#আমার_অনুভুতি_তুমি
#পর্বঃ৭
#নুসাইবা_ইসলাম
অনেক হইছে রফিক আর না তোদের মেয়ে আমাদের এভাবে অপমান করছে আর তুই কিছু বললি না? ( সফিক সাহেব)
ইশু আম্মা তুমি চুপ করো ওরা তোমার বড় কাকা আর বড় কাকি হয় এভাবে কথা বইলো না তাদের সাথে। ( রফিক সাহেব)
আব্বু আমি তাদের এভাবে বলতে চাই নাই, তারা তোমাদের অপমান করবে আর আমি মেয়ে হয়ে কিভাবে দেখবো? ( ইশু)
যেমন মা তেমন হয়েছে মেয়ে, মা এর ও চরিত্র যেমন তেমন ই হইছে মেয়ে। একদম চরিত্রের সমস্যা ভালোই হইছে আমার সূর্যের সাথে এর বিয়েটা ভেঙ্গে। ( সাজিয়া)
খবরদার চাচি আপনি আর একবার আমার মা কে নিয়ে কিছু বললে ভুলে যাবো আপনি আমার চাচি লাগেন। আর কি বললেন আপনার অই ছেলেকে আমি বিয়ে করতে চাই নাই বরং বড় কাকা নিজে বিয়ের কথা বলছে আমার বাবার ভাগের সম্পত্তির জন্য। ( ইশু)
অনেক হইছে এইভাবে মেয়ে অপমান করছে আর বাপ-মা মজা দেখছে, আমার মেয়ে হলে পিটিয়ে সোজা করে ফেলতাম। ( সাজিয়া)
কি বললেন চাচি আমি তো তাও তর্ক করছি আর আপনার গুনোধর ভালো মেয়ে যে আপনাদের মুখে চুন কালি মাখিয়ে পালিয়েছে? ওহ নিজের বেলায় ষোল আনা তাইনা? আপনি এখন ই আমাদের বাড়ি থেকে বেড় হন না হলে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করবো। (ইশু)
ইশার কাকা কাকি রাগে ফুসফুস করতে করতে বেরিয়ে গেলো বাড়ি থেকে।ইশু সোফায় তার বাবার পাশে বসলো।
আমি খুব ই দুঃখিত আব্বু তোমাকে আর আম্মুকে এভাবে কেউ কিছু বললে আমি সহ্য করতে পারিনা। তারা তোমাদের ভালো বাসলে ভালো ব্যাবহার করলে স্নেহ করলে আমিও তাদের সম্মান করতাম। (ইশু)
এইভাবে বলা উচিৎ হয় না শত হোক তারা তোমার গুরুজন,এইযে এইভাবে তোমাকে কথা শুনালো এতে আমারো খারাপ লেগেছে। আমার বড় ভাই আমি সম্মান করি তাই তাদের মুখের উপর কিছু বলতে পারিনা আর তার সুযোগ তারা নেয়। (রফিক সাহেব)
থাক এই নিয়ে বাপ মেয়ে মন খারাপ করে থাকবেনা, যাও ইশু ঘড়ে গিয়ে এখন ঘুম দিয়ে উঠ সামনে বিয়ে না। আমার মেয়েকে সুন্দর দেখাতে হবে তো। ( রাফিয়া বেগম)
ঘুম না দিলে বুঝি আমাকে সুন্দর লাগবে না আম্মু,দেখছ আব্বু কি বলে? (ইশু)
না আমার আম্মাজান এমনে অনেক সুন্দর তবুও আম্মাজান ঘুমাইতে জান। (রফিক সাহেব)
…………….অন্যদিকে……………..
সূর্যের বাবা -মামা তাদের বাড়িতে গিয়ে সোফায় বসে রাগে ফোসফোস করছে। তারা ভাবছে এইটুকু মেয়ে তার এতো সাহস কিভাবে হয় তাদের অপমান করার। ইশার থেকে এইভাবে অপমানিত হয়ে ফিরবে এইটা ভেবে কখোনোই অই বাড়িতে যায় নাই। কথায় আছে অন্যের জন্য গর্ত খুরলে সেই গর্তে নিজে পড়ে তাদের ক্ষেত্রে সেটাই হইছে। তারা ভেবে গেছিলো ইশার মা-বাবাকে অপমান করবে অথচ অপমান এর পালটা জবাব দিলে তা মেনে নিতে পারবে না।
একরত্তি মেয়ে আর সে কিনা আমাদের এতো বাজে ভাবে অপমান করলো সূর্যের আব্বু। ( সাজিয়া বেগম)
আমিও চিন্তা করছি এটা এই ইশা আর আগের ইশা এর মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। আগে ইশা আমাদের দেখলে মাথা উঁচু করে কথা বলতো না আজ কি হলো এইভাবে অপমান করলো। ( সফিক সাহেব)
সূর্য নিচে নেমে বাবা-মায়ের কথা শুনে বুঝতে পারলো অই বাসায় কেউ হয়তো তাদের অপমান করেছে। কিন্ত কাকা কাকি তো অই ধরনের মানুষ নয় যে বড় ভাইয়ের সাথে বেয়াদবি করবেন। এগুলা তাহলে কে কি বলেছে যার জন্য মা-বাবা রেগে আছে।
কি হইছে তোমাদের এতো রেগে আছো কেনো? তোমাদের কি কেউ কিছু বলেছে। (সূর্য)
সূর্যের কথা শুনে ওর মা একটু ন্যাকা কান্না করা শুরু করলো আর বললো।
বাবা তোর কথা শুনে আমরা শুধু রাফিয়াদের জিজ্ঞেস করছি আমাদের কেনো এসব জানায় নাই আমরা কি পর নাকি, কিন্ত জানোস আমাদের অনেক অপমান করছে ইশা আর এই বলছে তাদের বাড়ি থেকে বের না হলে ঘার ধাক্কা দিয়ে বের করে দিবে। ( সাজিয়া বেগম)
কি ও এসব করছে তোমাদের সাথে? (সূর্য)
হ্যাঁ আমি কি মিথ্যা বলছি, আর এও বলছে খুব ভালো করছে ওরা তোর সাথে ইশা কে বিয়ে না দিয়ে। বাবা ইশা কতোটা লোভি হয়ে গেছে দেখ ইফরাতদের টাকা দেখে এখন অহংকারী হয়ে উঠেছে। ( সাজিয়া বেগম)
সূর্য ওখান থেকে নিজের রুমে চলে আসে,রুমের দরজা আটকে ফ্লোরে বসে পড়ে। আচ্ছা ছেলেদের কি কাদতে আছে? সে কি ইশা কে ভালোবেসে ভুল করেছে। সে তো খুব ভালোবাসতো ইশাকে, ইশা কেনো তার ভালোবাসা বুঝলো না। ইশার এক ছোটবেলার ছবিটা বুকে জরিয়ে বসে আছে সূর্য, চোখের কোন বেয়ে পড়ছে পানি। সেই ছোট বেলা থেকে সে ইশা কে পছন্দ করতো যবে দেখে বুঝতে শিখেছে ভালোলাগা ভালোবাসা কি। যখন প্রথমবার শুনেছিলো তার বাবা ইশা এর সাথে তার বিয়ে ঠিক করে রেখেছে তখন সূর্যের থেকে বেশি খুশি কেউ ছিলো না। খুব ভালোবাসে সে ইশাকে কোনোদিন বলা হয়ে উঠলোনা। হাতের ফ্রেম টা জোরে ছুড়ে মারলো,সেটা ফ্লোরে পড়ে টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙে গেলো সূর্য এর মনের মতো।
ইশা তুই শুধু টাকা ই দেখলি আমার ভালোবাসা বুঝলি না? আমি যে খুব ভালোবাসি তোকে ইশা। আমি তোকে ছাড়া কিভাবে থাকবো। তুই ইফরাতের টাকার জন্য কিভাবে ওকে বিয়ে করতে রাজি হতে পারলি ইশা । এতোদিন আমি কিছু বলি তোকে ভালোবসে কিন্তু এখন থেকে এই সূর্যের খারাপ রুপ টাই দেখবি। তোর জিবন আমি নরক না বানিয়ে দিলে আমার নাম ও সূর্য না। ( সূর্য)
সূর্যকে দেখে খুব অস্বাভাবিক লাগছে,সাইকোদের মতো কখোনো কাদছে তো কখোনো হাসছে। সূর্য কি ভাবছে বুঝা বড় দায় হয়ে যাচ্ছে,ইশাকে ভুল বুঝে তার জিবন শেষ করে দিবেম ইশা তো কোনো দোষ করেনি।
অনেক্ষন হয়ে যাচ্ছে ইশার ফোন বাঝছে আর ইশা এমন ঘুম দিছে যার জন্য ফোনের রিংটোন ও শুনতে পারছেনা। এইদিকে ইফরাত কল দিতে দিতে বিরক্ত হয়ে যাচ্ছে মেয়েটা আসার সময় তার সামনে আসলো না এখন কল ও তুলছে না ও কি এই বিয়েতে রাজি নয়। বেচারা ইফরাত টেনশন এ যায়যায় আর অইদকে ইশা তো ঘুম। শেষমেষ আরেকবার কল দিলো এইবার ইশা বিরক্ত হয়ে ফোন কোনোমতে রিসিভ করে কানে ধরলো আর ঘুমুঘুমু কন্ঠে বললো।
হ্যালো কে ভাই এতো রাতে আপনি একটা মেয়েকে কল দিয়ে তার ঘুমে ডিস্টার্ব করছেন? (ইশা)
ইফরার এবার আকাশ থেকে পড়লো এখন রাত কোথায় মাত্র না বিকেল হলো? আর ভাই বলছে মহারানি নিশ্চিত সে ঘুমিয়ে আছে আর ফোন না দেখেই তুলছে।
আমি আপনা ভাই না ম্যাডাম মামাতো জামাই লাগি যদি দয়া করে ঘুম থেকে উঠে সুন্দর ভাবে আমার সাথে কথা বলিয়া আমাকে উদ্ধার করিতেন আমি ধন্য হইতাম। ( ইফরাত)
ইফরাত এর কন্ঠ পেয়ে ইশা এর ঘুম হাওয়া হয়ে গেলো, লাফ দিয়ে উঠে পড় লো সে। মোবাইলের দিকে তাকিয়ে দেখে ইফরাতের নাম্বার। এবার সে নিজেকে মনেমনে গালি দিচ্ছে ফোন রিসিভ দেখে না করায়। লোকটা তাকে এভাবে লজ্জা দিবে।
আসোলে হইছে কি জানেন আমি না ঘুমিয়ে ছিলাম আর দেখি নাই যে কে কল দিছে। (ইশা)
তা তো বুঝতেই পেরেছি আমি,তা আমি আসার আগে আমার সাথে কথা বলা হয় নাই কেনো একটু শুনি? (ইফরাত)
চলবে…????