অর‌ণ্যে রোদন পর্ব-১৩+১৪

0
178

#অর‌ণ্যে_রোদন
‌লেখক: শার‌মিন আক্তার সাথী
পর্ব: ১৩

সিন‌থিয়া পা‌নির গ্লাস এনে নিহা‌দের হা‌তে দি‌য়ে বলল,
‘ওর মুখে পা‌নির ছিটা দাও জ্ঞান ফির‌বে।’
‌নিহাদও তাই করল। কথা একবার চোখ মে‌লে নিহা‌দের দি‌কে তা‌কি‌য়ে আব‌ার চোখ বন্ধ ক‌রে ভাব‌ছে,
‘যাক বাবা, ভয়াংকর বা‌জে স্বপ্ন দেখল‌াম। এত নে‌াংরা বি‌চ্ছি‌রি স্বপ্নও হ‌তে পা‌রে? আমার নিহাদ কখনও আমায় ধোকা দি‌বে না। এটা একটা দুঃস্বপ্ন।’
‌সিন‌থিয়ার ডা‌কে চোখ মেল‌তেই কথা চো‌খের সাম‌নে নিহাদ আর সিন‌থিয়াকে দেখল কথা। ওর ম‌স্তিষ্ক ‌চিৎকার করে বলল,
‘কথা, তুই কত বোকা! নোংরা স‌ত্যিটা‌কে মিথ্যা ভে‌বে, স্বপ্ন ভে‌বে ব‌সে আছিস। এটা স‌ত্যি। যা‌কে এত‌দিন তোর নিহাদ ভাব‌তি, সে তোর নেই। সে তোর নেই। তার শরী‌রে অন্য কারও ছোঁয়া। তার অন্ত‌রে অন্য কারও ছায়া। তার সত্ত্বায় অন্য কারও গন্ধ। তুই ভুল। নিহাদ পৃ‌থিবীর সব‌চে‌য়ে ভা‌লো স্বামী‌টি নয়। নিহাদ ভা‌লো বাবাও হ‌তে পা‌রবে না। ও-ও আর পাঁচটা সেই সব পুরু‌ষের ম‌তোই, যারা তা‌দের স্ত্রীর সা‌থে প্রতারনা ক‌রে। কথার সারা শরীর ঘাম‌ছে। থরথর ক‌রে কাঁপ‌ছে শরীর। অসহায় চো‌খে একবার সিন‌থিয়ার দি‌কে তা‌কাল, একব‌ার নিহা‌দের দি‌কে। নিহাদ, কথার চো‌খের দি‌কে তা‌কা‌চ্ছে না। কথার চো‌খের দি‌কে তা‌কি‌য়ে কথা বলার ম‌তো সাহস নিহাদ ইতিম‌ধ্যেই হা‌রি‌য়ে ফে‌লে‌ছে।

সিন‌থিয়া কথার সাম‌নে ব‌সে খুব ঠান্ডা গলায় বলল,
‘কথা তু‌ই যা দে‌খে‌ছিস সব স‌ত্যি। শোন কথা, মে‌য়েদের কখনও নি‌জের স্বামী নামক মানুষটা‌কে নি‌য়ে অতি‌রিক্ত গর্ব করা ঠিক না। যেটা তুই সবসময় কর‌তি। স্বামী তো পুরুষ। আর পুরুষ যে কো‌নো সময় পা‌ল্টে যায়। এই বিষয়টা দেখা‌তেই তো‌কে জরু‌রি ভি‌ত্তিতে ডে‌কে‌ছিলাম। কথা, তোর বর স‌ত্যি তো‌কে ভা‌লোবাসে কিন্তু তোর বিশ্বাসটা ধ‌রে রাখ‌তে পা‌রে‌নি। অবশ্য তো‌দের সংসার ভাঙার জন্যই আমি এ শহ‌রে এসে‌ছিলাম। তো‌দের পূ‌র্বে থে‌কেই চিনতাম। এত‌দিন যা ক‌রে‌ছি সব আমার প্ল্যান ছিল। কিন্তু আমি এটা স‌ত্যি ভা‌বি‌নি নিহাদ শত চা‌পে পড়‌লেও আমার সাথে ফি‌জিক্যাল রি‌লেশন কর‌তে রা‌জি হ‌বে। তোর বর তো আমা‌কেও ভুল প্রমাণ ক‌রে দি‌লো। নিহাদকে তুই যতটা স্ট্রং পুরুষ ভা‌বিস না কেন, ম‌নের দিক থে‌কে সে ততটাই দুর্বল ভীত‌ু। নয়‌তো আমি কিছু ছ‌বি দি‌য়ে ব্ল্যাক‌মেইল করলাম আর সে আমার কথায় রা‌জি হ‌য়ে গেল। এখন তুই ভাব এমন দুর্বল মান‌সিকতার পুরু‌ষের সাথে সংসার কর‌বি কি না? সিদ্ধান্ত তোর। য‌দি সংসার কর‌তে চাস তাহ‌লেও আমি তো‌দের মাঝখানে আসব না। আর না কর‌তে চাই‌লেও আমি আসব না। তো‌কে বলে‌ছিলাম, পুরুষ মা‌নেই পা‌নির ম‌তো, যখন যে পা‌ত্রে যায় সে পা‌ত্রের আকার ধারণ ক‌রে। বিশ্বাস ক‌রিস‌নি এখন প্রমাণ পে‌লি তো? তোর বরও বি‌শেষ‌ কেউ নয়। সে-ও দুর্বল প্রকৃ‌তির পুরুষ। নয়‌তো আমার একটু ব্ল্যাক‌মেইল করা‌তে ফেঁ‌সে গেল। হ্যাঁ এটা স‌ত্যি নিহাদ স‌ত্যি তো‌কে অনেক ভা‌লোবা‌সে কিন্তু ‌তো‌কে শত ভা‌লোবাস‌লেও ও ম‌নের দিক থে‌কে খুব দুর্বল মান‌সিকতার। তো‌কে হারা‌নোর ভয়ই ওর ভা‌লোবাসাকে হা‌রি‌য়ে দি‌লো। ভ‌া‌লোবাসা নি‌জেই তো একটা শ‌ক্তির নাম। ভা‌লোবাসা কেন মানু‌ষের দুর্বলতা হ‌বে? ভা‌লোবাসা তো হ‌বে মানু‌ষের শ‌ক্তি। দোষ তোরও আছে। তুই-ও তোর স্বামীর শ‌ক্তির স্থানটা অর্জন কর‌তে পা‌রিস‌নি। পার‌লে ও পূ‌র্বেই তো‌কে সব স‌ত্যি ব‌লে দি‌তো। যে‌হেতু নিহাদ তা বল‌তে পা‌রে‌নি, সো বোঝা যায়, তো‌দের দুজনার ম‌ধ্যে বিশ্বাসেরও বেশ ঘাট‌তি আছে। য‌দি বিশ্বাস শক্ত পোক্ত হ‌তো, তাহ‌লে ঘটনা এতদূর পর্যন্ত পৌঁছা‌তো না। যা-ই হোক আমার কাজ শেষ তোরা এখন আস‌তে পা‌রিস।’

কথা ফ্যালফ্যাল ক‌রে তা‌কি‌য়ে সিন‌থিয়ার কথা শুন‌ছিল। একটা কথারও জবাব দি‌লো না। ও যে কী বল‌বে তা-ই ভেবে পা‌চ্ছে না। নি‌জের শরীরটা নি‌জের কা‌ছেই ভারী ম‌নে হ‌চ্ছে। শরীরটা‌কে টে‌নে নি‌য়ে ওঠবার ম‌তো শ‌ক্তি ওর নেই এখন। কথা দেয়াল ধ‌রে উঠে দাঁড়াল। কিন্তু মাথা এত ঘোরা‌চ্ছে যে পে‌টের ভিতর কেমন যেন কর‌ছে। সদ্য কন‌সিভ করার ফ‌লে এম‌নিই সবসময় মাথা ঘুরায়, ব‌মি পায় আজ এমন প‌রি‌স্থি‌তি‌তে মাথা ঘোরা‌নোর প‌রিমাণ এত বাড়ল যে কথা ওখা‌নে দাঁ‌ড়ি‌য়েই হরহর ক‌রে ব‌মি ক‌রল। নিহাদ ওকে ধর‌তে চাই‌লে কথা হাতের ইশারায় থাম‌তে বলল। নিহা‌দের নি‌জে‌কে এত অসহায় লাগ‌ছে যে কথার সা‌থে কথা বলার মতো সাহস যোগাড় কর‌তে পারল না। কথা সিন‌থিয়ার দি‌কে তা‌কি‌য়ে বলল,
‘সরি তে‌ার ঘর নোংরা ক‌রে দিলাম। আমি এখনই প‌রিষ্কার ক‌রে দি‌চ্ছি।’
সিন‌থিয়া বলল,
‘তার প্র‌য়োজন নেই কথা। তোর স্বামী‌কে আমি নোংরা ক‌রে‌ছি, তোর চো‌খে আঙুল দি‌য়ে স‌ত্যিটা দে‌খি‌য়ে দি‌য়েছি, তোর ব‌মিটাও প‌রিষ্কার কর‌তে পারব। তোর জন্য আমার স‌ত্যি কষ্ট হ‌চ্ছে। তুই স‌ত্যি খুব ভা‌লো মে‌য়ে। শুধুমাত্র নিহা‌দের স্ত্রী হবার সুবা‌দে তো‌কে ভুগ‌তে হ‌বে। কিন্তু আমি নিরুপায়। নিহাদ স্যার‌কে শা‌স্তি দেওয়াটা জরু‌রি ছি‌ল। তা‌কে শা‌স্তি দেওয়ার একমাত্র মাধ্যম তুই এবং তার প‌রিবার। তার সব‌চে‌য়ে বড় উইক প‌য়েন্ট তুই। তোর ম‌নে প্রশ্ন আস‌তে পা‌রে, কীসের শা‌স্তি? বল‌বো তো‌কে, সব বলব। আগে কিছু‌দিন তুই নিজে‌কে স্থির ক‌রে নে তারপর সব বলব।’

‌সিন‌থিয়া এক গ্লাস পা‌নি এনে কথা‌কে দি‌য়ে বলল,
‘এটা খে‌য়ে নে। ভা‌লো ল‌াগ‌বে।’
কথা পা‌নিটা খে‌য়ে এলো‌মে‌লো ভ‌ঙ্গি‌তে হেঁ‌টে ‌বের হ‌য়ে গেল। নিহাদ ওর পিছু পিছু গেল। নি‌চে নে‌মে কথা রিকশা ডে‌কে রিকশায় চে‌পে ব‌সে রিকশাওয়া‌লকে যে‌তে বলল। নিহাদ অসহায় চো‌খে তা‌কি‌য়ে রইল। ও-ও বাইক নি‌য়ে কথার পিছু পিছু যে‌তে থাকল। চার‌দি‌কে মাগ‌রি‌বের আযান দি‌চ্ছে। সন্ধ্যা নে‌মে‌ছে প্রকৃ‌তি‌তে আর কথা নিহা‌দের জীব‌নে নে‌মে‌ছে নিকষ কা‌লো আধার।
নিহাদ ভে‌বে‌ছিল কথা ওদের বা‌ড়ি যা‌বে কিন্তু না কথা নিহা‌দের বা‌ড়িই আসল। কথা সরাস‌রি ভিত‌রে চ‌লে গেল। নিহাদ বাইক পার্ক ক‌রে কথার পিছু পিছু গেল। বাসায় ঢু‌কে কথা সোজা মোমেনার কা‌ছে গেল। তি‌নি তখন মাগ‌রি‌বের নামাজ প‌ড়ে কেবল বিছানায় ব‌সে‌ছে। কথা গি‌য়ে তার কো‌লে মাথা রাখল। মো‌মেনা মাথায় হাত বুলা‌তে বুলা‌তে ব‌লল,
‘কী হ‌লো মা?’
‘‌কিছু না।’
‌’তোর বান্ধবীর কী সমস্যা হ‌য়ে‌ছিল?’
‘প‌রে বলব।’
‘আচ্ছা। নামাজ প‌ড়ে‌ছিস?’
‘ন‌া। যা গি‌য়ে নামাজ প‌ড়ে নে।’
‘‌তোমার কো‌লে একটু থা‌কি।’
‘নামাজ প‌ড়ে তারপর যতখু‌শি কোলে থা‌কিস।’

কথা মো‌মেনার রু‌মেই ওযু ক‌রে নামাজ পড়ল। মোনা‌জা‌তে কথা এক বিন্দুও কাঁদল না। কথা নিজের আচর‌ণে নি‌জেই অবাক হ‌চ্ছে। আজ তো ওর কান্না করার দিন। তাহ‌লে কেন ও কাঁদ‌তে পারছে না? চোখ থে‌কে এক ফোটা অশ্রুও কেন গ‌ড়ি‌য়ে পড়‌ছে না? কেন চোখ দু‌টো নিঃষ্প্রাণ পাথরের ম‌তো হ‌য়ে গে‌ছে?
কথা নি‌জের রু‌মে আসল। নিহাদ তখন বিছানায় ব‌সে আছে। কথা কো‌নোরকম শব্দ না ক‌রে পড়‌তে বসল। নিহাদ অপরা‌ধি ভ‌ঙ্গি‌তেই ওর দি‌কে তা‌কি‌য়ে রইল। কথার নীরবতায় নিহাদ সব‌চে‌য়ে বে‌শি ভয় পা‌চ্ছে। কথা য‌দি চিল্লাপাল্লা কান্নাকা‌টি করত, তাহ‌লে হয়‌তো ওর ম‌নের কষ্টটা বে‌রি‌য়ে যেত কিন্তু কথার এমন গাম্ভীর্য, নীরবতা যেন কো‌নো বড় ঝড়ের আভাস দি‌চ্ছে। সমু‌দ্রে বড় ঝড় তুফান আসার পূ‌র্বে সমুদ্র যেমন নীরব নিস্তব্ধ থা‌কে ঠিক তেমনই নীরব নিস্তব্ধ কথা আজ।

১৮!!
শ্রাবণ, তূবা‌কে ‌হোয়াটসঅ্যা‌পে মে‌সেজ করল।
‘গৃহকর্তা চো‌রের ভ‌য়ে দরজা খোলা রে‌খে জানালা বন্ধ ক‌রে‌ছে। ভাব‌ছে চোর জানালা দি‌য়ে উঠ‌বে।”
‌মে‌সেজটার দি‌কে তূবা কতক্ষণ তা‌কি‌য়ে থে‌কে উত্তর দি‌লো,
“মাথা ঠিক আছে? এগুলা কী বল‌ছিস?”
“‌দু‌নিয়ার সব জায়গা থে‌কে এক‌টিভ রে‌খে শুধু ‌ফেইসবুক মেসেঞ্জার থেকে ব্লক ক‌রেছো। তা‌তে ল‌াভটা কী হ‌লো? তুমি কতবার আমা‌কে ব্লক করবে? আমি হাজারবার হাজারটা আইডি খু‌লে তোমা‌কে নক করব। বাই দ্যা ওয়ে কী কর‌ছো?”
“‌তো‌কে কেন বল‌বো?”
“‌বল‌তে হ‌বে না। আমি জা‌নি টে‌বি‌লে ব‌সে বই সাম‌নে নি‌য়ে আমার কথা ভাব‌ছো।”
“ভাবার ম‌তো এমন বি‌শেষ কেউ না তুই।”
“তাহ‌লে আমার মে‌সেজ পড়ে ঠোঁ‌টে ঠোঁট চে‌পে হাস‌ছো কেন?”

তূবা চারপা‌শে তা‌কিয়ে জানালার দি‌কে তাকা‌তেই ভূত দেখার ম‌তো চম‌কে উঠল। শ্রাবণ জানালার কা‌ছে দাঁ‌ড়ি‌য়ে হাত নাড়‌ছে। শ্রাবণ‌কে দেখে তূবা জানালার কা‌ছে এসে বলল,
‘তুই এই সন্ধ্যা‌বেলা এখা‌নে?’
‘বউ আর তার প‌রিবারকে দেখ‌তে আসলাম।’
‘‌কে তোর বউ হারা‌মি?’
‘ছি! ছি! আমার বউ মো‌টেও হারা‌মি না। সে তো লক্ষী মে‌য়ে। জান দরজাটা খো‌লো। তোমা‌কে চু‌পি চু‌পি একটু দে‌খে‌ই চলে যাব।’
‘কে তোর জান?’
‘তু‌মি।’
‘দূর হ এখান থে‌কে।’
‘ভোরবেলার বিরক্ত করা কা‌কের ম‌তো তা‌ড়ি‌য়ে দিচ্ছ কেন? আমি কি সকা‌লে এসে কা কা ক‌রে বিরক্ত করেছি? ভদ্র ছে‌লের ম‌তো সন্ধ্যার পর এসেছি।’
তূবা মু‌খের উপর শব্দ ক‌রে জানালা বন্ধ ক‌রে দি‌লো। শ্রাবণ মে‌সেজ করল,
“জানলা বন্ধ কর‌ছো দরজা তো না। দে‌খো সবার সাম‌নে দি‌য়ে কীভা‌বে তোমার রু‌মে আসি।”
তূবা মে‌সেজ করল,
“কচু কর‌বি তুই।”

শ্রাবণ ফোনটা প‌কে‌টে নি‌য়ে তূবা‌দের সাম‌নের দরজায় নক করল। দরজা খুলল তূবার চা‌চি তামিমা। তা‌মিমা‌কে দে‌খে শ্রাবণ সালাম দি‌লো,
‘আসসালামু আলাইকুম, চা‌চি।’
‘ওয়ালাইকুম আসসালাম।’
‘‌কেমন আছেন চা‌চি?’
‘আলহামদু‌লিল্লাহ্। তুই?’
‘ভা‌লো, চা‌চি। বড় চাচ্চু আর ছো‌টো চাচ্চু কেমন আছেন?’
‘তারাও ভা‌লো। ভিত‌রে আয়।’
‘তা‌মিম কোথায়?’
‘ও কোচিং-এ গেছে। ইং‌রেজী পড়‌তে যায়। এসে পড়‌বে কিছুক্ষণ পরই।’
‘ওর পড়া‌লেখা কেমন চলছে?’
‘একদম ফাঁ‌কিবাজ। তো‌কে তো গতবার ব‌লে‌ছিলাম ওকে গ‌ণিতটা পড়া‌তে তখন রা‌জি হ‌লি না। এবার শুনলাম বাই‌রে টিউশন পড়া‌চ্ছিস। তা তা‌মি‌মের গ‌ণিতটা পড়া‌বি না‌কি? সাম‌নেই তো এসএস‌সি পরীক্ষা।’

শ্রাবণ যেন না চাইতেই হা‌তে আকা‌শের চাঁদ পেল। তূবা‌কে রোজ রোজ দেখার এমন সু‌যোগ ও মো‌টেও হাতছ‌াড়া কর‌বে না। শ্রাবণ সা‌থে সা‌থে বলল,
‘কাল থে‌কে বিকালে বা সন্ধ্যার পর কখন সময় পা‌বে তা‌মিম?’
‘এই তো এখন এসে পড়‌বে। তারপর ফ্রি একদম।’
‘আচ্ছা তাহ‌লে কাল থে‌কে রোজ সন্ধ্যা সাতটায় ওকে পড়াব।’
‘বড় বাঁচান বাঁচা‌লি বাব‌া। ঐ পড়া‌চোরটা একদম পড়তে চায় না। তোর ম‌তো গ‌ণি‌তে ভা‌লো আমা‌দের এ পাড়ায় কেউ নেই। তুই য‌দি পড়াস তাহ‌লে তো টেনশনই ক‌মে যা‌বে।’
‘আরে চা‌চি টেনশন কর‌বেন না। পড়া‌চোর একদম ঠিক ক‌রে দিব।’
‘আ‌রে দেখ তো‌কে পে‌য়ে বকবক শুরু ক‌রে দি‌য়েছি। কোথায় চা নাস্তা দিব, কত‌দিন পর আস‌লি।’
‘চা‌চি আমি আপনা‌দের ঘ‌রের ‌ছে‌লে। এত ব্যস্ত হ‌তে হ‌বে না।’
‘না না বস তুই। আমি দুই মি‌নি‌টে আস‌ছি।’
‘চা‌চি, তূবা… কিছুক্ষণ থে‌মে বলল, আপু কোথায়?’
‘রুমে, কেন?’
‘কথা আপুর একটু কাজ আছে। সে কার‌ণেই আসলাম।’
‘আচ্ছা যা তূবার রুমে গি‌য়ে বস। ওর সা‌থে কথা বল। আমি সেখা‌নেই নাস্তা দি‌চ্ছি।’
‘আচ্ছা।’

শ্রাবণ, তূবার দরজার কা‌ছে গি‌য়ে দরজায় টোকা দি‌লো। তূবা ভিতর থে‌কে বলল,
‘চা‌চি, আসো। দরজা খোলা আছে।’
শ্রাবণ দরজা খুলে দেখল, তূবা বিছ‌ানায় উবু হ‌য়ে শু‌য়ে বই পড়‌ছে। শ্রাবণ গি‌য়ে ওর পা‌শে ব‌সে বলল,
‘জানলা বন্ধ ক‌রে চিল মে‌রে শু‌য়ে আছো?’
তূবা আচমকা এত ভয় পেল যে লাফ মে‌রে বিছানা থে‌কে উঠে দাঁড়াল। শ্রাবণ, তূবার দি‌কে এক নজর তা‌কি‌য়ে বলল,
‘‌দে‌খো তূবা, আমি খুব ভা‌লো ছে‌লে, প্লিজ ওড়না গা‌য়ে দাও। তাছ‌াড়া তু‌মি স্লিভ‌লেস কা‌মিজ প‌রে আছো। আমার কিন্তু লজ্জা কর‌ছে। বি‌য়ের আগে এভা‌বে দেখা ঠিক না।’
তূবা তাড়াহু‌ড়ো ক‌রে বিছানা থে‌কে ওড়না গা‌য়ে জ‌ড়ি‌য়ে বলল,
‘তুই এখা‌নে কী কর‌ছিস?’
‘‌ছি! ছি! নি‌জের বর‌কে তুই ত‌ুকারি ক‌রে না পাপ লা‌গে। তওবা ক‌রে এখ‌নি তু‌মি ব‌লো।’
‘ইডি‌য়েট, তুই এখা‌নে কী ক‌রে এলি?’
‘বা‌হ্ রে ভু‌লে গেলা? এটা আমার চাচার বাসা। যখন তখন এখা‌নে আস‌তে পা‌রি। সমস্যা কোথায়?’
তূবা, শ্রাব‌ণের দিকে তা‌কি‌য়ে ভাবল,
‘কথা তো ঠিক।’
মুখে বলল,
‘তাহ‌লে এ রুমে কী কর‌ছিস?’
‘চা‌চি বলল, শ্রাবণ, যা বাবা তোর হবু বউ‌য়ের কা‌ছে যা। তা‌কে একটু সময় দে।’
‘চা‌চি এ কথা বল‌ছে?’
‘‌বিশ্বাস না হ‌লে চা‌চি‌কে জি‌জ্ঞেস ক‌রো।’
‘রুম থেকে বের হ।’

রু‌মে তা‌মিমা ঢু‌কে ট্রে‌তে চা নাস্তা দি‌য়ে বলল,
‘তূবা, শ্রাবণ‌কে নাস্তা দে। ‌তোর মেজ চা‌চির বাসায় আমার একটু কাজ আছে। সেখা‌নে যা‌চ্ছি। শ্রাবণ, নাস্তা শেষ করে যা‌বি।’
ভদ্র ছে‌লের ম‌তো শ্রাবণ বলল,
‘আচ্ছা চা‌চি।’
‘কাল থে‌কে রোজ তা‌মিম‌কে পড়াতে আস‌বি।’
‘আচ্ছা চাচি।’
তূবা অবাক হ‌য়ে তা‌মিমা আর শ্রাব‌ণের কথা শুন‌ছে। তারপর বলল,
‘ও কেন তা‌মিম‌কে পড়া‌বে?’
‘‌তো কে পড়া‌বে? আমা‌দের এ পাড়ায় শ্রাব‌ণের চে‌য়ে গ‌ণি‌তে ভা‌লো আর কে আছে?’
তূবা মুখ বাঁ‌কি‌য়ে বলল,
‘ওর ম‌তো বান্দরও এ পাড়ায় দ্বিতীয়টা নাই।’
শ্রাবণ বলল,
‘শুন‌ছেন চা‌চি? সবসময় আমার সা‌থে এমন ক‌রে।’
তা‌মিমা বলল,
‘আ‌রে রা‌গিস না। বড় বোনরা ছোটো ভাই‌দের সা‌থে এমন ক‌রে।’
তা‌মিমার কথা শু‌নে তূবা, শ্রা‌বণের দি‌কে তাকাল। শ্রাবণ মুখ গোমরা করে ম‌নে ম‌নে বলল,
‘আস‌ছে বড় বোন। ও আমার বউ। বোন হ‌তে যা‌বে কোন দুঃ‌খে। আমার নি‌জের বোন আছে। ধার করা বোন লাগ‌বে না।’
শ্রাব‌ণের মু‌খের অবস্থা দে‌খে তূবা ঠোঁ‌টে ঠোঁট চে‌পে হাসল। ম‌নে ম‌নে বলল,
‘একদম ঠিক হই‌ছে।’
তা‌মিমা বলল,
‘‌তোরা নাস্তা কর, আমি আস‌ছি। তূবা মেইন ডোর বন্ধ ক‌রে গল্প কর তোরা।’

তা‌মিমা চলে গেল। তূবা তার পিছু পিছু গিয়ে দরজা বন্ধ ক‌রে পিছ‌নে তা‌কি‌য়ে দেখল, শ্রাবণ ওর দি‌কে তা‌কি‌য়ে দুষ্টু হাস‌ছে। তূবা রাগী চো‌খে তা‌কি‌য়ে বলল,
‘তাড়াতা‌ড়ি নাস্তা ক‌রে বা‌ড়ি যা।’
শ্রাবণ দুষ্ট‌ু হে‌সে বলল,
‘এই সিচু‌য়েশ‌নে একটা হি‌ন্দি গান ম‌নে আস‌ছে। গাই‌বো?’
‘‌কো‌নো প্র‌য়োজন নেই। আমি জা‌নি যা গাই‌বি উল্টা পাল্টাই গাই‌বি।’
‘আচ্ছা গাই। য‌দিও আমার গা‌নের গলা ভা‌লো না তা-ও গাই‌ছি।
কই নে‌হি‌কে কাম‌রে‌মে
ক্যা হা‌চিন মিলা‌হে পাল
আজ…
বা‌কিটা বলার আগেই তূবা বলল,
‘চুপ একদম চুপ। এই গানটা আ‌মি জা‌নি। তুই এখনই বের হ‌য়ে যা‌বি।’

তূবা, শ্রাব‌ণের হাত ধ‌রে বের কর‌তে নি‌লে, শ্রাবণ হাত ঘু‌রি‌য়ে উল্টো তূবা‌কে নি‌জের বাহুবন্দী ক‌রে ফেলল। তূবা স্তব্ধ হ‌য়ে দাঁ‌ড়ি‌য়ে গেল। শ্রাবণ আরএকটু শক্ত ক‌রে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে তূবার চো‌খের দি‌কে তা‌কি‌য়ে বলল,
‘‌কেন বো‌ঝো না কতটা ভা‌লোবাসি।’
তূবা অবাক হ‌য়ে শ্রাব‌ণের চো‌খের দি‌কে তা‌কি‌য়ে রইল। ও চো‌খে নেই কো‌নো ছলনা, নেই কপটতা, আছে শুধ‌ু তূবার জন্য এক বুক ভা‌লোবাসা। শ্রাব‌ণের চো‌খের শুদ্ধতম অনুভূ‌তি বুঝ‌তে পে‌রে তূবা ভ‌য়ে ঢোক গিলল। শ্রাবণ ‌সে মুগ্ধ নয়‌নে তা‌কি‌য়ে রইল প্রাণ প্রিয়ার স্বর্গীয় চো‌খে। শ্রাবণ, তূবার আঙুলে নি‌জের আঙুল জ‌ড়ি‌য়ে তূবার হাতটা উপ‌রে উঠাল। তারপর গভীরভা‌বে তূবার হা‌তের উল্টো‌পি‌ঠে চুমু খে‌লো। অদ্ভুত দি‌শেহারা অনুভূ‌তি‌তে তূবা মাতাল হ‌য়ে যা‌চ্ছিল। অনেক ক‌ষ্টে তূবা নি‌জে‌কে নিয়ন্ত্রণ ক‌রে শ্রাব‌ণের দি‌কে তাকি‌য়ে বলল,
‘শ্রাবণ!’
তূবা চো‌খের আর ক‌ণ্ঠের শীতলতায় শ্রাবণ বেশ ভয় পেল। আস্তে ক‌রে তূবা‌কে ছে‌ড়ে দরজা খু‌লে বের হ‌য়ে গেল। তূবা দরজা বন্ধ ক‌রে দরজার পা‌শেই ব‌সে পড়ল। বিড়‌বিড় ক‌রে বল‌তে লাগল,
‘আ‌মি এ কী ক‌রে ফেললাম? নি‌জে‌কে বারবার শা‌সি‌য়েও ওর মায়ায় এমনভা‌বে জ‌ড়ি‌য়ে গেলাম!’

আমার নতুন বই আস‌ছে “রৌ‌দ্রোজ্জ্বল দি‌নে একটু মে‌ঘের ছায়া”। দোয়া কর‌বেন

চল‌বে…

#অর‌ণ্যে_রোদন
‌লেখক: শার‌মিন আক্তার সাথী
পর্ব: ১৪

শ্রাবণ, তূবা‌দের ঘর থে‌কে বের হ‌য়ে কিছু দূর এসে দাঁ‌ড়ি‌য়ে ‌নি‌জে নি‌জে বলল,
‘নাহ! এতটা করা ঠিক হয়‌নি। আজ খুব বে‌শি বাড়াবা‌ড়ি ক‌রে ফেললাম। তূবা তো এখনও আমা‌কে ভা‌লোবা‌সি ব‌লে‌নি। তাহ‌লে এভা‌বে অধিকার খাটা‌নোটা ঠিক হয়‌নি। ‌কিন্তু কী কর‌বো ও সাম‌নে আস‌লেই আমার মাথা খারাপ হ‌য়ে যায়। নি‌জে‌কে সামলা‌তে পা‌রি না। নি‌জে‌কে মাতাল মনে হয়। তখন নি‌জের উপর নিয়ন্ত্রণ থা‌কে না। নাহ! তবুও ওর কা‌ছে ক্ষমা চাই‌তে হবে।’

শ্রাবণ আবার ফি‌রে গেল তূবা‌দের বাসায়। দরজায় টোকা দি‌লো। তূবা তখন দরজার কা‌ছেই বসা ছিল। ও ভাবল হয়তো তা‌মিমা। নি‌জে‌কে স্বাভাবিক ক‌রে দরজা খু‌লে দেখল শ্রাবণ মাথা নিচু ক‌রে দাঁ‌ড়ি‌য়ে আছে। তূবা, শ্রাব‌ণের দি‌কে লজ্জায় তাকা‌তে পারল না। ও-ও মাথা নিচু করে বলল,
‘আবার কেন এসে‌ছিস?’
‘‌ভিত‌রে এসে ব‌লি।’
তূবা দরজা ছে‌ড়ে দাঁড়াল। শ্রাবণ ভিত‌রে ঢুক‌তেই তূবা দরজা লক ক‌রে বলল,
‘হ্যাঁ বল।’

শ্রাবণ, তূবার চো‌খের দি‌কে তাকাল। ও ভু‌লে গেল ও কী বলতে এসে‌ছিল! মে‌য়েটার দি‌কে তাকা‌লেই ওর নি‌জে‌কে মাতাল মাতাল ম‌নে হয়। একদম সামলা‌তে পা‌রে না নি‌জে‌কে। এসে‌ছি‌ল স‌রি বল‌তে মুখ ফস‌কে ব‌লে ফেলল,
‘আর একবার জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রি? প্লিজ।’
তূবা চোখ বড় বড় ক‌রে তাকাল। কিন্তু কো‌নো কথা বলল না। ওর নীরবতা যেন শ্রাবণ‌কে নীরব সম্ম‌তি প্রদান কর‌ছে। শ্রাবণ আগ বা‌ড়ি‌য়ে যেই জ‌ড়ি‌য়ে ধর‌বে ওম‌নি তূবা মুহূ‌র্তেই নি‌জে‌কে সামলে ফেলল। শ্রাব‌ণের বু‌কে হাত দি‌য়ে ওকে থা‌মিয়ে ফেলল। শ্রাব‌ণের চো‌খের দি‌কে তাকাল। শীতল চাহনী তূবার। কিন্তু সে চাহনী হৃদ‌য়ে ক‌াঁপন ধরা‌নোর ম‌তো। তূবা ক‌ঠিন ক‌ণ্ঠে বলল,
‘বা‌ড়ি যা শ্রাবণ, আজ তুই লি‌মিট ক্রস ক‌রে গে‌ছিস। আর লি‌মিট ক্রস আমি সহ্য করব না।’

তূবার ক‌ঠিন কথায় ‌কেন জা‌নি শ্রাব‌ণের চোখ ভ‌রে এলো। সিক্ত ক‌ণ্ঠে বলল,
‘‌কেন একটু ভা‌লোবাস‌তে পা‌রো না আমায়? কেন বো‌ঝো না কতটা ভা‌লোবা‌সি তোমায়?’
তূবা আবারও সে শীতল চো‌খে শ্রা‌বণের চো‌খের দি‌কে তাকাল। তারপর শ্রাব‌ণের গা‌লে হ‌াত দি‌য়ে বলল,
‘ভা‌লোবাসাটা ম‌নের বিষয়। আমার মন তো‌কে ভা‌লোবাসার অনুম‌তি দেয়‌নি এখনও।’

শ্রাবণ দাঁড়ি‌য়ে রইল। তূবা মৃদু হে‌সে শ্রাবণ‌কে জ‌ড়িয়ে ধরল। শ্রাবণ স্তব্ধ হ‌য়ে দাঁ‌ড়ি‌য়েই রইল। তূবা ওকে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে বলল,
‘এই যে তো‌কে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে‌ছি, তোর মা‌ঝে অনুভূ‌তি কাজ করলেও আমার মা‌ঝে কিন্তু কো‌নো অনুভূ‌তি কাজ কর‌ছে না। আমি ক্যাজুয়া‌লি তো‌কে হাগ ক‌রে‌ছি। যেমনটা ফ্রেন্ড কিংবা কা‌জিন‌কে ক‌রে।’

এ কথা শোনার পর শ্রাবণ আর দাঁড়াল না। দরজা খু‌লে হনহন ক‌রে চ‌লে গেল। বিড়‌বিড় ক‌রে বল‌তে লাগল,
‘আ‌মি আর পাঁচটা কা‌জিন কী সমান? কেন সমান হ‌বো? আমা‌কে ক্যাজুয়াল হাগ কেন কর‌বে? আমা‌কে জ‌ড়ি‌য়ে ধর‌লে কেন ওর মা‌ঝে অনুভূ‌তি কাজ ক‌রে না? কিন্তু ও যখন আমায় জ‌ড়ি‌য়ে ধরল, তখন আমার শরী‌রের প্র‌তিটা লোমকূপ দাঁ‌ড়িয়ে গি‌য়ে‌ছিল। শরী‌রের প্র‌তিটা স্নায়ু‌কোষ জে‌গে উঠে‌ছিল। তাহ‌লে ওর কেন আম‌ার প্র‌তি এমন বৈরী অনুভূ‌তি। আমার ভা‌লোবাসায় কি কো‌নো কম‌তি আছে? কেন ও ভা‌লোবাস‌তে পার‌ছে না আমায়?’

শ্রাবণ যে‌তেই তূবা দরজা বন্ধ ক‌রে দরজার পা‌শে ব‌সে পড়ল। ওর সারা শরীর থরথর ক‌রে কাঁপ‌ছে। একটু জ‌ড়ি‌য়ে ধরাই শ্রাবণ যেন ওর সারা অস্তিত্বে নি‌জের সুভাস রে‌খে গে‌ছে। তূবা মিথ্যা বলল শ্রাবণ‌কে যে, ওকে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে কো‌নো অনুভূ‌তি হয়‌নি। আস‌লে তূবা ভিত‌রে ভিত‌রে ভয়াবহ কাঁপছি‌ল। তীব্র অনুভূতি‌তে ওর সারা শরীর অবস হ‌য়ে যা‌চ্ছিল। শ্রাব‌ণের সাম‌নে নি‌জে‌কে যে কীভা‌বে শক্ত রে‌খে‌ছে তা কেবল ও-ই জা‌নে। শ্রাবণ আর একটু সময় ওভা‌বে জ‌ড়িয়ে থাক‌লে অনুভূ‌তির দরুন ও হয়তো বেহুশ হ‌য়ে যেত। তখন ধরা প‌রে যেত শ্রাবণের কা‌ছে।

তূবা নি‌জে নি‌জে বলল,
‘‌তোর আমার ভা‌লোবাসাটা সম্ভব না রে। কো‌নো ভা‌বেই সম্ভব না। বয়সের পার্থক্য, পা‌রিবা‌রিক কলহ এসব সাই‌ডে রে‌খেও য‌দি তোর সা‌থে আমার বি‌য়ে হয়ও তা-ও তুই জীব‌নে সুখী হ‌তে পার‌বি না। আমার মা‌ঝে বড় ধর‌ণের একটা ত্রু‌টি আছে। আমি হয়‌তো কখনও মা হ‌তে পারব না। এই কথা জানার পরও কী তুই আমা‌কে ভা‌লোবাস‌তে পারবি? আমার তো ম‌নে হয় না। আর আমি হয়তো তো‌কে কখনও বল‌তেও পারব না। এখন থে‌কে তোর কাছ থে‌কে নি‌জে‌কে অনেক দূ‌রে রাখব।’

শ্রাবণ ঘ‌রে ফি‌রে নি‌জে‌ নিজে অনুভব করল তূবা‌র কা‌ছে ক্ষমা চাওয়া দরকার। আজ‌কে খুব বেশি বাড়াবা‌ড়ি ক‌রে ফেলে‌ছে। এ ধর‌ণের বাড়াবা‌ড়ি করা ওর একদম উচিত হয়‌নি। এখনই স‌রি বল‌তে হ‌বে। ভা‌লোবাসাটা দুই প‌ক্ষে থে‌কে সমান সম‌ান হ‌লে ত‌বেই না, জ‌ড়ি‌য়ে ধরার অধিকার আসে। তা না ক‌রে নি‌জেই আগবা‌ড়ি‌য়ে নি‌জেই বাড়াবা‌ড়ি ক‌রে আসল। শ্রাবণ স‌রি লি‌খে মে‌সেজ কর‌তে নি‌য়ে দেখল, ইতিম‌ধ্যে তূবা ওকে যোগা‌যো‌গের সকল মাধ্যম থে‌কে ব্লক ক‌রে ফে‌লে‌ছে। সা‌থে হোয়াটস অ্যা‌পে একটা মে‌সেজও ক‌রে রেখে‌ছে,

“শ্রাবণ, বিগত অনেক মাসগু‌লো‌তে তো‌কে বুঝা‌নোর অনেক চেষ্টা ক‌রে‌ছি কিন্তু তুই‌ মো‌টেও বু‌ঝিস‌নি। তো‌কে বুঝা‌তে বুঝা‌তে এখন আমি ক্লান্ত। যে সম্প‌র্কের কো‌নো ভ‌বিষ্যৎ নেই সে সম্প‌র্কে আমি কখনও জড়াব না। বয়‌সের কথা বাদ দি‌লেও আমা‌দের পা‌রিবা‌রিক কল‌হের দিকটা কিন্তু নজরআন্দাজ কর‌তে পা‌রিস না। এখন হয়‌তো দুই প‌রিবা‌রে দেখা সাক্ষাৎ হ‌লে সৌজন্যতার খা‌তি‌রে কথা ব‌লে। কিন্তু আমরা সবাই জা‌নি তোর বাবা চাচারা আমার বাবা‌ চাচা‌দেরকে আর আমার বাবা চাচারা তোর বাবা‌ চাচা‌দের একদম পছন্দ ক‌রে না। ছোট্ট একটা জ‌মির টুকরা নি‌য়ে এরা কত বছর যাবত লড়াই ক‌রে যা‌চ্ছে। তুই সবার কা‌ছে আমা‌কে দূরসম্প‌র্কের চাচাতো বোন ব‌লিস। আস‌লে তো তা না! আমর‌া একই বং‌শের ছে‌লে মে‌য়ে। তোর দাদা আর আমার দাদা আপন ভাই ছি‌লেন। তা‌দের ম‌ধ্যে মিল মহব্বত থাকলেও তা‌দের ছে‌লে মে‌য়ের ম‌ধ্যে মো‌টেও তা নেই। আমা‌দের দুই প‌রিবার কখনও এ অসম সম্পর্ক মান‌বে না। সব ঠিক থাক‌লেই মানত না, সেখা‌নে অসম বয়‌সের সম্পর্ক মানার তো প্রশ্নই ওঠে না। উল্টো রাগারা‌গির বিষয়টা হয়‌তো খুন‌খু‌নীর পর্যা‌য়ে চ‌লে যা‌বে। কি দরকার দুজ‌নের খু‌শির জন্য এতগু‌লো মানু‌ষের সুখ নষ্ট করার? দুই প‌রিবা‌রে এখন যা-ও একটু সম্পর্ক ভা‌লো হ‌চ্ছে, তুই কি চাস সে সম্পর্ক আবার আগের ম‌তো খারাপ হোক? তাছাড়া আমি আমার প‌রিবা‌রের বিরু‌দ্ধে কখনও যাব না। আমার মা নেই। ছো‌টোবেলা থে‌কে ছো‌টোচা‌চির কা‌ছে মানুষ হ‌য়েছি তি‌নি আমায় খুব ভরসা ক‌রেন। তোর সা‌থে সম্প‌র্কে জ‌ড়ি‌য়ে তার ভরসা ভাঙ‌তে পারব না। মোটকথা আমি আমার প‌রিবা‌রের বিরু‌দ্ধে গি‌য়ে কখনও তোর সা‌থে সম্প‌র্কে জড়াব না। তাছ‌াড়া তোর জন্য আমার ম‌নে কো‌নো ফি‌লিংস নেই। তুই শুধু আমার চাচা‌তো ভাই, বাস এতটুকুই থাক আমা‌দের সম্পর্ক। তা-ও ভা‌লো থাকুক সম্পর্কগু‌লো। ভা‌লো থা‌কিস। নি‌জের‌ খেয়াল রাখিস।”

‌মে‌সেজটা প‌ড়ে শ্রাবণ মৃদু হে‌সে বলল,
‘মে‌সেজটা প‌ড়ে শিওর হলাম তু‌মি আমায় ভা‌লোবা‌সে‌া। আচ্ছা প‌রিবারই যখন প্রধান বাঁধা তাহ‌লে সে বাঁধাই প্রথমে দূর করব।’

গ‌ল্পের মাঝে বির‌তি
“আমার নতুন বই আস‌ছে “রৌ‌দ্রোজ্জ্বল দি‌নে একটু মে‌ঘের ছায়া”।”

১৯!!
কিছুক্ষণ বই খু‌লে ব‌সে রইল কথা। কিন্তু বই‌য়ের একটা শব্দও ও চো‌খে দেখ‌ছে না। বরং বই‌য়ের মা‌ঝে ভে‌সে উঠ‌ছে নিহাদ আর সিন‌থিয়া নগ্ন দু‌টো দেহ। কথা বারবার চোখ বন্ধ ক‌রে ফেল‌ছে। কিন্তু চোখ বন্ধ কর‌লেও সেই একই দৃশ্য চো‌খের সাম‌নে ভাস‌ছে। কথার নি‌জে‌কে পাগল পাগল লাগ‌ছে। বইটা‌কে টে‌বি‌লের উপর রে‌খে রান্না ঘ‌রে চ‌লে গেল। কথা আসলে বুঝ‌তে পার‌ছে না ও কী কর‌বে? অস্থিরতায় দিশাহারা হ‌য়ে গে‌ছে। রান্নাঘরে ‌গি‌য়ে সবার জন্য নাস্তা বানাল। সব‌জি পু‌রি আর চা। নিহা‌দের বাবা, মা, দা‌দি যখন নাস্তা কর‌ে বস‌লেন তখন মো‌মেনা বলল,
‘‌নিহাদ কই, কথা?’
‘রু‌মে।’
‘ও‌কে ডাক।’
‘আচ্ছা।’

কথা রু‌মে গি‌য়ে নিহা‌দের দি‌কে তাকাল এখনও তেমনভা‌বেই ব‌সে আছে। চেহারায় হে‌রে যাওয়ার, অপরাধ‌বো‌ধের স্পষ্ট ছাপ। কথার খুব মায়া লাগল। এই লোক‌টা‌কে ও ভা‌লোবা‌সে। নি‌জের সবটা দি‌য়ে এতগুলো বছর ভা‌লো‌বে‌সে এসে‌ছে অথচ সেই লোক আজ ওকে…। নিজ ম‌নে ছোট্ট একটা দীর্ঘশ্বাস গোপন ক‌রে কথা নিহাদ‌কে ডাকল,
‌’নিহাদ।’
‌নিহাদ চোখ তু‌লে তাকাল। কথা শুধু বলল,
‘মা ডাক‌ছে। ফ্রেশ হ‌য়ে যে‌তে বল‌ছে। টে‌বি‌লে নাস্তা দি‌য়ে‌ছি।’

কথার আচর‌ণে নিহাদ শুধু অবাকই হ‌চ্ছে। এত‌দিন যে কথা‌কে চিনত মুহূ‌র্তেই সে অচেনা হ‌য়ে গে‌ল। নিহাদ কথা‌কে ডাকল,
‘কথা!’
কথা, নিহা‌দের ডা‌কে সারা দেবার প্র‌য়োজন ম‌নে করল না। চুপ ক‌রে চ‌লে গেল।

নিহাদ ফ্রেশ হ‌য়ে সাম‌নে আসল। সবাই ওর জন্যই অপেক্ষা ক‌রছি‌ল। কথা গরম গরম পু‌রি আর সস দি‌লো। পু‌রি মু‌খে দি‌য়েই সবাই মুখ কেমন যেন ক‌রে ফেলল। পু‌রি‌তে এত লবন হ‌য়েছে যে মুখে দেওয়া যা‌চ্ছে না। মো‌মেনা বলল,
‘কথা, তোর শরীর ঠিক আছে?’
‘হ্যাঁ মা। কেন?’
‘তোর রান্না তো লবন বেশি হয় না? পুরি‌তে বোধ হয় দুইবার লবন দি‌য়ে‌ছিস।’
কথা কিছুক্ষণ চুপ থে‌কে বলল,
‘হ‌তে পা‌রে। আচ্ছা বসো আমি আবার বা‌নি‌য়ে আনছি।’
‌মো‌মেনা বলল,
‘আ‌রে থাক লাগ‌বে না। কতক্ষণ পর তো সবাই ডিনার কর‌বে। তুই চা বি‌স্কুট নি‌য়ে আয়।’
‘আচ্ছা মা।’

‌নিহাদ নিঃশ‌ব্দে লব‌নে পোড়া সে পু‌রিগু‌লো খে‌য়ে ফেলল। নিহা‌দের আচর‌ণে সবাই অবাক হ‌লেও কথা কো‌নো ভ্রু‌ক্ষেপই করল না। ও রান্নাঘ‌রে গি‌য়ে চা‌য়ের পা‌নি বসা‌লে‌া। নিহাদ ওর পিছু পিছু আসল। নিহাদ‌কে দে‌খে কথা বলল,
‘জা‌নো নিহাদ, খাবার নষ্ট হ‌লে তা দ্বিতীয়বার ভা‌লো ক‌রে বানা‌নো যায় কিন্তু মানুষ নষ্ট হ‌লে তা কি সম্ভব?’

‌নিহাদ চুপ ক‌রে কথার দি‌কে তা‌কি‌য়ে রইল। কথা চা বানি‌য়ে ট্রে‌তে চা, বিস্কুট নি‌য়ে সবার কা‌ছে গেল।
মো‌মেনা কিছু একটা আন্দাজ কর‌তে পার‌ল। বুঝ‌তে পারল তার ছে‌লে আর ছে‌লের বউএর ম‌ধ্যে কিছু একটা হ‌য়ে‌ছে কিন্তু তি‌নি বিষয়টা নি‌য়ে আপাতত কথা বা নিহাদ‌কে কিছু জি‌জ্ঞেস কর‌বে ন‌া। বরাবরই তি‌নি কথা, নিহা‌দের ম‌নোমা‌লি‌ণ্যে নাক গলান না। তারম‌তে স্বামী-স্ত্রীর মা‌ঝে তৃতীয় ব্য‌ক্তি প্র‌বেশ না করাই ভা‌লো। তারা নি‌জে‌দের সমস্যা নি‌জেরা সমাধান কর‌তে পার‌লেই বে‌শি ভা‌লো। যখন সমস্যাটা আয়াত্বের বাই‌রে চ‌লে যায় তখন একজন‌কে তা‌দের ম‌ধ্যে আস‌তে হয়। তা-ও তৃতীয়ব্য‌ক্তি হয়ে নয় বরং সেতু বন্ধন হ‌য়ে দুজন‌ার মা‌ঝে মিলন করা‌নোর জন্য। মো‌মেনা জা‌নে নিহাদ, কথার রাগারা‌গি বে‌শিক্ষণ থা‌কে না। ওরা নি‌জেরাই নি‌জে‌দের সমস্যা সমাধান ক‌রে নেয়। সে কার‌ণে ওদের সম্প‌র্কে কখনও কারও সেতু বন্ধন হব‌ার প্র‌য়োজন প‌ড়ে‌নি। বরাব‌রের ম‌তো এবা‌রের সমস্যাটা‌কে মো‌মেনা হালকাভা‌বে নি‌লেও মো‌মেনা জা‌নে না, এবা‌রের সমস্যাটা কতটা গুরুগম্ভীর। এবা‌রের সমস্যায় ওদের সম্পর্কও ভে‌ঙে যে‌তে পা‌রে।

গভীর রাত।
রাত আনুমা‌নিক দুইটা বা‌জে তখন।
কথা বারান্দায় ব‌সে আছে। নিহাদ বিছানায় নিঃশ‌ব্দে শু‌য়ে আছে। ঘুম নেই কারও চো‌খেই। নিহাদ উঠে বারান্দায় গি‌য়ে বলল,
‘‌ভিত‌রে এসে শু‌য়ে পড়ো।’
কথা কিছুক্ষণ চুপ থে‌কে বলল,
‘‌তোমার সা‌থে একই বিছানায় শু‌লে তোমার শরীর থে‌কে অন্য কারও গন্ধ পাই। আমি সে গন্ধ সহ্য কর‌তে পা‌রছি না। যে মানুষটা‌কে এত বছর যাবত কেবল নি‌জের মে‌নে এসে‌ছি সে মানুষটা আমার নেই। এ কথাটা আমার শরীর মন কো‌নোটাই মান‌তে পা‌রছে না।’

‌নিহাদ, কথার পা‌শে বসল, ওর হা‌তে হাত রে‌খে বলল,
‘ম‌ানুষটা তোমার ছিল, তোমার আছে, মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত তোমারই থা‌কবে। এমন‌কি সৃ‌ষ্টিকর্তা চাই‌লে মৃত্যুর পরও তোমারই থাক‌বে।’
তা‌চ্ছিল্য হে‌সে কথা বলল,
‘তাহ‌লে আজ যা দেখলাম তা কি ট্রিপল এক্স মুভির শু‌টিং ছি‌ল? না‌কি রিহা‌র্সেল?’
‘আমার কথা আগে পু‌রোটা শো‌নো তারপর না হয় যা খু‌শি শা‌স্তি দিও।’
‘‌নিহাদ, আজ আমার কিছু শুন‌তে ইচ্ছ‌া কর‌ছে না। তোমার নোংরা প্রে‌মের গল্প তো তো‌ মো‌টেও শুন‌তে ইচ্ছা কর‌ছে না।’
‘ওটা প্রে‌মের গল্প মো‌টেও না। হ্যাঁ নোংরা গল্প বল‌তে পা‌রে‌া। কিন্তু তোমাকে শুন‌তে হ‌বে। তু‌মি পু‌রোটা না শু‌নে আমা‌কে ভুল বুঝ‌বে তা হ‌বে না কথা।’
‘আর আমি যা চো‌খে দেখলাম?’
‘‌চো‌খের দেখা কি সব স‌ঠিক? মা‌ঝে মা‌ঝে দেখার মা‌ঝে, বোঝার মা‌ঝে, শোনার মা‌ঝেও ভুল থা‌কে। চোখ যেটা দে‌খে, কান যেটা শো‌নে তার বিপ‌রী‌তেও একটা গল্প আছে।’
‘আ‌মি জানি। আমি শুনব তোমার কথা কিন্তু আমা‌কে কিছুটা সময় দাও তু‌মি।’
‘আচ্ছা।’
‘এখন একটু‌ প্লিজ তু‌মি ভা‌লো ক‌রে গোসল সে‌রে আসো।’
‘এত রা‌তে?’
‘আমার তোমা‌কে জ‌ড়ি‌য়ে ধর‌তে ইচ্ছা কর‌ছে। কিন্তু তোমার শরী‌রে অন্য কারও ছোঁয়া, অন্য কারও গন্ধ যা আমি নি‌তে পার‌ছি না। প্লিজ গোসল সে‌রে আসো। আমি একটু তোমায় জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে ঘুমা‌তে চাই।’

‌নিহাদ সা‌থে সা‌থেই গে‌াসল কর‌তে গেল। সাবান দি‌য়ে শরীরটা এমনভা‌বে ঘস‌তে লাগল, যেন চামরা উঠি‌য়ে ফেল‌লে ওর শা‌ন্তি হ‌বে। সিনথিয়ার স্পর্শ হয়‌তো তা‌তে চ‌লে যা‌বে। ‌কিন্তু কথায় আছে না, কল‌ঙ্কের দাগ শত সাবান দি‌য়ে ধু‌লেও যায় না। শরী‌রে নোংরা লাগ‌লে তা সাবান পা‌নি‌তে ওঠে কিন্তু কলঙ্ক লাগ‌লে তা প‌ৃ‌থিবীর সব সাবান পা‌নি‌তেও উঠে না।

‌অনেকটা সময় নি‌য়ে গোসল সে‌রে এসে দেখল কথা বিছানায় ব‌সে আছে। নিহাদের দি‌কে তা‌কি‌য়ে ও ভাবল,
‘কী দরকার ছিল তোমার এত সুন্দর হবার। মে‌য়েরা বে‌শি সুন্দরী হ‌লে যতটা সমস্যা হয়, ছে‌লেরা ‌বে‌শি সুন্দর হ‌লে তার চে‌য়ে হয়তো বে‌শি সমস্যা হয়। তোমার এ নজরকাড়া সৌন্দর্যই হয়‌তো আমা‌দের সম্প‌র্কের কাল হ‌লো নিহাদ।’

নিহাদ ‌টি-শার্ট পরতে নি‌লে কথা নি‌ষেধ ক‌রল। নিহা‌দের নগ্ন ঠান্ডা বু‌কে মাথা রে‌খে চোখ বন্ধ করে ম‌নে ম‌নে বলল,
‘ই‌তিম‌ধ্যে আমি কতটা ভয়াবহ সিদ্ধান্ত নি‌য়ে‌ছি তু‌মি জানো না, নিহাদ। যতটা কষ্ট তু‌মি আমায় দি‌য়ে‌ছো তার দ্বিগুণ তোমায় ফি‌রি‌য়ে দিব।’

আমার নতুন বই আস‌ছে “রৌ‌দ্রোজ্জ্বল দি‌নে একটু মে‌ঘের ছায়া”।

চল‌বে…