আঁধারিয়া অম্বর পর্ব-১+২

0
1559

#আঁধারিয়া_অম্বর
#সুরাইয়া_সাত্তার_ঊর্মি
১।

“কন্ট্রাক্ট পেপার অনুযায়ী আজ থেকে তুমি আমার বিয়ে করা রক্ষিতা। চিন্তা নেই তোমার যা চাই তা তুমি পেয়ে যাবে, এখন সাইন করো। ”

কথাটা বলে কন্ট্রাক্ট পেপারটা এগিয়ে দিল মি.ইজহান। তার মুখ থেকে এমন একটি কথা শোনে আমার সারা শরীর হিমশীতল হয়ে গেলো। চোখের জল গড়িয়ে পড়লো দু ফোটা। পেপারের পাশেই পড়ে থাকা কালো কুচকুচে ঘন কালির কলমটি তুলে সাইন করে দিলাম। ভাগ্যের এই পরম উপহাস মাথা পেতে নিলাম। সাইন হতেই মি. ইজহান টেনে নিয়ে গেলেন আমাকে পাশের রুমে। ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলেন বিছানার উপর। পরনের জেকেটটি খুলে ফেলে দিলেন দূরে। পরমুহূর্তে হামলে পড়লেন আমার শরীরে। ক্ষত বিক্ষত করে দিলেন তার নখের আঁচড়ে। কামড়ের দাগ বসিয়ে দিলেন আমার শরীর। আমি সইতে পাড়ছিলাম না। মনে হচ্ছিলো আগুনের মাঝে জ্যান্ত পোড়ানো হচ্ছে আমাকে। আমি কাকুতি মিনতি করে গেলাম। শেষ রক্ষে আর হলো না। সদ্য বিয়ে করা বরের রক্ষিত বউয়ের কর্তব্য নিভানো ছাড়া আর কোনো পথ রইলো না যে..। একসময় উনি থেমে গেলেন।হয়তো তার কাজ শেষ। আমার ক্ষত বিক্ষত শরীরটা পরে রইলো বিধস্ত ভাবে বিছানার উপর। গলা শুকিয়ে কাঠ। মি. ইজহান উঠে সোজা ওয়াশরুমে চলে গেলেন। ফিরে এসে কচকচে কিছু হাজার টাকার বান্ডিল ছুড়ে মারলেন শরীরে। দাম্ভিক মুখখানায় গম্ভীর, বরফ কন্ঠে বললেন,

“এখনের জন্য এতটুকুই। রাতের জন্য তৈরি থেকো।”

তার কথাটুকু কানে যেতেই থমকালাম। এ প্রথম কোনো পুরুষের স্পর্শ পেয়েছি আমার শরীরে, কিন্তু তা ভালবাসার নয়, মরণ যন্ত্রণার। আবার সেই একই যন্ত্রণা সইতে হবে? আমার ক্ষত বিক্ষত শরীর, যেটা নিয়ে উঠে বসতে পর্যন্ত পারছিনা? সেই শরীরে আরেক দফা সঙ্গম কিভাবে করতে চান তিনি? একটু ও কি মায়া দয়া নেই তার মনে নাকি? আমি খুব কষ্টে বললাম,

“মি. ইজহান! আজ আ..আর না। দয়া করুন! আজ অতন্ত্য…! ”

মাঝপথেই থামিয়ে দিলেন উনি আমাকে। কোনো ভ্রুক্ষেপহীন ছাড়াই বলে উঠলেন,

“টাকা টা বুঝি তোমার দরকার নেই না?”

বুকের মাঝে কামড় দিয়ে উঠলো আমার। টাকাটা প্রয়োজন নেই মানে? টাকার প্রয়োজনেই তো আজ নিজেকে বিকিয়ে দিলাম আর হারালাম আমার সতীত্ব। আমি শুকনো মুখে বললাম,

“ঠিক আছে। রাতে আবার চলে আসবো!”

উনি তাৎক্ষণিক বললেন,

“তুমি এখন আমার রক্ষিতা বউ। তোমার যাবতীয় জিনিস নিয়ে চলে আসবে। এখন থেকে আমার বাসায় থাকবে!কখন আমার তোমাকে প্রয়োজন পরে যায়…!

আমি চুপ করে রইলাম। লোকটি বেড়িয়ে গেলো। আমি টাকা গুলো তুলে নিলাম। পাশেই পড়ে থাকা কাপড় গুলো কুঁড়িয়ে ওয়াশরুমের দিক চলে গেলাম। ঝরনার পানির নিচে নিজেকে মেলে ধরতেই ব্যথায় কুঁকড়ে উঠলাম। যেখানে পানি লাগছে জ্বালা করছে খুব। অসহ্য ব্যথা শরীরে। আমি চিৎকার করে কাঁদতে লাগলাম। ভাগ্যে কি নির্মম পরিহাস। প্রয়োজনের কাছে নিজের সতীত্ব হেড়ে গেলো। হয়ে গেলাম সুপার স্টার ইজহান মেহরাবের বিবাহিত রক্ষিতা! গা গুলিয়ে এলো আমার মাটিতে বসে পড়লাম। ধুয়ে যেতে দিলাম কিছুক্ষণ আগে করা মি. ইজহানের স্পর্শ গুলো। কিন্তু মনের দাগ গুলো? মনের দাগ গুলো কি আদৌ যাবে? নাহ্! যাবে না। কখনো না…!

————–

গাড়ির পিছনের সিটে হেলে বসে আছে ইজহান। চোখ জোড়া গম্ভীর, শীতল। তাকিয়ে আছে বাহিরের বিচিত্র নৈসর্গিক সৌন্দর্য দিকে। উদাসীন সেই দৃষ্টি। তার মেনেজার অধিরাজ ইজানকে এমন উদাস দেখে বলল,

“ইজহান? আমরা না হয় মিটিং কেন্সেল করে দেই?”

ইজহান তাকালো অধিরাজের দিকে। গম্ভীর কন্ঠে বলল,

“হোয়াই?”

“তোমার মনটা হয়তো ভালো না। তাই…!”

ইজহানকে থামিয়ে দিয়ে বলল,

“আমার পার্সোনাল লাইফ, আর প্রোপেশনাল লাইফ আলাদা রাখতে জানি আমি। সো কিপ কোয়াইট! ”

অধিরাজ চুপ করে গেলো। মাঝে মাঝে ইজাহানের অভিব্যক্তি কিছুতেই বুঝতে পারেনা। অল্প বয়সে ছেলেটি নিজের যোগ্যতায় নাম, জোশ, পাওয়ার সব কামিয়েছে। চলচিত্রের জগৎ -এক যুগ কাজ করে ছেড়ে দিয়ে এবার রাজনৈতিক কাজে জড়িয়ে গেছে আজ এক বছর। অথচ তার নামে কোনো বেড রেকর্ড নেই। এমন একটি গম্ভীর মানুষ, সে কিনা নিজের বাবার ঘনিষ্ঠ ছোটবেলার বন্ধুর মেয়েকে বিয়ে করে রক্ষিতা করতে পারে? কই! ওর ক্যারেক্টারে মেয়েলি কোনো দাগ নেই। তাহলে?কেন করলো সায়ন এমন? শুধুই কি টাকার জন্য? নাকি পিছনে রয়েছে অন্য কোনো রহস্য?

——————-

দিন ফুরিয়ে রাত হতে লাগলো। ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পৃথিবীর বুক ভাসিয়ে দিতে লাগলো। ভাসিয়ে গেলো আমার বুকের ভিতরটাও। আই সি ইউর সামনে দাঁড়িয়ে আছি। আমার বাবা আজিজুল হক। এক সময় বিশিষ্ট শিল্পপতি ছিলেন। অথচ আজ, আজ উনার আই সি উর খরচ বহন করতেই হিমশিম খাচ্ছি। হুট করেই বাবা কিভাবে যেন দৈলিয়া হয়ে গেলেন। তা সহ্য করতে না পরে স্টোক করলেন। আর এখন বিছানায় শয্যাশায়ী। ছোট শ্বাস বেড়িয়ে এলো আমার ভিতর থেকে। তখনি ফোনের রিং টোন তীক্ষ্ণ আওয়াজ তুললো। ভেজা চোখে হাতের মুঠোয় থাকা ফোনটি তুলতেই জ্বলজ্বল করে উঠালো মি. ইজহানের নাম। আমি গাল ফুলিয়ে শ্বাস নিলাম। চোখের জলটুকু মুছে ফেলে ফোনটা তুলে নিলাম। একটা ঠান্ডা গম্ভীর গলা আমার কানের পর্দায় ধাক্কা দিয়ে গেলো। শরীরে মাঝে কেমন একটা অদ্ভুত অনুভূতি হলো। ইজহান বললেন,

“হোয়ার আর ইউ শ্যামা?? ”

আমি শুকনো ঢুক গিললাম। ঠোঁট ভাজ করে বললাম,

“আসছি!”

চলবে,

#আঁধারিয়া_অম্বর
#সুরাইয়া_সাত্তার_ঊর্মি
২।
মধ্যরাত….!
ওয়াশরুমে ভিতর থেকে পানির কলকল শব্দ ভেসে আসচ্ছে। কিছুক্ষণের মাঝেই ওয়াশরুমের দরজা ঠেলে বের হলেন মি.ইজহান মেহরাব জহরান। তাকে দেখেই আমার ভিতরটা তীব্র বিতৃষ্ণায় নাড়া দিয়ে উঠলো। কিছুক্ষণ আগের দেয়া তার মরণ যন্ত্রনা এখন রয়েছে আমার শরীরে। যতবার আলিঙ্গন করেছে মি. ইজহান মনে হয়েছে আমার শরীর ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। বসে গেছে, কামড়, নখের আচরে দাগ। আমার সমবয়সী বান্ধবীদের কাছ থেকে জেনেছিলাম, বিয়ের রাতটুকু হয় কতটা রোমান্টিক, ভালোবাসায় ভরপুর।কিন্তু আমার বেলায় এমন হলো কেন? দ্বিতীয়বার সঙ্গমের সময়-ও এত অসহ্য যন্ত্রণা? আমি কি তার বিয়ে করা রক্ষিতা বলে?? আচ্ছা মানুষটা কি এজন্যই বিয়ে করেছে আমাকে, যে যখন, তখন মিলিত হতে পারে এমন হিংস্র ভাবে? নাকি তার অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে??আমি ভয়ে ভয়ে তাকালাম মানুষটার দিকে, কালো কুচকুচে গভীর নির্লিপ্ত চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমি সাদা বিছানার চাদরটা জড়িয়ে নিলাম বস্ত্রহীন গায়ে। মি. ইজহান এগিয়ে এলেন তার নগ্ন পায়ে। ভেজা শরীরে বিন্দু বিন্দু পানি নিদারুণ লাগচ্ছে। ঘরের নিয়ন আলোয় চলচ্চিত্র কিং ইজহান মেহরাব জহরানকে কতটাই না মায়াময় লাগচ্ছে। কিন্তু এই মানুষটির গম্ভীর, শীতল বরফ চাহনিতে জমিয়ে দিচ্ছে আমাকে। আমি হাসার চেষ্টা করলাম। কিন্তু মানুষটি? অব্যক্ত হীন। কত শত মেয়ের স্বপ্নের রাজকুমার উনি। সুঠাম দেহের বাদামি রঙটি নিয়ন আলোয় মারাত্মক সৌন্দর্য লাগছে। উনি এগিয়ে এলেন। আমার মুখোমুখি বসলেন। চোখে চোখ মিলে দৃষ্টি মিলিত হলো। তার চোখ, মুখ দেখে কিছুই বোঝার ক্ষমতা নেই আমার। মুখ ফুটে কিছু বলার সাহস পাচ্ছি না। আমার ভাবনার মাঝে ছেদ ফেলে, তার বরফ ঠান্ডা গলায় বললেন,

“আমাদের মাঝে কি হচ্ছে না হচ্ছে তা যেন কেউ জানতে না পারে। এমনকি তোমার পরিবার আর বাহিরের জগৎ-ও!”

আমি মাথা নত করে ফেললাম। পরিবারকে কিভাবে জানবে? একটা মাত্র ছোট বোন আর বাবাই তো আমার সব। বাবা লড়াই করছে আই সি ইউর বেডে, বোনকে ফেলে রেখেছি হোস্টেলে। এই ছন্নছাড়া জীবনে কাকে কি বলবো আমি??তবুও মাথা নাড়ালাম,

“কেউ জানবে না!”

মানুষটার যেন বিশ্বাস হচ্ছেনা আমার কথা। তীক্ষ্ণ দৃষ্টি মেলে, চেপে ধরলেন আমার গাল তার শক্ত, সুঠামো হাতে। আমি কুঁকড়ে উঠলাম তার করা হঠাৎ আঘাতে। মুহূর্তেই চোখ ভর্তি হলো জলে। মি. ইজহান হিসহিসিয়ে বললেন,

“আর কেউ যদি জানতে পারেনা…! শেষ করে দিবো তোমাকে, তোমার বাবাকে আর তোমার…. বোনকে…!মাইন্ড ইট!”

আমি ভয়ে এবার সিটিয়ে গেলাম। ঘন ঘন মাথা নাড়িয়ে স্বগতোক্তির মতো বললাম,

“কে.. কেউ জানবেনা। আমি কাউকে বলবো না!”

“গুড!”

পরমুহূর্তেই গম্ভীর শীতল কন্ঠে বললেন মি. ইজহান। এবং দামি আলমিরাটা থেকে কাপড় বের করে বড় বড় পা ফেলে চলে গেলেন জোরে দরজা বন্ধ করে। আমি তার যাওয়ার পানে চেয়ে রইলাম স্থীর দৃষ্টিতে। ক্লান্ত শ্রান্ত শরীরটা এলিয়ে দিলাম বিছানায়। চোখ দুটি উপরের চলন্ত ফেনটির দিকে নিবদ্ধ করলাম। ভাবতে লাগলাম আমার জীবনের সুখের দিন গুলোর কথা। সুখ তো চলেই গেছিলো আমার জীবন থেকে এক যুগ আগে। কিন্তু গত ছয়টি মাস পুরোপুরি ভেঙে গুড়িয়ে দিয়ে গেলো আমাকে। ছোট শ্বাস বেড়িয়ে এলো আমার ভিতর থেকে। আলিশান, লাস্যময়ী ঘরটির নরম তুলতুলে বিছানায় শুয়ে চোখ পাতা ভারী হয়ে এলো। চট করেই নেমে এলো ঘুম। পাড়ি জমালাম স্বপ্নের রাজ্যে।

—————–

তীব্র একটি আওয়াজে ঘুম ভাঙ্গলো আমার। বেড সাইডে রাখা মুঠোফোনটি তুলতেই ওপাশ থেকে আমার বস ম্যানেজিং এডিটর শান্তনু ফ্যাঁচ ফ্যাঁচ করে উঠলেন,

“এই শ্যামা? কোথায় তুমি? এখনো লাপাতা? চাকরি করার কি ইচ্ছে আছে নাকি? হ্যাঁ??”

ঘুম ছুটেনি তখনো আমার। ম্যানেজিং এডিটরের কথায় ধড়ফড় করে উঠে বসলাম। আমতা আমতা করে বললাম,

” না.. মানে.. স্যার আমি এখনি আসচ্ছি!”

ওপাশ থেকে বললেন তখন শান্তনু,

“অফিসে নয় ডিরেক্ট কলেজগেট পৌঁছাও। আজ মি. ইজহান সেখানে আসবেন। ব্যক্তব্য রাখবেন। গো!”

আমি মি. ইজহানের নাম শুনে থমকে গেলাম। পাশ ফিরে দেখলাম উনি নেই। সেই যে রাতে বেড়িয়ে গেছিলো? উনি আর ফিরেন নি? আমি ওপাশের মানুষটিকে বললাম,

“জি স্যার আমি আসছি!”

বলেই কলটুকু কেঁটে নেমে পড়লাম বিছানা থেকে। তড়িঘড়ি করে তৈরি হয়ে বেড়িয়ে যাবো তখনি মি. ইজহানের কেয়ার টেকার ডেকে উঠলো,

“মে.. মেডাম? স্যার বলেছেন নাস্তা করে যেতে!”

আমার বড্ড তাড়াহুড়ো ছিলো। এর মাঝেই কেয়ার টেকার নিপার কথা শুনে চমকে তাকালাম। মি.. ইজহান আমাকে খেয়ে যেতে বলেছেন? এত কেয়ার? গত দুটো দিনের ব্যবহার এতটা ভিন্ন? আমি শুকনো মুখে হাসলাম। বললাম,

“বাহিরে খেয়ে নিবো!”

বলে আবারো পা বাড়াতেই নিপার কন্ঠ চওড়া হলো,

“মেডাম স্যার আপনাকে না খাইয়া ছাড়তে নিষেধ করেছে! নয়তো কাজে বের হতে দিতে বারণ করেছে!”

আমি বিস্ময়ে বিমূঢ়। বলে কি? খাবার না খেলে বের হতে দিবে না? আমার বড্ড তাড়াহুড়ো। এরই মাঝে আবারো ফোনটা বেজে উঠলো। আমি কথা না বাড়িয়ে চটপট করে খাবার ভর্তি টেবিল থেকে জুস টুকু তুলে এক চুমুকে শেষ করে দিলাম। জুসের টেস্টটি পছন্দ হলো না আমার। কেমন ঝাঁঝালো। আমি আর সেদিকে পাত্তা দিলাম না। এক ছুটে বের হলাম কলেজ গেটের উদ্দেশ্যে।

—————

ইজহান নির্লিপ্ত ভাবে বসে আছে গাড়ির মাঝে। গাড়ি চলে এসেছে প্রায় গন্তব্যে। ঠিক তখনি রাস্তার ধারে শ্যামাকে দেখে বড্ড উদাসীন হয়ে পরে ইজহান। পরক্ষনেই এক রাশ রাগ দলাপাকিয়ে মাথায় চড়ে গেলো। ড্রাইভারকে গম্ভীর শীতল কন্ঠে আদেশ করে বলল,

” তোমাদের মেডামের উপর চালিয়ে দাও গাড়ি!”

উপস্থিত গাড়িতে সবাই থমকে গেলো। ততক্ষণে ড্রাইভার স্পীড বাড়িয়ে দিলো। ঠিক সেই মুহূর্তেই অধিরাজ চেঁচিয়ে উঠে বলল,

” মেডাম যেন ব্যাথা না পায় কবির!”

গাড়িটি ঠিক শ্যামার মুখোমুখি হতেই একদম ছিটকে গেলো কিছুটা দূরে। উদাসীন দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখলো ইজহান। ভাবলেশহীন তাকিয়ে আছে তার দিকে। ঠোঁটে বাঁকা হাসি।

————–

লাইভ চলছিলো। চ্যানেল টোয়েন্টি থেকে রিপোটার হিসেবে এসেছি আমি। আমি কথা বলছিলাম ছোট মাইক্রো ফোন হাতে আমার। ক্যামেরা ধরেছিলো জাহিদ। ঠিক তখন দূর থেকে একটি গাড়ি স্বা করে এসে দাঁড়ালো আমার সামনে। আমার ভয়ে যেন আত্মা কেঁপে উঠলো। আমি ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে রইলাম গাড়িটির দিকে। বুঝতে বাকি নেই এই কাজটি মি. ইজহানের। কিন্তু কেন করলেন এমন? নিজের চিন্তায় বালু ঢেলে সামলে নিলাম লাইভটি। মুখের মাঝে হাসির রেখা টেনে বললাম,

“আপনার দেখতেই পারছেন, চারিদিকে উত্তেজনা। সবাই অধির আগ্রহ নিয়ে বসে আছে মি. ইজহানের দর্শনের জন্য। ইতি মধ্যে তিনিও উপস্থিত। ”

ইজহানের শীতল দৃষ্টি এখনো মেপে নিচ্ছে আমার শরীর। অস্থিরতায় কাঠ হয়ে যাচ্ছি। ঠিক সেই মুহূর্তে তার ব্ল্যাক বিএমডব্লিউ গাড়িটি থেকে নেমে এলো ইজহান। পরনে সাদা জামা, কালো প্যান্ট
প্রতিবারের মতো নিট এন্ড ক্লিন। আমি চোখ ফিরিয়ে বেঘাত ঘটা লাইভটি আবারো শুরু করতে করতে মাইক নিয়ে এলাম মি. ইজহানের সামনে। উনি তার সুচালো ঠোঁটে হাসি ফুঁটালেন। কিছু বলবেন এমন ভাব করে শীতল বরফ কন্ঠে বললেন,

“নো কমেন্টস! ”

বলেই গটগট করে চলে গেলেন উনি স্টেজের দিকে।
রাগে পিত্তি জ্বলে উঠলো আমার। পর পর করা দুটো অপমান সহ্য হলো না। কিছুই যখন বলবি না, তো এমন কেন করলি? আর আমার লাইভটাই বা নষ্ট করার মানে কি??আমি ছোট শ্বাস ছাড়লাম। মি. ইজহানের সাথে কথা বলার জন্য পথ খুঁজে যাচ্ছি। উনি কি মেরে টেরে ফেলতে চায় নাকি আমাকে? বিয়ে করে রক্ষিতা করতে পারেন উনি! কিন্তু আমার কাজে বেঘাত ঘটনোর অধিকার তার নেই। আমি রাগে ফুঁসতে লাগলাম। ঠিক তখনি উঠে গেলেন উনি বক্তব্য দিতে,

“আসসালামু আলাইকুম। সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য। কেমন আছেন আপনারা?”

মাঠ ভর্তি মানুষদের সরগরম এক সাথে চেচিয়ে উঠলো ভালো বলে। মি. ইজহান হাসলেন। কালো কুচকুচে ঘন পলব চোখ দিয়ে দূরে দাঁড়িয়ে থাকা আমার দিকে এক দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন। সেই দৃষ্টিতে কিছু একটা ছিলো। যেন ভস্ম করে দিচ্ছে যেনো। তাকিয়ে থাকা গেলো না তার দিকে। উনি আবার বললেন,

“আমি কোনো বক্তব্য দিতে আসিনি। এটা আমার কাছে বড্ড বোরিং লাগে। কিছু মনে করবেন না, আমি ডিরেক্ট কাজের কথায় আসবো। আমার শহরে যার যত অভিযোগ থাকবে তাদের জন্য আমি প্রতিটি এলাকায় একটি করে মোট ১৩ টি অভিযোগ বক্সের স্থাপন করবো। প্রতি সপ্তাহে বক্স গুলো চেক করা হবে। এবং সকলের অভিযোগ দূর করার জন্য আমি আপ্রাণ চেষ্টা করবো। তার জন্য অবশ্যই আপনাদের সাহায্য চাই আমি। কি সাহায্য করবেন তো??”

সকলেই আবার হৈ হৈ করে উঠলো। আমি তাকিয়ে রইলাম এই জনগণ আর উনার দিক। কত ভালোবাসে তারা মি. ইজহানকে। আর মি. ইজহান? নিজেও যেন এই মানুষ গুলোর জন্যই বাঁচে। কিন্তু আমি? এই আমিটাকে কেন উনি এত ঘৃণা করেন? যতবার তার চোখে চোখ পড়ে, আমার জন্য তার চোখে উদাসীন, বিরক্তি, রাগ, ঘৃণা স্পষ্ট দেখেছি। কিন্তু কেন??

আমি আকাশ কুসুম ভাবছিলাম। ঠিক তখনি কারো কন্ঠে আমার ভাবনার ছেঁদ পরে। পিছনে তাকিয়ে দেখি অধিরাজ। মি. ইজহানের ম্যানেজার। আমি হেসে বললাম,

“অধিরাজদা? কিছু বলবেন?”

অধিরাজ হালকা হেসে মাথা নাড়িয়ে বললেন,

“তোমার পায়ে চোট লেগেছে। ঔষধ লাগাওনি কেনো?”

আমি খেয়ালি করিনি কখন চোট পেলাম। পায়ের দিকে তাকাতে রক্তের ছোপ ছোপ দাগ দেখা গেলো। মনে পড়লো, তখন মি. ইজহানের গাড়ির সাথে একটু ধাক্কা লেগেছিলো কিনা। ব্যথা অনুভব হলেও পাত্তা দেইনি আমি। আমি হেসে বললাম,

“সমস্যা নেই দাদা আমি আমি মেডিসিন লাগিয়ে নিবো পরে। আচ্ছা মি. ইজহান কোথায় আছেন? উনি কি চলে গেছেন?”

অধিরাজ আবার মাথা নাড়ায়। যার অর্থ সে চলে গেছে। আমি হতাশ হয়ে বললাম,

“তার সাথে আমার কিছু কথা ছিলো। কোথায় পাবে?”

অধিরাজ বলল,

“ও তো এখন অফিসেই আছে। তুমি বরং সেখানেই যেয়ে দেখা করে আসো?”

আমি মাথা নাড়লাম। জাহিদকে আমার ব্যাগ দিয়ে বললাম অফিসে চলে যেতে। আর আমি ছুটলাম উনার অফিসের দিকে।

অফিসে আসতেই নিচে দেখা মিললো মি. ইজহানের অ্যাসিস্ট্যান্ট রুমার সাথে। হেসে হেসে বলল,

“স্যার মিটিং রুমে। ওয়েটিং রুমে বসে ওয়েট করতে হবে যে।”

আমি প্রতিউত্তরে হেসে হাঁটা ধরলাম ওয়েটিং রুমের দিকে। কিন্তু সেখানে কেউ নেই। আমি বসে কিছুক্ষণ ওয়েট করলাম। ফোনটা হাতে নিয়ে দু বার কল করলাম। রিং হতে হতে কেটে গেলো। ঠিক তখনি খট করে খুলো গেলো দরজা আর…….

চলবে,