অ্যাডিক্টেড টু ইউ পর্ব-৬+৭

0
385

#অ্যাডিক্টেড_টু_ইউ
#অরনিশা_সাথী
#পর্ব_০৬

আজ গুনে গুনে দু’মাস পূর্ন হলো আমার আর আদ্রর এনগেজমেন্ট এর। এতদিনে আমি মোটামুটি স্বাভাবিক হয়ে উঠেছি উনার সাথে৷ কিন্তু তারপরও উনার সামনে গেলে আমার অনিচ্ছায় বারবার লজ্জায় নুইয়ে যাই। হাত-পা কাঁপে। এতে অবশ্য আদ্রর ক্রেডিট বেশি। উনি ইচ্ছা করেই আমায় লজ্জায় ফেলেন৷ আমাদের বাড়িতে উনার আসা-যাওয়া বেড়েছে আগের তুলনায়। এক কথায় এই দু’মাসে উনি একেবারে বাড়ির ছেলে হয়ে গেছেন। মাঝে মাঝে মনে হয় আমি কেউ না, আদ্রই সব।

অনার্সে এডমিট হয়েছি সপ্তাহ খানেক হবে। এইচএসসি তে মোটামুটি ভালো রেজাল্ট এসেছে। আমি হিমাদ্রি ফাইজা তিনজনে একই ভার্সিটিতে আছি। ক্লাস শেষে কথা বলতে বলতে বের হলাম আমি আর হিমাদ্রি। আজ ফাইজা সাথে নেই। একটা ক্লাস করেই রুপ ভাইয়ার সাথে ঘুরতে বেরিয়েছে ও। মাঝে মাঝে ওদের দুজনের প্রেম দেখলে আমার বড্ড হিংসা হয়৷ ইশ্ এভাবে যদি আমায় কেউ ভালোবাসতো? আমিও যদি একটা প্রেম করতে পারতাম তাহলে এভাবে ক্লাস বাঙ্ক দিয়ে আমিও ঘুরে বেড়াতে পারতাম প্রিয় মানুষটার সাথে। পরমূহুর্তেই আবার নিজের মাথায় নিজেই চাটি মেরে বলি,
–“ধ্যাত আমিও না! কিসব যে উল্টাপাল্টা ভাবি? আমার প্রেমিক থাকতে হবে কেন? যেখানে মুশফিকান আদ্র নামে আস্ত একজন মানুষ আমার নামে লিখা আছে। সেখানে প্রেমিক থাকার তো প্রশ্নই আসে না। উনি আছেন তো আমার জন্য।”

এসব আকাশ – কুসুম ভাবতে ভাবতেই হিমাদ্রীর সাথে মাঠ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি। হুট করেই একটা ছেলে এসে দাঁড়ালো আমাদের সামনে। আমি হিমাদ্রি দুজনেই দাঁড়িয়ে পড়লাম। ছেলেটা কিছু না বলে আমার হাতে একটা চিরকুট ধরিয়ে দিয়ে চলে গেলো। যেমন ঝড়ের গতিতে এসেছিলো ঠিক তেমনই ঝরের গতিতে চলে গেলো আমাদের সামনে থেকে। আমি হিমাদ্রি দুজনে আহাম্মক হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। একবার হাতের চিরকুটটার দিকে তাকাচ্ছি তো একবার হিমাদ্রীর দিকে। চিরকুট খোলার জন্য উদ্যত হতেই কেউ একজন ছোঁ মেরে চিরকুটটা নিয়ে নিলো। মাথা তুলে তাকিয়ে দেখি আদ্র দাঁড়ানো। ভয় ভয় লাগছে এবার একটু। কি হবে এবার? রাগ করবেন না তো? কিন্তু এখানে আমার দোষ কোথায়? আমি তো এসবের কিছু জানি না। হুট করেই তো ছেলেটা এসে হাতে চিরকুট ধরিয়ে দিলো। আদ্র থমথমে গলায় বললো,
-“বাহ! আজকের এই দিনে এসেও যে কেউ আশি-নব্বই দশকের মতো চিরকুটের মাধ্যমে প্রেম নিবেদনটা ধরে রেখেছে এ তো ভাবাই যায় না।”

আমি মাথা নিচু করে নিলাম। এত ঠান্ডা ভাবে কথা বলছে কেন? তবে কি এটা ঝড় আসার পূর্বাভাস?
–“রুহি আজ তো তুই গেলি।”

মনে মনে কথাটা আওড়ালাম বেশ কবার। আর যাই হোক এখানে ভরা ভার্সিটির সামনে যাতে কোনো সিনক্রিয়েট না করে উনি। আল্লাহ তুমি দেখো। আমার এসব ভাবনার মাঝেই উনি খানিকটা জোড়ে বলে উঠলো,
-হু গেভ দ্যা নোট? হোয়্যার আর ইউ? সামনে এসো।”

কেঁপে উঠলাম আমি। ততক্ষণে আশেপাশে কিছু স্টুডেন্টস ভীর জমিয়েছে। তাদের থেকেই দুটো ছেলে এগিয়ে এলো। একজন যে চিরকুট দিয়েছে সে আর অন্য একটা ছেলে। চিরকুট দেওয়া ছেলেটাকে আজই প্রথম দেখলাম। তবে পাশের ছেলেটাকে মনে হয় আগেও দু/তিনবার দেখেছি। আদ্র ছেলে দুটোকে দেখে গম্ভীর স্বরে বললো,
–“কে দিয়েছো চিরকুটটা?”

যে ছেলেটি চিরকুট দিয়েছে সে এক কদম এগিয়ে এসে ভয়ে ভয়ে বললো,
–“আ্ আমি দিয়েছি__”

–“নিজের জন্য?”

–“না না, নিশাদের জন্য।”

পাশে থাকা ছেলেটাকে ইশারা করে বললো চিরকুট দেওয়া ছেলেটি। আদ্র নিশাদের সামনে দাঁড়িয়ে বললো,
–“যাকে চিরকুট দিয়েছো তার পুরো ডিটেইলস জেনে তারপর দিয়েছো তো?”

–“হ্যাঁ অবশ্যই।”

আদ্র এবারে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
–“তাহলে তার ডিটেইলসে কি এটা ছিলো না যে সে এনগেজড? তার ফিয়্যান্সে আছে?”

–“স্যরি? আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে। আমি পুরো ডিটেইলস জেনে তারপরই এগিয়েছি তার দিকে। সে এনগেজড নয়।”

–“তাহলে এখন জেনে রাখো, শি ইজ মাই ফিয়্যান্সে। নেক্সট টাইম যাতে কেউ ওকে চিরকুট লাভ লেটার প্রপোজাল যাই হোক না কেন কিচ্ছু যাতে দেওয়ার দুঃসাহস না করে।”

আদ্র আমাকে নিজের পাশে নিয়ে একহাতে জড়িয়ে কথাগুলো বললো সবাইকে উদ্দেশ্য করে৷ এদিকে আমি আর হিমাদ্রি হা করে তাকিয়ে দেখছি এখানে ঠিক কি হচ্ছে। নিশাদ এবার ওর পাশে থাকা ছেলেটাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
–“রাফাত চিরকুটটা কারে দিছিস?”

–“কেন তুই যাকে দিতে বলছিস তারেই তো দিছি।”

–“হ্যাঁ সেটাই তো জানতে চাচ্ছি। কারে দিছিস?”

–“হিমাদ্রি ভাবীকে।”

হিমাদ্রির নাম বললেও রাফাত আমাকে ইশারা করলো। রাফাতের কথায় আমার আর হিমাদ্রির চোখ চড়কগাছ। নিশাদ চোখ রাঙিয়ে তাকালো রাফাতের দিকে, দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
–“খোলা চুল আর ব্লু ড্রেস বলেছিলাম তোকে আমি।”

রাফাত দাঁত দিয়ে জিহ্বা কেটে বললো,
–“ইশ্! স্যরি দোস্ত৷ আমি ব্ল্যাক ড্রেস ভেবেছিলাম।”

নিশাদকে উদ্দেশ্য করে রাফাত এই কথাটা বলে এবার সাহস করে আদ্রর সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। কাঁপা কাঁপা হাতে আদ্রর হাত থেকে চিরকুটটা নিয়ে মৃদু হেসে বললো,
–“স্যরি ভাইয়া, এটা এই আপুর না। হিমাদ্রি ভাবীকে দিতে গিয়ে ভুল করে এই আপুকে দিয়ে ফেলেছি।”

–“ইট’স ওকে। স্যরি, আমারও উচিত ছিলো আগে চিরকুটটা খুলে তারপর রিয়্যাক্ট করার।”

বিনিময়ে রাফাত মৃদু হেসে হিমাদ্রির সামনে গিয়ে ওর হাতে চিরকুট দিয়ে বললো,
–“এটা আপনার। নিশাদ দিয়েছে।”

কথাটা বলে রাফাত নামের ছেলেটা সঙ্গে সঙ্গেই নিশাদকে টেনে নিয়ে ওখান থেকে একপ্রকার চলে গেলো। আদ্রর যা হম্বিতম্বি দেখেছে তারপর আর এখানে দাঁড়িয়ে থাকার সাহস করেনি। আমি আর হিমাদ্রি একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করলাম খানিক সময়। আদ্রও অল্পতে রেগে যায়। চিরকুটটা খুলে দেখলে আর এরকমটা হতো না। ইশ্! কি বিশ্রী একটা ব্যাপার হলো। সবাই ভাববে ফিয়্যান্সে মনে হয় উনার একাই আছে। হুহ! হিমাদ্রির হাত থেকে চিরকুটটা কেড়ে নিয়ে আমার ব্যাগে রেখে দিলাম। উদ্দেশ্য এখানে কি লিখা আছে প্রথমে আমি পড়বো। হিমাদ্রি চোখ রাঙিয়ে তাকালো। কিছু বলার আগেই আদ্র বললো,
–“চলো।”

–“কোথায়?”

–“আমার সাথে।”

–“আপনার সাথে কেন যাবো?”

আমার এরকম নন্সিক্যালি কথাবার্তায় আদ্র এবার বিরক্ত হলো। আমার দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে বললো,
–“চুপচাপ গাড়িতে গিয়ে বসবে? নয়তো আমি অন্য পন্থা___”

–“য্ যাচ্ছি তো৷ অন্যকোনো পন্থা আপনাকে ব্যাবহার করতে হবে না।”

একদমে কথাগুলো বলে হিমাদ্রির হাত ধরে দ্রুত পায়ে ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে পড়লাম। আমার কান্ডে আদ্র মৃদু হেসে হাঁটা শুরু করলো। আমি আর হিমাদ্রি দুজনেই গাড়ির ব্যাক সিটে বসেছি। আদ্র ড্রাইভিং সিটে বসে লুকিং গ্লাসে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
–“আমার পাশের সিট-টা কি অন্যকোনো মেয়ের জন্য ফাঁকা রেখেছো? যে-কেউ কিন্তু বুকড করে নিতে পারে। তখন তোমারই লস, আমার কি? আমি নতুন একজনকে পাবো।”

আদ্র কথাটা বললে চোখ রাঙানি দিয়ে তাকালাম আমি। গাড়ির ডোর না খুলেই দ্রুত পেছন থেকে সামনে এসে বসলাম। আমার এমন কান্ডে হিমাদ্রি খানিকটা শব্দ করেই হেসে দিলো। আর এদিকে আদ্র ঠোঁট কামড়ে ধরে নিঃশব্দে হাসলো। আমার সিটবেল্ট লাগিয়ে দিয়ে গাড়ি চালানোতে মনোনিবেশ করলো৷ ফুপ্পির বাসার সামনে এসে হিমাদ্রিকে নামিয়ে দিয়ে গাড়ি ঘোরালো আদ্র৷ গাড়িটা এবার অন্য রাস্তা ধরে চলতে লাগলো। আমি অবাক হয়ে প্রশ্ন করলাম,
–“এটা তো আমাদের বাসার রাস্তা না। এদিকে কোথায় যাচ্ছি আমরা?”

–“গেলেই দেখতে পাবে।”

–“বাসায় যাবো আমি৷ আম্মু আব্বু চিন্তা করবে।”

–“কেউ কিচ্ছু চিন্তা করবে না। আংকেল আন্টির থেকে পারমিশন নিয়েছি আমি।”

আশ্চর্য তো। উনি আমাকে কিচ্ছুটি না জানিয়ে একা একাই সব করে ফেলছেন৷ যখন তখন আমাকে নিয়ে বের হচ্ছেন। এতে সবাই ভাববে টা কি? বিয়ের আগেই যদি ছেলে এরকম করে তাহলে বিয়ের পর তো আমাকে একা একরাতের জন্যও কোথাও গিয়ে থাকতে দিবে না।
–“একদম ঠিক ভেবেছো বউ। একবার তোমাকে সম্পূর্ণ রুপে আমার করে নিয়ে যাই৷ তারপর একা একরাতের জন্যও কোথাও যেতে দিবো না আমি।”

আমার দিকে ঝুকে আদ্রর এমন ফিসফিসানো কথায় চমকে উঠলাম আমি। উনার এই কথাটুকু আমাকে একেবারে ভিতর থেকে কাঁপিয়ে দিলো। বলছে কি লোকটা? সত্যিই কি এমন করবে? আমি কথা ঘুরানোর জন্য বললাম,
–“আচ্ছা আমরা কোথায় যাচ্ছি সেটা বললেন না তো?”

আদ্র এবার আরো কিছুটা আমার দিকে ঝুকে বললো,
–“আমার হবু বউয়ের হবু শশুড় বাড়িতে।”

আদ্রর কথা বুঝতে আমার কয়েক সেকেন্ড সময় লাগলো। কথাটা বুঝতে পেরে পা থেকে মাথা অব্দি লজ্জায় সিরসির করে উঠলো। কি বলছে এসব লোকটা? উনার সাথে এখন উনাদের বাসায় যাবো আমি? আমি বার কয়েক না করলাম। কিন্তু আমার কোনো কথা আদ্র শুনলেন না। মিনিট দুয়েকের মাঝেই গেট দিয়ে ঢুকে একটা বাড়ির সামনে গাড়ি থামালো। গাড়ি থেকে নেমে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম বাড়িটির দিকে৷ সাদা রঙের বিশাল বড় দোতালা বাড়িটি বাইরে থেকেই এত সৌন্দর্য। ভিতরে না জানি আরো কত বেশি সুন্দর হবে। আদ্র কলিংবেল বাজাতেই মাইশার বয়সী একটা মেয়ে দরজা খুলে দিলো। আদ্রর পাশে আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মেয়েটির সারামুখে খুশির জোয়ার দেখা গেলো। মেয়ে দ্রুত কদমে এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরে বললো,
–“ভাবী, তুমি এসছো? আ’ম রিয়েলি সারপ্রাইজড৷”

আদ্র মেয়েটার মাথায় গাট্টা মেরে বললো,
–“এখানেই দাঁড় করিয়ে রাখবি? নাকি ভিতরেও যেতে দিবি?”

মেয়েটা হাসার চেষ্টা করে বললো,
–“উফফস স্যরি, আমি না একদমই ভুলে গেছিলাম যে তোমায় বাইরে দাঁড় করিয়ে রেখছি। প্লিজ ভিতরে আসো।”

এই বলে মেয়েটা ‘খালামণি’ বলে ডাকতে লাগলেন। সম্ভবত আদ্রর আম্মু মানে আমার হবু শাশুড়ী মাকে ডাকছে। দু/তিনবার ডেকেই মেয়েটা দাতঁ দিয়ে জিহ্বা কেটে বললো,
–“ইশ্! দেখছো আমি একদম ভুলেই গেছিলাম যে খালামণি বাসায় নেই। মাইশার সাথে শপিংয়ে বেরিয়েছে।”

–“তোর কবেই সবকিছু মনে ছিলো? বল তো আমায়।”

আদ্রর কথায় কোনো জবাব না দিয়ে মেয়েটা ভেংচি কেটে কিচেনে চলে গেলো। আমি এখনো বুঝতে পারছি না মেয়েটা আসলে কে? আদ্র আমায় হাত ধরে টেনে নিয়ে সোফায় বসিয়ে দিয়ে বললো,
–“ও তিন্নি। আম্মুর ছোট বেলার বান্ধবীর মেয়ে। ওর আম্মু মারা যাওয়ার পর ওর বাবা আবার বিয়ে করেছে। সে সংসারে তিন্নির জায়গা হয়নি। তাই আম্মু সেই আট বছর বয়সে ওকে গ্রাম থেকে এনে মেয়ের মতোই মানুষ করেছে। সেই থেকে ও এই বাড়িতেই আছে।”

–“এনগেজমেন্টের দিন ও যায়নি কেন?”

–“বিকেলে ওর কোচিং ছিলো তাই যেতে পারেনি। আমি অবশ্য বলেছিলাম পরে দেখা করাবো। কিন্তু সময়ের অভাবে সেটা হয়ে উঠেনি। তাই আজ বাসায় নিয়ে এলাম।”

তারপর আর কথা হলো না আমাদের মাঝে। তিন্নি একগ্লাস ঠান্ডা জুস এনে আমার সামনে দিয়ে বললো,
–“আগে গলা ভিজিয়ে নাও, তারপর জমিয়ে আড্ডা হবে। ততক্ষণে খালামণি আর মাইশাও চলে আসবে।”

আমি কিছু বলার আগেই আদ্র জুসের গ্লাস আমার হাতে দিয়ে বললো,
–“অর্ধেকটা এক্ষুনি শেষ করো, ফাস্ট।”

আমি খাবো না বলার আগে এবারও আদ্র বললো,
–“নো সাউন্ড। পুরোটা খেতে হবে না। জাস্ট অর্ধেক গ্লাস খাও তাহলেই হবে।”

–“অর্ধেক খাবে কেন? পুরোটা খাবে।”

–“তোর ভাবী, তোর আর মাইশার মতো এতো খাই খাই করে না। ও অর্ধেকটাই খাবে, পুরোটা খেতে চাইলেও আমি খেতে দিবো না।”

এদের কান্ড বুঝতে পারছি না আমি। কি শুরু করলো এরা? আদ্র আমাকে ইশারা করলো খাওয়ার জন্য। আমি আদ্রর কথা মতোই অর্ধেকটা খেয়ে রেখে দিলাম। আদ্র তিন্নির পিছন দিকে ইশারা করে বললো,
–“তিন্নি দেখ তো ওখানে কি যেন একটা দেখা যাচ্ছে।”

কি দেখা যাচ্ছে সেটা দেখার জন্য তিন্নি পিছন ফিরতেই আদ্র জুসের গ্লাস হাতে নিলো। আমি যেখান দিয়ে খেয়েছি ঠিক সেইখানটাতে ঠোঁট লাগিয়ে আদ্র ঢকঢক করে বাকী অর্ধেক জুস শেষ করে ফেললো। আমি শুধু অবাক চোখে সবটা দেখলাম। এই লোকটা এমন কেন? দেখা হওয়ার পর প্রতিবারই কিছু না কিছু করে আমার হার্টবিট মিস করে দেয়৷ তিন্নি পিছনে কিছু দেখতে না পেয়ে আদ্রর দিকে তাকিয়ে বললো,
–“কোথায় কি? কিছুই তো নেই ওখানে।”

–“ওহ! নেই না? আমি মেবি ভুল দেখেছি তাহলে।”

আদ্র কথাটা বলে আয়েশ করে বসলো সোফায়৷ তিন্নির নজর জুসের গ্লাসের দিকে পড়তেই বললো,
–“বাকী অর্ধেক গ্লাস জুস গেলো কোথায়? ভাবী না অর্ধেকটা খেয়ে রেখে দিছিলো?”

–“ছিঃ তিন্নি, এইটা কেমন কথা? খাওয়ার জিনিস খেতে দিছিস খেয়ে ফেলছে এখন যদি তুই এমন করিস তাহলে কেমন বিশ্রী দেখায় না ব্যাপারটা না?”

আদ্রর কথায় আমি ভ্রু কুঁচকে তাকালাম। কি অবলিলায় বলে ফেললো খাওয়ার জিনিস খেয়ে ফেলছে। বলি পুরোটা কি আমি খেয়েছি নাকি? তিন্নি মেয়েটা এখন কি ভাববে আমায়? নিশ্চয়ই মনে মনে ভাবছে আদ্র আমাকে অর্ধেকটা খেতে বলার পরও আমি পুরোটা খেয়ে ফেলেছি। ইশ্! লজ্জায় আমার কান কাটা যাচ্ছে এবার। তিন্নি কোমড়ে দু হাত গুজে রাগান্বিত ভাবে বলে,
–“যা বুঝাবা তাই বুঝবো তাই না? তারমানে তখন আমাকে পিছনে ঘুরতে বলে তুমিই খেয়েছো বাকিটা।”

–“খেয়েছি তাতে তোর কি? নিজের বউয়ের রাখা জুসটা খেয়েছি অন্যেরটাতো না।

–“তো এতই যখন বউয়ের ঠোঁট মুখের ছোঁয়া পাওয়ার ইচ্ছে তাহলে এখনো বউ দূরে রাখছো কেন? নিজের কাছে নিয়ে আসছো না কেন?”

–“সেখানেই তো কষ্ট বুঝলি তিন্নি? আমার শশুড়টাও আছে, তিনবছর সময় নিলো মেয়েকে আমার হাতে তুলে দেওয়ার জন্য রাজি হতে৷ এখন আবার এতগুলো বছর সময় লাগবে তার মেয়েকে আমার কাছে পাঠাতে। আমার কষ্টটা কেউ বুঝে না রে তিন্নি, কেউ না। না তোর ভাবী, আর না আমার শশুড় মশাই।”

এদের দুজনের এমন কথাবার্তা শুনে লজ্জায় আমার মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে৷ কি একটা বিশ্রী ব্যাপার। এরা এতো লাগামহীন কথা কিভাবে বলে? আমি যে এখানে লজ্জা পাচ্ছি সেটা কি বুঝতে পারছে না ওরা? আদ্র আমার দিকে তাকিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরে হাসলো, তারপর আমার হাত ধরে বললো,
–“চলো।”

–“কো্ কোথায়?”

আদ্র আমার কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বললো,
–“উপরে, আমাদের রুমে।”

কেঁপে উঠলাম খানিকটা। কি বলছে লোকটা? মাথা খারাপ নাকি? আদ্র বাঁকা হেসে আমার হাত ধরে টেনে সিড়ির দিকে গেলো। আমি থেমে গেলাম। আমতা আমতা করে বললাম,
–“য্ যাবো না আমি৷ এখানেই তিন্নির সাথে থাকবো।”

আমার কথায় তিন্নি এবার শব্দ করে হেসে দিলো, তারপর বললো,
–“ভাবী নিশ্চেন্তে যেতে পারো তুমি। আমার ভাই এতটাও খারাপ না।”

আমি অসহায় চোখে তাকালাম তিন্নির দিকে। তিন্নি তখনো হাসছে। আর এদিকে আমার ভিতরটা হাঁসফাঁস করছে৷ আদ্র ঠোঁট কামড়ে ধরলো। তারপর তিন্নিকে বললো,
–“মাইশা আসার সাথে সাথেই বলিস না রুহি এখানে আছে৷ তাহলে আমার বউয়ের সাথে আমি একটুও সময় কাটাতে পারবো না। আম্মু আর ও আসলে ম্যাসেজ দিস আমায়।”

তিন্নি হেসে মাথা নাড়ালো। আদ্র আমার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসলো। তারপর আমার হাত ধরেই দোতলায় আদ্রর রুমে নিয়ে গেলো।

চলবে~

#অ্যাডিক্টেড_টু_ইউ
#অরনিশা_সাথী
#পর্ব_০৭

আমি বিছানায় বসে বসে পা দুলাচ্ছি। আমাকে রুমে বসিয়ে রেখে আদ্র শাওয়ার নিতে গেছে। বসে থাকতে থাকতে আমি ক্লান্ত। তাই উঠে দাঁড়ালাম পুরো রুমটা ঘুরে দেখার জন্য। কয়জনের এমন সৌভাগ্য হয় বিয়ের আগেই শশুড় বাড়ি ঘুরে দেখার? রুমের প্রত্যেকটা জিনিস খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছি। রুমের দেয়ালগুলি অব্দি ধবধবে সাদা রঙ করা। সুন্দর পরিপাটি করে রুমটা সাজানো গোছানো। ব্যালকোনিতে গিয়ে মনপ্রান জুড়িয়ে গেলো। পুরো ব্যালকোনি জুড়ে হরেক রকমের ফুলের গাছ। ছোট বড় নানান রঙের ফুল দেখে নিমিষেই ক্লান্ত ভাবটা চলে গেলো। রুম আর ব্যালকোনির মাঝের দেয়ালটা স্বচ্ছ কাচের। ব্যালকোনিতে একটা ডিভানও রাখা আছে। মিনিট খানেক ব্যালকোনিতে কাটিয়ে আবার রুমে চলে এলাম। হুট করেই আলমারির পাশে একটা দরজার মতো কিছু একটা দেখে সেদিকে এগিয়ে গেলাম। কাছে গিয়ে ভালোভাবে নজর দিতেই দেখলাম সত্যি সতিই একটা দরজা। এটা না ওয়াশরুমের দরজা আর না ব্যালকোনির। তাহলে কিসের দরজা এটা? মনে কৌতুহল হলো বেশ। দরজার ওপাশে কি আছে? কৌতূহল দমাতে না পেরে দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকলাম। রুমের ভিতর আবার ছোট্ট একটা রুম। সারারুমে চোখ বুলাতেই আমার চক্ষু চড়কগাছ। নিজের চোখকেই যেন বিশ্বাস করতে পারছি না। পুরো রুমের দেয়াল জুড়ে আমার নানান রকমের ছবি বাঁধাই করা। প্রায় সবগুলো ছবিই আমাদের এনগেজমেন্টের আগে এবং অজান্তে তুলেছে। আর কিছু ছবি আমাদের এনগেজমেন্টের পর তুলা। কিছু কাপল ছবিও আছে। ঘুরে ফিরে দেখছি সব। লোকটা আমাকে এতটা ভালোবাসে? নিজেই নিজের দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে মারলাম। রুমের ভিতর শুধু একটা বেড এবং ছোট্ট একসেট সোফা আছে। এই রুমটা বেবি পিংক কালার করা। রুমের বেড, বেডের কভার, সোফা, সোফার কভার সবকিছুই বেবি পিংক কালারের। বেশ কিছু সময় স্তব্ধ হয়ে ওখানেই দাঁড়িয়ে রইলাম। হুশ ফিরতেই রুম থেকে বেরিয়ে এলাম। আবার চুপচাপ গিয়ে বিছানায় বসে পা দুলাচ্ছি।

কয়েক সেকেন্ড বাদেই ওয়াশরুমের দরজা খোলার শব্দ হলো। ভাগ্যিস ওখান থেকে এসে পড়েছিলাম। নয়তো উনি যদি জিজ্ঞেস করতেন আমি ওই রুমে কেন গিয়েছিলাম তখন কি উত্তর দিতাম আমি? এসব ভেবে আদ্রর দিকে তাকাতেই চক্ষু কপালে উঠে গেলো আমার। মৃদুস্বরে চিৎকার করে দুহাতে মুখ ঢেকে নিলাম। ইশ্! লোকটার কি আল্লাহ একটুও লজ্জা দেয়নি? শুধু টাওজার আর গলায় টাওয়েল পেঁচিয়েই বেরিয়ে এসছে। আমি যে এখানে আছি সেটা কি উনার মনে নেই নাকি? চোখের উপর থেকে একটা আঙুল সরিয়ে তাকালাম আদ্রর দিকে। ড্রেসিংটেবিলের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল ঝাড়লো৷ কাবার্ড থেকে টি-শার্ট বের করে গায়ে জড়াতে গিয়েও জড়ালো না। বাঁকা হেসে আমার দিকে এগিয়ে আসছে। সঙ্গে সঙ্গেই ভালোভাবে মুখ আটকে নিলাম আমি। উনি আমার সামনে এসে দাঁড়িয়েছেন। হাতের ফাঁকফোকর দিয়েই মুখে হাতে পানির ছিটা পেতে মৃদু কেঁপে উঠলাম আমি।
–“এভাবে দুহাতে মুখ ঢেকে আছো কেন?”

আমার কথার উত্তর না পেয়ে এবার ঝুঁকে গেলেন আমার দিকে। আমি আরো শক্ত ভাবে দুহাত দিয়ে চোখমুখ আটকে রেখেছি। আদ্র নরম কন্ঠে বললো,
–“কি হলো, উত্তর দিচ্ছো না যে? হাত সরাও।”

–“আ্ আপনি খালি গায়ে এসেছেন কেন? আগে টি-শার্ট গায়ে দিন তারপর হাত সরাবো।”

–“যদি টি-শার্ট গায়ে না দেই?”

–“তা্ তাহলে আমি হাতও সরাবো না।”

আদ্র এবার আমার দিকে একদম ঝুঁকে যায়৷ কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে,
–“কিছুই তো করলাম না। এখনই এতো লজ্জা পেলে বিয়ের পর তো মনে হয় আমাকে তোমার ধারের কাছেও আসতে দিবে না।”

–“স্ সরে কথা বলুন না প্লিজ।”

–“বুঝেছি বিয়ের পর আমার কপাল পুড়বে৷ আর সবার মতো রোমান্স করার সৌভাগ্য আমার হবে না৷ বউয়ের লজ্জা ভাঙাতে ভাঙাতেই কত সময় পার হয় আল্লাহ জানেন।”

–“উফস, চুপ করুন না।”

আদ্র এবারে দুহাত দিয়ে আমার হাত ধরে মুখের উপর থেকে সরিয়ে দিলো। আমি চোখ খিঁচে বন্ধ করে রইলাম। আদ্র আমার মুখের উপর ‘ফুঁ’ দিতেই আমার সারা শরীর মন জুড়ে শীতল হাওয়া বয়ে গেলো। আদ্র নেশালো কন্ঠে বললো,
–“চোখ খুলো।”

–“উঁহু।”

–“আচ্ছা আমি তাহলে অন্য___”

–“এই একদম না।”

কথাটা বলেই চট করে চোখ খুলে ফেললাম। লাজুক চোখে তাকালাম একবার উনার দিকে। সাথে সাথে আবার চোখও ফিরিয়ে নিলাম। উনি বাঁকা হেসে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। উনি আমার মুখটা নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিলেন। চোখে চোখ পড়লো দুজনের। কেমন ভাবে যেন লোকটা দেখছে আমাকে। আমি দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলাম। উনি হালকা হেসে বললেন,
–“এত লজ্জা পেলে কিন্তু আমি কন্ট্রোললেস হয়ে যাবো বউ। তোমার লজ্জারাঙা মুখের উপর আমার আরো বেশি এট্রাকশন কাজ করে।”

আমি মৃদু কাঁপছিলাম উনার কথা শুনে। তা আদ্র বুঝতে পেরে আমাকে ছেড়ে দূরে সরে দাঁড়ালেন। তারপর টি-শার্ট গায়ে জড়িয়ে আমার পাশ ঘেঁষে বসলেন। আমাকে একহাতে জড়িয়ে নিয়ে বললেন,
–“লজ্জা পাওয়ার মতো কিছু করিনি কিন্তু৷ জাস্ট খালি গায়ে ছিলাম। আচ্ছা বিয়ের পর তুমি কি করবে? আমি কিন্তু টি-শার্ট গায়ে জড়িয়ে ঘুমাবো না। অলওয়েজ তোমাকে আমি আমার খালি বুকে নিয়ে ঘুমাবো। শুধু ঘুমাবোই না আরো____”

–“প্লিজ স্টপ। আমি আর নিতে পারছি না এসব।”

উনার এরকম অসভ্য মার্কা কথায় এদিকে লজ্জায় আমার হাটু থরথর করে কাঁপছে। উনার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে দৌড়ে দরজার কাছে চলে গেলাম। উনি এসে আমাকে ধরার আগেই আমি দরজা খুলতেই দেখলাম মাইশা বুকে দু হাত গুজে দাঁড়িয়ে আছে। মাইশাকে দেখে আমি শুকনো হাসির চেষ্টা করলাম। মাইশা এক ভ্রু নাচিয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করলো,
–“কি ব্যাপার? বিয়ের আগেই বাসর-টাসর সেরে ফেললে নাকি?”

–“ম্ মানে?”

–“মানে বুঝতে পারছো না? এতটা সময় দুজনে একই ঘরে দরজা আটকে কি করছিলে? নিশ্চয়ই এমনি এমনি আর বসে থাকোনি। অনেক কিছুই হয়েছে রাইট?”

–“তুমি ভুল ভাবছো মাইশু। এরকম কিছু না।”

–“হ্যাঁ হ্যাঁ জানি সব। ওরকম ধরা পড়লে সবাই___”

মাইশা আর কিছু বলার আগেই আদ্র ওর মাথায় হালকা ভাবে থাপ্পড় মেরে বললো,
–“এই বয়সেই খুব পেঁকে গেছিস তাই না? ওয়েট তোকে তাড়ানোর বন্দবস্ত করছি আমি।”

–“উফস ভাইয়া! মারলে কেন? আমি তো এমনি ভাবীর সাথে একটু মজা নিচ্ছিলাম। তুমি এসে সবটা ঘেটে দিলে। ধ্যাত!”

মাইশার কথায় এতক্ষনে আমি হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। মেয়েটা যেরকম সিরিয়াস মুডে কথা বলছিলো আমি তো একদম ভয় পেয়ে গেছিলাম। মাইশা আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,
–“আ’ম জাস্ট কিডিং ভাবী। চলো নিজে যাই। আম্মু ওয়েট করছে তোমার জন্য।”

আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই মাইশা আমাকে টেনে নিয়ে গেলো। পেছন থেকে আদ্র মৃদু স্বরে চিৎকার করে বললো,
–“আরেহ আমার বউকে তুই এভাবে টেনে নিয়ে যাচ্ছিস কেন? এই তোরে কে বলছে রে রুহি এসছে বাসায়? তার চাকরি নট করে দিবো আমি।”

মাইশা যেতে যেতে বললো,
–“সে তুমি যা করার করো। কিন্তু আমি ভাবীকে ছাড়ছি না। ভাবী এখন আমার সাথেই থাকবে।”

–“হ্যাঁ সে বাসর ঘরে এসেও বলিস ভাবী এখন আমার সাথে ঘুমাবে।”

–“নট ব্যাড ভাইয়া। এইটা কাজে লাগানো যায়।”

মাইশার এই কথার বিপরীতে আদ্র কি বললো তা আর শুনতে পেলাম না। নিচে এসে সোফায় আন্টির পাশে বসলাম। আন্টি আমাকে বুকে জড়িয়ে নিলেন। তারপর গালে হাত রেখে ভালোমন্দ জিজ্ঞেস করলেন। তারপর বললেন,
–“আজকে যে তুমি বাসায় আসবে সেটা আমাকে আগে বলোনি কেন? তাহলে আজ কোথাও বের হতাম না আমি।”

–“আমিও জানতাম না। হঠাৎ করেই উনি নিয়ে আসলেন।”

–“ভালোই করেছে। অনেকদিন তোমায় দেখি না। এখন থেকে মাঝে মাঝে আসবে আদ্রর সাথে।”

আমি কিছু না বলে চুপ করে থাকলাম। আদ্র নিচে নেমে আন্টিকে লাঞ্চ সার্ভ করতে বললেন। আন্টি আমার হাত ধরেই ডাইনিংয়ে নিয়ে বসালো। টেবিলে আগে থেকেই খাবার সার্ভ করা ছিলো। আমি আর মাইশা পাশাপাশি চেয়ারে বসেছিলাম। আদ্র আমার অপজিটে বসেছে৷ ওর পাশেই তিন্নি বসা। আন্টিও বসেছেন সাথে। আন্টি নিজের পাতে থেকে মাছের কাটা বেছে আমাকে দিচ্ছেন। কেমন যেন একটা আম্মু আম্মু ফিলিংস আসলো আন্টির আশেপাশে থেকে। আম্মুর মতোই যত্ন করেন আমাকে। হঠাৎই বিষম খেলাম আমি। টেবিলের নিচে আদ্র ওর পা দিয়ে আমার পায়ে স্লাইড করছে। যা ভীষণ ভাবে অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে ফেলেছে আমায়৷ আদ্রর দু পায়ের মাঝে থেকে আমার পা ছাড়িয়েও নিতে পারছি না। চোখ রাঙিয়ে তাকালাম আদ্রর দিকে৷ কিন্তু উনি সেদিকে পাত্তা না দিয়ে চুপচাপ খাবার খাচ্ছেন। যেন কিছুই হয়নি। যতটা সময় আদ্র খাবার ছেড়ে না উঠেছে ততটা সময় আমাকে ওভাবেই বসে থাকতে হয়েছে। আদ্র টেবিল ছেড়ে উঠতেই আমি হাঁফ ছাড়লাম। লোকটা আসলেই পাগল।

লাঞ্চের পর আন্টির সাথে কিছুক্ষণ গল্প করে মাইশার রুমে চলে এসেছিলাম। সেখানেই আমি তিন্নি মাইশা তিনজনে প্রচুর আড্ডা দিয়েছি। আড্ডার একপর্যায়ে ঘড়ির দিকে চোখ যেতেই মাথায় হাত আমার৷ সাড়ে চারটা পার হয়ে গেছে। আমি মাইশাকে বললাম,
–“মাইশু তোমার ভাইয়াকে একটু বলো না আমাকে আমায় বাসায় দিয়ে আসতে।”

–“ভাবী, আমি আম্মুকে বলি আংকেল আন্টিকে বলে দিতে তুমি আজ থাকছো এই বাসায়।”

–“এই একদম না মাইশু। এখন এখানে থাকাটা দৃষ্টিকটু হয়ে যাবে৷ আমি চাই না আমাদের নিয়ে কেউ সমালোচনা করুক। যখন এসে থাকার সময় হবে তখন তোমরা যেতে বললেও যাবো না আমি”

আমার কথায় তিন্নি আর মাইশা দুজনে দুপাশ থেকে জড়িয়ে ধরলো। তিন্নি আদরমাখা কন্ঠে বললো,
–“একবার শুধু আসো এ বাড়িতে। তারপর তোমাকে আর কোত্থাও যেতে দিবো না আমরা। পারলে তো আজ থেকেই রেখে দেই আমাদের কাছে।”

তিন্নির সাথে মাইশা সহমত প্রকাশ করলো। আমি মৃদু হাসলাম ওদের কথায়। এই বাড়ির মানুষগুলো সত্যিই খিব অসাধারণ। কত সহজেই সবাইকে আপন করে নেয়। মাইশা দাঁত কেলিয়ে হেসে বললো,
–“তুমি ভাইয়ার কাছে যাও। বেচারা আমাদের জন্য তোমার সাথে একটু সময় কাটাতে পারেনি। দেখো গিয়ে তোমার হবু বর আবার গাল ফুলিয়ে বসে আছে কিনা? ভাই আমার তোমাকে আবার চোখে হারায় কিনা।”

মাইশার কথায় তিন্নি শব্দ করে হেসে দিলো। আর আমি বেচারি এদিকে লজ্জায় মরছি৷ ছোট ছোট কদম ফেলে বেরিয়ে এলাম রুম থেকে। আদ্রর দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে ভাবছি ভিতরে যাবো কি যাবো না? ভাবনা চিন্তা করে ঠিক করলাম আন্টির রুমে যাই৷ যেই ভাবা সেই কাজ৷ আন্টির রুমে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই ভেতর থেকে রাশভারী কন্ঠে আদ্র বললো,
–“এক পা ওদিকে নড়াবে না বলে দিলাম। চুপচাপ আমার কাছে এসো।”

আশ্চর্য! লোকটা জানলো কিভাবে আমি এখানে আছি? বুঝলো কি করে আমি উনার রুমে না গিয়ে আন্টির কাছে যাচ্ছিলাম? আমার এসব ভাবনার মাঝে উনি আবারো বললেন,
–“অনেকটা সময় অপেক্ষা করছি তোমার আসার জন্য। আসছো না কেন এখনো?”

ধীর পায়ে আদ্রর রুমে প্রবেশ করলাম৷ আদ্র বিছানার হেডবোর্ডের সাথে আধশোয়া হয়ে চোখের উপর হাত উলটো করে দিয়ে রেখেছে৷ আদ্র চোখ বন্ধ অবস্থাতেই আমাকে উনার কাছে যেতে বললেন। অক্ষরে অক্ষরে উনার সবটা কথা মেনে চলছি আমি৷ উনার পাশে গিয়ে দাঁড়াতেই উনি আমার হাত টেনে ধরে উনার পাশে বসালেন। পেছন থেকে আমাকে জড়িয়ে ধরে আমার ঘাড়ে উনার থুতনি রেখে বললেন,
–“তুমি আমার কাছে আসতে চাও না কেন? ভয় পাও আমাকে?”

আমি মাথা নাড়িয়ে না জানালাম। উনি বললেন,
–“তাহলে আসতে চাও না কেন?”

আমি এবার কিছুটা সাহস জুগিয়ে আমতা আমতা করে বললাম,
–“আপনার কাছে এলেই আপনি শুধু অসভ্য-মার্কা কথা বলেন। তাই আসিনা।”

–“এখন অসভ্য-মার্কা কথা বলি তাই আমার বউ কাছে আসে না। আর যখন অসভ্য-মার্কা কাজ করে দেখাবো তখন তো মনে হয় আমার বউ আমার সাথে এক ঘরেও থাকবেনা লজ্জায়।”

আদ্রর এমন নেশালো আর ফিসফিসানো কন্ঠে শিরদাঁড়া ঠান্ডা হয়ে গেলো আমার৷ লোকটা এমন কেন? এরকম অশ্লীল কথা কিভাবে বলছেন আমাকে? এই মূহুর্তেই উনাকে থামানো দরকার। নয়তো আরো বেশি বেশি বলবেন এসব৷ তাই কথা ঘোরানোর জন্য বললাম,
–“বাসায় যাবো আমি।”

–“এক্ষুনি?”

–“হ্যাঁ।”

–“যেতেই হবে? না গেলে হয় না আজ?”

–“উঁহু, বাসায় যেতে হবে৷ এখানে থাকা পসিবল না। আর পসিবল হলেও থাকতাম না আমি।”

–“ওকে ম্যাডাম, যা বলবেন তাই হবে।”

এই বলে আদ্র হতে রেডি চলে গেলেন। আমি বিছানার এক কোনে বসে আছি। মানুষটাকে অন্যসবার সামনে রাগী মুডি দেখা গেলেও আমার কাছে একদম অন্যরকম হয়ে যান। একদম ভিন্ন ভাবে প্রকাশ করে নিজেকে আমার কাছে।

চলবে~