অ্যাডিক্টেড টু ইউ পর্ব-০২

0
498

#অ্যাডিক্টেড_টু_ইউ
#অরনিশা_সাথী
#পর্ব_০২

আদ্র উঠে এসে আমার পাশ ঘেঁষে বসলো। এ মূহুর্তে আমার প্রচন্ড আন-ইজি ফিল হচ্ছে। আলতো করে আমার হাত ধরতেই আমি চমকে উনার দিকে তাকালাম। এই প্রথম উনাকে দেখলাম আমি। এক সমুদ্র সমান মায়া নিয়ে আমাকে দেখছেন উনি। ফর্সা গায়ের অধিকারী ছেলেটা ছয় ফুট বা তার কাছাকাছি হাইট হবে। সিল্কি চুলের কয়েকটা অংশ কপালে উপচে পড়েছে। সাদা শার্ট এবং নীল ব্লেজার নীল পেন্টে অমায়িক লাগছে। শার্টের কর্লারে সানগ্লাস ঝুলানো। আর হাতে ব্র‍্যান্ডেড ওয়াচ। দ্রুত চোখ সরিয়ে নিলাম আমি। উনি তখনো আমাকেই দেখছে। একপর্যায়ে উনি বললেন,
–“রুহি? ভয় পাচ্ছো আমাকে? এভাবে ঘামছো কেন?”

আমার কোনো উত্তর না পেয়ে উনি আবারো আমার নাম ধরে ডেকে উঠলেন। চমকে গিয়ে আমতা আমতা করে বললাম,
–“স্ সরে বসুন। অ্ অস্বস্তি হচ্ছে।”

আদ্র সরে বসার বদলে আরো লেগে বসলেন আমার সাথে। তারপর বললেন,
–“তিনটে বছর তো দূরেই ছিলাম। আর কত থাকবো বলো? আংকেলকে রাজী করাতে প্রচুর কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে আমায়। শেষে রাজি তো হলেনই কিন্তু তবুও তোমাকে পুরোপুরি আমার করে দিলো না। শুধু কাগজে কলমেই তোমাকে আমার নামে করে দিলেন। এই সাথেই বিয়েটা দিয়ে দিলে কি এমন হতো বলো তো?”

আমি কিছু না বলে চুপচাপ উনার কথা শুনছি৷ উনি কিছুটা থেমে আমার হাত নেড়েচেড়ে দেখতে লাগলো। তারপর আবারো বললো,
–“আমার অবস্থাটা এখন কেমন হয়েছে জানো?”

আমি মাথা নাড়ালাম। অর্থাৎ আমি জানি না। উনি করুন স্বরে বললেন,
–“মানে আমার সামনে বিরিয়ানির প্লেট রেখেছেন ঠিকই কিন্তু সেটা এখন খাওয়া যাবে না। জাস্ট আমার সামনে দিয়ে রেখেছেন যে এটা আমার। কিন্তু এটা খেতে হলে আমায় আরো অনেকটা সময় ওয়েট করতে হবে।”

উনার কথার আগামাথা কিছুই বুঝলাম না আমি। তাই অবাক চোখে উনার দিকে তাকিয়ে আছি। উনি মৃদু হেসে বললেন,
–“বুঝলে না তাই তো?”

আমি আগের ন্যায় এবারেও মাথা ঝাকালাম। উনি এবারে গোমড়া মুখ করে বললেন,
–“মানে শশুড় মশাই তোমাকে কাগজে কলমে আমার নামে করে দিয়ে আমাকে নিশ্চিন্ত করেছেন যে তুমি আমারই। কিন্তু তোমাকে সম্পূর্ণ ভাবে নিজের করে পেতে হলে আমাকে আরো অনেকটা সময় অপেক্ষা করতে হবে। অন্তত তোমার স্টাডি শেষ না হওয়া অব্দি তো হবেই।”

ভ্রু কুঁচকে তাকালাম উনার দিকে। উনি বিড়বিড় করে বললেন,
–“শুধু অপেক্ষা আর অপেক্ষা। আমার বুঝি অপেক্ষা করেই জীবন কাটবে। এই জনমে মনে হয় বউকে আর ঘরে তুলতে পারবো না।”

উনার মুখে বউ শব্দটা শুনে আমার বুক ধুকপুকানি বেড়ে গেলো৷ নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম,
–“কিছু বললেন?”

–“যাক অবশেষে কথা বললে তাহলে? তুমি কি সবসময়ই চুপচাপ? নাকি শুধু আমার সামনেই?”

–“আমি একবার কথা বলা শুরু করলে আপনি পাগল হয়ে যাবেন। তার থেকে চুপচাপ থাকাই ভালো।”

–“পাগল তো সেই কবেই হয়েছি। তোমাকে দেখার পর আর ভালো ছিলাম কই?”

–“কিহ?”

–“কিছু না। আচ্ছা তোমার ফোনটা দিবে?”

আমি চোখ তুলে তাকালাম তার দিকে। আমার ফোন চাইছে? কি করবে আমার ফোন দিয়ে? আমি এদিক ওদিক খুঁজে বেড সাইড টেবিলের উপর থেকে ফোনটা নিয়ে উনার হাতে দিলাম। উনি ফোন হাতে নিয়ে বললেন,
–“লক নেই যে? পারসোনাল কিছু নেই ফোনে?”

আমি নিচু কন্ঠে জবাব দিলাম,
–“নাহ।”

আদ্র মৃদু হেসে আমার ফোনে কি যেন করতে লাগলেন। সাথে মাঝে মাঝে উনার ফোনও দেখছেন। প্রায় সাত/আট মিনিট পর ফোনটা আমার দিকে এগিয়ে দিলো। আমি ফোনটা নিয়ে আবারো আগের জায়গায় রেখে দিলাম। উনি আবারো আমার হাতদুটো ধরে বললেন,
–“রুহি?”

–“ব্ বলুন।”

–“জানো আমার না এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না যে তুমি সত্যি সত্যিই আমার।”

কথাটা শুনে কেমন যেন একটা অদ্ভুত অনুভূতি হলো আমার। আমি উনার? ভাবতেই কেমন একটা লাগছে। উনি আরো কিছু বলতে চাইছিলেন কিন্তু তার আগেই ডাইনিং থেকে ডিনার করার জন্য ডাক পড়লো৷ আমি উনার থেকে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললাম,
–“খেতে ডাকছে চলুন।”

কথাটা বলে দ্রুত রুম থেকে বেরিয়ে গেলাম। আমার পিছন পিছন আদ্রও বেরিয়ে আসলো। সকলে মিলে একসাথে ডিনার সেরে সোফায় বসলাম। মাইশা রাজ্যের গল্প জুড়ে দিয়েছে আমার সাথে৷ সামনেই সিঙ্গেল সোফায় বসে আদ্র ফোন ঘাটছেন। মাঝে মাঝে আড়চোখে আবার আমার দিকে তাকাচ্ছেন৷ আমি মাইশাকে হিমাদ্রি ওদের সাথে গল্প করতে বলে রুমে চলে এলাম। বড্ড ক্লান্ত লাগছে। বিকেলে শাড়ি পড়েছি এখন রাত সাড়ে দশটা নাগাদ বাজে। এর আগে কখনো এতটা সময় আমি শাড়ি পরে থাকিনি। এই ভাড়ী শাড়ি পরে থাকার ফলে এখন বড্ড ক্লান্ত লাগছে। বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম আমি। চোখ বন্ধ করে মুখের হাত দিয়ে শুয়ে আছি৷ রুমে কেউ আসাতে ধরফরিয়ে উঠে বসলাম আমি। আদ্রকে দেখে দ্রুত দাঁড়িয়ে শাড়ি ঠিক করে নিয়ে আচল টেনে ঘোমটা দিলাম। আদ্র আমার কাছে এসে দুহাতে আমার গাল ধরে বললেন,
–“আসছি। সাবধানে থেকো। আর নিজের খেয়াল রেখো।”

কথাটা বলে উনি বেরিয়ে গেলেন। আম্মু ডাকছেন তাই আমিও বেরিয়ে এলাম রুম থেকে। আংকেল আন্টি মাইশা আদ্র সকলের থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলেন। আন্টি যাওয়ার আগে আমাকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু খেয়েছেন। আংকেল মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করেছেন। মাইশাও বেশ কিছুটা সময় জড়িয়ে ধরে রেখেছিলো আমাকে। সকলেই উনাদের এগিয়ে দিতে গাড়ি অব্দি গেলো। আমি রুমে গিয়ে জানলার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। এখান থেকে আদ্রকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে৷ গাড়ির ডোর খুলে ভিতরে গিয়ে বসে সিটবেল্ট লাগিয়ে নিলেন। হঠাৎ করেই আদ্রর চোখ পড়ে আমার দিকে। আমাকে দেখেই উনার ঠোঁটের কোনে মৃদু হাসির রেখা ফুঁটে উঠে। উনি আরো একবার ইশারায় বাই বলে বেরিয়ে গেলেন। যতটা সময় উনার গাড়ি দেখা যাচ্ছিলো ততটা সময় জানালার পাশ থেকে সরিনি। গাড়ি অদৃশ্য হতেই একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে সরে এলাম ওখান থেকে। জামা পালটে শুয়ে পড়লাম। শুতে শুতেই একরাশ ঘুম এসে চোখে ভীর করলো।

এক ঘুমেই রাত পার করে দিলাম। পরের দিন সকাল সাড়ে ছয়টা নাগাদ ঘুম ভেঙে যায় আমার। পাশে হিমাদ্রি আর ফাইজা নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছে। আমি আড়মোড়া ভেঙে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। রুম থেকে বেরিয়ে কাউকেই দেখতে পেলাম না৷ কাল সকলেই খুব ক্লান্ত ছিলো। তাই হয়তো এখনো কেউ উঠেনি। মেইন ডোর খোলা তার মানে আব্বু নামায পড়ে হাঁটতে বের হয়েছে। কিচেনে চলে গেলাম। হঠাৎ করেই আজ সবার জন্য নাস্তা বানাতে ইচ্ছে হলো। তাই দেরী না করে চট করেই নাস্তা বানানোর কাজে লেগে পড়লাম। ঘন্টা দেড়েক বাদে রুটি ভাজি অমলেট এবং চা বানিয়ে ফেললাম। কালকের বেশি হওয়া গরুর গোশত ফ্রিজে রাখা ছিলো সেটাও বের করে গরম করে নিলাম। সবকিছু ডাইনিংয়ে সাজানোর সময় আব্বু চলে এলো। আমাকে এসব করতে দেখে আমার কাছে এগিয়ে এসে বললো,
–“আজ এত তাড়াতাড়ি উঠেছো যে? শরীর ঠিক আছে?”

–“হ্যাঁ আব্বু। সব ঠিক আছে। তুমি যাও ফ্রেশ হয়ে টেবিলে এসো নাস্তা করবে।”

কথাটা বলে আমি একটা স্টিলের প্লেট আর চামোচ নিয়ে সব রুমের সামনে গিয়ে বারি দিয়ে সবাইকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তুললাম। আম্মু তো নাস্তার টেবিলে এত আয়োজন দেখে অবাক। চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
–“এসব তুমি বানিয়েছো?”

আমি মাথা নিচু করে ছোট্ট করে ‘হুম’ বললাম। ফারাবী ভাইয়া আমার মাথায় টোকা মেরে বললো,
–“বাহ! কাল রেজিস্ট্রি এর পর আজ তো দেখি বেশ উন্নতি হয়েছে তোর।”

ফারাবী ভাইয়ার দিকে রাগী চোখে তাকাতেই উনি মুচকি হেসে চেয়ার টেনে বসে পড়লো নাস্তা করার জন্য। সবাই মিলে একসাথেই নাস্তা শেষ করলাম। সবাই কম বেশি প্রশংসা করলো আমার রান্নার। নাস্তা শেষে যে যার কাজে চলে গেলো। এখন বাসায় শুধুমাত্র আমি আর আম্মু আছি। আপিটাও ভার্সিটি চলে গেছে। ফাইজা হিমাদ্রিকে এত করে বললাম থেকে যাওয়ার জন্য কিন্তু কিছুতেই থাকলো না। এখন নিজেকে বড্ড অসহায় অসহায় লাগছে। আম্মু কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে দুপুরের রান্নার আয়োজন করছে। আমি রুমে এসে বিছানায় আধশোয়া হয়ে ফোন হাতে নিলাম। এফবিতে ঢুকেই আমার চোখ ছানাবড়া। এত্ত এত্ত নোটিফিকেশন আর ম্যাসেজের ভীরে আমার ফোনটা যে অকাল মৃত্যু করেনি এটাই আশ্চর্যের ব্যাপার। ধৈর্য্য সহকারে সকল ম্যাসেজ আর নোটিফিকেশন চেক করার পর আমার চোখ কোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম। রিলেশনশিপে এনগেজড দেওয়া। নিশ্চয়ই আদ্রর কাজ এইটা৷ কাল কিছু সময়ের জন্য আমার ফোন নিয়ে কি যেন করছিলেন উনি। ম্যাসেজেও সবাই কংগ্রেস জানিয়েছে। কেউ কেউ তো অভিমানের বন্যা বানিয়ে ফেলছে আমার ইনবক্সে। আমি হাসবো না কাঁদবো বুঝতে পারছি না। ঘুম ঘুম পাচ্ছিলো খুব। এক্সাম শেষ বাসা থেকে বেরও হতে পারছি না। অবশ্য আব্বুকে বললে আব্বু বের হতে দিবে কিন্তু মুড নেই। তাই বাসায় সারাদিন ফোন ঘেটে বা ঘুমিয়ে সময় কাটাচ্ছি। আজকেও তার ব্যাতিক্রম হলো না। শুতে শুতেই ঘুমিয়ে পড়লাম।

চোখ লেগে এসেছিলো এমন সময় ফোনের রিংটোনে ধরফরিয়ে শোয়া থেকে উঠে বসলাম। বিছানা হাতড়ে নাম্বার না দেখেই ফোন রিসিভ করে হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে বললো,
–“ঘুম নষ্ট করে দিলাম বুঝি।”

আমি চোখ বন্ধ রেখেই কিছুটা বিরক্ত সুরে বললাম,
–“এটা আবার জিজ্ঞেস করার কি আছে ভাই? আমার এত সাধের ঘুম নষ্ট করে আবার জিজ্ঞেস করছেন ঘুম নষ্ট করলাম বুঝি। সাধারন সেন্সটুকুও বুঝি নেই আপনার মধ্যে।”

ফোনের ওপাশের ব্যাক্তি গলা ঝেড়ে বললো,
–“এখন তো এগারোটা উনচল্লিশ বাজে। এইসময় যে তুমি ঘুমিয়ে থাকবে আমি তো জানতাম না। স্যরি বউ আর এমন হবে না।”

ওপাশ থেকে বউ কথাটা আমার কানে যেতেই আমি চমকে চোখ খুলে তাকালাম। ফোনের স্ক্রিনে দেখলাম ইংলিশ ফ্রন্টে আদ্র লিখা। মানে উনি ফোন করেছেন? আমি আমতা আমতা করে বললাম,
–“আ্ আপনি__”

–“হ্যাঁ আমি। কেন অন্যকাউকে আশা করেছিলে নাকি?”

–“না মানে আসলে আমি না্ নাম্বার খেয়াল করিনি। স্যরি।”

–“আরেহ পাগলি স্যরি বলার কি আছে? অসময়ে ঘুমোচ্ছিলে কেন? শরীর ঠিক আছে তো?”

–“বা্ বাসায় বসে বসে স্ সময় কাটছিলো না তাই ভাবলাম ঘু্ ঘুমিয়ে ঘুমিয়েই সময় পার করি।”

–“কথা বলতে সমস্যা হচ্ছে? গলা কাঁপছে কেন তোমার?”

–“ক্ কই না ত্ তো__”

–“এত্তটা সময় পার হলো অথচ তোমার এখনো জড়তা কাটেনি?”

আমি কিছু না বলে চুপ করে রইলাম। ফোনের ওপাশ থেকে উনি মুচকি হাসলেন যা আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছি। উনি কিছুক্ষণ নিরব থেকে বললেন,
–“আচ্ছা এখন তাহলে ঘুমাও। বিকেলে রেডি হয়ে থেকো।”

–“ক্ কেন?”

–“তোমার জড়তা কাটাবো। আর সেইজন্য তো তোমাকে আমার সাথে সময় কাটাতে হবে। আমার সাথে যদি সময় না কাটাও তাহলে ফ্রি হবে কিভাবে?”

–“যা্ যাবো না আমি।”

–“সেটা সময় বলবে। বিজি হয়ে পড়বো এখনই। রাখছি।”

কথাটা বলে উনি কিছু সময় চুপ করে রইলেন৷ হয়তোবা আমার থেকে কিছু শোনার অপেক্ষা করছিলো৷ কিন্তু আমার এদিক থেকে আর কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে ফোন রেখে দিলো৷ আমিও এতক্ষণে দম নিলাম। উফস্! উনার সাথে কথা বলার সময় আমার এমন হয় কেন? মনে হয় হৃদপিণ্ডের উপর কেউ হাতুড়ি পিটাচ্ছে। উনার সামনে গেলে উনার কন্ঠ শুনলে আমার কেমন যেন লজ্জা লজ্জা লাগে। এসব নানান কথা ভেবে আবারো শুয়ে পড়লাম৷ কিছুক্ষণ এপাশ ওপাশ করার পরও যখন ঘুম এলো না তখন বিছানা ছেড়ে উঠে আম্মুর কাছে চলে গেলাম গল্প করতে। একপর্যায়ে আম্মু বললো,
–“বিকেলে রেডি হয়ে থেকো। আদ্র আসবে তোমাকে নিতে।”

–“ম্ মানে?”

–“আদ্র একটু আগেই ফোন করেছিলো। বললো তোমাকে নিয়ে একটু বের হতে যায় যদি আমরা পারমিশন দেই আর কি।”

–“আর অমনি ত্ তুমি পা্ পারমিশন দিয়ে দিলে?”

–“না দেওয়ার কি আছে? তোমাদের বিয়ের রেজিস্ট্রি হয়ে গেছে। তোমার উপর আদ্রর অধিকার আছে।”

–“আম্মু আমি যাবো না প্লিজ। তেমন ভাবে চিনি না জানি না। উনার সামনে গেলেই আমার কাঁপা-কাঁপি শুরু হয়ে যায়। যাবো না আমি উনার সাথে কোথাও।”

–“ভুলে যেও না আদ্রর সাথেই তোমার সারাজীবন থাকতে হবে। তাই এখন থেকেই ওর সাথে নিজেকে স্বাভাবিক করে তুলো। এতে তোমার জন্যই ভালো৷ ও ফোন দিলে কথা বলবা ওর সাথে। ধীরে ধীরেই সব জড়তা কেটে যাবে। প্রথম প্রথম একটু এরকম হবেই।”

আম্মু তো দেখছি একদিনেই পুরো উনার সাপোর্টে চলে গেলেন। কিভাবে পটালেন উনি আমার আব্বু আম্মুকে? জানার কৌতূহল হলো বেশ। কৌতূহল দমাতে না পেরে আম্মুকে জিজ্ঞেস করেই ফেললাম,
–“আচ্ছা আম্মু উনি কি কালো জাদু জানে? তোমাকে আর আব্বুকে কিভাবে পটালেন উনি? বিশেষ করে আমার এত্ত স্ট্রিক্ট আব্বুকে কিভাবে রাজি করালেন? উনি মনে হয় সত্যিই জাদু টোনা জানে আম্মু।”

কথাগুলো বলে আম্মুর দিকে তাকাতেই ভয়ে একটা শুকনো ঢোক গিললাম। কেননা আম্মু আমার দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে আছে। আমি আমতা আমতা করে বললাম,
–“কি হলো? ওভাবে কি দেখছো? আমি কি ভ্ ভুল কিছু বলেছি নাকি?”

–“যে ছেলেটা তোমায় এত ভালোবাসে যে ছেলেটা তোমাকে পাওয়ার জন্য এতদিন ধরে আমাদের সবার মন জয় করে ফাইনালি কাল তোমাকে আইনত ওর করে নিয়েছে সে ছেলেটাকে নিয়ে এসব কি বলছো তুমি?”

–“না মানে__”

–“গিয়ে গোসল টোসল সেরে নাও। বিকেলে আদ্র আসবে তোমাকে নিতে।”

প্রত্যুত্তরে আমি কিছুই বললাম না। কি বলবো আর? উলটো ঘুরে নিজের রুমে চলে আসতে নিয়েও থেমে গেলাম। আম্মুর দিকে তাকিয়ে বললাম,
–“আচ্ছা আম্মু আমার জানামতে, আমি উনাকে চিনি না। আর না আগে আমাদের কখনো ভুল করেও পরিচয় হয়েছিলো। তাহলে উনি আমাকে ভ্ ভালোবাসে কি করে?”

আম্মুর রান্না শেষ। গ্যাসটা অফ করে আমার দিকে একবার তাকিয়ে সব কিছু গোছগাছ করতে করতে বললো,
–“এটা তো আদ্র সব থেকে ভালো বলতে পারবে। ওর থেকেই জেনে নিও তুমি।”

আম্মু চলে গেলো। আমিও আর কোনো উপায়ন্তর না পেয়ে রুমে চলে এলাম। গোসল সেরে বের হতেই দেখলাম আপি এসে পড়েছে। আমি বের হতেই আপি চলে গেলো গোসল করতে। সবাই মিলে একসাথে দুপুরের খাবার খেয়ে যে যার রুমে চলে এলাম। আমি আর আপি একই রুমে থাকি। যদিওবা আরো রুম ফাঁকা পড়ে আছে। তবুও আমি আপিকে নিজের সাথেই রাখি। আপিকে ছাড়া যেন আমার ঘুমই হয় না। দু বোন মিলে গল্প করার একপর্যায়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। বিকেলের দিকে আম্মুর ডাকাডাকিতে ঘুম ভেঙে গেলো। আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসলাম। আম্মু তখনো দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে ডেকে চলছে। ঘুমানোর সময় দরজা লক করে রেখেছিলাম। যার কারনে আম্মু ভিতরে আসতে পারছে না। আমি কিছুটা বিরক্তিকর স্বরে বললাম,
–“তুমি যাও আমি আসছি।”

আম্মু আমাকে তাড়াতাড়ি বের হতে বলে চলে গেলেন। আমি কিছুক্ষণ অলস ভঙ্গিতে বসে থেকে গুটিগুটি পায়ে বের হলাম রুম থেকে। আম্মু কিচেনে কিছু একটা করছিলো। সেদিকে পাত্তা না দিয়ে আমি সোফায় গিয়ে আবারো শুয়ে পড়লাম। আমার চোখ থেকে যেন ঘুম কিছুতেই কাটছিলো না। কিচেন থেকে আম্মু হাঁক ছেড়ে বললেন,
–“রুহি নাস্তার ট্রে টা নিয়ে আদ্রর সামনে রাখো তো।”

আম্মুর কথা শুনে আমি চোখ বন্ধ অবস্থাতেই ভ্রু কুঁচকে ফেললাম। তবুও চোখ খুললাম না। ওভাবেই বললাম,
–“আদ্র? কিসব বলছো আম্মু? উনি আসবে কোথা থেকে?”

–“কেন তুমি দেখোনি আদ্রকে? ও তো সোফায়ই বসা৷ ওর মতো জলজ্যান্ত ছেলেটা তোমার চোখে পড়লো না? কিন্তু কি করে রুহি?”

ট্রে হাতে আম্মু এদিকে আসতে আসতেই কথাটা বললো। আম্মুর কথা আমার কর্ণকুহরে গিয়ে পৌঁছাতেই আমি লাফ দিয়ে শোয়া থেকে উঠে বসে বললাম,
–“কিন্তু আম্মু সোফায় তো আমি শুয়ে আছি। এখানে আমি ছাড়া আর কেউ___”

এইটুকু বলতেই আমার চোখ গেলো পাশের সিঙ্গেল সোফার দিকে। আদ্রকে বসে থাকতে দেখে আমার চোখ কোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম। উনি আয়েসি ভঙ্গিতে সোফায় বসে দুহাতে ফোন ধরে রেখে চোখ ছোট ছোট করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে৷ আমিও অবাক চোখে দেখছি উনাকে। এটা স্বপ্ন না সত্যি সেটাই বোঝার চেষ্টা করছি আমি। আম্মু টি-টেবিলে নাস্তার ট্রে রাখতেই আমার ধ্যান ভাঙে। লজ্জায় মাথা নিচু করে দৌড়ে পালালাম সেখান থেকে।

চলবে~