অরণ্যে রোদন পর্ব-১+২

0
505

#অরণ্যে_‌রোদন
‌লেখা: শার‌মিন আক্তার সাথী
পর্ব:০১

১!!
‘‌ছো‌টোবেলায় যে ছে‌লে‌কে আমা‌দের বা‌ড়ির উঠা‌নে ন্যাংটা খেল‌তে দেখছি, সে ছে‌লে আজ আমার পিছ‌নে লাইন মার‌ছে। ভাব‌তে পার‌ছিস ব্যাপারটা? মা‌নে আমার স্পষ্ট ম‌নে আছে তখন আমার ছয় বছর বয়স, শ্রাব‌ণের বয়স কত হ‌বে, সা‌ড়ে তিন কি চার বছর, ঐ ছে‌লে বৃ‌ষ্টির ম‌ধ্যে আমার বা‌ড়ির উঠা‌নে ল্যাংটু হ‌য়ে দৌড়াই‌ছে, খেল‌ছে। একটু উল্টা পাল্টা কিছু কর‌লেই আমি থাপড়াইতাম। দা‌দি সে‌দিন কথায় কথায় বল‌লেন, ও ছো‌টো থাক‌তে না‌কি এক‌দিন আমি ওর টুনটু‌নি পা‌খি‌তে চিম‌টি কে‌টে লাল ক‌রে দি‌ছিল‌াম, সে সময় না‌কি বহুত কান্না কর‌ছিল, সে ছে‌লে বড় হ‌য়ে আমা‌কে প্রোপোজ কর‌ছে। কত বড় বদমাইশ ভাব! ওরে আমি থাপ‌ড়ি‌য়ে দাঁত ফে‌লে দিব।
তূবার এমন হাস্যকর কথায়, কথা প্রাণপ‌নে নি‌জের হা‌সি আটকা‌নো‌র চেষ্টা ক‌রেও পা‌রল না। শব্দ ক‌রে হে‌সে দি‌লো। তূবা, কথার দি‌কে রাগী দৃ‌ষ্টি‌তে তা‌কি‌য়ে বলল,
‘হা‌সিস না তো বাল। আমার রা‌গে গা তির‌তির কর‌ছে।’
কথা ঠোঁট টিপে বলল,
‘আ‌রে শান্ত হ। এত রাগ কর‌ছিস কেন? ও প্র‌‌োপোজ কর‌ছে, তুই তো না ক‌রে দি‌ছিস, বাস ঝা‌মেলা শেষ।’
‘কথা, তুই বুঝ‌তে পার‌ছিস না কেন? তিন বছ‌রের ছো‌টো ছে‌লে যখন আমা‌কে প্র‌পোজ কর‌তে পার‌ছে তারমা‌নে নি‌শ্চিত এ ছে‌লে সহ‌জে আমার পিছু ছাড়‌বে না।’
‌পিছন থে‌কে শ্রাবণ বলল,
‘তু‌মি, একদম ঠিক বলছো তূবা। আমি এত সহ‌জে তোমার পিছু ছাড়ব না। আর হ্যাঁ আমি মো‌টেও তোমার চে‌য়ে তিন বছ‌রের ছো‌টো ন‌া। মাত্র দুই বছর সাত মা‌সের ছো‌টো।’
তূবা দাঁত কির‌মির ক‌রতে করতে বলল,
‘‌তোর সাহস তো কম না আমা‌কে নাম ধ‌রে ডাক‌ছিস? তু‌মি বল‌ছিস? এত‌দিন তো আপা ডাক‌তি।’
‘‌পিছ‌নের কথা বাদ দাও। এখন থে‌কে তু‌মি ক‌রে বল‌বো। নো আপা টাপা, অন‌লি তূবা।’

প্রচণ্ড রা‌গে তূবা বসা থে‌কে দাঁ‌ড়ি‌য়ে নি‌জের ব্যাগ দি‌য়ে যেই না শ্রাবণ‌কে মার‌তে যা‌বে ওম‌নি শ্রাবণ দূ‌রে গি‌য়ে বলল,
‘উমাইন্না মুর‌গির ম‌তো ঠোক‌র দি‌তে আসো কেন?’
কথা, শ্রাবণ‌ের দি‌কে তা‌কি‌য়ে বলল,
‘উমাইন্না মুর‌গি আবার কেমন মুরগি?’
‌শ্রাবণ বলল,
‘ম‌হিলা হ‌য়ে ত‌ুই উমাইন্না মুর‌গি চি‌নিস না। তোরে ‌তো শূ‌লে চড়ানো দরকার। আরে যে মুর‌গি‌তে ডি‌মে আঠা‌রো-বিশ দিন ব‌সে তা দেয়, তারপর বাচ্চাসহ বের হয়। সেসব মুর‌গির ধা‌রেও যাওয়া যায় না। গে‌লেই ঠোকর মার‌তে আসে। দৌড়া‌নি দেয়। কথাআপু তোর বান্ধবীও তেমন কা‌ছেই ঘেস‌তে দেয় না। গে‌লেই ঠোকর মার‌তে আসে।’
তূবা রা‌গে থরথর করে কাঁপ‌তে কাঁপ‌তে বলল,
‘ঐ হারামজাদা, তুই এদি‌কে আয়। তো‌রে আমি মুর‌গির ম‌তো ঠোকরামু না সা‌পের ম‌তো ছোবল মারমু। একবা‌রে শেষ করমু তো‌রে।’
‌শ্রাবণ জি‌বে কামড় দি‌য়ে বলল,
‘আল্লাহ! নি‌জের হবু স্বামী‌কে মারার কথা ব‌লে না। বি‌য়ের আগে বিধবা হবা না‌কি?’

তূবা যখন অতি‌রিক্ত রে‌গে যায় ও ঠিকভা‌বে কথা বল‌তে পা‌রে না। তোতলা‌তে থা‌কে। তূবা রা‌গে কাঁপ‌তে কাঁপ‌তে বলল,
‘আ…আজই তো… তোর বা…বাবার কা‌… কা…কাছে নালিশ দিব।’
শ্রাবণ, তূবা‌কে আর একটু রাগা‌তে বলল,
‘এক লাইন ঠিকম‌তো বল‌তে পার‌ছো না, তু‌মি আবার বাবার কা‌ছে না‌লিশ দি‌বে! না‌লিশ দি‌য়ে কি বা‌লিশ পাবা? অবশ্য বা‌লিশ পে‌লে ভা‌লো, সে বা‌লি‌শে দু’জ‌নে একসা‌থে ঘুমা‌বো।’
তূবা চোখ বড় বড় ক‌রে ফেলল। শ্রাবণ আবার বলল,
‘য‌দি না‌লিশ দাও তাহ‌লে ভাববো, তুমি ভয় পা‌চ্ছো। ভাব‌ছো আমা‌কে ভালো‌বে‌সে ফেল‌বে। সে কার‌ণে আগেই বিষয়টা বাবার কা‌ছে না‌লিশ দি‌য়ে শেষ কর‌তে চাইছো। সাহস থাক‌লে বাবা‌র কা‌ছে না‌লিশ না ক‌রে আমার সা‌থে ডিল ক‌রো। দেখি আমা‌কে ভা‌লো না বে‌সে কি ক‌রে থা‌কো!’
তূবার এত রাগ চাপল পা‌য়ের কা‌ছে প‌ড়ে থাকা পাথরের টুক‌রোটা উঠি‌য়ে সরাস‌রি শ্রাব‌ণের মাথায় মারল। সা‌থে সা‌থে শ্রাব‌ণের কপাল ফেটে রক্ত বের হ‌য়ে গেল। তূবা সে‌দি‌কে ভ্রু‌ক্ষেপ না ক‌রে শ্রাব‌ণের নাক বরাবর ঘু‌ষি মে‌রে রা‌গে হনহন কর‌তে কর‌তে চ‌লে গেল। শ্রাবণ মাথা আর না‌কের যন্ত্রণায় ওখা‌নেই ব‌সে পড়ল। কথা দৌ‌ড়ে গি‌য়ে শ্রাব‌ণের কপাল চে‌পে ধরল। রুমাল বের ক‌রে শ্রাব‌ণের কপা‌লে চে‌পে ধ‌রে বলল,
‘চল ফা‌র্মে‌সি‌তে।’
‌যে‌তে যে‌তে কথা বলল,
‘‌তো‌কে যে কী বল‌বো ভে‌বে পা‌চ্ছি না? হ্যা‌ঁ রে দু‌নিয়া‌তে কি মে‌য়ের অভাব ছিল যে তুই তূবা‌কে পছন্দ কর‌তে গে‌লি? যে কিনা তোর চে‌য়ে তিন বছ‌রের বড়।’
শ্রাবণ রুমাল মাথায় চে‌পে ধ‌রে বলল,
‘‌ও মো‌টেও তিন বছ‌রের বড় ন‌া। ও আমার চে‌য়ে মাত্র দুই বছর সাত মা‌সের বড়।’
কথা, শ্রাব‌ণের ব্যথা স্থা‌নে চাপ মে‌রে বলল,
‘জীব‌নে মানুষ হ‌বি না।’
‘আপু লাগ‌ছে তো।’
‘লাগুক। দু‌নিয়ায় এত মে‌য়ে থাক‌তে তোর আমার বেস্ট ফে‌ন্ডের দি‌কে নজর গেল। তা-ও কেমন বেস্ট ফ্রেন্ড যে কি না আমা‌দের চাচা‌তো বোন।’
‘ও কি আমা‌দের আপন চাচা‌তো বে‌ান না‌কি? আপন হ‌লেওবা কী সমস্যা ছিল? কা‌জি‌দের মা‌ঝে বি‌য়ে হয় না না‌কি?’
কথা ঠাস ক‌রে শ্রাব‌ণের পি‌ঠে একটা কিল ব‌সি‌য়ে বলল,
‘বা‌ড়ি চল তারপর বোঝা‌চ্ছি।’

ফা‌র্মে‌সি থে‌কে ব্যা‌ন্ডেজ ক‌রে কথা, শ্রাবণ‌কে নি‌য়ে রিকশায় বসল। শ্রাবণ বলল,
‘আপু আমার ভা‌লোবাসা সফল হ‌বে।’
‘কীভা‌বে বুঝলি?’
‘দেখ না ল‌াল রক্ত ঝড়‌ছে। প্রে‌মের শুরুতে রক্ত ঝরা শুভ লক্ষণ।’
কথার এত হা‌সি পেল। শব্দ ক‌রে হে‌সে বলল,
‘কুত্তা, লাল মা‌নে শুভ না। লাল মা‌নে বিপদ সং‌কেত। মা‌নে সাম‌নে যেও না, সাম‌নে মহা বিপদ।’
‘আ‌রে তুই এসব বুঝ‌বি না।’

কথা দীর্ঘশ্বাস ফে‌লে গম্ভীর ক‌ণ্ঠে বলল,
‘ভাই, তুই আগুণ নি‌য়ে খেল‌ছিস। তূবা আর তোর প্রেম কখনওই হওয়ার না।’
‘কেন?’
‘প্রথম এবং বিগ সমস্যা ও তোর চেয়ে বড়। দ্বিতীয়ত ও আমা‌দের কা‌জিন। তৃতীয়ত আমা‌দের পা‌রিবা‌রিক বিষয়টাও জা‌নিস। তূবা আর আমি প্রা‌ণের বান্ধবী হ‌লেও আমা‌দের দু’জন বাবা‌দের মাঝে বিশাল ঝগড়া। বহু বছর যাবত জায়গা জ‌মি নি‌য়ে ঝা‌মেলা চল‌ছে দুই প‌রিবা‌রে। তুই কি সেটা আরও বাড়া‌তে চাস?’
‘‌আ‌মি কেন ঝা‌মেলা বাড়া‌তে চাই‌বো। উ‌ল্টো আমা‌দের বি‌য়ের কার‌ণে দুই প‌রিবা‌রের মিলন হবে।’
কথা দীর্ঘশ্বাস ছে‌ড়ে বলল,
‘‌তোর ভ‌বিষ্যৎ নি‌য়ে ভয় হ‌চ্ছে।’
‘ভ‌বিষ্যৎ নি‌য়ে ভ‌বিষ্য‌তে ভাব‌বি। তুই শুধু আমা‌কে সা‌পোর্ট কর‌বি।’
‘লা‌ত্থি দি‌য়ে রিকশা থে‌কে ফে‌লে দিব কুত্তা। আমি জীব‌নে তোর সম্প‌র্কের প‌ক্ষে থাকব না। সবসময় তূবা‌কে সা‌পোর্ট করব।’
‘তা তো কর‌বিই। তুই তো রাজাকার। নি‌জের আপন ভাই‌কে কেন সাহায্য কর‌বি? তোর বি‌য়ের আগে তোকে আর তোর বর‌কে আমি কম সাহায্য কর‌ছি? এহসানফরা‌মোশ।’
‘‌সেটা কী?’
‘‌নিমোকহারাম। বাংলায় বল‌লে খারাপ শোনায় সে জন্য হি‌ন্দি‌তে বললাম।’
‘এই তুই রিকশা থে‌কে নাম।’
‘‌নি‌জের মা‌য়ের পে‌টের একমাত্র আপন ভাই‌কে এভা‌বে রিকশা থে‌কে না‌মি‌য়ে দি‌তে পার‌বি? তা-ও যখন তোর আপন ভাই‌কে তোরই বান্ধুবী মে‌রে রক্তক্ত ক‌রে‌ছে।’
কথা কপাল চাপ‌ড়ে বলল,
‘তুই আমার একমাত্র ভাই না। বড় ভাইয়া‌কে বাদ দি‌লি কেন? সে কি আরেক মায়ের পে‌টের?’
‘আ‌রে বর্ষণ ভাইয়া এত ভালো যে মাঝে মাঝে ওরে নি‌জের ভাই ব‌লে মান‌তে মন চায় না। এত ভা‌লো কেন হ‌তে হ‌লো ওকে।’
কথা হা‌তে কতগুলা টিস্যু নি‌য়ে শ্রাব‌ণের মু‌খে ঠু‌সে বলল,
‘বাচাল চুপ থাক কিছুক্ষণ।’
শ্রাবণ মুখ থে‌কে টিস্যু বের ক‌রে বলল,
‘এভা‌বে কেউ নি‌জের ভাই‌য়ের মুখ বন্ধ ক‌রে?’
‘চুপ থাক। এখন বল বাড়ি যা‌বি না‌কি আমার বাসায়?’
‘‌কী রান্না ক‌রছিস?’
‘সকা‌লে ভাত, আলুভর্তা আর ডাল রান্না ক‌রে ভা‌র্সি‌টি‌তে গে‌ছিলাম।’
‘দুপু‌রে ওটাই খা‌বি?’
‘হুম।’
‘ভাইয়া কী খা‌বে?’
‘ও তো আজ দুপু‌রে বাসায় খ‌াবে না। রা‌তে খা‌বে। তখন মাছ বা অন্য‌কিছু রান্না করব।’
‘না না ঐ ভর্তা ডাল খে‌তে তোর বাসায় যাব না।’
‘তাহ‌লে আমা‌কে বাসায় না‌মি‌য়ে দি‌য়ে ত‌ুই বাসায় যা। তোর কথার কার‌ণে মাথা ধ‌রে গে‌ছে।’
‘তা তো ধর‌বেই। ভা‌লো কথা ক‌বে কার ভা‌লো লেগেছে?’

২!!
গরুর মাং‌স আর পোলাও এর ঘ্রা‌ণে ঘর মো মো কর‌ছে। নিহাদ ঘ‌রে ঢু‌কেই কথা‌কে জি‌জ্ঞেস করল,
‘গরুর মাংস, পোলাও ক‌রে‌ছো?’
‘হুম।’
‘কেউ আস‌বে না‌কি?’
‘‌কেউ না আস‌লে কি আমি ভা‌লো কিছু রান্ন‌া ক‌রি না?’
‘আ‌রে তা না। ব‌লে‌ানি তো তাই।’
‘‌বি‌শেষ কেউ না। তু‌মি ফ্রেশ হও। আমি নাস্তা দি‌চ্ছি।’
‘না না নাস্তা খাব না। আজ একেবা‌রে ডিনার করব।’
‘‌কেবল সাতটা বা‌জে।’
‌’তো। আমি এখনই খা‌বো। তোমার হা‌তের গরুর মাংসস ছে‌ড়ে নাস্তা সম্ভব না।’
‘আচ্ছা যাও ফ্রেশ হ‌য়ে আসো। আমি টে‌বি‌লে খাবার দি‌চ্ছি।’

‌নিহাদ ফ্রেশ এসে দেখল টে‌বিল সুন্দর ক‌রে সাজা‌নো। বা‌টি‌ ভ‌র্তি গরুর মাংস, পোলাও। পোলাও‌তে আবার কাঁচা মটরশু‌টি আর কিস‌মিস দেওয়া সা‌থে তেলা‌পিয়া মাছ ভূনা, আর শশ‌া, গাজর, ট‌মে‌টো, ধ‌নেপাতা, কাঁচাম‌রিচ, পেয়াজ সব কু‌চি কু‌চি ক‌রে কে‌টে স‌রিষার তেল দি‌য়ে সালাদ করা। নিহাদ, কথা‌কে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে গা‌লে একটা চু‌মু খে‌য়ে বলল,
‘আহা এমন লক্ষী বউ থাক‌লে আর কি লা‌গে? যেমন রূপবতী, তেমন রাধূনী, জীবন সুন্দর।’
কথা হাসল। নিহাদ টে‌বি‌লে ব‌সে প্লেট নি‌লো। কথা প্লে‌টে পোলাও আর মাছ তু‌লে দি‌লো। সবসম‌য়ের ম‌তো নিহাদ প্রথম লোকমা কথার মুখে দি‌লো। কথা মুখে খাবার নি‌য়ে বলল,
‘ধন্যবাদ করুণাময়। এমন ভা‌লো একটা বর দেওয়ার জন্য। সারাজীবন শুক‌রিয়া আদায় ক‌রেও আমি তোমার দেওয়া এ রহম‌তের ঋণ শোধ কর‌তে পারব না। শুক‌রিয়া পরম করুণাময়।’

‌নিহাদ ‌পেট পু‌রে খে‌য়ে বলল,
‘এখন একটু শো‌বো।’
‘‌জি না। এই বা‌টিটা আমা‌দের বাসায় দি‌য়ে আসেন।’
‘এখন?’
‘‌জি।’
‘আর কেবল খেলাম। এখন আমি শু‌য়ে থাক‌ব।’
‘‌জি না।’
‘শ্রাবণ শালা‌কে এসে ব‌লো নি‌য়ে যাক।’
‘ও‌কেই আস‌তে বলতাম। কিন্তু বাসায় কেউ নেই। মা-বাবা বড় ফু‌পি‌কে দেখ‌তে গে‌ছেন। বর্ষণ ভাইয়া অফি‌সে। শ্রাবণ ঘ‌রে একা। ঘর খালি রে‌খে আস‌তে পার‌বে ন‌া। বেচারা দুপু‌রে খে‌তে চাইল কিন্তু যেই শুনল, আলুভর্তা ওম‌নি রাগ করল। বিকা‌লে ফোন ক‌রে বলল, আপু পোলাও, মাংস খাওয়া‌তে পার‌বি। বেচারা সহ‌জে আমার কা‌ছে কিছু আবদার ক‌রে না। তাছাড়া মা বাসায় নেই, দুই ভাই দেখা যা‌বে বাই‌রে থে‌কে হা‌বিজা‌বি কি‌নে খা‌চ্ছে।’
‌নিহাদ বলল,
‘এখন বুঝলাম ম্যাডাম কেন আজ মাংস, পোলাও কর‌ছেন।’
‘বু‌ঝে‌ছো যখন দি‌য়ে আসো।’
‘‌দি‌য়ে আসলে আমার কি লাভ?’
কথা চোখ ইশারা করল। নিহাদ হে‌সে বলল,
‘‌নি‌জের ভা‌র্সিটির স্যার‌কে এভা‌বে দুষ্টু ইশারা কর‌তে লজ্জা কর‌ছে না?’
কথা, নিহা‌দকে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে বলল,
‘আপ‌নি আমার ভা‌র্সি‌টির স্যারটা প‌রে হ‌য়েছেন কিন্তু আমার বর আগে। সা‌ড়ে তিন বছরের পুরাতন বর আপ‌নি। নি‌জের বর‌কে ইশারা কর‌তেই পা‌রি।’
‌নিহাদ হে‌সে বলল,
‘এখন তো যে‌তেই হ‌বে। বউ ব‌লে‌ছে ব‌লে কথা।’

চল‌বে…

#অর‌ণ্যে_রোদন
‌লেখা: শারমিন আক্তার সাথী
পর্ব: ০২

৩!!
‘স্যার, আস‌তে পা‌রি?’
‘নো, ইউ আর লেট।’
‘স‌রি, স্যার।’
‘নো এক্স‌কিউজ। বাই‌রে দাঁড়াও।’
‘স্যার।’
‘বে‌শি কথ‌া বললে কান ধ‌রে দাঁড় করা‌বো।
পুরো ক্লা‌সে হা‌সির রোল প‌ড়ে গে‌ল। প্রচন্ড অপমান বো‌ধে কথা বাই‌রে দাঁ‌ড়ি‌য়ে দাঁতে দাঁত চে‌পে ভাব‌ছি‌ল,
‘এ কার‌ণেই এ ভা‌র্সি‌টি‌তে আমি এড‌মিশন নি‌তে চাই‌নি। কিন্তু ঘু‌রে ফি‌রে এখা‌নেই আসতে হ‌লো। ফাস্ট চয়েজ হিসা‌বে ইকো‌নো‌মিক্স দি‌য়ে‌ছি‌লাম কিন্তু বোর্ড ম্যা‌নেজ‌মেন্ট ধ‌রি‌য়ে দি‌লো। মাই‌গ্রেশন করার পর হিসাব‌বিজ্ঞান। হিসাব‌বিজ্ঞান বরাবরই অপ‌ছ‌ন্দের তাই বাধ্য হ‌য়ে ম্যা‌নেজ‌মেন্টই পড়‌তে হ‌চ্ছে। ম্যা‌নেজ‌মেন্টের টিচার হিসা‌বে নিহাদ বান্দরটাও আছে। মূলত এ কার‌ণেই এই ভা‌র্সি‌টি‌তে আস‌তে চাইনি। এই লোক ঘ‌রে ব‌সে কম টর্চার ক‌রে যে, ক‌দিন যাবত কলে‌জেও টর্চার ক‌রে পৈশা‌চিক আনন্দ নি‌চ্ছে। রোজ ঘ‌রের কাজ সে‌রে ত‌বে ভার্সি‌টি‌তে আস‌তে হয়। নিহাদ তো ঘুম থে‌কে উঠেই নাস্তা ক‌রে চ‌লে, আসে। ক‌লে‌জে‌ আসার আগে ওর দু‌টো টিউশন আছে। আমা‌কে ঠিকম‌তো একটু লিফ্ট পর্যন্ত দেয় না। কিছু বল‌লেই ব‌লে, ভা‌র্সি‌টি‌তে তু‌মি আমার ছাত্রী, না‌থিং এলস।’

রা‌গে বিড়‌বিড় কর‌তে কর‌তে কথা ফোনটা হা‌তে নি‌য়ে নিহাদ‌কে মে‌সেজ করল
‘কাল রা‌তে আমা‌কে ঘুমা‌তে দাও‌নি। সকা‌লে নি‌জে ঠিকই নাক ডেকে ঘু‌মি‌য়েছো। ঘ‌রের সব কাজ আমি ক‌রে‌ছি সকা‌লে। আর এখন ক্লা‌সে ঢুক‌তে দি‌চ্ছো না। বাড়ি চ‌লো তারপর দেখা যা‌বে বাসায় কে কার বস।’
‌মে‌সেজটা প‌ড়ে মু‌খে হাত দি‌য়ে হাসল নিহাদ। ও জা‌নে বা‌ড়ি গে‌লে ঝড় বই‌বে। ঝড় সামাল দেয়ার কে‌ৗশলও জা‌নে ও। নিহাদ নি‌জেও চায়‌নি কথা ওর ভা‌র্সি‌টি‌তে ভ‌র্তি হোক। স্বামী-স্ত্রী যখন টিচার আর ছাত্রী হয় বিষয়টা কিছুটা হ‌লেও চো‌খে লাগে। য‌দিও ওদের বি‌য়ে হ‌য়ে‌ছে সা‌ড়ে তিন বছ‌রের বে‌শি হ‌য়ে গে‌ছে। কথার ইন্টার ২য় ব‌র্ষে পড়ার শেষ সম‌য়ে ওদের বি‌য়ে হয়। বি‌য়ের পরই কথা HSC দি‌য়ে‌ছে। এত‌দিন ওরা দুজন প্রচণ্ড রোমা‌ন্টিক স্বামী-স্ত্রী ছি‌ল কিন্তু বর্তমা‌নে ক‌লেজে ছাত্রী শিক্ষক হ‌য়ে থাক‌তে দুজনাই খুব লজ্জা লা‌গে। তা-ও প্রথম এবং দ্বিতীয় ব‌র্ষে নিহা‌দের কো‌নো ক্লাস পায়‌নি কথা কিন্তু তৃতীয় ব‌র্ষে সপ্তা‌হে চার‌দি‌নের একটা ক্লাস পে‌য়ে‌ছে। চার‌দিন নিহাদ কথার উপর বেশ ভা‌লোই স্যারগি‌রি দেখায়। ভা‌র্সি‌টি‌তে তেমন বে‌শি কেউ জা‌নে না কথা আর নিহাদ হ্যাজ‌বেন্ড ওয়াইফ। নিহাদের ক‌য়েকজন ক‌লিগ আর কথার বন্ধুমহল জা‌নে। ত‌বে দুজন ভা‌র্সি‌টি‌তে স্যার এবং ছাত্রীর ম‌তোই থা‌কে।’

‌কিছুক্ষণ ক্লা‌সের বাই‌রে থাকার পর নিহাদ কথা‌কে ক্লা‌সে ডে‌কে নি‌লো। কথা গিয়ে তূবার পা‌শে বসল। তূবা খোঁচা মে‌রে বলল,
‘‌কি‌রে তো‌দের মা‌ঝে ঝগড়া হ‌য়ে‌ছে না‌কি?’
‘না, কেন?’
‘আস‌তে না আস‌তেই রাগ ঝাড়ল।’
‘রাগ ঝা‌ড়ে‌নি, বাদরা‌মি কর‌ছে। বা‌ড়ি যাই তারপর মজা বুঝা‌বো। আজ ওরে ঘ‌রে ঢুক‌তে দিব না।’
তূবা হাসল।

প‌রের ঘন্টাখা‌নিক ক্লাস নেই। তূবা আর কথা ক্যাম্পা‌সে হাঁট‌ছে। তখন নিহাদ, কথা‌কে কল করল। কথা রা‌গী একটা ভাব নি‌য়ে গম্ভীর ক‌ণ্ঠে বলল,
‘হুঁ ব‌লো।’
‘‌সোনা বউ, আজ দুপু‌রে কী রান্না কর‌ছো?’
‘কচু চি‌নো কচু? সেই কচু ‌চিং‌ড়ি মাছ দিয়া রান্না ক‌রে রে‌খে আস‌ছি।’
‌নিহাদ হেসে বলল,
‘বাহ্! দারুণ খাবার। তা সকা‌লে কি তু‌মি কচু খে‌য়েই আস‌ছো?’
‘‌কেন?’
‘‌কেন আবার কথার ধা‌চে বুঝা‌চ্ছে।’
‘বা‌ড়ি চ‌লো, তারপর কথার ধাচ কা‌কে ব‌লে বু‌ঝিয়ে দিব।’
‘আমার সা‌থে যা‌বে?’
‘জি না স্যার। তা‌তে আপনার বদনাম হ‌বে। স্যার ছাত্রী‌কে তার বাই‌কের পিছ‌নে নি‌য়ে যা‌চ্ছে, কেমন দেখায় না বিষয়টা? হুহ!’
‘আ‌রে আমি তো ছাত্রী‌কে নিব না, আমার বউ‌কে নিব।’
‘যাব না আমি।’
‘চ‌লো না। দুপু‌রে বাই‌রে লাঞ্চ ক‌রি।’
কথা রাগ ক‌রে বলল,
‘না।’
‘তোমার আজ ক্লাস শেষ কয়টায়?’
‘দু‌টোয়।’
‘পার‌ফেক্ট। আমারও দেড়টায় শেষ। কিছুক্ষণ অপেক্ষা ক‌রে একসা‌থে বের হ‌বো। তারপর লাঞ্চ ক‌রে বাসায় যাব।’
‘না। তাহ‌লে দুপু‌রের জন্য যা রান্না কর‌ছি, তা কে খা‌বে?’
‘রা‌তে খাব।’
‘আ‌মি যাব না।’
‌নিহাদ হে‌সে বলল,
‘আই লাভ ইউ।’
‘লজ্জা ক‌রে না নি‌জের ছাত্রী‌কে এসব বল‌তে?’
‘আ‌রে ছাত্রী তো ক্লা‌সে। ক্লাস বা‌দে সব জায়গায় তু‌মি আমার বউ।’
‘না, তু‌মি বলে‌ছি‌লে ভা‌র্সিটির সীমানার ম‌ধ্যে আমরা স্যার ছাত্রী। সো আমি এখন ভা‌র্সি‌টির সীমানার মধ্যে।’
‘আ‌মি‌তো ভা‌র্সি‌টির সীমানার ম‌ধ্যে নাই। আমি তো বাই‌রে আছি। একটা কা‌জে আস‌ছিলাম।’
‘ওহ সে কার‌ণেই রোমান্টিক কথা। যাব না মা‌নে যাব না। তু‌মি তখন স্যার‌গি‌রি কর‌ছো আমি এখন বউ‌গি‌রি করব। হিসাব বরাবর।’
নিহাদ হে‌সে বলল,
‘‌রেস্টুরে‌ন্টের নাম, ঠিকানা মেসেজ ক‌রে দি‌চ্ছি। আমি দুটোর সময় ভা‌র্সি‌টির বাই‌রে অপেক্ষা করব। আমার সা‌থে আসলেও বল‌তে পা‌রো।’
কথা ফট ক‌রে কল কে‌টে দিলে‌া। নিহাদ হাসল। ও জা‌নে ক্লাস শেষ হ‌লে কথা ঠিক চ‌লে আস‌বে।

কথার ঝগড়া শু‌নে তূবা বলল,
‘‌বেচারা‌র সা‌থে এভা‌বে ঝগড়া কর‌লি কেন?’
‘‌তো কী করব? ইদা‌নিং খুব বে‌শি স্যার‌গি‌রি দেখায়। বাসায় পড়‌তে বসায়। পড়া নেয়। পড়া না পারলে বকাঝকা ক‌রে। টর্চার কর‌ছে খ‌ুব, ক‌দিন যাবত। ওকে শিক্ষ‌া দি‌তেই হ‌বে।’
তূবা হে‌সে বলল,
‘প্র‌তিবার আমার সা‌থেই যত পটর পটর ক‌রিস। তার সাম‌নে গে‌লে তখন কী হয় তোর? তখন তো আইস‌ক্রিমের ম‌তো গ‌লে যাস।’
‘‌সেটাই তো ভা‌বি। চেহারা দেখ‌ছিস? দেখ‌লে শয়তানও মায়ায় প‌ড়ে যা‌বে। আমি একটু বক‌লে, আমার দি‌কে এমন চো‌খে তাকায় তখন, আমার নি‌জের খারাপ লা‌গে বকলাম কেন? ওর কেন এত সুন্দর হ‌তে হ‌লো? সবসময় কেমন ভ‌য়ে থাকি। ভা‌র্সি‌টি‌তে এত সুন্দরী মে‌য়ে, কে কখন আমার জামাইটার দি‌কে নজর দেয়, সেই ভ‌য়েই তো ওকে আরও বেশি ভা‌লো‌বে‌সে ফে‌লি।’
তূবা হাসল। বলল,
‘‌তো‌দের দুজনার, জু‌টিটা এত সুন্দর, স্বচ্ছ। মাশাআল্লাহ! কা‌রও নজর না লাগুক।’
‌পিছন থে‌কে শ্রাবণ বলল,
‘তূবা তু‌মি চাই‌লে আমা‌দের জু‌টি কথা আপু আর ভাইয়ার ম‌তো সুন্দর হ‌বে। আর আমার চেহারা দেখ‌ছো কেমন ইলিশ মা‌ছের ম‌তো ঝিল‌ঝিল্লা। একেবা‌রে পদ্মার রূপালী ইলিশ। আমি পদ্মার ইলিশ তু‌মি খাঁ‌টি স‌রিষার তেল। দুজ‌নে এক হ‌লে সুঘ্রাণ ছড়া‌বে বেশ।
এটা তো ক‌বিতা হ‌য়ে গেল। বাহ শ্রাবণ! বাহ্! তুই নেক্সট ক‌বি জীবনানন্দ।’
তূবা রাগ ক‌রে বলল,
‘শয়তা‌নের নাম নিলে শয়তান না‌কি হা‌জির হয় আর এ শয়তান তো নাম নেওয়ার আগেই হা‌জির হয়। বজ্জাত তুই এখা‌নে কী করোস? ক্লাস নাই তোর?’
‘স্যার তো ক্লাস করা‌চ্ছে, বা‌কি স্টু‌ডেন্টরাও কর‌ছে কিন্তু আমি করছি না।’
কথা বলল,
‘ভাই, তুই ক্লাস অফ দি‌ছিস?’
‘‌তোর, বান্ধবীর দোষ?’
‘‌কেন ও কী কর‌ছে?’
‘আ‌মি তো ক্লা‌সে ছিলাম। জানালা দি‌য়ে দেখলাম তোরা ঘুর‌ছি‌লি, সে কার‌ণে স্যার যখন বো‌র্ডে লিখ‌ছি‌লেন তখন পিছন থে‌কে পা‌লি‌য়ে এলাম।’
কথা বলল,
‘ভাই, সাম‌নে তোর ইয়ার ফাইনাল। তুই ম্যা‌থের ছাত্র। লেখাপড়ায় এত ফাঁ‌কিবা‌জি ক‌রিস না।’
‘আ‌মি ক‌বে লেখাপড়ায় ফাঁ‌কিবা‌জি কর‌ছি? ক‌দিন যাবত বাধ্য হ‌য়ে কর‌ছি। তার জন্য দায়ী তোর বান্ধবী।’
তূবা রাগ ক‌রে বলল,
‘আমি কীভা‌বে দা‌য়ি?’
‘তু‌মি, আমার প্রো‌পোজাল গ্রহণ কর‌লেই হয়। তাহ‌লে মনটা পড়া‌লেখায় বসা‌তে পারি। এখন তো মনটা তোমার কা‌ছে গি‌য়ে প‌ড়ে আছে।’
তূবা রা‌গে বিড়‌বিড় কর‌তে কর‌তে বলল,
‘হে আল্লাহ আমার রাগ নিয়ন্ত্র‌ণে রা‌খো, নয়‌তো আমার হা‌তে কেউ খুনও হ‌তে পা‌রে।’
কথা বলল,
‘ঝগড়া বাদ দে। শ্রাবণ ফুচকা আন।’

শ্রাবণ দুটো ফুচকার প্লেট এনে একটা কথার হা‌তে দিলো আরেকটা তূবার দিকে বাড়াল। তূবা রাগ দেখি‌য়ে বলল,
‘আ‌মি ফুচকা খাব না। তোর দেওয়া ফুচকা তো জীব‌নেও খা‌বো না। আমি কি‌নে খা‌বো।’
শ্রাবণ বলল,
‘ফুচকার টাকা আমি দিব না, তোমার বান্ধবী দি‌বে।’
‘ও টাকাও দি‌লেও আমার প্লেট আমি নিজে নি‌য়ে খাব।’
তূবা ফুচকাওয়ালার কা‌ছে গি‌য়ে বলল,
‘মামা, আর এক প্লেট ফুচকা দিন তো।’
শ্রাবণ নি‌জের প্লেটের ফুচকা শেষ ক‌রে তূবার প্লে‌ট থে‌কে ফুচকা নি‌য়ে মু‌খে দি‌য়ে বলল,
‘এটা বে‌শি মজা।’
তূবার এত রাগ হ‌লে‌া। কিন্তু পাব‌লিক প্লে‌সে কিছু বল‌তে চায় না দে‌খে ছে‌ড়ে দি‌য়ে বলল,
‘শ্রাবণ, ক‌দিন যাবত তোর টর্চার সহ্য ক‌রেও কিছু বল‌ছি না দেখে ভা‌বিস না তো‌কে ছে‌ড়ে দিব।’
‘আ‌মিও তো চাই তু‌মি আমা‌কে ধ‌রে রা‌খো। তাছাড়া সহ্য কোথায় কর‌ছো? ক‌দিন আগেই তো মাথা, নাক দু‌টোই ফাটাইলা। জা‌নো সে‌দিন রা‌তে জ্বর পর্যন্ত এসে গে‌ছিল। দুইটা নাপা খে‌তে হ‌য়ে‌ছে।’
তূবা বলল,
‘এ‌তে তোর শিক্ষা না হ‌লে, প‌রেরবার এমনভা‌বে মারব যে কোমায় চ‌লে যা‌বি।’
কথা মাঝখা‌নে ব‌সে বলল,
‘‌তো‌দের জ্বালায় আমি এখন কোথাও শা‌ন্তি পাই না। ঘ‌রে তো‌দের স্যা‌রের যন্ত্রণায় বাঁ‌চি না, ভা‌র্সি‌টি‌তে তো‌দের দু‌টোর। ক‌বে না পাগল টাগল হ‌য়ে যাই।’

কথা ফুচকাওয়ালার টাকা দি‌য়ে হনহন ক‌রে ক্লা‌সে চ‌লে গেল। তূবা শ্রাব‌ণের মাথায় ঠাস ক‌রে চড় মে‌রে বলল,
‘সময় আছে ভা‌লো হ‌য়ে যা। ভা‌লো হ‌তে পয়সা লা‌গে না।’
শ্রাবণ বিড়‌বিড় ক‌রে বলল,
‘ভা‌লো হ‌তে পয়সা না লাগ‌লেও ভা‌লোবাসা লা‌গে।’
তূবা কতদূর গি‌য়ে শ্রাব‌ণের দি‌কে তা‌কি‌য়ে মুচ‌কি হে‌সে বলল,
‘ফা‌জিল ছে‌লে।’

দু‌টোয় ক্লাস শেষ হওয়ার পর কথা, তূবা ভা‌র্সি‌টির বাই‌রে বের হ‌তে দেখল নিহাদ বাইক নি‌য়ে অপেক্ষা কর‌ছে। কথা‌কে দে‌খে বাই‌কে উঠ‌তে ইশারা করল। কথা দুষ্টু হে‌সে বলল,
‘স্যার, আপ‌নি ইশারায় কী বল‌ছে বুঝ‌তে পার‌ছি না।’
নিহাদ মুচ‌কি হে‌সে বলল,
‘আচ্ছা সরি। এক‌শোবার স‌রি। এবার বাই‌কে ওঠো।’
কথা হে‌সে বাই‌কে উঠে নিহা‌দের কাঁ‌ধে হাত রাখলো। নিহাদ, তূবার থে‌কে বিদায় নি‌য়ে চ‌লে গেল। পাশ থে‌কে সিন‌থিয়া বলল,
‘‌নিহাদ স্যার, প্রায়ই কথা‌কে বাই‌কে নি‌য়ে যান, নি‌য়ে আসেন, ওরা কি রি‌লে‌টিভ?’
তূবা হে‌সে বলল,
‘হ্যাঁ প্রা‌ণের রি‌লে‌টিভ।’
‘মা‌নে?’
‘মানে তারা ওরা হ্যাজ‌বেন্ড ওয়াইফ।’
‌সিন‌থিয়া অবাক হ‌য়ে বলল,
‘ব‌লিস কী? ক‌বে বি‌য়ে হ‌লো?’
‘প্রায় চার বছর হ‌তে চলল।’
‌সিন‌থিয়া অবাক হ‌য়ে বলল,
‘কী ব‌লিস? আর আমরা কেউ জা‌নি না?’
‘তুই জা‌নিস না। কোন দে‌শে থা‌কিস কে জা‌নে? আমরা বন্ধুমহ‌লের সবাই জা‌নি। কথা‌কে যে মা‌ঝে মা‌ঝে স্যা‌রকে নি‌য়ে খোঁচাই সেটাও খেয়াল ক‌রিস না, ডাফার!’
তূবা ওখান থে‌কে চ‌লে গেল।

‌সিন‌থিয়া কিছুক্ষণ ঝিম মে‌রে দাঁ‌ড়িয়ে ছিল। কথা বিবা‌হিত সেটা ও জান‌ত কিন্তু কথার স্বামী যে নিহাদ সেটা জানত না। অবশ্য সিন‌থিয়া সে‌কেন্ড ইয়া‌রে ট্রান্সফার হ‌য়ে অন্য ভা‌র্সি‌টি থে‌কে এসে‌ছে। কথার সা‌থে ওর সম্পর্কও তেমন না। শুধু ক্লাস‌মেট হিসা‌বে টুকটাক কথা হয় মা‌ঝে মা‌ঝে। কথার বন্ধু গ্রুপের সা‌থেও সিন‌থিয়ার উঠা বসা কম। সিন‌থিয়া বিড়‌বিড় ক‌রে বলল,
‘তাহ‌লে সেসব কী ছিল…!’

৪!!
রাত এগা‌রোটা,
তূবা ব‌সে ব‌সে পড়‌ছে। হঠাৎ সি সি সি শব্দে জালানার দি‌কে তা‌কি‌য়ে চম‌কে গেল। জালানার ধা‌রে শ্রাবণ দাঁ‌ড়ি‌য়ে হাস‌ছে। কথা ভ‌য়ে বু‌কে থু থু দি‌য়ে জানালার কা‌ছে গি‌য়ে আব‌ার দৌ‌ড়ে দরজার কা‌ছে আসল। দরজায় ভা‌লো ক‌রে ‌ছিট‌কি‌নি দি‌য়ে জানালার কা‌ছে এ‌সে ফিস‌ফিস ক‌রে বলল,
‘তুই, এখা‌নে কী ক‌রিস?’
‘‌তো‌মা‌কে খুব দেখ‌তে ইচ্ছা কর‌ছিল। পড়‌তেই পার‌ছিলাম ন‌া। তাই চ‌লে আসলাম।’
তূবা কপাল চাপ‌ড়ে বলল,
‘‌তো‌কে আমি কীভা‌বে বোঝাই বল?’
‘রাগ না ক‌রে সুন্দর ক‌রে ব‌লো। তাহ‌লেই বুঝ‌বো।’
‘আচ্ছা যা গি‌য়ে কল কর তারপর ফো‌নে ঠান্ডা মাথ‌ায় কথা ব‌লে বোঝা‌চ্ছি। তোর সাম‌নে ব‌সে বোঝা‌তে গে‌লে তো‌কে কি না মাইর দি‌য়ে ব‌সি।’
‘তাহ‌লে তু‌মি কল দিবা। আমার ফো‌নে টাকা নাই।’
‘দূর হ ফ‌হি‌ন্নি।’
‘‌দে‌খো কল না দি‌লে কিন্তু রাতে আবার তোমার জানালার সাম‌নে এসে চিৎকার দিব। তারপর ইচ্ছা ক‌রে সবার কা‌ছে ধরা খাব। যখন ধরা পড়ব, তখন যখন সবাই জি‌জ্ঞেস ক‌র‌বে কেন আস‌ছিলাম? বল‌বো তোমার সাথে প্রেম চল‌ছে। তারপর দেখবা তু‌মি রা‌জি থা‌কো বা না থা‌কো সবাই মি‌লে আমা‌দের বি‌য়ে দি‌য়ে দি‌বে।’
তূবা চোখ বড় বড় ক‌রে তা‌কি‌য়ে বলল,
‘কত বড় বজ্জাত‌রে তুই!’

চল‌বে…