অবেলায় ভালোবাসি পর্ব-০৮

0
394

#অবেলায়_ভালোবাসি
#মারিয়া_আক্তার
#পর্ব_০৮

এখন তাহা’র প্রি-টেস্ট পরীক্ষা চলছে। আজ ইংরেজি পরীক্ষা। ইংরেজি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি-ই নিতে হয় আলাদাভাবে। এমনিতেই তাহা ইংরেজিতে খুব দুর্বল। তাই তার ইংরেজি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি ভালোভাবে নেওয়া দরকার। কিন্তু তাহা ভালোভাবে কোনো প্রস্তুতিই নেয়নি। কাল রাত দুই-এক ঘন্টা পড়ে পড়ার টেবিল থেকে উঠে গেছে। অর্ধেক রাত পার করে দিয়েছে ইউটিউবে হিন্দি সিরিয়াল দেখে। সকালে ঘুম থেকে উঠে তাহা মা’য়ের বকাবকিতে একটু পড়েছে। তাও বই সামনে নিয়ে বসে বসে মোবাইল টিপেছে। আসলে ইংরেজি পড়লে তার মাথায় কিছু ঢুকেই না। তাই ভালো করে পড়েইনি। টুকটাক পড়েছে। প্রি-টেস্ট পরীক্ষায় পাশ না করলেও চলে। তাহা বসে বসে কলম কামড়াচ্ছে। পরীক্ষার খাতা আর প্রশ্ন সামনে। খাতায় শুধু মার্জিন টানা। একটা ওয়ার্ডও এখন অব্দি লেখেনি তাহা। লেখবে কি করে? সেতো পারেই না। সবাই বলছে প্রশ্ন খুব কঠিন হয়েছে এবার। ক্লাস টপারদেরই বেগ পেতে হচ্ছে সেখানে তাহা’তো তুচ্ছ। তাহা উঁকিঝুঁকি দিয়ে চারদিকে তাকানোর চেষ্টা করছে। যদি কারোর থেকে একটু দেখতে পারে। কিন্তু গার্ড এমনভাবে তাকিয়ে আছে যেন তিনি ওকে দৃষ্টি দিয়ে ভস্ম করে দেবেন। তাহা মেকি হেসে প্রশ্নে মনোযোগ দেয়। যদিও কিছু পারে না। এখন তার খুব আফসোস হচ্ছে কেন যে একটু পড়লো না কালরাতে? ভেবেছিল টেনেটুনে একটু পাশ করে যাবে। কিন্তু এখন প্রশ্নের যা অবস্থা, পাশইতো করতে পারবে না সে। অনেক্ষণ ধরে ট্রাই করার পর ন্যারেশনটা সলভ করতে পেরেছে। তিন নং এর বক্সটা এবং আর্টিকেল সলভ করতে পেরেছে। শেষে পাংচুয়েশনটা সলভ করেছে। হলো বিশ। পাশ করতে আরো বাকি ১৩ নম্বর। বাকিগুলোয় যেটা একটু ঠিক লেগেছে সেটাই লিখে দিয়েছে। কিন্তু এগুলো দিয়েতো আর পাশ করা যাবে না। পাশ না করলে কোচিং সেন্টার থেকে বের করে দেবে। বলে দিয়েছিল, যে প্রি-টেস্টে ফেল করবে তাকে কোচিংয়ে আর রাখা হবে না। কারণ কিছুদিন পরই টেস্ট পরীক্ষা। তাহা’র মা বলে দিয়েছে তাহা’কে, যদি ফেল করে তাহা’র খবর আছে। এবার ফেল করলে মা খবর করে ছাড়বে। তাহা সেসবেরই ভয় পাচ্ছে। তাহা মনে মনে আফসোস করছে, ইশ! যদি হিন্দি সিরিয়ালের ডায়ালগগুলো পরীক্ষায় আসতো। তাহলে কতই না ভালো হত। তাহা ফটাফট লিখে ফেলতে পারতো।

“তাহানিয়া! খাতা দাও।”

তাহা যেন আকাশ থেকে পড়ে। খাতা চাচ্ছে। মানে তিন ঘন্টা শেষ। এতক্ষণে কি লিখলো তাহা? ১ নং, ৩ নং ৭ নং আর ১২ নং। গ্রামারের আর কিছুই পারেনি। তাই যেটা ঠিক লেগেছে আন্দাজে সেটাই লিখে দিয়েছে। তাহা প্রশ্নকারীকে কতক্ষণ মনে মনে গালি-গালাজ করে। পার্ট বি এর কিছুই কমন আসেনি। এপ্লিকেশনের প্রথমটুকু উঠিয়ে দিয়ে দিয়েছে। সে ভাবছে দুই নম্বর ও তো পাবে এতে। তাহা খাতাটার দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে স্যারের হাতে খাতাটা তুলে দেয়। আর মনে মনে বলছে, আল্লাহ এবারের মত পাশ করিয়ে দাও। নয়তো আম্মু আমার পিঠে মুগুর ভাঙবে। তাহা ভেবেছিল পরীক্ষা হয়তো ততটা কঠিন হবে না। যেহেতু প্রি-টেস্ট পরীক্ষা এত কঠিন করার কোনো কথাও ছিল না।

“তাহা পরীক্ষা কেমন হয়েছে তোমার?”

মাঠে দাঁড়িয়ে চুইংগাম চিবোচ্ছিল তাহা। আহির প্রশ্নটা করলে আহিরের দিকে চোখ ছোটছোট করে তাকায়। কথা বলার ইচ্ছা না থাকলেও বলে,

“আলহামদুলিল্লাহ।”

তাহা ক্যাবলামার্কা হাসি দিয়ে বলে। আহিরও মুচকি হেসে বলে,

“সব উত্তর দিয়েছো? কত হবে? এইট্টি প্লাস থাকবে?”

তাহা চোখ গোলগোল করে তাকায়। এইট্টি প্লাস? সে আছে পাশের চিন্তায়, আর এই ছেলে বলছে এইট্টি প্লাস থাকবে কিনা?

“ইংলিশ পরীক্ষা খুব হার্ড হয়েছে। কিচ্ছু কমন পড়েনি।”

“গ্রামারে কি কমন পড়বে? রুলস পারলে তুমি সবগুলোই পারবে।”

“আরে মিয়া! গ্রামারের কথা বলছি না। গ্রামারতো আমি এমনিই পারি না। আমি বলছি পার্ট বি মানে কম্পোজিশনের কথা। ওখানে ৪০ নম্বর ছিল। আমি পাশইতো করি ওই নম্বরটা দিয়ে। এখন সেটাই কমন পড়েনি।”

“তো তোমার কত থাকতে পারে?”

“জানি না। রেজাল্ট দিলেই দেখতে পাবেন। আচ্ছা সেসব ছাড়ুন। আপনি আগে বলুনতো, আপনি আমাদের কলেজে কি করছেন?”

ভ্রুঁ নাচিয়ে আহিরকে প্রশ্ন করে তাহা। আহির ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলে।

“আফিয়ার জন্য এসেছি। ওকে দেখেছো কোথাও?”

তাহা মাথা নাড়ায়। যার অর্থ সে দেখেনি। তাহা আহিরের দিকে একনজর তাকিয়ে সামনের দিকে এগোয়। হাঁটতে হাঁটতে বড় একটা ইটের টুকরোর সাথে পা লেগে মাটিতে পড়ে যায়। চোখ পাকিয়ে তাকায় তাহা। রেগে গিয়ে ইটের টুকরোটাকে দূরে ছুঁড়ে মারে। রাগটা ঝাড়ে ইটের টুকরোর ওপর। সে পায়ে ব্যথা পেয়েছে কিছুটা। এখন সবাই বাড়ি যাবে বলে ব্যস্ত। মাঠের এদিকটায় কেউ তাকাচ্ছে না আপাতত। তাই তাহা যে পড়ে গিয়েছে, সেটা কেউ খেয়াল করেনি।

“তাহা! তুমি মাটিতে বসে আছো কেন?”

তাহা চোখ তুলে তাকায়। তার সামনে জলজ্যান্ত আরহামকে দেখে তার মাথায় রাগ চেপে বসে। পায়ের ব্যথা নিয়েই মাটি থেকে উঠে দাঁড়ায়।

“আমি মাটিতে বসি বা পানিতে বসি। সেসব অবশ্যই তোর দেখার বিষয় না।”

আরহাম তাহা’কে আগাগোড়া পর্যবেক্ষণ করে। তা দেখে তাহা আরহামের দিকে চোখ পাকিয়ে তাকায়।

“কি যে বলো না তাহা? তোমার সব কিছুতেই তো আমার অধিকার। তুমি আমার উডবি ওয়াইফ। তাই তোমার সব বিষয়ই আমাকে দেখতে হবে। এসব আমার দায়িত্ব তাহা।”

তাহা ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসে।

“তোকে আমি কবে এমন কমিটমেন্ট দিলাম, যে আমি তোকে বিয়ে করবো? আবার উডবি ওয়াইফ! হাহ! সে গুড়ে বালি। তোর খুব সখ না আমায় বিয়ে করার? আচ্ছা আমি তোর সেই সখ মিটিয়ে দেবো। যেদিন তোকে আধভাঙা করে পাটওয়ারি বাড়িতে প্যাকেট করে পাঠাবো। সেদিন তোর বিয়ের সখ গুছবে।”

“আচ্ছা দেখা যাক কে জেতে? নামলাম দু’জনে যুদ্ধে। তবে শেষ হাসিটা কিন্তু আমিই হাসবো। মনে রেখো।”

“এভাবে হবে না। তোর ব্যবস্থা আমি অন্যভাবে করবো। আমায় ডিস্টার্ব করার তেল বের করবো আমি”

“আমি তোমার এই তেজটাই পছন্দ করি তাহা। তবে আমার সাথে এভাবে তেজ দেখানোটা তোমার ঠিক হবে না তাহা। আমি মানুষটা কিন্তু সত্যি-ই সুবিধার না।”

“তুই ওকে ডিস্টার্ব করিস না আরহাম। তোর কাজে তুই যা। ওকে ওর মত থাকতে দে।”

আহির কথাটা বলে আরহামের পাশে এসে দাঁড়ায়। তাহা কিছুটা অবাক হয় আহিরের কথায়। ইদানীং আহির তাহা’কে খুব সাপোর্ট করে।

“ভাইয়া! তোমাকে বলেছি না আমাদের মাঝখানে ডুকবে না?”

আহির বিদ্রুপাত্মক হাসে আরহামের কথা শুনে।

“কেন? ও তোর বউ লাগে নাকি?”

“লাগে না। তবে কিছুদিন পরই বউ হয়ে যাবে। তবে ইদানীং দেখছি ওর জন্য খুব দরদ উতলে পড়ছে তোমার। ব্যাপারটা কি?”

আহির আরহামের শার্টের কলারটাকে ঠিক করতে করতে বলে,

“বড় ভাই হই তোর আমি। তাই সেটা মাথায় রেখে কথা বলবি। আর আমি যখন বলেছি তুই তাহানিয়াকে ডিস্টার্ব করবি না মানে করবি না। যে মেয়েটা তোর যেই পাগলামোতে, পাগলামো বলছি কেন এগুলাতো অসভ্যতা। তোর এই অসভ্যতা এই মেয়েটা সহ্য করতে পারে না। মেয়েটা তোকে বারবার ওয়ার্ন করছে, কিন্তু তুই সেসব শুনছিসই না। আমাদের বাড়ির ছেলের এমন অসভ্যতামি আমি ঠিক মানতে পারছি না। তাই আমি এবার তোকে ওয়ার্ন করছি। তুই ওর পিছু ছেড়ে দে। আচ্ছা, এবার বাড়ি যা।”

আহির এবার আরহামের কলার ছেড়ে দেয়। আহিরের দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকায় আরহাম।

“হঠাৎ এর জন্য এত দরদ দেখাচ্ছো যে? আগেতো এই মেয়েটাকে সহ্য করতে পারতে না তুমি”

“তোকে আমি বাড়ি যেতে বলেছি না? কোনো প্রশ্ন নয়। এবার আমার কথার ব্যতিক্রম করলে কিন্তু তোর খবর আছে আরহাম। এবার যা এখান থেকে।”

আরহাম রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে চলে যায়। তাহা চোখ বাঁকিয়ে তাকিয়ে আছে আহিরের দিকে। তা দেখে আহির ভ্রুঁ নাচিয়ে জিজ্ঞেস করে কি? তাহা মাথা নাড়িয়ে কিছু না বোঝায়।

চলবে,,,ইনশাআল্লাহ