অ্যাডিক্টেড টু ইউ পর্ব-৮+৯

0
388

#অ্যাডিক্টেড_টু_ইউ
#অরনিশা_সাথী
#পর্ব_০৮

এর মাঝে আরো কয়েকটা দিন কেটে যায়৷ দিনকাল ভালোই কাটছে৷ নিশাদ নামের ছেলেটা এখনো হিমাদ্রির পেছনে পড়ে আছে৷ হিমাদ্রির ভাবসাব দেখেও তেমন কিছু বোঝার উপায় নেই। তবে আমার কেন জানিনা মনে হয় হিমাদ্রিও ছেলেটাকে পছন্দ করতে শুরু করেছে৷ মাঝেমধ্যে নিশাদের কথা শুনলে হিমাদ্রির গালদুটো লজ্জায় লাল রঙা হয়ে যায়৷ নিশাদ মাঝে মাঝে আমাকে আর ফাইজাকে বলে হিমাদ্রির সাথে সম্পর্কটা করিয়ে দিতে। কিন্তু সেদিকে আমাদের কোনো হেলদোল নেই৷ জোর করে তো সম্পর্ক জুড়ে দেওয়া যায় না। আর দিলেও সেটা বেশি দিন টিকবে না৷ তাই হিমাদ্রির যদি মনে হয় নিশাদের সাথে সম্পর্কে জড়ানোর তবেই সম্পর্ক হবে। আমি, ফাইজা সম্পর্ক করার জন্য বা ভাঙার জন্য কোনোপ্রকার কথাই বলতে চাই না। তবে আমার আর ফাইজার সেন্স অফ হিউমার বলছে নিশাদ আর হিমাদ্রির সম্পর্কটা খুব শীঘ্রই হতে চলেছে।

সন্ধ্যাবেলা ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে কানে ইয়ারফোন গুজে ভিডিও দেখছিলাম। পাশেই আপি বসে ল্যাপটপে কিছু একটা করছিলো। পারিবারিক ভাবে আপির বিয়ের কথাবার্তা এগোচ্ছে। আপির বিয়ের প্রসঙ্গ উঠার পর থেকেই আপি কেমন যেন একটা মনমরা হয়ে আছে। আব্বু পেপার পড়ছে আর আম্মু কিচেনে চা-নাস্তা বানাচ্ছে৷ কলিংবেলের শব্দে সবাই উৎসুক দৃষ্টিতে দরজার দিকে তাকালাম। আম্মু আমাকে বললো দরজা খুলে দিতে। ফোনটা সোফায় রেখে দরজা খুলে দিলাম। দরজার ওপাশে একজন ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। বয়স ২৭/২৮ হবে৷ দেখতে লম্বা চওড়া। শ্যামবর্ণ গায়ের রঙ। মুখে খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি। চোখমুখ জুড়ে অস্থিরতা বিরাজমান। ছেলেটাকে দেখে ভ্রু কুঁচকে এলো আমার৷ কে ইনি? আগে তো কখনো দেখেছি বলে মনে হচ্ছে না৷ ছেলেটা বাসার ভিতরে উঁকিঝুঁকি মারছে৷ আমি শক্ত কন্ঠে বললাম,
–“কে আপনি? কাকে চাই?”

ছেলেটা এবার আমার দিকে পূর্ণদৃষ্টিতে তাকালো। ছেলেটার এমন সরাসরি তাকানোতে কিছুটা হকচকিয়ে গেলাম আমি। ভাসা ভাসা চোখ দুটোর গভীরতায় যে কেউ ডুবে যাবে। ছেলেটা আমার দিকে তাকিয়েই বললো,
–“আমি মুগ্ধ, নীলাদ্রি তো এই বাসায়ই থাকে রাইট? ও আছে ভিতরে?”

–“হ্যাঁ কিন্তু আপনাকে ঠিক চিনতে__”

ছেলেটা আমাকে পুরো কথা বলতে না দিয়েই আমাকে সরিয়ে ভিতরের দিকে চলে গেলো৷ ছেলেটার এহেন কাজে হতভম্ব হয়ে গেলাম আমি৷ আশ্চর্য! চেনা নাই জানা নাই এভাবে হুটহাট ভিতরে ঢুকে গেলো। আমি ছেলেটার পিছু আসতে আসতে বললাম,
–“আরে আশ্চর্য মানুষ তো আপনি মশাই। এভাবে বাড়ির ভিতর ঢুকে___”

আর পুরো কথা বলতে পারলাম না৷ সামনে তাকিয়ে চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম আমার৷ মুগ্ধ নামের ছেলেটা সোজা গিয়ে আপিকে জড়িয়ে ধরেছে৷ আমি আব্বু আম্মু সকলেই হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে দেখছি সবটা। আপির চোখমুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে আপিও বেশ অবাক হয়েছে এরকম করাতে৷ আমার এত স্ট্রিক্ট আব্বুও যেন নির্বাক হয়ে গেছেন। কোনো কথা বের হচ্ছে না মুখ থেকে। আমি ধুপধাপ পা ফেলে একদম আপি আর ছেলেটার কাছে গিয়ে ঝাঁজালো কন্ঠে বললাম,
–“আরেহ আপনি আমার আপিকে এভাবে জড়িয়ে ধরেছেন কেন? ছাড়ুন বলছি। মিনিমাম ম্যানার্স টাও কি নেই আপনার? এভাবে সবার সামনে হুটহাট___ছাড়ুন বলছি।”

ছেলেটা তবুও ছাড়ছে না আপিকে। ওদিকে আপি ছাড়া পাওয়ার জন্য মোচড়ামুচড়ি করছে। আব্বু রাশভারি কন্ঠে বললেন,
–“নীলাদ্রি? এখানে কি হচ্ছে?”

আব্বুর কথায় আপি মৃদু চমকে উঠলো ভয়ে৷ ধাক্কা দিয়ে ছেলেটাকে সরিয়ে দিলো নিজের থেকে। ছেলেটার চোখে পানি দেখা যাচ্ছে স্পষ্ট৷ আপি ছেলেটার গালে চড় মেরে বললো,
–“তোমার সাহস হয় কি করে মুগ্ধ এভাবে এখানে এসে অসভ্যের মতো কাজ করার?”

মুগ্ধ আপির হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বললো,
–“সে তুমি আমাকে অসভ্য বখাটে যাই বলো না কেন, তোমাকে ছাড়ছি না আমি। তোমার অন্যকোথাও বিয়ে হতে দিবো না আমি।”

–“মানে কি এসবের? তুমি এক্ষুনি বাসা থেকে বের হবে। যাও বলছি।”

–“যাবো না আমি৷ আর যদি যাই তবে তোমাকে নিয়ে যাবো৷ নয়তো এখান থেকে কোত্থাও যাচ্ছি না আমি।”

আব্বু মুগ্ধ’র দিকে তেড়ে যেতেই আম্মু এসে আটকে দেয়। আব্বু রাগী চোখে আম্মুর দিকে তাকালে আম্মু ছেড়ে দেয় আব্বুকে। আম্মু আমতা আমতা করে বলে,
–“রাগের বসে উল্টাপাল্টা কিছু করে বসো না। আগে ছেলেটার কথা শুনো তারপর না হয় যা করার করবে।”

আব্বু দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
–“আমার বাড়ি এসে আমাদের বাড়ির মেয়েকে এভাবে জড়িয়ে ধরবে আর তুমি বলছো মাথা ঠান্ডা রাখতে?”

মুগ্ধ আব্বুর সামনে এসে মাথা নিচু করে বললো,
–“মামা আপনি আগে আমার কথাটা শুনুন প্লিজ।”

আব্বু কোনোভাবেই মুগ্ধ’র কথা শুনতে রাজী না। মুগ্ধ বার বার আব্বুকে রিকুয়েষ্ট করছে উনার কথা শোনার জন্য৷ কিন্তু আব্বু তার কথা থেকে একচুলও নড়বে না৷ শক্ত কন্ঠে বললো,
–“তোমার কোনো কথা আমি শুনবো না৷ ভালোই ভালোই বের হও আমার বাড়ি থেকে। আমার বাড়ি এবং নীলাদ্রির আশেপাশেও যেন তোমাকে না দেখি আমি।”

–“মামা প্লিজ। আমার কথাটা শুনুন আপনি।”

আব্বু মুগ্ধ’র কথা না শুনে ওর হাত ধরে টেনে দরজার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। মুগ্ধ’র হাত ছেড়ে দিয়ে বললো,
–“বের হও।”

আব্বু মুগ্ধকে বেরিয়ে যেতে বলে দরজা আটকানোর ঠিক আগ-মূহুর্তেই আদ্র এসে দাঁড়ালো। মুগ্ধকে দেখে আদ্র ক্ষানিকটা অবাক হলো। আর আদ্রকে দেখে আব্বু দরজা থেকে হাত সরিয়ে দাঁড়ালেন। আদ্র ধীর পায়ে এগিয়ে এসে আব্বুকে সালাম দিয়ে বললো,
–“এনিথিং রং আংকেল?”

–“তেমন কিছু না। তুমি ভিতরে যাও।”

আদ্র একবার মুগ্ধ’র দিকে তাকিয়ে ভিতরে এগিয়ে এলেন। আম্মু আর আপির সাথে কুশলাদি বিনিময় শেষে আমার পাশে দাঁড়িয়ে বললো,
–“কি হয়েছে বলো তো? আংকেল খুব রেগে আছে মনে হচ্ছে৷ আর ছেলেটা কে?”

আদ্রর প্রশ্নে তাকালাম উনার দিকে৷ জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে উনি আমার দিকেই তাকিয়ে আছেন। আমি একে একে সবটা আদ্রকে বললাম। সব শুনে আদ্র আব্বুর পাশে দাঁড়িয়ে বললো,
–“আংকেল ওকে একবার সবটা বলার সময় দিন। ওর কথাটা শুনতে তো সমস্যা নেই আর।”

মুগ্ধ ছেলেটাও আবার রিকুয়েষ্ট করতে শুরু করলো আব্বুকে। আব্বু আদ্রর কথা ফেলতে না পেরে মুগ্ধকে ভিতরে এসে বসতে বললেন। মুগ্ধ চুপচাপ সোফায় গিয়ে বসলো। আব্বু আর আদ্র গিয়ে মুগ্ধ’র সামনের সোফায় বসলো৷ আব্বু গম্ভীর চোখে মুগ্ধ’র দিকে তাকিয়ে আছেন। আর আদ্র সে-ও মুগ্ধকেই খুব মনোযোগ সহকারে দেখছে। আম্মু আমাকে ইশারা করতেই আমি কিচেনে গিয়ে এক গ্লাস পানি এনে মুগ্ধ’র সামনে ধরলাম। মুগ্ধ একবার আমার দিকে তাকিয়ে গ্লাসটা হাতে নিয়ে ঢকঢক করে সম্পূর্ণটা শেষ করলো। আমি পুনরায় গ্লাসটা নিয়ে কিচেনে রেখে এলাম। আব্বু ফুপ্পি আর আংকেলের জন্য ওয়েট করছে। মূলত ফুপ্পিরা এলেই মুগ্ধ নামের ছেলেটার কথা শোনা হবে। আম্মু ট্রে-তে করে চা-নাস্তা এনে দিলেন সবার সামনে। আদ্র বেশ বুঝিয়েছে আব্বুকে। হুটহাট করে রেগে না যাওয়ার জন্য৷ আব্বু এতক্ষণে নিজেকে সামলে নিয়েছে। আব্বু নিজেই মুগ্ধ’র দিকে নাস্তা এগিয়ে দিলো। মুগ্ধ এক পলক তাকালো আমাদের দিকে। আদ্র ইশারা করতেই মুগ্ধ চায়ের কাপ হাতে তুলে নিলো।

আপিকে টেনে নিয়ে রুমে চলে এলাম আমি। কারন আপির থেকে এখন সবটা শুনতে হবে আমায়। ছেলেটা কে? হুট করে এসে এমন কেন করছে? আপির সাথে কি সম্পর্ক ওর? আপিকে রুমে এনে এক নাগাড়ে সবগুলো প্রশ্ন করে ফেললাম আমি। আপি কিছুক্ষণ চুপ থেকে সবটা বললো আমাকে৷ গত আট মাস যাবত ছেলেটার সাথে আপির পরিচয়। ছেলেটা আপিকে ভীষণ ভাবে ভালোবাসলেও আপির দিক থেকে শুধু বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিলো। কাল আপির বিয়ের কথা শুনেই ছেলেটা মরিয়া হয়ে আজ বাসা অব্দি এসে পৌঁছেছে। আপির থেকে সবটা শুনে চুপচাপ বসে রইলাম আমি।

আধ ঘন্টা বাদে আপিকে ডাকা হলো ড্রয়িংরুমে। আপি ভয়ে কাঁপছে। মুগ্ধ কি বলেছে কে জানেন? আর কি কথা হলো ওখানে? আব্বুকে প্রচুর পরিমান ভয় পায় আপি। সাথে আবার ফুপ্পি আর আংকেলও আছেন। কি হবে আল্লাহ জানে। আপি ভয়ে ভয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। আপির পিছন পিছন আমিও গেলাম। আংকেল আপিকে প্রশ্ন করলেন,
–“কি সম্পর্ক তোমাদের?”

–“ব্ বন্ধুত্বের।”

–“মুগ্ধ যে বললো ও তোমাকে ভালোবাসে।”

আপি এবারে মাথা নিচু করে নিলো৷ আংকেল আবারো বললেন,
–“ও তোমাকে ভালোবাসে এটা তুমি আগে থেকে জানতে?”

আপি মাথা ঝাকালো। অর্থাৎ আপি জানতো মুগ্ধ ওকে ভালোবাসে। ফুপ্পি এবার হুংকার ছেড়ে বললো,
–“তুমি যেহেতু জানতে ছেলেটা তোমাকে ভালোবাসে। তাহলে এরপরও ওর সাথে মিশেছো কেন? তখনই দূরে সরে আসা উচিত ছিলো তোমার। তখন যদি সরে আসতে তাহলে আজ এসব কিছু হতো না।”

আপি চুপচাপ মাথা নিচু করে ফুঁপিয়ে কাঁদছে৷ আমি আপির পাশে গিয়ে আপির হাত শক্ত করে ধরলাম৷ মুগ্ধ এগিয়ে এসে আপির হাত ধরে বললো,
–“নীলাদ্রি আমি জানি তুমিও আমাকে ভালোবাসো৷ কিন্তু সবার সামনে বলতে পারছো না৷ আমি আছি তো। প্লিজ বলো না তুমিও আমাকে ভালোবাসো৷ তুমি অন্যকাউকে বিয়ে করবে না।”

আপি ধরা গলায় বললো,
–“আমি তোমাকে ভালোবাসি না মুগ্ধ।”

–“তাহলে কাঁদছো কেন?”

মুগ্ধ’র সরাসরি প্রশ্নে আপি হকচকিয়ে উঠলো। ভেজা চোখে তাকালো মুগ্ধ’র দিকে। আব্বু এবার আপিকে কাছে ডাকলেন৷ আপি কাছে যেতে আব্বু আপিকে পাশে বসিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
–“মুগ্ধকে পছন্দ তোমার?”

আপি কিছু না বলে মাথা নিচু করে নিলো। আব্বু আবারো বললো,
–“নির্ভয়ে সত্যিটা বলতে পারো। মুগ্ধকে পছন্দ তোমার?”

–“না মানে___”

–“বুঝেছি৷ আর বলতে হবে না৷ তোমার অন্য কাউকে পছন্দ কথাটা আগে জানালে আজ এমন সিনক্রিয়েট হতো না। রুমে যাও তুমি।”

আপি উঠে এসে চুপচাপ রুমে চলে গেলো। আমি আপির পিছু যেতে গিয়েও দাঁড়িয়ে পড়লাম। এখানে আর কি হয় সেটা দেখার জন্য। আব্বু মুগ্ধকে উদ্দেশ্য করে বললো,
–“সময় করে তোমার বাবা/মাকে সাথে করে নিয়ে এসো। তারপরই সব কথা হবে।”

আব্বু আর এক মূহুর্ত না দাঁড়িয়ে নিজের রুমে চলে গেলেন। মুগ্ধ ছেলেটাও প্রচুর খুশি হয়েছে। খুশিতে আপ্লূত হয়ে জানালো কালকেই উনার বাবা/মাকে সাথে করে নিয়ে আসবেন৷ তারপর সকলের থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলেন। ফুপ্পি আর আংকেল আম্মুর সাথে রুমে চলে গেলেন৷ আব্বুর সাথে কথা বলার জন্য৷

ছাদে দাঁড়িয়ে আছি আমি আর আদ্র। সকলে ড্রয়িংরুম থেকে প্রস্থান করার পরই উনি আমাকে ছাদে নিয়ে এসেছে। প্রকৃতিতে শীতের আমেজ। শহরে বাসাবাড়ির ভিতরে থাকায় তেমন একটা শীত বোঝা যায় না। তবে এখন ছাদে এসে দাঁড়ানোতে শীতের প্রকোপটা বেশ বোঝা যাচ্ছে। আমি রেলিঙের উপর হাত দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি৷ আদ্র ঠিক আমার পিছনে দাঁড়িয়ে দুপাশ দিয়ে আমার দুহাতের উপর হাত দিয়ে রেখেছে। লজ্জায় গুটিয়ে যাচ্ছি আমি৷ উনি তা বুঝতে পেরে আরো কাছ ঘেঁষে দাঁড়াচ্ছেন। শেষ অব্দি না পেরে চট করেই উনার দিকে ঘুরে দাঁড়ালাম আমি। লোকটা আশ্চর্য ভাবে আমাকে দেখছে। এভাবে দেখার কি আছে সেটাই বুঝে উঠতে পারলাম না আমি। আমি উনার বুকে দু হাত দিয়ে উনাকে ঠেলে সরানোর চেষ্টা করে বললাম,
–“সরুন দেখি৷ এমন হুটহাট করে আমার এত কাছে এসে দাঁড়াবেন না আপনি।”

–“কেন?”

–“আমি বলেছি তাই।”

–“তুমি বললেই তো আর হবে না।”

–“আ্ আমার অস্বস্তি হয় আপনি এত কাছে আসলে।”

আদ্র আমার দিকে ঝুকে গিয়ে বললো,
–“শুধু অস্বস্তি হয়? আর, আর কিছু হয় না?”

–“হ্যাঁ হয় তো।”

–“কি হয়?”

–“কেমন যেন অদ্ভুত একটা ফিলিংস হয়৷ আপনি আশেপাশে থাকলে আমার বুক ধুকপুকানিটা ক্রমশ বেড়েই চলে।”

–“আর?”

–“আর আবার কি? আরো কিছু কি হওয়ার কথা?”

–“আমার তোমাকে দেখলে কেমন কেমন লাগে বলবো?”

–“নাহ।”

–“বলি না ”

–“নাহ প্লিজ। আপনি একদম কিছু বলবেন না।”

–“কেন?”

–“কারন, আপনি এখন এই প্রসঙ্গে মুখ খুললেই উল্টাপাল্টা অসভ্য টাইপ কথা বলবেন। যা শুনে আমি ভীষণ লজ্জা পাবো।”

–“আহ, একটু বলি না। আমার এই মূহুর্তে ভীষণ রকমের ইচ্ছে করছে তোমার লজ্জায় লাল রঙা মুখটা দেখতে।”

–“আচ্ছা তাহলে আপনি থাকুন, আমি গেলাম।”

কথাটা বলে দু কদম এগোতেই পেছন থেকে হাতে টান পড়লো আমার। আদ্র হাত ধরে রেখেছে আমার। হাত ধরে এক টান দিতেই আমার পিঠ উনার বুকে গিয়ে বারি খেলো৷ পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো আমায়৷ লজ্জায় উত্তেজনায় গাঁ থরথর করে কাঁপছে আমার৷ আমার ঘাড়ে থুতনি রেখে জামা খামচে ধরে রাখা আমার দু হাত উনার দুহাতের মুঠোয় নিয়ে ফিসফিস করে বললো,
–“খালি পালাও কেন আমার থেকে? একবার আমার কাছে নিয়ে যাই তোমায়। তখন এসব কিছু সুদে আসলে মিটিয়ে নিবো আমি।”

কথাটা বলেই আমার কানের লতি কামড়ে ধরলেন উনি। মৃদু কেঁপে উঠলাম আমি। হৃদস্পন্দন খানিক সময়ের জন্য থেমে গিয়ে আবার প্রচন্ড গতিতে লাফানো শুরু করলো। কি করছে লোকটা? আমাকে কি মেরে ফেলার প্ল্যান করছে নাকি?

চলবে~

#অ্যাডিক্টেড_টু_ইউ
#অরনিশা_সাথী
#পর্ব_০৯

অনেক ঝামেলার পর মুগ্ধ ভাইয়ার সাথে আপির বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করা হয়। মুগ্ধ ভাইয়ার পীড়াপীড়িতে আজ থেকে ঠিক সাতদিনের মাথায় বিয়ের দিন ধার্য্য করা হয়। সারা বাড়ি ব্যস্ত বিয়ের সবকিছু এরেঞ্জ করতে৷ ফারাবী রুপ আর শান ভাইয়ার তো দম ফেলার উপায় নেই। বিয়েটা ফুপ্পিদের বাসা থেকে হবে। তাই আমরা কাজিনরা সকলেই আগেভাগে ফুপ্পিদের বাসায় চলে এসেছি। আদ্রও মাঝেমধ্যে আসে। রুপ ভাইয়াদের কাজে একটু আধটু হেল্প করে৷ বাড়িতে বেশ হইচই বেঁধে গেছে। অনেকদিন বাদে আবার কাজিনমহলে কারো বিয়ে হচ্ছে৷ হলুদ বিয়ে সবকিছু নিয়ে আমাদের প্ল্যানিংয়ের শেষ নেই। অনেক প্ল্যানিং শেষে ঠিক করা হলো হলুদে সকলে মিলে কাঁচা হলুদ রঙের জামদানী পড়বো৷ আর বিয়ের দিন সকলে গাঢ় নীল রঙের জরজেট শাড়ি। আর আপির রিসেপশনের দিন গাউন পড়া হবে। প্ল্যানমাফিক সবকিছু কেনাকাটাও করা হলো। বাড়ির ছোট হতে বড়রা সকলেই ব্যস্ত। আর আমরা ব্যস্ত ভাইয়াদের ইন্সট্রাকশন দিতে। হলুদের স্টেজ কেমন হবে? পুরো বাড়ির ডেকোরেশন কেমন হবে।

হাসি-আনন্দের মাঝে কাঙ্ক্ষিত দিনটা চলে এলো। আজ আপির হলুদ। সকলেই রেডি হতে পার্লারে চলে গেছে। আপিকে সাজানো হচ্ছে বাসায়। এদিকে আমি এখনো রেডি হতে পারিনি। আদ্র এসে আমাকে নিয়ে যাবে পার্লারে। আমি সকলের সাথেই যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তাতে বাঁধ সাধে আদ্র। তাই চুপচাপ উনার কথা মেনেই হিমাদ্রি ওদের সাথে পার্লারে যাইনি আমি৷ পাক্কা আধ ঘন্টা বাদে আদ্র আসলো আমাকে নিতে৷ রাগে শরীর রিঁ রিঁ করে উঠলো আমার। ওদের মেবি রেডি হওয়া শেষ। আর আমি? আমি এখনো পার্লারেই যেতে পারলাম না। আম্মু বেশ কয়েকবার এসে বলে গেলো আদ্র গাড়িতে ওয়েট করছে৷ কিন্তু আমি ইচ্ছে করেই যাইনি। আম্মুকে বলে দিয়েছি সাজতে যাবো না আমি৷ সবার এতক্ষণে সাজা প্রায় শেষ আর আমি কিনা এখন যাবো? পরে তাড়াহুড়োতে সাজ ভালো হবে না। বেশ কয়েকবার বলার পরও যখন আমি গেলাম না তখন আদ্র নিজেই কল করলেন আমাকে৷ রিসিভ করবোনা করবোনা করেও আবার রিসিভ করলাম। উনি শান্ত কন্ঠে বললেন,
–“দু মিনিটের মাঝে যদি তুমি নিজে থেকে না আসো তাহলে কিন্তু আমি এসে নিজ হাতে তোমায় চেঞ্জ করাবো সাজাবো। তখন তোমার কোনো মানা আমি শুনবো না।”

–“এই না না। আমি আসছি।”

কথাটা বলে লাইন কেটে একপ্রকার দৌড়ে বের হলাম বাসা থেকে। বদমাইশ লোক একটা। সবসময় শুধু উলটাপালটা কথা বলা। আমি নিচে গিয়ে চুপচাপ গাড়িতে উঠে বসে পড়লাম। উনি গাড়ি স্টার্ট দিলেন। আমি কানে ইয়ারফোন গুজে চুপচাপ বসে আছি৷ উনার সাথে কোনো কথাই বলবো না আমি৷ মনে মনে এই পন করলাম। পার্লারের সামনে গাড়ি এসে থামতে কিছু না বলে নেমে গেলাম আমি। আমার পিছন পিছন আদ্রও নেমে এলেন। ডাকলেন আমাকে কয়েকবার। কিন্তু আমি না শোনার ভান করে এগিয়ে চলছিলাম। আদ্র পেছন থেকে আমার হাত ধরে থামিয়ে দিলো। তারপর আমার হাতের ব্যাগটা নিয়ে উনার হাতের ব্যাগটা আমাকে ধরিয়ে দিয়ে বললেন,
–“এখানে সবকিছু আছে। এটাতে যা যা আছে এসব দিয়ে সাজবে তুমি।”

–“আমরা সবাই একরকম শাড়ি নিয়েছি। তাই এটা না। আমরা যেটা কিনেছি ওইটা পড়বো।”

কথাটা বলে আমার ব্যাগটা নিতে গেলে উনি সেটা সরিয়ে ফেললেন। তারপর রাগীস্বরে বললেন,
–“সবার সাথে আজ ম্যাচ হবে না তোমার। আমি যেটা দিয়েছি সেটাই পড়বে। কাল আর পরশু সকলের সাথে ম্যাচ করে পইড়ো৷ আই হ্যাভ নো প্রবলেম। বাট আজ তোমায় আমার দেওয়া শাড়িটাই পড়তে হবে।”

–“কিন্তু___”

–“পার্লারে যাবে নাকি বাসায়?”

উনার এমন গম্ভীর গলা শুনে আমি পার্লারের ভিতর চলে গেলাম। ভালো লাগে এসব? এতদিন কত প্ল্যান করলাম সকলে এক রকমের শাড়ি পড়বো। আর মাঝখান থেকে উনি____ধ্যাত! ভাল্লাগে না আমার। প্রায় ঘন্টা খানেক বাদে রেডি হয়ে বের হলাম। বের হওয়ার আগে একবার আয়নায় নিজেকে দেখে নিয়েছি। ভালোই লাগছে দেখতে। আদ্রর চয়েজ আছে বলতে হবে৷ সবুজ পাড়ের গাঢ় জাম রঙের কাতান শাড়ি দিয়েছে সাথে ম্যাচ করে বড় একজোড়া ঝুমকো আর বড় একটা টিকলি। শাড়িটা লেহেঙ্গা স্টাইলে পড়িয়ে দেওয়া হয়েছে আমাকে। লম্বা চুলগুলো খোলা, তাতে আবার বেলীফুলের গাজড়া দেওয়া। দুহাত ভর্তি চুড়ি। সব সাজ নাকি আদ্রর কথা অনুযায়ীই হয়েছে। আমার নিজস্ব কোনো মতামত নেয়নি পার্লারের মেয়েরা। নিজেকে দেখে নিজেই যেন থমকে যাচ্ছিলাম। তাহলে উনার কি অবস্থা হবে সেটাই ভাবছিলাম।

গাড়ির কাছে এসেই দেখলাম উনার দৃষ্টি আমাতেই আটকে আছে। বেশ বুঝতে পারলাম উনার ভাবনার থেকেও বেশি সুন্দর লাগছে আমাকে। মনে মনে ঠিক করলাম এখনো কথা বলবো না উনার সাথে। তাই চুপচাপ গাড়িতে গিয়ে বসে পড়লাম। মিনিট দুয়েক হয়ে গেলো গাড়িতে বসার কিন্তু উনি গাড়ি ছাড়ছেন না। হা করে এখনো আমাকেই দেখছেন। বিরক্ত হলাম এবার বেশ। ওদিকে না জানি আমাকে রেখেই হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হয়ে যায়। উনার কোনো পরিবর্তন না দেখে আমি রূঢ় কন্ঠে বললাম,
–“গাড়ি স্টার্ট দিচ্ছেন না কেন? আপনি কি চান না আমি হলুদের অনুষ্ঠানে গিয়ে জয়েন হই?”

আদ্র নেশালো গলায় বললো,
–“বিশ্বাস করো বউ, আমি এই মূহুর্তে সত্যিই চাচ্ছি না তুমি হলুদের পোগ্রামে জয়েন হও। ইচ্ছে করছে তোমাকে নিয়ে দূরে কোথাও পালিয়ে যাই৷ যেখানে বিরক্ত করার মতো কেউ থাকবে না। আর আমি তোমাকে দু চোখ ভরে দেখবো।”

–“আপনি গাড়ি স্টার্ট দিবেন? নাকি আমি অন্য গাড়ি করে যাবো?”

–“রেগে যাচ্ছো কেন? যাচ্ছি তো।”

কথাটা বলে উনি গাড়ি স্টার্ট দিলেন। আমি চুপচাপ বাইরের দিকে তাকিয়ে আছি৷ বেশ কিছু মিনিট বাদে ফুপ্পির বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামালেন উনি। এবারেও উনাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ভিতরে চলে গেলাম আমি। সকলের দৃষ্টি ঘুরেফিরে আমার উপরই পড়ছে। কিছুটা লজ্জা লজ্জা লাগছে এবার। হুট করেই হিমাদ্রি এসে কোমড়ে দুহাত গুজে আমার দিকে রাগী চোখে তাকালো। তারপর কোনো কিছু না বলেই আমার হাত ধরে টানতে টানতে উপরে আপির রুমে নিয়ে গেলো।

অপরাধীর মতো মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি আমি। আমার সামনেই রুশাপু, হিমাদ্রি, ফাইজা, মাইশা, তিন্নি সকলে রাগী চোখে তাকিয়ে আছে৷ কেননা প্ল্যানমাফিক আমাদের সকলের আজ কাঁচা হলুদ রঙের জামদানী পড়ার কথা ছিলো। আর চুল খোঁপা করে তাতে গাজড়া পেঁচানোর কথা ছিলো। ওরা সবাই প্ল্যান মতো সাজলেও আমি সম্পূর্ণ ভিন্ন। তাই ওরা বেশ রেগেই আছে আমার উপর। রুশাপু ঝাঁজালো স্বরে বললো,
–“একরকম ভাবে সাজার কথা ছিলো তো আমাদের। তাহলে আজ হুট করে আগে থেকে কাউকে কিচ্ছু না জানিয়ে তুই আলাদা ভাবে কেন সাজলি?”

–“আর এই শাড়ি, ঝুমকো, টিকলি, চুড়ি মানে এসব কিছু পেলি কোথায়? আমরা তো একই রকম শপিং করেছিলাম। তুই তো এসব কিনিসনি তখন।”

ফাইজার কথায় মাইশা আর তিন্নি সরু চোখে দেখলো আমাকে৷ আমার আগাগোড়া ভালো করে স্ক্যান করে মাইশা বললো,
–“ওয়েট এ মিনিট৷ আচ্ছা ভাবী এসবকিছু তোমাকে ভাইয়া দেয়নি তো?”

মাইশার কথায় চোখ তুলে তাকালাম আমি। শুধু আমি না সকলেই আশ্চর্য হয়ে মাইশার দিকে তাকালো। তখন তিন্নি বললো,
–“আ’ম সিউর, ভাইয়া দিয়েছে৷ আজ সকালে ভাইয়ার বিছানায় শপিং ব্যাগে এই শাড়ির রঙেরই কিছু একটা ছিলো। পুরোটা দেখার আগে ভাইয়া ব্যাগটা সরিয়ে ফেলছিলো।”

মনে মনে আদ্রকে অকথ্য ভাষায় বেশ ক’টা গালি দিলাম। কি দরকার ছিলো উনার এরকম করার? উনার জন্য এখন আমাকে সবার সামনে লজ্জায় পড়তে হচ্ছে। হিমাদ্রি গম্ভীর কন্ঠে বললো,
–“তার মানে আদ্র ভাইয়া দিয়েছে তোকে এসব?”

আমি এবার আর কোনো উপায় না পেয়ে মাথা দুলিয়ে সায় জানালাম। ওরা কেউ কোনো কথা বলছে না। আমি আমতা আমতা করে বললাম,
–“সত্যিই এই ব্যাপারে কিচ্ছু জানতাম না আমি। পার্লারে যাওয়ার সময় আমার হাত থেকে ব্যাগটা নিয়ে উনার দেওয়া এই শাড়ি চুড়ির ব্যাগ আমার হাতে ধরিয়ে দিয়েছিলেন। তবুও নিতে চাইছিলাম না আমি সকলে একভাবে সাজবো বলে কিন্তু উনার___”

এতক্ষণ সবাই বেশ সিরিয়াস মুডে থাকলেও এখন আমার কথায় ফিক করে হেসে দিলো সকলে। রুশাপু আমার সামনে এসে আমার থুতনিতে হাত দিয়ে মুখটা হালকা উঁচু করে ধরে বললো,
–“ধুর পাগলী, আমরা তো মজা করছিলাম। আদ্রর চয়েজ ভালো বলতে হবে। তোর জন্য বেছে বেছে কি সুন্দর একটা শাড়ি নিয়ে এসেছে ও। অসম্ভব সুন্দর লাগছে তোকে।”

রুশাপুর কথায় সবাই সহমত প্রকাশ করলো। তিন্নি হাসতে হাসতে বললো,
–“তা যা বলেছো রুশাপু। ভাইয়ার পছন্দ সত্যিই খুব ভালো। ভাইয়ার পছন্দ ভালো না হলে কি আর আমাদের এত্ত কিউট মিষ্টি একটা ভাবী আমরা পেতাম?”

তিন্নির কথায় সকলে হেসে উঠলেও আমি লজ্জায় মাথা নিচু করে নিলাম। তারপর গুটি গুটি পায়ে সরে গেলাম ওখান থেকে।

এককোনে জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। সামনেই আদ্র সরু চোখে দেখছে আমাকে। উনি কয়েকপা এগিয়ে এসে একদম আমার সামনে দাঁড়ালেন৷ এমন ভাবে দেখছেন আমাকে যেন কোনো বড়সড় অন্যায় করতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়েছি আমি। আদ্র বেশ কিছু সময় আমায় গভীর মনোযোগ দিয়ে দেখে বললেন,
–“সে কখন থেকে কথা বলার চেষ্টা করেই যাচ্ছি, পাত্তা দিচ্ছো না কেন? আমাকে তোমার পেছন পেছন ঘোরাতে ভালো লাগে?”

–“ক্ কথা বলবো না আমি আপনার সাথে।”

–“কেন?”

–“আপনি আমাকে সবার সাথে মিলিয়ে ওই শাড়িটা পড়তে দিলেন না কেন? জানেন সকলে কত্ত হাসিঠাট্টা করেছে এই নিয়ে। ওদের সামনে কত লজ্জায় পড়তে হয়েছে আমাকে আপনার জন্য।”

আদ্র আমার গাল ফুলিয়ে কথা বলার ধরন দেখে মৃদু হাসলো৷ তারপর আরো এক কদম এগিয়ে এসে পেছনে দেয়ালে হাত রেখে আমার দিকে ঝুকে বললো,
–“তুমি আমার বউ, মিসেস মুশফিকান আদ্র৷ আর মুশফিকান আদ্র মানেই ভিন্ন কিছু৷ সেখানে মুশফিকান আদ্রর বউ তুমি, সবার থেকে কিছুটা ডিফারেন্ট তো হতেই হবে তোমাকে। ইট’স নরমাল বউ।”

ব্যাস! উনার এসব কথা শুনেই আমার হাওয়া ফুস। একদম চুপসে গেলাম আমি। এরকম সব কথার বিপরীতে আমার আর কি বলার থাকতে পারে? আর যতটুকু অভিমান ছিলো উনার উপরে সেইটুকুও হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো। ধরা গলায় বললাম,
–“স্ সরুন, কেউ এসে এভাবে দেখে ফেললে__”

–“তো দেখুক না, আমি কি কাউকে ভয় পাই নাকি? নিজের বউয়ের সাথেই আছি। অন্যকারো সাথে তো না। আর তাছাড়া আমি কি কিছু করেছি? এখনো তো কিছু করলামই না। তবে কিছু না কিছু হতে পারে, যদি তোমার সম্মতি পাই।”

কথাটা বলেই বাঁকা হাসলেন উনি৷ আর এদিকে আমি লজ্জায় কুঁকড়ে যাচ্ছি। কি অসভ্য একটা লোক। উনি আমার লজ্জাটাকে আরো বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য শাড়ি ভেদ করে আমার কোমড় চেপে ধরে আমাকে নিজের কাছে টেনে নিলেন। তারপর গলায় ছোট্ট একটা হোয়াইট গোল্ডের চেইন পড়িয়ে দিলো। সাথে হোয়াইট গোল্ডের লাভ শেইপ লকেট। লাভের মাঝে ছোট্ট করে ইংলিশ ফ্রন্টে আমাদের দুজনের নামের প্রথম অক্ষর দেওয়া। বেশ পছন্দ হলো চেইনটা আমার। সত্যিই উনার পছন্দের প্রশংসা করতে হয়। উনি চেইনটা পড়িয়ে দিয়ে আমার কপালের সাথে কপাল মিশিয়ে নেশালো কন্ঠে বললো,
–“খুব সুন্দর লাগছে বউ। হাউ মাচ মোর উইল আই গেট অ্যাডিক্টেড টু ইউ? ক্যান ইউ টেল মি হোয়েন দিস ওয়েটিং পিরিয়ড উইল ইন্ড ফর ইউ টু বি ফুললি ওয়োন্ড? ইউ হ্যাভ নো আইডিয়া, আমি এখনো কিভাবে নিজেকে কন্ট্রোলে রেখেছি৷”

আদ্রর এরকম লাগামহীন কথায় আমার ভিতর অব্দি কেঁপে উঠলো। কি ভাবে বলছে লোকটা এসব? আমি দুহাতে ঠেলে উনাকে আমার থেকে দূরে সরানোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু পারলাম না সেটা। উনি আবারো বললেন,
–“হুশ! নড়ো না তো এভাবে। আমার কাছে এলে কি প্রবলেম হয় তোমার?”

–“হ্যাঁ হয়তো।”

–“আচ্ছা? তো কি প্রবলেম শুনি?”

–“আপনাতে আমার এলার্জি আছে।”

–“হোয়াট?????”

মৃদু স্বরে চিৎকার করে আমাকে ছেড়ে দাঁড়ালেন। উনি হয়তো কল্পনাতেও ভাবেনি এমন কিছু বলবো উনাকে। উনি অবিশ্বাস্য চোখে দেখছেন আমাকে। আর আমি মাথা নিচু করে মৃদু হাসছি। আদ্র আমার দু বাহু ধরে বললো,
–“মানে সিরিয়াসলি রুহি? আমাতে তোমার এলার্জি?”

–“হ্যাঁ। এলার্জি তো। আপনি কাছে আসলেই আমার সারা শরীর জ্বালা করে। অসহনীয় জ্বালা ধরে যায় পুরো শরীরে। যা অতি সহজে যায় না।”

আদ্র এখনো অবাক হয়ে দেখছে আমাকে। আমার কথার আগামাথা কিছুই যেন বুঝতে পারছেন না উনি। উনাকে এমন হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বেশ লাগছে আমার। উনি তখনো ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে তাকিয়ে আছে। আমি মুচকি হেসে বললাম,
–“বুঝলেন না?”

আদ্র ভদ্র ছেলের মতো মাথা দুলিয়ে বোঝালো ও বুঝেনি। আমি মৃদু হাসলাম। তারপর জাস্ট কয়েক সেকেন্ডের জন্য উনাকে জড়িয়ে ধরলাম। তারপর দুহাতে ঠেলে উনাকে দূরে সরিয়ে দৌড়ে চলে এলাম আমি। উনি আমার যাওয়ার দিকে আহাম্মকের মতো তাকিয়ে থেকে হঠাৎ করেই হেসে উঠলো। দৌড়ে আসতে আসতে শুনলাম উনি বলছেন,
–“আমার বউটা তো দেখছি পুরো আমার মতোই। আই লাইক ইট বউ৷ এবারে বুঝিনি বলে ছাড়া পেলে। নেক্সট টাইম আর একদম ছাড়বো না।”

–“সেটা পরে দেখে নিবো।”

কথাটা পিছন ফিরে আদ্রকে বলে আবার দৌড়ে চলে এলাম। পেছন দিকে তাকিয়ে সিড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে পায়ে বেজে পড়ে যেতে নিচ্ছিলাম। হঠাৎ করেই একজোড়া শক্ত হাত আমার বাহু ধরে আমায় পড়া থেকে বাচিয়ে নিলো। আমি মুখ তুলে মানুষটার দিকে তাকাতেই দেখলাম ফারাবী ভাইয়ার বন্ধু ইরান আমার হাত ধরে দাঁড়িয়েছে। আমি ঠিকভাবে দাঁড়িয়ে ধন্যবাদ জানালাম উনাকে। প্রত্যুত্তরে উনি মুচকি হেসে বললো,
–“সাবধানে চলাফেরা করবে তো। আর একটু হলেই তো পড়ে যেতে।”

–“পড়িনি তো আর, আপনি তো বাঁচিয়ে নিয়েছেন।”

আমি কথাটা বলে নিচে নেমে এলাম। ইরান ভাইয়া তখনো আমাকে দেখছে। ওদিক দোতলার করিডোরে দাঁড়িয়ে যে আদ্র রক্তচক্ষু নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে সেটা ঘুণাক্ষরেও টের পেলাম না আমি।

চলবে~