আমার খাঁচায় তুমি বন্দি পর্ব-০৯

0
3478

#আমার_খাঁচায়_তুমি_বন্দি
#Avigya_Ayaat
#পর্ব:৯

চড়ের কারনে রাহি গালে হাত দিয়ে রিফাতের দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে থাকে।
আর রিফাত রাহির দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে থাকে।
শিহাব: আপনি রাহির গালে চড় দিলেন কেনো?
রিফাত : তা আপনাকে বলার ইচ্ছে নেই।
শিহাব:অফিসের সবার সামনে কিছু না বলে একটা মেয়ের গালে চড় মারবেন আবার জিঙ্গেস করলে বলবেন যে আপনার বলার ইচ্ছে নেয়।
রাহি: শিহাব আপনি চুপ করেন। রিফাত স্যারের অভ্যাস আছে এমন হুটহাট চড় মারার।
এই বলে রাহি কান্না করতে করতে অফিস থেকে বের হয়ে যায়।
রাহি আজ অনেক কষ্ট পেয়েছে
সব সময় তাও রিফাতের রাহিকে মারার পিছনে কারন থাকতো। তবে রাহি আজ কোনো কারন জানে না তাই তার কষ্ট লাগছে।
রাহিকে বের হতে দেখে রিফাত ও তার পিছন পিছন অফিস থেকে বের হয়ে যায়।
রিফাত রাহিকে কয়েক বার ডাকে কিন্তু রাহি না শুনে রাস্তার পাশ দিয়ে হেটে চলেছে।
রাহি ডাকার পর যখন না থেমে হাটছে তখন রিফাত দৌড়ে এসে রাহির বাম হাত ধরে নিজের দিকে টান দিয়ে ঘুরায়।
রিফাত: তোকে ডাকছি শুনতে পাশ না।
রাহি: হাত ছাড়ুন আমার।
রিফাত: ছাড়বো না।
রাহি: হাত ছার বলছি না হলে কিন্তু……
রিফাত: কিন্তু কি?
রাহি: তোর প্রিয়তমা আছে তার হাত ধর গিয়ে আর আমার হাত ছার।
রিফাত : তুই ওই ছেলের সাথে কথা বললি কেনো?
রাহি: আমার ইচ্ছা আমি কার সাথে কথা বলবো, কার সাথে বলবো না
রিফাত: না তোর ইচ্ছে না ।
রাহি: ও নিজে অন্য মেয়েদের সাথে কথা বলবে, গার্লফেন্ড বানাবে আর আমি একটু ছেলের সাথে কথা বললেই দোষ।
রিফাত: হুমম তোর দোষ।
রাহি: আমি আমার লাইফে কি করবো তা আমার ইচ্ছা অন্য কারো না,তোর ও না। তাই আমি কার সাথে কথা বলবো, কাকে আমার বয়ফেন্ড করবো তা আমার নিজের ব্যাপার। তাই আমার ব্যাপারে কোনো কথা বলতে আসবি না।
রাগে এসব কথা বলে রাহি জোরে নিজের হাত ছারিয়ে সেখান থেকে চলে যায়।

রাহি বাসায় এসে নিজের রুমে গিয়ে মন খারাপ করে শুয়ে থাকে।
অন্যদিকে
রিফাত নিজের রুমে বসে ভাবছে তখন রাহিকে চড় মারা ঠিক হয়নি। কিন্তু রাহিকে ওই ছেলের সাথে কথা বলতে দেখে রাগ ওঠে গেছিলো। আর রাগ হলে কি করে তখন সে নিজে ও বুঝে না।
এইসব ভাবছে এমন সময় রিফাতের রুমে তার দাদু আসে
রিফাতকে এমন মন খারাপ করে বসে থাকতে দেখে রিফাতের দাদু বলে….
দাদু: রিফাত দাদু ভাই কি হয়ছে?
রিফাত: কিছু না দাদু।
দাদু: তাহলে এমন মন খারাপ করে বসে আছো যে।আমাকে বলো কি হয়ছে।
রিফাত তার মাথা নিচু করে বল….
রিফাত: আসলে দাদু আমি আজ একটা ভুল করে ফেলছি।
দাদু: কি ভুল করছো?
রিফাত: আমি আজ রাহির গালে চড় মারছি।
দাদু: কেনো?
রিফাত: রাগের মাথায়। তুমি তো জানো রাগের মাথায় আমি কি করি বুঝতেই পারি না।
দাদু: ভুল যেহেতু করেছো তাহলে রাহিকে স্যরি বলে সব ঠিক করে নাও।
রিফাত: হুমমম।
দাদু: আচ্ছা আমি এখন আসি।
দাদু চলে যাবার পর রিফাত রাহিকে ফোন দেয়।

রাহি বিছানায় শুয়ে আছে তখন তার ফোন বেজে ওঠে। রাহি ফোন হাতে নিয়ে দেখে যে রিফাত ফোন করেছে তাই ফোন না ধরে বিছানায় রেখে দেয়।
রিফাত অনেকবার ফোন দেয় কিন্তু রাহি ফোন ধরে না।
সেই মূর্হতে রাহি ফোন বন্ধ করে ফেলে।
রাহির ফোন বন্ধ দেখে রিফাতের আরো খারাপ লাগে। তাই রিফাত রাহিদের বাসায় যাওয়ার জন্য বের হয়।

রাহিদের বাসায়….
রাহিদের বাসায় গিয়ে রিফাত কলিংবেল বাজায় আর রাহির মা দরজা খুলে দেয়।
রাহির মা: রিফাত তুমি
রিফাত: আন্টি রাহি কোথায়?
রাহির মা: রাহি তো ওর রুমে।
রিফাত রাহির মায়ের কথা শুনে রাহির রুমের দিকে যায়। রুমের কাছে গিয়ে দেখে দরজা ভিতর থেকে লক করা।
রিফাত: রাহি দরজা খুলো। তোমার সাথে আমার কথা আছে।
রাহি: আপনি কে?
রিফাত: আমি রিফাত।
রাহি: আমি কোনো রিফাতকে চিনি না। তাই এখান থেকে চলে যান।
রিফাত: রাহি এমন করো না প্লিজ। আমার ভুল হয়ে গেছে তার জন্য মাফ চাচ্ছি দরজা টা খুলো।
রাহি : আমি দরজা খুলবো না। আপনি এখান থেকে চলে যান।
রিফাত তাও অনেক চেষ্টা করে যেনো রাহি দরজা খুলে। কিন্তু রাহি দরজা খুলে না। রিফাত হতাশ হয়ে সেখান থেকে চলে যায়।

রিফাত বাসায় যাবার পর রাগে নিজর রুমে গিয়ে সব জিনিস ভাংচুর করতে শুরু করে।
ভাংচুরের শব্দে রিফাতের দাদু রিফাতের রুমে আসে।
রিফাতের দাদু: কি হয়ছে এমন করছো কেনো?
রিফাত: দাদু রাহিকে আমার জীবনে চায়। ওই আমার ভাল থাকার ওষুধ।
দাদু: তা তো হবে, বিয়ের কথা তো বলছিই। তাহলে এমন করার কি আছে?
রিফাত: দাদু আমার ভুলের জন্য রাহি আমার সাথে কথা বলে না। রাহি আমার সাথে কথা না বললে আমার ভাল লাগে না।
দাদু: এই ভাবে রাগ না করে রাহির রাগ ভাঙ্গানোর চেষ্টা করো।
রিফাত: হুমম তাই করবো।
তারপর থেকে রিফাত অনেক চেষ্টা করে রাহির সাথে কথা বলার কিন্তু রাহি কথা বলে না।
রিফাত অনেক বার রাহির সাথে দেখা করতে যায় কিন্তু রাহি রিফাতের সামনে আসে না।
এই ভাবে দুই দিন কেটে যায়।
রিফাত এই দুই দিন রাহির এক ঝলক ও দেখতে পায়নি।
রাহির সাথে কথা না বলতে পারায় রিফাত কেমন যেনো পাগল পাগল হয়ে গেছে রাহির সাথে কথা বলার জন্য।
অন্যদিকে….
রাহি সারাদিন নিজের রুমে চুপচাপ থাকে। ঠিক মতো খায় না, কারো সাথে ঠিকমতো কথা বলে না।

রিফাতের দাদু খাবার নিয়ে রিফাতের রুমে যায়।
দাদু: রিফাত খাবার খেয়ে নেয়। দু দিন ধরে ঠিক মতো খাবার খাস না।
রিফাত: ভাল লাগে না, খাবো না যাও তো।
দাদু :খেয়ে নেয়। আর তুই তো এমন ছিলি না। তোর যা চাই তার জন্য চেষ্টা করতি আর রাহির বেলায় হতাশ হয়ে বসে আছিস।
রিফাত: সত্যিই দাদু। আমি আর এমন করে থাকবো না। আজ আমি রাহির সাথে দেখা করবো আর আমার মনের কথা গুলো ও বলবো।
রাতে….
রাত ১০টায় রাহি বেলকনিতে দাড়িয়ে আছে। এমন সময় রাহির ছোট বোন রাদিকা রাহির রুমে আসে।
রাদিকা: রাহি আপু একটু রুমে আসো তো।
রাহি: কি হয়ছে?
রাদিকা: মা তোমাকে একটু ডাকে।
রাহি তার মার সাথে দেখা করতে যায়।
রাদিকা দেখে তার বোন চলে গেছে তখন তাড়াতাড়ি বেলকনিতে যায়।
রাদিকা: রিফাত জিজু তাড়াতাড়ি ওপরে চলে আসো।
রিফাত বেলকনিতে মই রেখে তাড়াতাড়ি ওপরে চলে আসে।
রিফাত: ধন্যবাদ আমার আধা ঘরয়ালী।
রাদিকা: জিজু বাসার মেন দরজা আমি খুলে রাখবো। এখন গেলাম।
রাদিকা চলে যাবার পর রিফাত দরজার আড়ালে লুকিয়ে পরে। কিছু সময় পর রাহি রুমে আসে আর দরজা বন্ধ করে বিছানায় বসতে যাবে তখন রিফাত বলে
রিফাত: ফাজিল মেয়ে কেমন আছিস।
রাহি: তুই এখানে।
রিফাত: হুমম।
রাহি:বের হ এখান থেকে।
রিফাত: আচ্ছা।
এই বলে রিফাত রাহির কাছে গিয়ে রাহির মুখ বেধে ফেলে তারপর হাত বেধে কুলে তুলে নেয় আর রাহিদের মেন দরজা দিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যায়।
রাহিকে গাড়িতে বসিয়ে রিফাত গাড়ি চালাতে শুরু করে।
রাহি অনেকবার হাতের বাধন, মুখের বাধন খুলতে চেষ্টা করে কিন্তু খুলতে পারে না।
কিছু সময় পর….
রিফাত একটা জায়গায় এসে গাড়ি থামায়। রাহি চারপাশে তাকিয়ে দেখে চারপাশ অনেক অন্ধকার।
রিফাত গাড়ি থেকে নেমে রাহিকে কুলে তুলে নেয়। একটু হাটার পর রিফাত রাহিকে নামিয়ে দেয় আর হাতের বাধন খুলে দেয়।
রাহির হাতের বাধন খুলা দেখে তাড়াতাড়ি মুখের বাধন খুলে ফেলে।
মুখের বাধন খুলে রাহি যখন রিফাতকে কিছু বলতে যাবে তখনি চারপাশ আলোতে ভরে ওঠে। অনেক সুন্দর করে সাজানো হয়েছে জায়গাটি। রাহি অবাক হয়ে দেখছে তখনি রাহির সামনে রিফাত হাটু গেড়ে বসে রাহির দিকে সুন্দর একটা রিং এগিয়ে দেয় আর বলে….

চলবে…….