#আবদ্ধ_আমি
#নিয়াজ_মুকিত
#অন্তিম_পর্ব
এই বিপদের মধ্যেও আহান ভাইয়ের এরকম ভাবনা আমাকে ঢের অবাক করে।চারদিকে তাকিয়ে বুঝতে পারি অবাক আমি একাই হইনি বাকিরাও হয়েছে।নিদ্র ভাবছে মনেহয়,এ কোন এলিয়েন নাকি?
আহান ভাই আমার দিকে তাকিয়ে পুনরায় বলে,
–“উষু,তুই পার্লারে গিয়ে তোর নখটা কেটে নিস।বাপরে,বিশাল বড় হয়ে গেছে।আচ্ছা এক কাজ কর?”
আমি আহান ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলি,
–“কি কাজ ভাইয়া?”
আহান ভাই আমার দিকে এগোতে এগোতে বলে,
–“তুই বরং পার্লারে চলে যা।আমি এদিকটা দেখে নিচ্ছি।”
এই বলে তিনি আমার দড়ি খুলতে শুরু করেন।
এমন সময় নিদ্র এসে আহান ভাইয়ের হাত চেপে ধরে।আহান ভাই একরাশ বিরক্তি নিয়ে তার দিকে তাকায়।তারপর আস্তে করে হাতটা সড়িয়ে দিয়ে বলে,
–“আমার কাজে ডিষ্টার্ব আমি একদমই পছন্দ করি না।যাও ললিপপটা খাও বসে বসে।”
এই বলে তিনি পকেট থেকে একটা ললিপপ বের করে দেন নিদ্রের দিকে।নিদ্র ললিপপটা মাটিতে ফেলে দেয়।
আহান ভাই সেদিকে দৃষ্টিপাত না করে আমার বাধঁন খুলতে থাকেন।একপর্যায়ে খুলে যায় বাঁধনটা।তিনি আমার দিকে তাকিয়ে বলেন,
–“যা তুই?”
আমি কিছু না বলে দাঁড়িয়ে থাকি।এমন সময় নিদ্র আমার পাশে এসে দাঁড়ায়।আহান ভাই আমার হাত ধরে দরজার কাছে নিয়ে আসে।তারপর আমার মুখের মধ্যে একটা রুমাল চেপে ধরে।আমি পরমুহুর্তে জ্ঞান হাড়িয়ে ফেলি।জ্ঞান হাড়িয়ে ফেলার আগে মনের মধ্যে আসে একরাশ ভাবনা।আহান ভাই আমাকে অজ্ঞান করলো কেন?তারমানে কি তার মনে অন্য কোন ভাবনা চলছে?এসব ভাবতে ভাবতে জ্ঞান হাড়িয়ে ফেলি আমি।তারপরের কাহিনী আর কিছুই মনে নেই আমার।
অজ্ঞান অবস্থা থেকে চোখ খুলে নিজেকে পার্লারে আবিষ্কার করি।একটা মেয়ে আমার নখ কাটছে।আমি অবাক হয়ে মেয়েটার দিকে তাকাই।মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি একটা হাসি দেয়।আমি তার দিকে তাকিয়ে বলি,
–“আমি এখানে কেমন করে আসলাম?”
মেয়েটা হাসিমুখে বলে,
–“আপনাে বর রেখে গেছে।তিনি বাহিরে অপেক্ষা করছেন?আপনার রেডি হওয়ার কাজ শেষ হলেই তিনি আপনাকে নিয়ে যাবেন।”
মেয়েটার কথার আগামাথা কিছুই বুঝতে পারি না আমি।একপর্যায়ে আমার রেডি হওয়া শেষ হয়ে যায়।বেশ ভালোভাবেই আমাকে সাজিয়ে দেয় মেয়েটা।তার কিছুক্ষন পর আমি আহান ভাইকে লক্ষ করি।আহান ভাই আমাকে দেখে আমার দিকে এগিয়ে আসেন।আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি আহান ভাইয়ের দিকে।তার উপর আরো একবার ক্রাশ বসি এই মুহুর্তে।
আহান ভাই আমার সামনে এসে দাঁড়ায় বেশ ভাব নিয়ে।তিনি চোখ থেকে সানগ্লাসটা খুলতে খুলতে বলেন,
–“ভালোই দেখা যাচ্ছে তোকে।চল বাসায় যাওয়া যাক!”
আমি কোনো কথা বলি না শুধু তার কথায় মাথা নাড়াই।তিনি গাড়ি নিয়ে আমার সামনে চলে আসেন।আমি চট করে গাড়িতে উঠে পড়ি।আহান ভাই গাড়ি চালাতে শুরু করে।কিছুক্ষন চলার পর আমি আহান ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলি,
–“নিদ্র কোথায় আহান ভাই?”
আহান ভাই মাথা ঘুড়িয়ে আমার দিকে তাকায় কোনো কথা বলে না।গভীর মনোযোগ দিয়ে গাড়ি চালাতে থাকেন তিনি।একপর্যায়ে তিনি গাড়ি থামান।আমি অবাক হয়ে চারদিকে তাকাই।আরেহ,এটা তো সেই গুদামটা।আমার দিকে তাকিয়ে আহান ভাই হাসিমুখে বলে,
–“নিজ চোখেই দেখ সে কোথায়?”
আমি গাড়ি থেকে নেমে পড়ি।আহান ভাই আমার সামনে সামনে হাটতে থাকে।মুহুর্তে মনে পড়ে যায়,আমিতো কারো পিছু পিছু চলার মতো লোক নই।আমি একটু দৌড়ে আহান ভাইয়ের সামনে যাই।আহান ভাই আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে,
–“সবসময় সামনে সামনে চলা ঠিক নয়,কখনো কখনো পিছনেও চলতে হয়।”
আমি তার দিকে তাকিয়ে থাকি কোনো কথা বলি না।একসময় আমরা প্রবেশ গুদামের ভিতরে।ভিতরে প্রবেশ করেই থমকে দাঁড়াই আমি।একি অবস্থা নিদ্র ও নিধির।দুজনকে একটা অদ্ভুত দড়ি দিয়ে বেধে রাখা হয়েছে।হ্যাঁ দড়িটা বেশ অদ্ভুত,মনে হচ্ছে আগুন দিয়ে বানানো কোনো দড়ি।তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে কয়েকটা লোক।
আহান ভাই নিদ্রের সামনে একটা চেয়ার টেনে বসে পড়ে।তারপর চোখের সানগ্লাসটা খুলতে খুলতে বলে,
–“আগেই বলেছিলাম,বাচ্চা তুমি।শোনো,এই লোকগুলাও তোমার মতো ভ্যাম্পায়ার।তবে তোমার থেকে ২০গুণ শক্তিশালী বুঝলে।”
আমি অবাক হয়ে উপস্থিত লোকগুলোর দিকে তাকাই।শরীরটা শিউরে ওঠে,বাপরে এত ভূত চারদিকে।কিন্তু ভাবার বিষয় একটাই যে,আহান ভাই এদের দেখা কই পাইলো?কিছুক্ষন পরেই উত্তরটা পেয়ে যাই।আহান ভাই পুনরায় বলতে শুরু করে,
–“ভাবছো,কিভাবে পরিচয় হইলো আমার সাথে?শোন,এদের রাজার মেয়েকে আমি বাঁচিয়েছিলাম একটা বিপদ থেকে।মেয়েটা আমাকে বলেছিল যেকোনো সময় আমাকে সাহায্য করার জন্য প্রস্তুত সে।সো চট করে সাহায্য চেয়ে নিলাম তার কাছ থেকে।বুঝলে এখন?”
নিদ্র আস্তে করে মাথা নাড়ায়।
আহান ভাই পুনরায় বলতে শুরু করে,
–“আমার ইচ্ছা হলে তোমাকে শেষ করে দিতে পারি।কিন্তু নাহ,মাডার।ধুর ভাল্লাগে না এটা।একটা শর্তে তোমাকে মুক্তি দিতে পারি।শর্তটা হলো,তোমাকে প্রমিস করতে হবে কখনো আমাদের সামনে আসবে না আর।”
নিদ্র সাথে সাথে রাজি হয়ে যায় শর্তে।আহান ভাই লোকগুলোকে বলে নিদ্রকে ছেড়ে দিতে।লোকগুলো নিদ্র আর নিধিকে ছেড়ে দেয়।মুহুর্তে সেখান থেকে চলে যায় তারা।আহান ভাই লোকগুলোকে বিদায় জানায়।তারাও চলে যায় সেখান থেকে।
আমি আর আহান ভাই গাড়িতে বসে পড়ি।আহান ভাই মুচকি হাসতে হাসতে গাড়ি চালাতে থাকে।আমার কেন জানিনা ভালোই লাগছে আজকে?নিদ্র চলে গেছে আমার জীবন থেকে,কোনো বাধা নেই আর আমার জীবনে।শুধু একটাই বাধা,আমার বর আমাকে ভালোবাসে না।ব্যাপারটা চিন্তা করে খুব ব্যাথিত হই।আমি আহান ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলি,
–“তখন আমাকে অজ্ঞান করলেন কেন?”
আহান ভাই আমার দিকে না তাকিয়ে উত্তর দেয়,
–“ভয় পাচ্ছিলি তুই আমি দেখছিলাম তাই,”
একপর্যায়ে আমরা পৌঁছে যাই বাসায়।আহান ভাই একটা কালো কাপড় দিয়ে আমার চোখ বাঁধতে শুরু করে।সাথে বলতে থাকে,
–“খবরদার উষু,খুলবি না কিন্তু।তাহলে মেরে স্বর্গে পাঠিয়ে দেব”
আমি কোনো কথা না বলে চুপ হয়ে থাকি।আহান ভাই অন্ধলোকদের মতো আমাকে টেনে নিয়ে যেতে থাকে।একপর্যায়ে তিনি আমাকে একটা জায়গায় দাঁড় করান।তার কিছুসময় পর তিনি আমাকে চোখ খুলতে বলেন।
চোখ খুলে আমি চারদিকে কিছুই দেখতে পারি না।ঝট করে জ্বলে ওঠে লাইটটা।আমি লক্ষ্য করি আমাকে রান্নাঘরে নিয়ে আসা হয়েছে।পাশে দাঁড়িয়ে আছেন আহান ভাই।তার মুখে রয়েছে একপ্রকার আত্মা জ্বালানো হাসি।
তিনি আমার দিকে তাকিয়ে বলেন,
–“এই যে সারপ্রাইজ।এই বাসন-কোসন গুলা তুই পরিষ্কার করবি ওকে।”
আমি তার দিকে তাকিয়ে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলি,
–“এটা ভালো সারপ্রাইজ”
তিনি কোনো কথা না বলে হাটতে শুরু করেন।যেতে যেতে বলেন,
–“তারাতারি পরিষ্কার করে রুমে আসতে”
আমি একরাশ বিরক্তি নিয়ে পরিষ্কার করতে থাকি সবকিছু।পরিষ্কার করতে করতে হাতে ব্যাথা ধরে যায়।একপর্যায়ে সব পরিষ্কার করা শেষ হয়ে।আমি একরাশ ক্লান্তি নিয়ে রুমের দিকে থাকি।রুমের দরজা ঠেলে ভিতরে প্রবেশ করতে দেখতে পাই রুমটা বেলুনে ভর্তি।লক্ষ্য করি বিছানার উপর পড়ে আছে একটা নীল খাম।
কৌতুহল নিয়ে খামটা খুলে একটা কাগজ বের করি।পড়তে শুরু করি কাগজটা।সেখানে সুন্দর করে লেখা আছে,
–“প্রিয় উষু,
হুম প্রিয়ই বললাম।শোন,তোকে একটা জরুরি কথা বলি।কথাটা হলো,আমি তোকে ভালোবাসি।ওয়েট,তুই ভাবছিস আমিতো বিশেষ একজনকে ভালোবাসি বলেছিলাম।যে কিনা মানুষ নয় মানুষের ভিতরে থাকা একটা বস্তু।যতদুর মনে পড়ে এটাই বলেছিলাম।হ্যাঁ আমি তোকে না তোর মনকে ভালোবাসি।তোর মনটা তুই না তোর ভিতরে থাকা একটা বস্তু।আমি ভুল কিছু বলিনি।মোট কথা তোকেই ভালোবাসি।তোর চলা-ফেরা,কথা বলার ভঙ্গি,ভ্রু-কুঁচকে তাকানো দেখে তোর প্রেমে পড়ে গেছি।মুলকথা এটাই যে,প্রথমে তোর ভিতরে থাকা বস্তু তোর মনকে ভালোবেসেছি তারপর তোকে।বুঝলি।আমার প্রস্তাবে রাজি থাকলে ব্যালকনিতে এসে আমাকে জড়িয়ে ধর পিছন থেকে।”
আমি আর দেরি না করে ব্যালকনিতে চলে যাই কিছুটা দৌড় দিয়ে।পিছন থেকে জড়িয়ে ধরি আহান ভাইকে।চোখ দিয়ে ঝড়তে থাকে পানি।আহান ভাই আমার দিকে তাকিয়ে বেশ চিন্তিত হয়ে বলে,
–“আমি বিশাল বড় একটা অপরাধ করলাম মনে হয়?”
আমি অবাক হয়ে জানতে চাই কি অপরাধ।আহান ভাই আমার কাধে হাত রেখে বলে,
–“তোকে ভালোবাসলাম,এখন আমার বাকি গার্লফ্রেন্ড গুলার কি হবে?এটা অপরাধ না।”
আমি কি বলবো বুঝতে পারি না?আহান ভাই আমাকে আরো কাছে টেনে এনে বলে,
–“ভালোবাসি এই মেয়েটাকে।আমি তোকে ভালোবাসি ভিষণ।মোটকথা তোর মধ্যে বন্ধি আমি।আবদ্ধ আমি উষুর মধ্যে।”
এই কথা বলে তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরেন।আমি তার মুখের দিকে তাকিয়ে বলি,
–“আবদ্ধ আমি আহান ভাইয়ের মধ্যে।মানে তোমার মধ্যে বন্ধি।খুব পেঁচিয়ে কথা বলো তুমি।মানুষকে কনফিউসড করো প্রচুর।”
আহান ভাই আমার ঠোঁটের কাছে ঠোঁট নিয়ে এসে বলে,
–“সেটা জানিনা,তবে আজকে আমাদের প্রিয় দল নাইজেরিয়ার খেলা আছে।নাইজেরিয়ার কথা দেখবো সাথে তোর সাথেও খেলবো।”
এই বলে তিনি আমার ঠোঁটের সাথে ঠোঁট মিলিয়ে দেন।
পরবর্তি জীবনে আমার বেশি কথা বলার সুযোগ ছিলনা।যখনই কথা বলতাম তখনই ঠোঁট দিয়ে আমাকে অত্যাচার করতো আহান ভাই।মোটকথা জীবনে এমন একজনকে পেয়েছি যা আমার কাছে অনেক বড় একটা পাওয়া।পরবর্তি আরো বুঝতে পেরেছি নিদ্রের ভালোবাসা সত্ত্যি ছিল না।ভালোবাসা সত্ত্যি থাকলে সে কখনো এভাবে পালাতো না।সে আমার সাথে অভিনয় করেছে।মস্ত বড় অভিনেতা সে………
সমাপ্ত..
ঈদ মোবারক সবাইকে।
নামাজ কায়েম করুন।আল্লাহ হাফেজ