অ্যাডিক্টেড টু ইউ পর্ব-৪+৫

0
416

#অ্যাডিক্টেড_টু_ইউ
#অরনিশা_সাথী
#পর্ব_০৪

নদীর পাড়ে এসে দাঁড়িয়েছি আমি আর আদ্র। আমার অনেক আগে থেকেই খুব ইচ্ছে ছিলো জ্যোৎস্না রাতে নদীর পাড়ে শাড়ী পড়ে প্রিয় মানুষটার সাথে হাঁটবো। নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে আমি আমার এই ইচ্ছের কথা ভাবছিলাম। আদ্রর ডাকে আমার ধ্যান ভাঙে।
–“ভালো লাগছে এখানে এসে?”

–“হ্যাঁ ভীষণ। জানেন আমার নদী ভীষণ প্রিয়৷ খুব ইচ্ছে করতো জ্যোৎস্না রাতে নদীর পাড়ে এসে হাঁটতে। কিন্তু সেটা কখনো পসিবল হতো না৷ আম্মুকে রাজি করাতে পারলেও আব্বুকে কখনোই ম্যানেজ করতে পারিনি।”

একদমে কথাগুলো বলে আমি আবার নদীর কলকল ধ্বনি উপভোগ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। মাঝে মাঝে মৃদু বাতাস বয়ে যাচ্ছে চারিদিকে। আকাশে থালার মতো বড় চাঁদ। নদীর পানিগুলোর তার আপন গতিতে বয়ে চলার শব্দ। উফস্! কি সুন্দর একটা মূহুর্ত। ভীষণ ভীষণ রকমের ভালো লাগছে আমার। হঠাৎই অনুভব করলাম আমার চুল খুলে দেওয়া হলো৷ নদীর পাড়ের মৃদু বাতাসে আমার কোমড় সমান চুল এলোমেলো ভাবে উড়ছে। পেছনে তাকিয়ে দেখলাম আদ্রর হাতে আমার ঝুটি বাঁধা রাবার ব্যান্ড রয়েছে। আদ্রর মুখে দুষ্টুমির আভাস।
–“চুল থেকে রাবার ব্যান্ডটা খুলে ফেললেন কেন?”

আদ্র রাবার ব্যান্ড নিজের পকেটে রেখে মুচকি হেসে বললো,
–“এইরকম একটা পরিবেশে তোমাকে খোলা চুলে বেশ মানিয়েছে। ঝুটি করা চুলে বড্ড বেমানান লাগছিলো। এখন একদম পারফেক্ট।”

আদ্রর কথায় আলতো হেসে আবারো নদীর দিকে তাকালাম। যতদূর চোখ যায় একদৃষ্টে তাকিয়ে আছি। বেশ ভালোই লাগছে আমার কাছে৷ তবে মাঝে মধ্যে একটু অস্বস্তি লাগছে কেননা আদ্র শুধু আমাকেই দেখে যাচ্ছে। আদ্র আমার হাত ধরে বললো,
–“চলো নদীর কিনারা ধরে হাঁটি।”

কথাটা বলতে দেরী হলেও আমাকে নিয়ে উনার হাঁটতে দেরী হলো না। পাশাপাশি দুজন হেঁটে যাচ্ছি। উনি অবশ্য এখনো আমার হাত ধরেই আছে। মনে হয় না বাসায় না যাওয়া অব্দি আমার হাত উনি ছাড়বেন আজ। আদ্র সামনের দিকে তাকিয়েই বললেন,
–“এখানে একটা জিনিসের একটু কমতি আছে জানো?”

উনার কথা শুনে আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালাম উনার দিকে। আমার দৃষ্টি বুঝতে পেরে উনি বললেন,
–“শাড়ির কমতি আছে। তুমি যদি এখন গাউন না পড়ে শাড়ি পড়া থাকতে তাহলে আরো বেশি ভালো লাগতো। আমার অবশ্য প্রি-প্ল্যান ছিলো না নদীর পাড়ে আসার। হটাৎ করেই ইচ্ছে হলো তাই চলে এলাম। প্রি-প্ল্যান থাকলে অতি অবশ্যই তোমাকে শাড়ি পড়ে আসতে বলতাম আজ। ব্যাপার না নেক্সট টাইম হবে।”

আমি শুধু উনার কথাগুলো শুনেই যাচ্ছি। মানুষটা কি অমায়িক। কি সুন্দর সাজিয়ে গুছিয়ে কথা বলছে। আর সে তার অজান্তেই আমার এতদিনের ইচ্ছেটা আজ পূর্ণ করে দিলো। যদিওবা আমি শাড়ি পড়া নেই৷ তাতে কি? এরকম একটা পরিবেশে এরকম একটা জায়গায় প্রিয় মানুষটার হাত ধরেই তো হেঁটে যাচ্ছি। পার্থক্য শুধু ইচ্ছে ছিলো শাড়ি পরিহিতা থাকবো কিন্তু আফসোস গাউন পড়া আছি। ব্যাপার না আদ্র তো বললোই অন্য কোনো দিন হবে। কথাগুলো ভেবে মুচকি হাসলাম। নদীর পাড় ঘেঁষে ব্লক বিছানো ছিলো। আদ্র হাঁটা থামিয়ে ব্লকের উপর বসে পড়লো। আমি আরো কিছুক্ষণ এদিকে ওদিক একটু হেঁটে উনার পাশে এসে দাঁড়ালাম। আচমকাই উনি আমার হাত ধরে উনার পাশে বসিয়ে দিলেন। বুকটা কেঁপে উঠলো আমার৷ উনার সংস্পর্শে আসলেই আমার কেমন যেন লাগে। উনি নিজেই উনার কাঁধে আমার মাথাটা রাখলেন৷ আমিও বিনাবাক্যে উনার বাহু জড়িয়ে ধরে কাঁধে মাথা রেখে বসে আছি। দৃষ্টি দূরের ওই নদীর পানির দিকে। মাঝে মধ্যে প্রচন্ড ভাবে ঢেউ ধেয়ে আসছে এদিকে। আবার মূহুর্তের মাঝেই সেই ঢেউ মিলিয়ে যাচ্ছে। অনেকটা সময় এভাবে বসে থাকার পর আমি নিজেই বললাম,
–“আমার লাইফের বেস্ট একটা সময় কাটালাম আজ আমি। থ্যাংকস এ লট। আমাকে এত সুন্দর একটা মূহুর্ত উপহার দেওয়ার জন্য।”

আমার কথায় আদ্র মুচকি হেসে আমার মাথার সাথে উনার মাথা ঠেকালো। তারপর মৃদু হেসে বললো,
–“দোয়া করো, যাতে এরকম আরো অসংখ্য অসংখ্য সুন্দর/ভালো লাগার মূহুর্ত তোমাকে উপহার দিতে পারি আমি।”

আমি কিছু বললাম না শুধু মুচকি হাসলাম। আমি হাসছি এইটা বুঝতে পেরে উনি আমার মাথায় আলতো করে চুমু খেলো। হঠাৎই আমার মাথায় একটা প্রশ্ন জাগলো। আম্মু আপি সবাই বলছে, আমি উনাকে আগে থেকে না চিনলেও উনি আমাকে তিন বছর আগে থেকেই চিনেন। মূলত ভালোবেসেই নিজের করে নিয়েছেন আমাকে। আচ্ছা উনি আমায় প্রথম কোথায় দেখেছিলেন? কিভাবে ভালোবাসলেন উনি আমাকে? আর আব্বুকে রাজি করালেন কি করে? এরকম হাজারো প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে৷ কথাগুলো জানার আগ্রহ হচ্ছে খুব। কৌতূহল মেটাতে না পেরে বললাম,
–“আচ্ছা আপনি আমাকে প্রথম কোথায় দেখেছিলেন?”

আমার প্রশ্নে উনি সোজা হয়ে বসলেন। তারপর আমার দিকে ঘুরে আমার হাতদুটো উনার হাতের মুঠোয় নিয়ে বললেন,
–“তোমাকে আমি ফার্স্ট পনাম নগর দেখেছিলাম৷ স্কুল ড্রেসে ছিলা। সাথে আরো অনেক স্টুডেন্টস ছিলো। উমমম, শিক্ষা সফরে গিয়েছিলে তখন।”

উনার কথায় আমি কিছুটা সময় অতীতে ডুব দিলাম। মাথায় প্রেশার দিতেই মনে হলো ক্লাস টেনে অনেক কষ্টে আব্বুকে ম্যানেজ করে স্কুল থেকে শিক্ষা সফরে গিয়েছিলাম। আমি উনার কথায় সম্মতি জানিয়ে বললাম,
–“হ্যাঁ, সেইবারই ফার্স্ট আব্বুকে ম্যানেজ করে সোনারগাঁও গিয়েছিলাম শিক্ষা সফরে। ওখান থেকেই আবার পনাম নগর গেছিলাম কয়েকজন স্টুডেন্টস মিলে তিনজন টিচার্স নিয়ে।”

–“হুম সেটা দেখেই বুঝেছিলাম। তখন কত ছটফটে ছিলে। কত প্রানবন্ত লাগছিলো তোমায়। কিন্তু এখন এমন চুপচাপ কেন? আমাকে দেখলে এরকম গুটিয়ে যাও কেন?”

আমি আদ্রর প্রশ্ন সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে বললাম,
–“আপনাদের বাসা তো ওদিকে না। তাহলে ওখানে গিয়েছিলেন কেন? ঘুরতে?”

–“আমি কিন্তু আমার প্রশ্নের উত্তর পাইনি এখনো।”

–“ওসব বাদ দিন। আমি যা জানতে চেয়েছি তার___”

–“উঁহু। তা তো হবে না ম্যাডাম। আমি গত পরশু অবদিও তোমাকে খুব ছটফটে চঞ্চল প্রকৃতির দেখেছি। তাহলে কাল থেকে এমন চুপচাপ হয়ে গেলে কেন? তুমি কি খুশি না এই সম্পর্কটাতে?”

–“ত্ তেমন কিছু না। আসলে__এখনই এরকম কিছু আমি মোটেও আশা করিনি। আচমকা এরকম হওয়াতে একটু__”

–“সত্যি বলছো তো? নাকি?”

–“না না সত্যি বলছি আমি। আসলে আগে একা ছিলাম এখন আমার নামের পাশে আপনার নাম যোগ হয়েছে তাই একটু।

–“তুমি আগে যেমন ছিলে এখনো তেমনই থাকো। আমার ছটফটে প্রানবন্ত চঞ্চল রুহিটাকেই ভালো লাগে। এমন চুপচাপ রুহি ভালো লাগে না।”

–“হুম। এখন আমার প্রশ্নের জবাব?”

–“রিফাত আমার বাসায় গিয়ে আমাকে জোর করে ঘুম থেকে টেনে তুলে ওখানে নিয়ে গেছিলো। ওর গার্লফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে।”

–“আপনার কোনো গার্লফ্রেন্ড ছিলো না?”

আমার কথায় আদ্র ভ্রু কুঁচকে তাকালো আমার দিকে। আমি মাথা নিচু করে বললাম,
–“না মানে এমনি__”

–“এতক্ষণ কি বললাম তোমাকে আমি? আমার যদি গার্লফ্রেন্ড থাকতোই তাহলে কি আর সেদিন তোমাকে এক নজর দেখেই তোমার সব ডিটেইলস বের করতাম? তিন বছর অব্দি তোমার আব্বুর পিছনে পড়ে থাকতাম তোমাকে পাওয়ার জন্য?”

আসলেই তো। উনার যদি গার্লফ্রেন্ড থাকতোই তাহলে কি আর আমাকে__ধ্যাত! আমিও না, কি সব যে উল্টাপাল্টা প্রশ্ন করে বসি উনাকে। উনি আমার দুগাল ধরে মাথা উঁচু করে বললো,
–“কি হলো?”

–“ক্ কিছু না। আচ্ছা আব্বুকে রাজি করালেন কিভাবে আপনি?”

আদ্র আমাকে ছেড়ে দিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। তারপর বললো,
–“সে অনেক লম্বা কাহিনী। তোমার আব্বু___”

এইটুকু বলতে না বলতেই আদ্রর ফোন বেজে উঠলো। উনি কথা থামিয়ে পকেট থেকে ফোন বের করে দেখলেন কে ফোন করেছে। আদ্র ফোন রিসিভ না করে সাইলেন্ট করে আবারো পকেটে রেখে দিলেন। তারপর বললেন,
–“দশটা বাজতে চললো। বাসায় যেতে হবে চলো।”

–“কিন্তু__”

–“পরে একসময় বলবো কিভাবে আংকেলকে রাজি করিয়েছি৷ এখন উঠো ফাস্ট। অলরেডি বাসা থেকে ফোন দেওয়া শুরু করে দিছে।”

–“কার ফোন ছিলো?”

–“নীলাদ্রির।”

আমি ভ্রু কুঁচকে তাকালাম উনার দিকে। আপির সামনে আপি ডাকলো আর এখন কিনা নীলাদ্রি বলছে? বাহ! উনি বোধহয় বুঝতে পারলেন আমি কি ভাবছি তাই চট করেই বললেন,
–“নীলাদ্রি সম্পর্কে আমার বড় হলেও বয়সে কিন্ত বড় হবে না। সেইম এইজ হতে পারি আমরা। তখন নীলাদ্রি উপস্থিত ছিলো আর সম্পর্কে আমার বড় সেই খাতিরে আপি বলেছি। আর এখন এখানে আমরা দুজন ছাড়া অন্য কেউ নেই তাই নাম ধরে বলতেই পারি।”

প্রশ্ন করার আগেই উত্তর রেডি রাখেন দেখছি। বাহ ভালোই! উনি আর কিছু না বলে আমার হাত ধরে গাড়ির কাছে যেতে লাগলেন। গাড়ি স্টার্ট দিয়ে উনি কাউকে একটা ফোন করলেন।ফোন রিসিভ করতেই উনি বললেন,
–“আসসালামু আলাইকুম আপি।”

ওহ এবার বুঝলাম আপিকে ফোন করেছে৷ আপি হয়তো ওপাশ থেকে সালামের জবাব নিয়ে জিজ্ঞেস করলেন আমরা এখনো বাসায় ফিরছি না কেন? কেননা আদ্র বললেন,
–“রাস্তায় আছি। দশমিনিটেই বাসায় ফিরছি আমরা।”

ওপাশ থেকে আপি আবারো কিছু বললেন বোধহয়। আমি তা শুনতে পারলাম না। উনি বাই বলে ফোন রেখে দিলেন। আমার এক হাত উনার হাতের মুঠোয় নিয়ে একমনে গাড়ি চালাচ্ছেন। আমি আড়চোখে উনার দিকে তাকাচ্ছি বারবার। উনার ঠোঁটের কোনের মুচকি হাসি সবসময় ঝুলেই আছে। দশ থেকে বারো মিনিটের মাঝেই আমাদের এপার্টমেন্ট এর সামনে এসে গাড়ি থামালো আদ্র। উনি আমার হাত ধরে উনার খানিকটা কাছে টেনে নিলেন। আমার দিকে এগিয়ে আসতেই আমি পিছন দিকে হেলে গেলাম। মূহুর্তেই দম বন্ধ হয়ে এলো আমার। আমার অবস্থা বুঝতে পেরে সরে গেলেন উনি। আমি স্বস্তির শ্বাস নিলাম। উনি আমার ডান হাতের উল্টো পিঠে চুমু খেতেই কেঁপে উঠলাম আমি। বুকটা দুরুদুরু করছে। আদ্র মৃদু হেসে আমার হাত ছেড়ে দিলেন। অমনি চট করেই গাড়ি থেকে নেমে গেলাম আমি। পিছন পিছন আদ্র নেমে গেলেন। আমি দ্রুত পা ফেলে এপার্টমেন্টের ভিতরে যেতে চাইলে উনি বড় বড় পা ফেলে আমার কাছে এসে আমার হাত টেনে ধরেন। উনার দিকে চোখ যেতেই দেখলাম চোখ রাঙিয়ে তাকিয়েছেন। মাথা নিচু করে নিলাম। আদ্র খানিকটা রাগী স্বরে বললো,
–“কি ব্যাপার? এভাবে পালাচ্ছো কেন? আর আমাকে রেখেই বা যাচ্ছিলে কেন? তোমাকে যেতে বলেছিলাম আমি?”

–“না মানে পা্ পালাচ্ছি না।”

আদ্র আমার হাত ধরেই এপার্টমেন্টের ভিতরে ঢুকে লিফটের জন্য ওয়েট করতে লাগলেন। কিছু মূহুর্তের মাঝেই লিফট এসে পড়ায় আমার হাত ধরেই লিফটে ঢুকলেন। আমি খানিকটা অবাক হয়ে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলাম,
–“আপনি কোথায় যাচ্ছেন?”

–“আমার শশুড়-বাড়ি।”

–“কেন?”

লিফট পুরো ফাঁকা। আদ্র এবারে আমার দিকে কিছুটা ঝুকে বললো,
–“আমার বউকে দিয়ে আসতে।”

–“আমি একাই যেতে__”

–“পৌঁছে দেওয়া তো শুধুমাত্র একটা অযুহাত। আসলে আমি আরো কিছু সময় থাকতে চাই আমার বউয়ের কাছাকাছি। কিন্তু আমার বউ সেটা একদমই বুঝে না।”

এইটুকু বলে উনি আমার দিকে আরো কিছুটা ঝুকে গেলেন। আমি এবারেও পিছন দিকে হেলে গেলাম। আর ঠিক এই সময়টাতেই থার্ড ফ্লোরে এসে লিফট খুলে গেলো। কারো গলা ঝাড়ার শব্দ পেতেই চমকে ঠিক হয়ে দাঁড়ালাম দুজনেই। তারপর দ্রুত লিফট থেকে নেমে গেলাম। আমাদের পাশের ফ্ল্যাটের এক আংকেল ছিলেন। ইশ্ কি ভাবলেন উনি? এরপর থেকে উনার সামনে মুখ দেখাবো কি করে আমি? এসব ভাবতে ভাবতেই ফ্ল্যাটের সামনে এসে কলিংবেল বাজালাম। সাথে সাথেই দরজা খুলে গেলো। মনে হচ্ছে আমাদের অপেক্ষাতেই সকলে অধীর আগ্রহে বসে ছিলেন। কখন আমরা আসবো আর কখন তারা দরজা খুলবে। আপি দরজা খুলেছে। আদ্র আপির সাথে ভাব বিনিময় করে চলে যেতে নিলেই আপি আম্মুকে হাঁক ছেড়ে ডেকে বললেন,
–“মামি তোমার মেয়ের জামাই বাসার দোরগোড়ায় এসে ফিরে যাচ্ছে। বলছে ভিতরে আসবে না।”

আমার এতকিছু শোনার টাইম নেই। তাই আমি আগেভাগেই চলে এলাম রুমে। শুধু ভিতরে আসতে আসতে এই কথাটুকু আমার কানে এলো। আম্মু দ্রুত উড়নায় হাত মুছতে মুছতে বেরিয়ে এলেন কিচেন থেকে। আমাকে দেখে রাগী গলায় বললো,
–“রুহি তুই কি রে আদ্রকে ছাড়াই একা একা ভিতরে চলে এলি যে।”

–“আপি আসতে বললো তো। উনিই বললেন আসবেন না। তাই আমি আর কিছু বলিনি।”

–“তাই বলে তুই ভিতরে আসতে বলবি না? আল্লাহ এই মেয়ের কান্ডজ্ঞান কবে হবে?”

আম্মু আরো কিছু বিড়বিড় করতে করতেই চলে গেলেন। উদ্দেশ্য আদ্রকে ভিতরে নিয়ে আসা। আমিও আর দাঁড়িয়ে না থেকে রুমে গিয়ে ড্রেস হাতে নিয়ে সোজা ওয়াশরুমে চলে গেলাম। আধ ঘন্টা বাদে শাওয়ার শেষে ওয়াশরুম থেকে বের হতেই দেখি আদ্র আমার বিছানায় আধশোয়া হয়ে ফোন দেখছে। ছিটকিনি খোলার শব্দে আদ্র ফোন থেকে চোখ সরিয়ে আমার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন। উনাকে এসময় আমার রুমে দেখে আমি খানিকটা চমকে গেলাম। উনি যাননি এখনো? নিশ্চয়ই আম্মু ধরে বেঁধে নিয়ে এসেছেন উনাকে। হুট করেই আদ্রর শান্ত স্বাভাবিক চোখজোড়া আচমকাই নেশালো হয়ে গেলো। আচমকা উনার নেশাক্ত দৃষ্টি দেখে ঘাবড়ে গেলাম আমি। হঠাৎ করে দৃষ্টি পরিবর্তনের কোনো কারন খুঁজে পেলাম না আমি। আদ্র ধীরে ধীরে আরো গভীর ভাবে আমার দিকে তাকাচ্ছে। আমি তখনো ওয়াশ রুমের দরজার সামনেই দাঁড়িয়ে আছি। নিজের দিকে একবার তাকাতেই আমার চোখ চড়কগাছ। এবার আদ্রর ওরকম দৃষ্টির কারন খুঁজে পেলাম আমি। দ্রুত মাথা থেকে টাওয়াল খুলে গায়ে জড়িয়ে নিলাম আমি। আদ্র এবারে উঠে দাঁড়ালো। এক-পা দু-পা করে আমার দিকেই এগোচ্ছে। ভয়ে পিছিয়ে গেলাম আমি। ওয়াশরুমের দরজা লক করা ছিলো না। দরজার সাথে পিঠ লাগতেই দরজা সরে গেলে আমি ব্যালেন্স সামলাতে না পেরে পড়ে যাচ্ছিলাম। আদ্র আমার হাত ধরে একটানে উনার কাছে নিয়ে এলো। আচমকা টান দেওয়াতে হুড়মুড়িয়ে উনার বুকের সাথে এসে আমার মাথা ধাক্কা খেলো। প্রথমবারের মতো এই ভাবে উনার কাছে আমি। আদ্রর বুকে আমার মাথা। উনার হৃদপিণ্ডের ধুকপুকানি শব্দ স্পষ্ট শুনতে পারছি আমি। হঠাৎই উনি আমাকে পাশের দেয়ালের সাথে চেপে ধরলেন। আমার দিকে কিছুটা ঝুকে যেতেই আমি মাথা নিচু করে নিলাম। আদ্র আমার মাথার সাথে উনার কপাল ঠেকিয়ে নেশাক্ত কন্ঠে বললেন,
–“নেশা ধরে যাচ্ছে কিন্তু। এসময়ে শাওয়ার নিলে কেন? নিয়েছো ভালো কথা আমার সামনে এভাবে বের হলে কেন তুমি? জানো এই মূহুর্তে তোমার নেশায় ঠিক কতটা ডুবে যাচ্ছি আমি? এখন যদি তুমি সম্পূর্ণ ভাবে আমার হতে তাহলে কিছুতেই নিজেকে সামলে রাখতে পারতাম না আমি। নেহাৎই এখন সেটা পসিবল নয় তাই অনেক কষ্টে ধরে রেখেছি নিজেকে।”

আদ্রর প্রতিটা কথায় আমি কেঁপে উঠছি। কিসব বলছেন উনি? একটু লজ্জা লাগছে না? উনার কথা নাহয় বাদ দিলাম কিন্তু আমার তো লজ্জা লাগছে। এটা কি উনি বুঝতে পারছে না? আদ্র এবারে আগের থেকে আরো দ্বিগুণ নেশালো স্বরে বললো,
–“কবে একদম নিজের করে পাবো তোমাকে? এতদিন তোমাকে পাইনি আর এখন তোমাকে পেয়েও সেরকমভাবে ছুঁতে পারছি না। তোমাকে পরিপূর্ণ ভাবে পাওয়ার এই অপেক্ষার অবসান কবে হবে বলতে পারো? আচ্ছা এত নেশালো কেন তুমি? দুনিয়াতে এত মেয়ে থাকতে তোমার নেশাতেই আসক্ত হলাম কেন। কি আছে তোমার মাঝে? যেটা বার বার আমাকে তোমার কাছে টানে। কি কারনে তোমার নেশায় সম্পূর্ণ ভাবে ডুবে যেতে ইচ্ছে করে আমার।”

আদ্রর এতটা কাছে এসে এরকম ভয়েসে কথা বলাটাই যথেষ্ট ছিলো আমাকে একদম ভিতর থেকে নাড়িয়ে দেওয়ার জন্য৷ আদ্রর প্রতিটা কথার তালে তালে পাল্লা দিয়ে যেন আমার হার্টবিট দৌড়াচ্ছে। আদ্র আমার থুতনি ধরে মুখ খানিকটা উঁচু করলেন। তারপর আমার কপালের সাথে উনার কপাল লাগিয়ে ফিসফিস করে বললেন,
–“রুহি, আ’ম অ্যাডিক্টেড টু ইউ।”

চলবে~

#অ্যাডিক্টেড_টু_ইউ
#অরনিশা_সাথী
#পর্ব_০৫

–“রুহি তোর যে বিয়ে হয়ে গেলো আমাকে তো একবারের জন্য জানালিও না। তার উপর আজ নাকি আবার তোর বরের সাথে বেরিয়ে___”

এইটুকু বলে সেখানেই থেমে গেলো রুপ। পুরো নাম রেজওয়ান রুপ। আমার বড় চাচার ছেলে। অফিসের কাজে চিটাগং গিয়েছিল। তাই আমার এনগেজমেন্ট এর সময় উপস্থিত থাকতে পারেনি। রুপ বুঝতে পারেনি আদ্রও আছে এখানে। নয়তো এভাবে নক না করে কিছুতেই রুমে আসতো না৷ আমি দেয়ালের সাথে লেগে ছিলাম। আর আমার সামনেই আদ্র আমার হাত ধরে আমার দিকে ঝুকে আছে। আদ্র দরজার দিকে পিঠ করে থাকায় রুপ ওর ফেস দেখতে পারলো না। আমি রুপকে দেখে লজ্জায় নুইয়ে গেলাম। রুপ ভাইয়াও অপ্রস্তুত হয়ে গেছে। ভাবতে পারেনি এরকম বিব্রতকর একটা পরিস্থিতিতে পড়বে। আদ্র ততক্ষণে আমার সামনে থেকে সরে দাঁড়িয়েছে। আমি এদিক ওদিক তাকিয়ে রুপ ভাইয়ার দিকে এগিয়ে গেলাম। তারপর মাথা নিচু করেই বললাম,
–“কখন এসেছো তুমি? রুশাপুকে নিয়ে আসোনি?”

–“উঁহু। শান ভাইয়া আসতে দেয়নি। তোর উপর রুশাপু প্লাস শান ভাইয়া দুজনেই বেশ চটে আছে।”

–“আ্ আমি কি করেছি?”

রুপ ভাইয়া এবারে আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো,
–“কি করিসনি সেটা বল? আমাকে রুশাপুকে শান ভাইয়াকে কাউকে কিচ্ছু না জানিয়ে হুট করেই বিয়ের রেজিস্ট্রি সেরে ফেললি। তারপরও বলছিস তুই কি করলি?”

আমি মিনমিন করে বললাম,
–“ওটা তো আমি নিজেও জানতাম না। এনগেজমেন্ট এর দিন সন্ধ্যায় জানতে পারলাম। তখন তোমাদেরকে কিভাবে জানাই আমি?”

রুপ মুচকি হেসে বলল,
–“তোর বরের সাথে পরিচয় করাবি না?”

রুপ ভাইয়ার কথায় আমি ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলাম। বর? বর এলো কোত্থেকে? আমি অবাক কন্ঠেই বললাম,
–“বর?”

আমার কথায় রুপ ভাইয়া আমার মাথায় একটা চাটি মেরে বললো,
–“আরে গাধী, যার সাথে তোর এনগেজমেন্ট হয়েছে। তোর ফিয়্যান্সের কথা বলছি।”

–“ওহ তাই বলো।”

কথাটা বলে আমি একপলক আদ্রর দিকে তাকালাম। আদ্র তখন ভদ্র ছেলের মতো বিছানায় বসে ফোন গুতোচ্ছে। আমি ইশারায় আদ্রকে দেখালাম। রুপ ভাইয়া চোখ পাকিয়ে তাকালো। বললো,
–“কি ইশারা করছিস? পরিচয় করিয়ে দে।”

আমি আমতা আমতা করে বললাম,
–“আ্ আমি পারবো না। তুমি নিজে পরিচিত হয়ে নাও।”

রুপ ভাইয়া এবারেও চাটি মারতে ভুললো না আমার মাথায়। আমি মাথা ডলতে ডলতে রাগী চোখে তাকালাম রুপ ভাইয়ার দিকে। ভাইয়া রাগী স্বরে বললো,
–“রোমান্স করার সময় তো বলিসনি আমি পারবো না। হুহ। যত্তসব ঢং। যা সামনে থেকে সর।”

কথাগুলো বলেই ভাইয়া আমাকে হাত দিয়ে একপাশে সরিয়ে আদ্রর সামনে গিয়ে বললো,
–“হাই আমি রুপ। রুহির___”

এইটুকু বলে থেমে গেলো রুপ। আদ্র নিজেও রুপের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে আছে। দুজন দুজনের দিকে এরকম অবাক ভাবে তাকিয়ে থাকার কারনটা খুঁজে পেলাম না আমি। আমি উনাদের দুজনের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললাম,
–কি হলো? দুজনে এভাবে দুজনের দিকে হা করে তাকিয়ে আছেন কেন?”

আমার কথায় রুপ ভাইয়া আদ্রর থেকে দৃষ্টি সরিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
–“রুহি ও তোর ফিয়্যান্সে মুশফিকান আদ্র?”

রুপ কথাটা বলার পরপরই আদ্র আমাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
–“রুহি ও তোমার চাচাতো ভাই?”

ওদের দুজনের প্রশ্নেই এবার আমি বেশ চটে গেলাম। এতক্ষণ তাহলে দুজন কি দেখলো বা শুনলো? আমি রেগে গিয়ে বললাম,
–“ভাইয়া উনি যদি আমার ফিয়্যান্সে না হোন তাহলে এ সময় উনি আমার রুমে কি করছেন?”

এইটুকু বলে থেমে একটা শ্বাস নিলাম। তারপর আবার আদ্রকে উদ্দেশ্য করে বললাম,
–“আর এই যে আপনি, এতক্ষণ এখানে কি কি কথা হইছে শুনেননি আপনি? সব জেনেশুনেও দুজনে একই প্রশ্ন কেন করছেন? মেজাজ খারাপ হচ্ছে আমার এবারে।”

আদ্র বা রুপ দুজনের একজনও আমার কথায় পাত্তা না দিয়ে নিজেরা নিজেদের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। রুপ বলল,
–“তারমানে তুই যাকে ভালোবাসিস সে রুহিই ছিলো?”

আদ্র রুপের পিঠে থাপ্পড় মেরে বললো,
–“শালা রুহি যে তোরই বোন এটা আমাকে আগে বলিসনি কেন? তাহলে তো তোর মাধ্যমেই আরো ইজিলি আংকেলকে রাজি করাতে পারতাম। তিনটা বছর ওয়েট করতে হতো না।”

–“তুই কি একবারের জন্যও আমাকে মেয়েটার মানে রুহির ছবি দেখিয়েছিলি? দেখাসনি তো। এড্রেস অব্দি বলিসনি তাহলে আমি জানবো কি করে তুই আমার বোনের উপরই ফিদা হয়ে বসে আছিস।”

আমি বেচারি দুজনের মাঝে দাঁড়িয়ে একবার আদ্রর দিকে তাকাচ্ছি তো একবার রুপের দিকে তাকাচ্ছি। এরা দুজনে কি বলছে না বলছে কিছুই মাথায় ঢুকছে না। জাস্ট এইটুকু বুঝতে পারছি এরা পূর্বপরিচিত। ওরা দুজনে আমার দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলো ওরা কি বলছে তার আগামাথা কিছুই আমি বুঝতে পারছি না। রুপ ভাইয়া বললো,
–“আদ্র আর আমি কলেজ লাইফের বেস্টফ্রেন্ড।”

আমি আহাম্মকের মতো চেয়ে রইলাম দুজনের দিকে। তখনই রুশাপুর গলা শুনতে পেলাম। হিমাদ্রি ফাইজা ফারাবী ভাইয়া সকলেই এসেছে বোধহয়। পিচ্চি হিয়াজটার গলা ও পাওয়া যাচ্ছে। সত্যিই রুশাপুর গলা শুনতে পেলাম কিনা তার জন্য কান খাড়া করে রইলাম। আমার ভাবনাকে সত্যি করে দিয়ে আবারো রুশাপুর কথার শব্দ পেলাম। কোমড়ে দুহাত গুজে রাগী চোখে রুপ ভাইয়ার দিকে তাকালাম আমি। আমাকে এভাবে দেখে রুপ ভাইয়া আমতা আমতা করে বললো,
–“ক্ কি হলো? ওভাবে কি দেখছিস?”

–“রুশাপুকে শান ভাইয়া আসতে দেয়নি না?”

আমার কথায় রুপ ভাইয়া শুকনো ঢোক গিললো। ও আমাকে ভয় পাচ্ছে না মোটেও। তবুও এমন একটা ভাব নেয় যে আমাকে অনেক ভয় পায়। সত্যি বলতে ব্যাপারটা বেশ ভালো লাগে আমার। রুপ ভাইয়া রুশাপু শান ভাইয়া আপি ফারাবী ভাইয়া সকলেই বেশ ভালোবাসে আমাকে। আমার আবদার মেটানোর জন্য সকলেই সদা প্রস্তুত থাকে। হিয়াজ বাদে কাজিন মহলের সবার থেকে ছোট হওয়াতে সবাই বেশ আদর যত্ন করে। আমিই সব থেকে বেশি রাগ অভিমানে গাল ফুলাই। জেদও মোটামুটি ভালোই আছে। রুপ ভাইয়া হাসার চেষ্টা করে বললো,
–“তোকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম। বাট শাকচুন্নীটা যে এভাবে হি হি করে হেসে সব ভেস্তে দিবে কে জানতো?”

–“তোমাকে আমি পরে দেখে নিবো। আগে রুশাপুর সাথে দেখা করে আসি।”

কথাটা বলে ছুটে বেরিয়ে গেলাম রুম থেকে। ড্রয়িংরুমে গিয়ে ঘড়ির দিকে নজর দিলাম একবার। পৌনে এগারোটা বাজে। কাজিন মহলের সকলে বসে আড্ডা দিচ্ছে। হিয়াজ শান ভাইয়ার কোলে বসে চিপস খাচ্ছে। আমি সবার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললাম,
–“বাহ! সবাই তো আমাকে ছাড়াই আড্ডার আসর জমিয়েছে দেখছি।”

আমার কথায় রুশাপু অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলো। শান ভাইয়াও জাস্ট পাত্তা দিলো না আমাকে। হিয়াজকে কোলে নিয়ে ওর সাথে খেলায় মগ্ন৷ আমি এবার রুশাপুর পায়ের কাছে হাটু ভেঙে বসে রুশাপুর হাতদুটো ধরে বললাম,
–“ও রুশাপু, কথা বলবা না আমার সাথে?”

রুশাপু এবারেও সেম কাজটা করলো। অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বললো,
–“আমি যে একজনের উপর বেশ রেগে আছি সেটা কি সে বুঝতে পারছে না?”

রুশাপুর গালে টুক করে একটা চুমু খেয়ে বসলাম আমি। তবুও রুশাপুর কোনো পাত্তা পেলাম না। তাই অভিমানে গাল ফুলিয়ে দুহাতে রুশাপুর কোমড় জড়িয়ে কোলে মাথা রেখে ফ্লোরে বসে রইলাম। রুশাপু এবার আমাকে উঠিয়ে বুকে জড়িয়ে নিলো। সাথে সাথে আমিও হেসে উঠলাম। শান ভাইয়া বললো,
–“আরে বাহ! দুই বোনের তো মিল হয়েই গেলো। তাহলে শুধু আমি রাগের ভান ধরে থাকবো কেন?”

শান ভাইয়ার কথায় সবাই উচ্চস্বরে হেসে উঠে৷ গল্পের আসরে আমিও যোগ হলাম এবার। মিনিট দশেকের মাথায় আম্মু ডিনার করার জন্য ডাকলো। হিমাদ্রি ফাইজা হিয়াজ আর আপি নাকি আগেই ডিনার সেরে নিয়েছে। বিরিয়ানি দেখলে এদের আবার দেরী সয় না। আমিও অবশ্য এদের দলেরই একজন। কিন্তু আজ আদ্র থাকাতেই এরকমটা হলো না। আম্মু আমাকে পাঠালো আদ্র আর রুপ ভাইয়াকে ডেকে আনার জন্য। যদিওবা আমি যেতে চাচ্ছিলাম না। অগ্যতা আম্মুর জোরাজোরিতেই যেতে হলো। রুমে গিয়ে দেখলাম আদ্র বিছানায় আধশোয়া হয়ে ফোন ঘাটছে। পুরো রুমে চোখ বুলিয়ে কোথাও রুপ ভাইয়াকে দেখতে পেলাম না৷ রুমে উনি একা বসে আছে। এখন আমি গেলে যদি আবার তখনকার মতো কিছু করে বসে? ভাবতেই হাত পা ঠান্ডা হয়ে এলো আমার। এরমাঝে আম্মু আবারো ডেকে উঠলো আমাকে। গুটিগুটি পায়ে রুমে ঢুকে উনার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম৷ আমার উপস্থিতি বুঝতে পেরে উনি ফোন পকেটে রেখে সোজা হয়ে বসলো। আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,
–“হ্যাঁ বলো, কি বলবে?”

–“আম্মু ডাকছে ডিনারের জন্য।”

আদ্র কিছু না বলে উঠে দাঁড়ালো। আমার পিছু পিছু পা বাড়ালো। তারপর হঠাৎই থেমে গিয়ে আমাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে আমার আগাগোড়া দেখে নিয়ে বললো,
–“এভাবেই ছিলে এতক্ষণ সবার সামনে?”

–“হ্যাঁ। কেন?”

কথাটা বলে নিজের দিকে একবার চোখ বুলালাম। ইশ্ এবারেও লজ্জায় মাথা কাটা গেলো আমার। দ্রুত উড়না গায়ে জড়িয়ে আমতা আমতা করে বললাম,
–“না মানে টাওয়াল ছিলো বাট কখন পড়ে গেছে বুঝ__বুঝতে পারিনি।”

আদ্র দু কদম আমার দিকে এগিয়ে এসে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
–“নেক্সট টাইম যেন আর এরকম না হয়। তুমি সম্পূর্ণটাই আমার। সো, তোমাকে যেকোনো ভাবে যেকোনো রুপে দেখার অধিকারটাও শুধু আমার। আমি চাইনা অন্যকারো সামনে তুমি উড়না ছাড়া চলাফেরা করো। সেটা যে কেউ-ই হোক না কেন?”

–“আ্ আর হবে না এমন।”

–“হুম মনে রেখো কথাটা।”

এইটুকু বলে উনি আমার আগেই রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। যাহ বাবা! এতে এত রেগে যাওয়ার কি আছে? ওখানে সবাই আমার কাজিন ই তো ছিলো। হুহ এমন ভাব করছে যেন আমি উনার বিয়ে করা বউ। বউ? হ্যাঁ বউ-ই তো। ইসলামিক ভাবে না হোক আইনি ভাবে তো আমি উনার বউ-ই হই। এসব আকাশ-কুসুম ভাবতে ভাবতেই ডাইনিংয়ে এসে দাঁড়ালাম আমি। ফারাবী, রুপ, শান ভাইয়া এবং রুশাপু বসে পড়েছে। আদ্রও বসেছে। এখন শুধুমাত্র উনার পাশের চেয়ারটাই খালি পড়ে আছে। বাসায় আসার পর থেকে উনার সাথে ঘটে যাওয়া কাহিনিগুলো মনে হতেই খাওয়ার ইচ্ছেটা একদম মরে গেলো আমার। ইশ্! চোখের সামনে বিরিয়ানি, লোভও লাগছে আবার খেতেও ইচ্ছে করছে না। কি যে করি আমি। আম্মু সবার প্লেটে খাবার তুলে দিয়ে বললো,
–“কি হলো রুহি? তুমি বসছো না কেন?”

–“ক্ষুধা নেই আম্মু। আমি খাবো না।”

ফারাবী ভাইয়া এক লোকমা বিরিয়ানি মুখে দিয়ে বললো,
–“বাহ! আজ সূর্য কোন দিকে উঠেছে? যে বিরিয়ানি দেখলে সবার আগে হামলে পড়ে আজ সে কিনা বলছে খাবে না। এটাও দেখার ছিলো?”

ফারাবী ভাইয়ার সাথে তালে তাল মিলিয়ে রুপ ভাইয়াও বললো,
–“আহ কি যে মজা! কাকিয়া তোমার হাতের বিরিয়ানি অলওয়েজ বেস্ট। বেশ লোভনীয় দেখতে। সাথে খুব মজারও হয়।”

ভাইয়াদের কথা শুনে আমার খাওয়ার লোভটা আরো বেড়ে যাচ্ছে। আদ্রর দিকে তাকালাম আমি। চুপচাপ বসে আছে লোকটা। এখন বড্ড আফসোস হচ্ছে আমার এই লোকটা এখানে থাকাতে। ধুর ভাল্লাগে না! আমি তবুও নাকোচ করলাম খাওয়ার জন্য। শান ভাইয়া এবার খেতে খেতে বললো,
–“বুঝলে ছোট গিন্নি, বিরিয়ানিটা বেশ হয়েছে খেতে। না খেলে মিস করে যাবে। তাই বলছি চুপচাপ বসে পড়ো। না খেলে তোমারই লস।”

–“নারে রুহি তোর খেতে হবে না। তুই বরং রুমেই চলে যা।”

রুশাপুর কথায় মনে মনে সহমত জানালাম। এখানে থাকলে বিরিয়ানিটা আমাকে বারবার ওর কাছে টানবে। তার থেকে বরং রুমে চলে যাই তাই ভালো। বিরয়ানি দেখবোও না আর লোভও লাগবে না। কথাগুলো ভেবে রুমের দিকে পা বাড়াতেই হাতে টান পড়লো। পিছন ফিরে দেখি আদ্র হাত ধরে আছে আমার। এতক্ষণে সবাই খাওয়া শুরু করলেও উনি চুপচাপ বসে ছিলেন। সবাই বেশ কয়েকবার খেতে বললেও খাচ্ছি বলে আর খাবার মুখে তুলেনি। তবে কি উনি আমার বসার জন্যই অপেক্ষা করছিলেন? আমি বিস্ময়ে উনার দিকে তাকিয়ে৷ উনি আমার দিকে তাকিয়ে ইশারায় খেতে বসতে বললেন। আমি কিছু বলার আগেই উনার রাগান্বিত চোখ দেখে চুপচাপ বসে পড়লাম উনার পাশের চেয়ারে। রুশাপু আর ভাইয়ারা মিটিমিটি হাসছে৷ আদ্র আম্মুকে উদ্দেশ্য করে বললো,
–“মামুনী, আপনার মেয়েকে খেতে দিন।”

–“হ্যাঁ বাবা দিচ্ছি। তুমি খাওয়া শুরু করো।”

আম্মু কথাটা বলে প্লেটে আমার জন্য খাবার তুলতে গেলে আমি নিচু কন্ঠে বলি,
–“খাবো না আমি। বাইরে থেকে খেয়ে এসেছিলাম তো।”

–“তোমার না বিরিয়ানি খুব পছন্দ? যত ভরা পেটই থাকুক না কেন বিরিয়ানির জন্য নাকি তোমার পেট অলওয়েজ খালি থাকে? তাহলে আজ খাবে না কেন?”

আম্মুর কথায় আমি কিছুক্ষণ ভেবে বললাম,
–“আমার ক্ষুধা লাগলে আমি পরে গরম করে খেয়ে নিবো। এখন যাই প্লিজ?”

কথাটা বলে উঠার চেষ্টা করলাম। কিন্তু ব্যর্থ হলাম আমি। কেননা আদ্র শক্ত করে আমার হাত ধরে রেখেছে৷ আমি অসহায় দৃষ্টিতে উনার দিকে তাকালাম। উনি আমাকে বসিয়ে রেখে এবার নিজেই প্লেটে আমার জন্য বিরিয়ানি তুললেন। তারপর গম্ভীর পুরুষালী কন্ঠে বললো,
–“নো সাউন্ড, খেতে বলছি চুপচাপ খাবা৷ না খেয়ে এখান থেকে এক পা নড়বে না।”

বাধ্য মেয়ের মতো চুপচাপ খেয়ে রুমে চলে এসেছিলাম। আদ্র ড্রয়িংরুমে বসে কাজিনদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলো। মিনিট দশেক বাদে আদ্র রুমে এলো। আমি তখন বিছানায় এলোমেলো ভাবে শুয়ে ফোন দেখছিলাম। কারো উপস্থিতি টের পেতেই ঠিকঠাক ভাবে উঠে বসলাম। উনি হ্যাঁচকা টানে আমাকে টেনে উনার বুকের উপর ফেললেন। আচমকা এমন করাতে আমি হুড়মুড়িয়ে উনার বুকের সাথে গিয়ে ধাক্কা খেলাম।
–“ক্ কি করছেন? কেউ এসে পড়বে।”

আদ্র আমার কানের পিঠে চুল গুজে দিয়ে ফিসফিস করে বললো,
–“আসুক। আমার বউকেই তো ধরেছি৷”

আমি ছাড়া পাওয়ার জন্য হাত-পা ছোড়াছুড়ি করছি। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হচ্ছে না। আর যাই হোক উনার সাথে অন্তত পেরে উঠা আমার পক্ষে কোনো কালেই সম্ভব না। আদ্র এবারে আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন। এরকম করাতে দম বন্ধ হয়ে আসছে আমার৷ হাত-পা থরথর করে কাঁপছে৷ নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা চালালাম খানিকটা সময়। একপর্যায়ে একদম শান্ত হয়ে গেলাম। উনার বুকে মাথা দিয়ে চুপচাপ উনার হৃদ-স্পন্দন শুনতে লাগলাম। আমাকে শান্ত হতে দেখে উনি হাতের বাঁধন কিছুটা হালকা করে জড়িয়ে ধরলেন আমায়। শান্ত কন্ঠে বললেন,
–“নেক্সট টাইম থেকে এভাবেই শান্ত হয়ে থাকবে জড়িয়ে ধরার সময়। এত নড়াচড়া করলে ফিল পাওয়া যায় না।”

উনার কথা শুনে আমার চক্ষু চড়কগাছ। কি বলছে লোকটা? উনার সামনে আসলেই আমার ভয়ে হাটু কাঁপে আর উনি কিনা বলছে জড়িয়ে ধরার কথা? আদ্র নিজেই আমার দু হাত তুলে উনার দুই কোমড়ের পাশ দিয়ে নিয়ে কোমড় ধরালো। আমিও ক্ষানিকটা সময় ইতস্তত করে কাঁপা কাঁপা হাতে উনার কোমড় জড়িয়ে ধরলাম। কয়েক সেকেন্ড বাদেই উনার ফোন বেজে উঠলো৷ বিরক্তিতে ‘চ’ শব্দ করলেন আদ্র৷ এসময়ে ফোন আসায় উনি মোটেও খুশি হয়নি। প্রথমে ফোন বেজে কেটে গেলো। উনি রিসিভ তো দূরে থাক আমাকে ছাড়লেনই না। দ্বিতীয় বারও ফোন বেজে উঠায় খানিকটা বিরক্ত হয়েই আমাকে ছেড়ে ফোন রিসিভ করলেন। ওপাশ থেকে কি বললো শোনা গেলো না। কিন্তু প্রত্যুত্তরে উনি “আসছি” বলে ফোন কান থেকে নামিয়ে পকেটে ঢুকিয়ে নিলেন। আমার দুগালে হাত রেখে কপালে শব্দ করে চুমু খেয়ে বললেন,
–“আসছি। নিজের খেয়াল রেখো।”

আমি কিছু না বলে মাথা নিচু করে নিলাম। উনি আমার গাল থেকে হাত নামিয়ে উলটো ঘুরলেন চলে যাওয়ার জন্য। দরজার কাছাকাছি যেতেই আমি বললাম,
–“কেয়ারফুলি ড্রাইভ করবেন। আর বাসায় পৌঁছে ম্যাসেজ করে জানিয়ে দিবেন।”

কথাটা শুনে উনি পিছন ফিরে আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলেন। তারপর চলে গেলেন।

চলেব~