অর‌ণ্যে রোদন পর্ব-৭+৮

0
217

#অর‌ণ্যে_রোদন
লেখা: শারমিন আক্তার সাথী
পর্ব: ০৭

‘তু‌মি কেন বো‌ঝো না, তোমার একট‌ু ক‌ষ্টে আমার প্রাণটা কেমন ছটফট ক‌রে। দে‌খো বু‌কের ভিতরটা কেমন কর‌ছে।’
‘কই? কা‌ছে আসো তো, একটু শু‌নি।’
‌নিহাদ, কথা‌কে জ‌ড়ি‌য়ে ধরল। কথা চোখ বন্ধ ক‌রে অনুভব কর‌তে লাগল প্রিয়তমর হৃদস্পন্দন। কথা চোখ বন্ধ ক‌রে বলল,
‘স্যার!’
‌নিহাদ কথা‌কে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রেই বলল,
‘ব‌লে‌ছিনা বাসায় ব‌সে স্যার বল‌বে না। আমার বিরক্ত লা‌গে।’
‘আহা! আর ক‌লে‌জে ব‌সে‌ তো আপ‌নি আমা‌কে চি‌নেনই না, স্যার।’
‘না চিন‌লেও তোমার বদ বান্ধবী‌দের টি‌জের হাত থে‌কে ‌তো নিস্তার পাই না। আমা‌কে দেখ‌লে বি‌ভিন্নভা‌বে ইনি‌য়ে বি‌নি‌য়ে দুল্লাভাই ডা‌কে। যেই ওদের দি‌কে তাকাই, ওম‌নি এমন ভান ক‌রে যেন কিছু জানেই না।’
কথা হেসে বলল,
‘তু‌মি, কেন আমার ভা‌র্সি‌টির শিক্ষক হ‌লে?’
‘ম্যাডাম আমি বি‌য়ের আগে থে‌কেই ঐ ভা‌র্সি‌টির শিক্ষক ছিলাম। আপ‌নি বি‌য়ের পর ওখা‌নে ভ‌‌র্তি হ‌য়ে‌ছেন।’
‘আ‌মি মো‌টেও ভ‌র্তি হ‌তে চাই‌নি।’
‘আ‌মিও চাইনি। দেখো না ভা‌র্সি‌টি‌তে ব‌সে আমা‌দের স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক কেমন অকওয়ার্ড সিচু‌য়েশ‌নে প‌ড়ে যাই।’
‘বুঝলাম না এখা‌নে অকওয়া‌র্ডের কি আছে? স্যাররা কি বি‌য়ে ক‌রে না? পৃ‌থিবীর প্র‌তিটা স্যার, প্র‌তিটা ছাত্রী বি‌য়ে ক‌রে। ‌তোর তাদের ম‌ধ্যে কিছু স্যার আর ছাত্রীরা একে অপর‌কে বি‌য়ে কর‌লে সমস্যা কোথায়? ছাত্রী সে তো ছাত্রীই, স্যার সে সেও তো স্যারই। তা‌তে তারা যে ক‌লেজ বা ভা‌র্সি‌টি‌তে পড়ুক বা পড়াক না কেন? তা‌দের বি‌য়ে হ‌লে এতে খারাপের কিছু দে‌খি না। হ্যাঁ স্যার য‌দি তার ছাত্রী‌কে খারাপ নজ‌রে দে‌খে সেটা খারাপ বা ছাত্রী স্যা‌র‌কে। কিন্তু দুজ‌নেই পা‌রিবা‌রিক ভা‌বে বিবাহ বন্ধ‌নে আবদ্ধ হ‌লে সেটায় ভুল কিছু দে‌খি না। এখন স্যার হ‌য়ে‌ছে ব‌লে কি বি‌য়ে কর‌বে না? কারণ সে যা‌কে বি‌য়ে কর‌বে সে অবশ্যই কো‌নো না কো‌নো স্কু‌ল, ক‌লেজ কিংবা ভা‌র্সিটির ছাত্রী তো হ‌বেই। আর শিক্ষক‌ সে সব জায়গায়ই শিক্ষক। তার মা‌নে কি শিক্ষক বি‌য়ে কর‌বে না? বয়স্ক বিবা‌হিত শিক্ষ‌কের ব্যাপার আলাদা। কিন্তু তোমার মত হ্যান্ডসাম কিউট শিক্ষ‌কের উপর লাইন মারাই যায়। এতে ছাত্রী‌দের কো‌নো দোষ নেই।’
‌নিহাদ, কথার গাল টে‌নে বলল,
‘আ‌মি বিবা‌হিত। আমার উপর কারও লাইন মার‌তে হ‌বে না।’
‘‌তোমা‌কে দেখ‌লে কে বল‌বে বিবা‌হিত? এখন থে‌কে রোজ রো‌দে হে‌ঁটে হেঁ‌টে একটু কা‌লো হই‌য়ো তো। ছে‌লে‌দের এত বে‌শি সুন্দর হ‌তে নেই।’
‌নিহাদ হাসল। কথা, নিহাদ‌কে শক্ত করে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে বলল,
‘আই লাভ ইউ মাই হ্যান্ডসাম স্যার।’
‘আই লাভ ইউ টু কথা।’
‘অনেক হ‌য়ে‌ছে ভা‌লোবাসাবা‌সি। এবার মা‌কে কল ক‌রে জি‌জ্ঞেস ক‌রো কতদূর আস‌লেন। ক্ষুদা লাগ‌ছে।’
‌নিহাদ দুষ্ট‌ু চো‌খে তা‌কি‌য়ে বলল,
‘ক্ষুদা তো আমারও লাগ‌ছে। কষ্ট তো আমার বে‌শি হ‌য়ে‌ছে তাই না।’
কথা চোখ রাঙা‌লো। নিহাদ হে‌সে টি-শার্ট পর‌তে বলল,
‘আমার ফোন থে‌কে মা‌কে কল করে দাও তো।’

‌মো‌মেনা, নয়ন শিকদার আর নিহা‌দের দা‌দি আস‌লেন কিছুক্ষণ পরই। কথা ততক্ষ‌ণে টে‌বি‌লে খাবার সা‌জি‌য়ে রে‌খে‌ছে। মো‌মেনা‌কে দে‌খে কথা ঠোঁট ফুলি‌য়ে অভিমান ক‌রে বলল,
‘আ‌মি কারও সা‌থে কথা বলব না। নি‌জের মা হ‌লে কি মে‌য়ে‌কে ছে‌ড়ে এত‌দিন থাক‌তে পারত।’
‌মো‌মেনা পরম য‌ত্নে কথার কপা‌লে চু‌ুমু খে‌য়ে বলল,
‘আহা‌রে আমার বাচ্চাটা রাগ কর‌ছে? কিন্তু কথা তো জা‌নে মা কেন দূ‌রে ছি‌ল!’
কথা মো‌মেনা‌কে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে বলল,
‘‌মা, তোমা‌কে কত মিস কর‌ছি জা‌নো?’
‘জা‌নি সোনা।’
কথা, নিহা‌দের দা‌দির কা‌ছে গি‌য়ে বলল,
‘এই বু‌ড়ি, সবসময় আমার মা‌কে নি‌জের কা‌ছে নেওয়ার জন্য প‌রিকল্পনা কেন ক‌রো?’
‌নিহা‌দের দা‌দি বল‌লেন,
‘কী করব বল, তোর তো দুইটা মা, আমার একটাও নেই। সে কার‌ণে তোর দুজন মা থে‌কে একজন মা‌কে মা‌ঝে মা‌ঝে ধার নেই।’
‘আ‌মি এত ধার দি‌তে পারব না। দা‌দি তু‌মি এখন থে‌কে এখা‌নে থাক‌বে। খবরদার আবার নি‌জের স্বামী বা‌ড়ি, স্বামী বা‌ড়ি ক‌রে চিল্লা‌বে না।’
‌নিহা‌দের দা‌দি হে‌সে কথার মাথায় হাত বুলা‌লো। নয়ন শিকদার কথার মাথায় হাত বু‌লি‌য়ে বলল,
‘এই দুষ্টু মে‌য়েটা‌কে না দেখ‌লে আমা‌দের কারোরই ভা‌লো লা‌গে না।’
কথা বলল,
‘সে কার‌ণেই দেড় মাস দূ‌রে ছি‌লেন বু‌ঝি।’
‘এখন ক‌য়েকমা‌সে আর কোথাও যাব না।’
‘এই তো ভা‌লো বাবা আমার। এখন চ‌লেন গোসল সে‌রে খা‌বেন। দা‌দি তু‌মি আমার সা‌থে চ‌লো। তোমাকে ফ্রেশ ক‌রে দি।’

কথা, নিহা‌দের দা‌দি‌কে রু‌মে নি‌য়ে গি‌য়ে তা‌কে গোসল ক‌রতে সাহায্য করল। তার কাপড় ধুঁ‌য়ে দি‌লো। তারপর তা‌কে কাপড় পর‌তেও সহায়তা করল। তা‌কে সুন্দর ক‌রে তৈ‌রি ক‌রে নামা‌জের পা‌টি বি‌ছি‌য়ে দি‌য়ে বলল,
‘দা‌দি নামাজ পড়ো। আমি তোমার নামাজ শে‌ষে অাস‌ছি।’
‌নিহা‌দের দা‌দি, ফা‌তিমা বেগ‌মের ‌চোখ ভি‌জে আসল। ম‌নে ম‌নে বল‌লেন,
‘‌নিহাদ খুব কপাল ক‌রে এমন একটা মে‌য়ে‌কে জীবন সঙ্গীনী পে‌য়ে‌ছে। আল্লাহ ওদের সম্পর্ক খুব বরকতময় করুন।’
নামাজের শে‌ষে মোনাজা‌তেও তি‌নি খুব দোয়া কর‌লেন কথার জন্য।

সবাই একসা‌থে ব‌সেই খে‌তে বসল। নিহাদ আর মো‌মেনা সবসময় কথা‌কে তা‌দের খাবার থে‌কে প্রথম লোকমা খাই‌য়ে দেয়। কথার তখন নি‌জে‌কে পৃ‌থিবীর সব‌চে‌য়ে সুখী ম‌নে হয়। মো‌মেনাই, নিহাদ‌কে বি‌য়ের দিনই ব‌লে‌ছিল,
‘‌নি‌জে‌দের মা‌ঝে যত মান অভিমা‌নের পালা চলুক না কেন, খাবার টে‌বি‌লে তুই সবসময় খাবা‌রের প্রথম লোকমাটা নিজ হাতে কথা‌কে খাওয়া‌বি। ঘ‌রের বউরা হ‌লো আল্লাহর আ‌রেকটা রহমত। সবসময় তা‌দের আগ‌লে রাখ‌তে হয়। তা‌দের খুব য‌ত্নে রাখ‌তে হয়। নি‌জের মে‌য়ে‌কে যেমন যত্নে রাখ‌তে হয় তেমন ঘ‌রের বউ‌কেও।’ মো‌মেনার কো‌নো মে‌য়ে নেই। মে‌য়ের অভাবটা কথা সুন্দর ক‌রে পূরন ক‌রে দি‌য়ে‌ছে। মো‌মেনাও কথা‌কে নি‌জের মে‌য়ের চো‌খেই দে‌খেন। এত সুন্দর প‌রিবার সবসময় সুন্দর থাক‌বে তো? হয়তো ঝড় আস‌তে চলে‌ছে।

খাওয়ার টে‌বি‌লেই নিহাদ বলল,
‘মা, কথার শরীরটা‌ ইদা‌নিং ভা‌লো যা‌চ্ছে না।’
‘‌কেন রে কী হ‌য়ে‌ছে?’
‘ম‌াথা ব্যথাটা বে‌ড়ে‌ছে খুব।’
‘তাহ‌লে ডাক্তার কা‌ছে যাস‌নে কেন?’
‘আজ সন্ধ্যায় যে‌তে চে‌য়ে‌ছিলাম।’
‘হ্যাঁ, তো যা।’
‘আচ্ছা।’
ফা‌তিমা বেগম বল‌লেন,
‘কথা, বইন খাবার শে‌ষে আমার রু‌মে আসিস তো। একটু কথা আছে।’
‘আচ্ছা দা‌দি।’

খাবার শে‌ষে, কথা সব‌কিছু গোছা‌তে নি‌লে নিহাদ আর মো‌মেনাও ওকে হা‌তে হা‌তে সাহায্য করে। দ্রুতই সব গোছা‌নো হ‌য়ে যায়। নিহাদ রু‌মে গি‌য়ে শু‌য়ে কথা‌কে বলল,
‘কা‌ছে আসো তো।’
‘‌জি ন‌া। দা‌দির কা‌ছে যাব।’
‘‌ঠিক আছে, যেও ত‌বে পাঁচ‌মি‌নিট শোও আমার পা‌শে। আমা‌রও তো কো‌চিং আছে।’
‘ও ভা‌লো কথা ম‌নে কর‌ছো। গতকাল নতুন যে অধ্যায়টা বু‌ঝি‌য়ে‌ছি‌লে সেটা আমি বুঝ‌তে পা‌রি‌নি। রা‌তে বু‌ঝি‌য়ে দি‌বে।’
‘সবাই তো বু‌ঝে‌ছি‌ল, তু‌মি কেন বো‌ঝো‌নি? পিছ‌নে ব‌সে নি‌শ্চিত তূবার সা‌থে গল্প কর‌ছি‌লে।’
‘‌হি হি।’
‘যখন পিছ‌নে ব‌সে‌ছি‌লে তখনই বু‌ঝে‌ছি আজ দুজন কিছু খেয়াল কর‌বে না।’
কথা, নিহা‌দের কা‌ছে এসে ওর বু‌কের উপর অন্তরঙ্গ ভ‌ঙ্গি‌তে শু‌য়ে ওর কা‌নের কা‌ছে ঠোঁট নি‌য়ে ফি‌সফিস ক‌রে বলল,
‘‌নি‌জের বর যখন স্যার, তখন একটু আধটু সু‌বিধা তো নি‌তেই পা‌রি। যেমনটা তু‌মি ক‌রো।’
‌নিহা‌দ হে‌সে বলল,
‘তা অবশ্য মন্দ ব‌লোনি। আচ্ছা এখন রোমান্স করার সময় নেই। কো‌চিং-এর সময় হ‌য়ে‌ছে।’
কথা মুখ বাঁ‌কি‌য়ে বলল,
‘‌সেল‌ফিস লোক নি‌জেরটা ঠিক বু‌ঝে নি‌য়ে‌ছে।’
‌নিহাদ হে‌সে কথার কপা‌লে চুমু এঁকে বলল,
‘তু‌মি ঠিক পাঁচটা বা‌জে তৈ‌রি থাক‌বে। এসে ডাক্তা‌রের কা‌ছে নি‌য়ে যাব।’
‘আচ্ছা।’

কথা, ফা‌তিমার রু‌মে এসে দেখল তি‌নি বিছ‌ানায় ব‌সে তজবিহ পড়‌ছি‌লেন। কথা বলল,
‘দা‌দি, ঘুমাও‌নি?’
‘না‌রে ভাই ক‌তদিন যাবত দুপু‌রে ঘুম আসে না।’
‘আচ্ছা, কী যেন বল‌বেন ব‌লে‌ছি‌লে তখন?’
‘কা‌ছে আয়, বস, তারপর বল‌ছি।’
কথা তার কা‌ছে গি‌য়ে বসার পর তি‌নি দোয়া প‌ড়ে কথার মাথায় ফুঁ দি‌য়ে বল‌লেন,
‘আল্লাহ সকল বালামু‌সিবত থে‌কে তো‌কে দূ‌রে রাখুক।’
ফা‌তিমা কিছুক্ষণ চুপ থে‌কে বললেন,
‘‌বইন তোর মা‌সিক শেষ ক‌বে হ‌য়ে‌ছে?’
‘এই‌তো সপ্তাহ খা‌নিক হ‌লো।’
ফা‌তিমা হতাশ ভঙ্গি‌তে বল‌লেন,
‘ওহ, আর আমি কত কী ভাবলাম।’
কথা হে‌সে বলল,
‘দা‌দিজান, টেনশন ক‌রো না। জল‌দি তোমা‌দের ম‌নের ইচ্ছা পূরণ করব। আমি তো আরও আগে থে‌কে চাই কিন্তু তোমার বদ না‌তিটা রা‌জি হয়‌নি। শুধু ব‌লে গ্রাজু‌য়েশন শেষ হোক।’
ফা‌তিমা স‌ন্দেহ দৃ‌ষ্টি‌তে তা‌কি‌য়ে বলল,
‘‌কেন‌রে বলদাটার কো‌নো সমস্যা আছে না‌কি?’
কথা শব্দ ক‌রে হে‌সে বলল,
‘আ‌রে না না দা‌দি। সব একদম ঠিক আছে। তার শুধু একটু সময় চাই।’
‘সময় সময় ক‌রে তো চার বছর হ‌তে চলল।’
‘দা‌দি, আমি একটা প্ল্যান কর‌ছি এবার ওকে জানাবই না। রেজাল্ট প‌জে‌টিভ আসার পর জানাব। তখন জি‌জ্ঞেস কর‌লে বলব, ভু‌লে হ‌য়ে গে‌ছে।’
ফা‌তিমা হে‌সে বল‌লেন,
‘বু‌দ্ধি খারাপ না। ত‌বে ও যতই না করুক তুই বাচ্চা কাচ্চা নি‌য়ে ফেল। ব্যাটা মানু‌ষের মন বদলা‌তে সময় লা‌গে না। বাচ্চার টা‌নে হ‌লেও থাক‌বে।’
কথা একটা দীর্ঘশ্বাস ছে‌ড়ে বলল,
‘দা‌দি, যে আমার টা‌নে থাক‌বে না সে বাচ্চার টা‌নেও থাক‌বে না। দে‌খো না কত মানুষ দুই তিনটা বাচ্চা ফে‌লে আবার বি‌য়ে করে। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক জি‌নিসটা বিশ্বাস, ভরসা, ভা‌লোবাসা, যত্ন, সম্মান সব‌কিছু মিলি‌য়ে হয়। আর আমা‌দের সম্প‌র্কে সব আছে। নিহাদ কখনও আমার বিশ্বাস ভাঙ‌বে না। আমি ওকে সব‌চে‌য়ে বেশি বিশ্বাস ক‌রি।’
‘‌দোয়া ক‌রি তেমনই থাক।’

কথা আর দা‌দির কথাগু‌লো নিহাদ দরজায় দা‌ঁড়ি‌য়ে শুনছি‌ল। বাইকের চা‌বি নি‌তে এসে কথা আর দা‌দির কথা চু‌পিচু‌পি শুন‌ছিল নিহাদ। প্রথম‌দি‌কে মজা পে‌লেও কথার শেষ কথাগু‌লো শু‌নে নিহাদের হা‌সিমু‌খে মুহূ‌র্তেই মে‌ঘের ঘনঘটা ছেঁ‌য়ে গেল। ম‌নে ম‌নে বলল,
‘স‌রি কথা। অা‌মি তোমার বিশ্বাস আগ‌লে রাখ‌তে পা‌রি‌নি। তোমার বিশ্বাস ভে‌ঙে‌ছি।’

চল‌বে…

#অর‌ণ্যে_রোদন
‌লেখা: শার‌মিন আক্তার সাথী
পর্ব: ০৮

১১!!
তূবা ঘ‌রে ব‌সে পড়‌ছে। তখন ওর বাবা তা‌রেক সা‌হেব রু‌মে আস‌লেন। তা‌কে দে‌খে তূবা‌ বলল,
‘আব্বা, কিছু বল‌বেন?’
‌তি‌নি কিছুক্ষণ তূবার মুখের দি‌কে তা‌কি‌য়ে রই‌লেন। ম‌নে ম‌নে বলল,
‘‌মে‌য়েটা এত সুন্দর যে, মা‌ঝে মাঝে ম‌নে হয় ফোলা ফোলা গা‌ল, আর গভীর কা‌লো চো‌খ, আর গোলা‌পি ব‌র্ণের গা‌য়ের র‌ঙে প্রি‌ন্সেস ডায়না‌কে অনায়াসে টক্কর দি‌তে পার‌বে। আমার এত সুন্দর মে‌য়েটার কপা‌লটা সৃ‌ষ্টিকর্তা কত বা‌জেভা‌বে লি‌খেছেন। মে‌য়েটার এতগুণ, এ আগুন রূপ শুধু একটা ত্রু‌টির কা‌ছে হার মে‌নে যা‌চ্ছে?’
তূবা আবার জি‌জ্ঞেস করল,
‘আব্বা, কিছু বল‌বেন?’
তা‌রেক সা‌হেব গলা খাক‌রি দি‌য়ে বলল,
‘পড়া-‌লেখা কেমন চল‌ছে?’
‘ভা‌লো।’
‘পরীক্ষা ক‌বে?’
‘‌মাস দুই পর।’
‘ওহ আচ্ছা।’

তারেক সা‌হেব দাঁ‌ড়ি‌য়ে রই‌লেন। তি‌নি আস‌লে যে কথ‌া বল‌তে এসে‌ছেন তা বল‌তে পার‌ছেন না। তি‌নি এসে‌ছেন তূবার একটা বি‌য়ের কথা বল‌তে। কিন্তু তূবার সা‌থে তার সম্পর্ক এতটা সহজ না যে, বি‌য়ের কথা যখন তখন সহজভা‌বে ব‌লে ফেল‌বেন। তূবার মা‌য়ের মৃত্যুর পর তি‌নি ওর কথা ভে‌বেই দ্বিতীয় বি‌য়ে ক‌রেন‌নি। কিন্তু চে‌য়েও তূবার সা‌থে সহজ সম্পর্ক তৈরি কর‌তে পা‌রে‌ননি এত বছরও। তার গম্ভীর আর রাগি স্বভা‌বের কার‌ণে তা‌কে সবাই ভয় পায়। তূবা তো একটু বে‌শিই ভয় পায়।
তূবা যখন দশ বছ‌রের, তখন ওর মা ওর ভাই‌কে জন্ম দি‌তে মারা যান। তূবার সে ভাই‌টিও ওর মা‌য়ের মৃত্যুর তিন‌দিন পর মারা যায়। পর পর স্ত্রী এবং ছে‌লের মৃত্যু‌তে তা‌রেক সা‌হেব যেন আরও রাগী এবং গম্ভীর স্বভা‌বের হ‌য়ে যান। তূবাকে যা‌তে সৎ মা কষ্ট দি‌তে না পা‌রে, সে কার‌ণে তি‌নি বি‌য়ে পর্যন্ত ক‌রেন‌নি।
মা‌য়ের মৃত্যুর সময় তূবা দশ বছ‌রের ছো‌টো বাচ্চা হ‌লেও অতটা ছো‌টো ছিল না যে বুঝ‌বে না। তখন থে‌কে ও নি‌জে‌কে সামলাতে শিখে গে‌ছে। য‌দিও ওর ছোটো চাচা-চা‌চি ওকে খুব ভা‌লোবা‌সে, তবুও ও ছোটো থে‌কেই নি‌জে‌কে সামলে রাখ‌তে জা‌নে। বয়স অপেক্ষা খুব দ্রুত বুঝদার হ‌য়ে গে‌ছিল ও। আর ছো‌টো থে‌কেই তূবার সব‌চে‌য়ে কা‌ছের মানুষ বল‌তে কথা। তা‌রেক সা‌হেব‌কে ওমন দাঁ‌ড়ি‌য়ে থাক‌তে দে‌খে তূবা আবারও জি‌জ্ঞেস করল,
‘‌কিছু বল‌বেন, আব্বা?’
‘‌তোমার ছোটো ফুপু এসেছি‌লেন আজ?’
‘‌জি।’
‘‌তোমা‌কে কিছু ব‌লে‌ছেন?’
‘‌জি। একটা ছে‌লের বিষ‌য়ে?’
‘তো কী সিদ্ধান্ত নি‌লে?’

তূবা খা‌নিক সময় বাকরুদ্ধ হ‌য়ে ওর বাবার দি‌কে তা‌কি‌য়ে রইল। তূবার ছো‌টো ফুপু আজ ওর জন্য একটা বি‌য়ের প্রস্তাব এনে‌ছি‌লেন। ছে‌লেরা খুব বিত্তবান কিন্তু ছে‌লে পূর্ব বিবা‌হিত। ছে‌লের দু‌টো বাচ্চা আছে। বউ এর সা‌থে বি‌চ্ছেদ হ‌য়ে‌ছে। তূবা ওর ছো‌টো ফু‌পি‌কে ব‌লে‌ছি‌ল,
‘ফু‌পি, আমি কী এতটাই প‌চে গে‌ছি যে, আমা‌কে বিবা‌হিত, দুই বাচ্চার বাপ ওয়ালা ছে‌লের কা‌ছে বি‌য়ে দি‌তে হ‌বে?’
ওর ছো‌টো ফুপু র‌হিমা বেশ ঝাঁজালো ক‌ণ্ঠে ব‌লে‌ছি‌লেন,
‘প‌চে যাসনি তো কী? যে মে‌য়ে জীব‌নে মা হ‌তে পার‌বে না, তাকে তো পচা মাছই ব‌লে। মা‌ছের পেট প‌চে গে‌লে যেমন তা খাওয়া যায় না তেম‌নি তোরও পেটপচা। তো‌কে কে নি‌বে?’
তূবা অশ্রু‌সিক্ত ক‌ণ্ঠে বলল,
‘ডাক্তার কিন্তু ব‌লে‌নি আমি মা হ‌তে পারব না। ৫% চান্স আছে।’
‘ওটা‌কে চান্স ব‌লে না। আমার তো ম‌নে হয় ওটা ডাক্তার তো‌কে শান্তনা দেওয়ার জন্য বলে‌ছিল। একটা মা‌ছের সব পচা কিন্তু ৫% ভালো, সে মাছটা কেউ কিন‌বে? খা‌বে? ঐ ৫% গোনায় ধরা হয় না।’
তূবা অশ্রু মুছে ব‌লে‌ছিল,
‘আমার মতো পেটপচা মে‌য়ের বি‌য়ের চিন্তা তোমা‌দের না কর‌লেও হ‌বে। আমি নি‌জের ব্যবস্থা নি‌জে ক‌রে নিব।’
তারেক সা‌হেব আবার বল‌লেন,
‘কী হলো বল?’
তূবার খুব রাগ হ‌লে‌া। তবুও নি‌জে‌কে নিয়ন্ত্রণ ক‌রে বলল,
‘আব্বা, আমি জা‌নি আমার বড় ধর‌ণের একটা সমস্যা আছে। কিন্তু আব্বা সে সমস্যাটা কি এতটাই বিকট যে আমা‌কে দ‌ুই বাচ্চার বাবার সা‌থে বি‌য়ে দি‌তে হ‌বে? আমি আপনার কা‌ছে এতটাই বোঝা হ‌য়ে গেলাম?’
‌মে‌য়ের কথা শু‌নে তা‌রেক সা‌হেব আর দাঁড়া‌লেন না। ঠিক-ই তো ব‌লে‌ছে তূবা! তি‌ন তূবার রুম থে‌কে প্রস্থান কর‌লেন। তূবা টে‌বি‌লে পড়‌তে বসল কিন্তু বারবার ওর চোখদু‌টো ঝাপসা হ‌য়ে যাচ্ছিল। বই‌য়ের উপর টপটপ ক‌রে পড়‌তে লাগল নোনা নদীর ধারা।

‌কিছুক্ষণ পর শ্রাব‌ণের মেসেজ আসল।

“আমি যাব সাই‌কে‌লে
তুমি যা‌বে হে‌ঁটে,
তে‌ামার স‌ঙ্গে দেখা হ‌বে ভা‌র্সি‌টির গে‌টে।”

শ্রাব‌ণের মে‌সেজ দে‌খে তূবার মু‌খে হা‌সি ফুটল। অশ্রু মু‌ছে মে‌সেজ করল,
“কার ছন্দ চু‌রি কর‌ছিস?”

শ্রাবণ উত্তর দি‌লো,
“আম মি‌ষ্টি, জাম মি‌ষ্টি
‌তেতুল বড় টক
‌তোমার সা‌থে প্রেম করার আমার ভা‌রী শখ।”

তূবা বেশ শব্দ ক‌রে হাস‌তে চে‌য়েও হাত দি‌য়ে মুখ চে‌পে ধরল। আবার শ্রাব‌ণের মে‌সেজ আসল,

“এক‌টি গা‌ছে দু‌টে পা‌খি
ক‌রে টিউ টিউ
‌তোমায় আমি ভা‌লোবা‌সি
আই লাভ ইউ।”

‌ফোন নি‌য়ে তূবা বিছানায় শু‌য়ে পড়ল। মেসেজ ‌দেখে বা‌লি‌শে মুখ চে‌পে হে‌সে উত্তর দি‌লো,
“গুগল থে‌কে চু‌রি ক‌রছিস এসব ছন্দ না‌রে?”

শ্রাবণ মে‌সেজ করল,
“আ‌মি হলাম সাগর
তু‌মি হ‌লে ঢেউ
চুপি চু‌পি করব প্রেম
জান‌বে না তো কেউ।”

তূবা এবারও বা‌লি‌শে মুখ চে‌পে হাসল। আবার মে‌সেজ আসল,

“রা‌তের আকা‌শে অনেক তার‌া
একলা লা‌গে তোমায় ছাড়া
শুধু ভা‌বি তোমার কথা
‌কেমন আছো আমায় ছাড়া?”

কথা উত্তর দি‌লে‌া,
“এবার কিন্তু মাইর দিব।”

শ্রাব‌ণে‌র মেসেজ
“শুধু তু‌মি আছো তাই
আমি কথা খুঁ‌জে পাই
দূর হ‌তে আমি তাই
‌তোমায় দে‌খে যাই”

তূবা রে‌গে উত্তর দি‌লো,
“বাড়াবা‌ড়ি হ‌চ্ছে শ্রাবণ।”

শ্রাব‌ণের মে‌সেজ

“ইস ইস ইস
খা‌বো মাছের পিস
সব‌থে‌কে ভা‌লো লা‌গে
তোমার…”

এ মেসেজটা প‌ড়ে তূবা উত্তর দিলো,
“হারা‌মি এটার শেষ লাইন আমি জানি। তো‌রে কা‌ছে পে‌লে থাপ‌ড়ে দাঁত সব কয়টা ফে‌লে দিতাম। বজ্জাত ছে‌লে। তূবা নি‌জে নি‌জে বলল,
‘কত বড় বজ্জাত! ও কী ভাব‌ছে ছন্দ একা ও-ই জা‌নে? এই ছ‌ন্দের শেষ লাইনটা, “তোমার ঠোঁ‌টের কিস”। ওরে আমি কিস করব? বজ্জাত ওরে পে‌লে আমি গু‌লি করব।’

শ্রাব‌ণের মে‌সেজ,
“‌শেষ লাইনটা ব‌লো?’
“তোর মাথা, গাধা।”
“না, অন্য কিছু।”
“শ্রাবণ বাড়াবা‌ড়ি হ‌য়ে যা‌চ্ছে।”
“হ‌লে হোক। ক্ষ‌তি কি তা‌তে?”
“‌তোর লজ্জা নেই?”
“‌তোমা‌কে ভা‌লোবাসার পর সব লজ্জা বিসর্জন দি‌য়ে‌ছি।”
“‌কেন? তোর কি আমা‌কে এ দে‌শের নেতা‌দের ম‌তো ম‌নে হয়? যে র্নিলজ্জ, তা‌দের সা‌থে যারা থা‌কে তারাও র্নিলজ্জ।”
“‌ছি! ছি! তু‌মি নেতা হব কেন? তু‌মি হ‌বে রাণী। আমার হৃদয় রা‌জ্যের রাণী। আমার হৃদয়ে পরম দাপ‌টে স্ব‌গৌর‌বে রাজত্ব কর‌বে। আমি তোমা‌কে সবসময় কু‌র্ণিশ ক‌রে চলব। জা‌নো তো রা‌জ্যের রাজাও তার র‌াণী‌কে ক‌ুর্ণিশ ক‌রে চ‌লে।”

তূবা, শ্রাব‌ণের পাঠানো মে‌সেজটার দি‌কে একধ্যা‌নে তা‌কি‌য়ে রইল। মে‌য়েরা মু‌খে যতই ভান ক‌রুক এ ধর‌ণের কথাতে তা প‌টে না। আদ‌তে মে‌য়েরা এ ধর‌ণে‌র কথায়-ই বে‌শি মুগ্ধ হয়। সাম‌নের মানুষটার প্র‌তি ঝোক বা‌ড়ে। সব মে‌য়েই চায়, তার প্রিয় মানুষটা তা‌কে রাণীর ম‌তো ভাবুক। রাণীর ম‌তো পু‌রো রাজ্যের প্রাচুর্য দি‌তে না পারুক, অন্তত তা‌কে হৃদয় রা‌জ্যের রাণী করে রাখুক। তূবা ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফে‌লে নিজে‌ নি‌জে বলল,
‘‌তোর এত ভা‌লোবাসা দু পা‌য়ে ঠেলার ম‌তো মে‌য়ে খুব কম আছে। কিন্তু আমা‌কে ঠেল‌তে হ‌বে। তোর রা‌জ্যের রাণী হওয়ার কো‌নো যোগ্যতা নেই আমার। তুই তোর রা‌জ্যের জন্য নতুন ক‌রে রাণী খুঁ‌জে নে। যে তোর যোগ্য।’
কিন্তু মে‌সে‌জে লিখল,
“তোর ম‌তো পুচ‌কে রাজার, রাণী হ‌তে আমার ব‌য়েই গে‌ছে। আস‌ছে আমার নবাব সা‌হেব! নি‌জের লেভে‌লের রাণী খুঁ‌জে নে। তোর ম‌তো গাধা রাজা দি‌য়ে আমার পোষা‌বে না। আমার যে রাজা হ‌বে সে সব দিক দি‌য়ে রাজা হ‌বে। সে আমা‌কে কু‌র্ণিশ করুক না করুক, তা‌কে দেখ‌লে যেন আমারই তা‌কে কু‌র্ণিশ কর‌তে ইচ্ছা হয়। ‌তো‌কে দেখ‌লে আমার হাত চুলকায়, থাপড়া‌তে ইচ্ছা হয়। এখন বল কর‌বি আমায় রাণী?’

তূবার মেসেজটা দে‌খে শ্রাব‌ণের মনটা খারাপ হ‌য়ে গেল। নি‌জে নি‌জে বলল,
‘তু‌মি, সবসময় আমা‌কে এত ছো‌টো ক‌রো? আমি কী এতটাই তুচ্ছ?’
‌কিন্তু মে‌সেজ করল,
“আ‌মি হলাম সেই বেহায়া রাজা, যে অচিনপু‌রের সেই রাজকণ্যাকে নি‌জের রাণী না করা পর্যন্ত চেষ্টা করে যায়। আমা‌দের এ গ‌ল্পে কো‌নো মীর জাফর থাক‌বে না। কারণ এ গ‌ল্পে মীর জাফ‌রের ভূ‌মিকাও আমি পালন করব, নবা‌বের ভূ‌মিকাও। তোমা‌কে জিত‌তে রাজনী‌তি, কুটনী‌তি, দুর্নীতি, ভা‌লোনী‌তি, খারাপনী‌তি সব পথ অবলম্বন করব, দরকার হ‌লে দন্ডও ভোগ করব। তবুও শেষ পর্যন্ত তোমা‌কে চাই-ই চাই।”

শ্রাব‌ণের মেসেজ দে‌খে তূবা চূড়ান্ত অবাক হ‌য়ে বিড়‌বিড় ক‌রে বলল,
‘এ ছে‌লেকে ইদা‌নিং আমার ভয় কর‌ছে। ভীষণ ভয় কর‌ছে। আমা‌কে পাবার জন্য না জা‌নি কোন পথ অবলম্বন ক‌রে! হে দয়াময়, এই ছাগলটা‌কে সুবু‌দ্ধি দাও।’
তূবা আর কো‌নো রিপলাই করল না। শ্রাবণ মে‌সেজ করল,
“‌কী হ‌লো কিছু উত্তর দি‌লে না?’
তূবা ফোনটা বন্ধ ক‌রে চোখ বন্ধ ক‌রে শু‌য়ে পড়ল। ম‌নে ম‌নে বলল,
‘শ্রাবণ, আজ যতটা আবে‌গে ভে‌সে আমা‌কে পে‌তে চাই‌ছিস, যখন জান‌বি আমা‌কে পাবার পর জীব‌নে বাপ হ‌তে পার‌বি না তখন তোর আবেগ আমা‌দের এলাকার বড় ড্রে‌নে যা‌বে। আমা‌কে ছু‌ড়ে ফেল‌তে তোর দুই সে‌কেন্ড সময় লাগ‌বে না। তো‌কে পে‌য়ে হারা‌নোর চে‌য়ে, না পাই তা‌তে কষ্ট কম হ‌বে।জা‌নিস শ্রাবণ, তোর পাগলা‌মি ভা‌লোবাসা দে‌খে, আমার ম‌নে কোথাও না কোথাও তোর জন্যও ক্ষুদ্র কিছু অনুভূতি তৈরি হ‌চ্ছে। কিন্তু আমি সে অনুভূতি‌কে গ*লা টি‌*পে মে‌*রে ফেলে‌ছি। তা‌কে আমি একটুও বাঁচ‌তে দিব না। আমার ম‌নে কারও জন্য অনুভূ‌তি তৈরি হওয়া মহাঅন্যায়।’

তূবা ভাব‌ছে হয়‌তো নি‌জে‌কে নিজে বল‌লেই ম‌নে তৈরি হওয়া অনু্ভূ‌তি‌দের মে‌রে ফেলা যায়। কিন্তু তূবা ভু‌লে যাচ্ছে, অনুভূ‌তি সে তো অনুভূ‌তি-ই। তা‌কে চাই‌লেই মে‌রে ফেলা যায় না, নিঃ‌শেষ ক‌রে দেওয়া যায় না। সে চ‌লে নি‌জের ম‌র্জি‌তে পরম দাপ‌টে। আমা‌দের জীব‌নে আসল রাজা কিংবা রাণী তো হ‌চ্ছে আমা‌দের অনুভূ‌তি। সে-ই আমা‌দের মন‌কে পরিচালনা ক‌রে। সে-ই ভা‌লোবাসা নিয়ন্ত্রণ ক‌রে।

চল‌বে…