আবদ্ধ আমি পর্ব-১০

0
433

#আবদ্ধ_আমি
#নিয়াজ_মুকিত
#১০ম_পর্ব

আহান ভাইয়ের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থ হয়ে সেদিকে তাকিয়ে থাকি আমি।কখন যে চোখ বেয়ে পানি পড়া শুরু হয়েছে বুঝতে পারিনি।আহান ভাই মাথা ঘুড়িয়ে আমার দিকে তাকায় সাথে তার সামনে থাকা মেয়েটাও।আহান ভাই তাকে সড়িয়ে দিয়ে খানিকটা দৌড়ে এসে আমার সামনে দাঁড়ায়।আমি তার দিকে তাকাই বেশ ঘৃণার দৃষ্টিতে।আহান ভাই আমার সামনে এসে খানিকটা নরম সুরে বলে,
–“তোকে ওরা কোথায় নিয়ে গেছিল উষু,কেমনে ফিরে আসলি তুই?”

আমি হাতের উল্টোপিঠ দিয়ে চোখের পানি মুছে ফেলে তার দিকে তাকিয়ে স্মিত হাসি দিয়ে বলি,
–“তুমি চাইছিলে যে আমি যেন না আসি।ওকে এসে ভুল করেছি।কাজ চালিয়ে যাও তুমি।”

আমার কথা শুনে বেশ অবাক হয়ে আমার দিকে তাকায় আহান ভাই।সাথে ভ্রু-কুঁচকে বলে,
–“তুই কি আমাকে সন্দেহ করছিস নাকি?”
আমি এবার তার দিকে একবার এবং মেয়েটার দিকে একবার তাকিয়ে তাকিয়ে বলি,
–“সন্দেহ করবো কেন?তুমি যা করছিলে করে যাও।আমি বাহিরে আছি।”

এই বলে আমি সেখান থেকে চলে আসতে ধরলে আহান ভাই‌ পুনরায় আমাকে টেনে ভিতরে ঢুকিয়ে নেয়।আমি অবাক হয়ে তার দিকে তাকাই।আহান ভাই আমার মুখের সামনে মুখ নিয়ে এসে চিল্লিয়ে বলে,
–“তুই কিন্তু বেশি বেশি করছিস উষু,এতো বেশি ভালো নয়।”

আমি তার কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলি,
–“বেশি কি করলাম?সত্ত্যিই তো বলছি।কে এই মেয়েটা?যার সাথে তুমি এক ঘরে আছো।কে তোমার জিএফ নাকি এক্স।তাকে ফিজিক্যালি সান্তনা দিচ্ছো নাকি?”

আমার কথা শুনে বেশ রেগে আমার গালের মধ্যে থাপ্পর মারে আহান ভাই।তারপর বেশ রেগে চিল্লিয়ে বলেন,
“বেশি বেশি করার ও একটা লিমিট থাকে,কিন্তু তুই সেটাও ছাড়িয়ে গেছিস।কি মনে করেছিস তুই,আমি এই মেয়েটার সাথে লটর-পটর কিংবা ফিজিক্যালি রিলেশন মরার প্লান করছি।আই হেট ইউর মাইন্ড।দেখ কি জন্য তাকে চেপে ধরছি,,”

কথাগুলো বলে আহান ভাই বিছানা থেকে একটা খাম তুলে নেয়।খামটা থেকে ছবি বের করে আমার সামনে তুলে ধরে।আমি ছবিগুলো ভালোভাবে দেখে বেশ চমকে উঠি।মাথা বনবন করে ঘুরতে শুরু করে।কি দেখছি এসব আমি ভাবতে পারি না।

আহান ভাই পুনরায় বলতে শুরু করে,
–“এই মেয়েটা ওই ছবি গুলো নিয়ে এসেছে বুঝলি।সে ডাইরেক্ট আমার রুমে এসে এই ছবিগুলো আমাকে দেয়।প্রথমে ছবি গুলো দেখে আমি বিশ্বাস করিনা।তাকে বারবার করে জিজ্ঞাসা করি কে এই ছবিগুলো দিয়েছে তোমাকে?সে কিছুতেই বলতেছিল না।তাই আমি তাকে চেপে ধরি বলার জন্য।ঠিক তখনি তুই প্রবেশ করিস রুমের ভিতরে।”

আহান ভাইয়ের কথা শুনে বুঝতে পারছি কত বড় ভুল করেছি আমি।আমি ছলছল চোখে তাকাই তার দিকে।তিনি পুনরায় বলতে শুরু করেন,
–“প্রথমে ছবি গুলো দেখে বিশ্বাস করতে পারি নি।কিন্তু এখন মনে হচ্ছে ছবি গুলো সত্ত্যি।তুই নিজে বাজে কাজ করে এসে আমাকে দোষারোপ করছিস।”

আহান ভাইয়ের কথা শুনে মাথা বনবন করে ঘুরতে শুরু করে আমার।পড়ে যেতে ধরি আমি।অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে নেই।বুঝতে পারছি কত বড় একটা অপবাদ আমাকে দেয়া হচ্ছে।তারই বা দোষ কি?ছবিগুলো দেখলে যে কেউ ভাববে এসব।আমি ছলছল চোখে তাকিয়ে থাকি আহান ভাইয়ের দিকে।

আমাদের এরকম দেখে মেয়েটা বেশ ভয় পেয়েছে বুঝতে পারছি।মেয়েটা বের হয়ে যেতে ধরে রুম থেকে।আহান ভাই বেশ শক্ত করে তার হাত চেপে ধরে।তারপর চোখ লাল করে তাকায় মেয়েটার দিকে।সাথে চিল্লিয়ে বলে,
–“বাঁচতে চাইলে বলো কে তোমাকে এই ছবিগুলো দিয়েছে।বলো,”

আহান ভাইয়ের চিৎকার শুনে কান্না করতে শুরু করে মেয়েটা।কান্না করতে করতে বলে,
–“ছেলে আর একটা মেয়ে।নাম বলেনি।শুধু খামটা পৌছে দিতে বলেছে আর টাকা দিয়েছে।”
আহান ভাই এবার মেয়েটাকে যেতে দেয়।মেয়েটা চলে যেতে আহান ভাই খানিকটা নরম গলায় বলে,
–“তোকে ভালো মনে করেছিলাম বাট সেটা ভুল ছিল।তুই যদি নিদ্রকে ভালোইবাসিস তাহলে সেদিনই চলে গেলি না কেন?আমাকে লুকিয়ে তার সাথে রিলেশন করার মানে কি?”

আমি বুঝতে পারছি না কি বলা উচিত আমার।ছবিগুলো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে নিদ্রকে আমি জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছি।নিদ্র আমার উপর শুয়ে আছে।আমি চোখ বন্ধ করে আমার হাত তার পিঠের উপর রেখেছি।ছবিগুলো দেখলে যে কেউ সন্দেহ করবে স্বাভাবিক।

আহান ভাই হেটে হেটে বিছানায় গিয়ে বসে পড়ে।তারপর আমার দিকে তাকিয়ে চড়া গলায় বলে,
–“তুই আমার রুম থেকে বের হয়ে যা।পারলে বাড়ি থেকেও চলে যাস।”

আহান ভাইয়ের এই কথাটা শুনে রীতিমতো কান্না করতে শুরু করি আমি।কিন্তু আহান ভাই একটিবারের জন্যেও আমার দিকে তাকান না।আমি কিছু বলবো ভেবে মুখ খুলতে ধরলে তার আগেই আহান ভাই বলে ওঠে,
–“তোর কোনো কথা শ্রবন করার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা আমার নেই।তুই এখন কার কাছে যাস যা।আর কয়েকদিন পর ডিবোর্স লেটার পাঠিয়ে দেব।শান্তিতে সংসার করতে পারবি তখন।”

‘ডিবোর্স লেটার পাঠিয়ে দেব’ কথাটা আমার কানে বারবার বাজতে থাকে।আচমকা মাথাটা বনবন করে ঘুরে যায়।এবার আর নিজেকে সামলাতে পারি না।আস্তে করে পড়ে যাই মেঝেতে।পড়ে যাওয়ার আগ মুহুর্তে দেখতে পাই আহান ভাই তার জায়গায় বসে আছেন সেখান থেকে উঠছেন না।অজ্ঞান হয়ে যাই আমি।

কতক্ষন অজ্ঞান হয়েছিলাম জানি না তবে জ্ঞান ফেরার পর নিজেকে সেই জায়গাতেই আবিষ্কার করি।আহান ভাই বিছানায় শুয়ে আছেন।তার চোখে আমি পানি দেখতে পাই।তিনি একবার আমার দিকে তাকিয়ে হাতের উল্টোপিঠ দিয়ে চোখের পানি মুছে চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকেন।
চোখ বন্ধ রেখেই তিনি আমার উদ্দেশ্যে বলেন,
–“এখনো যাসনি যে,চলে যা তারাতারি।”

আমি তার কথার কোনো উত্তর না দিয়ে হেটে হেটে নিচে নেমে আসি।চারদিকে তাকিয়ে দেখি কেউ আছে কিনা।কাউকে দেখতে পাই না নিচে।আমি গুটিগুটি পা ফেলে এগোতে থাকি মেইন দরজার দিকে।লক্ষ বাড়ি থেকে বের হয়ে যাওয়া।

একপর্যায়ে আমি পৌছে যাই দরজার কাছাকাছি অবস্থানে।এমন সময় পিছন থেকে ডেকে ওঠে আহান ভাই।তবে কি বের হতে হবে না আমাকে এই বাড়ি থেকে নাকি অন্য কারনে..

চলবে..ইনশাআল্লাহ