেপ্টে গিয়েছে।চুলগুলো মুছতে মুছতে আমার জন্য বরাদ্দকৃত খাটটার ওপর বসলাম আমি।সাথে সাথেই অস্বাভাবিকভাবে হাঁচি দিয়ে উঠলাম।শরৎ ভাইয়ের সাথে সাথে আমাকেও এভাবে বৃষ্টিতে ভিজতে হলো।এখন এই লোকটার সাথে সাথে আমাকেও সর্দির-জ্বালা যন্ত্রনা ভুগতে হবে।ঝামেলার শেষ নেই বললেই চলে।বিরক্তি সহকারে তোয়ালেটা খাটের পাশে থাকা আলনাটার ওপর ছুড়ে ফেললাম।আমরা সচর আচর ছাত্র বা ছাত্রী হলগুলোকে যতো সুন্দর মনে করি সেগুলো ততেটাও সুন্দর হয় না।এতোগুলো মেয়ে গাদাগাদি অবস্থা একেবারে।ভাবতেই কেমন মাথা ব্যাথা করে ওঠে।ভেবেছিলাম এই ভার্সিটি লাইফে এসে ইকটু চিল করবো কিন্তু এই পড়াশোনার চাপ আর শরৎভাইয়ের প্যারা আমাকে আর শান্তিতে থাকতে দিলো কই।হুট করে কোথা থেকে যেনো রিদা আর আচঁল দৌড়ে এলো।আচঁল তো আমাকে একেবারে ঝাপটে ধরলো।ওদের এমন কান্ডে বোকা বনে গেলাম আমি।হুট করে এভাবে দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরার মানেটা কী বুঝতে পারলাম না।”

আচঁল আমার হাত ধরে ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে বলে উঠলো…

“দোস্ত দোস্ত শরৎ ভাই কি করলো তোর সাথে? কী কী গল্প হলো? বল না বল।”

আমি আচঁলের কথার ধরন ঠিক বুঝে উঠতে পারলাম না।তাই আমি আচঁল কে প্রশ্ন করলাম…

আচঁল আরেকটু ঘেঁষে বসলো।কাচুঁমুচু টাইপ ফেইস করে আমাকে বলে উঠলো…

“না মানে শরৎ জিজু তোকে কি কি বলসে তা জানতে মন চাচ্ছিলো আরকি তাই বললাম।”

আমি একবার ওর দিকে তাকিয়ে খাটের ওপর শুয়ে পড়লাম।বালিশের একপাশ থেকে একটা বই হাতে নিয়ে পড়তে পড়তে ওকে বলে উঠলাম…

“তোর কি মনে হয়?ওই লোক আমাকে রোমান্টিক টাইপ কিছু বলবে?বা আবেগি টাইপ কিছু?”

আচঁল কিছু বললো না।ও সঠিক কি উত্তর দিবে তাই ভেবে পেলো না।তাই আমার দিকে উদাশ হয়ে চেয়ে রইলো।
আমি ওর কথার উত্তর না পেয়ে বলে উঠলাম…

“ডিভোর্স পেপার এনেছিলো আজ।”

আমার কথা শুনে যেনো আচঁল আর রিদা আতৎকে উঠলো।ওদের চোখগুলো স্বাভাবীকের তুলনায় ইকটু বড় হয়ে গেলো।ওরা দুজন একসাথে হালকা জোড়েই বলে উঠলো…

“কী?ডিভোর্স পেপার?”

“হুম।”

রিদা এবার আমার পাশে এসে বসলো।আমার হাত থেকে বইটা ছিনিয়ে নিয়ে বলে উঠলো…

“এই শ্রীজা তুই আদেও কি বলছিস তুই জানিস?”

আমি বিরক্তি নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে বলে উঠলাম…

“বরটা আমার না তোর?আমি জানবো না তো কে জানবে?”

আচঁল চোখে ভয় নিয়ে বলে উঠলো…

“এরপর কি হলো?”

“এরপর কি আবার?আমি পেপারটা ছিঁড়ে ফেললাম।বিয়েটা কি মামার বাড়ির আবদার বাকি?একজন জোড় করে পড়িয়ে দিলো, আরএকজন জোড় করে ছাড়িয়ে নিলো।”

ওরা দুজন এবার সস্তির নিশ্বাস ফেললো।রিদা বলে উঠলো…

“হ্যারে শ্রীজা।শুনেছি শরৎ ভাইয়ের নাকি প্রচুর রাগ।তোকে দু একটা চর না দিয়েই চলে গেলো?”

আমি রিদার দিকে একবার চোখ ছোট ছোট করে তাকালাম।এরপর সামনে তাকিয়ে বলে উঠলাম…

“রাগ না ছাই!সব রাগ আমার ওপরই দেখান উনি।বিয়ের প্রথম রাতে সটাং করে গালে একটা চর বসিয়ে দিয়ে ছিলেন উনি।শুধু শুধুই,এ কথা কি আমি কোনোদিন ভুলবো নাকি!”

আচঁল হা করে বলে উঠলো…

“বিয়ের রাতে লোকেরা নিজের বউয়ের সাথে সুখ, দুঃখের গল্প করে।আর তোর বর চরই বসিয়ে দিলো।ক্যায়া সিন হ্যা মেরি মা,মাজা আয়া।”

আমি আঁচলের মাথায় বই দিয়প একটা বাড়ি দিয়ে বলে উঠলাম…

“তোর মজা আমি ছুটাচ্ছি দাড়া।”

বলে উঠতে নিলেই খাট ছেড়ে উঠে দৌড়ে অন্য হলে চলে যায় আচঁল।আমি বিছানায় ধপ করে বসে পড়ি।খেয়াল করি ফোনটা কাপঁছে।ভ্রাইবেশন মুডে থাকার কারণে এমনটা হয়েছে বোধয়।একটা আননোন নাম্বার থেকে ফোন এলো।অডিও কলে।আমি ফোনটা রিসিভ করে কানে দিতেই যেনো থমকে গেলাম।ওপাশ থেকে ক্ষীন স্বরে চেনা সেই মানুষটি বলে উঠলো…

“কেমন আছিস শ্রীজা?”

দির কন্ঠ এটা।হ্যা স্পষ্ট দির কন্ঠ শুনেই থমকে গিয়েছিলাম আমি।দিকে সব জায়গা থেকে ব্লক করেছিলাম আমি।তাই নাম্বারটা আননোন ছিলো।আমি হালকা রাগ দেখিয়ে ২-৩ মিনিট পর জোড় গলায় বলে উঠলাম…

“ফোন দিয়েছিস কেনো তুই?সবটা শেষ করেও শান্তি হয়নি তোর?”

দির অসহায় কন্ঠ দি বললো…

“এভাবে বলছিস কেনো?”

“এভাবে বলবো না তো কিভাবে বলবো?পালানোর আগে একবারও মনে হয়নি?পরে ঠিক কেমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে তোকে?”

ওপাশ থেকে একটা পুুরুষ মানুষের কন্ঠ স্পষ্ট শুনতে পেলাম আমি।সে দির নাম ধরে বলছিলো…

“অনু ঘড়িটা কোথায় আমার?”

কন্ঠটা বেশ চেনা মনে হলো আমার।পর মুহুর্তেই চিনে ফেললাম আমি কন্ঠটা।এটা তো মিহাদ ভাই!কিন্তু অনুদির সাথে মিহাদ ভাই কি করছে?ভেবে পেলাম না আমি।অনুদি এখনো লাইনে আছে।আমি অনুদিকে প্রশ্ন করলাম…

“তুই মিহাদ ভাইয়ের সাথে কি করছিস দি?”

দি হালকা ভয়মাখা কন্ঠে বলে উঠলো…

“মি মিহাদ এখন আমার স্বামী।সেদিন মিহাদের সাথেই পালিয়ে ছিলাম আমি।”

দির কথা শুনে অনেক অবাক হলাম আমি।মিহাদ ভাইয়ের সাথে পালিয়েছে মানে?দি তো শরৎ ভাইকে ভালোবাসতো।তাহলে মিহাদভাইয়ের সাথে পালাতে যাবে কেনো?
আমি বলে উঠলাম…

“কিন্তু তুই তো শরৎভাইকে…”

আমাকে আর না বলতে দিয়ে দি বলে উঠলো…

“হ্যা প্রথম প্রথম আমি মনে করেছিলাম আমি শরৎ কে ভালোবাসি।কিন্তু বিশ্বাস কর শ্রীজা।আমি মিহাদের মাঝে যা অনুভব করও শরৎতের মাঝে তা কখনোই অনুভব করিনি।শরৎয়ের সাথে সম্পর্কে থাকা কালীন প্রতিটা সময়ই আমার মনে হতো,কিছু একটা ভুল হচ্ছে।আমার মনে হতো আমি শরৎকে ঠকাচ্ছি।কিন্তু শরৎ তো আমাকে হৃদয় থেকে ভালোবাসতো।যা আমি পারিনি্।সত্যি বলতে আমি কখনো ওর যোগ্যই ছিলাম না।মিহাদের সাথে আমার প্রায়ই কথা হতো।একদিন ও আমাকে প্রোপোস করে বসে।কিন্তু আমি ওকে শরৎতের সম্পর্কে সবটা বলি।আর আমার দ্বিধা দন্দের কথাও বলি ওকে।ওকে আমি মন থেকে কখন ভালোবেসে ফেলেছি তা আমি নিজেও জানিনা।

হুট করেই বিয়ের কথা পাকাপাকি হয়ে গেলো।আমি ভেবেছিলাম মিহাদ ফিরলে ধীরে সুস্থে সবটা শরৎকে বুঝিয়ে বলবো।কিন্তু সবটা এতো দ্রুত ঘটে গেলো যে কিছুই বলতে পারলাম না আমি।বিয়ের আগের দিন রাতের ফ্লাইটে মিহাদ বাংলাদেশে আসে।বিয়ের আগের একটা মাস ও আর আমি যে কিভাবে কাটিয়েছি তা শুধু আমরা দুজন জানি আর আল্লাহ্ জানে।আমি জানি হয়তোবা শরৎ আমাকে কখনোই ক্ষমা করবে না।মা বাবাও না।কিন্তু যদি বিয়েটা হয়ে যেতো তাহলে আরো বড় ক্ষতি হয়ে যেতো আমাদের। ৩টা জীবন নষ্ট হয়ে যেতো।তাই এতোটুকু অন্যায় করতে গা কাঁপেনি আমার। কিন্তু আমি কখনোই ভাবিনি মা বাবা তোর সাথে এমনটা করবে্।আমি যে কষ্ট থেকে ফিরে আসার জন্য এতো কিছু করেছি সে কষ্টই তোর কাছে ফিরে যাবে।আমাকে ক্ষমা করিস বোন,তোর সাথে যা হয়েছে অনেক বাজে হয়েছে।আমি কখনোই তা চাইনি।আমি ভেবেছি বিয়েটা যেহুতু পারিবারিক ভাবে হালকা করে হচ্ছে সেহুতু তেমন ঝামেলা হবে না,মামু আর মামনি খুব ভালো মানুষ,তারা শরৎ কে মানিয়ে নেবে।কিন্তু এমনটা হবে তা কে জানতো…”

কথাগুলো বলার এক পর্যায় কেঁদে দিয়েছিলো অনুদি।আমি তখন কি বলবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না।কাকে দোষ দিবো আমি?অনুদি কে?সে তো নিজের ভালোবাসাকে পাবার জন্য এতোসব করেছে, এটা তো অন্যায় নয়।আর শরৎ ভাই সে তো ভালোবেসে ভালোবাসা কখনোই অন্যায় নয়।নাকি দোষ দিবো আমার নিয়তিকে?যাকে এতোটা ভালোবেসেছি সে অন্য কাউকে ভালোবাসে ভাবতেই কেমন অবাক লাগে আমার।দোষটা কি আমার না আমার ভাগ্যের…।

#চলবে…
#অবেলায়_তোমার_আগমন🥀
#Adrrija_Aman(লেখনিতে)
#পর্ব_সংখ্যা_৫
[✖️কার্টেসি ছাড়া কপি নিষিদ্ধ✖️ ]

ব্যাস্ত শহর কোলাহলে পরিপূর্ণ।দির্ঘ ২বছরের মতো লকডাউন কাটিয়ে,দেশ পুরো দমে আগের অবস্থায় ফিরেছে।যে যার কাজে ব্যাস্ত কলেজ ভার্সিটিগুলো মাস ৫-৪ হলো খুলেছে এর মাঝেই পরীক্ষার প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে।পড়াশোনা ছাড়া বাকিসব চিন্তাভাবনা কে এক কোণায় রেখে, এবার পরীক্ষার প্রস্তিতি নিচ্ছি আমরা সকলে।সামনেই এক্সাম,তাই ক্লাস মিস দেয়া মানেই গুরুতর ক্ষতি যাকে বলে আরকি।ক্লাসের উদ্দেশ্যে হাটছি আমরা বেশকয়জন,সাথে আচঁল,রিদা,নুপূর তো আছেই।নানান কথা বার্তা চলছে আমাদের মাঝে।ক্লাসরুমে পৌঁছে যে যার যার মতো সিটে বসে পড়লো।কেউ কেউ ফোন টিপছে।অনেকে আড্ডাও দিচ্ছে।আমি আচঁল,নুপূর,রিদা নানান কথা বলছি।আমাদের কথা বলার এক পর্যায় নুপূর বলে উঠলো…

“এই তোরা শুনেছিস, আমাদের নাকি নতুন স্যার নিয়োগ করা হয়েছে।এইখানকারই ছাত্র ছিলো শুনলাম।ইংরেজী ডিপার্টমেন্টের ছাত্র, MBA তে নাকি CGPA 3.80এর মতো রেজাল্ট আসছে।সেই লেভেলের ব্রাইট স্টুডেন্ট।টপ হওয়ায় এইখানেই প্রোফেসর হিসেবে চান্স পেয়ে গিয়েছে।দেখতে কিন্তু হেব্বি।নাম টা কি যেনো সে সে সা ধুর মনেই পড়ছে না।”

নুপূরের কথার মাঝেই আমাদের ক্লাসে টিচার এসে পড়লো, সবাই জানতো নতুন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে।ফলস্বরুপ তাকে চিনতে তেমন একটা বেগ পেতে হলো না আমাদের।স্যারের বয়স তেমন বেশিও না আমাদের থেকে ৫-৬ বছরের মতো বড় হবেন উনি।আমাদের ক্লাসের একজন পুরাতন টিচার এসে উনার সাথে আলাপ করিয়ে চলে গেলেন।স্যার চলে যেতেই উনি সকলকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন…

“যেহুতু তোমাদের কাছে আমি নতুন সেহুতু পরিচয় পর্বটা শেষ করা যাক।আমি হলাম সামি পুরো নাম সামি জুবায়ের।এই ভার্সিটি থেকেই মাসটার্স কমপ্লিট করেছি।কয়েক বছর প্রিপারেশন নিয়ে এখন এখানকার শিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত রয়েছি।আমাকে তোমরা ভাইয়া বলেও ডাকতে পারো,অনেকে সামি ভাইয়াও বলতে পারো।স্যারও বলতে পারো,যার যা ইচ্ছে।এখন বাকিদের পরিচয় জানা যাক..!”

আস্তে আস্তে সকলের সাথে পরিচিত হয়ে নিলেন তিনি।পরিচয় পর্ব শেষ হতে হতেই ক্লাসের টাইম ওভার হয়ে গেলো।বাকি টিচারদের ক্লাস শেষে ভার্সিটির হল থেকে বেরিয়ে এলাম আমরা,মাঠে যে যার মতো আড্ডা দিচ্ছে বেশিরভাগ মেয়েই ছাত্রী হলের।আমরা মাঠের এক কোণায় বসে বসে কথা বলছি, কথার টপিক হলো স্যার মানে সামি স্যার।স্যারের কথা বলার ধরন,পড়ানোর ধরণ নিয়ে কথা বলছি আমরা, যেকোনো প্রতিষ্ঠান স্কুল,কলেজ,ভার্সিটি,হল,অফিসে যখন নতুন কেউ নিয়োগ দেয় তার সম্পর্কে আলোচনাই হয় বেশি।লোকটা কেমন,কাজ কেমন,ভালো, মন্দ এই আরকি।হাজার কথার এক পর্যায় রিদা বলে উঠলো…

“আসলেই সামি ভাইয়া দেখতে খারাপ না।আমি তো প্রথম দেখাতেই ফিদা।”

রিদার কথা শুনে নুপূর ওকে পিঞ্চ করে বলে উঠলো…

“তাহলে কি জিজু বলা প্রেক্টিস করবো নাকি?”

রিদা নুপূরের কথায় লজ্জা পেয়ে বলে উঠলো…

“ধূর কিসব যাতা বলিস!”

এবার আচঁল নুপূরের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো…

“সত্যিই তুই যাতা বলছিস নুপূর।ভাইয়া কিভাবে বর হয়, স্যার তো ওর সামি ভাইয়া।ভাইয়া কোনোভাবে বর হয় না।আর ওর ভাই মানে আমাদের ভাই,জিজু না।”

কথাটা বলেই হাহা করে হেঁসে উঠলো আচঁল।আচঁলের সাথে সাথে আমি আর নুপূরও শব্দ করে হেঁসে দিলাম।আমাদের এভাবে হাঁসতে দেখে রিদা ওর মুখটা বাংলার পাঁচের মতো করে ফেললো একদম। ও মুখ খুলে কিছু একটা বলতেই যাবে।তখন কোথা থেকে যেনো একটা ছেলে এলো সাথে ২টো মেয়ে পড়নে জিন্স আর শার্ট।মেয়েগুলো এসে আমাদের উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো…

“তোমাদের সাথে কথা আছে ওইদিকটায় এসো।”

হাত দিয়ে ইশারা করে বললো মেয়েগুলো।ওদের চিনি না বিষয়টা এমন না আমাদের ব্যাচের মেয়েই এরা সব।আমি ভ্রু কুচঁকে বলে উঠলাম…

“কি এমন কথা যেটা এখানে বলা যাবে না?বলতে হলে ওখানেই যেতে হবে।”

মেয়েটা এবার হালকা দেমাগ দেখিয়ে বললো…

“আসতে বলেছি এসো!এতো কথা বাড়াচ্ছো কেন?”

আমি এবার একটা মেয়ের কাঁধে হাত রেখে বললাম…

“সরি সিস কাজটা তোমাদের,প্রোয়োজনও তোমাদের আমরা কেনো যাবো?কোন দুঃখে যাবো।”

আমার এমন ত্যারা টাইপ কথা শুনে যেনো ইকটু বেশিই রেগে গেলো মেয়েগুলো।তবে আমি বা আমরা কেউই তেমন ভয় পাইনি।এখানে এসব কমন।দুর্বল হলে এরা আরো বাজে বিহেভ করে,এদের সাথে এদের মতোই কথা বলতে হয়।পাশে থাকা ছেলেটা কোথায় যেনো চলে গেলো।মিনিট ২-৩ পরে কয়েকজনকে সাথে করে নিয়ে এলো।ওদের মাঝ থেকে একটা মেয়ে বেরিয়ে এলো।পরনে জিন্স আর টিশার্ট।দেখ অনেকটা উশৃঙ্খল লাগলেও তার কাছে এটা স্মার্টনেস বা আধুনিকতা।চুলগুলো হালকা চকলেট কলার,দেখের বোঝা যাচ্ছে রং করা।সাটে আবার কাটও দেয়া।মুখে হালকা পাতলা মেকআপও আছে।মেয়েটা আমাদের দিকে এগিয়ে এলো।ওকে আমাদের সকলেরই ভালো করে চেনা মেয়েটার নাম রুনা।বাংলা ডিপার্টমেন্টের শিক্ষক রাজীব স্যার এর মেয়ে।স্যার মানুষটা অনেক ভালো।কিন্তু তার মেয়েটাকে আর তার মতো গড়ে তুলতে পারেননি।মা মরা মেয়ে বলে ছোটবেলা থেকে যা চেয়েছে তাই পেয়েছে।আদরের দুলালি একেবারে।কিন্তু কথায় আছে না অতি আদঁরে বাদঁর।ওরও অবস্থা তেমন অতি আদঁরে বাদঁর হয়ে গিয়েছে একেবারে।ইকটু আধটু বিষয়কে ঝগড়া করে ১০০ হাত বানানোই হলো তার কাজ।রুনা আমাদের দিকে এগিয়ে এলো।রিদার দিকে কটমট করে তাকিয়ে বলে উঠলো…

“কিছুক্ষণ আগে কি বলছিলি যেনো তুই?সামির ওপর তুই কি যেনো?ফিদা রাইট, জেনে রাখ সামি শুধু আমার ওর দিকে চোখ তুলে তাকালে তোর চোখ উপড়ে ফেলতে দু দন্ড সময় নেবো না আমি।”

রুনার কথা শুনে আমরা সবাই অবাকের শির্ষে ওর বিহেভ বাজে এটা আমরা জানতাম তবে এতোটা বাজে তা কল্পনা করিনি আমরা।রিদা কিছু বলতেই যাবে তার আগে আমি বলে উঠলাম…

“কেনো?সামি ভাইয়া তোর কেনো?তোর কেনা গোলাম নাকি উনি?না তোর দাস?একদিনেই এমন ট্রু লাভ। ওয়াহ্, ভাবতেই অবাক লাগছে।বাংলার মাটিতে এবার আমরা নতুন এক লায়লা কে দেখতে পেলাম।কি লাক আমাদের বাহ্।”

আমার কথায় যেনো তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো রুনা।আমার মুখের সামনে আঙ্গুল তুলে বলে উঠলো…

“ইউউউ স্টুপিড গার্ল। তুমি আমাকে চেনো?জানো আমি কে?”

আমি একবার ওর দিকে তাকালাম হালকা হেঁসে্।মাঠের মাঝ বরাবর গিয়ে দাড়িয়ে।হালকা জোড়ে হাততালি দিয়ে উঠলাম।আমার এমন কান্ডে মাঠের অনেকে আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো।আমি সকলের দিকে একবার তাকিয়ে বলে উঠলাম…

“আমার সকল ছাত্র/ছাত্রী ভাই ও বোনেরা সকলের দৃষ্টি আকর্ষন করছি।মানুষ মানুষের জন্য।একজন মানুষকে সাহায্য করা মানে হলো পূন্যের কাজ, বা সাওয়াবের কাজ।আমাদের মাঠে মানে ক্যাম্পাস একজন অসহায় নারী হারিয়ে গিয়েছেন।তিনি জানেন না তিনি কে?তিনি জিঙ্গেস করছেন তিনি কে?,যদি কোনো হৃদয়বান ব্যাক্তি ওনাকে চিনে থাকেন।তাহলে দয়া করে ওনাকে ওনার পরিচয়টা জানিয়ে দেবেন।”

আমার কথা শোনা মাত্রই হুহু করে হেঁসে উঠলো ক্যাম্পাসের সকলে।রুনা হয়তোবা খানিকা লজ্জাবোধ করলো এবার।আমি রুনার কাছে গিয়ে বলে উঠলাম…

“নে এবার তোকে সকলে চিনে যাবে।কে তুই, কী তার পরিচয় তোকে নিজে এসে বলে যাবে।খুশি তো।”

রুনা দাঁতে দাঁত চেপে আমার দিকে তাকালো।আমি হালকা হেঁসে ওকে ইশারায় বায় বলে।বাকিদের নিয়ে হলের উদ্দেশ্যে চলে গেলাম।

_________

খাটের ওপর বসে বসে নোট কমপ্লিট করছি আমি।নুপূর বোধয় রান্না ঘরে।আমাদের হলের একেকজন এককটা কাজ ভাগ করে নিয়েছে।রান্নাবান্নার জাবতীয় দায়িত্বে রয়েছে নুপূর।ঘর দোর গোছানোর দ্বায়িত্বে রিদা,আর কাঁচা বাজার সহ আমাদের বিভিন্ন আসবাব পত্রের কাজে রয়েছি আমি আর আচঁল।মাঝে মাঝে কেউ অসুস্থ হয়ে গেলে বা কোনো কাজে বাড়িতে গেলে।বাকিরা মিলেই কাজ সম্পন্ন করি আমরা।সেদিকার ঝগড়ার পর আর রুনার সাথে দেখা হয়নি আমার।এক্সাম শেষ।দেখতে দেখতে রোজা এসে আবার শেষও হয়ে যাচ্ছে।সামনে ঈদ তবে এখনো কেনা কাটা তেমন হয়নি।ভার্সিটি থেকে ছুটি সেই কবেই দিয়েছে,তবে আমরা এখনো কেউ কারো বাড়িতে যাইনি।পরশু রিদার যাওয়ার কথা নুপূর তার কাকা কাকীর সাথে থাকতো রোড এক্সিডেন্ট এ ওর বাবা মা দুজনেই বেঁচে যায়।আল্লাহর্ অশেষ রহমতে কোনো রকমে বেঁচে গিয়েছিলো ও্।কিন্তু বাবা মা বেঁচে না থাকলে কেউই যে আপন হয়না কথাটার জ্বলন্ত প্রমাণ নুপূর কোনোমতে ইন্টার কমপ্লিট করতে পারলেও শেষ পর্যন্ত বাড়িটা ছাড়তে হয় ওকে।ছোট খাটো একটা স্কুলে জব করতো ও এখনো করে সেলারি ১০ হাজারের মতো হবে।আর কয়েকটা টিউনশন করিয়েই পড়াশোনা কোনোরকমে চালিয়ে যায় মেয়েটা।আমাদের জীবনে কারো কোনো না কোনো অপূর্ণতা থাকেই।এইসব ছোট খাটো চাওয়া আর অপূর্ণতা নিয়েই আমরা।আমার ভাবনার মাঝেই।আচঁল এলো।হাতে ওর ফোন,কারো সাথে কথা বলতে বলতে আসছে বোধয়।ফোনটা আমার হাত ধরিয়ে দিয়ে চলে গেলো ও।ফোনটা কানে দিতেই অপর পাশের মানুষটিকে চিনতে তেমন একটা ভুল হলো না আমার কেনোনা নিজের মাকে কেউ কখনো ভুলে যেতে পারে না।

#চলবে….