#অবেলায়_তোমার_আগমন
#Adrrija_Aman(লেখনিতে)
#পর্ব_সংখ্যা_৬
“কেমন আছিস শ্রীজা?”
মায়ের কথা শুনে হালকা হাঁসলাম আমি।খানিকটা শব্দ করেই।উত্তর দিলাম…
“যেমনটা তোমরা চেয়েছিলে তেমনই আছি।”
মায়ের কন্ঠে অসহায়ত্ববোধ।মা হালকা ভাঙ্গা স্বরে বলে উঠলো…
“এভাবে বলসি না মা।”
“শুনতে বাজে লাগলেও এটাই সত্যি।তোমাদের সমাজ ব্যাবস্থা আর সম্মানের কাছে আমার ইচ্ছে আর স্বপ্নগুলো নিছক মিথ্যেই ছিলো।”
মায়ের কন্ঠ ভারি।কিছু কিছু শব্দ আসছে,মানুষটা কাদাঁর পর হালকা ফোঁপালে যেমন শব্দ হয় তেমন।হয়তোবা কাঁদছে।আমি কিছু বললাম না।নিশ্চুপ হয়ে রইলাম।মিনিট ৫-৬ এর মতো কেঁটে গেলো।তবে মা এখনো লাইনে।ফোনটা কাটলো না।কথা বলছে না মা।কথা বলার মান অভিমানকে দূরে শরিয়ে আমিই বলে উঠলাম…
“ফোন দিয়েছিলে যে?”
মায়ের কঠিন উত্তর…
“কেনো মা হয়ে তোর কাছে কী আমি ফোন দিতে পারি না?”
আমি কটাক্ষ করেই বললাম…
“যদি আমার আশা আকাঙ্ক্ষা, স্বপ্নের কথা না ভেবেই নিজের বড় মেয়ের প্রেমিকের সঙ্গে ছোট মেয়ের বিয়ে দিতে পারো সম্মানের ভয়ে,কিছুটা জ্যান্ত কবর দেয়ার মতো, এই কাজটা করতে পারো তাহলে এটা কেনো পারবে না?এটা কোনো ব্যাপার নাকিহ্?”(শেষে হালকা হেঁসে)
মা কথা কাটাতে বলে উঠলেন।
“তো রোজা তো প্রায় শেষের দিকে ঈদ আসবে আসবে ভাব,কবে আসবি বাড়িতে?”
আমি মাকে একটা প্রশ্ন করলাম…
“আচ্ছা মা,ঈদ মানে তো আনন্দ তাই না?”
মায়ের ছোট উত্তর…
“হ্যা।”
“যেখানে আমার সব আনন্দ, শখ আল্লাদগুলোই মরে গেছে,আনন্দের দিনে আমি কি করে আনন্দ করবো মা?”
মা কিছু বললো না।হয়তোবা বুঝতে পেরেছে তাদের করা এমন বেমানান কাজ তার মৃতপ্রায় মেয়েটাকে একেবারেই শেষ করে দিয়েছে।কিছুক্ষণ পর মা বললো…
“ভালো থাকিস আর নিজের যত্ন নিস।”
আমি বুঝতে পারলাম।মোবাইল নামক ছোট্ট যন্ত্রটি দিয়ে বার্তা আদান প্রদান করার কাজ হয়তোবা সম্পন্ন হয়েছে।আমি ফোনটা কেঁটে দিলাম।ফোনটাকে বিছানার এক কোণায় রেখে।জানালার গ্রিলগুলোর ফাঁক দিয়ে বাহিরটা দেখতে লাগলাম আমি।আশপাশটায় নারকেল গাছ দিয়ে ঘেরা।পাশেই পুকুরের মতো ছোট্ট একটা নালা বা ডোবা।পুরোটার ওপরই শেওলা দিয়ে ঘেরা।শেওয়ার ওপর লাল রক্তরাঙা কৃষ্ণচূড়া।ডোবার পাশটায় কৃষ্ণচূড়া গাছ থাকায় এই অবস্থা এখানকার।দেখতে বড্ড সুন্দর লাগছে্। হঠাৎ করে নুপূর আমার পাশে এসে বসলো।কাধেঁ হাত রেখে বললো…
“আন্টিকে এভাবে না বললেও পারতি।মা হয় তোর,আমার নেই তাই আমি বুঝি।”
আমি হালকা হেঁসে ঘাড় ঘুরিয়ে ওর দিকে তাকালাম এরপর ওর দিকে ফিরে বলে উঠলাম…
“আমাদের সব কিছুর মাঝেই ভালো খারাপ দুটোই অবস্থান করে।সব জিনিসের মাঝে ভালো খারাপ আছে,সব জিনিসেরই খারাপ দিক ভালো দিক রয়েছে।তুই বললি না তোর নেই তাই তুই বুঝিস,কথাটা ভুল,আর অনেক পুরাতন,কথাটা কমন এখন,এটা আবেগ নিয়ে অনেকটা আবেগ নিয়ে বলেছিস তুই।কিন্তু আমি তো পরিস্থিতী বুঝে বলেছি।আমি পরিস্থিতীর স্বীকার।আমার অবস্থাটা তুই বুঝবিনারে নুপূর,যেমন করে আমি তোর অবস্থাটা পুরোপুরি বুঝি না স্বজন হারানোর কষ্ট পুরোপুরি বুঝি না, তুই ও আমার এই ভিন্ন অভিমান আর শুষ্ক কষ্টকে বুঝবিনা,কষ্টের অনেক ধরণ থাকেরে,এ ধরণ বোঝা বড় দায়।”
“কিন্তু তুই তো শরৎভাই কে ভালোবাসিস শ্রীজা!এক কথায় তোর মা বাবার জন্যই তুই তাকে পেয়েছিস।”
“কিন্তু আমি তো তাকে এভাবে চাইনি।এ পাওয়ায় কি লাভ হলো আমার?উনি এখন আমাকে ঘৃণা করে নুপূর।আগে উনি আমাকে বুঝতো না কিন্তু এখন উনি বুঝেও বোঝে না।সবটা জানার পর উনি ঘৃণা করেন আমায়!”
“তবুও তো তাকে তোর করে পেয়েছিস শ্রীজা।আন্টি, অনুদির জন্য হলেও পেয়েছিস।”
“আমি তো ওনাকে এভাবে চাইনি!ওনার কষ্টটা আমি বুঝি নুপূর উনি তো দি কে চাইতো!আর আমি ওনাকে একজন মানুষকে না পাওয়ার কষ্ট অনেক গভীর অনেক।এখন হয়তোবা তুই বলবি আমি তো ওনাকে আমার করে পেয়েছি,হ্যা আমি ওনাকে পেয়েছি আমার করে সেটা হয়তোবা কাগজে কলমে,হয়তোবা কখনো একটা সময় আসবে ঘর সংসার হবে,সন্তান হবে।কিন্তু উনি তো আমাকে হৃদয় থেকে ভালোবাসবে না।আমাকে অনুভব করবে না,ওনার পাশটাতে উনি আমাকে কল্পনা করবে না।কারণ উনি তো দি কে কল্পনা করতো।ওনার কল্পনার প্রিয় মানুষ হওয়ার আক্ষেপ হয়তোবা আমাকে মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত পোড়াবেরে নুপূর।জানিস নুপূর যখন আমি ভাবি কেনো আমি ওনার কল্পনায় থাকতে পারলাম না তখন অনেক কষ্ট হয়,অনেক বেশি অভিমান হয়,খুব অভিমান হয়।কিন্তু পরমুহুর্তেই যেনো অচেনা কেউ একজন এসে আমাকে জানান দেয়,যে আমাকেই কল্পনা করে না আমাকেই অনুভব করে না আমাকে ভেবে যে হাঁসে না তার প্রতি কিসের এতো অভিমান?কি হবে এই অভিমান দিয়ে?বেলা শেষে কষ্ট,যন্ত্রনা, আক্ষেপগুলোতো আমারই সইতে হবে।কেনো এতো কষ্ট হয়?কেনো হয়?”
কথাগুলো বলতে বলতে আমার দু চোখের কোণ বেয়ে বেয়ে গড়িয়ে পড়লো,লবনাক্ত অশ্রুরাশি।গলাটা ধরে এলো।অজানা এক কষ্টে জর্জরিত হয়ে গেলো পুরো শরীর।কষ্টগুলো যেনো এবার রন্ধ্রে রন্ধ্রে বইতে লাগলো।অনেকটা ক্লান্তি অনুভব করলাম আমি।নিঃশব্দে চুপটি করে নুপূরের কাধেঁ মাথাটা হেলিয়ে দিলাম।ঠিক এমন ভাবেই আমি শরৎভাইয়ের কাঁধেও মাথা রাখতে চেয়েছিলাম।দিন শেষে যখন আমি বড্ড ক্লান্ত হবো।আশপাশের হাজারটা মানুষ হাজার রকমের যন্ত্রনায় আমাকে জড়জরিত করে ফেলবে।এই একটা মানুষ হবে হাজার মানুষের দেয়া,কষ্ট,হতাশাকে দূর করার একমাত্র ঔষধ।কিন্তু তা আর হলো কই?পরিণয়ের আগেই যে বিচ্ছেদ হলো।মাঝে মাঝে খুব বেশি বেহায়া মনে হয় নিজেকে।কখনো কারো কাছে এভাবে নিজের আত্নসম্মানকে বলি দেইনি,কিন্তু শরৎভাইয়ের বেলায় যেনো আত্নসম্মানেরা গা গুটিয়ে পালায়।বেহায়ার মতো তার পানে ছুটে যাই আমি।আর পরিশেষে মেলে বিশাক্ত বিচ্ছেদ,আর আমার প্রতি তার বিরক্ততা,অসীম রাগ।অপেক্ষার প্রহর কাটে না যেনো।মাঝে মাঝে মনে হয়।তাকে পাবার আগেই হারিয়ে ফেলবো আমি।এমন মনে হয়, তিনি আসবেন ভালোটালোও বোধয় বাসবেন তবে আমার জীবনে তার ভালোবাসার আগমন হয়তোবা আসবে বড় অবেলায় বড্ড অবেলায়।তার অবহেলাগুলো তার হয়েই তার কাছে ফিরে যাবে হয়তোবা।চোখ বন্ধ করে নিলাম আমি।আমি অনুভব করছি নুপূর আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে হয়তোবা আমার কষ্টটা ইকটু হলেও অনুভব করছে সে।আর কিছু ভাবতে পারলাম না,বিশ্রাম নেবার জন্য হয়তোবা মস্তিষ্কটাও এবার ঘুমের দেশে পাড়ি জমালো আমায় নিয়ে।শরীরটা এলিয়ে দিলাম নুপূরের ওপর।আমি বুঝতে পারছি হালকা হলেও বুঝতে পারছি নুপূর আমাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়েছে।
______________
ঈদ আসতে আর কয়েকদিন বাকি সবে রিদা চলে গিয়েছে তার বাড়িতে দিন ৬-৭ হবে।নুপূর আর আচঁল আমার সাথেই,কথা হয়েছে নুপূর নাকি ঈদে আচঁলের সাথে যাবে ওর বাড়িতে।আচঁলের আম্মু সুমি আন্টিই ওকে জোর করেছে যেতে নুপূরতো কিছুতেই যাবে না,শেষ মেস সবাই অনেক বলার পর,ও রাজি হয়েছে।আর ঈদের সময় পুরো হলই খালি হয়ে যাবে প্রায়।পুরো একলা একটা হলে ও একা কি করবে?এই বলেই ওকে রাজি করিয়েছি।আমি জানালার পাশে লাগানো পাতাবাহার গাছগুলোতে পানি দিয়ে চলছি।অনেকদিন যাবৎ পানি দেয়া হয়না,মাঝে মাঝে ভুলেই যাই গাছগুলোর যত্ন নিতে।কেমন মরা মরা টাইপ হয়ে গিয়েছে।এইসবই ভাবছিলাম, আমাদের ছাত্রী হলের ছাত্রীদের দেখা শোনা করার জন্য অনেক আন্টিই বরাদ্দ রয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছে বিলকিস আন্টি, ব্যাবহারও অনেক ভালো।হঠাৎ আমি তার গলার স্বর শুনলাম তিনি আমাদের জন্য বরাদ্দকৃত ঘরটার দিকে আসতে আসতে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলছেন…
“শ্রীজা তোমার সাথে দেখা করতে একজন লোক আইসে, নামটা কি জানি কইলো?হ হ মনে পড়সে শরৎ শরৎ,আইজ কালকার মানুষও পারে!কিসব নাম রাখে বাবা শরৎ এডা কোনো নামনি?”
আপন মনে বকবক করতে করতে আমাকে কথাগুলো বলে চলে গেলেন উনি্।শরৎ ভাইয়ের নাম শোনা মাত্রই চমকে উঠলাম আমি।মনে হুট করেই প্রশ্ন জেগে উঠলো…
“আবার কেন আসলেন উনি?কোনো উকিল ফুকিলকে ঘুষ খাইয়ে বেজায় টাকা খরচ করে,আবার ডিভোর্স পেপার আনেননি তো!”
#চলবে….
ভুলগুলোকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
#অবেলায়_তোমার_আগমন
#Adrrija_Aman(লেখনিতে)
#পর্ব_সংখ্যা_৭
[✖️কার্টেসি ছাড়া কপি নিষিদ্ধ✖️]
আশপাশটায় লাল লাল ইটের বড় বড় দালান।সবুজ গাছের সমাহার।দেখতে ভালোই লাগছে।প্রীতিলতা হলের সামনে দাড়িয়ে আছি আমি আর আমার সেই কাঙ্খিত মানুষটি।ইকটু দূরেই দাড়িয়ে আছেন তিনি।শরৎ ভাই।সাদা সেলোয়ার কামিজের সাথে মানানসই করা গাড়ো নীল রঙয়ের ওড়নাটা বাড় বাড় মাথার ওপর টেনে তুলছি আমি।শরৎ ভাই আমার সামনে দাড়িয়ে গায়ে সবুজ রঙয়ের শার্ট,ঘেমে গিয়েছেন হালকা।তাই শার্টের কিছু অংশ গায়ের সাথে লেপ্টে গিয়েছে।লোকটা সত্যিই সুন্দর,তার চোখে অন্যরকম মায়া খুঁজে পাই আমি।চোখগুলো এমন দেখলে মনে হয় এখনই অশ্রু গড়িয়ে পড়বে,কিন্তু পড়ে না।কুচকুচে কালো মনি,জলে ভাসা তার চোখ।যেনো ডোবায় সদ্য ফুটন্ত পদ্ম।পদ্ম ফুলটা আমারই বড্ড প্রিয়,ওনার চোখদুটোও আমার অনেক প্রিয়।কপাল থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে।হাতে থাকা টিস্যু দিয়ে যা বারবার মুছে চলেছেন।ঠান্ডা বাতাস বইছে,পাতার মরমর শব্দ,পাখির কিচিমিচিরে তৈরি হয়েছে মনোমুগ্ধকর এক পরিবেশ।শরৎ ভাই ডান হাতের আঙ্গুলগুলোকে মুঠ করে হাতটাকে মুষ্টিবদ্ধ করে নিলেন এরপর মুখের কাছে তার হাতটাকে নিয়ে গিয়ে খুক খুক করে কেঁসে উঠলেন।টিস্যু দিয়ে হাত মুছে মাঠের এক কোণায় ফেলে দিলেন ওটাকে।এরপর আমার দিকে তার দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন।মুহুর্তেই আমার কেমন যেনো লাগতে লাগলো অচেনা একটা অনুভুতীতে জর্জরিত হয়ে যাচ্ছি আমি।শরৎ ভাই বলে উঠলেন…
“ফুপির সাথে এভাবে রাগ করার মানে কী শ্রীজা?”
ওনার কথায় অবাক হলাম আমি,ভাবলাম,তাহলে কি উনি সেই মহাখালী থেকে এই সাভারের দিকে এসেছেন শুধু এই কথাটা জানার জন্য।আমি বললাম…
“আমার ইচ্ছে!”
শরৎভাই রেগে গেলেন বোধয়।জোর গলায় বলে উঠলেন…
“সব সময় নিজের ইচ্ছেকে প্রশ্রয় দিতে নেই,মাঝে মাঝে তা দমন করতে হয়।”
আমি নিঃরস কন্ঠে বলে উঠলাম…
“সেটাই তো সবসময় করে এসেছি শরৎভাই।কিন্তু আমিও তো মানুষ, আমারও তো ইচ্ছে আছে আকাঙ্ক্ষা আছে।কোনো যন্ত্র তো নই আমি।”
শরৎ ভাই নিদারুণ ভাবে কথাটা এরিয়ে গেলেন।বললেন…
“তুই আজই আমার সাথে যাবি,মহাখালী, ফুপি তোর জন্য অপেক্ষা করছে।”
আমি অন্য দিকে ফিরে শক্ত কন্ঠে বলে উঠলাম…
“যাবো না আমি।”
শরৎভাই নাছোড়বান্দা, সে আমাকে নিয়ে যাবেই,এটা তার মূল উদ্দেশ্য।শরৎভাই আমাকে বলে উঠলেন…
“হলে গিয়ে কাপড়চোপড় ফোন আর পার্সটা নিয়ে আয়,বই ঠই লাগবে না আপাততো।”
আমি এবার জোর গলায় বলে উঠলাম…
“বলেছিনা যাবো না,জোর করছেন কেনো আপনি?জোর করে কোনো কিছুই হয় না শরৎভাই।”
শরৎ ভাই বললেন…
“হয় জোর করে সব হয়,তুই এখনি যাবি।”
আমি হাসঁলাম।হালকা হেঁসে শরৎভাইয়ের দিলে দুর্বল দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললাম…
“যদি জোর করেই সব হতো,তাহলে আমিও আপনাকে বাধ্য করতাম আমাকে ভালোবাসতে।জোর করেই যদি সব হতো দি নিজের মনের বিরুদ্ধে গিয়ে আপনার সাথে সংসার করতো শরৎ ভাই।জোর করে সব হলে তো আমাকে এমন অবস্থানে থাকতে হতো না,দিনে দিনে তিল তিল করে শেষ হয়ো যাচ্ছি আমি,যদি জোর করেই সব হতো আজ আমি আগের সেই হাঁসি খুশি প্রাণোচ্ছল শ্রীজার রূপেই থাকতাম,রাত জেগে চোখের অশ্রু ঝড়াতে হতো না।”
শরৎ ভাই তার দৃষ্টি লুকিয়ে নিলেন।আমাকে বললেন…
“এবার ফুপি আর ফুপা পুরো বাড়িতে একা,অনু কোথায় গিয়েছে কোনো খবর নেই,আর তুই এই ছাত্রী হলে বসে বসে বিন্দাস ভাবে ঈদ কাটাবি তা হবে না,বাড়িতে যাবি তুই।”
আমি আমাকে ভেজা চোখ নিয়ে শরৎভাইয়ের দিকে একবার তাকালাম।ভাঙ্গা গলায় তাকে প্রশ্ন করলাম…
“আর করো দৃষ্টি লুকাবেন শরৎ ভাই,আর কিভাবে কথা কাটাবেন আপনি?আপনার কি মনে হয় না,এবার এসবের একটা খোলাসা হওয়া উতিৎ।”
শরৎভাই আমার দিকে রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকালেন।রুক্ষ কন্ঠে,তীক্ত স্বরে বলে উঠলেন…
“কিসের খোলাসা হওয়া উচিত?”
আমি হালকা হেঁসে বললাম…
“যে কারণে আপনি আমাকে ঘৃণা করেন।”
“তোর মতো আমার এতো ফালতু সময় নেই শ্রীজা।তাই এসব ফালতু বিষয় নিয়ে ভাবি না আমি।”
“তাহলে দি কে নিয়ে যখন ভাবতেন,তখন কী সেসব ফালতু বিষয় ছিলো?
“বেশি কথা বলিস তুই,লাগাম ছাড়া হয়ে গিয়েছিস।আমি কিন্তু..!”
শরৎ ভাই কথা শেষ করবার আগেই আমি বলে উঠলাম…
“কিছুই করতে পারবেন না শরৎভাই।আমার এসব লাগাম ছাড়া কথাবার্তাই সহ্য করতে হবে আমার মৃত্যুর আগ মুহুর্ত পর্যন্ত।মা বাবা কে বলতেও পারবেন না আপনি,কাউকেই না কারণ কাগজে কলমে সমাজের কাছে আমি তো আপনার স্ত্রী শরৎভাই,এটা আমার অধিকার।”
মৃত্যু শব্দটা শুনে ভয় পেয়ে গেলেন তিনি।গম্ভীর গলায় বলে উঠলেন…
“অনেক বেশি আবেগি হয়ে গিয়েছিস ইদানিং,মৃত্যু এতো সোজা না,বললেই কেউ মরে যায় না শ্রীজা!”
“বললেই সবাই মরে না শরৎভাই,তবে অনেকে ভেতর থেকে মরে গিয়ে বাহিরটার মৃত্যুর অপেক্ষা করে।”
শরৎ ভাই রেগে গেলেন।হাতটা জোর করে ধরে বলে উঠলেন…
“বড্ড বেশি বলছিস তুই!”
আমি বললাম…
“ভালোবাসি শরৎভাই।”
ব্যাস এই একটা কথাই ওনাকে দ্বিগুণ রাগিয়ে দিতে যথেষ্ট।হাত ছেড়ে দিলেন উনি আমার।হুট করেই গালে চর দিয়ে বসলেন।আমি গালে হাত দিয়ে ওনার দিকে তাকালাম,উনি রাগান্বিত কন্ঠে বলে উঠলেন…
“এটাই তোর প্রাপ্য, ভালো কথা তো শোনার মেয়ে তুই না।”
আমি ওনার দিকে অশ্রুশিক্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম।বলে উঠলাম…
“যত যাই করেন,আমার অনুভুতীগুলো কে তো মিথ্যে প্রমাণিত করতে পারবেন না আপনি।”
শরৎভাই আমার দিকে গম্ভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলে উঠলেন…
“এটা তোর আবেগ,তোর ক্ষতি ছাড়া এ আবেগ আর কিছুই করবে না, নিয়ন্ত্রন কর নিজেকে।”
“কি দরকার নিয়ন্ত্রণ করার,যে নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে নিজেকেই নিজের কাছে অপরাধী মনে হয়।আপনি যতে যাই বলেন শরৎভাই কোনোদিনও আমার এই অনুভিতীগুলোকে দূর করতে পারবেন না,আমি যেভাবে আপনাকে পেয়েও না পাওয়ার যন্ত্রনায় ভুগছি,আপনিও সেই যন্ত্রনায় ভুগবেন,আমি তো আপনাকে নিজের চোখে দেখতে পেরেছি,বলতে পেরেছি সামনা সামনি।কিন্তু আপনি পারবেন না।আপনি বলবেন, বলতে চাইবেন,কিন্তু শোনার জন্য এই আমিটাই থাকবো না শরৎভাই।আমার থেকেও হাজারগুণ বেশি যন্ত্রনা ভুগতে হবে আপনাকে।”
শরৎভাই হাসঁলেন বললেন…
“এই তুই ভালোবাসিস,যাকে ভালোবাসিস তাকে অভিসাপ দিচ্ছিস।তোর ভালোবাসার নমুনা এই?”
“অভিশাপ নয় শরৎভাই, মিলিয়ে নেবেন,দেরি করে ফেলবেন না যেনো,যে ভালোবাসে সে বার বার আসে,কখনো দূরে যায় না।কিন্তু এবার যখন চলে যায়,আর ফিরে আসে না।”
শরৎভাই ঠাট্টা করে বললেন…
“বাংলা সিরিয়াল বেশি দেখিস তুই,সিনেমার গল্প ভাবিস জীবনটাকে,আর কিছুই না।”
আমি হেঁসে,ঠান্ডা গলায় বলে উঠলাম…
“কিছু গল্প তো মানুষের জীবন থেকেই নেয়া হয়,শরৎভাই।সত্য ঘটনা অবলম্বনে কতো শতো উপন্যাস তৈরি হয়,গুণে হিসেব করতে পারবেন না।”
শরৎভাই কিছু বললেন না।একবার শান্ত দৃস্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে,কাউকে ফোন করলেন।কিছুক্ষণের মধ্যের নুপূর একটা ট্রলি ব্যাগ নিয়ে এলো ব্যাগটা আমারই আমার ফোন আর পার্সটা শরৎভাইয়ের কাছে দিয়ে।ট্রলিটা আমার সামনে দাড় করিয়ে রেখে, ‘বেস্ট অফ লাক বলে চলে গেলো’
শরৎভাই আমাকে টেনে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে দিলেন।
#চলবে…(দেরি হবার জন্য দুঃখিত)
ভুলগুলোকে ক্ষমাসুন্দর দৃস্টিতে দেখবেন।আসসালামু আলাইকুম।