আমার খাঁচায় তুমি বন্দি পর্ব-১১

0
3018

#আমার_খাঁচায়_তুমি_বন্দি
#Avigya_Ayaat
#পর্ব:১১

রিফাত রাহিকে সব কথা বলে কান্না করছে তখন পিছন থেকে আলিনা বলে…
আলিনা: তুই এতো কান্না করতে পারিস জানতাম না।
রিফাত : তুই এখানে!
আলিনা: তোর বিয়ের তারিখ ঠিক হবে আর আমি থাকবো না।
রিফাত: মানে
রিফাতের দাদু : মানে রাহি আর তোর বিয়ে।
রাহি: আরে দাদু তোমার ফাজিল নাতি আজ গাধা হয়ে গেছে তাই কিছু বুঝবে না গো…।
রাহির কথা শুনে সবাই হেসে দেয়।
রিফাত: কি হচ্ছে কিছুই বুঝতেছি না।
রাহি: বাবু, তুমি আমার সাথে নাটক করছিলে না আলিনা আপুকে নিয়ে। তুমি তো জানো না আমি কেমন ড্রামা বাজ।
রিফাত: মানে…
রাহি: মানে হলো তুমি ভালবাসার নাটক করে আমাকে কষ্ট দিছো আর জ্বালায়ছো তো আমি বিয়ের নাটক করে প্রতিশোধ নিলাম।
রিফাত: তার মানে এসব মিথ্যে।
রাহি: জি বাবু।
রিফাত রাগি চোখ করে বলে…
রিফাত: রাহিহহ..
রাহি: এই যে রাগ করলে কিন্তু বিয়ে করবো না বলে দিলাম। আর শিহাব ভাইকে বিয়ে করে নিবো।
শিহাব: রাহি আমি অলরেড়ি অন্য জনের বুঝছো।
রাহি: মানে…
আলিনা: শিহাব আমার হ্যাজবেন্ড।
রাহি: ও আল্লাহ কি বলো
আলিনা: সেই দিন আংটির দোকানে আমিই পাঠিয়েছিলাম।
রিফাত: তারমানে রাহির ওপর রাগ করতে পারি কারন শিহাবকে নিয়ে কোনো ভয় নেয়।
রাহি: না,শিহাব ভাইয়াকে নিয়ে ভয় নেয় তো কি হয়ছে অন্য কাউকে বিয়ে করে নিবো রাগ দেখালে।
রিফাত: মেরে ফেলবো।
রাহি : আমি মনে হয় ছেড়ে দেবো।
দাদু: সব কথা বাদ দিয়ে নিচে চলো। বাকীরা বসে আছে এখন না গেলে বিয়ে বাতিল করে দিবো।
রিফাত : নাহহহ… এখনি যাচ্ছি।
রিফাতের এমন কান্ড দেখে বাকিরা হেসে দেয়।
কিছু সময় পর…..
রাহি,রিফাত আর বাকিরা সবাই ড্রইংয় রুমে বসে কথা বলছে।
দাদু: রাহি আর রিফাতের এংগেজমেন্টটা করে নেয় তা হলে ভাল হয়।
রাহির বাবা: হুমমম তাই ভাল হবে।
এরপর রিফাত রাহিকে রিং পরিয়ে দেয় আর রাহি রিফাতকে পরিয়ে দেয়।
তারপর সবাই অনেক হাসি মজা করে আর বিয়ের দিন ঠিক করে সামনের শুক্রবার।
সবাই অনেক খুশি।
রাহি আর রিফাত এক জায়গায় বসে আছে। তখন রিফাত রাহির কানে আস্তে আস্তে করে বলে
রিফাত: ফাজিল মেয়ে এই ড্রামার শাস্তি তুই পাবি শুধু বিয়েটা করে নেয়।
রাহি: এইটা ঠিক না।
রিফাত: আমাকে কষ্ট দিয়ে মজা পাইছিস না। তার শাস্তি দিবো তো বাবু আমার।
রাহি: তাহলে তোরে আমি বিয়াই করমু না যা।
রিফাত: তুই করবি তোর ঘাড় করবো। আর না করলে তোরে মাইরা ফালামু।
রাহি: আমি কিন্তু কান্না কইরা দিমু ফাজিল ছেলে।
রিফাত: ওলে….লে আমার বাবু, আমার জানু কান্না করে না। চকলেট কিনা দিমু নি বাবুরে তাও কান্না করে না।
রাহি: এইখান থেকে যা বদের হাড্ডি।
রিফাত: ওরে ফাজিল মেয়ে।
আলিনা: তোরা দুজন কানে কানে কি কথা বলছিস।
রিফাত: ফাজিল মেয়ে ঝগড়া করতাছে।
রাহি: ওই ফাজিল ছেলে তুই আগে শুরু করছোস।
রিফাত: চুপ কর।
রাহি ন্যাকা কান্না করে
রাহি: দেখছো তোমরা এই ফাজিল ছেলে আজ ও আমার সাথে ঝগড়া করতাছে।
রিফাত: তুই ফাজিল মেয়ে।
রাহি: তুই ফাজিল ছেলে,বদের হাড্ডি,বট গাছের ভুত,কুমির,আদি মানব,বনমানুষ,সাপ,তেলাপোকা আরো কি জানি মনে পরতাছেনা।
আলিনা: রাহি তোমার কথা শুনে আমি শেষ।
রিফাত: আলিনা আমার গুলা শুনবি না।
আলিনা: না আর শুনার ইচ্ছে নাই।
দাদু: তোদের ঝগড়া শেষ হইছে নাকি আরো আছে।
রাহি: আমি তো কিছু বলতেই পারলাম না। সব তো এই ছেলেটাই বললো।
রিফাত: দেখছো সবাই ফাজিল মেয়ে কি মিথ্যে কথা বলে।
দাদু: বুঝছি তোদের ঝগড়া শেষ হয়নি। দয়া করে দুজন অন্য কোথায় গিয়ে ঝগড়া কর।
রাহি : না, না, আমি অন্য কোথাও যামু না, না হলে আমাকে মারতে ও পারে।
রিফাত: না, মারবো না ঝগড়া করবো, এখন চল।
রাহি: আমি যামু না, তুই একাই যা।
রিফাত: এখন যাবি না ক্যা।
এরপর রিফাত রাহিকে টেনে নিয় যায়।
আর সবাই হাসতে থাকে।
রিফাত রাহিকে টেনে নিয়ে ছাদে নিয়ে যায়।
ছাদে যাবার পর রিফাত রাহিকে টেনে নিজের কাছে নিয়ে আসে তারপর বলে…
রিফাত: এখন তোর যতো ইচ্ছা ঝগড়া কর। আমি তোর এই ঝগড়াকে ভালবাসি।
রাহি: এমন করলে ঝগড়া করবো কিভাবে, দূরে যা তারপর করি।
রিফাত: এখন থেকে তো আরো কাছে আসবো।
রাহি: ঝগড়া করমু না, এখন নিচে যামু আমি, আমার হাত ছার।
রিফাত: আমি তো আস্তে আস্তে নীলপরীর চোখের মায়ায় পরে যাচ্ছি।
রাহি: এইটা ঠিক হচ্ছে না কিন্তু।
রিফাত: কি ঠিক হচ্ছে না।
রাহি: রোমান্টিক হইতাছোস ক্যা।
রিফাত: মায়াবতীর প্রেমে পরে গেছি তো তাই।
রাহি: আচ্ছা।
এই বলে রাহি রিফাতের হাতে জোরে কামড় দেয়। রিফাত আহ্ বলে হাত ছাড়িয়ে নেয় আর রাহি দৌড় দিয়ে সেখান থেকে চলে যায়।
রাহি নিচে আসার পর রিফাত ও নিচে চলে আসে।
তারপর সবাই বিভিন্ন কথা বলে খাবার খেয়ে সবাই চলে যায়।
পরেরদিন….
সকাল বেলা রাহির ঘুম ভাঙ্গে রিফাতের ফোনে…
রিফাত: জান ঘুম ভাঙ্গছে নাকি।
রাহি: হুমম।
রিফাত: তাহলে তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে খাবার খেয়ে রেড়ি হও।
রাহি: কেনো?
রিফাত: শপিং করতে যাবো বিয়ের।
রাহি: এখন।
রিফাত: হুমম আমি সব তাড়াতাড়ি শেষ করতে চাই।রেড়ি হও আমি আসতেছি।
তারপর রিফাত ফোন কেটে দেয়।
রাহি ও ফ্রেশ হয়ে রেড়ি হয়ে রিফাতের জন্য অপেক্ষা করে।
কিছু সময় পর….
রিফাত রাহির বাসার সামনে এসে রাহিকে ডাকে।
রাহি ও বাসা থেকে বের হয়।
রাহিকে দেখে রিফাত পলকহীন ভাবে তাকিয়ে আছে।
রাহি কাছে আসে জিঙ্গেস করে
রাহি: এই ভাবে কি দেখা হচ্ছে।
রিফাত: একটা পরী আসছে তাকে দেখছি।
রাহি: হইছে এখন চলেন।
রিফাত : আচ্ছা।
এরপর রাহি আর রিফাত শপিং করতে যায় আর সেখানে আলিনা আর শিহাব ও যায়।
সবাই একটা শাড়ির দোকানে যায়।
রিফাত: আমি সব গুলো শাড়ি পছন্দ করবো।
রাহি: আমি তাহলে তোমার।
রিফাত: ঠিক আছে।
তারপর সবাই সব কিছু কিনে বাহিরে দুপুরের খাবার খেয়ে বাসায় চলে আসে।
বিয়ের কাজ নিয়ে সবাই অনেক ব্যাস্ত হয়ে পরে।
রাহি আর রিফাত আজ একসাথে অফিসে যায়।
অফিসে গিয়ে রিফাত রাহির সাথে তার বিয়ের কথা বলে। অফিসের সবাই অবাক হয়ে যায়।
রাহি সবাইকে বিয়ের কার্ড দেয়। তারপর রিতার কাছে যায়।
রাহি: কেমন আছিস?
রিতা: রাগ করছি। আমাকে তো কিছু বললি না।
রাহি: ভাবছি সব ঠিক হবার পর একে বারে বলবো তাই।স্যরি রাগ করিস না।
রিতা: আচ্ছা। তবে অভিনন্দন।
রাহি: হুমম।
তারপর রাহি আর রিফাত অফিস থেকে বের হয়।
রাহি: এখন বাসায় দিয়ে আসো।
রিফাত: না….
রাহি: তাহলে কোথায় যাবো।
রিফাত : পরে বলবো
এরপর রিফাত গাড়ি চালাতে শুরু করে।
কিছু সময়পর একটা জায়গায় গাড়ি থামায়।
রাহি বাহিরে তাকিয়ে দেখে অনেক বড় একটা নদী।
রাহি তাড়াতাড়ি গাড়ি থেকে নামে।
রাহি: জায়গাটা অনেক সুন্দর।
রিফাত: হুমম আর মাঝে মাঝে আমি এখানে আসি। ওইযে বড় একটা গাছ। ওই গাছের নিচে অনেকটা সময় বসে থাকি।
রাহি: জায়গাটা আমার অনেক ভালো লাগছে।
রিফাত আর রাহি সেই গাছের নিচে গিয়ে বসে।
রিফাত নদীর দিকে তাকিয়ে বলে…
রিফাত: রাহি…
রাহি: হুমমম…
রিফাত: তোমার হাতটা ধরতে পারি।
রাহি:হুমমমম।
রিফাত রাহির হাত ধরে আর বলে…
রিফাত: রাহি আমাকে ছেড়ে কখনো যেয়ো না, তুমি চলে গেলে আমি শেষ হয়ে যাবো, বেঁচে থেকে মারা যাবো, তোমাকে বুঝাতে পারবো না আমি তোমাকে কতোটা ভালবাসি। #আমার_খাঁচায়_তুমি_বন্দি হয়ে থেকো সারাটা জীবন। আমি তোমায় আমার মনের খাঁচায় সারাটা জীবন বন্দি করে রাখবো।
রাহি রিফাতের কথা শুনে তার কাঁধে মাথা রাখে আর বলে…
রাহি : হুমমম, থাকবো তো তোমার খাঁচায় বন্দি হয়ে।
এরপর কিছু সময় নদীর ধারে কাটিয়ে তারা চলে আসে।
রাহির বাসার সামনে গাড়ি থামায়। রাহি গাড়ি থেকে নেমে রিফাতের পাশে গিয়ে তাকে বাই বলে।
রিফাত: তোমার গালে ওইটা কি?
রাহি: কি?
রিফাত: দেখি।
এরপর রিফাত হুট করে গালে একটা কিস করে দেয়।
রাহি থ হয়ে যায়।
রাহির এমন অবস্থা দেখে রিফাত মুচকি হাসি দেয়।
রাহি: ফাজিল ছেলে একটে।
এই বলে রাহি বাসার ভিতর চলে যায়। রিফাত ও নিজের বাসায় চলে আসে।
গায়ে হলুদের দিন…..
চলবে…..