আবদ্ধ আমি পর্ব-১১ + বোনাস পর্ব

0
451

#আবদ্ধ_আমি
#নিয়াজ_মুকিত
#১১তম_পর্ব

হঠাৎ পিছনে আহান ভাইয়ের ডাক শুনে বেশ চমকে উঠি আমি।মুহুর্তেই মনের মধ্যে বাসা বাধে নানা রকমের ভাবনা।তাদের কিছু অংশ এরকম যে,তবে কি আমাকে বের হয়ে যেতে হবে না বাড়ি থেকে?নাকি অন্য কোনো‌ কারনে ডাকছেন আহান ভাই।ভাবনা গুলো মাথা থেকে দুরে সড়িয়ে দিতে চাইলেও ব্যার্থ হই আমি।শত ভাবনা নিয়ে মাথা ঘুড়িয়ে তাকাই আহান ভাইয়ের দিকে।

লক্ষ্য করি,আহান ভাইয়ের হাতে একটা ব্যাগ।ব্যাগটা দেখে চিনতে একটুও‌ অসুবিধা হয় না আমার।আহান ভাই গুটি গুটি পায়ে আমার দিকে এগোতে এগোতে অনিশ্চিত স্বরে বলে,
–“ব্যাগটাতে তোর যাবতীয় জিনিস আছে।পরবর্তিতে যাতে আর এই বাড়িতে আসতে না হয় তোকে তাই এগুলোও নিয়ে যা।”

এই ‌কথাগুলো বলে ব্যাগটা আমার দিকে ছুড়ে মারেন তিনি।তারপর হরহর করে পুনরায় নিজের রুমে চলে যান।আমি কিছুক্ষন ছলছল চোখে তাকিয়ে থাকি তার যাওয়ার পথে।তারপর ব্যাগটা কাধে নিয়ে বের হই বাসা থেকে।

বাহিরে ঘুটঘুটে অন্ধকার নেমেছে।রাস্তার মধ্যে হাটতে শুরু করি আমি।রাত হলেও পথ চলতে অসুবিধা হচ্ছে না আমার।কেননা ল্যাম্পপোষ্টের আলোয় আলোকিত চারদিকে।এখনো‌ গাড়ি‌ চলছে বিপুল পরিমাণে।

অনিশ্চিত উদ্দেশ্যে হাটতে হাটতে আমি ভাবতে থাকি নানান কথা।ব্যাপক মনে পড়ে আহান ভাইয়ের সাথে কাটানো মুহুর্ত গুলো।সবকিছু ছিড়ে-ছুঁড়ে মস্তিস্কের মধ্যে প্রবেশ করে নতুন একটা ভাবনা।নিদ্র আর নিধি আগে থেকে জানলো কি করে যে আমার এরকম হবে?এজন্যই তো বললো,উষার জন্য খুব কষ্ট হচ্ছে আমার।যদি ভুল শুনে না থাকি তবে এটাই বলেছে তারা।

কিছুক্ষন হাটার পর একটা রিকসা এসে দাঁড়ায় আমার সামনে।রিকসার চালক একজন মধ্যবয়স্ক চাচা।তিনি আমার দিকে তাকিয়ে তার হলদেটে দাঁত বের করে হাসেন।তারপর কোমল স্বরে বলেন,
–“যাইবেন আপা”

আমি অবাক হয়ে তাকাই তার দিকে।যাকে চাচা ভাবছি সে কিনা আমাকে আপা বলছে।হায়রে দুনিয়া।আমি তার দিকে তাকিয়ে স্মিত হেসে বলি,
–“আমি আপনাকে চাচা ভাবছি আর আপনি কিনা আমাকে বলছেন আপা।বয়স কত আপনার?”

এবার চাচা সরি আমাকে আপা বলা লোকটা তার হলদেটে দাঁতের হাসি বজায় রেখে অনিশ্চিত স্বরে বলে,
–“বয়স মোর যতই হোক না কেন?ভেতরে ভেতরে মুই এখনো জুয়ান।আমাকে ভাইয়া বলে ডাকিও”

লোকটার কথা শুনে নিজের অজান্তেই হেসে ফেলি আমি।আমার হাসি দেখে লোকটার হাসির পরিমাণ একটু বেড়ে যায়।পরমুহুর্তে আমি হাসি বন্ধ করে তার দিকে ক্লান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলি,
–“যাওয়ার জায়গা আছে কিন্তু যাওয়ার ভাড়া নেই।আপনি যান আমি হেটেই যাব।”

আমার কথা মনে হয় লোকটার পছন্দ হয়‌নি।তিনি তার ভ্রু-দুখানা কুঁচকে আমার দিকে তাকান।তারপর চোখ পিটপিট করে চারদিকে তাকিয়ে বলেন,
–“কেন?হাইটা যাইবেন আমি থাকতে।আপনি ওঠেন ভাড়ার ব্যাপার পড়ে।দরকার পড়লে পরে নিমু নি।এই রাইতের বেলা রাস্তায় একা একা হাঁটা ঠিক হবে না।উঠেন আপনি।”

আমি অবাক হয়ে লোকটার দিকে তাকিয়ে থাকি।তারপর কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে সবশেষে উঠে পড়ি রিকসায়।বেশ দুড়ন্ত গতিতে চলতে শুরু করে রিকসা।একপর্যায়ে আমি লোকটার দিকে তাকিয়ে একটু আস্তে করে বলি,
–“আপনার রিকসাটা তো অনেক সুন্দর চলে দেখি!”

জানিনা কি ভুল বললাম?লোকটা সাথে সাথে রিকসা থামিয়ে কিছুটা লাফ দিয়ে নামে রিকসা থেকে।আমি অবাক হয়ে তার দিকে তাকাই।লোকটা খানিকটা জোরে বলে,
–“আপা খবরদার আমার হোন্ডারে রিকসা কইবেন না।ওর নাম হোন্ডা।বুঝলেন?”

আমি কি বলবো বুঝতে পারি না?এদিকে প্রচুর হাসিও পাচ্ছে।তারপর মাথা দুলিয়ে বলি,
–“আচ্ছা ভাইয়া আপনার হোন্ডা টা তো অনেক সু‍ন্দর চলে।”
লোকটা পুনরায় তার হলদেটে দাত বের করে হাসতে থাকে।সাথে রিকসায় চালানোর প্রস্তুতি নেয়।আর মুখ দিয়ে বলে,
–“হ,আমার হোন্ডা অনেক সোন্দার চলে।”
এই বলে পুনরায় রিকসা চালাতে শুরু করেন তিনি।আমি তার দিকে তাকিয়ে নিজের অজান্তেই হেসে দেই।

একপর্যায়ে আমার পাশ কাটিয়ে চলে যায় নিদ্রদের গাড়ি।গাড়ির মধ্যে দেখতে পাই নিদ্র আর নিধিকে।চিন্তায় পড়ে যাই তারা আমাকে‌ দেখলো কিনা?তবে কিছুক্ষন পর বুঝতে পারি তারা আমাকে দেখতে পারে নাই।

এইসময় মাথায় ভিতর ঢুকে যায় নতুন একটা ভাবনা।আমি‌ কি আহান ভাইয়ের চোখে সারাজীবনই চরিত্রহীন থাকবো।না না,আমাকে নির্ভুল প্রমাণ করতেই হবে।কিন্তু মনে করতে পারছি‌ না নিদ্র কখন এসব ছবি তুললো।

রিকসাওয়ালা ভাইয়ের হোন্ডা পৌঁছে যায় আমার বাসার সামনে।আমি হোন্ডা থেকে নেমে তাকে দাঁড়াতে বলি নিচে।তারপর দৌড়ে বাসার ভিতরে গিয়ে টাকা নিয়ে এসে দেই তাকে।সে যাবার সময় বলে যায়,দরকার পড়লে যেন তাকে ডাকি।তারপর সে তার হোন্ডা নিয়ে সেই স্থান ত্যাগ করে।

আমি ব্যাগ নিয়ে পুনরায় বাসার ভিতরে প্রবেশ করি।আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আমার বাবা-মা।আমি হাসি-মুখে তাদের দিকে তাকিয়ে বলি,
–“কি হইলো?এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?”

আমার মা আমার দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে ধরে।তার আগেই বাবা বলে ফেলে,
–“এই সময় একা বাসায় চলে আসলি‌ যে?আহান আসেনি।”
আমি ঝট করে তাকাই বাবার দিকে।কিভাবে তাকে বলবো কথাগুলো।শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেই যে,না কিছুতেই এসব কথা বলা যাবেনা তাদের।শেষ পর্যন্ত নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকি আমি।কোনো‌ কথা বলি না তাদের।শুধু হাসি মুখে বলি,
–“তার সমস্যা আছে একটা।আসবে সমস্যার সমাধান হলে।”

কথাটা বলে দ্রুতপায়ে এগোতে থাকি রুমের দিকে।বুঝতে পারছি বেশিক্ষন এখানে থাকলে নানা বেগতিক প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে।আমি‌ আমার রুমে গিয়ে ধপ করে দরজাটা লাগিয়ে দেই।ব্যাগটা মেঝেতে রেখে ওয়াসরুমে চলে যাই।বেসিনের আয়না দেখে মুখে পানি দেই প্রচুর।

তারপর তোয়াল দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে রুমে আসি আমি।রুমে এসে থমকে দাঁড়াই আমি।হাসি মুখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে নিদ্র।আমার হাত থেকে পড়ে যায় তোয়ালটা।নিদ্র বিছানা থেকে উঠে আমার দিকে এগোতে থাকে।মুখের মধ্যে বিদ্যমান রয়েছে রহস্যময়ী সেই হাসি।

আমি আস্তে আস্তে পিছাতে থাকি পিছনের দিকে।আমি‌ যতই পিছাচ্ছি নিদ্র ততই আমার দিকে অগ্রসর হচ্ছে।একপর্যায়ে আমার শরীর ঠেকে যায় ব্যালকনির দরজায়।আমি মুহুর্তের মধ্যে ব্যালকনিতে প্রবেশ করে দরজাটা লাগিয়ে দেই।

দরজাটা লাগিয়ে দেয়ার পর নিদ্রের রিয়াকশন কেমন হয়েছে জানিনা তবে আমার রিয়াকশনটা দেখার মতো‌ ছিল।আমি ব্যালকনি দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে দেখি আহান ভাই বাহিরে গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।তিনি আস্তে আস্তে আমাদের বাসার ভিতরে প্রবেশ করেন।

ভয়ে অন্তর-আত্মা কেঁপে‌ ওঠে থরথর করে।তবে কি সত্ত্যিই চরিত্রহীন একজন মেয়ে হতে চলেছি?

চলবে..ইনশাআল্লাহ

#আবদ্ধ_আমি
#নিয়াজ_মুকিত
#বোনাস_পর্ব

ভয়ের চোটে শিরশির করে উঠল আমার মেরুদন্ড।প্রাণপনে খাটাতে চাইছি‌ নিজের মস্তিস্ককে।এই মুহুর্তে একটা বুদ্ধি বের করতেই হবে যে করেই হোক।আমি ব্যালকনির দরজা খুলে টপ করে রুমে প্রবেশ করি।চোখ পিটপিট করে চারদিকে তাকিয়ে নিদ্রকে খোঁজার চেষ্টা করি।কিন্তু রুমের কোথাও তার দেখা পায় না আমার নয়ন দুটো।

প্রথমে বেশ খুশি হই,পরমুহুর্তে পুনরায় ‌মাথায় প্রবেশ করে নতুন একটা ভয়ংকর চিন্তা।নিদ্র তো ভ্যাম্পায়ার তাহলে সে তো অদৃশ্য হতেই পারে।যদি এমন হয় যখন আহান ভাই রুমে প্রবেশ করলো নিদ্র তখন অদৃশ্য থেকে পুনরায় মানুষ হয়ে যায় তখন কি হবে?

চিন্তাটা মাথার এক কোণ থেকে আরেককোণে বেশ ভালোভাবেই‌ বিচরণ করতে থাকে।আমি বিছানায় বসে পড়ি ধপ‌ করে।বিছানায় বসে পড়ার আগে দরজাটা খুলে‌ রেখে আসি।মনে মনে প্লান করি,আহান ভাই যখন আসবে তখন এমন একটা ভাব নিয়ে বসে থাকবো যাতে মনে হয় আমি তার উপর প্রচুর রেগে আছি।

অতিক্রম হয়ে যায় ২০মি‌নিটের মতো সময়।তবুও নিজেে রুমে দেখা মিলে না আহান নামক বদমাস ছেলেটার।আমি ‌এবার উঠে ব্যালকনিতে চলে যাই।মাথা নিচু করে তার গাড়িটা দেখার চেষ্টা করি।

নিচে তাকিয়ে চমকে উঠি আমি।আহান ভাইয়ের গাড়িটা নেই ‌আগের জায়গায়।আমি এবার আরো ভালো ভাবে দেখার জন্য মাথাটা আরেকটু কাত করি।তারপরও দেখতে পাই না আহান ভাইয়ের গাড়িটা।বুঝতে বাকি থাকে না তিনি চলে‌ গেছেন।

আমার সাথে দেখা না করেই‌ চলে গেল ভেবে প্রচুর কষ্ট পাই।মাথা‌ নিচু করে‌ রুমে প্রবেশ করি আমি।রুমে প্রবেশ করে‌‌ পুনরায় থমকে দাঁড়াই আমি।নিদ্র বিছানার মধ্যে শুয়ে আছে।সে আমাকে দেখে উঠে দাঁড়ায়।আমি তাকে‌ দেখেও না দেখার ভান করে চলে যাই বিছানায়।

আমার ব্যবহারে বেশ অবাক হয় নিদ্র।সে মাথা ঘুড়িয়ে তাকায় আমার দিকে।আমি ধপ‌ করে বিছানায় শুয়ে পড়ি।আহান ভাইয়ের দেয়া কষ্টটা খুব ভালো ভাবেই‌ অনুভব করতে পারছি।চোখের কোণে দেখা দিয়েছে হালকা পানি কণা।

নিদ্র এবার আস্তে করে বিছানায় বসে পড়ে।আমার উদ্দেশ্যে বলতে শুরু করে,
–“একটা ভালোবাসা ঠিক রাখতে গেলে দুজন দুজনের প্রতি বিশ্বাস থাকা লাগে এটা কি‌ তুমি জানো?”

আমি নিদ্রের দিকে না তাকিয়ে মাথা ঝাঁকিয়ে হা উত্তর দেই।আমার ইচ্ছা করছে না তার কথা গুলো শ্রবণ করার।বাধ্য হয়ে করতে হচ্ছে।তাকে বের করে দেয়ার ক্ষমতাও আমার নেই।একটা পুরুষের সাথে থাকলে একটা মেয়ে যে ভয় গুলো পায় আমিও ঠিক সেই ভয় গুলো ‌পাচ্ছি।তবে এখানে আমার কিছুই করার নেই।

নিদ্র পুনরায় বলতে শুরু করে,
–“কিন্তু আহান আর তোমার মধ্যে ভালোবাসা আছে ঠিকই কিন্তু কো‌নো‌ বিশ্বাস নেই।বিশ্বাস ছাড়া ভালোবাসা অসম্ভব।বিশ্বাস তোমার যেটুকু আছে আহানের সেটুকুও নাই তোমার প্রতি।”

এবার বুঝতে পারি নিদ্রের আসল উদ্দেশ্য।দুঃখের সময় আমাকে শান্তনা দিয়ে নিজের‌ করে ‌নেয়ার পরিকল্পনা করছে সে।তার কথা সম্পুর্ন ভুল।আহান ভাইয়ের আমার প্রতি অগাধ বিশ্বাস রয়েছে।না হলে ছবি গুলো প্রথম দেখেই বিশ্বাস করে‌ নিত।মেয়েটাকে চেপে ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করতো না।কিন্তু আমার নিজেরই‌ বিশ্বাস কম তার প্রতি।তাইতো সব কথা না শুনে,না বুঝে তাকে শুনিয়ে দিলাম‌ একরাশ বাজে কথা।

নিদ্র আমার দিকে তাকিয়ে থেকে আবার বলতে শুরু করে,
–“কিন্তু আমার তোমার প্রতি বিশ্বাস আছে।আমি তোমাকে সমানতালে ভালোবাসি‌ এবং বিশ্বাস করি।”
নিদ্রের কথা শুনে এবার আমি উঠে বসি।তারদিকে তাকিয়ে রহস্যময়ী হাসি হেসে বলি,
–“আমাকে আহান ভাই পুনরায় বিয়ে করতে চাইছি আর পরশুই আমাদের বিয়ে।দাওয়াত রইল”

নিদ্র আমার দিকে তাকিয়ে খেঁকিয়ে উঠে বলে,
–“অসম্ভব”
আমি এবার একটু জোড়ে চিল্লিয়ে বলি,
–“কেন বিশ্বাস করো না?”
নিদ্র পুনরায় চিল্লিয়ে বলে,
–“কখনো না”

তার কথা শুনে প্রচুর হাসি পায় আমার।হাসতে শুরু করি‌ আমি।নিদ্র অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলে,
–“পাগলের মতো হাসছো‌ কেন?”
আমি তার দিকে তাকিয়ে হাসি বন্ধ করে বলি,
–“এই তোমার বিশ্বাস।সামান্য এই কথাটা বিশ্বাস করলে না আর ‌করবে এতো বড় কথা।ধুর হও”

নিদ্র এবার বেশ শক্ত করে আমার হাত চেপে ধরে।তারপর রাগি গলায় বলে,
–“ভালোই ঢপ মারতে পারো দেখছি।নিশ্চয় ওই আহানের কাছে থেকে শিখেছো।”
আমি তার দিকে তাকিয়ে স্মিত হেসে বলি,
–“শিখতেই পারি।ভুলে যেও না সে আমার বর।বিয়ে করা বর।”

নিদ্র আমার হাতটা ছেড়ে দিয়ে উঠে দাঁড়ায়।তারপর খানিকটা জোড়ে করেই বলে,
–“তোমাকে যদি ভালো না বাসতাম না তাহলে‌ কবে যে শেষ করে ফেলতাম আমি নিজেও জানিনা।তোমার ভাগ্য ভালো যে আমি তোমাকে ভালোবাসি।আজ পর্যন্ত যে চ্যালেন্জই করেছি সব গুলো রেখেছি।আজকে আরো একটা চ্যালেন্জ করছি।গত এক সপ্তাহের মধ্যে তোমাকে আমার মায়ের বউমা বানাবো।শুনে রাখো,গত এক সপ্তাহ।নাহলে কখনো এই‌ মুখ তোমাকে দেখাবো‌ না।”

কথাগুলো বলে অদৃশ্য হয়ে যায় নিদ্র।আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকি কিছুক্ষন আগে সে যে জায়গায় ছিল।কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকার পর আমি রুম থেকে বের হবো এমন সময় মোবাইলে টুং করে একটা মেসেজ বেজে ওঠে।

কিছুটা কৌতুহল নিয়ে হাতে তুলে নেই ফোনটা।মেসেজটা দেখে প্রচন্ড মাথা গরম হয়ে যায়।মেসেজটায় সুন্দর করে লেখা আছে মাত্র ৯টাকায় একজিবি কিনতে ডায়াল অমুক অমুক।

বেশ রেখে ফোনটা বিছানার উপর ফেলে দিয়ে বের হয়ে যাই রুম থেকে।বাহিরে বের হয়ে দেখি বাবা-মা সোফায় বসে আছে।আমি তাদের দিকে তাকিয়ে বলি,
–“এখনো‌ ঘুমাও নি যে”
বাবা-মা আমার দিকে তাকিয়ে থাকে শুধু কিছু বলে না।আমি পুনরায় তাদের একই কথা জিজ্ঞাসা করলে বাবা বলে ওঠে,
–“আহান এসেছিল”

আমি এবার জগ থেকে গ্লাসে পানি ঢালতে ঢালতে বলি,
–“জানি,কি বললো?”
বাবা বলতে যাবে তার আগেই মা বলে ওঠে,
–“তুই নাকি ‌তাকে না জানিয়েই চলে এসেছিস।এসবের মানে কি উষা?”

মায়ের কথা শুনে গলায় পানি আটকে যায় আমার।অবাক হয়ে তাদের দিকে তাকিয়ে ভাবতে থাকি,
–“মা-বাবা দেখছো‌ একটা মানুষ কতটা মিথ্যাবাদী হতে পারে।হায় আল্লাহ নিজে আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিল আবার নিজেই বলছে তাকে না জানিয়ে চলে আসছি।ছি.ছি কত্তবড় মিথ্যাবাদী।”

আমি বাবা-মায়ের সাথে কোনো কথা না বলে চুপচাপ ‌রুমে চলে যাই।বুঝতে পারি না কি হচ্ছে আমার সাথে?এদিকে নিদ্র চ্যালেন্জ দিচ্ছে তো‌ ওইদিকে আহান ভাই মিথ্যাবাদী সাজাচ্ছে।আমি মাথা চেপে ধরে বসে পড়ি।পুনরায় মোবাইলে টুং করে মেসেজ বেজে ওঠে।অবহেলা করে হাতে তুলে নেই ফোনটা।বড় বড় করে লেখা রয়েছে,
–“উষু,বিদায়”

চলবে..ইনশাআল্লাহ