আমার অনুভুতি তুমি পর্ব-০৯ এবং শেষ পর্ব

0
775

#আমার_অনুভুতি_তুমি
#পর্বঃ৯
#নুসাইবা_ইসলাম

কোথায় আপনি ইফরাত দেখেন আপনার ইশুর খুব কষ্ট হচ্ছে, প্লিজ আমাকে বাচিয়ে নেন। (ইশু)

খুব কষ্টে আবছা আবছে এই কথা গুলো আওরাচ্ছে ইশু। ইশুর মনে হচ্ছে সে আর বাচবে না তার সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে। ধিরে ধিরে জ্ঞান হারাচ্ছে সে।

আমাকে বিয়ে করতে কেনো অস্বিকার জানালি তুই ইশু, ইফরাত এর টাকা দেখে? আজ বিয়ে তুই না ভাংগলে তোর সাথে আমার তাহলে এতো কিছু হতো না। আমিও রাগ করে বাবার কথায় লামিয়া কে দেখতে যেতাম না। শুধু তুই না বলায় ( সূর্য)

আমার দোষ নাই ভাইয়া তুমি সত্যি না জেনে এই কাজ করলা? আমার কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে নাহয় আমি বলতাম তোমাকে সব। যাইহোক এইসব এর জন্য অনেক পস্তাইবা তুমি ভাইয়া। ( ইশু)

ইশু জ্ঞান হারিয়ে ফেলছে ইশুর কথায় সূর্য অবাক। কোন সত্য সে জানেনা কিসের সত্যি কথা না জানার কথা বললো। ইশুর কাছে গিয়ে ইশুকে উঠানোর চেষ্টা করছে।

এই ইশু তাকা কিসের কথা বলোস তুই? পুরা কথা বল তাকা বলছি তুই। কিরে তাকাচ্ছিসবনা কেনো? ইশু শুনতে পারছিস পাখি। হায় আল্লাহ আমি এইসব কি করলাম। (সূর্য)

এতোক্ষনে ইফরাত ও পুলিশ সবাই চলে এসেছে এখানে। ইফরাত ইশুর অবস্থা দেখে দরজার সামনেই দাঁড়িয়ে আছে,সে স্তব্দ হয়ে গেছে। সূর্য ও চুপচাপ বসে আছে তার মুখেও কোনো কথা নাই। পুলিশ রা দ্রুত এগিয়ে গেলো ইশুর নাকের সামনে আঙ্গুল দিয়ে চেক করলো এখোনো নিশ্বাস নিচ্ছে ।

মিস্টার ইফরার উনাকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার ব্যাবস্থা করতে হবে নাহলে উনাকে বাচানো যাবেনা। (ইন্সপ্যাক্টার)

ইফরাত এর ধ্যান ফিরে আসতেই সে ইশুকে কোলে তুলে নেয় আএ বেরিয়ে যায় ওখান থেকে। পুলিশ সূর্য কে ধরে নিয়ে যাচ্ছে কিন্তু সূর্য কিচ্ছু বলছে না।

ইশুকে হাসপাতালে নেওয়ার পড় ডাক্তার রা প্রথমে চিকিৎসা করতে চান নাই। ডাক্তার রা ভেবেছেন সুইসাইড কেস তাই পুলিশ লে ইনফর্ম করা লাগবে। ইফরার ও,সি সাহেব কে কল লাগিয়ে ডাক্তারের সাথে কথা বলিয়ে দেন। ডাক্তার রা ততক্ষনাৎ ইশুর চিকিৎসা শুরু করেন,অনেকটা রক্ত বেরিয়ে যাওয়ায় ইশুকে রক্ত দেওয়া লাগবে।

এতোক্ষনে বাড়ির সবাই চলে আসছে সেখানে। ইশুর মা কিছু বলছেনা,কি বা বলবে সব যে তার ভাবনার বাহিরে হচ্ছে।

ইফরাত সাহেব আমাদের এক্ষুনি (Ab+) এর এক ব্যাগ রক্ত লাগবে,রোগির শরির থেকে অনেক রক্ত বের হয়ে গেছে। (ডাক্তার)

আমার রক্তের গ্রুপ (Ab+) ডাক্তার আমি রক্ত দিবো। (লামিয়া)

ইশুকে লামিয়া রক্ত দেয়, সেই সকালে এনে ভর্তি করা হইছে আর এখন বিকাল। ইশুকে ক্যাবিনে অনেক আগেই সিফট করা হইছে এখানো জ্ঞান ফিরে নাই। ইশুর পাশে ইশুর হাত ধরে বসে রয়েছে ইফরাত। ছেলেটা অনেক ভয় পেয়ে গিয়েছিলো যে ভাবছে সে তার ইশুকে হারিয়ে ফেলছে। ইশুর জ্ঞান ফিরছে সে তার আঁখি পল্লব ধিরে ধিরে মেলে দেখলো ইফরাত তার হাত ধরে বসে আছে তার চোখ থেকে পানি পড়ছে।

আমি জানতাম না তো ইফরাত যে এইভাবে মেয়ের মতো কান্না করতে পারে। (ইশু)

ইশুর আওয়াজ পেয়ে মাথা তুলে তাকায় সে,ইশুর জ্ঞান ফিরায় খুশি হয়ে যায় ইফরাত। ইশুর কপালে চুমু একে দেয় সে।

আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম এক মূহুর্তের জন্য মনে হয়েছিলো আমি হারিয়ে ফেলেছি তোমাকে। ( ইফরাত)

দূর আমি জানতাম আমাকে বাচাতে তুমি আসবে কিন্তু এতো দেরি করবে জানতাম না। ( ইশু)

আচ্ছা রাগ করে না সরি আমি ভাবিনাই এমন কিছু করবে সূর্য। ( ইফরাত)

ও হ্যাঁ সূর্য ভাইয়া কই আপনি প্লিজ আমাকে বাসায় নিয়ে যাওয়ার ব্যাবস্থা করেন। আমার আর ভালো লাগছে না। (ইশু)

সূর্য থানায় আছে এখন, দারা ডক্টর আসুক চেকআপ করুন দেন কি বলে দেখি। নার্স ডাক্তার কে ডেকে নিয়ে আসুন আর বাহিরে সবাইকে আসতে বলুন। ইফরাতের কথায় নার্স চলে যায়। তখন ইশার মা , লামিয়া, মামি সবাই কেবিন এ চলে আসেন। ইশার এসেই ইশাকে ধরে কান্নাকাটি শুরু করে দেয়।

আরে আম্মা এভাবে কান্না করছেন কেন আমার কিছু হয় নাই তো। দূর বলদ এর মতো কান্না করে আম্মারে পচা লাগে দেখতে। ( ইশু)

মেয়ে যে এই অবস্থায় ও এই কথা বলবে, তবু্ও কান্না থামিয়ে ফেললেন।

তোর দুষ্টুমি কি কমবে না সিরিয়াস টাইম এও দুষ্টামি। (রাফিয়া বেগম)

থাক না রাফিয়া এতো বড় একটা বিপদ থেকে বেচে গেলো মেয়েটা একটু দুষ্টুমি না করলে কি হয়। (মামি)

আম্মু & ফুপি তোমরা বাসায় যাও আমি ইশুকে নিয়ে পড়ে আসবো। আংকেল বাসায় একা আছেন। লামিয়া তুই থাক আর তোমরা যাও,আমি ডাক্তার থেকে ইশুর খাবারের রুটিন জেনে তোমাকে মেসেজ করে দিবো আম্মু। (ইফ রাত)

আচ্ছা তাহলে গেলাম ওর খেয়েল রাখিস আর জানাইস। (মামি)

ইশার মামি আর মা চলে গেলেন,ডাক্তার এসেও দেখে গেছেন। মেডিছিন আর খাবারের রুটিন দিয়ে ডিসচার্জ ও দিয়ে দিয়েছে ইশুকে। বাড়ি ফেরার জন্য ইশুকে নিয়ে গাড়িতে বসলো লামিয়া আর ইফরাত সামনে বসে ড্রাইভিং করছে।

আমাকে মাফ করে দে না বনু আমি বুঝতে পারি না যে এতোকিছু হবে। (লামিয়া)

এতে তোমার দোষ নাই আপু,হ্যাঁ সূর্য ভাইয়া যেমন আমাকে ভালোবাসছে তেমন তুমিও ভাইয়াকে ভালোবাসছো। ভালোবাসা ভুল না তবে অন্ধের মতো বিশ্বাস করা বোকামি। (ইশু)

আজকে বাড়ি এসেছে ইশু তিনদিন হয়ে গেলো। সময় কিভাবে কিভাবে যেনো শেষ হয়ে যায় বুঝাই যায় না। আর এই তিনদিনে ইফরাতের প্রতি ইশুর ভালোবাসা দিগুন বেড়েছে। ইশুর সব খেয়াল ইফরাত রাখছেন। বাসায় আসার দ্বিতীয় দিন সূর্য কে নিয়্র এসেছিলো ইশার কাকা কাকি। সূর্যকে সব বলা হয়েছে যে সূর্যকে তার বাবা-মা ভুল বুঝিয়েছে। অইদিন সূর্যকে অনেক বুঝিয়েছে ইশা, ভালোবাসা ভুল না তবে কিছু করার আগে সব জেনে নিতে হয়। সূর্য মাফ চায় ইশা আর লামিয়ার কাছে। সূর্য এর মানসিক সমস্যা বলে ধারনা করেছেন সবাই এইজন্য মেন্টাল এসাইলাম এ সূর্য কে কিছুদিন রাখার পরামর্শ দিলেন সবাই। সূর্য ও মেনে নিলো কারণ সে স্বাভাবিক হলে কখোনোই ইশাকে এভাবে মারার কথা ভাবতে পারতো না। সূর্য এর মা-বাবা নিজেদের করা কাজে অনুতপ্ত হন আর সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে চলে যান।

দুনিয়াটা বড্ড আজিব প্রথমে কেউ কিছু বুঝতেই চায় না আর যখন তারা বুঝে তখন অনেক দেরি হয়ে যায়। সূর্য যদি তার মা-বাবাকে এতোটা বিশ্বাস না করে সব কিছুর সত্যতা যাচাই করতো তাহলে আজকে তাদের গল্প ও ভিন্ন থাকতো। কারো প্রতি কারো অনুভুতি কম নে। যেমন ইশুর অনুভুতি ইফরাত, আর সূর্য এর অনুভুতি লামিয়া ঠিল সেভাবেই লামিয়ার অনুভুতি ও সূর্য ছিলো। পৃথিবীতে সবার ভালোবাসা পূর্নতা পায় না হয়তো এটাই নিয়ম। এতো কিছু ভাবতে চায় না আজকে খুব ই একটা গুরুত্বপূর্ণ রাত ইশুর কাছে। আজকে সেই কাঙ্খিত রাত আজ সন্ধ্যায় ইশু আর ইফরাতের বিয়ে সম্পূর্ন হয়েছে। আজ তাদের বাসর রাত। ইশু তার প্রিয়তম ভালোবাসার জন্য অপেক্ষা করে যাচ্ছে।

রাত ১২ঃ৩০ সব ঝামেলা শেষ করে রুমে আসতে আসতে অনেকটাই দেড়ি হয়ে গেছে ইফরাতের। ইশু যে তার জন্য অপেক্ষা করছে। রুমে ঢুকতেই ইশু ইফরাত কে সালাম করলো।

এইযে বর সাহেব সালাম করলাম আমার সালামি কোথায়? (ইশু)

কি মেয়েরে বাবা বাসর রাতে সালাম করে সালামি চাচ্ছে। (ইফরার)

এতোকিছু জানিনা সালাম করেছি সালামি দেন। (ইশু)

ইফরাত এবার তার রুমের আলমারি থেকে কতোগুলো গিফট বক্স বের করে ইশুকে ধরিয়ে দিয়ে বললো তার সালামি। ইশু অবাক এতো গিফট দেখে।

ইশু যাও তো ফ্রেস হয়ে আসো এতো ভারি মেকাপ নিয়ে বসে থাকতে হবে না তোমার। (ইফরাত)

সত্যি বলতে ইশুর অনেক অসস্থি হচ্ছিলো এগুলা নিয়ে বসে থাকতে, ইফরাতের কথায় সে আলমারি থেকে একটা কালো রঙের শাড়ি নিয়ে ফ্রেস হতে চলে গেলো। ইফরাত ও রুমের মধ্যে চেঞ্জ করে নিলো। ইশু বেরোতেই ইফরাত হা করে ইশুর দিকে তাকিয়ে আছে,কালো রঙের শাড়িতে সত্যিই ইশুকে খুন সুন্দর মানিয়েছে। ইফরাত ইশুর এক হাত ধরে নিজের রুমের বারান্দায় চলে গেলো যাকে ছোট ছাদ ও বলা যায়। ফ্লোরে বসে গেলো ইফরাত ইশুকে ইশারায় তার পাশে বসতে বললো। ইশুও ইফরাতের পাশে বসলো। ইফরাত আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো,জানো ইশু আমি তোমাকে কতোটা ভালোবাসি তা কখোনো বুঝাতে পারবো না। আর দশটা মানুষের মতো নিজের অনুভুতি আমি বুঝাতে ব্যার্থ। তোমাকে ভালোবাসার পড় প্রতিটা সময় তোমাকে হারানোর ভয়ে ভয়ে পার হইছে। সেদিন তোমাকে অই অবস্থায় দেখে কিছু সময় এর জন্য আমি স্তব্দ হয়ে যাই যে আমি কি করবো।#আমার_অনুভুতি_তুমি আমার ভালোবাসা তুমি ইশু, তোমাকে ছাড়া আমি বাচার কথা কল্পনাও করতে পারি না।

আমিও তোমাকে খুব ভালোবাসি,আমি কখোনো বলি নাই কিন্তু হ্যাঁ অনেক আগে থেকে ভালোবাসি৷ আমি ভেবেছিলাম ভালোবাসলেই সব ভালোবাসা পূর্নতা পায় আমার টাও পাবে না। কিন্তু আল্লাহ উপহার হিসেবে তোমাকে দিবে আমি ভাবতেও পারি নাই। #আমার_অনুভুতি_তুমি সবটা জুরে শুধুই তুমি।

সবার ভালোবাসা পূর্নতা পাক,সবাই নিজেদের ভালোবাসার মানুষের সাথে যেনো ভালো থাকে, তাদের নতুন জিবনের জন্য শুভ কামনা।

…….সমাপ্ত……