আনন্দধারা বহিছে ভুবনে পর্ব-০১

0
814

#আনন্দধারা_বহিছে_ভুবনে (পর্ব ১)
নুসরাত জাহান লিজা

সকালের এই রোজকার অশান্তি অবন্তীর জন্য রীতিমতো অসহনীয় হয়ে উঠেছে। বড়চাচা আর তার সুপুত্র অয়নের মধ্যে তুমুল কথা কাটাকাটি লেগে গেছে। এই কলহ যেন ওর ঘুমভাঙানি সঙ্গীত হয়ে গেছে এখন। এভাবেই ঘুম ভাঙছে প্রায় প্রতিদিন। এই ছেলেটারও যা বলিহারি, একটু সাবধান হলেই এই অশান্তি এড়ানো যায়। কিন্তু উল্টো এটা যেন অয়নের কাছে উপভোগ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। দুই বেলা নিয়ম করে চেঁচামেচি না শুনলে বোধহয় বেয়াড়া ছেলেটার পেটের ভাত হজম হয় না৷ কিন্তু নিত্যকার এই কথার লড়াইয়ে সে চরম বিরক্ত।

“নবাবজাদা হইছিস? অপদার্থ। তোর আশেপাশে দেখ, সবাই তরতর করে মানুষ হয়ে গেল। তুই কোনোরকম একটা কলেজে অনার্স করছিস। জীবনটা কি খেলা তোর কাছে?” বড়চাচার হুংকার কানে ভেসে আসছে।

“মা, এই রুটি আমি খাই না, তেলে ভেজে দাও।”
অবন্তী শুনল অয়ন বড়চাচাকে পুরোপুরি এড়িয়ে গিয়ে অন্য প্রসঙ্গ তুলল।

এতে বড়চাচা রেগে আরও ব্যুম হয়ে গেলেন, “খাওয়া, ঘুম আর কতগুলা বদমাশ পোলাপানের লেজ ধরে ঘুরাঘুরি ছাড়া আর কী আছে তোর জীবনে?”
এভাবে কথায় কথায় লেগে গেল ধুন্ধুমার।

অবন্তী ঘুম ঘুম চোখে উঠলো। মাথা ব্যথা করছে। রাতে দুটোর পরে ঘুমিয়েছে। ঠিক করেছে আজ ক্লাসে যাবে না, তাই ভেবেছিল একটু বেলা পর্যন্ত ঘুমাবে। কিন্তু এ বাসায় সেই উপায় নেই। রাতে ঘুমানোর আগে আরেকবার চলবে এসব। সারাদিন অবশ্য বাড়িটা একেবারে শান্ত থাকে। অশান্তির উৎসরা তখন বাসায় থাকে না। ফোন বাজতেই সচকিত হলো অবন্তী। শাফিন ফোন করেছে। মৃদু হেসে ফোনটা রিসিভ করল,

“উঠেছিস অন্তি?”
“না উঠলে ফোন ধরলাম কী করে?”
“আমি জানতাম তাই হবে। তুই যে কী করে সহ্য করিস এসব?”

অবন্তী একটা দীর্ঘশ্বাস চাপল সন্তর্পণে। অবন্তীর বাবারা দুই ভাই এই বাসায় একসাথেই থাকেন। একমাত্র ফুফু থাকেন তার শ্বশুরালয়ে। অবন্তীর বড় ভাই অনিক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্সে পড়ছে। অয়ন বড়চাচার একমাত্র সন্তান। তার বাড়ির অনেককিছুই অবন্তী শাফিনের সাথে শেয়ার করে, অবন্তীর সবচাইতে কাছের বন্ধু সে। ভীষণ প্রাণখোলা, তবুও ছেলেটার মধ্যে মাঝেমাঝেই একটা অদ্ভুত বৈরাগ্য ভর করে যেন। তখন খুব উদাসীন হয়ে যায়, অচেনা মনে হয়। অবন্তীর জন্য স্বস্তির কথা হলো এই অবস্থা খুবই কদাচিৎ দেখা যায়। আড্ডাবাজ শাফিনই সবসময় দৃশ্যপটে দন্ডায়মান থাকে।

“ক্যাম্পাসে কখন আসবি?”
“আজ যেতে ইচ্ছে করছে না রে।”
“সে কী? আজ আশরাফ স্যারের ক্লাস আছে ভুলে গেলি। এটাতে তোর এট্যান্ডেন্স কম। পরে দেখবি এক্সামের সময় পারসেন্টেজ নিয়ে ঝামেলা করবে।”

কথা শেষ করে অনিচ্ছা সত্বেও অবন্তী তৈরি হতে বসল৷

“কী রে, খুন্তি, রাতে না বললি আজ যাবি না ভার্সিটিতে? ওই লাফাঙ্গা বন্ধুর বদনখানি না দেখলে বুঝি ভালো লাগে না?” খেতে বসেছিল মাত্র, তখনই অয়নের আগমন। তার ক্যাটকেটে হাসি আর কথার ধরনে অবন্তীর গা জ্বলে গেল।

“তুই সবাইকে নিজের মতো কেন মনে করিস? আর আমি হাজারবার বলেছি আমাকে খুন্তি বলবি না। এখন যা তো এখান থেকে।” রুটি ছিঁড়তে ছিঁড়তে হিসিয়ে উঠে অবন্তী।

“আমি তোর চাঁদ বদন দেখতে আসিনি। তোর কাছে একশো টাকা হবে? বাবা তো দেবে না৷ পতি অন্তঃপ্রাণ মায়ের কাছে বাবার কথা শিরোধার্য, তাই সেই মহীয়সী নারীও কিছু দেবে বলে মনে হয় না। এখন একমাত্র তুইই ভরসা।”

“তুই আগে যে টাকাগুলো নিয়েছিস সেগুলো ফেরত দে। দুই দিনের কথা বলে নিস সবসময়। দেবার বেলায় খবর থাকে না।”

“সব ঋণ শোধ করতে নেই রে। আছিস বাপ-মায়ের আদরে, এসব তুই বুঝবি না। দিলে দে না দিলে চলে গেলাম। এত কৈফিয়ত দিতে ঠেকা পড়েনি আমার।”

“আমার যেন যেচে পড়ে ধার দিতে ঠেকা পড়েছে?”

অবন্তীর কথায় অয়ন মুখ গোমড়া করে বেরিয়ে যায়। এবার যেন তার কিছুটা মন খারাপ হলো। এভাবে কথা শোনানোর কী দরকার ছিল! পরক্ষণেই মনে হলো বেশ করেছে, অপমান মুখ বুজে সহ্য করার মতো মেয়ে সে নয়।

অবন্তীকে পরিবার আর বন্ধুমহলের প্রায় সবাই অন্তী নামে ডাকলেও অয়ন সবসময় ‘খুন্তি’ বলে ডাকে। তবে সবার সামনে কিছুটা ভদ্রস্থতা করতে ডাকে বিন্তি। অবন্তীর গা চিড়বিড় করে ওঠে। কিন্তু এসবে এই ব্যাটা যে থোড়াই কেয়ার করে সেটা সে খুব ভালো করে জানে। এমন গোঁয়ার গোবিন্দ ছেলে এই জগতে বুঝি আর দুটি নেই। অবন্তীর ভীষণ ইচ্ছে হয় খুন্তির ছ্যাঁকা কেমন হয় সেটা বোঝাতে। কিন্তু তার যা গণ্ডারের চামড়া, ভিসুভিয়াসে বসিয়ে রাখলেও এতটুকু আঁচ গায়ে লাগবে না। বরং সেখানে বসে থেকেও নজরুলের ‘বিদ্রোহী’ কবিতার লাইন আওরাবে,

“আমি জাহান্নামের আগুনে বসিয়া হাসি পুষ্পের হাসি”

তবে অয়নের কিছু এলো গেলো কিনা সেটা প্রধান নয়। অবন্তী মনে মনে প্রতিজ্ঞা করেছে, “একদিন এই খুন্তির ছ্যাঁকা তোকে আমি অবশ্যই দেব, কঠিন ছ্যাঁকা। গায়ে না লাগলেও মন পুড়বে, পুড়ে পুড়ে ভস্ম হবে।”

ইউনিভার্সিটিতে যাবার উদ্দেশ্যে বের হবার আগে আগে মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে অয়নের অয়নের ঘরে এলো। ঘর তো যেন রীতিমতো একটা জঙ্গল। সবকিছু ছড়ানো ছিটানো। এত অগোছালো ঘরে কেউ কীভাবে থাকে অবন্তী সেটাই ভেবে পায় না। অয়ন বাইরে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছে তখন, গুনগুনিয়ে কোনো গানের সুর ভাজছে। চুলে চিরুনি চালাতে চালাতে বলল,

“তা মহারানী, আমার মতো গরীবের ঘরে আপনার পায়ের ধূলো পড়ল কেন?” নাটকীয় অভিব্যাক্তি ফুটিয়ে বলল অয়ন।

“ঢং করবি না অয়ন। তোর ঢং দেখতে আসিনি আমি। টাকাটা নে।”

টাকা রেখে বের হতে গেলেই অয়ন পেছন থেকে বলল, “খুন্তি, তুই কি জানিস, তুই হচ্ছিস কঠিন হৃদয়ের দয়ালু মানুষ? আমি কিন্তু জানতাম তুই শেষপর্যন্ত টাকাটা দিবি। তোর ভরসাতেই রেডি হচ্ছিলাম।”

অবন্তী জানে এসব কথার কোনোটাই প্রসংশা করে বলা নয়। সূক্ষ্ম একটা খোঁচা মিশে আছে এতে। কটমটে চোখে একবার অয়নকে দেখে বেরিয়ে এলো বাসা থেকে।

অবন্তী এমনিতে অসম্ভব চঞ্চল আর জেদি হলেও বেশ লক্ষীমন্ত মেয়ে, মেধাবী৷ ছেলেবেলায় একবার পরীক্ষায় খারাপ করেছিল বলে অয়নকে বড়চাচা বেদম পিটিয়েছিলেন। সেটা দেখেই সে নিজে একেবারে সিধে হয়ে গেছে। সেই যে পড়াশোনায় মনোযোগী হয়েছে, ক্লাসে রোল নম্বর সবসময় দশের মধ্যেই থেকেছে। এখন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স চতুর্থ বর্ষে পড়ছে। কিন্তু যে ছেলে মারটা খেয়েছিল, তারই চৈতন্য ফেরেনি। না তখন, আর না এখন। দিনে দিনে নিজেকে কীসের স্রোতে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে অয়ন কে জানে! এখনো সেই চিরচেনা একগুঁয়ে, ঘাড়ত্যাড়া অয়ন-ই রয়ে গেছে।

অবন্তী বাইরে যেমনই থাকুক, ভেতরে ভেতরে তার একান্ত নিজস্ব একটা জগত আছে। সেই ফ্যান্টাসি ওয়ার্ল্ডের সবকিছু তার মর্জি মতো চলে। অয়নও সেখানে কেমন অন্যরকম। অয়নের তালা দিয়ে রাখা গোপন ড্রয়ারে কী লুকোনো আছে সেটা দেখার তাড়না অনুভব করে সে, কল্পিত জগতে নিজের মতো করে একটা ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়েছে।

এই যে এক বখাটে ছেলে রাস্তাঘাটে বিরক্ত করে বলে বাসা থেকে বাবা, চাচারা তাকে ইউনিভার্সিটি ছাড়া অন্য কোথাও একা একা বের হতে দেন না ঠিকই, কিন্তু ওর নিজস্ব জগতে সে একা একা সমুদ্রের নীল জল ছুঁয়ে দেয়, পাহাড়ের চূড়ায় উঠে বুনো উল্লাসে মাতে, কখনো বা ঘন অরণ্যে হারিয়ে যায়। তার হৃদয়ের এই গহীন প্রকোষ্ঠে কত যে লুকিয়ে রাখা অনুভূতি জমে আছে! সেখানে সে শক্ত, বিশাল একটা তালা মেরে রেখেছে। কেউ কোনোদিন সেখানকার প্রবেশাধিকার পায়নি। আসলেই কি তাই…

***
“শোনো, তোমার বাপ আর ভাইরে বইলো আমার টাকার দরকার। হাজার বিশেক হলেই হবে। হাতটান চলতেছে।”

“কেন? তোমার ইনকাম করার মুরোদ নাই, আবার টাকা ঠিকই উড়াইতে পারো। তোমার নেশা করার টাকা আমি বাপ ভাইয়ের কাছ থেকে আনতে পারব না।” কড়া গলায় শিউলি তার স্বামী তুহিনকে বলল।

বিয়ে হয়েছে এগারো মাস হলো, এরমধ্যে দুইবার টাকা এনে দিয়েছে। বিয়ের সময় বাবা ঘরের প্রায় সব ফার্নিচার, ফ্রিজ, টিভি দিয়েছে। একবার পঞ্চাশ হাজার, আরেকবার ত্রিশ হাজার টাকা এনে দিয়েছে। শিউলির বাবা নিতান্তই ছা-পোষা সরকারি কর্মচারী ছিলেন। অবসরে চলে গেছেন, এখন তার কাছে কিছুদিন পরপর হাত পাতার চাইতে গলায় দড়ি দেয়া সহজ মনে হয়।

আজ প্রথমবারের মতো মুখের উপরে না করল, এতে তুহিন ক্ষেপে গেল।
“আমি তোমারে এক সপ্তাহ টাইম দিলাম। এরমধ্যে ব্যবস্থা করবা। না আনতে পারলে কপালে খারাবি আছে।”

“তোমার সাথে যখন আমার কপাল জুড়ছে, তখন এমনেই আমার খারাবি শুরু হয়ে গেছে। আমি একটা টাকাও আনমু না। কী করবা কইরো।”

তুহিন রাগ দেখিয়ে হাতের গ্লাসটা ঢিল মেরে ভেঙে বেরিয়ে গেল। শাশুড়ি বেরিয়ে এসেছেন ততক্ষণে। গলা উঁচিয়ে বললেন,
“আইজও পুলাডা না খাইয়া বাইরাইলো। একটু বুইঝা সুইঝা চলবা না? কী জন্যে যে তোমার সাথে বিয়া দিলাম? একটা সংসারী মাইয়া দিয়া বিয়া করাইলে এই দিন দেহা লাগত না।”

শিউলির অনেককিছু বলতে ইচ্ছে করলেও চুপ করে থাকল। তবে আজকের কথাটা জমিয়ে রাখল। শুধু বলল, “আপনার আদরের ছেলেরে একটু বইলেন রাইতে মদ খায়ে যাতে বাড়িতে না আসে। আগে তো ঠিকঠাক শিক্ষা দিতে পারেন নাই।”

সফুরা চেঁচিয়ে উঠলেন, “চ্যাটাং চ্যাটাং কথা কইতে পারো খালি। তুমি বউ হইছো, স্বামীর লাগাম টানতে পারো না? পুরুষ মাইনসের এমন এটটু দোষ থাকবই। আমরা সংসার করি নাই?”

শিউলির আর শোনার রুচি হলো না। নিজের ঘরে গিয়ে দরজা খাটাস করে বন্ধ করে দিল। এতে সফুরা আরও ক্ষেপে গেলেন, “আমার পোলা আগে এইসব করত না। বিয়ের পরে এমুন হইসে। আমার বাবাডার জইন্যে ভালা মাইয়া আনবার পারি নাই গো।”

উচ্চগ্রামে তিনি এসব বলে যাচ্ছেন। শিউলি আর কোনো জবাব দিল না। এসব নিত্যকার ঘটনা। এখন গায়ে সয়ে গেছে। অথচ বিয়ের পরের দুই মাস ‘মা’ ডাকা ছাড়া কথাই বলেননি এই মহিলা। দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো বুক বেয়ে। পড়াশোনায় মোটামুটি ছিল, তবে বেশিদূর এগুতে পারেনি। তখন ফাঁকিবাজি না করলে আজ হয়তো এমন দিন দেখতে হতো না। প্রতিজ্ঞা করল, এবার আর বাবার কাছে হাত পাতবে না। তাতে যা হবার হোক।

***
শাফিন জব্বারের মোড়ের চায়ের দোকানটায় বসে অপেক্ষা করছিল আর চায়ে চুমুক দিচ্ছিল। মাথায় ঝিমঝিম ভাব আজ সারাক্ষণ বিরক্ত করছে। হলে থাকে সে। রাতে আড্ডাবাজি শেষে ক্লান্তি নিয়ে মশারী না টাঙিয়েই ঘুমিয়েছিল, ফলাফল হয়েছে ভয়াবহ। মশা যে ওকে টেনে নিয়ে যায়নি এটাই ভাগ্য!

সামনে তাকিয়ে দেখল অবন্তী আসছে। ধূসর রঙের সালোয়ার কামিজ পরেছে আজ। ভেজা খোলা চুলগুলোর জন্য বেশ স্নিগ্ধ লাগছে। অবন্তী সাথে থাকলে ভেতরের যত ক্লেদ আছে, কষ্ট আছে সবটা কিছু সময়ের জন্য ভুলে যাওয়া যায়। কাছাকাছি আসতেই শাফিন বলল,
“তোর জন্য অপেক্ষা করছিলাম। চায়ের বিলটা দে।”

“তোর কাছে পাঁচ-দশ টাকা থাকে না?”

“থাকে। কিন্তু তোর কাছ থেকে চা না খেলে আমার দিন খারাপ যায়।”

“হায়রে চাপা! মাইর খাবি কিন্তু তুই।” বলতে বলতে অবন্তী চায়ের বিলটা দিয়ে দিল।

“তোর হাতের মাইর খাব এটা তো আমার সৌভাগ্য। মার খেয়ে নিজেকে শুদ্ধ করব।” ফিচলে হেসে বলল শাফিন। অবন্তী সত্যি সত্যি ব্যাগ দিয়ে শাফিনের পিঠে দুম করে দুটো মেরে দিল। শাফিনের কপট ভীত অভিব্যক্তিতে অবন্তী হেসে ফেলল। উচ্ছ্বসিত, নিটোল হাসি।

সেই হাসিতে শাফিনের ভেতরটা তীব্র প্রশান্তিতে ভরে উঠল। এই অনুভূতি কী কোনোদিন প্রকাশ করতে পারবে নাকি বাষ্প হয়ে হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে? প্রশান্তির সাথে সাথে অদ্ভুত একটা বিষাদ মনে জমা হয়! বুক ভারী হয়ে আসতে থাকে ক্রমশ।

***
আনোয়ার সাহেব বাজার করে ফিরছিলেন, রাস্তায় পুরনো কলিগ ফজলুর রহমানের সাথে দেখা হলো। মুখে হাসি ফুটিয়ে কুশল বিনিময় করলেন। এরপর ফজলুর সাহেব বললেন,
“আমার মেয়েটার মাশআল্লাহ জনতা ব্যাংকে ঢুকল, দোয়া করবেন ভাই।”

“এটা তো বেশ ভালো খবর। দোয়া করি সবসময়।”

“আপনার ছেলেটাকে মাঝেমাঝে দেখি রাস্তাঘাটে, মোড়ে বসে থাকতে। ও কোথায় পড়ে এখন নাকি পড়াশোনা শেষ?”

আনোয়ার সাহেব দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। মানুষ যখন সব জেনেশুনে অপ্রিয় আঘাতে ইচ্ছে করে খোঁচা দেয়, তখন কী জবাব দিতে হয় তিনি জানেন না! তবে অয়নের উপরে যে রাগটা আছে সেটা আরও বেড়ে গেল। এই ছেলের জন্য তার সন্তাপের শেষ নেই। নিজেকে তো ধ্বংস করছেই, সেই সাথে তার স্বপ্নগুলোও পিষে মারছে। আজ ছেলের সাথে বোঝাপড়া করবেন ভালো মতো! বাড়ির পথে হাঁটতে লাগলেন ফুঁসতে ফুঁসতে।
………