অ্যারেঞ্জ_ম্যারেজ পর্ব-২২+২৩+২৪

0
158

#অ্যারেঞ্জ_ম্যারেজ
#অবন্তিকা_তৃপ্তি
#পর্ব_২২

শুভ্র ভ্রু বাকালো। চট করে মায়ের ইঙ্গিত ধরে ফেলে বললো,

‘ইউ মিন তুলি যদি প্রে-প্রেগন্যান্ট—‘

‘না, না।’

শুভ্র চালাক মন মায়ের কথার অর্থ ঠিক ধরে ফেলল। আফরোজা লজ্জা পেয়ে গেলেন। প্রাপ্তবয়স্ক ছেলের সঙ্গে এ ধরনের আলোচনা তার মোটেও ভালো লাগলো না। তিনি কথা ঘুরালেন। ছেলের কাঁধে হাত রেখে বললেন,

‘আমি তবুও যাব একবার ইয়াসমিনের কাছে। দেখি; কী করে।’

শুভ্র শোনে;বুঝতে পারল, তার এ কথা মানা হবে না। মায়ের কোল থেকে আস্তে করে মাথাটা উঠিয়ে নেয়। দাঁড়িয়ে টিশার্ট ঠিক করে বলে;

‘আমি রুমে যাচ্ছি। কিছু কাজ আছে।’

শুভ্রর মধ্যে তারপর থেকে তুলিকে নিজের ঘরে তোলার আর কোন কথা বলতে দেখা যায় না। তুলি ছেলেমানুষী করছে; তাই বলে তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শুভ্রকেও যে বাচ্চা হয়ে যেতে হবে, ব্যাপারটা এমন নয়। শুভ্র এড়িয়ে গেল। কথার ফাঁকে, তবুও একদিন আফরোজাকে জিজ্ঞেস করল, ইয়াসমিন তাকে কোন উত্তর দিয়েছে কী না। হয়তো কোথাও কোনও একটা হোপ ছিল। কিন্ত শুভ্রকে নারাজ করে, আফরোজা জানালেন,

‘ইয়াজিদ ভাইয়ের মতে, শুভ্রকে এখন নিজের ক্যারিয়ারে ফোকাস করা উচিত, তেমনি তুলিকেও নিজের পড়াশোনায় ফোকাস করা উচিত। বিয়ে হয়েছে, তুলি তো পালিয়ে যাচ্ছে না। কমপক্ষে দুটো বছর যাক, উঠিয়ে দিবে তখন।’

দেখা গেলো, শুভ্রও আর এতে দ্বিমত করেনি। চার বছর কমেই দু বছরে এসেছে হোক তাহলে সেটাই।
_______________
তারপর- তারপর কয়েকটাদিন পরের কথা। শুভ্র তখন সবেই মেডিকেল থেকে ফিরে খেতে বসেছে। আফরোজা আজ কিছুটা অন্যমনস্ক। শুভ্র খেতে খেতে জিজ্ঞেস করল;

‘আম্মু, আর ইউ ওকে? ঠিক আছো তুমি? এত অ্যাপসেট লাগছে কেন তোমায়?’

আফরোজা মিছে হাসার ভান করলেন। বললেন;

‘না তো। আমি মন খারাপ করবো কেন হঠাৎ। তুই খা; মজা হয়েছে মাছের ঝোলটা?

শুভ্র মায়ের দিকে ভ্রু বাঁকিয়ে চায়। মা আজকাল বড্ড কথা লুকান। তারপরও শুভ্র পরে জিজ্ঞেস করবে ভেবে চুপ থাকে।

খাবার শেষে শুভ্র হাতে হাতে সব নোংরা বাসনপত্র রান্নাঘরে দিয়ে এলো। আফরোজা বারবার আজ দরজার দিকে চাইছেন। শুভ্র একবার সেটা লক্ষ করল। আজ কি তারিখ? কেউ কি আসবে আজ?

শুভ্র খাবার শেষ করে রুমে যাবে; হঠাৎ শোনা গেলো পরপর দুটো কলিং বেল। আফরোজা কলিং বেল শোনে এক দৌড়ে দরজার দিকে এগুলেন। শুভ্র পেছন থেকে চেচালো;

‘আস্তে আম্মু, পরে যাবা তো।’

আফরোজা শোনেন নি। তিনি দ্রুত দরজা খুলে দিলেন। দরজার ওপাশের মানুষটাকে দেখে শুভ্র একদম স্থির হয়ে গেল। আফরোজা চোখটা ভরে দরজার ওপাশের মানুষটাকে দেখেন। বুড়ো হয়েছেন সিদ্দিক সাহেব, কিন্তু এখনো বুকের পাঁঠা ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। সাদা পাঞ্জাবিতে আগের মতো এক ফোঁটাও দাগ নেই। যা দাগ করার সেটাতো আফরোজা আটাশ বছর আগেই করে এসেছেন। আফরোজা যেন চাইলেন, ঝাঁপিয়ে পরতে বাবার বুকের মধ্যে। কিম্তু কোথাও এক বাঁধা, এক জড়তা থেকেই গেলো। আফরোজা দু কদম সরলেন। কম্পিত গলায় বললেন;

‘আব্বা, কেমন আছো? ভেতরে আসো। ব্যাগটা আমার কাছে দাও।’

সিদ্দিক সাহেব ব্যাগটা সরালেন একটু পেছনে। গম্ভীর গলায় বললেন;

‘নিজের বোঝা নিজেই বইতে পারি আমি। কারো উপর বোঝা হইনি কোনোদিন, হবোও না।’

আফরোজা অপমানটুকু গিলে ফেললেন মুহূর্তেই। হাসার ভান করে কিছু বলবেন, এগিয়ে এলো শুভ্র। মায়ের পেছনে দাঁড়িয়ে বললো;

‘ভেতরে আসুন নানাজান।’

সিদ্দিক সাহেব বহু বছর পর শুভ্রকে দেখলেন। শুভ্র, ছোটবেলা থেকেই শুনেছে মানুষের মুখে যে: ভীষণ ভদ্র এক ছেলে পেয়েছে আফরোজা। আফরোজার ছেলের প্রশংসা নিজের বাড়িতে সারাক্ষণই শুনেন সিদ্দিক সাহেব। যেন সবাই চায়, শুভ্রর দিকে চেয়ে হলেও আফরোজাকে এ বাড়ি নিয়ে আসেন সিদ্দিক সাহেব। সিদ্দিক সাহেব ভেতরে ঢুকলেন। হাতের মিষ্টির ব্যাগটা সোফার টেবিলে রেখে সোফায় বসলেন। আফরোজা প্রথমে চেয়েছিলেন, বাবার পাশে বসতে। কিন্ত বসলেন না। বাবার থেকে দূরে সোফায় বসে মুচকি হাসলেন। শুভ্র মায়ের পাশে সোফা ঘেষে দাঁড়িয়ে আছে। ভ্রু কুঁচকে নানাজানের এক এক কাজ দেখছে। এই যে নানাজান, বারবার চোখ ঘুরিয়ে তার ঘরের সাজসজ্জা দেখছেন, সেটাও লক্ষ্য করলো শুভ্র। শুভ্র মনেমনে হাসে। শুনিয়ে শুনিয়ে বলে;

‘ঘরটা আম্মুর হাতে সাজানো।’

সিদ্দিক সাহেব কিছু বললেন না। শুরুতেই কথা তুললেন;

‘তোমার বাসায় আসার পেছনে কারণ আছে। ভেবো না, আমি সব মেনে নিচ্ছি বা নিয়েছি। পুরনো ক্ষত এত সহজে ভুলে না কেউ।’

বাকি কথা বলার আগেই আফরোজা শুভ্রর দিকে চেয়ে বললেন;

‘শুভ্র, দু কাপ চা করে আনবি? তুই-‘

শুভ্র বুঝতে পারলো, তার মা চান না শুভ্র এদের সব ক্ষত তাজার কথা শুনুক। শুভ্র ভ্রূ কুঁচকে নানার দিকে চেয়ে রান্নাঘরে গেলো। আফরোজা কথা বলেন। কাকুতির স্বরে বলেন:

‘আব্বা আমি মাফ চাইছি পুরনো সব কাজের জন্যে। বয়স হয়েছে আমার। বাপ মায়ের নারাজি নিয়ে ম র লে কবরে গিয়েও শান্তি পাব না।’

সিদ্দিক সাহেব আগের গাম্ভীর্য রেখেই বললেন;

‘পুরনো ক্ষত মাফ করতে তোমার বাসায় আমি আসিনি। এসেছি, একটা কাজে। তোমার ছোট ভাইয়ের বড় ছেলে রিশাদের বিয়ে। সবাই খুব জেদ করছিলো তোমাকে বিয়েতে আসার। তাই এলাম। বিয়ের কার্ড রেখে গেলাম। আসলে এসো,, না আসলে নাই। তোমার ইচ্ছা। আগেও তো আমাদের ইচ্ছার কোন দাম তোমার কাছে ছিলো না, এখনো থাকবে সেটার আশাও নেই।’

শুভ্র এর মধ্যে চা করে নিয়ে এলো। ট্রেটা সোফার টেবিলের উপর রাখবে তার আগেই সিদ্দিক সাহেব উঠে পড়লেন সোফা থেকে। চায়ের দিকে চেয়ে তাচ্ছিল্য হেসে বললেন;

‘তোমাদের বাড়ির অন্ন আমার মুখে ঢুকবে না কোনোদিন, শুভ্র। চা ফেলে দিয়ো। আসি।’

শুভ্র নানাজনের এসব কাজ তীক্ষ চোখে এতোক্ষণ দেখছিল। এবার আর সহ্য করতে না পেরে কিছু বলতে যাবে, তার আগেই আফরোজা শুভ্র বা হাত চেপে ধরেন। শুভ্র আটকে যায়। দাঁতে দাঁত চ
চেপে সিদ্দিক সাহেবের সকল অপমান গিলে ফেলার চেষ্টা করে।

সিদ্দিক সাহেব চলে গেলেন। তিনি যেতেই শুভ্র এবার রাগে ফেটে পরলো। বলল:

‘এসব কী ধরনের ব্যবহার উনার? আম্মু, তোমাকে উনি এভাবে বাড়ি বয়ে অপমান করে গেল। তুমি নিজে না কিছু বললে আর না আমাকে কিছু বলতে দিলে। বিয়ে করেছিল তোমরা, বাচ্চা এবোর্সন করার মতো নোংরা মানুষিকতা ওদের ছিল। ইটস অল এবাউট দেয়ার ফল্ট, নট ইয়োর্স। কেন এভাবে মুখ বুজে ও বাড়ির সব কথা সহ্য করো, বলোতো?’

আফরোজা চোখের জলটুকু মুছে নিয়ে চায়ের ট্রে নিয়ে কিছু না বলে রান্নাঘরে চলে গেলেন। শুভ্রও মায়ের পিছু পিছু এলো। আফরোজা চা বেসিনে ফেলে কাপ ধুতে ধুতে বললেন;

‘ব্যাগ গোছা। আমরা কাল তোর নানার বাসায় যাব। আব্বা বিয়ের দাওয়াত দিতে এসেছিলেন।’

শুভ্র এবার চেচালো, বললো;

‘কেন যাবে তুমি বিয়েতে? তারপর সবাই আরও পাঁচটা কথা শোনাক, তুমিও শুনো। প্রেশার হাই তোমার, খেয়াল আছে সেটা? যদি কিছু হয়ে যায়?’

‘কী হবে বেশি, মরে যাব?

আফরোজা কথাটা হেসে হেসে বললেও শুভ্রর কাছে মোটেও কথাটা একটুও ভালো লাগল না। সে কিছুক্ষণ মায়ের দিকে হা করে চেয়ে থাকল। পরপর দরজায় ঘুষি দিয়ে রেগেমেগে নিজের ঘরে চলে গেলো। আফরোজা বুঝতে পারলেন, শুভ্রর সামনে দুনিয়ার সবচেয়ে জঘন্য কথাটা বলা হয়ে গেছো। আফরোজা নিজের কাজে নিজেই বিরক্ত হয়ে গেলেন। চায়ের কাপ জায়গায় রেখে শুভ্রর রুমে গেলেন। শুভ্র লাইট বন্ধ করে শুয়ে আছে বিছানায়। আফরোজা যেতেই শুভ্র ওপাশ ফিরে গেলো। আফরোজা হাসলেন। ছেলের মাথার পাশে বসে আলতো করে চুলে হাত রাখলে, শুভ্র রাগ দেখিয়ে শোনায়;

‘আম্মু আমি ঘুমাব। তুমি যাও।’

আফরোজা ছেলের চুলটা টেনে দিয়ে বললেন,

‘ঘুমা, আমি চুল টেনে দেই। সারাদিন রোগীদের সাথে থেকে চুল থেকেও হসপিটালের গন্ধ আসছে।’

শুভ্র ত্যারা কণ্ঠে বলে;

‘তুমি মিথ্যা বলবে না আম্মু। আমি রোজ শ্যাম্পু করি।’

আফরোজা হার মানলেন। তারপর চুল টেনে দিতে দিতে বললেন;

‘শুভ্র? চল না, বিয়েতে যাই আমরা?’

‘না।’

শুভ্রর স্পষ্ট জবাব। আফরোজা বললেন;

‘তোর নানা এতদূর অব্দি নিজে এসে দাওয়াত দিয়ে গেলেন, যাবি না?’

‘ওটাকে দাওয়াত দেওয়া বলে না, বাড়ি বয়ে যেচে অপমান করতে আসা বলে।’

নিজের বাবা নিয়ে এমন কথা শোনে আফরোজা ছেলের পিঠে থা প্প ড় বসান।

‘চুপ, নানা-নানুকে নিয়ে কি এমন কথা বলে না।’

শুভ্র হার মানলো। আম্মু তার একদম অন্ধ। বাবা মায়ের করা হাজারটা অপমান তার চোখে পড়ে না। নিজের কোন আমলে করা একটা কাজ তাও যা কোনো অপরাধ বলে মনে করেনা শুভ্র, সেটার অপরাধবোধ থেকে সারাটাজীবন অন্যের খোঁটা অপমান গিলে গেলেন। শুভ্র নীরব থেকে আফরোজা কিছু ভেবে হেসে বললেন;

‘বিয়েতে আমরা তুলিকেও সাথে নিয়ে যাবো, ঠিক আছে?’

শুভ্র এবার এপাশ ফিরল। একহাত মাথার নিচে বালিশে রেখে বাঁকা চোখে বলল;

‘আমার দুর্বল জায়গায় হাত দিয়ে লাভ নেই, আম্মু। যে বাড়িতে তোমার নিজেরই মূল্য নেই, সেই বাড়িতে আমার বউয়ের মূল্য থাকবে,সেটার আশাও করিনা আমি।’

আফরোজা বাঁধ সাধলেন। বললেন;

‘ধুর, এমন করবে না ওরা। ও বাড়ির সবার সঙ্গে আমার কথা হয়। শুধু আব্বাই রেগে আছেন, আর কেউ রেগে নেই আমাদের উপর।’

শুভ্র তবুও শুনল না। আফরোজা এবার থামলেন। কিছুক্ষণ নীরব থেকে তারপর একসময় কেমন মরা কণ্ঠে বললেন;

‘আমি আমার নিজের বাড়ি একটাবার যেতে চাই শুভ্র। সেই যে বিয়ে করে এসেছি, আর যাইনি কখনো। কেউ বলেই নি যাওয়ার জন্যে। আজ কেউ বলেছে, স্বয়ং আব্বা বলেছে। আমাদের যাওয়া উচিত। নাহলে তার আসাটাকে অপমান করা হবে। আমি একবার আব্বাকে ছোট করেছি, আরেকবার করার সাহস আমার নেই।’

শুভ্র মায়ের কথা শুনে কিছুক্ষণ ফ্যালফ্যাল চোখে মায়ের দিকে চাইল। পরপর নিজের সকল মতামত একপাশে তুলে রেখে আফরোজার কোলে মাথা রেখে শুয়ে বললো;

‘কাল যাচ্ছি আমরা।পরশু বিয়ে খেয়েই চলে আসবো। আমার মেডিকেল আছে। এত ছুটি দিবে না। আর— তোমার বউমাকে বলে রেখো।’

বলে চোখ বন্ধ করল শুভ্র। আফরোজা হাসলেন। আলতো করে ছেলের চুলে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন। একটাসময় শুভ্র মায়ের কোলে মাথা রেখেই ঘুমিয়ে গেল। আফরোজা শুভ্রর মাথা বালিশে রাখলেন। ঘরের লাইট নিভিয়ে হেসে বললেন;

‘কে বলবে এই ছেলে এতবড় ডাক্তার। এখনো মায়ের কোলে ঘুমায়।’

হেসে হেসেই শুভ্রর রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন আফরোজা।
__________________
সকাল সকাল দুবার কলিং বেল বাজল। হয়তো দুধ দিতে এসেছে। আফরোজা ঘুমের ভান করে বিছানায় শুয়ে আছেন এখনো। শুভ্র ঘুমে অন্ধ। তবুও চোখ ডলতে ডলতে এলোমেলো চুলে উঠে দরজা খুলে দিল। দরজার ওপাশে একটা ছোটখাটো লাগেজ নিয়ে তুলি হাস্যমুখে দাঁড়িয়ে আছে। শুভ্রকে দেখে দুষ্টুমি হেসে তুলি বললো;

‘গুড মর্নিং স্যার। আজ ক্লাসে যাননি আপনি, তাই ছাত্রি ক্লাস করতে আপনার ঘরে চলে এসেছে।’

শুভ্র তুলিকে দেখে ঘুমঘুম চোখেই হেসে ফেলল। দরজা থেকে সরে দাঁড়ালে তুলি লাগেজ টেনে ঘরে ঢুকে কোন কথাবার্তা ছাড়া সোজা শুভ্রর রুমে লাগেজ নিয়ে ঢুকে গেলো। শুভ্রও দরজা লাগিয়ে তুলির পিছু পিছু রুমে ঢুকল। তুলি লাগেজ সুন্দর করে একপাশে রেখে বিছানায় গিয়ে বসলো। শুভ্র দেয়ালের একপাশে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে তুলির দিকে চাইল। তুলি শুভ্রর ঘরের চারপাশ চোখ ঘুরিয়ে দেখে আবার শুভ্রর দিকে চাইল। ভ্রু নাচিয়ে বললো;

‘কী দেখেন এত? এত অবাক হয়ে আছেন কেন? আমি কি আসতে পারিনা? আফটার অল, এটা আমারই ঘর।’

শুভ্র হাসল। মাথা দ্রুত দুদিকে নেড়ে বললো;

‘অবশ্যই, অবশ্যই। তা কী খাতিরদারি গ্রহণ করবেন? অধমকে জানান।’

তুলি চুলটা হাওয়া উড়িয়ে দিয়ে বললো;

‘আপাতত একটা গরম গরম চা হলে ভালো, বাকিটা পরে ভেবে দেখছি।’

শুভ্রও কম না। টিপ্পনী কেটে বললো;

‘গরম গরম চায়ের সাথে কটা গরম গরম চুমু? হাওজ দ্যাট? খাতিরদারির কোন কমতি রাখব কেন? চায়ের সঙ্গে একদম খাসা চুমু বোনাস হিসেবেও দেওয়া হবে, কাম।’

কথাটা বলে তুলির দিকে হাত বাড়িয়ে দুষ্টু হেসে এগুলো শুভ্র।

#চলবে

#অ্যারেঞ্জ_ম্যারেজ
#অবন্তিকা_তৃপ্তি
#পর্ব_২৩

শুভ্রও কম না। টিপ্পনী কেটে বললো;

‘গরম গরম চায়ের সাথে কটা গরম গরম চুমু? হাওজ দ্যাট? খাতিরদারির কোন কমতি রাখব কেন? চায়ের সঙ্গে একদম খাসা চুমু বোনাস হিসেবেও দেওয়া হবে, কাম।’

কথাটা বলে তুলির দিকে হাত বাড়িয়ে দুষ্টু হেসে এগুলো শুভ্র। তুলি ভ্রু বাঁকিয়ে তাকাল। পরপর বসা থেকে উঠে দু কদম পিছিয়ে বললো;

‘এত গরম গরম জিনিস খেলে আমার বদ হজম হবে। আপাতত চা-ই এনাফ। ওটাই নিয়ে আসুন।’

শুভ্র তবুও এগিয়ে এলো। তার ঠোঁটে প্রগাঢ় দুষ্টু হাসি। তুলির কাছাকাছি এলে তুলি শুভ্রর বুকে হাত রেখে ঠেলে দিতে চাইল। অথচ তুলি ওমন শক্ত দেহখানা এক চুলও সরাতে পারলো না। শুভ্র তুলির কোমরে হাত রেখে চেপে ধরলো নিজের সঙ্গে ওকে। তুলিও এবার হার মানল। শুভ্রর গলায় হাত গলিয়ে দুহাতে গলা জড়িয়ে ধরল। শুভ্র কপালে ঠোঁট বসালো। তারপর সরে এসে তুলিকে আপাদমস্তক দেখে নিয়ে ঠোঁট কামড়ে দুষ্টু হেসে বললো;

‘বাব্বাহ, নীল জামাতে তো অস্থির লাগছে। বিছানায় গিয়ে জামাটার লেন্থ মেপে দেই, চলো।’

‘সাতচল্লিশ।’

তুলি বললো। শুভ্র ভ্রু বাঁকালো। না বুঝে জিজ্ঞেস করল;

‘কী সাতচল্লিশ?’
‘ওই যে বললেন লেন্থ মাপবেন, লেন্থ ৪৭ আমার।’
‘অ্যাহ!’

শুভ্র বোকা হয়ে গেলো। পরপর তুলির কৌতুক হাসি দেখে নিজেও বুঝে গেলো কাহিনীটা কী ঘটেছে। হেসে ফেলল শুভ্র। তুলির কপালে দু আঙুল দিয়ে টোকা দিয়ে বললো;

‘এতো দুষ্টুমি জানে রে এই মেয়ে।’

তুলি হেসে ফেললো। শুভ্র তুলিকে ছেড়ে দিলো। টিশার্টটা টেনেটুনে ঠিক করে তুলির দিকে চেয়ে বললো;

‘চা খাবে না? আমিও খাব। আসো একসঙ্গে বানাই।’

তুলি শুভ্রর পিছুপিছু হেলেদুলে রান্নাঘরে গেলো। শুভ্র চুলোয় দু কাপ চা বসালো। সঙ্গে আরেক চুলোয় বসালো পরোটা। পরোটা বাজার থেকে রেডিমেড কিনে আনা। সেটাই হালকা তেল দিয়ে ভাজলো। তারপর পরোটা একপাশে প্লেটে রেখে ফটাফট আলু কেটে ভাজি বসাল। আলু ভাজি হচ্ছে; এদিকে শুভ্র দুকাপ চা তৈরি করে তুলির দিকে এক কাপ এগিয়ে দিল। তুলি এতোক্ষণ হা করে শুভ্রর রান্না দেখছিল। শুভ্র কাপ এগিয়ে দিতেই তুলি চোখ পিটপিট করে বিস্ময় নিয়ে বললো;

‘আপনি রান্না জানেন?’

শুভ্র চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বললো;

‘হ্যাঁ। আম্মু একা রান্না করে অলটাইম। আম্মু অসুস্থ হলে খাওয়া বন্ধ আমাদের। তাই শিখে নিয়েছি। এখন ফ্রি হলে আমিই রান্না করি। আম্মুকে রেস্ট দেই একটু।’

তুলি শুভ্রর এই মা ভক্ত দিকটা প্রচণ্ড ভালো লাগে। শুভ্র একজন আদর্শ স্যার, আদর্শ স্বামী এবং নিঃসন্দেহে একজন আদর্শ সন্তান। শুভ্র তার মাকে অসম্ভব ভালবাসে। শুভ্রর একহাতে যেন নিজের আত্মা নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। মায়ের কিছু হলে সে আত্মা দেহ ছেড়ে ছুটবে। তুলি মনেমনে একটু ভয়ও পায়; ভবিষ্যতে তুলি আর শুভ্রর মায়ের সঙ্গে কোন ঝুটঝামেলা হলে শুভ্র কাকে সাপোর্ট করবে? যদি আফরোজা কোনোদিন শুভ্রকে তুলিকে ছেড়ে দিতে বলেন? শুভ্র ছেড়ে দিবে? হয়তো দিবে।

তুলি নিজের উল্টোপাল্টা চিন্তায় নিজেই বিরক্ত হলো। এমনটা কেনই বা হবে? তুলি কখনোই শুভ্র বা আফরোজার মনে কষ্ট দিবে না। কিম্তু- যদি কোনো অঘটন না চাইতেই ঘটে? তুলি থমকে গেল।

তুলি থামে। তারপর চায়ের কাপটা একপাশে রেখে শুভ্রর কাছে আসে। শুভ্র তখন চা খেতে খেতে আলু ভাজি নাড়ছে। তুলি গিয়ে শুভ্রর বাহু চেপে ধরে বলে;

‘স্যার, এদিকে ফিরুন।’

তুলির গলা কিছু ঠিক লাগছে না। শুভ্র হাতের কাজ সেরে তুলির দিকে ফিরল। তুলি শুভ্রর বুকে ডান হাত রাখল। শুভ্র তুলির সেই হাতের দিকে একবার চেয়ে আবারও তুলির দিকে তাকাল। ভ্রু বাঁকালো শুভ্র। তুলি থামলো। গলা ভিজিয়ে হঠাৎ করেই জিজ্ঞেস করলো:

‘আপনার আম্মু মানে আন্টি আমায় ঠিক কতটা পছন্দ করেন? সত্যি করে বলুন আমায়।’

শুভ্র এ ধরনের প্রশ্ন শুনে প্রথমে কিছুটা অবাক হয়েছ। পরপর তুলির আগ্রহ দেখে বললো;

‘যতটা ভালবাসলে নিজের একমাত্র ছেলেকে জোর করে, তার মতের বিরুদ্ধে, শুধুমাত্র তোমার উপর ভরসা করে বিয়ে করিয়ে দেন, ততটা পছন্দ করেন।’

তুলি শোনে। থমকে যায় কিছুক্ষণের জন্যে। পরপর আবার আরো একটা প্রশ্ন করে;

‘আর আপনি? আপনি আমায় কতটা পছন্দ করেন?’

তুলির গলা প্রশ্নটা করার সময় একটু কাঁপলো যেন। শুভ্র হয়তো আন্দাজ করতে পারলো, তুলির ভয়টা ঠিক কোথায়? শুভ্র থামলো। তার ডান হাতটা তুলির গালে রাখল। গরম হাতটা গাল স্পর্শ করার সঙ্গেসঙ্গে তুলি কেঁপে উঠল। শুভ্র উত্তর দিল;

‘আম্মু যেভাবে এতটা বছর ধরে আব্বুকে মনে রেখে দিয়েছে, যৌবন কালে স্বামী হারানোর পরও লোকের কথায় বিয়ের পিঁড়িতে বসেনি।আমিও তোমাকে ঠিক ততটাই ভালোবাসি, তুলি। ভালোবাসা বোঝার পর, তুমিই আমার প্রথম এবং তুমিই শেষ। শুনেছো?’

তুলি শোনে। গলাটা কাঁপলো বোধহয় খানিক। তুলি আবেগে নিজেকে সামলাতে না পেরে জড়িয়ে ধরল শুভ্রকে। শুভ্রও জড়িয়ে ধরলো। শুভ্র বুঝতে পারছে, উত্তরটা তুলির মনঃপূত হয়েছে। শুভ্রও হাফ ছাড়ল। তুলি সন্দেহ করেছিল, মায়ের জন্যে কোনোদিন শুভ্র তুলিকে ছেড়ে দিবে কিনা। অথচ শুভ্র জানে, তার আম্মু যে সবসময় ছেলের সুন্দর এক সংসারের স্বপ্ন দেখেন, তার পক্ষে কোনোদিন তুলিকে ছেড়ে দেওয়ার কথা মাথায়ই আসবে না। তুলি অবুঝ, এ বাড়ি আসুক। কটা দিন গেলে নিজেই বুঝে নিবে।

হঠাৎ নাকে কিছু পো ড়ার গন্ধ এলে শুভ্র তুলিকে ছেড়ে দিল। দ্রুত গিয়ে আলু ভাজি চুলো থেকে নামিয়ে নিলো। পো ড়া গন্ধে পুরো রান্নাঘর ছড়িয়ে গেছে। তুলি ঠোঁট উল্টে বলল;

‘জ্বলে গেছে নাকি?’

শুভ্র আলু ভাজি নেড়েচেরে দিল। তারপর কাতর কণ্ঠে বললো;

‘এভাবে রান্নাঘরে তোমার এত প্রেম পেলে তো বিপদ, তুলি। ঘরের সবার তাহলে জ্বলা খাবার খেতে হবে। ওহ গড।’
______________________
দুপুরের তীব্র রোদ গায়ে পরছে। সূর্যের তীব্রতাটা আজ অনেকটাই বেশি। শুভ্ররা তৈরি হয়ে নিচে নেমেছে। শুভ্র গাড়ি পার্কিং থেকে বের করে সামনে আনল। আফরোজা পেছনে উঠে বসলেন। তুলি সামনে, আর শুভ্র ড্রাইভ করছে। গাড়ি চলছে। শুভ্র গাড়ীতে সফ্ট মিউজিক ছেড়ে দিয়েছে। তুলি জানালার দিকে চেয়ে আছে।

আফরোজা আজ সাথে আছেন দেখে তুলি মাথায় ওড়না তুলে রেখেছে।কিম্তু বাতাসের ঝাপটায় ওড়না বারবার পরে যাচ্ছে। দেখা গেলো, তুলি একপ্রকার হিমসিম খাচ্ছে ওড়না সামলানো নিয়ে। আফরোজা পেছনে থেকে তুলির ওড়নার সঙ্গে যুদ্ধ করা দেখছেন। তাই তিনি আগ বাড়িয়ে বললেন;

‘এই তুলি? ওড়না পরে রেখেছিস কেন এত গরমে? গাড়িতে আমি আর শুভ্র ছাড় কে আছে আর? মাথায় কাপড় দেওয়া লাগবে না।’

শুভ্রও এবার তুলির দিকে চাইল। বললো;

‘খুলে ফেলো প্রবলেম হলে।’

তুলি যেন হাঁপ ছাড়ল। মাথা থেকে কাপড় সরিয়ে গলায় জড়াল। আফরোজা চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছেন। ঘুমিয়েই পড়েছেন বোধহয়। তুলি জানালার দিকে চেয়ে আছে। শুভ্র এই ফাঁকে আফরোজার দিকে একবার তাকিয়ে সতর্ক হয়ে নিলো। পরপর বাম হাতটা দিয়ে আলগোছে তুলির নরম ডান হাতখানা চেপে ধরলো। সঙ্গেসঙ্গে তুলি সতর্ক হয়ে শুভ্রর দিকে চেয়ে পেছনে একবার আফরোজাকে দেখলো। নাহ, ঘুমাচ্ছেন। তুলি শুভ্রর দিকে চাইল। শুভ্র একহাতেই গাড়ি ড্রাইভ করছে। তুলি ফিসফিস করে বললো;

‘এত প্রেম গাড়িতে না দেখালে চলে না?’

শুভ্রও আস্তে কণ্ঠে বলল;

‘বেডরুমেই তো দেখাতে চেয়েছিলাম। সুযোগই দিলে না।’

শেষের কথাটা কাতর কণ্ঠে বলল শুভ্র। তুলি ভ্রু বাঁকিয়ে প্রশ্ন করল;

‘এমন করে বলছেন, যেন কতদিনের উপোস আপনি।’
‘দু সপ্তাহ চৌদ্দ ঘণ্টার উপোস আমি, তুলি।’

তুলি বুঝল না শুভ্রর কথা। কী গুনল শুভ্র? তুলি প্রশ্ন করল;

‘দু সপ্তাহ চৌদ্দ ঘণ্টা মানে?’

শুভ্র এবার দুষ্টু হাসে। তুলির দিকে চেয়ে চোখ টিপে বলে;

‘সাজেকের সেই রাতের কথা ভুলে গেছো? বৃষ্টি ভেজা রাত, ভেজা শাড়িতে তুমি, আমাদের গরম নরম হানিমুনের বিছানা। ওয়াও, আমি আর ভাবতে পারছি না। এমন রাত বারবার আসুক।’

তুলি শুভ্রর এমন বেলাজ কথা শুনে কেশে উঠল। থতমত খেয়ে বললো;

‘অসভ্য পুরুষ। আপনার মুখে লাগাম দিন।’
‘লাগাম? কার জন্যে দিব? তোমার জন্যে? বউ না তুমি আমার?’

শুভ্র একের পর এক বেলাজ কথা বলছে, আর তুলি বারবার খিচিয়ে উঠছে। শুভ্র যেন আজ থামছেই না। সিসিমপুরের ন্যায় চলছেই তার বেলাজ কথাবার্তা। তুলি তাই শুভ্রকে থামাতে একপর্যায়ে তেতে উঠে বলল;

‘আপনি যদি এখন দয়া করে চুপ থাকেন, তাহলে আজ রাতে যেটা চাইছেন সেটা পাবেন। তাও চুপ থাকেন, আমার কান জ্বলছে। ও আল্লাহ।’

#চলছে

#অ্যারেঞ্জ_ম্যারেজ
#অবন্তিকা_তৃপ্তি
#পর্ব_২৪ (১৮+ এলার্ট)

জন্মের পর শুভ্র নানাবাড়ি এই প্রথম এলো। মায়ের দুঃখের শুরুটা তার নানাবাড়ি ছিল বিধায় কোনোদিন এখানে আসার ইচ্ছাও জাগে নি। তবে আজ আফরোজার জোড়াজোড়িতে আসতে হলো। শুভ্র চৌধুরী বাড়ির গেইটের সামনে দাঁড়াল। আফরোজার কাঁধে হাত রেখে এগিয়ে গেল সামনে। তুলি পেছনে পেছনে আসছে। শুভ্রদের নানাবাড়ি খুব বিশাল। ২০ ডিসিমেল জায়গার উপর করা চৌধুরী ভবন। তুলি বাড়িটা বড্ড বিস্ময় নিয়ে দেখছে। বাড়ির ভেতরে মস্ত বড় দুটো পুকুর। একটা পুকুরে কয়েকটা বাচ্চা গোসল করছে। আরেকটা পুকুরে জাল ফেলা। বাগানও আছে। তুলি এসব দেখছিল। অনেক বছর পর আফরোজা বাপের বাড়ি এসে আবেগপ্রবণ হয়ে গেলেন। তার চোখ দুটো ছলছল করছে। আফরোজাদের বাড়ির ভেতরে ঢুকতে দেখে চৌধুরী ভবনে হইচই লেগে গেল। দৌড়ে কটা মেয়ে ‘ফুপু’ বলে আফরোজার পাশে ঘিরে ধরলো। পেছন পেছন এলো ভাইয়ের বউরা। সবাই আফরোজাকে বড্ড আদর করছেন। হালচাল জিজ্ঞেস করলেন। আফরোজার কথা এ কী বলার আছে? সে তো মাতোয়রা বাড়ির সবার আচরণ দেখে। একপর্যায়ে সবার নজর গেলো শুভ্রর উপর। শুভ্র তাদের তাকানো দেখে সালাম করল। আফরোজার বড় ভাইয়ের বউ ফাহিমা এগিয়ে গেলেন। শুভ্রর মুখটা আদর করে দেখলেন। তারপর হেসে আফরোজাকে বললেন;

‘আমাদের শুভ্র তো খুব বড় হয়ে গেছে। তা আপা, ছেলে বিয়ে দিবা না? বৌ কবে আনবা ঘরে?’

আফরোজা কিছু বলতে যাবেন, তার আগেই শুভ্র হালকা হেসে তুলিকে কাছে আসতে ইশারা করল। তুলি ধীর পায়ে শুভ্রর পাশে এসে দাঁড়াল। শুভ্র পরিচয় করিয়ে দিলো;

‘মামি, আমার স্ত্রী। প্রত্যাশা হোসেন তুলি।’

শুভ্রর কথাটা বলার সাথেসাথে সম্পূর্ণ ঘর নীরব হয়ে গেলো। ফাহিমা অবাক চোখে তুলিকে দেখছেন। সবার চোখ তুলির উপর পরতেই আপাদমস্তক কুকড়ে গেলো তুলি। এভাবে তাকে দেখছে কেন সবাই? ফাহিমা কিছুক্ষণ পর হাসার ভান করে তুলির মুখটা ধরে বললেন;

‘খুব সুন্দরী। শুভ্রর সঙ্গে মানিয়েছে।’

পাশ থেকে ছোট ভাইয়ের বউ উর্মিলা বলে বসলেন;

‘তবে আমাদের তানিকে আরও বেশি-‘

‘আহ, চুপ। ওদের ভেতরে নিয়ে আসো।’

ফাহিমা কথা শেষ করতে দিলেন না ঊর্মিলাকে। উর্মিলা মুখটা কাচুমাচু করে আফরোজাদের নিয়ে ভেতরে গেলেন। তুলির একদমই তাদের কথাটা ভালো লাগল না। তানি কে? কী হয় শুভ্রর? তুলি বাকি কিছু ভাবতে পারে না। তার আগেই তুলিকে বাচ্চা-কাচ্চারা ঘিরে ধরল। সবাই আফরোজাদের নিয়ে একটা ঘরে এলো। ঘরে বিছানায় শুয়ে আছেন একজন বৃদ্ধ মহিলা। মহিলাটি আফরোজার মা, খোদেজা বেগম। তিনি এখন বিছানায়ই থাকেন। প্রস্রাব- পায়খানা সবই বিছানায় করেন। তার জন্যে কাজের লোক রাখা হয়েছে। তিনি দেখভাল করেন আফরোজার মায়ের। আফরোজা মায়ের পাশে এসে বসল। শুভ্র দাঁড়াল খোদেজার মাথার পাশে। শুভ্র একবার স্যালাইন দেখল। স্যালাইন চলছে তার। শুভ্র পাশে থাকা ফাহিমাকে জিজ্ঞেস করল;

‘স্যালাইন কী সবসময়ই দেওয়া লাগে?’
‘হ্যাঁ, উনি মুখে খেতে পারেন না সবসময়। তাই বেশিরভাগ সময়ে স্যালাইন দিয়ে খাওয়ানো হয়।’

ফাহিমা উত্তর দিলো। আফরোজা খোদেজার মুখটা ছুয়ে ছুয়ে দেখল। জ্ঞান নেই খোদেজার। কাউকে এখন চিনেন না, বুঝেনও না কিছু। আফরোজা তবুও বললো;

‘আম্মা, আম্মা আমি আফরোজা আসছি গো। শুনতে পারছ তুমি আমাকে? ও আম্মা।’

খোদেজা শুনেন, কিন্তু জবাব দিতে পারেন না। আফরোজা তবুও কথা বলতে থাকেন। শুভ্রকে দেখিয়ে বলেন;

‘আম্মা, ও শুভ্র। তোমার নাতি, আমার ছেলে। শুভ্র এদিকে আয়।’

শুভ্র এগিয়ে গেল। আফরোজা শুভ্রর গা ছুয়ে ছুয়ে দেখাচ্ছেন খোদেজাকে। তারপর তুলিকে ডাকলেন।

‘আম্মা, ও তুলি। শুভ্রর বউ। দেখো তোমার বউ পছন্দ হইছে কী না। ও আম্মা। শোনো তুমি আমারে?’

খোদেজা চোখ পিটপিট করলেন। মুখ দিয়ে গোঙ্গানি বের হলো শুধু। আফরোজা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। মা বাবা বৃদ্ধ কেন হয়? এদের কী কখনও কোনও শক্তি দিয়ে চিরযৌবনা করা যায় না?

চৌধুরী বাড়িতে দুপুরে বিশাল আয়োজনে খাবার দাবারের আয়োজন করা হলো। সিদ্দিক সাহেব মাত্রই বাজার থেকে ফিরলেন। তিনি ফিরতেই আফরোজা এগিয়ে গেলেন তার দিকে। সিদ্দিক সাহেব আফরোজাকে দেখে হাত উঁচু করলেন, গম্ভীর গলায় বললেন;

‘এসেছ তবে। এ বাড়িতে সবার সঙ্গে তোমার মেশার অনুমতি আছে; শুধুমাত্র আমার আশেপাশে আসার কোনো অনুমতি নেই। এই, ওদের খাবার সাজাও।’

কথাটা বলে চলে গেলেন সিদ্দিক সাহেব। ভাগ্যিস শুভ্র আশেপাশে নেই। নাহলে কেলেংকারি ঘটে যেত। আফরোজা হাঁপ ছাড়লেন।
_______________
রাতটুকু আসল। শুভ্রর জানামতে, সব কিছু এখন অব্দি ভালোই চলছে। তবে আসার পর থেকে নানার সঙ্গ দেখা হয়নি। একবারও শুভ্রর। শুভ্র বুঝে, দেখা না পাওয়ার পেছনে কারণ কী। তাই সেও আগ বাড়ায় না। রাতের খাবার শেষ হলে, শুভ্র বেসিনে হাত ধুতে যায়। তুলিও যায় তখন। বেসিনে শুভ্র হাত ধুচ্ছে, তুলি পাশে ঝুটা হাত নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। শুভ্র হাত ধুয়ে তোয়ালেতে মুছল। রুমে যাওয়ার আগে তুলির কানে ফিসফিস করে বলে গেল;

‘রুমে আসো, অপেক্ষা করছি।’

শুভ্র তুলির গা ঘেঁষে রুমে চলে গেলো। তুলি হা হয়ে শুভ্রকে দেখল। এই শুভ্রর সঙ্গে বিয়ের শুরুর সময়ের শুভ্রর কোন মিল নেই। অবাস্তব লাগছে শুভ্রকে তুলির কাছে। শুভ্র কখন থেকে এতটা নির্লজ্জ হলো? কোন কুলক্ষণে যে রাতের কথাটা তুলি তুলেছে, নিজের উপরই রাগ লাগছে তুলির।

রাতের খাবার শেষ হওয়ার পরও, তুলি ভয়ে আর রুমে গেল না। বাচ্চাদের সঙ্গে গল্পে মন দিল। গল্পের মধ্যেও বারবার শুভ্রর রুমের দিকে তাকাচ্ছে। শুভ্র এই ডাকল বলে। ডাকলে যাবে কিভাবে তুলি? দৌড়ে? ছিঃ! তুলির বুকটা কাপছে; ধুরধুরু করে। কিভাবে মুখোমুখি হবে ওমন নির্লজ্জ এক শুভ্রর? মনে হচ্ছে, এই প্রথম দুজনের কাছাকাছি আসা, প্রথম স্পর্শ, প্রথম লজ্জা।

তুলি বাচ্চাদের সঙ্গে লুডু খেলছিল। হঠাৎ একটা মেয়ে এলো। তুলির পাশে বসে শুরুতেই জিজ্ঞেস করে বসল;

‘তুমি শুভ্রর ভাইয়ের ছাত্রী ছিলে না?’

তুলি আচমকা এমন প্রশ্নে কিছুটা বিব্রত হলো। পাশ থেকে একটা বাচ্চা বিরক্ত হয়ে বললো;

‘তানি আপু, বিরক্ত করো না তো খেলার মধ্যে। যাও যাও।’

তানি চোখ গরম করে হিয়ার দিকে তাকাল। বললো;

‘বড়দের সঙ্গে এভাবে যাও যাও করে কথা বলে হিয়া? বলব তোর আম্মুকে?’

হিয়া খামোকা বকা খাচ্ছে দেখে তুলিই বললো;

‘হিয়া আমরা পরে খেলবো, হু? যাও ঘুমিয়ে পড়ো। অনেক রাত হয়েছ।’

হিয়া শুনলো না। বাকি বাচ্চারাও তেমনই শুনলো না। হিয়া নাছোড়বান্দার মতো বললো;

‘কাকি, এই চালটা শেষ করি প্লিজ? তারপর পাক্কা ঘুমিয়ে যাব, প্রমিজ।’

তুলি হাসলো, বলল;

‘ঠিকাছে, এই চাল শুধু।’

তারপর তুলি আবার খেলায় মন দিল। তানি পাশ থেকে এসব দেখল। তারপর আবারও প্রশ্ন করল:

‘কবে থেকে প্রেম তোমাদের?’

তুলি অবাক হলো। লুডু খেলা পোজ করে তানির দিকে চেয়ে প্রশ্ন করলো:

‘প্রেম? কীসের প্রেম?’
‘শুভ্র ভাইয়ের সঙ্গে তোমার বিয়ে প্রেম করে নয়?’

তানি যেন তাচ্ছিল্য করে বললো। তুলি এবার বিরক্ত হলো। কড়া গলায় বললো;

‘আমাকে শুভ্র স্যারের আম্মু, মানে তোমাদের ফুপু পছন্দ করে এনেছেন। প্রেম করে বিয়ে নয় আমাদের।’

‘হ্যাঁ, সেটাই। আগে চয়েজ ছিলো, তাই ফুপুও হয়তো শুভ্র ভাইয়ের মুখের দিকে চেয়ে রাজী হয়েছেন। এখন লোক ঢাকতে অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ বলে প্রচার করছ। রাইট?’

তানির মুখে তুলি এতগুলো কথা শুনে কান জ্বলে গেলো মনে হলো। তুলি খেলা কোনরকম শেষ করে উঠে দাঁড়াল। তানির দিকে চেয়ে বললো;

‘তোমার যা ইচ্ছা ভাবো। আমাদের বিয়ে প্রেম করেই হোক বা অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ, বিয়েই তো হয়েছে। কিভাবে হয়েছে, ডাজেন্ট ম্যাটার।’

কথাটা বলে তুলি রুমে চলে গেলো। তুলি রুমে ঢুকেই দরজায় খিল তুলে দিল। শুভ্র বিছানায় শুয়ে মোবাইল দেখছিল। তুলি রুমে ঢুকতেই শুভ্র আফসোসের সুরে শোনাল;

‘আর এলেই কেন? রাতটা শেষ করেই আসতে।’

তুলি কোন কথা বলল না। সোজা শুভ্রর পাশে বসে সরাসরি প্রশ্ন করল;

‘আপনার সঙ্গে এ বাড়ির তানি মেয়েটার বিয়ে ঠিক ছিল? সত্যি করে বলুন।’

‘কে তানি? কার কথা বলছো তুমি?’

শুভ্র অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল। তুলি লম্বা করে শ্বাস ফেলল। রাগটুকু কন্ট্রোল করে তারপর বললো;

‘আপনার মামার মেয়ে। আপনি চিনেন না?’
‘না, আমি তো আজকেই প্রথম এলাম নানাবাড়ি। ওদের সঙ্গে এর আগে আম্মুর যোগাযোগ থাকলেও আমার ছিল না। কেন বলো তো?’

তুলি বুঝতে পারল, শুভ্র যেখানে তানিকে চীনেই না। সেখানে অযথা এসব নিয়ে কথা বাড়ানোর দরকার নেই। নিজেদের সুন্দর মুহূর্তটা একটা বাইরের মেয়ে নিয়ে ঝগড়া করে কাটাতে চায়না তুলি। তুলি নিজেকে শান্ত করল। বিছানা থেকে উঠতে উঠতে বললো;

‘আমি ফ্রেশ হয়ে আসি। ঘুমাব।’

শুভ্র ‘ঘুমাব’ শুনে দ্রুত তুলির শাড়ির আঁচল চেপে ধরে আবার বিছানায় বসিয়ে দিল। বললো;

‘ঘুমাবে মানে? আজ রাতে কোন ঘুম নেই।’

‘তো রাতে কী হাডুডু খেলবেন?’

‘হ্যাঁ, হাডুডুই খেলব। সকালে কি কথা হয়েছিলো? মনে নেই নাকি আমি মনে করিয়ে দিব?’

তুলি বুঝল, শুভ্রর কথার ধাঁচ কোথা থেকে কোথায় যাচ্ছে। তুলি নজর লুকিয়ে লুকিয়ে বললো;

‘কোন কথা-টথা হয়নি। আমি গাড়িতে ঘুমিয়ে ছিলাম।’

শুভ্র বাঁকা চোখে চাইল। দুষ্টু হেসে বলল;

‘আমি কখন বললাম গাড়িতে আমাদের কোন ব্যাপারে কথা হয়েছে। অন্য কোথাও তো হতে পারতো? দ্যাটস মিন্স তোমার সব মনে আছে। জলদি জলদি আমার উইশ পূরণ কর। আর দেরি নয়।’

তুলি লজ্জায় বিছানা থেকে উঠে আয়নার সামনে দাঁড়াল। চুলে বেনি করতে করতে বলল;

‘ঘুমান, এত রাতে কেউ আলাদিনের চেরাগ নিয়ে বসে নেই আপনার উইশ পূরণ করতে।’

শুভ্র উঠে আসলো। তুলির পেছনে দাঁড়িয়ে জড়িয়ে ধরলো তুলিকে পেছন থেকে। সফ্ট কাঁধে নাক ঘষে বলল;

‘তুমিই আমার আলাদিনের চেরাগ। আজ এই অধমের তিনটি উইশ পূরণ করো, প্লিজ আমার আলাদিনের চেরাগ।’

তুলি ওমন স্পর্শে কেঁপে উঠল। কাঁধে শুভ্রর খোঁচা খোঁচা দাড়ির ঘষা লাগছে খুব তুলির। তুলি চোখ বন্ধ করল। মিনমিন করে বলল;

‘কী উইশ?’

শুভ্র তুলির কাঁধে নাক ঘোষল। গভীর ভাবে কাঁধে চুমু খেলো একটা। অনুভব করল, তুলির ফিনফিনে শরীরের কাপুনি। শুভ্র গভীর কণ্ঠে ফিসফিস করে বলল;

‘মুজরা ড্যান্স দেখাবে আমাকে।’

সঙ্গেসঙ্গে তুলি চমকে চোখ খুলে ফেলল। জোর করে শুভ্রকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললো;

‘নো ওয়ে। আমি পারব না। ছিঃ।’

শুভ্র এগিয়ে এসে বলল;

‘উফ তুলি। আম ইউর হাসবেন্ড। আমার সামনে কীসের ছিঃ?’

‘তবুও? ছিঃ, আপনি আমাকে নিয়ে এসব অশ্লীল চিন্তা করেন।’

শুভ্র এগিয়ে এসে চেপে ধরলো তুলিকে নিজের সঙ্গে। কানে ঠোঁট ছুইয়ে বলল;

‘বউ তুমি আমার। তোমাকে নিয়ে অশ্লীল চিন্তা হালাল আমার জন্য।’

তুলি পুনরায় ধাক্কা দিল শুভ্রকে। নিজের থেকে শুভ্রকে আলগা করে বললো;

‘আমি পারব না। অন্য কিছু বলেন।’

শুভ্র তুলির এভাবে ধাক্কা দেয়ায় ভেতরে ভেতরে ব্যথিত হলো। সঙ্গে অপমাণিতও হলো। সে বোধহয় তুলিকে জালাচ্ছে ভীষণ। কথাটা তোলা হয়তো ঠিক হয়নাই। তাই শুভ্র সব ভেবে আর জোর করল না তুলিকে। মুখটা গম্ভীর করে বলল;

‘ঠিকাছে, ঘুমিয়ে পড়ো।’

কথাটা বলে শুভ্র লাইট নিভিয়ে বিছানায় শুয়ে পরলো। তুলি এখনও আয়নার সামনে ওভাবেই দাঁড়িয়ে আছে। শুভ্র কী কষ্ট পেল? হয়তো পেয়েছে। নাহলে শুভ্র এমন অদ্ভুত ব্যবহার করে ঘুমিয়ে পড়তো না। তুলি দোটানায় পড়ে গেল। কী করবে বুঝতে পারল না।
______
শুভ্র ঘুমিয়েই পড়েছিল। হঠাৎ কোথা থেকে মোমবাতি কতগুলো জ্বলে উঠায় চোখ খুললো সে। শুনতে পেল, গান বাজছে।

আঙ্গে লগা দে র; মোহে রংগ লগা দে রে
অংগ লগা দে র; মোহে রংগ লগা দে রে
মেং তোহ তেরী জোগনিযা; তূ জোগ লাগা দে রে

শুভ্র গানটা শুনেই অগোচরে হেসে উঠল। বিছানা থেকে উঠে বসল। মুখে ইচ্ছে করেই রাগ ভাব ধরে রাখল। তুলি ফিনফিনে একটা পাতলা শাড়ি পরে শুভ্রর দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। শুভ্র হাত ছুলো না। রাগ দেখিয়ে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে অন্যপাশে গেলো। তুলি গান গাইলো;

জোগ লগা দে রে; প্রেম কা রোগ লগা দে রে
মেং তোহ তেরী জোগনিযা; তূ জোগ লগা দে রে

তুলি পেছন থেকে জড়িয়ে ধরল শুভ্রকে। শুভ্রর বুকে দুই হাত ঘুরিয়ে ঝাপটে ধরলো পেছন থেকে তাকে। শুভ্র ভাব নিয়ে তুলির হাতটা ছড়িয়ে নিয়ে অন্যপাশে গেলো। তুলি মুখ ভেঙ্গিয়ে আবারও এগিয়ে এলো।

রাম রতন ধন; লগন মগন মন
তন মোরা চংদন র; উজলী কোরী প্রীত প্যাসত
রংগ লগা দে রে

তুলি আবেদনময়ী অঙ্গভঙ্গি করে শুভ্রর সামনে দাঁড়িয়ে গলা জড়িয়ে ধরলো। তারপর কোমর বাঁকিয়ে মাথাটা নিচের দিকে ঝুকায়। শুভ্র একহাতে তুলির কোমর ধরে তুলিকে আবার সোজা করে ফেলে। তুলি দুহাতে গলা জড়িয়ে ধরে শুভ্রর।

আং লগা দে রে; মোহে রাং লাগা দে রে
মেং তোহ তেরী জোগনিযা; তূ জোগ লাগা দে রে

গাইলো তুলি। শুভ্র গলা থেকে তুলির হাত ছাড়িয়ে নিলো। হেঁটে বিছানার পাশে এসে দাঁড়াল সে। তুলি নেচে শুভ্রর মাথা নিজের শাড়ির আঁচল দিয়ে ঢেকে দিলো। শুভ্র হাত দিয়ে আঁচল তার মুখের সামনে থেকে সরিয়ে দিল। তুলি শুভ্রর দিকে চেয়ে রাগ দেখিয়ে আবারও দুহাতে ঝাপটে ধরলো শুভ্রকে। পিঠে চিমটিও কাটল একটা। শুভ্র ব্যথায় কুকিয়ে উঠল। সঙ্গেসঙ্গে তুলি শুভ্রর ঠোঁটে আঙ্গুল রাখল। তারপর আঙুলটা শুভ্রর সারামুখে ছুঁয়ে তুলি গাইলো;

রাত বংজরভি সী হৈং; কালে খংজর সী হৈং
রাত বংজর সী হৈং; কালে খংজর সী হৈং
তেরহ সীনে কী লৌ; মেরে অংদর ভী হৈং
তূ হবা দে ইসস; তোহ মেরা তন জল

শুভ্র তুলির চোখের দিকে চাইল। ও চোখ যেন শুধু কোন চোখ নয়। আস্ত এক মায়ার সমুদ্র। ডুবে যায় শুভ্র। শুভ্র আর রাগ করার ভান করতে পারে না। দুহাতে কোমর পেঁচিয়ে ধরে তুলির। তুলিও বাকি গান
শেষ করলো, একে অপরের চোখের দিকে চেয়ে:

জলা দে রে স্যাং জলা দে র; মোহে রাং লাগা দে র
মেং তোহ তেরী জোগনিযা; তূ জোগ লাগা দে রে..

গান শেষ হলো। অথচ এখনও দুজন দুজনের চোখের দিকে চেয়ে আছে। শুভ্র এগিয়ে এসে তুলির কপালে চুমু বসালো। নেশালো গলায় বললো;

‘থ্যাংক ইউ আমার এই কাঠখাট্টা জীবনে আসার জন্যে।’

তুলি শুভ্রর চুল এলোমেলো করে দিয়ে মুচকি হেসে বললো;

‘রাগ কমেছে?’

হেসে ফেলল শুভ্র। উত্তর দিল না। কিছু কথা বলে নয়, করে বোঝাতে হয়। শুভ্র আলগোছে তুলির কোমরে হাত রেখে পাঁজাকোলে তুলে বিছানার দিকে এগিয়ে গেলো। নরম বিছানায় তুলির পিঠ ঠেকতেই তুলি ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করলো;

‘বাকি দুটো উইশ?’

শুভ্র তুলির উপর নিজের সমস্ত ভার ছেড়ে দিয়ে বললো;

‘ওগুলো বিশেষ মুহূর্তের জন্যে তোলা রইল।’

তুলি অন্যপাশে মুখ ঘুরিয়ে হাসল। শুভ্র তুলির মুখটা নিজের দিকে ঘুরিয়ে কপালে চুমু খেল। শাড়ির আঁচল সরানোর আগে ফিসফিস করে বলল:

‘চলো, ডুবে যাই।’
‘কোথায়?’
‘সুখের সমুদ্রে।’

তুলি চোখ লুকালো। অন্যদিকে চেয়ে লাজুক গলায় বলল;

‘আমি সাঁতার জানি না।’
‘তাহলে আসো, শিখিয়ে দিই।’

কথাটা বলে শুভ্র তুলিরশাড়ির আঁচল সরিয়ে ফেলল। তুলির গলায় ঠোঁট ছুঁতেই দুহাতে তুলি আগলে ধরল শুভ্রকে। মানুষটা যখন ছোঁয়, তুলির এত কেন ভালো লাগে? অন্য কেউ সামান্য হাতটা ধরলেও তুলির গা ঘিনঘিন করে। অথচ স্বামী শুভ্রর প্রতিটা স্পর্শ তুলিকে যেন স্বর্গ দেখায়। তুলি চোখ বন্ধ করা অবস্থায় ফিসফিস করে শুভ্রকে বললো;

‘ভালোবাসি।’

শুভ্র মাথা তুলে। তুলির চোখে চোখ রেখে মৃদু হেসে জবাব দেয়;

‘জানি তো।’

বলে হালকা হেসে তুলির কপালে চুমু খেল। অতঃপর আবারও ডুবে গেলো তুলির মধ্যে। দম্পত্তির এ রাতটা কাটল অত্যন্ত সুখে, আনন্দে।

#চলবে