#আমার_খাঁচায়_তুমি_বন্দি
#Avigya_Ayaat
#পর্ব:১০
রিফাত রাহির সামনে হাটু গেড়ে বসে এক হাত দিয়ে রিং এগিয়ে দেয়।
রাহি রিংয়ের দিকে তাকিয়ে দেখে সেই দিন য়ে রিং কিনেছিলো সেই রিংটা।
রিফাত: আমি জানি না কি করে, কি ভাবে, কখন তোমার প্রেমে পরেছি, কখন আমার মন তোমায় আপন করে চাইতে শুরু করেছে, কখন আমার মন তোমার চোখের মায়ার প্রেমে পরেছে আমি জানি না। তবে এই টুকু জানি আমি তোমার প্রেমে পরেছি। তোমার ভালবাসায় আটকে পরেছি। রাহি আমি তোমাকে আরো আপন করে চায়,তোমার পাশে থেকে সারাটা জীবন বাচঁতে চায়,তোমার সাথে পড়ন্ত বিকেলে চায়ের কাপে মুখ ডুবাতে চায়। তোমার সাথে ঝগড়া করতে চায়,তোমাকে আমার রাজ্যের রানী করে রাখতে চাই। মায়াবতী হবে কি তুমি আমার রাজ্যের রানী, Rahi will you marry me?
রিফাত কথা গুলো বলে রাহির দিকে তাকিয়ে তার উওরের অপেক্ষা করছে।
রাহি রিফাতের কথা শুনে চুপ করে আছে।
রিফাত: রাহি কিছু বলছো না কেনো?
রাহি জোরে হেসে দেয়।
রাহি: আপনার মাথা মনে হয় নষ্ট হয়ে গেছে।
রিফাত: মানে?
রাহি: আলিনা কে ভালোবাসেন সে ও আপনাকে ভালবাসে তাহলে তাকে বিয়ে করার কথা না বলে আমাকে বলছেন।
রিফাত: আলিনা আমার ফ্রেন্ড।তোমার সাথে আমার সবসময় ঝগড়া হতো তবে তোমাকে ভালবাসার পর যখন ভেবেছি তোমাকে মনের কথা গুলো বলবো তখন ভাবতাম যে তোমার আমার প্রতি কোনো অনূভূতি আছে কি না। আমি আলিনা কে সব বলি তাই ওই বলে এই সব করতে। আলিনা আর আমি দেখতে চেয়েছিলাম যে আমার সাথে অন্য মেয়েকে দেখলে তুমি কেমন করো।
বিশ্বাস করো আমাদের মাঝে তেমন কিছু নেই।আমি শুধু তোমাকে ভালবাসি,তোমাকে আমার জীবনে চাই।
রাহি: আমি বাসায় যাবো। তাই আমাকে দয়া করে বাসায় দিয়ে আসুন ।
রিফাত বুঝতে পারে যে রাহি তার প্রপোজে রাজি না। তাই রিফাত মন খারাপ করে দাড়িয়ে যায়।
রাহি: আমাকে কি বাসায় দিয়ে আসবেন, নাকি আমি একাই চলে যাবো।
রিফাত: আমি দিয়ে আসছি চলো।
তারপর রাহি আর কিছু না বলে গাড়িতে গিয়ে বসে রিফাত ও চুপচাপ গাড়িতে ওঠে গাড়ি চালাতে শুরু করে।
রাহির বাসার সামনে….
রাহির বাসার সামনে রিফাত গাড়ি থামায়। রাহি ও চুপচাপ গাড়ি থেকে নেমে বাসায় যাবে তখন রিফাত বলে…
রিফাত: রাহি শুনো..
রাহি : বলেন
রিফাত: তুমি কি সত্যিই আমাকে ভালবাসো না।
রাহি: আমার শিহাবকে অনেক ভাল লাগে ভাবছি তাকে বিয়ে করবো সে ও আমাকে বিয়ে করার কথা বলেছে।তার আপনার মতো রাগ ও নেই।
এই বলে রাহি বাসার ভিতর চলে যায়।
রিফাত রাহির যাওয়ার দিকে পলকহীন তাকিয়ে থাকে। রাহি চলে যাবার পর রিফাত বড় একটা শ্বাস নিয়ে গাড়ি নিয়ে বাসায় চলে যায়।
রিফাত নিজের বাসায় এসে সরাসরি রুমে চলে যায় আর রুমের দরজা বন্ধ করে জিনিস ভাংচুর করে। ভাংচুর করার পর ফ্লোরে বসে পরে আর কান্না করতে করতে বলে
রিফাত: রাহি আমি তোমাকে চাই,তোমাকে ছারা আমি বাঁচবো না। তুমি অন্য কারো হলে আমি মরে যাবো।
দুদিন পর…..
রিফাত সব সময় নিজের রুমে থাকে, কারো সাথে কথা বলে না, খাওয়া -দাওয়া করে না ঠিকমতো,অফিসে ও যাই না।
রিফাত নিজের রুমের বেলকনিতে দাড়িয়ে আছে তখন আলিনা আসে…
আলিনা: রিফাত…
রিফাত পিছনে তাকিয়ে দেখে আলিনা…
রিফাত: আলিনা তুই।
আলিনা: কি অবস্থা করেছিস নিজের।
রিফাত: তুই তো জানিস রাহি আমার ভাল থাকার ওষুধ।
ও আমার কাছে নেই আমি ভাল থাকি কি করে?
আলিনা: রাহি তোরই হবে আমি রাহির সাথে কথা বলবো। রাহিকে সব খুলে বলবো।
রিফাত: হবে না, সে শিহাবকে বিয়ে করবে বলছে।
আলিনা: তুই চুপ থাক। যা করার আমি করবো। তুই আগের মতো হয়ে যা, এভাবে ভেঙ্গে পরলে হবে না।
রিফাত: আচ্ছা আর ভেঙ্গে পরবো না তবু তুই রাহিকে আমার কাছে এনে দেয়।
আলিনা: আচ্ছা এনে দিবো, তুই ও কাল থেকে অফিসে যাবি।
রিফাত: আচ্ছা।
পরেরদিন….
রিফাত রেড়ি হয়ে অফিসে যায়। নিজের কেবিনে বসে রাহির কথা ভাবছে।
দুজনে কতো ঝগড়া করতো। রাহির পাগলামী গুলো রিফাতের অনেক মনে পরছে।
রাহিকে নিয়ে বিভিন্ন কথা ভাবছে তখন রিফাতের কেবিনের দরজায় কেউ নক দেয।
রিফাত তাকিয়ে দেখে রাহি।
রাহিকে দেখে রিফাত দাড়িয়ে যায় আর বলে…
রিফাত: রাহি তুমি
রাহি: ভিতরে আসতে পারি।
রিফাত: আসো।
রাহি ভিতরে যায় তার সাথে সাথে রিফাত দেখে শিহাব ও এসেছে।
রাহির সাথে শিহাবকে দেখে রিফাতের যেমন রাগ হচ্ছে, তেমন কষ্ট ও হচ্ছে।
রিফাত নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে বলে…
রিফাত: তোমরা এখানে।
রাহি: আমার আর শিহাবের বিয়ের কথা ঠিক হয়েছে। কাল আমাদের দু পরিবার থেকে দুজনকে আংটি পরানো হবে আর বিয়ের তারিখ ঠিক করা হবে। আপনার দাওয়াত রইলো কাল।আশা করি কাল আমাদের বাসায় গিয়ে আমাদের নতুন জীবনের জন্য দোয়া করে আসবেন।
শিহাব: আসবেন কিন্তু।
রাহিরর কথা শুনে রিফাতের মনে হচ্ছে যেনো তার মনটা ভেঙ্গে চুড়মাড় হয়ে যাচ্ছে।
তাও নিজেকে সামলে বলে…
রিফাত: ঠিক আছে যাবো।
রাহি: ধন্যবাদ।
শিহাব: জানু চলো আমাদের তো শর্পিং করতে যেতে হবে।
রাহি: হুমম। চলো।
রাহি: রিফাত স্যার কাল কিন্তু যাবেন। এখন চলি।
তারপর রাহি আর শিহাব কেবিন থেকে বের হয়ে আসে।
রিফাতের অনেক কষ্ট হচ্ছে,নিঃশ্বাস যেনো নিতে পারছে না এমন লাগছে।
রিফাত জোরে চিৎকার করে বলে
রিফাত: রাহি এমন কেনো করলে আমি তো তোমাকে ছারা বাঁচবো না।
তখনি আলিনা আসে।
আলিনা: তুই এমন করছিস কেনো?
রিফাত কান্না করতে করতে বলে…
রিফাত: রাহি এসেছিলো শিহাব কে নিয়ে। কাল ওদের এংগেজমেন্ট।
আলিনা: তুই শান্ত হ। অামি রাহির সাথে কথা বলবো আজ।
রিফাত : তোর কিছু করতে হবে না। রাহি যদি শিহাবের সাথে ভাল থাকে তো থাকুক। আমি ওদের মাঝে যাবো না। কাল রাহির বাসায় গিয়ে দোয়া করে আসতে বলছে তাই করবো। রাহি শিহাবকে নিয়ে ভাল থাকুক আর আমি না হয় রাহির স্মৃতি আগলে সারাজীবন ভাল থাকবো।
আলিনা: আচ্ছা ঠিক আছে। তবে এখন বাসায় চল।
আলিনা রিফাতকে বাসায় নিয়ে আসে তারপর জোর করে কিছু খাবার খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেয় রিফাতকে।
পরেরদিন….
রিফাত মনের মধ্যে হাজার কষ্ট চেপে সুন্দর করে সেজে রাহির জন্য গোলাপের তুড়া আর গিফট নিয়ে রাহির বাসায় যায়।
রাহির বাসায় রাহির পরিবারেে সবাই আর শিহাবের পরিবারের সবাই বসে আছে। রিফাতকে দেখে রাহির বাবা তার কাছে আসে।
রিফাত সালাম দিয়ে বলে
রিফাত: কেমন আছেন আঙ্কেল?
রাহির বাবা: ভাল,তুমি
রিফাত: ভাল আছি।
রাহির বাবা: আমরা তোমার সাথেই রাহির বিয়ে দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু রাহি…
রাহির বাবাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে রিফাত বলে
রিফাত: থাক, ওসব কথা বাদ দেন।
রাহির বাবা: আসো ভিতরে আসো।
তারপর রিফাত রাহিদের বাসার ভিতরে যায়।
কিছু সময় সবার সাথে বসে থাকে। সবাইকে দেখে কিন্তু রাহিকে দেখে না তাই রাহির মাকে বলে..
রিফাত: আন্টি রাহি কোথায়?
রাহির মা: রুমে সেজেগুজে বসে আছে হয়তো।
রিফাত: আমি কি ওর সাথে একটু দেখা করতে পারি।
রাহির মা: যাও।
রিফাত তারপর রাহির রুমে যায়।রাহির দিকে তাকিয়ে দেখে সুন্দর একটা নীল শাড়ি,চোখে মোটা করে কাজল পরে বসে আছে। দেখতে যেনো একদম নীলপরী।
রাহি: আপনি এখানে কেনো?
রিফাত: তোমাকে দেখতে আসলাম। তোমাকে দেখতে মাশআল্লাহ পরীর মতো লাগছে।
রাহি: ধন্যবাদ। এখন বাহিরে যান। পরে আমাদের দুজনকে মন ভরে দোয়া করে যাবেন।
রিফাত: রাহি মনে অনেক সাহস নিয়ে এসেছিলাম তোমাদের দুজনকে একসাথে দোয়া করবো বলে। তবে এখন আর সে সাহস নেই। আমি পারবো না নিজের চোখের সামনে নিজের মনের মানুষকে অন্যের হতে দেখতে। রাহি তুমি কি সত্যি আমার হতে পারবে না। রাহি তুমি ছারা অামি অসহায়। প্লিজ আমার সাথে বাকিটা জীবন থাকো,তুমি আমার জীবনের ভাল থাকার মানুষ।তুমি না থাকলে আমি মরে যাবো।
এই বলে রিফাত কান্না করে দেয়।
আর…….
চলবে…..